০৭!!
তন্ময় নীলিমাকে ঠিক করে বসিয়ে দিয়ে বিছানা থেকে নামার চেষ্টা করতেই নীলিমা তন্ময়ের টিশার্টের এক কোণা খামচে ধরলো। তন্ময় নীলিমার মুখের দিকে তাকিয়ে অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও মিষ্টি করে একটা হাসি দিলো। নীলিমা এবার না কেঁদে অভিমানী চোখে তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু বলছেও না, আবার তন্ময়কে যেতেও দিচ্ছে না।
-নীলু? নাস্তাটা রুমে নিয়ে আসি। বেশিক্ষণ লাগবে না তো বউটা?
-না----।
-আরে বাবা? কয়টা বাজে সে খেয়াল আছে? আর দেরি করলে তো ব্রেকফাস্ট আর লাঞ্চ একসাথে করা লাগবো গো পাগলি---।
-না না না। তুমি যাবা না। আমাকে রেখে কোত্থাও যাবা না---।
-নীলি?
-না না না। আমি তোমার কোন কথাই শুনবো না। তুমি এখন কোথাও যেতে-----।
-নীলি? কি হচ্ছে কি এসব?
নীলিমা তন্ময়ের ধমক খেয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে আবার কান্না শুরু করলো। তন্ময় নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। নীলিমা এবার জোরেই কান্না করা শুরু করলো। নিজের মনে একাই বকবক শুরু করলো। কাঁদতে কাঁদতে বেচারির হেঁচকিও উঠে গেছে। তবু নিজের মনে বকবক করেই যাচ্ছে নীলিমা।
-মেয়েটা ঠিকই বলেছে। ও এখন আর আমাকে একটুও ভালোবাসে না। আমি তো পুরোন হয়ে গেছি এখন। আমাকে এখন আর ভালো।লাগবে কেন? তাই ও এখন আর আমার কথাও শোনে না। সে নাকি আমাকে রেখে কোথাও এক পা ও যাবে না। এখন ঠিকই ওই মেয়ের কাছে চলে গেছে। ওই বজ্জাত মেয়ের কাছেই গেছে আমি শিউর। আঁআআআ। আমি থাকবই না আর এখানে। যেদিকে দুচোখ যায় চলেই যাবো আজকে--। আমাকে রেখে অন্য কারো কাছে যাওয়া না? থাকবোই না আমি----।
নীলিমা ফোঁপাতে ফোপাঁতে বিছানা থেকে নামতেই দেখলো তন্ময় দুহাতে দুটো খাবারের প্লেট দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তন্ময়কে দেখে সাথে সাথেই নীলিমা বিছানার উপরে বসে গেল। তন্ময়ও চুপচাপ এসে একটা প্লেট পাশে রেখে অন্য প্লেট থেকে নীলিমাকে খাইয়ে দিচ্ছে। নীলিমা ভয়ে চুপ করে খাবারটা কোনোমতে গিলছে। লোকটার চোখ মুখ দেখেই বেচারি বুঝতে পারছে কি পরিমাণ রেগে গেছে সে। নীলিমা খাবার চুপচাপ খেতে খেতে ভাবার চেষ্টা করছে। তন্ময় কি ওর সব কথাই শুনেছে? তাহলে তো আজ ওর কপালে গুরুতর বিপদ অপেক্ষা করছে।
-আর খাবে? আরেকটু দিবো?
-উহু---। নাহ---।
-ওকে।
নীলিমাকে খাইয়ে দেয়া শেষ হতেই তন্ময় আবার প্লেট দুটো হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। তন্ময় খায় নি খেয়াল হতেই নীলিমা তন্ময়ের টিশার্টটা পিছন থেকে টেনে ধরলো। তন্ময়ও দাঁড়িয়ে রইল হাতে প্লেট নিয়ে।
-আমি কোথাও যাচ্ছি না। রান্নাঘরে প্লেটদুটো রেখে আসতে যাচ্ছি জাস্ট। বড়জোর ১-২ মিনিট সময় লাগবে---।
-তুমি খাও নি কেন? খেয়ে নাও--।
-খাবো না। ছাড়ো। প্লেট রেখেই আসছি। ভয় নেই। কারো কাছে যাচ্ছি না। বিশ্বাস না হলে তুমিও সাথে আসো----।
-তন্ময়? এই? শোনো না?
-শুনছি। বলে ফেলো---।
-তাকাও না এদিকে?
-পারছি না সরি----।
-এই? শোনো না?
-ছাড়বে প্লিজ? এভাবে প্লেট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছে না একদমই। রেখে আসি।
-তুমি-----।
-আর হ্যাঁ? তুমি তো কোথাও যাচ্ছিলে তাই না? রেডি হয়ে নাও। আমি পৌঁছে দিয়ে আসব--।
-এমন করছো কেন?
-রেডি হয়ে নাও---।
-শোনো না? সরি তো? এই দেখো কান ধরছি? প্লিজ খেয়ে নাও না?
-খিদে মরে গেছে আমার---। কারো কথাগুলো শুনে----।
-প্লিজ খেয়ে নাও? আচ্ছা দাও। আমি খাইয়ে দিই----।
-কোন প্রয়োজন নেই--। দু-একবেলা না খেলে তো মরে যাবো না। তাই না?
-তন্ময়?
-তুমি যাও রেডি হয়ে নাও। আমিও চেইঞ্জ করতে হবে তো---।
-তাড়িয়ে দিতে চাইছ তোমার কাছ থেকে?
-ভুল বললেন ম্যাডাম। আমি মোটেও আপনাকে তাড়িয়ে দিচ্ছি না। আপনি নিজে থেকে চলে যাচ্ছেন। আপনার তো আর আমাকে বিশ্বাস হয়না। আপনার এখনও মনে হয় আমি আপনাকে রেখে অন্য কোন মেয়ের কাছে যাবো--। যখন আপনাকে আমি এটাও বলেছি আজকের দিনটা আমরা নিজেদের মতো করে কাটাতে চাই। তবু সেটা কেন বিশ্বাস করবেন আপনি? কে আমি আপনার যে আমার কথা আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে?
-শোনো না? এসব বলো না প্লিজ?
-কি বলবো না? প্রতিবার তুমি আমাকে অবিশ্বাস করবে সেটা তো হতে পারে না তাই না? তাও অবিশ্বাসের কোন একটা কারণ থাকলে তবুও হতো--। কিন্তু তা তো নয়। তোমাকে কে কি বলবে আর তুমি অমনি সেটাকে সত্যি ধরে বসে থাকবে। কান্নাকাটি করবে। চলে যেতে চাইবে আমার কাছ থেকে দূরে। তো ঠিক আছে যাও। আমি আর আটকাবোই না তোমাকে--। তুমি তোমার মতোই ভেবে খুশি থাকো---।
তন্ময়ের কথাটা শেষ হতেই নীলিমার তন্ময়ের টিশার্ট ধরে রাখা হাতটা আপনাআপনিই ছুটে গেল। তন্ময়ও আর না দাঁড়িয়েই প্লেট হাতে রুম থেকে বেরিয়ে গেল৷ প্লেটদুটো রেখে আবার রুমে এসে দেখলো নীলিমা ফ্লোরে বসে বসে ফোঁপাচ্ছে আবার। তন্ময় কিছু না বলেই আলমারি খুলে একটা শাড়ি বের করে নীলিমাকে টেনে ফ্লোর থেকে তুললো। নীলিমার হাতে শাড়িটা ধরিয়ে দিয়ে সরে যাওয়ার আগেই নীলিমা তন্ময়কে জড়িয়ে ধরে এবার জোরে কেঁদে ফেললো। তন্ময় নীলিমাকে আগের মতো বুকে জড়িয়ে ধরলো না দেখে নীলিমা তন্ময়ের হাত দুটো টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরানোর চেষ্টা করলো। তন্ময় কোন রেসপন্সও করলো না।
-জড়িয়ে ধরো না প্লিজ? এমন করছো কেন?
-আপনাকে রেডি হতে বলা হয়েছে-।
-আমি কি বলছি----।
-জি শুনলাম তো৷ বহুক্ষণ ধরে শুনেছি। তাই রেডি হতে বললাম--।
-সরি-----।
-একসাথে থাকতে গেলে টাকা পয়সা, আভিজাত্য এসবের চেয়েও বিশ্বাস থাকাটা বেশি জরুরি নীলি। একটা সম্পর্কে বিশ্বাসই যদি না থাকে তাহলে-----।
-তাহলে?
-তাহলে সেখানে আর যাই হোক ভালোবাসাটা থাকে না। আর ভালোবাসাই যেখানে নেই সেই সম্পর্কটা বোঝার মতো টানার তো দরকার নেই---।
-কি বললে তুমি? বোঝার মতো-----।
-যেটা আপনি শুনলেন তাই বললাম--। আর এমনিতেও তো আমি আপনাকে সকালেই এতো করে বুঝালাম। কি লাভ হলো তাতে? হুহ--। যার সাথে থাকারই ইচ্ছে নেই তার থেকে ছোটার জন্য মানুষ কতোই না বাহানা খোঁজে। এতো কষ্ট করে বাহানা খুঁজতে হবে না আর। কোথায় যেতে চান বলুন। আমি দায়িত্ব নিয়ে আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসবো---।
-কি বললে তুমি তন্ময়? আমি তোমার থেকে আলাদা হওয়ার জন্য বাহানা করছি এসব? বলতে পারলে তুমি এটা---?
-জি পারলাম। নইলে গতকাল একবার কে বলেছে আমি নাকি সেই মহিলার সাথে ছিলাম। আপনি কি সহজে সেটা বিশ্বাস করে নিলেন-। আমাকে তো চিনেন না আপনি তাই না? আচ্ছা কালকের ঘটনা বাদ দিন। আজকে কি হয়েছে বলুন তো? বললাম আজকের দিনটা আমি আপনার সাথে---। কিন্তু কোথাকার কে বললো আমি কার কাছে যাবো আপনি সেটাও বিশ্বাস করে নিলেন--। ওয়াও---।
-তন্ময় আমি------।
-একটা কথা বলো তো নীলি? আমি কি এমন করেছি যাতে তোমার বিশ্বাসটা ভেঙেছে? কখনো কি এমন কোন কাজ করেছি বলো তো? তবু কেন বারবার একই----? বাদ দাও। রেডি-----।
নীলিমা এবার তন্ময়কে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করেই কেঁদে ফেললো। তন্ময়কে অবিশ্বাস করতে ও তো নিজেও চায় না৷ তবু কেন বারবার এসব মেয়েদের কল এলে মাথা খারাপ হয়ে যায় ওর। কেন মনে হয় ও নিজেই আসলে তন্ময়ের যোগ্য না? কেন মনে হয় হুট করে কোন ঝড় এসে ওর ছোট্ট সুখের সংসারটা ভাসিয়ে নিয়ে যাবে? এই ভয়টার কারণে সবকিছু কেমন ওলট-পালট হয়ে যায় নীলিমার। কি করে বোঝাবে সেটা ও তন্ময়কে? তন্ময়ও একটু অপেক্ষা করে নীলিমার কোমড় পেঁচিয়ে বুকে শক্ত করে বেঁধে নিলো।
-এই মেয়ে? এভাবে কাঁদছ কেন? আমি কি মরে গেছি হ্যাঁ? তুমি কাঁদলে আমার বুকের ভিতরে কতোটা কষ্ট হয় জানো না? তবু কেন কাঁদো এমন?
-------------------------------
-রাগ হয়েছে বউটার? হুম? এতোগুলো বকা দিয়েছি বলে? সরি তো নীলুসোনা? সরি সরি। সরি বউটা।
-উহুঁ---। আমি সরি----।
-শশশশশশ। চুপ---। নীলি? খুব খিদে লেগেছে তো। আজকে খাইয়ে দিবা প্লিজ?
-হুম---। চলো----।
-আগে আমার মিষ্টিটা নিয়ে নিই দাঁড়াও-----।
-আরে? তুমি?
তন্ময় নীলিমার মুখটা তুলে ধরে ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। আজ আরেকবার হাজারটা অভিমান আর আশঙ্কা ভেঙ্গে দুজন ভালোবাসার মানুষের কথা হবে ঠোঁটের ছোঁয়ায় আর নতুন করে লেখা হবে ভালোবাসার একটা নতুন অধ্যায়।
০৮!!
তন্ময় ডাইনিং রুমে টেবিলে বসে আছে। আর নীলিমা ওর পাশের চেয়ারে বসে ওকে খাইয়ে দিচ্ছে। আর তন্ময় খেতে খেতেই একমনে বসে ভাবছে কিছু। নীলিমাও ব্যাপারটা খেয়াল করলো। একবার তন্ময়ের নাম ধরে ডাকলো। কিন্তু তন্ময় ভাবনায় এতো মগ্ন যে তার হুঁশই নেই। নীলিমা আর কিছু না তন্ময়ের গালে হুট করে একটা চুমো খেল। তন্ময় একটু নড়ে ভ্রু কুঁচকে নীলিমার মুখের দিকে তাকালো।
-কি ম্যাডাম?
-কি?
-হঠাৎ না চাইতেই ভালোবাসা দিচ্ছেন কাহিনী কি?
-আমার না তোমার কাহিনী কি? কি ভাবছ এতো? ডাকছি শুনছও না তুমি--।
-না। ভাবছি না। বলো না?
-বলবে না সেটা বলো---।
-বলো না বাবা?
-আর নিবো?
-উঁহু--। তোমার তুলি ফিরে নি এখনো?
-না। দেখলাম না তো। আচ্ছা তুমি রুমে যাও। আমি রান্না করি দুপুরের জন্য---।
-অলরেডি দুপুর হয়ে গেছে ম্যাডাম--।
-হুম----।
-নীলি? রুমে চলো না? রান্না করা লাগবে না। রেস্টুরেন্ট থেকে আনিয়ে নিবো আজকে---।
-আরে নাহ।
-চুপ কথা কম। আমার কোন কথাই তুমি শোনো না দেখছি তো আজকাল। বড্ড বেশিই দুষ্টু হয়ে যাচ্ছো। মানবো না কিন্তু এসব আমি। বলে দিলাম।
তন্ময়ের সাথে কথা বলতে বলতে নীলিমা হাতটা ধুয়ে রান্নাঘরে প্লেট বাটি রেখে এসেছিল। এখন তন্ময়ের মুখ মুছিয়ে দিয়ে তন্ময়ের গলা জড়িয়ে ধরলো। তন্ময়ও নীলিমার কোমড় পেঁচিয়ে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরলো।
-আচ্ছা? কি করবে শুনি?
-শাস্তি হবে ম্যাডাম---। ভয়ংকর শাস্তি---।
-আচ্ছা? শুনি কেমন তোমার ভয়ংকর শাস্তি?
-বললে তো এখনই টুকটুকে লাল হয়ে যাবে লজ্জায়--। সারাদিন আমার দিকে তাকাতেই পারবে না সে আলাদা কথা---।
-যাহ! সবসময় এসব বলতে হয় বুঝি তোমার?
-আমি কি খারাপ কিছু বলেছি? তুমি না শুনতে চাইলে---।
-ইশ! এখন সব দোষ আমার না?
-জি সব আপনার দোষ ম্যাডাম--।
-হুহ---। ভালো হইসে একদম--।
-ভালো হইসে না? তোমাকে দেখাচ্ছি তো আমি৷ চলো রুমে---।
-আরে? কি করছ?
তন্ময় হুট করে নীলিমাকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিতেই নীলিমা লজ্জা পেয়ে তন্ময়ের বুকে মুখ ডুবালো।
-কি করো এসব?
-নীলি? বলো না?
-হুম? কি বলবো?
-আজকে কে কি বলেছে তোমাকে?
-------------------------------
-প্লিজ বলো? আমি জাস্ট তাকে খুঁজে বের করতে চাই কে আমার জানটাকে আমার থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করছে। একবার খুঁজে পেলে তারপর তার কি অবস্থা করি আমি----।
-বাদ দাও না এসব---।
-না---। বলো কি বলেছে?
-বলেছে---। আর দেখাইসেও-।
-কোথায় কি দেখিয়েছে?-- নীলি? কি জিজ্ঞেস করছি তোমাকে?
-রুমে চলো না?
-হ্যাঁ? কি?
-রুমে গিয়ে দেখাচ্ছি---।
-হুম? হুম--। চলো---।
তন্ময় নীলিমাকে পাঁজাকোলা করে নিয়েই রুমে গেল। তারপর নীলিমাকে নিয়েই বিছানায় বসে পড়লো তন্ময়।
-এই নীলু? বলো না এবার?
-এক মিনিট ওয়েট করো----।
-হুম----।
নীলিমা তন্ময়ের কোল থেকে উঠে এসে ড্রয়ার থেকে কিসের একটা খাম বের করে তন্ময়ের হাতে ধরিয়ে দিলো। তন্ময় ভ্রু কুঁচকে একবার নীলিমাকে দেখে খামটা খুলে দেখলো বেশ ১০-১২ টা ছবি। ছবিগুলো দেখেই তন্ময়ের মনে হলো ওর সারা শরীর যেন ঠান্ডা হয়ে আসছে। কোন রকম এডিট করা নয় ছবিগুলো, এটা তন্ময়ও বেশ ভালো করেই জানে। কিন্তু এই ছবিগুলো নীলিমাকে কে বা কেন পাঠিয়েছে সেটাই মাথায় ঢুকছে না তন্ময়ের। কিন্তু এই ছবিগুলোই বা পাবে কোথায়? এসব ভাবতে ভাবতেই তন্ময়ের মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়।
তন্ময়ের মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে দেখে নীলিমা তন্ময়ের হাত থেকে ছবিগুলো একপাশে রেখে কোলে বসে তন্ময়কে জড়িয়ে ধরলো। তন্ময়েরও হুঁশ হলে নীলিমাকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।
-নীলি? এই ছবি-ছবিগুলো তোমাকে-তোমাকে কে দিয়েছে?
-কেউ দেয় নি। তুমি শাওয়ার নিতে ঢোকার পর কলিংবেলের আওয়াজ শুনে গিয়ে দেখি এই প্যাকেটটা--।
-কল-কলও তো এসেছিল তখন? কে কল করেছিল? কি বলেছে তোমাকে?
-আম--। এই যে ছবির মেয়েটাই নাকি কল করেছে। নাম বলেছে--।
-তনয়া?
-হুম----। তনয়া---। তুমি নাকি প্রত্যেকদিন বিকেলে ওর কাছে যাও। আমাকে বাসায় মিথ্যে বলে----।
-নীলি? বিশ্বাস করো----।
-সরি তন্ময়---। আম সরি--।
-হেই পাগলী? তুমি কেন সরি বলছ? কিন্তু সত্যি ঘুমপরীটা। আমি----।
-সরি তন্ময়--। তখন টেনশনে একদমই খেয়াল করি নি যে ছবিগুলো বেশ অনেকদিন আগের তোলা। এই ছবি এখনকার হতেই পারে না।
-হ্যাঁ? কি?
-তোমার অতীতে কে ছিল সেটা আমার জানার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই তন্ময়। আমি তোমার আজ হয়ে তোমার পাশে তোমার ভবিষ্যৎ পর্যন্ত সঙ্গী হয়ে থাকতে চাই। আর কিচ্ছু চাই না বিশ্বাস করো।
-নীলি? ও হলো-----।
-থাক না। বাদ দাও উনার কথা--।
-সত্যিটা তোমার জানা দরকার নীলু। নইলে এমন আরো হাজারটা কনফিউশান তৈরি করতে লোকের অভাব হবে না। অন্তত এই ঘটনার পর আমার মনে হয় আমার সবটা তোমার জানা উচিত--। এবং সেটা আজই---।
-কি জানা উচিত? তনয়াকে খুব ভালোবাসতে সেটা?
-আবার রাগ করছ?
-নাহ--। বলো। তোমার প্রেম কাহিনী শুনি--। বলো বলো? তা তোমাদের এতো ভালোবাসা ছিল তাহলে আলাদা হলে কেন তোমরা? কই বলো?
-নীলি? তনয়া আর নেই--।
-কি? নেই মানে কি? আমি আজও---।
-তোমাকে কে কেন কল করেছে আমি জানি না। তনয়া আমাদের চোখের সামনে একটা ব্লাস্টে মারা গেছে---।
-হোয়াট?
-হ্যাঁ--। আর আমাদের মধ্যে কোন সম্পর্কও ছিল না। হ্যাঁ তনয়া কলেজ লাইফ থেকেই আমার বেস্ট ফ্রেন্ডদের একজন ছিল। ভালোবাসতো ও আমাকে--। কিন্তু ওর জন্য কখনো কিছু ফিল করি নি আমি। তাই---।
-তবে যে? তবে যে মেয়েটা বললো ও তনয়া? কেন?
-রিল্যাক্স নীলি প্লিজ? আমি জানি না কে বা কারা কাজটা করছে। তবে জানার চেষ্টা করবো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব---।
-হ্যাঁ?
-নীলু? খুব ঘুম পাচ্ছে। তোমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে না ঘুমালে তো ঘুম হবে না--। আসো বুকে আসো?
-হুম----।
তন্ময় নীলিমাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে কি মনে হতে উঠে গিয়ে কয়েকটা জিনিস নিয়ে নীলিমার পাশে এসে শুয়ে পড়লো। নীলিমার হাতে জিনিসগুলো ধরিয়ে দিয়ে নীলিমাকে হালকা করে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজলো তন্ময়।
-আরে? এসব কেন দিয়েছ?
-বউদের প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে স্বামীর খুঁটিনাটি বিষয়ের দিকে চিলের মতো নজর রাখা। বুঝসো? নইলে ফোনের কাহিনীগুলো সত্যি হতে কিন্তু সময় লাগবে না----।
-টিজ করছো?
-আরে একদমই না। তুমি তো আর এখনই ঘুমাবা না। তাই ঘুম না আসা পর্যন্ত আমার মোবাইল আর পার্সে কি কি আছে সেটা নিয়ে গবেষণা করো--। আমি ঘুমাই---।
-আরে? তন্ময়?
তন্ময় আর একটা কথাও না বলে নীলিমাকে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজলো। একসময় ঘুমিয়েও গেল। আর নীলিমা কি করবে ভাবতে ভাবতে তন্ময়ের মোবাইল আর পার্স হাতে নিয়েই শুয়ে রইলো। কি মনে হতে মোবাইলটা পাশে রেখে পার্সটা দেখায় মন দিলো নীলিমা। আর পার্সটা খুলেই পুরো হা হয়ে গেল বেচারি।