ছেলেদের মন বিভ্রান্তি by মুন্নি আক্তার প্রিয়া |
বান্ধবীরা মিলে রেষ্টুরেন্টে গিয়েছি কফি খাবো বলে। কিন্তু সমস্যা বাধলো বসা নিয়ে। একেকটায় টেবিলে চারটে করে চেয়ার আবার কয়েকটা টেবিলে দুইটা করে চেয়ার। আমরা বান্ধবী হলাম পাঁচজন। চারজন তো বসেই পড়েছে, শুধু আমি বাদে। আর একটা টেবিলে একটা চেয়ার ছাড়া আর কোনো টেবিল বা চেয়ার নেই। তাই বাধ্য হয়ে ঐ টেবিলে যে ছেলেটা বসে ছিল তাকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
- ভাইয়া, আপনার কি কেউ আসবে? না মানে আপনি যদি একাই হন তাহলে আমি চেয়ারটা নিতে পারতাম!
ছেলেটা অগ্নিমূর্তি ধারণ করে বলে,
- আমি আপনার কোন জন্মের ভাইয়া শুনি? চেয়ার লাগবে তো চেয়ার নিয়ে যাবেন ভাইয়া কেন ডাকেন আজিব!
ছেলেটার কথা শুনে হা করে তাকিয়ে আছি, এই মুহূর্তে কি বলবো আর কি বলা উচিৎ বুঝতেছি না। কিন্তু আমাকে তো কিছু একটা বলতেই হবে।
- আরে আজিব লোক তো আপনি। ভাইয়া ডেকেছি সম্মান দিয়ে। এতে এত রিয়াক্টের কি আছে বুঝলাম না।
- এতকিছু বুঝতে হবেনা। আমার বোন একটাই। আমার মায়ের পেটের বোন। আর কোনো বোন নেই বুঝেছেন? আর আপনার মত কোনো সুন্দরী বোন তো হতেই পারে না!
ছেলেটা কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেল। কিসের আর কফি খাবো! মেজাজ গিয়েছে খারাপ হয়ে। তাই বান্ধবীদের রেখেই বাসায় চলে আসছি।
পরেরদিন সকালে রেডি হয়ে বাসস্টপে দাঁড়িয়ে আছি, কলেজে যাবো বলে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই বাস এসে হাজির। বাসে উঠে সারা বাস খুঁজেও একটা জানালার কাছে সিট পেলাম না।
তাই অন্য সিটেই বসে পড়লাম। কিন্তু ঠিক শান্তি পাচ্ছিলাম না জানালার পাশে সিট ছাড়া বসে। আমার পাশে যে ছেলেটা বসেছে সে বেশ হ্যান্ডসাম! ভাবছি তাকে বলে দেখি যদি সিট'টা দেয় আরকি! কিন্তু কি বলে সম্বোধন করবো? আর যাই হোক ভাইয়া তো বলাই যাবে না। খালু? মামা? চাচা? কাকা? নাহ্ এগুলা বললে রাগ করতে পারে। একটু স্টাইল করে আংকেল ডাকলে নিশ্চয় খুশি হয়ে সিট টা আমাকে দিয়ে দিবে। যেই ভাবা সেই কাজ,
- বলছিলাম কি আংকেল, আমার না জানালা ছাড়া সিটে বসতে কষ্ট হয়। যদি আপনি আমার সিটে আর আপনার সিট টা আমাকে দিতেন তাহলে খুব ভালো হতো। (বিনয়ী স্বরে)
- এই মেয়ে, আমাকে তোমার কোন দিক থেকে আংকেল মনে হলো হ্যাঁ? আমাকে দেখে কি তোমার বুড়ো মনে হয়?(রাগি লুক নিয়ে)
এক কথায় দুই কথায় তার সাথে তুলকালাম কান্ড বেঁধে গেছে আমার। শেষে জানালার পাশে সিট তো দূরে থাক উল্টো বাস থেকেই নামিয়ে দিলো আমাদের।
বজ্জাত ছেলেদের মন বুঝা বড় দ্বায় আজকাল!!
কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে সবাই মিলে ফুসকা খেতে গেলাম।
পুরো টেবিলটা জুড়ে একা একটা ছেলে বসে রয়েছে। তাই ভাবলাম তাকে অন্য টেবিলে যেতে বলে আমরা সবাই এটায় বসবো। কিন্তু কি বলে ডাকবো? ভাইয়া, কাকা, মামা, আংকেল তো বলা যাবেনা। তাহলে কি বলবো? দুলাভাই? হু তাই বলি কারণ আমার তো আর বড় বোন নেই তাই দুলাভাই বললেও সমস্যা নেই।
- এই যে দুলাভাই, আপনি অন্য টেবিলে গিয়ে বসলে আমরা সবাই এই টেবিলটায় বসতে পারি। আসলে আমরা অনেকজন তো তাই।
তখনই ঝড়ের বেগে হুট করে একটা মেয়ে এসে বলে,
- দুলাভাই মানে? (ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বলে)
- হ্যাঁ, তাইতো দুলাভাই মানে? (ছেলেটা)
-তার মানে তুমি আমাকে রেখে আরেকটা বিয়ে করেছো? আর এই মেয়ে তারই বোন? (তার বউ)
আবহাওয়া খারাপ বুঝতে পেরে মানে মানে কেটে পড়লাম।
বাড়িতে এসে প্রতিজ্ঞা নিলাম আর কোনো ছেলেকেই কিছু বলে সম্বোধন করবো না। কি বিভ্রান্তি রে বাবা!
একটা গান আছে না, ভারতীয় বাংলা ছবির অঙ্কুশের? আশিকি ছবি।ছবিটায় একটা গান আছে, মেয়েদের মন বোঝা নয়রে নয় সোজা। এখন মনে হচ্ছে গানটা উল্টো হলে ঠিক হতো, ছেলেদের মন বোঝা নয়রে নয় সোজা!!
এর বেশ কিছুদিন সময় পার হয়ে গেল। একদিন সকালে আম্মু এসে বললো আব্বুর বন্ধুর ছেলের সাথে নাকি আমার বিয়ে ঠিক করেছে। তাই কফিশপে গিয়ে যেন ছেলেটার সাথে দেখা করে আসি।
- কি বলো এসব মা? হুটহাট এভাবে বিয়ে ঠিক করছো মানে। তাও আবার আমাকে না জানিয়েই!
- তুই তো তুর্যকে চিনিসই (আম্মু)
- তুর্য!!?
- হ্যাঁ
- তাহলে দেখা করাই যায়। (কারণ তুর্য তো আমার ক্রাশ)
শাড়ি পড়েছি আজ। হবু বরের সাথে দেখা করবো বলে কথা! ইশ ভাবতেই কি লজ্জা লাগছে।
কফিশপে গিয়ে দেখি তুর্য এখনো আসেনি।
সেটা সমস্যা নয়, সমস্যা আবারও সেই বসা নিয়েই। কি তাজ্জব ব্যাপার সবসময় কি আমার সাথেই এমন হয়!
একটা টেবিলে একটা চেয়ারই খালি। কিন্তু কি বলবো ছেলেটাকে এবার! সেদিনের মত আজ কোনে সিনক্রিয়েট করা যাবে না।
- এই জান, এই বাবু এই চেয়ারটা ছেড়ে দিন তো আপনার তো কফি খাওয়া শেষই!
ছেলেটা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে অবাক হয়ে। আর পেছন থেকে হাত তালি দিতে দিতে তুর্য আমার সামনে এসে বলে,
- বাহ্ বাহ্! তোমার তো দেখছি বাবু জানও আছে। তাহলে আমার সাথে দেখা করতে আসছো কেন?
- আরে আমার কথাটা তো শুনো!
- চুপ! কোনো কথা শুনতে চাই না আমি।
আর কিছু বলতে না দিয়েই তুর্য চলে গেল!!
হায় আল্লাহ্! তুমিই বলে দাও অপরিচিত ছেলেদের কি বলে ডাকলে আর কোনো ঝামেলা হবেনা।
মা! মা গো, তোমার মেয়ের কপালে জামাই নাই গো!
***(সমাপ্ত)***