আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

বসন্তের ফুল - পর্ব ২৫ - তারিন জান্নাত - ধারাবাহিক গল্প


৪৯!!

সোফায় বসে ক্রোদ্ধ  হয়ে বসে আছেন শাহিদ সাহেব এবং দিলশান বেগম। রাগান্বিত চোখজোড়া সামনে বসে থাকা কুচকুচে কালো বোরকা পরিহিতা মহিলাটির দিকে। নিকাব সরানো। এলোমেলো দৃষ্টি ছুঁড়ছেন এদিক-ওদিক।  কী ভয়ংকর মুহুর্তে আঁটকে আছেন মহিলাটি। এক সমুদ্দুর চাপা আর্তনাদে শ্বাস নিতে কিয়ামত ঘটাচ্ছে।

মৌনতা ভেঙে দিলশান বেগম বলেন,
-কেন এসেছিস এখানে? তোর সাথে আমাদের সম্পর্ক অনেক আগেই চুর্ন-বিচুর্ন করে দিয়েছিলাম।ভুলে গেলি।

কম্পিত স্বর আয়শা বলেন, 
-মা চাচিমা,আমি কিছুই ভুলিনি।
ভুল করেছিলাম।এখন তার শাস্তিও পাচ্ছি।

কর্কশ কন্ঠে দিলশান বেগম বলেন,
-ভুল? মারাত্মক ভয়ংকর ভুল করেছিলি।যার ক্ষমা নেই।

আয়শার কলিজা ছিঁড়ে যাওয়ার জোগাড়। চোখে বাঁধ ভাঙা জল।শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে কান্নারত অবস্থায় বলেন,
-আমার ছেলেরা কোথায়?দেখা করিয়ে দাও।
ক্ষমা চেয়ে নিবো। মায়ের সন্তান কখনো হারায় না।
এতটুক কথা দিলশান বেগম আরো দ্বিগুন ক্রোধিত হন। বসা থেকে উঠে কষে চড় মেরে দেন আয়শাকে।যেটা উনার আগে দেওয়া উচিত ছিলো।বাপ-মা মরা মেয়ে ছিলো বলেই লাই দিয়েছিলো কষ্ট পাবে বলে।কিন্তু হয়েছে জগন্য চরিত্রের।
দিলশান বেগমের পায়ের নিচে থুবড়ে পড়েন আয়শা। এতোবছরের পাপ কান্নাতে কখনোই বুজে যাবে না।আরো কঠিণ শাস্তি পেতে হবে।

-"মা,ও চাচিমা, আমার ছেলেদের সাথে দেখা করিয়ে দাও।আমার অভ্র? কোথায়? ওর সাথে আমি অনেক অন্যায় করেছি,পাপ করেছি।একটা বার সুযোগ চাই।"
বলেই পা জড়িয়ে কাঁদতে লাগলেন। 

আয়শার কথায় বিন্দুমাত্র মন গলাতে পারেনি দিলশান বেগমের। অভ্রের কষ্ট সে দেখেছিলো।কতোটা নির্দয় মা হলে ছোট ছেলেটাকেও ছেড়ে চলে যেতে পারে তা আয়শাকে না দেখলে বুঝতো না।ধুঁকে ধুঁকে কষ্ট পেতে দেখেছিলো অভ্রকে।সে নিজের জন্য নয়,ছোট ভাইটির জন্য হলেও তার পাপি মাকে চেয়েছিলো।
কিন্তু এই মহিলার সেদিন কোন ভ্রুক্ষেপ ও ছিলোনা। 

ঝাঁটকা মেরে পা সরান দিলশান বেগম, 
-কই তোর সেদিনের প্রেমিক? লাত্তি মারছে?

এ কথায় নিরুত্তর রয়ে যান আয়শা।সত্যিই লাত্তি খেয়ে এসেছে।এতোটা বছর। বিষে জর্জরিত ছিলো এতোটা বছর। সে এখন বিছানা সজ্জায়। এখন আবছা শান্তিতে রয়েছে।নাহলে আরো বেশি মার পরতো। 

নতজানু হয়ে জিজ্ঞেস করেন আবারও,
-'আমার ছেলেরা কোথায়?

শাহিন সাহেব এতক্ষণ নিশ্চুপ ছিলেন।এবার কিছু বলা উচিত। নীরবতা ভেঙে বলেন,
-"তাদের দেখার আশা রেখে লাভ নেই। যে পথ দিয়ে এসেছিস,সে পথ দিয়েই ফিরে যা।
কারণ তোর ছায়াও অভ্র সহ্য করবে না।চলে যা। অভ্র এখানেই নাহলে তোকে হয়তো খুন করতেও হাত কাঁপবে না ওর।"

আয়শা কান্না থামিয়ে বলেন,
-' আমার ছেলে এমন না,অভ্রের জন্মদিনের দিন আমার সাথে দেখা হয়েছিলো। এখানের রাস্তা থেকে মেইরোডের রাস্তা পর্যন্ত আমাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো।রিক্সায়ও তুলে দিয়েছিলো। আমি ওর মা বলেই তো দিয়েছে। "

হঠাৎ উনি কথাগুলো বলে হাসতে লাগলেন।আবার থেমে কাঁদতেন শুরু করেন। হাসি-কান্না দু'টোই একসঙ্গে বিরাজমান। অভ্রের নানা-নানি দু'জনে হতবাক হয়ে যান। কতো বিশ্রী হাসিকান্না।যেনো অশরীরীরা হাসছেন।
-"আমি আজ চলে যাচ্ছি।আবারও আসবো।
আমার ছেলেদের আমার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যাবো।"

হঠাৎ  বিকট একটা শব্দে থমকে যায় উভয়ে।সদর দরজায় নজর দিলো। সর্বনাশা মুহুর্ত।সয়ং অভ্র দাঁড়িয়ে আছে। চোখেমুখে রক্তিম আভা। তবে চাহনি একদম নীরব। নীরবের মধ্যেও ভয়ংকর দেখাচ্ছে অভ্রকে। নিজের উপর এখন রাগ হচ্ছে।এখানে না আসলেই বোধহয় ভালো হতো। 

আয়শা আহমেদ অভ্রকে দেখেই দৌড় অভ্রের কাছে যায়।চোখে অস্রু আর মুখে হাসি।যেই অভ্রের গাল স্পর্শ করতে যাবে,তার আগেই অভ্র সরে যায়।
অভ্রের পাশে প্রেমা দাঁড়ানো।বিস্ফোরিত দৃষ্টি ছুড়তে লাগলো অভ্রের মায়ের দিকে।রাগ হয় প্রেমার।তবপ তা অপ্রকাশিত রাখে। অভ্রকপ কষ্ট দিয়েছে ভাবলেই প্রেমারও কলিজা ছিঁড়ে যাওয়ার জোগাড়। 

অভ্র প্রেমাকে নিয়ে দরজা থেকে ভেতরে প্রবেশ করেন। শাহিদ এবং দিলশানের কাছে গিয়ে গম্ভীর কন্ঠে প্রশ্ন ছুঁড়েন,
'-এই মহিলা এখানে কী করছে? উনাকে বলো চলে যেতে আমি ওই মহিলার চেহেরাও দেখতে চাই না। চলে যেতে বলো। আমি.....

অভ্র ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পড়ে।কথা বলা অসম্ভব হয়ে যায়।শ্বাস যেনো আঁটকে আসবে।আয়শা চেয়েও কথা বাড়াতে পারেনি।দিলশান অভ্রকে নিয়ে ভেতরের রুমে যান।অভ্রকে শান্ত করা খুব জরুরি। একপ্রকার টেনে নিয়ে যান উনি।

ততক্ষণে আয়শা মাঝরাস্তায় চলে আসেন। হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ এভাবেই হয় বুঝি।কষ্ট? 
এটার চেয়ে পৃথিবীতে আর কোন কষ্ট। সন্তান তার মায়ের মুখ দর্শণ করতে চাই না।এটা সত্যিই খুব কষ্টকর।

প্রেমার রাগ হলেও এখন বিষণ মায়া হচ্ছে অভ্রের মায়ের উপর।মানুষ মাত্রই ভুল।কিন্তু উনি তো অন্যায় করেছিলেম।ঘোর অন্যায়। 

প্রেমা পেঁছন ফিরে অভ্রের মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। তখনি অভ্র এসে প্রেমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে।দ্রুত ফিরে তাকাল প্রেমা।অভ্রকে দেখে ভয় হচ্ছে তার। কয়েক মিনিটের ব্যাবধানে কীভাবে চেহারার রঙ পাল্টে গেছে।
প্রেমাকে চুপ দেখে অভ্র হালকা নিজেকে শান্ত করে। নরম স্বরে বলে, ' আমার কষ্টের কথাগুলে নিশ্চয় ভুলে যাওনি।'
প্রেমা অভ্রের কথা অর্থ বুঝতে পারে। মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। অভ্র প্রেমার দিকে তাকিয়ে রয় কিছু সময়ের জন্য। পরে বলে উঠে, "চলো'।

প্রেমাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে অভ্র প্রেমাকে নিয়ে হাঁটতে শুরু করে। আশেপাশে যেনো তীক্ষ্ণ বাতাস বইছে। অভ্রের বিসর্জিত রাগ যেনো এ বাতাসে মাধ্যম হয়ে আবারও ফিরে এসেছে। 

সন্ধ্যা নেমেছে অনেক আগেই। অভ্র আর প্রেমা বাড়ি ফিরে আসে।সাইকান, জেরিনও ছিলোনা।তাদের একটু আগেই ফিরে এসেছে।

অভ্র নিজেকে সামলে স্বাভাবিক হয়ে যায়। দুঃস্বপ্ন ভেবে তখনের ব্যপারটাকে হাওয়াই উড়িয়ে দিচ্ছে। 

মেঝেতে চারজনে বসে টিবি দেখছে। অভ্র আঁড়চোখে প্রেমাকে দেখছে একটু পর পর।কেমন যেনো দেখাচ্ছে প্রেমাকে।চোখমুখে চিন্তার চাপ।

প্রেমা ভয়ে কুঁকিয়ে উঠছে।কেন যেনো ভয় ও করছে। বারবার বুক দুরুদুরু করে উঠছে। ভয় এবং আশংকা ঘিরে ধরছে। হাত কচলাতে শুরু করছে অনবরত। ভয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কান্না আসতেও চাইছেনা।আঁটকে আছে।

অভ্র আঙুল দ্বারা প্রেমার হাতে ঠুকা দেয়। চকিত হয়ে মাথা তুলে তাকাল প্রেমা। অভ্র ভ্রু নাড়িয়ে জানতে চাই, 'কিছু কী হয়েছে'?
প্রেমা হালকা হেসে না জানাল। অভ্রও হেসে টিবিতে মনোযোগ দেয়।
_________________________

বেলা সাড়ে দশটা। ঠিকানা অনুযায়ে প্রেমা আর অভ্র তাদের নতুন বাসাটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। প্রেমা ভেতরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছিলো না। অভ্র একপ্রকাড় প্রেমাকে টেনে নিয়ে যায়।দরজার সামনে এসে বেল বাজাতেই, নাতাশা এসে দরজা খোলে।

-" কেমন আছো তোমরা?(নাতাশা)
'ভালো, তুমি?  (প্রেমা আর অভ্র একসাথে বলে)
-' আমিও ভালো,ভেতরে এসো।

প্রেমা নতুন বাড়িটি দেখতে শুরু করে। অভ্রকে বসতে দেয় নাতাশা। প্রেমা তাঁর মায়ের সাথে দেখা করতে যায়। প্রেমার মা কাঁদতে শুরু করে দেন। মেয়েকে স্বার্থপরও বললেন।প্রেমা আসলেই স্বার্থপর।অভ্রকে পেয়ে পরিবারের কথা মনেও ছিলো না।

অভ্র চলে যেতে চাইলে প্রেমার বাবা আঁটকান।না খেয়ে অভ্রকে যেতে দিবেনা।বাধ্য হয়ে অভ্রও  বসে থাকে। প্রেমাকে দেখছে না অনেক্ষণ হলো। প্রায় আধঘন্টার কাছাকাছি। অভ্রের কেমন যেনো অস্বস্তি লাগছিলো।তবুও প্রেমার বাবার সাথে টুকটাক আলাপ-আলোচনা করেন।

ঠিক সেই মুহুর্তে পিয়াস হাওয়ারর বেগে বাড়িতে প্রবেশ করে। হাতে একটা প্যাকেট ছিলো। পিয়াস তার বাবার সামনে এসে টেবিলের উপর ধুম করে প্যাকেটটা টেবিলে রাখলো। 
পিয়াসে এমন আচরণে উনি আশ্চর্য হন নি!
বরং প্যাকেট গুলোর দিকে একনজর তাকিয়ে প্রেমাকে ডাকলেন,
বাবার গলার স্বর শুনে প্রেমা ড্রয়িংরুমে আসে।সঙ্গে নাতাশা এবং প্রেমার মাও চলে আসলেন।
পিয়াসের দিকে তাকাতেই প্রেমা লক্ষ্য করে পিয়াস রেগে আছে।সামান্য বরং বেশিই রেগেছে। তা মুখ দেখে বুঝতে পারে।

'-বাবা আমাকে ডেকেছো? (প্রেমা)
প্রেমার বাবা গম্ভীর্য্য স্বরে বললেন, 'হুম'। এরপর টেবিল থেকে প্যাকেটটা হাতে নিয়ে প্রেমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, ' এটা খোল, দেখ কী আছে? '

হঠাৎ অজানা ভয় এসে প্রেমার মনে হানা দিয়ে উঠে। ভীতু চোখে একবার অভ্রের দিকে তাকাল।সেও কিঞ্চিৎ অবাক হয়েছে। অভ্র চোখের পলক ফেলে প্যাকেটটা হাতে নিতে ইশারা করে।
প্রেমা প্যাকেট হাতে নিয়ে দৃঢ়ভাবে খুলল। ভেতরে হাত দিয়ে দেখলো ছবির মতো কিছু।এবার ভয় আরো দ্বিগুন এসে প্রেমাকে আঁকড়ে ধরে। ছবি গুলে বের করেই প্রেমা থমকে যায়। চোখ দিয়ে আপনা-আপনি পানি আসতে শুরু করে দেয়।কাঁপা হাতে কয়েকটা ছবি দেখার পর হাত থেকে ছবি পড়ে যায়। তখনি অভ্র উঠে   ছবিগুলো কুঁড়িয়ে নেয়।ছবিগুলো দেখে অভ্র রাগ উঠে যায়।তীক্ষ দৃষ্টি ছুঁড়ে পিয়াসের দিকে।
পিয়াসের ঠোঁটের কোণায় বাঁকা হাসি লেগে আছে। সঙ্গে বিশ্বজয়ের হাসিও। 
অভ্র যথাস্থানে ছবিগুলো রেখে টেবিলে প্যাকেটটা ছুঁড়ে মারে।
প্রেমার হাত ধরে অভ্র প্রেমার বাবার সামনে দাঁড়াল। অভ্রকে একদম স্বাভাবিক দেখে পিয়াসের ভ্রু কোঁচকে আসে।কৌতূহল ভরা চাহনি ছুঁড়ে অভ্রের দিকে।

প্রেমার বাবা একবার প্রেমার দিকে এবং অভ্রের দিকে তাকাল।পরমুহূর্তে তাদের হাতের দিকে তাকাল। রাগত্ব স্বরে বলে উঠলেন,
-'তোমদের থেকে আমি এটা আশা করিনি।প্রেমা তুই? তুই আমার মেয়ে হয়ে কীভাবে এ কাজটা করলি। তোরা একে-অপরকে ভালোবাসিস আমাকে বলতি। এতোদিন ধরে এতগুলো সম্পর্ক দু'জনে মিলে এভাবে ভেঙে এসেছিস। একবারো আমাদের কথা ভাবলি না?আমাকে অন্তত জানাতি।
 
প্রেমা আর অভ্র দু'জনে চমকে যায়। বুঝতে পারে পিয়াস সত্যি-মিথ্যে সব একসাথে মিলিয়ে কাহিনী বানিয়ে তাঁর বাবার কানে তুলেছে।এ মুহুর্তে বিষণ রাগ হচ্ছে প্রেমার।পিয়াসকে ভাই হিসেবে অস্বীকার করতেও তার এখন মুখ কাঁপবে না।

-' বাবা আমি আসলে...(প্রেমা)

তখনি অভ্র প্রেমাকে চুপ করিয়ে বলে,
'-আংকেল,প্রেমার কোন দোষ নেই।সব আমিই করেছিলাম। হ্যাঁ বিয়ে ভেঙেছিলাম প্রেমাকে ভালোবাসি বলে নয়।প্রেমার আমার বলেই। যদি আপনি আরো স্পষ্ট ভাবে শুনতে চান তাহলে বলি, আমি আর প্রেমার মধ্যে আলাদা কিছুই নেই।আমরা পুরোপুরি একে-অপরের। আর প্রেম-ভালোবাসা বলে আমাদের ফিলিংসটকে অপমান করবেন না আশা করি।
আপনার সব রকম কথার জবাব আমি দেব।তবে প্রেমার থেকে কিছু জানার চেষ্টা করবেন না।অনুরোধ! 

'-এ ছেলে একদম কথা ঘুরাবে না তোমাকে আমি...(পিয়াস)

পিয়াসের কথায় অভ্র প্রচন্ড রেগে যায়।টেবিলে জগ ছিলো। ঘাঁড় ঘুরিয়ে জগটা হাতে নিয়ে জগের সব পানি পিয়াসের দিকে ছুঁড়ে মারে।

মুহুর্তে সকলে দৃষ্টি বিস্ময়ে চেয়ে যায়। এমন একটা ঘটনা অভ্র ঘটাবে ভাবতে পারেনি।প্রেমার বাবাও অবাক হয়ে যান।পিয়াস বিষণ উগ্র,বদমেজাজি।তাই সবসময় পিয়াসের সাথে কম কথায় সব শেষ করতেন।কিন্তু অভ্রের সাহস দেখে অভ্রের তারিফ করার ইচ্ছে জাগে মনেমনে।
 নাতাশা মনেমনে বিষণ খুশী হয়। পিয়াস রেগে তেড়ে আসলে পিয়াসের বাবা হাত বাড়িয়ে দিয়ে থামিয়ে দেন। পিয়াস উপায় না পেয়ে নাতাশাকে রুমে আসার জন্য ইশারা করে চলে যায়।

নাতাশা যাওয়ার পর অভ্র প্রেমার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, 'আন্টি প্রেমাকে নিয়ে যান আংকেলের সাথে কিছু কথা আছে আমার।'

প্রেমার মাও বিস্ময় কাটাতে পারছেন না।অভ্রকে বিষণ নম্র-ভদ্র ছেলে হিসেবে জানতেন। এখন অভ্রকে শয়তানের হাড্ডি মনে হচ্ছে। স্বামীর দিকে তাকালেই, প্রেমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ইশারা করলেন।
-"চল প্রেমা, (প্রেমার মা)

প্রেমার অভ্রের দিকে তাকিয়ে থেকে চলতে শুরু করে। অভ্র প্রেমার দিকে দৃষ্টি ছুঁড়ে হাসে। 

প্রেমা যেতেই অভ্র বেশ আয়েশ করে সোফায় বসে। হাতের ঘড়িতে সময়টা দেখে।
এরপর প্রেমার বাবার দিকে তাকাল।হটাৎ প্রেমার বাবাও অভ্রের দিকে তাকিয়ে হাসি দেন,এবং বললেন, ' আমার মেয়েকে ভুলে যাও।'

অভ্র হাতের আঙুলের দিকে তাকিয়ে বলে, 'ভুলতে পারি একটা শর্তে,'

প্রেমার বাবা এবার নড়েচড়ে সোফায় বসেন।অভ্রের দিকে চোখ ছোট করে বললেন, 'কী?

অভ্র সব দাঁত দেখিয়ে হেসে বলে, 'আপনার কলিজাটা ছিড়ে আমাকে দিয়ে দেন। তারপর আপনার মেয়েকে অনায়াসে ভুলে যাবো।ট্রাস্ট মি প্রেমার নামটাও মনে থাকবে না।
অভ্রের কথায় প্রেমার বাবা বুকে হাত দেন।ভয়ার্ত স্বরে বললেন, ' তাহলে আমি বাঁচবো কীভাবে? '

অভ্র হাসি চেপে বললেন, 'তাহলে আমি কী করে বাঁচবো।অন্য কোন উপায় আছে। আমার যে কোন একটা চা-ই চাই। সেটা হোক আপনার মেয়ে বা আপনার কলিজা। 

এবার প্রেমার বাবা জোরে হেসে উঠলেন। এতক্ষণের সব নাটকের এখানেই ইতি টানে। হাসতে হাসতে বললেন, ' তোমার বাবা আমাকে আগে থেকে সব জানিয়ে দিয়েছে। উনার কথায় চুপ ছিলাম। কারণ দেখতে চেয়েছিলাম পেঁছন থেকে কে কে ছুরি মারে। আরিয়ানও সব জেনে গেছে।সে আর পিয়াস মিলে তোমাদের ছবি গুলো তুলে এনেছিলো।তখন আমি কিছু বলিনি।আগেও বলবো না।তবে চিন্তা করো না। আমি তোমার পাশেই আছি।
শুধু আমার মেয়েটাকে খুশী রেখো।

কথাগুলো বলে উনি উঠে দাড়ালেন,এবং অভ্রের সামনে এসে দাঁড়ান।অভ্রও দাড়িয়ে প্রেমার বাবাকে জড়িয়ে ধরে।

মনেমনে হাজারো কৃতজ্ঞ জানাল তার বাবাকে।নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে তার।জন্ম না দিয়েও বাবা হওয়ার সবরকমের দায়িত্ব পালন করেছে অভ্রের বাবা।

৫০!!

গরম আজ ঢলে ঢলে পড়ছে। একটুর জন্যও বাহিরে শান্তি পাচ্ছে না কেউ। অভ্রের অবস্থাও কাহিল হয়ে গিয়েছে এ গরমে। প্রেমাদের বাড়ি থেকে খেয়ে দেয়ে বের হয়েছে। প্রেমার বাবা একমাত্র মেয়ের হবু জামাইয়ের বেশ ভালোভাবে আপায়ন করেন। খাওয়ার টেবিলে শুধু প্রেমা অবুঝ বালিকার মতো তাকিয়ে ছিলে। বিন্দু পরিমাণ ধারণাও করতে পারছেনা,কি হচ্ছে বা কি হচ্ছে না। 
পিয়াস একেবারে না খেয়ে বাড়ি থেকে চলে যায়। প্রেমার বাবা ছেলেকে আর পশ্রয় দিবেন না বলে পণ করেন। ছেলে না খেয়ে বেড়িয়ে গেলো তাতে তাঁর কোন মাথা ব্যাথাও নেই।

বিকেল চারটা। অভ্র বাড়ি ফিরে আসে। বাড়িতে প্রবেশ করার আগে আরিয়ান এসে অভ্রের সামনে এসে দাঁড়ায়। মুখে হাসি ঝুলানো। বাঁকা হাসি।
আরিয়ানের হাসি দেখে অভ্রও একটা হাসি দেয়। যা দেখে আরিয়ান ভ্রু কুঁচকে ফেলে। অভ্রের মুখে গম্ভীরতা বদলে হাসি? 
যা আরিয়ানের রাগ বেড়ে যায়। কর্কশ কন্ঠে বলে উঠে,
-'নিজেকে বেশি চালাক মনে করিস তাই না?
আমিও তোকে ছাড়বোনা।তুই প্রতারণা করেছিস আমার সাথে। 

অভ্র আরিয়ানের থেকে চোখ সরিয়ে ভেতরে তাকাল। কেউ নেই। ঘুমোচ্ছে হয়তো।এরপর অভ্র আরিয়ানের দিকে দৃষ্টি ছঁড়লো,

-আমি চালাক নাকি বোকা তার উদাহরণ নিশ্চয় এখন আর আমাকে দিতে হবে না। 

আরিয়ান তেতে উঠে,
'-অতি চালাকের গলায় দড়ি।মনে রাখিস।
অারিয়ানের কথা শুনে অভ্র মৃদু হাসে। আরিয়ানের আরো কাছে গিয়ে দাঁড়াল। 
আবছা কন্ঠে বলে,
'-ভাইয়া, এই ডাইলগটা তুমি শুনাতে শুনাতে আমার কান ব্যথা করে দিয়েছো। সে ছোটবেলায় ও আমি বুদ্ধি বের করে অন্য কৌশলে যদি কিছু করি সেটাকে তুমি অতি চালাক বলো। 'বিকজ ইয়্যূ আর জেলাস!'
যাইহোক এসব কথা বলার সময় আমার হাতে নেই। যাকে বিয়ে করেছো তাকে নিয়ে হ্যাপি থাকো না।'

কথা শেষ করে অভ্র ভেতরে চলে আসে। সিঁড়ি বেঁয়ে উপরে উঠলেই অরির মুখোমুখি হয়। অরি  একটা হাসি দেয়। অভ্র গাল বাঁকা করে অন্য দিকে ফিরে রুমে চলে যায়।
অরি মন খারাপ করে ফেলে। অভ্র হয়তো ওকেও পাপি ভাবে।যেহেতু তাদের রক্ত এক।
অভ্রকে বুঝানো দ্বায়। তবুও সে চেষ্টা করবে। থামবে না। 

আরিয়ানে গা রি রি করছে রাগের কারণে।অভ্র এবং অরি দুজনের উপরেই সমান রাগ তার। বাপ পলিটিক্স করে। সে হুমকি দিয়ে বারেবারে ওকে চুপ করিয়ে রাখে।যদি সত্যিই জেলে হাওয়া খাওয়ানোর জন্য পাঠায়।বিষণ ভয়ে আছে আরিয়ান।

আরিয়ানের নীরব রাগ দেখে অরির হাসি চলে আসে। একচোট হেসে আরিয়ানের সামনে এসে দাড়াল।অরিকে দেখে আরিয়ানের বিষাক্ত নাগিন দেখার মতো অবস্থা। 
- এই আমরা কয়টায় বের হবো? (অরি)
-কিসের কয়টা? (আরিয়ান)
অরি এবার দাঁত কটমট করে বলে,
-শালা, হানিমুন যাওয়ার কথা ভুলে গিয়েছিস?
আরিয়ান ছোটখাটো একটা হার্ট এট্যাক করে।
কথা বলার কী শ্রী। ভাবতেই কপালে ভাঁজ বসে যায়। থমথম গলায় জবাব দেয়, "রাত আট টায়। আমার কিছু কাজ আছে তাই।আর একজন বন্ধু এবং বন্ধুর বউ ও যাবে।"
অরি মাছি তাড়ানোর বান করে বলে,' তাতে আমার কী? তুই যাচ্ছিস এটাই বড় কথা।"

পা চালিয়ে উপরে রুমে চলে যায় অরি।আরিয়ান আহাম্মকের মতো চেয়ে থাকে।বিড়বিড় করে বলে, 'নাহ এই মেয়ের সাথে সংসার, অসম্ভব!"

অভ্র রুমে এসে গোসল করে ফেলে। এরপর দ্রুত নিজের মা-বাবার রুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। নক দিতেই অভ্রের বাবা দরজাটা খোলে। অভ্র প্রবেশ করতেই অভ্র জড়িয়ে ধরে।অভ্র নিজের হাতজোড়া দিয়ে আঁকড়ে ধরে।

অভ্রের বাবা অভ্রকে ছেড়ে দিয়ে বলল, 'ব্যালকণিতে চল,তোর সাথে কথা আছে।তোম মা ওষুধ খেয়ে শুয়েছে।ঘুম ভেঙে গেলে মাথা ধরে যাবে। '
অভ্র মাথা ঘুড়িয়ে বিছানার দিকে তাকাল। তার মমতাময়ী মা, অসহ্য যন্ত্রণায় ভুগছে। তার করাণটাও সে নিজে। সব ক্ষতিই তার জন্য হয়েছে। এর ক্ষতিপূরণ কী শুধু মা-বাবা ডেকে পূরণ করা যায়? অন্য কোন চাওয়া কী নেই।
নিভৃত প্রশ্ন। 
অভ্র তার বাবার দিকে তাকাল। সরল চোখজোড়ায় অঢেল মমতা দেখতে পাই সে। 
-চল অভ্র? 

অভ্রের মৃদু হেসে ব্যালকণির দিকে পা বাড়ালো। দরজাটা চেপে দিয়ে দুজনে সোফায় বসলো। কিছু সময় দুজনে চুপ থাকে।দৃষ্টি সামনে গাছটির পাখির বাসাটির দিকে। কতো যত্নে মা পাখিটি বাচ্চাগুলো আগলে রাখছে।সব মায়েরা এমনই হয়। কিন্তু অভ্রের মা?
হঠাৎ অভ্র মাঝা ঝাঁকিয়ে সব মাথা থেকে ঝেড়ে দেয়। এরপর তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,

-'জরুরী কথা ছিলো বলেছিলে? কী কথা এখন বলো।(অভ্র)
- 'তোর পরীক্ষা আর কয় মাস বাকি?'

-'ছয়মাস' (অভ্র উত্তর দেয়)

-' ছয়মাস পর কী করতে হবে তোর জানা আছে তো?(অভ্রের বাবা)

অভ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।সামনের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলে, 'মনে আছে'
অভ্রের দেখাদেখি অভ্রের বাবাও শ্বাস ছেড়ে সামনের দিকে তাকাল, এরপর বলল, 'তবে তোর জন্য একটা খুশীর সংবাদ ও আছে'

সামনে থেকে দ্রুত চোখ সরায় অভ্র।তার বাবার দিকে প্রশ্নাত্বক দৃষ্টি ছুঁড়ে বলল, "কী"

উনি মুচকি হেসে বললেন, ' তুই না বললেও তোর মনের কথা আমি বুঝি অভ্র' 

প্রতিউত্তরে অভ্র হাসে। আপাততে চুপ থাকতে ইচ্ছে করছে তার। মনটা বড্ড খারাপ হয়ে গেছে অভ্রের। বাবার মুখের উপর না বলার সাহস বা ইচ্ছে কোনটাই নেই তাঁর। আমতা আমতা করে বলল, 'খুশীর সংবাদটা কী বাবা'

-কাল কলেজে যাবি? (অভ্রের বাবা)
অভ্র মলিন হেসে জবাবে বলে, 'হ্যাঁ'

-বেশ! তাহলে তুই আর প্রেমা কাল কলেজ ছুটি হওয়ার পর একসাথে আমার জন্য অপেক্ষা করিস। আমি তোদের ড্রপ করতে যাবো।খুশীর সংবাদটা তোদের দুজনকে একসাথেই দিবো।
অভ্র তার বাবার কথার মানে উদ্ধার করতে পারেনি।চোখ ছোটছোট করে তাকিয়ে থাকে।ভাবে কী এমন খুশীর সংবাদ আছে।

-অভ্র,আমাকে একটা প্রমিস করতে পারবি?

অভ্র অবাক হয়ে তাঁর বাবার দিকে তাকাল।মানুষটাকে আজ কেমন অদ্ভুদ মনে হচ্ছে অভ্রের।এভাবে কখনো কথা বলতে দেখেনি সে। মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করে, 'প্রমিস কেন?'

-তুই কর,তারপর বলছি।

- ঠিক আছে,বলো?

-কথা দিয়েছিস তো? সেই কথাটা আমি সময় আসলেই বলবো। প্লিজ এখন জানার চেষ্টা করিস না আমি বলতে পারবো না। 

অভ্র দাঁত কড়মড় করে বলল, ' থাক বাবা আর কিছু বলিও না,আমিও শুনতে চাই না। যা বলার পরে বলিও আমি উঠলাম। '

অভ্র একপ্রকার রেগে চলে যায়। অভ্রের বাবা তাকিয়ে থাকে কিছু সময়ের জন্য।পরে নিজের সাথে নিজেই হেসে উঠলেন। ফোন হাতে নিয়ে একজনকে ফোন দেয়।

- অভ্রকে বলেছেন? (অচেনা লোক)

-হ্যাঁ আমি সব বলেছি।( বাকি কথাগুলো বলিনি,সেটা নাহয় অজানা থাকুক)। (অভ্রের বাবা)

-ঠিক আছে আপনাকে আর চিন্তা করতে হবেনা। অভ্রের আর কোন ক্ষতি হতে আমি দিবো না। আমার শুধু একটা চোখ নষ্ট হয়েছে বাকি একটা এখনো ঠিক আছে, আর আমার সামর্থ এখনো আগের মতোই আছে।

অচেনা লোকটির কথাগুলো শুনে অভ্রের বাবা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললেন, ' আমার ছেলের জন্য আমি চিন্তার করবো না তো কে করবে?'
অভ্রের বাবার কথা শুনে রাগলেন অচেনা লোকটি। কিন্তু এ রাগের অধিকার তাঁর নেই।তাই চুপ মেরে যায়। 

ফোন রেখে লোকটি পাশের রুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন।  দেখলেন নেশায় বুদ হয়ে বিছানায় এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে তাঁর স্ত্রী, এবং তিন মেয়ে। যদিও বা আদৌ তার মেয়ে কী না সন্দেহ আছে। 

চোখ বুলিয়ে ডুপ্লেক্স বাড়িটির দিকে তাকালেন।
 এ বাড়িটি স্ত্রী এর নামে করে দিয়েছিলে মি.আশিক। আজ সেই ভুলের মাশুল পাচ্ছেন।

-'আর কোন পাপ নয়,'
____________________________

রাত হতেই প্রেমা অভ্রকে ফোন দেয়।বিষণ অস্থির হয়ে আছে সে। অভ্রকে এতোবার ফোন দিয়েছে অভ্র ধরেনি।কোন বিপদ হয়নি তো?
ভাবতেই শরীরের পশম দাঁড়িয়ে যায় প্রেমার।

বিছানায় উবু হয়ে শুয়ে আছে অভ্র। দৃষ্টি ফোনের দিকে। প্রেমার ফোন ইচ্ছে করেই ধরছেনা। কী জবাব দিবে প্রেমাকে? সত্যি কথাটা প্রেমা জানলে পাগলামি শুরু করবে প্রেমা।সে ভয়ে বলতে পারছেনা। 

প্রেমাকে বুঝাতে সময় লাগবে। কিন্তু সেসময় যদি প্রেমা না দেয় তাহলে? 
ভুল বুঝবে ওকে,ভাবতেই অভ্রের বুক মোচড় দিয়ে উঠে।  ফোনে অনবরত কল দেখে রিসিভ না করে থাকতে পারলো না অভ্র। ফোন রিসিভ করেই চুপ হয়ে যায় অভ্র।
অপরপাশে প্রেমা চেঁচিয়ে অভ্রের কান ফাটিয়ে দিচ্ছে, ' কোথায় তুমি অভ্র? কতবার ফোন দিয়েছি? হিসাব আছে তোমার? আমার কী চিন্তা হয় না। নাকি আমাকে এখন ভালে লাগছে না বলে এড়িয়ে যাচ্ছো? যদি সেটা হয় তাহলে তোমার ঘাড় আমি মটকে দিবো।"
প্রেমার কথা শুনে অভ্র নিঃশব্দে হাসে। নিচের ঠোঁট কাঁমড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ে। ঠোঁট ছেড়ে, মৃদু স্বরে বলল, 
' সাহস থাকলে আসো, দেখি কে কার ঘাঁড় মটকাতে পারে।"
অভ্রের এ কথায় প্রেমা 'থ' মেরে যায়। গম্ভীর মুখ মুহুর্তে শিথিল হয়ে যায়। গভীর শ্বাস টেনে প্রেমা বিছানায় শুয়ে বলে, 'তোমাকে মিস করছি বিষণ ' 
অভ্র একচোট হেসে বলল, ' কাল কলেজে এসো,আমিও যাবো। '
অভ্রের কথায় প্রেমা গাল ফুলিয়ে বলে,'আমি কী বলেছি শুনোনি?'
অভ্র হেসে বলে,'শুনিনি আবার বলো'
প্রেমা কপট রেগে, 'ধূর' বলে ফোনের লাইনটা কেটে দেয়। প্রেমার কান্ডে অভ্র হাসে। পরমুহূর্তে চোখমুখ আঁধারে ঢেকে যায়। বিষন্ন মন নিয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। কিন্তু ছটপটানি থামাতে পারেনি।
_____________________

পরেরদিন সকালে,

অভ্র বাইকে বসে ফোন স্ক্যান করছে। চোখেমুখে বিরক্তি।  গেম খেলেও শান্তি পাচ্ছে না।তাই এখন প্রেমার ছবিগুলো দেখছে। সত্যিই এখন আর এক বিন্দু পরিমাণ বিরক্তিও অভ্রের চোখে মুখে দেখা যাচ্ছে।

গেইট খোলার শব্দে মাথা তুলল অভ্র। চোখ থমকে যায় সাময়িক সময়ের জন্য। অনড় দৃষ্টিতে চেয়ে আছে প্রেমার দিকে। প্রেমা এসে অভ্রের সামনে দাঁড়িয়ে যায়।অভ্রের হাত ধরে বাইক থেকে নামিয়ে দেয়। তাতে অভ্র ভ্রু কুঁচকে করে তাকাল। প্রেমার মুখ ভালো করে দর্শন করে। অভ্র এবার বুঝতে পারে প্রেমা এখনো অভিমাণ করে গাল ফুঁলিয়ে রেখেছে। 
 মিষ্টি লাগছে। অভ্র মৃদু শব্দে বলল।
প্রেমা শুনেও না শুনার বান করে। অভ্র আশেপাশে ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিলো।
এরপর প্রেমার হাত ধরে বলল,' অভিমাণ মুখ ফুলিয়ে রেখেছো মানলাম।কিন্তু আমি চাই তুমি অভিযোগ করো। তুমি চুপ থাকলে যে আমার চুপ থাকতে ইচ্ছে করে না।'
শেষের কথাটা বেশ নরম স্বরে বলল।
প্রেমা ঠোঁট বাঁকিয়ে অভ্রের বুকে আলতো করে থাপ্পর মারে, ' তুমি খারাপ,বেশি খারাপ!'
-আমি খারাপ?  কী খারাবি করলাম?
প্রেমা নাক ছিঁটকে বলল, 'অভিযোগ করলাম,তোমার প্রশ্ন তোমার কাছেই রাখো।'
অভ্র হালকা হেসে বাইকে উঠে বসে।বাইক চালিয়ে রওনা দেয় কলেজের উদ্দেশ্য! 
_______________

অভ্র আর প্রেমার ক্লাস শেষ হয়ে যায়।অভ্র বাইকটা সাইকানকে দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।
গেইটের সামনে আসতেই অভ্র তার বাবাকে দেখতে পায়। প্রেমার সাথে টুকটাক কথা বলতে বলে গাড়িতে উঠে।
-অভ্র আমরা কোথায় যাচ্ছি।
অভ্র তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,'জানিনা'

একঘন্টা পর তারা একটা জায়গা এসে পৌঁছায়। আশেপাশে অনেকগুলো শপিংমল রয়েছে। শপিংমল এর পাশ দিয়ে ছোট একটা রাস্তা দিয়ে তারা ভেতরে ঢোকে। সেখানে একটা অফিস দেখা যায়। প্রেমার বাবা সেখানে দাঁড়ানো। প্রেমা তার বাবাকে দেখে খানিকটা চমকে যায়। অভ্র প্রেমার বাবার সাথে কুশলাদি করে।এতক্ষণ বুঝতে না পারলেও এখন অভ্র বুঝতে পারে কোথায় এসেছে।কিন্তু সেখানে প্রেমার কী দরকার ভেবে পায় না সে।
অফিসটির দ্বিতীয় তলায় যায়।
মাঝপথে অভ্র থেমে তাঁর বাবাকে জিজ্ঞেস করে, ' এখানে কেন এসেছি?

উনি মৃদু হেসে বললেন, 'তোদের পাসপোর্ট বানাতে।' 

মুহুর্তে প্রেমা আর অভ্র দুজনে চমকে যায়। অভ্র কিঞ্চিৎ বুঝতে পারলেও এখনো পুরো ব্যপারটা  ধোয়ায়া ওর কাছে। তাই জিজ্ঞেস করে, 'আমাদের মানে?'

তখনি প্রেমার বাবা বলে উঠে, 'তোমার আর প্রেমার। কেন সেটা তো তোমার বাবা বলেছে!

অভ্র কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে,আবার উচ্চস্বরে বলে উঠে, 'কী?'

তখনি তার বাবা এবং প্রেমার বাবা হেসে উঠলেন। অভ্রকে সত্যিই চমকে দিয়েছে। সে এমনটা স্বপ্নেও কল্পনা করেনি। এ মুহুর্তের কথাটা অভ্রের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। 
পরে ভাবে।তাহলে এটাই খুশীর সংবাদ ছিলো।আনন্দে আপ্লুত হয়ে অভ্র তার বাবাকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে।

-' শর্তে এটা কিন্তু ছিলো না, নতুন শক্ত যুক্ত করলাম।কেমন লেগেছে বল?'

অভ্র হাসে। এরপর প্রেমার দিকে দৃষ্টি ছুঁড়লো।
বেচারির মাথায় সব গোল খাচ্ছে।কিছুই বুঝতে পারছেনা।অভ্রের চোখাচোখি হতেই, প্রেমা ঠোঁট আলগা করে কিছু বলার জন্য, তখনি অভ্র বলে উঠে, 'তোমাকে পরে সব বুঝাবো। আগে চলো।'
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।