উপল নূড়ি - পর্ব ০৪ - সুলতানা পারভীন - ধারাবাহিক গল্প


০৭!!

সপ্তাহ খানেক পর একদিন সকালবেলা সবাই নাস্তা শেষ করে সবে ড্রইংরুমে বসেছে এমন সময় উপল নূড়ির কলিংবেল টুং টাং কর বেজে উঠলো। জীবন এসে দরজা খুলেই সামনে দাঁড়ানো মানুষটাকে দেখে একটু অবাক হলো। কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে করমর্দন করে কথা বলতে বলতে ড্রইংরুমে এনে বসালো। জীবনের বাবা মা লোকটাকে দেখে চিনতে পারলেন না। 

-স্যার আপনি একটু বসুন---। আমি আসছি---।

-ওকে মিস্টার জীবন।

লোকটা জীবনের বাবার সাথে কেমন আছে, শরীর কেমন এসব নিয়ে কথা শুরু করেছে দেখে জীবন মুখ টিপে হেসে রান্নাঘরে গেল তানিশার কাছে। তানিশা এক মনে কাজ করছে দেখে পিছনে দাঁড়িয়ে কানে ফুঁ দিলো জীবন। 

-আরে??

-কি করো?

-এই তো গোছাচ্ছি রান্নাঘরটা। কলিংবেল বাজলো শুনলাম। কে এসেছে গো?

-ও হ্যাঁ-। একজন গেস্ট এসেছে--। চলো---।

-গেস্ট!! কে?

-আরে চলো না? গেলেই দেখবে--। বাবা! এতো প্রশ্ন করো না তুমি-।

-আর তুমি কখনোই আমার প্রশ্নের জবাব দাও না-। বলো না কে এসেছে--। চা করি একটু দাঁড়াও--।

-আরে! চা পরে হবে--। তুমি যাও আগে ড্রইংরুমে। 

-আচ্ছা--। চলো---।

-তুমি যাও--। আমি আসছি---।

-হুম। ওকে--।

তানিশা ড্রইংরুমে এসে পুরো থতমত খেয়ে গেল। ওর অফিসের বস বসে বসে ওর শ্বশুরের সাথে গল্প করছে দেখে কি রিএ্যাক্ট করবে সেটাই ভেবে পাচ্ছে না বেচারি। কয়েক বার চেষ্টা করার পর গলা দিয়ে শব্দ বের হলো তানিশার।

-স্যার? আপনি!! এখানে!!

-ও তানিশা। এসে গেছ? তা কেমন আছো?

-জি স্যার? জি ভালো আছি--।

-অফিসে আসছো না এক সপ্তাহ ধরে--। তাই দেখতে আসলাম--।

-জি??

-এখন দেখছি সুস্থই আছো--। তোমার বাবাও সুস্থ। তাহলে অফিস কামাই করছো কেন? তোমার মতো পাংচুয়াল প্রজেক্ট হেডের কাছ থেকে তো এসব আশা করা যায় না তানিশা।

-স্যার---। আমি রেজিগনেশন দিয়ে এসেছিলাম সেদিন---।

-ও আচ্ছা। তাই নাকি? আমি তো জানতামই না---। 

-জি?

-দেখো তুমি সেদিন রাগের মাথায় কি দিয়েছ সেটা আমার দেখার দরকার মনে হয়নি। তাই তোমার লেটারটা খুলে পড়ার কোন দরকার ছিল বলেও মনে হয়নি--। তাই সেটা খুলেও দেখি নি। এই নাও তোমার রেজিগনেশন লেটার--।

তানিশার বস খামটা টি টেবিলের উপরে রাখলো। তানিশাও একবার খামটা দেখছে আর একবার বসকে। জীবনের বাবা মায়েরও একই অবস্থা। কি হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছে না তারাও। জীবনের বাবা এবার তানিশার দিকে তাকালো। 

-তুমি জব ছেড়ে দিয়েছ কবে? আর আমাদেরকে কিছু জানাও নি কেন? আর তোমার বস কি বলছে বলো তো?

-আঙ্কেল আমি আপনাকে বলছি কি হয়েছে। সেদিন সন্ধ্যায় একটা জরুরি মিটিং ছিল স্পন্সর কোম্পানির সাথে। সেটা তড়িঘড়ি করে শেষ করে দিয়ে ও চলে এলো। তার পরদিন সকালে ওকে কল করলাম একটু তাড়াতাড়ি এসে প্রজেক্টের কাজটা যেন শুরু করে--। কিন্তু সেটা না করে উল্টো বললো কিনা ওর ছুটি লাগবে--। কারণ জিজ্ঞেস করলে বললো আপনার নাকি শরীর খারাপ। এখন বলুন তো? ফ্যামেলি প্রবলেম ইস্যু দেখিয়ে কাজে ফাঁকি দিলে মেজাজ খারাপ হবে না? তাই আমিও ওকে বকাবকি করেছি একটু---। আর এই মেয়েটা সোজা অফিসে গিয়ে রেজিগনেশন লেটার দিয়ে চলে এলো--। এটা কোন ধরনের পাগলামি বলুন তো আঙ্কেল?

-স্যার--আমি সব কাজ আপনার পি.এ কে বুঝিয়ে দিয়ে এসেছিলাম--। আর এটাও বলে এসেছিলাম কোন প্রবলেম হলে আমার সাথে কন্ট্রাক্ট করতে---। আর প্রজেক্টে তো কোন সমস্যা হয় নি--। আমারও দরকার পড়ে নি তাই। প্রজেক্টটা আপনার কোম্পানি পেয়ে গেছে---।

-আপনার কোম্পানি বলছ কেন তানিশা? এটা তোমার কোম্পানি না? আমি তো জানি তুমি সবগুলো প্রজেক্টই পারসোনালি খুব কেয়ারফুলি হ্যান্ডেন করো--। তবু একটা সিলি কথা নিয়ে এভাবে জব ছেড়ে দিলে সেটাকে কি বলে জানো? পাগলামি---।

-----------------------

-আঙ্কেল আপনাকে বলি শুনুন। সেদিন ও যখন বললো ফ্যামেলি মেম্বার অসুস্থ তাই ছুটি দরকার, বিশ্বাস করুন মেজাজ এতো খারাপ হয়েছিল-। মেয়েদের এই এক স্বভাব ভিষণ বিরক্ত লাগে। বিয়ের আগে নিজের বাবা মায়ের অসুস্থতার দোহাই দিবে, বিয়ের পর শ্বশুর শাশুড়ির, তারপর প্রেগ্ন্যাসির, তারপর বাচ্চা কাচ্চার--। এসব করে করে নিজের ক্যারিয়ারের দিকে নজরই দেয় না এরা--। আজ অমুক, কাল তমুক করে করে নিজের স্কিলটাই নষ্ট করে দেয়--। শুধু এসবই না। তাদের বাসায় ফিরে রান্না করতে হবে, শ্বশুর শাশুড়ির সেবা করতে হবে, এই সেই কাহিনী করে বাসায় কাজটা যে এগিয়ে রাখবে তা আর হয় না। সব কাজ অফিসে বসেই করতে হয় সে কারণে। আর সেখানেও এমন ফাঁকি!!

-----------------------

-ওকে কি খারাপ কিছু বলেছি জিজ্ঞেস করুন? ওকে আমি বলেছি ফ্যামেলি তো আজীবনই পাশে থাকবে, তাই আপাতত নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে মাথা ঘামাতে। কজ জবটা তো আর সারাজীবন করতে পারবে না। ফরমাল জবের একটা তো প্রসিডিওর মেইনটেইন করতে হয়। ফ্যামেলির কেউ অসুস্থ হলে হসপিটাল আছে, ডক্টর আছে, নার্সরা টেইক কেয়ার করবে। এতো চিন্তা করারও কিছু নেই, কাজে গ্যাপ দেয়ারও কিছু নেই--। 

-হুম---। সেটাও ঠিক বলেছ বাবা।

-এই মেয়ে কি করলো শুনুন আঙ্কেল। ওকে আমি বললাম কি আর ও বুঝলো কি! অফিসে গিয়ে রেজিগনেশন দিয়ে এলো। বললো, যে জবের কারণে ফ্যামেলিকে কম্প্রোমাইজ করতে হবে সেই জবই নাকি করবে না। এটা কেমন কথা বলুন? আমি কি ওকে ফ্যামেলির কথা ভাবতে মানা করেছি? শুধু বলেছিলাম ফ্যামেলির পাশাপাশি নিজের ক্যারিয়ারের দিকটাও ভাবতে---। আর এই মেয়ে কি বুঝলো!! আচ্ছা যাক সে সব। ও রাগ করে চলে এলো। আমিও প্রজেক্টের কাজে বিজি হয়ে গেলাম। তাই আর খোঁজ খবর নিতে পারি নি। ভাবলাম আপনি সুস্থ হলে আবার জয়েন করবে--। কিন্তু দেখুন সে এখনও জেদ ধরেই বসে আছে--।

-স্যার---। 

-একটাও কথা বলবে না তানিশা। তোমাদের মেয়েদের আসলেই সমস্যা আছে বুঝলে? বলি একটা বুঝে একটা। আমার ওয়াইফ। সে জব করে না। বাসায়ই থাকে। এই তো দুদিন আগে আমি প্রজেক্টের জন্য বাইরে যাওয়ার পর আমার মা অসুস্থ হলে কিভাবে কিভাবে সবটা সামাল দিয়ে ফেলেছে। অথচ ও একা একা ঘর থেকে কোথাও যায় পর্যন্ত না। ওকে বললাম হসপিটালে অবজারভেশনে রাখি মাকে। সেখানে চিকিৎসা হবে। মেয়ে এতো রেগে গেলো কি বলবো। তখন বুঝতে পারলাম একটা মেয়ে তার পরিবারের জন্য কতটা প্রসেসিভ।

তানিশা, জীবনের মা, জীবনের বাবা সবাই চুপ করে তানিশার বসের কথা শুনছে। কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। জীবন ট্রেতে করে চা নাস্তা নিয়ে এসে টি টেবিলের উপরে রেখে তানিশার পাশে এসে দাঁড়ালো।

-স্যার--একটু চা নাস্তা করুন। আশা করি এতোক্ষণে আপনাদের কথাবার্তা সব হয়ে গেছে। 

-কথা আর হলো কই? আপনার ওয়াইফ কবে নাগাদ জয়েন করবে সেটাই তো জানা হলো না। 

-স্যার---। জবটা আমি ছেড়েছি যখন তখন সেখানে ফিরে যাওয়া আর পসিবল না---।

-আঙ্কেল আপনি বলুন তো। একে আমি আর কি করে বোঝাই? একটা রেজিগনেশন লেটার কি ওর সাথে আমাদের কোম্পানির এতোদিনের সম্পর্কটা শেষ করে দিতে পারে? আর যেখানে রেজিগনেশনটা আমরা এ্যালাউই করলাম না----। এই যে মেয়ে শোনো। তুমি পারসোনাল কারণে ছুটিতে ছিলে আমি জানি এই কথা। আর তিনদিন সময় পাবে ছুটির। এতোদিন পাংচুয়াল ছিলে তাই ১০ দিন পর্যন্ত ছুটি মেনে নেওয়া যায়। এর বেশি না। বুঝতে পেরেছ?

-স্যার??

-তুমি ভেব না বাবা। তিনদিন পর তানিশা অফিসে আসবে। তুমি চিন্তা করো না। 

-থ্যাংকস আঙ্কেল। এবার আমি নিশ্চিন্ত হলাম। 

-স্যার৷ চা টা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। আর তানিশা স্যারের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করো---।

-আরে না না। জীবন সাহেব। আমি নাস্তা করেই এসেছি---।

তানিশার বস চলে যাওয়ার পর সবাই যে যার রুমে চলে গেল। তানিশাও রান্নাঘরে কাজ করতে করতে ভাবছে। এসব কি হলো? কি থেকে কি হলো! আর বাবাই বা কি ভাবলো কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। এখন কি হবে সেটা ভেবেই তানিশার ভয় ভয় করছে। না জানি এবার কি ঘটতে যাচ্ছে উপল নূড়িতে।

০৮!!

দুপুরবেলা রান্না শেষ হলে সবাই খেতে বসলো একসাথে। তানিশা, জীবন, আর জীবনের বাবা মা। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে এটা ওটা নিয়ে কথা বলছে জীবন৷ গতকালের মিটিং কেমন হলো, বাবার শরীর কেমন এসব। কথা বলতে বলতেই খাওয়া শেষ করে উঠলো সবাই। তানিশাকে ডাইনিং টেবিল ঘোছাতে হাতে হাতে সাহায্য করছে জীবন। এমন সময় জীবনের বাবা ড্রইংরুমে সোফায় আয়েশ করে বসে ডাকলেন জীবনকে। 

-কাজ শেষ হলে একবার আসিস জীবন---।

-হ্যাঁ বাবা।

তানিশা এক প্রকার জোর করে ঠেলেঠুলে জীবনকে বাবার কাছে পাঠালো। জীবনের যুক্তি হলো, দুজনে মিলে হাতে হাতে কাজগুলো করলে তানিশার নিজেরই একটু সুবিধা হবে। আপাতত তানিশা জীবনের সাথে যুক্তিখণ্ডন করার রিস্ক নিলো না। ঠেলে রান্নাঘর থেকে বের করে দিলো। আর চোখ গরম করলে ইশারা করলো, আবার এখানে এলে খবর আছে। জীবনও দুষ্টু হাসি দিয়ে ড্রইং রুমে গিয়ে বাবার সামনাসামনি সোফায় বসলো।

-হ্যাঁ বাবা। বলো---।

-অনেকদিন তো হলো এসেছি--। আমি চাচ্ছি আজ বিকেলের দিকে বাড়িতে ফিরে যেতে--। বুঝতেই পারছো বাড়ি খালি পড়ে আছে। ব্যপারটা তো ঠিক না তাই না??

-আজ বিকেলে বাড়ি ফিরবে মানে! আর কদিন হলো এসেছে-। এখনই চলে যাবে কেন বাবা!

-সারাজীবন তো আর এখানে থাকবো না বাবা। বাড়ি তো ফিরে যেতেই হবে। তা একদিন আগে যাই, বা একদিন পরে---। তুমি কি যাওয়ার ব্যবস্থাটা করে দিবে আজই? 

-বাবা? আমাদের কি কোন ভুল হয়ে গেছে? তুমি কি রাগ করেছ? আমার উপরে? বা তানিশার উপরে?

-আরে? এখানে রাগের প্রশ্ন আসছে কেন? বাড়িতে অনেক কাজ জমা হয়ে আছে। তুমি ব্যবস্থা করে দিবে? নাকি আমি নিজেই----।

-না না। বাবা! কি বলছ এসব??

-তাহলে ব্যবস্থা করো। আমরা ব্যাগ গুছিয়ে নিই---। চলো জীবনের মা-। কাপড় চোপড়া গুছিয়ে নাও। আমরা ফিরবো একটু পর---। উপল নূড়ি ছাড়ার সময় এসেছে--।

জীবনের বাবা নিজেদের রুমের দিকে পা বাড়ালো। জীবন ফ্যালফ্যাল করে মায়ের দিকে তাকালো। মাও জীবনের চোখে বিষন্নতা দেখে কিছু বলতে যাবেন, এমন সময় আবার ডাক পড়লো। 

-কই গো জীবনের মা? জিনিসপত্র গুছিয়ে নাও। নয়তো দেরি হয়ে যাবে যেতে যেতে---।

জীবনের মা তাড়াতাড়ি রুমের দিকে যেতেই জীবন থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। কোনমতে নিজেকে সামলে  সামনের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল তানিশা ওর থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে৷ জীবন কয়েকপা এগিয়ে এসে তানিশার সামনে দাঁড়াতেই তানিশা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। জীবন তানিশার মুখটা তুলে ধরলো।

-বাবা চলে যাচ্ছে কেন? আমি আবার কি কিছু করেছি? বাবা কি আমার উপরে রাগ করে চলে যাচ্ছে---?

-তানু? প্লিজ আর কেঁদো না---। শোনো না?? 

-তুমি বাবাকে বারণ করো না যেতে। প্লিজ?? 

-শান্ত হও একটু প্লিজ? আমি দেখছি কি হয়েছে--। জাস্ট রিল্যাক্স।

তানিশা জীবনের সামনে থেকে সরে রান্নাঘরে চলে গেল। সেখানেই ফ্লোরে ধপ করে বসে একমনে কাঁদছে। জীবনও কি করবে ভাবতে ভাবতে বাবার কাছে ফিরে এলো। গিয়ে বেচারা আরো অবাক। বাবা মা দুজনের অলরেডি ব্যাগ গোছানো শেষ। জীবনকে দেখে জীবনের বাবা হাতে ব্যাগ ধরিয়ে দিলেন। 

-চলো? যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। এই যে জীবনের মা চলো?

-বাবা! আর কয়েকটা দিন থাকো? এখনো পুরোপুরি সুস্থ----।

-আরে বাবা! ছুটি কাটানো তো অনেক হলো৷ এবার একটু বাড়ির দিকে, কাজকর্মের দিকে মন দিতে হবে নাকি? আবার তোমাদের উপল নূড়িতে আসবো সময় করে--৷ এখন আর দেরি করা ঠিক হবে না। মেলা কাজ পড়ে আছে--৷ চলো?

-বাবা!! কি হয়েছে বলো না প্লিজ? কেন এমন হুট করে----?

-উফফফ। এই ছেলেটা একটা কথা একবারে বোঝে না কেন? বলছি তো বাবা আমার নিজের কিছু কাজ বাকি আছে। তোমার বউ কোথায়? সে কি আসবে না? আমরা তো চলে যাচ্ছি----।।

-তানিশা!!----তানু?? বাবা ডাকছে----।

জীবনের কথাটা শুনে তানিশা তাড়াহুড়ো করে ফ্লোর থেকে উঠে ভালো করে চোখ মুখ মুছে ছুটে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো। জীবন ব্যাগ হাতে নিয়ে ঠিক উপল নূড়ির মেইন ডোরের সামনে চলে এসেছে। আর পিছন পিছন জীবনের বাবা মা। তানিশা গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে শ্বাশুড়িকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। জীবনের মা তানিশার চোখ মুছে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।

-কাঁদিস না মা। আমরা শীঘ্রি আবার আসবো---। নিজের খেয়াল রাখবি কিন্তু--। 

-হুম মা----।

তানিশা শাশুড়িকে সালাম করে উঠে দাঁড়িয়ে দেখলো জীবনের বাবা ওর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে৷ 

-বাবা?

-এই কয়টা দিন অনেক জ্বালিয়েছি তোমাদেরকে--। এখন একটা কাজ পড়ে গেছে তাই চলে যাচ্ছি---। আবার আসবো সময় করে---। এটা রাখো---।

জীবনের বাবা কিছু টাকার নোট তানিশার হাতে গুঁজে দিয়ে গাড়ির দিকে পা বাড়ালেন। তানিশা একবার হাতের দিকে আরেকবার শ্বশুরের দিকে তাকালো। 

-বাবা? যাবেন না প্লিজ---।

জীবনের বাবা তানিশার কথাটা শুনলেন কি না বোঝা গেল না৷ গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলেন। জীবনের মাও গাড়িতে গিয়ে বসলে ড্রাইভার ধীরে ধীরে গাড়ি নিয়ে উপল নূড়ির গেইট পার করে জোরে গাড়ি ছুটালো। জীবন আর তানিশা দুজনেই দাঁড়িয়ে রইলো উপল নূড়ির দরজার সামনে।

রাতের বেলা জীবন তানিশার চুলে মাথায় হাত বুলিয়ে ডাকছে। তানিশা সেসবে পাত্তা না দিয়েই বিছানায় মুখ ডুবিয়ে ফোঁপাচ্ছে। আর না পেরে শেষ পর্যন্ত জীবন জোর করেই তানিশাকে টেনে তুলে বুকে জড়িয়ে ধরেছে। তানিশাও জীবনের কাছ থেকে সরার জন্য চেষ্টা করতে লাগলো। 

-তানু?? আরে বাবা? এমন করছ কেন? 

-তুমি ছাড়ো আমাকে--। বাবা চলে গেল৷ তুমি একবারও বাবাকে আটকাও নি কেন?

-আরে! বাবা বলেছে আবার আসবে---।

-ঘোড়ার ডিম আসবে--। তুমি বলেছ সব ঠিক হয়ে যাবে৷ কিচ্ছু ঠিক হয়নি। উল্টো বাবা আরো রাগ করে চলে গেছে। তুমি উনাকে যেতে আটকাও ও নি---। তুমি খুব খুব খুব খারাপ----।

-আচ্ছা বাবা ঠিক আছে। আমি খারাপ। এখন একটু কান্নাকাটি বন্ধ করে খেয়ে নাও---।

-খাবো না খাবো না খাবো না আমি। তুমি খাও গিয়ে---। ছাড়ো আমাকে--।

-তানু? আরে পাগলি? এতো কাঁদলে শরীর খারাপ করবে তো? শোনো না? এই??

তানিশা জীবনের বুকে মাথা রেখেই কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়েও গেল একসময়। তানিশা ঘুমিয়ে গেছে বুঝতে পেরে জীবন তানিশাকে বুকে টেনে নিয়ে নিজেও শুয়ে পড়লো। সারাদিন কেঁদেকেটে কি একটা অবস্থা হয়েছে মেয়েটার চেহারার। জীবন আলতো করে তানিশার কপালে চুমো খেয়ে বুকে জড়িয়ে নিলো। বুক চিরে শুধু ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস বের হলো জীবনের। কি ভেবেছিল আর কি হলো! উপল নূড়িও যেন আজ নিজের শূন্যতাটা অনুভব করছে৷ এতোদিনের শোরগোল শেষে আজ একটা নিরবতা ছেয়ে গেছে উপল নূড়িতে। আবার কবে আগের সেই হাসি, আনন্দ, দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া ফিরে আসবে উপল নূড়িতে! কে জানে?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন