বসন্তের ফুল - পর্ব ১৩ - তারিন জান্নাত - ধারাবাহিক গল্প


২৫!!

অভ্রকে অনবরত ডেকেই যাচ্ছে প্রেমা।কিন্তু অভ্র প্রেমার ডাক উপেক্ষা করে চলেছে।একসময় অভ্র রুমের কাছে আসতেই পেঁছন ফিরে তাঁকায়,এবং
দেখে প্রেমা আসছে, 
"কি হয়েছে? এতো ডাকছি শুনছিলেনা কেন?(প্রেমা)
" টয়লেটে যাবো তাই,(অভ্র)
"টয়লেটে?(প্রেমা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে)
" হ্যাঁ,তুমি কি মনে করেছিলে? 
কোথায় যাচ্ছিলাম(অভ্র) 
বেলুনের হাওয়া বেরিয়ে গেলে যেমন চুপসে যায়,অভ্রের কথায় প্রেমাও বেলুনের মতো চুপসে যায়।
"(ইসস কী বোকা আমি, ভেবেছি অভ্র রাগ করেছে)
প্রেমা মনেমনে  কথাটা বলে,কোনো মতো একটা হাসি দেয়,এবং বলে,
" ঠিক আছে যাও,এমনি ডেকেছিলাম।(প্রেমা)
কথাটা বলে এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে দ্রুত পায়ে চলে যায়।
অভ্র রুমে ঢুকে দরজা লক করে ধম ফাটানো একটা হাসি দেয়।হাসতে হাসতে অভ্রের পেট ব্যাথা হওয়ার উপক্রম। ইচ্ছে করেই সে প্রেমাকে কথাটা বলেছে।সবচেয়ে বড় কথা প্রেমার মুখটা দেখার মতো ছিলো।

বিকেলের দিকে আরিয়ানের মা এবং বাবা চলে যায়।শুধু অভ্রের মা এবং দাদু,আর প্রেমারা ছিলো।তখনের ঘটনার ওর প্রেমা লজ্জায় আর অভ্রের সামনে যায়নি।অভ্রও আর রুম থেকে বের হয়নি।

অন্ধকারের মধ্যে বিছানার পাশে কোণায় এলোমেলো হয়ে বসে আছে অভ্র।চোখজোড়া রক্তিমবর্ণ ধারন করে আছে এ মুহুর্তে । ফোঁসফোঁস করে শব্দ করে যাচ্ছে ক্রমাগতভাবে। বুকের ভেতর যেনো কেউ গরম লাভা ঢেলে দিয়েছে।শরীরে বিষণ জ্বলা করছে ক্রোধের কারণে।হাতের চুরিটা নিয়ে চুরির মাথায় আঙুল রাখে।চোখ বন্ধ করতেই কিছু একটা মনে আসে,সাথে সাথে কপালের রগ ফুলে উঠে,অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠে,

"ঘৃণা করি আমি তোমাদের,প্রচুর ঘৃণা করি,আমার জীবণে তোমাদের কোনো অস্তিত্ব নেই,আমার জন্য আমিই আছি,আর আমার ভাইটার জন্যেও আমি,

কথাগুলো একধমে বলে বড় করে একটা শ্বাস ফেলে অভ্র।অাজকের এই সময়টাতে অভ্র একা থাকে,কেউ ওর কাছে থাকতো না,বলতে গেলে ওকে ভয় পায় সবাই। তাই দূরে থাকে,বা থাকতো।

চুরিটা রেখে দেয় অভ্র।ফোনটা হাতে নেয় সময়টা দেখার জন্য।সাড়ে এগারোটা বাজে।ক্ষিধেয় পেট মুছড়াতে শুরু করেছে তার।কিন্তু খাওয়ার কিঞ্চিৎ পরিমান ইচ্ছেও নেই। 

নিজের অবস্থায় নিজেই অসহায় অভ্র।কিভাবে রাগ কমাবে তার কোনো উপায়ও আজ অবধি পায়নি সে।

দরজার কটকটানি শব্দে অভ্র বিরক্তপ্রায়।খুলার নূন্যতম ইচ্ছে নেই,পাঁচ মিনিট দরজার ধাক্কানোর পর প্রেমা চেঁচিয়ে উঠে, 
" এই অভ্র দরজার খুলবে নাকি আমি লাথি মেরে ভাঙবো।(প্রেমা)

আকস্মিক ভাবে প্রেমার গলার স্বর অভ্রের কানে আসতেই লাফিয়ে উঠে। এতোরাতে প্রেমার আগমনে সে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।দ্রুতগতিতে উঠে রুমের লাইট জ্বালায়,চুরিটা লুকিয়ে ফেলে,পরনের শার্ট-প্যান্ট পাল্টে,একটা শর্ট ট্রাউজার,আর এ্যাশ কালারের একটা টি-শার্ট পড়ে নেয়।ঝাপটে চোখমুখ ধুয়ে ফেলে।

দরজার কাছে গিয়ে কাঁপা হাতে দরজা খুলতেই একটা ধাক্কা খায় অভ্র।ধাক্কাটা প্রেমা দিয়েছে।
"এতোক্ষণ লাগে দরজা খুলতে?(প্রেমা রেগে বলে)
" নিরুত্তর (প্রেমার দিকেই চেয়ে আছে,)
প্রেমা দরজাটা হালকা চেপে হাতের খাবারের থালাটা বিছানায় রাখে। এরপর অভ্রের দিকে ফিরে আপাদমস্তক একবার দেখে নেয়। অভ্র তখনো শীতল দৃষ্টিতে প্রেমাকে দেখতে ব্যাস্ত প্রায়।

"বসে খেয়ে নাও আমি যাচ্ছি।(শান্তগলায় বলে প্রেমা)
প্রেমা চলে যাবে শুনে অভ্র দাঁতে দাঁত চাপে,
" খাবো না,নিয়ে যাও,না না নিতে হবে না,তুমি যাও,আমি রেখে আসবো।(অভ্র)
অভ্রের কথায় প্রেমার রাগ উঠে যায়,দুপুর থেকে নাকি না খেয়ে আছে,যদিও এটা দেখা তার বিষয় না।তবে অভ্র না খেয়ে আছে শুনে খারাপ লাগছিলো বিধায় খাবারটা নিয়ে আসে অভ্রের জন্য।
"খেয়ে নাও অভ্র,আমি এখানেই আছি।(মৃদু হেসে বলে)
প্রেমার কথায় অভ্র এক বিন্দুও নড়েনি,ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।অভ্রকে মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে,প্রেমা নিজে গিয়ে অভ্রের হাত ধরে বিছানায় বসায়।
" খাও,চুপচাপ।নাহলে সব তোমার মুখে ছুড়ে মারবো।(প্রেমা),
প্রেমার কথায় অভ্র একবার প্রেমার দিকে তাঁকায়,এরপর খাবারের দিকে তাঁকায়।অদ্ভুদ লাগছে আজ তার।এর আগে সে কখনো এ সময়ে খায়নি।সারারাত না খেয়ে থাকতো।আজ কেন যেনো প্রেমার কথা সে ফেলতে পারছে না।মন,মস্তিষ্ক, এবং পেট উভয়ে বলছে,"খা অভ্র খা!
"তুমি বসো প্লিজ! (অভ্র)
অভ্রের আকুতিভড়া কন্ঠ শুনে প্রেমা সচকিত হয়।ভাবে? এভাবে বলার কি আছে? সে তো বলেই দিয়েছে বসবে।বিনাবাক্যে বিছানার অপরপাশে গিয়ে বসে পড়ে প্রেমা।
কেমন যেনো সব রহস্য রহস্য লাগছে তার।সন্ধ্যায় অভ্রের নানি এবং মায়ের বলা দুয়েকটা শব্দ প্রেমার কানে আসে।যা অভ্রকে ঘিরে ছিলো।সে থেকে প্রেম ভেবেই নিয়েছে কিছুটা একটাতো আছে যা ও জানেনা।কিন্তু জেনেই বা কি করবে?
প্রেমার ভাবনার মধ্যে থাকাকালীন অভ্রের খাওয়া শেষ হয়।বেশ তৃপ্তিসহকার খেয়েছে আজ অভ্র।প্রেমার হাতে খাওয়ার প্রবল ইচ্ছে জেগেছিলো তখন তার মনে।সেটা তো সম্ভব নয়।প্রেমা নিজ হাতেই এনেছে সেটা ভাবতেই তার আনন্দ হচ্ছে।
অভ্রের ডাকে প্রেমার ভাবনার অবসান ঘটে।অভ্রের দিকে চোখ তুলে চাইলো প্রেমা।
" চোখ লাল হয়ে আছে তোমার,ঘুমাও তাহলে আমি আসছি।(প্রেমা)
"আমি এখন ঘুমাবো না,দেড়ি আছে,তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।(অভ্র)
" ঘুমাওনা কেনো,তোমাদের মতো ছেলেদের এখন ঘুম বেশি দরকার।না ঘুমিয়ে রাত্রে কি ঠ্যাং করো,কে জানে?
কথাগুলো বলে প্রেমা বলে রুম থেকে চলে যায়।
অভ্রের হাসি চলে আসে।প্রেমা রাগলে এভাবেই কথা বলে। প্রেমা রুম থেকে যেতেই অভ্র দরজা বন্ধ করে দেয়।বিছানায় শুয়ে পরে,তবে ঘুমানোর জন্য নয়।

রাত প্রায় বারোটা। প্রেমার ঘুম আসছিলো না।ফোন টিপতেও ভালো লাগছিলো না।তাই রুমের সাথে থাকা বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। বেলকনিতে আসতেই ঠান্ডা বাসাতে প্রেমাকে আঁকড়ে ধরে।ছড়ানো এলোমেলো চুল।এমন একটা থমথমে ঠান্ডা পরিবেশে থাকতে প্রেমার বেশ লাগছে।

হঠাৎ নিচে তাঁকায় প্রেমা।মৃদু আলোয় কাকে যেনো দেখতে পায় সে।আরো ভালোভাবে ঠাওর করলেই দেখতে পায় অভ্রকে।চমকে উঠে প্রেমা।সাথে সন্দেহাকুল মন নিয়ে নিয়ে অস্থির পায়ে হেঁটে রুম থেকে বেরুয়। দরজা খুলা পেয়ে অনায়সে বের হতে পাটো প্রেমা।পা টিপে হেঁটে অভ্রের পেঁছন নিতে শুরু করে।

মাঝপথে গিয়ে অভ্র থেমে যায়।তাত্ক্ষণিক প্রেমা ঝোপের আঁড়ালে লুকিয়ে পরে।অভ্র পেঁছন ফিরে কাউকে না দেখে আবার হাঁটায় মন দেয়।অথচ তার মনে হচ্ছে কেউ তাকে অনুসরন করছে।প্রেমার ইচ্ছে করছে অভ্রকে জিজ্ঞেস করতে যে কোথায় যাচ্ছে?কিন্তু সেটা করলে বিষণ ভুল হবে এমনটা তার মন জানান দিচ্ছে।তাই নিশ্চুপতার সহে দৃঢ় পায়ে হেঁটে চলেছে অভ্রের পিছুন পিছুন।

কতক্ষণ হেটেছে জানে না প্রেমা।তবে অনুমান করতে পারছে ঘন্টাখানেক হবে।এতো রাতে এতোদূর অভ্র কোথায় যেতে পারে সেটায় ভেবে পাই না প্রেমা।

অভ্র একটা জায়গায় এসে থামে।চার দেওয়ালে ঘেরা। মাঝখানে একটা মাঝারি আঁকারের গেইট দেখা যায়।গেইট খুলে ভেতরে প্রবেশ করে অভ্র।

অভ্রের পরপরই প্রেমা প্রবেশ করে। এবং একটু দূরে লুকিয়ে থাকে। শূন্য দৃষ্টি নিয়ে সামনের দিকে তাঁকায় প্রেমা। তার সামনে একটু দূর অভ্র দাঁড়ানো।এবং অভ্রের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে একটা বাড়ি।বেশ পুরাতন বাড়িটি।কিন্তু মৃদু আলোয় ডিজাইনটা খুব নিঁখুতভাবে দেখা যাচ্ছে। প্রায় আধঘন্টা অভ্র সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে।বিনাশব্দে।অন্ধকারে মৃদু আলোতেও প্রেমার গা চমচম করছে।ইতিমধ্যে অভ্রকে এখন 'ভূত' মনে হচ্ছে প্রেমার।
পায়ের কিছুর সাথে কিছু একটা লেগে আঘাত পায় প্রেমা।সাথে সাথে ব্যাথায় কুঁকড়ে শব্দ করে উঠে,তবুও নিজেকে অভ্রের থেকে আড়াল করতে গাছে আড়লে গিয়ে দাঁড়ায় প্রেমা।
কিন্তু আঘাত পাওয়ার মৃদু শব্দ অভ্রের কানে চলে আসে।এবং ফোনের লাইট জ্বালিয়ে আশেপাশে দেখতে শুরু করে।
প্রেমা তখন হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে যাতে অভ্র বুঝতে না পারে।কিন্তু সেটা হয়নি।গাছের আড়ালে চুল দেখতে পায় অভ্র।কিছুক্ষণ সেও অবাক নয়নে সেদিকে তাঁকিয়ে থাকে।ভাবছে কে হতে পারে?

লাইট নিভিয়ে দৃঢ় পায়ে গাছের কাছে গিয়ে প্রেমাকে টান দেয় অভ্র।লাইট প্রেমার মুখে দিতেই বড় করে ঝাটকা খায় সে,
ওই অবস্থায় প্রেমাকে অনেক জোরে গাছের সাথে চেপে ধরে।এবং অতিরিক্ত রেগে অভ্র গর্জন দিয়ে উঠে,
"তুমি? এখানে? এতোরাতে?(অভ্র)
অভ্রের গর্জানোতে প্রেমা ভয়ে কেঁপে উঠে,চুপচাপ কাঁপতে লাগে।
" উত্তর দিচ্ছোনা কেন?প্রেমা এখানে কিভাবে এসেছো?(অভ্র)
কথা আটকে আসছিলো প্রেমার,সাথে নিজেকে গালিও দিচ্ছে,এতোরাতে এভাবে অভ্রকে অনুসরণ করে আসার কারণে।যেটা একদম উচিৎ হয়নি।

অভ্র প্রেমাকে আরো শক্তকরে চেপে ধরে,এবার তার রাগ দ্বিগুণ উপচে পড়ছে,
"স সরি,আ আসলে অভ.(প্রেমা)
" যাস্ট সেট-আপ, আমাকে ফলো করে আসা খুবই জরুরি ছিলো? কোনো অঘটন ঘটলে কি করতে?(অভ্র)
অভ্রের কথায় প্রেমা সাহস করে বলে উঠে,
"তুমি এতোরাতে না ঘুমিয়ে এখানে কী?(প্রেমা)
" সেটা তোমাকে বলতে আমি বাধ্য নয়(অভ্র)
"ঠিক আছে,আমিও বলবো না,এখন ছাড়ো আমাকে(প্রেমা)
এমনিতে অভ্রের মেজাজ ঠিক নেই তারউপর প্রেমার ত্যারা কথা,আরো ক্ষেপে যাচ্ছে সে।
" দেখো জেদ করবা না আমার সাথে,(অভ্র)
"আমার ইচ্ছে,আমি সব করবো।(প্রেমা)
 প্রেমাকে ভালোভাবে দেখে অভ্র চুপ মেরে যায়।এবং প্রেমাকে ছেড়ে দেয়। তারপর হালকা শব্দে বলে উঠে,
" সরি,আর তোমার চুল বাঁধো!(অভ্র)
অভ্রের কথায় প্রেমা চুল বেঁধে ফেলে।
"আসলে,রাগ উঠে গিয়েছিলো তাই এভাবে রিয়েক্ট করেছি,সরি!(অভ্র)
অভ্র কথাটা বলে প্রেমার হাত ধরে সেই দেওয়ালে ঘেরা বাড়িটির উঠোন থেকে বের হয়ে যায়।প্রেমাকে কিছু বলার সুযোগ ও দেয়নি।

মাঝপথে প্রেমার থেমে যায়,
" আমাকে বলো অভ্র,এখানে কেন এসেছো?নাহলে আমি আর তোমার সাথে কোন বন্ধুত্ব রাখবোনা,শেষ কথা বলে দিলাম!(প্রেমা)
প্রেমার কথায় অভ্র হেসে একবার পেছনে ফিরে তাঁকায়,এবং বলে, "আজ আমার ২০তম জন্মদিন!(কথাটা বলে অভ্র আবারও পেছনে ফিরে তাকায়)

২৬!!

আবছা আলোর মধ্য প্রেমা তার চাহনি অভ্রের দিকে স্থির করে।অভ্রের দিকে তাকালে প্রেমা নিজের মধ্যে অদ্ভুদ এক অনুভূতির আবিষ্কার করে। তাই সে কথা বলা ছাড়া অন্যসময়ে অভ্রের দিকে তাঁকাতে চায় না।তবুও লাগামহীন চোখজোড়া অভ্রতে গিয়ে নিজের অবস্থান স্থির করে।দ্রুত চোখ সরাই প্রেমা।

"২০তম জন্মদিন?তুমি তো বুড়া ব্যাটা?(প্রেমা)
কিঞ্চিৎ অবাক হয় অভ্র,
" মানে আমি বুড়ো হবো কেন?
"২০ বছর হয়েছে এখনো ইন্টারে ঝুলে আছো,(প্রেমা)
প্রেমার কথাটা এতক্ষণে অভ্রের মাথায় ঢুকে,
" মাঝখানে গ্যাাপ দিয়েছিলাম তাই,(অভ্র ছোট 
করে বলে)
"কেন? গ্যাপ দিয়েছিলো কেন??(প্রেমা)
এবার অভ্র দাঁড়িয়ে যায়।এবং প্রেমার দিকে নিজের গাঢ় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।সে তো ভুলেই গিয়েছিলো প্রেমা একবার কোনো অর্ধেক কথা শুনলে পরে তার কলিজা,পিত্তি বের করার চেষ্টায় লেগে পরে।তাই হালকা রেগে বলে উঠে,
" অসুস্থ ছিলাম তাই,(অভ্র)
অভ্রের রাগান্বিত কথা শুনে প্রেমা দ্রুত অভ্রের দিকে তাঁকায়।
"ওহ, (প্রেমা)
কথাটা বলার পর পরেই অভ্রকে রেখে সামনের দিকে হাঁটা ধরে।অভ্রের এবার হাসি চলে আসে প্রেমা অভিমান দেখে।দাড়িয়ে প্রেমার চলে যাওয়া দেখে,

"অভিমানী মুখ দেখে তো আমি আরো দ্বিগুন পাগল হয়ে যাচ্ছি।(অভ্র)

মৃদু শব্দে কথাটা বলে অভ্র হাঁটতে শুরু করে,কিছু দূর এগিয়ে গিয়ে আর প্রেমাকে দেখতে পায়না। হঠাৎ বুকটা কেঁপে উঠে,আশেপাশে তাঁকালে দেখে শূন্য।প্রেমার কোনো চিহ্ন ও দেখা যাচ্ছে না।চারপাশে অন্ধকার,শুধু ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক কানে আসছে।আর নিস্তব্ধতায় বিরাজমান।
" প্রেমা,কোথায় তুমি?(উত্তেজিত হয়ে আশে পাশে তাকিয়ে ডেকে উঠে)
"কোনো শব্দ শুনা যাচ্ছেনা,
" প্রেমা আম সরি,আর রেগে কথা 
বলবো না, সরি,প্লিজ কোথায় লুকিয়ে আছো বের হও,(অভ্র)
অভ্র প্রেমাকে ডাকছে,এবং নিজের চোখ বারবার হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছছে।রিতীমতো চোখ ভিজতে সময় নিচ্ছে না তার।বুকে চিনচিন ব্যাথা করতে শুরু করে দিয়েছে অভ্রের।বেশি দূর না গিয়ে আশে পাশে থেকেই খোঁজছে,কারন এত কম সময়ে এখান থেকে বের হওয়া সম্ভব না।
"দেখো আমি যদি খোঁজে না পায়,তাহলে কিন্তু এখানেই রেখে চলে যাবো,তাই প্লিজ বের হয়ে আসো।(অভ্র)

তখনি অভ্রের কানে প্রেমার নিভু নিভু কন্ঠ ভেসে আসে। 
এতো নিভু কন্ঠে অভ্র ঠাওর করতে পারছে না ডাকটা আসলে কোনদিক থেকে আসছে।
ফোনের লাইট দিয়ে চারপাশে আবারও দেখতে শুরু করে।একসময় অভ্র কিছুটা পথ হেঁটে একটা বড় গাছের সামনে এসে দাঁড়ায়। 
লাইট দেখতেই প্রেমা চেঁচিয়ে উঠে, 
" অভ্র আমি এখানে নিচে,গর্তের মধ্যে পরে গিয়েছি।(কাঁদোকাঁদো স্বরে) 
প্রেমার কথা অনুসরন করে অভ্র গর্তটির কাছে গিয়ে পৌছায়।গর্তে লাইট মারতেই দেখে প্রেমা গর্তের একপাশে ঠেস দিয়ে বসে আছে,প্রেমাকে দেখতেই পেয়ে শান্তির শ্বাস ছাড়ে অভ্র,
"আরে এখানে? পড়ার আর জায়গা পাওনি?(অভ্র)

" আমি জানতাম নাকি এদিকে গর্ত আছে?(প্রেমা)
"ভালো হয়েছে,এগুলা তোমার ভুলের শাস্তি!প্রথমতো এতোরতে আমাকে ফলো করে এখানে আসা,আর দ্বিতীয়ত ঢং দেখিয়ে আমার আগে চলে আসা,আমি তুলবো না তোমাকে(দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে অভ্র)

অভ্রের কথায় প্রেমা এবার রাগ উঠে যায়, পাশ থেকে মাটির দলা  হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। এবং অভ্রের দিকে ছুড়ে মারে। নিশানা সঠিক হওয়ায় মাটির দলা অভ্রের গায়ে গিয়ে পড়ে,
" যাও এখান থেকে, আমাকে উঠাতে হবে না,যাও এখান থেকে,(প্রেমা)
প্রেমার কথায় অভ্র কর্ণপাত না করে লাফ দিয়ে গর্তে নেমে যায়। আচমকা অভ্র লাফ দিয়ে নামায় প্রেমা হকচকিয়ে যায়।পরমুহুর্তে চোখ ছোট ছোট করে তাঁকিয়ে থাকে অভ্রের দিকে।
অভ্র কর্কশ কন্ঠে বলে উঠে, 
"খেয়রলেস।
" দেখো আমাকে..
"শশশশ! চুপ করো,(অভ্র নিজের ঠোঁট আঙুল দিয়ে চেপে প্রেমাকে চুপ করতে বলে)
অভ্রের কথায় প্রেমা চুপ হয়ে যায়,এবং অভ্র লাইট বন্ধ করে প্রেমার পাশে গিয়ে দাড়ায়। কারো পায়ের শব্দ কানে আসতেই প্রেমা ভয় পেয়ে অভ্রের 
শার্ট ধরে ফেলে।
" উপপ এই লোকগুলোর আসার সময় পায়নি, শুনো একদম চুপ থাকো ওরা না যাওয়া অবধি।(অভ্র)
"লোকগুলো কে অভ্র?(ফিসফিস শব্দে জিজ্ঞেস করে প্রেমা)
" চুপ! (অভ্র ফিসফিস শব্দে ধমক দিয়ে বলে)
পরমুহূর্তে প্রেমা চুপ মেরে যায়।নিজেকে গালমন্দ করছে।এতো কথা কেমনে সে বলতে পারে।

"এখানটায় তো কারো  কথা বলার শব্দ পেয়েছিলাম। এখন তো কাউকেই দেখছি না।(একজন লোক) 
" হয়তো ভুল শুনেছেন ভাই আপনে?(অন্য একজন বলে উঠেন)
" না না ভুল না, আমি স্পষ্ট ছেলে এবং মেয়ের কথা শুনতে পেয়েছি। ভালো মতো খোঁজো দেখো আশেপাশে লুকিয়ে আছে কিনা।(প্রথম জন বলে উঠেন আবার)

লোকগুলোর কথায় অভ্র প্রেমা উভয়ে শুনতে পায়।অভ্র দেড়ি না করে প্রেমাকে টেনে নিজের সাথে চেপে জড়িয়ে ধরে। মনেমনে দোয়া করছে এদের হাতে যাতে ধরা না পরে। নাহলে সব শেষ। 
অভ্র আচমকা জড়িয়ে ধরায় প্রেমার অস্বস্থি লাগতে শুরু করে।মন বলছিলো নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে,কিন্তু অভ্র রেগে যাবে ভেবে চুপ মেরে যায়।
"প্রেমার অস্থিরতা অভ্র ঠাওর করতে পারে। তাই প্রেমাকে স্বাভাবিক করার জন্য ছেড়ে দেয়। এবং নিঃশব্দে নিজের হাত জোড়া নিজের বুকে গুজে নেয়।অপেক্ষা করছে প্রেমা কখন নিজ থেকে ওকে জড়িয়ে ধরবে।কারন অভ্র জানে প্রেমা এবার নিজ থেকেই......

অভ্রের হঠাৎ ছেড়ে দেওয়ায় প্রেমা নিজেও কিছুক্ষণ অবাক হয়ে থাকে।পরে নিজেকে সামলে নেয়।পায়ের তীব্র শব্দ কানে আসতেই প্রেমা নড়েচড়ে উঠে,বুকের ঢিপঢিপ শব্দের গতি আরো প্রকড় হতে শুরু করে।এখন প্রেমার কাঁদতে ইচ্ছে করছে।যদি এখানে না এসে ঘুমাতো তাহলে  এতো বড় বিপদে পড়তোনা।যদিও প্রেমা এখনো বুঝে উঠতে পারেনি আসল বিপদ কী।

মাথার উপরে টর্চের আলো পড়তে দেখে প্রেমা ভয় পেয়ে যায়।এবং দ্রুত অভ্রের দিকে তাকায়।দেখে অভ্র ওর থেকে একটু দূরে দাড়ানো,এবং উপরের দিকে তাকিয়ে আছে।ভয় করছে বিষণ ওর।সব ভাবনা সাইডে রেখে দেয়,এবং চটজলদি প্রেমা অভ্রের কাছে গিয়ে অভ্রকে জড়িয়ে ধরে।

অভ্র নিজেও প্রেমাকে আলতো করে আঁকড়ে ধরে। ঠোঁটের কোণায় তৃপ্তিময় হাসির রেখা টানে।শক্ত ভাবে চেপে  ধরার অধিকার সে এখনো পায়নি।তাই আলতো স্পর্শে সীমাবদ্ধ থাকতে চাই,হেসে অভ্র নিজ মনে বলে উঠে,
"লোকগুলোর হাতে ধরা পড়লে তেমন বিষেশ কোনো ক্ষতি হবে না।তবে দুজনের বিয়েটা নির্বেজালের সহিতে পড়িয়ে দিবে,এতে বরং আমার লাভ-ই হতো।কিন্তু আমি এতো সহজে সব চাই না, সময় বারুক, এবং আমার চাওয়ার আকাঙ্খা; তীব্র থেকে আরো তীব্রতায় রুপ নিক।মানুষের চাওয়ার কোনো সমাপ্তি নেয়।কিন্তু আমার প্রথম এবং শেষ চাওয়াটাই তুমি।'প্রেমাভ্র'
________

 চারপাশে ঘন অন্ধকার ছেয়ে যায়।কারো হাঁটার শব্দ আর শুনা যাচ্ছেনা। নিস্তব্ধ পরিবেশ একদম।এখন আবার দূর থেকে কুকুরের হাঁক ও কানে ভেসে আসছে।

বসা অবস্থায় অভ্র ভাবছে নয় বছর ধরে এই জায়গাটায় সে একাই নিজের জন্মক্ষণ পালন করতো।তবে অন্যভাবে।প্রচন্ড রাগ এবং ঘৃনা নিয়ে।অথবা নিজেকে আঘাত করে। কিন্তু এই বারে সময়টা অন্যরকম কেটেছে ওর।হালকা টক মিষ্টির সহিতে এবং প্রেমার সঙ্গে।ভাবতেই অভ্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে শিহরণ খেলে যাচ্ছে। রাত প্রায় আড়াইটা।ঘুম পাগলী ওর কোলেই ঘুমোচ্ছে। তখন প্রেমা দাঁড়ানো অবস্থায় কিছু সময় পরেই ঢলে পরে যাচ্ছিলো।অভ্র ধরে ফেলার পর বুঝতে পারে তার প্রেমা ঘুমে ঢলে পরেছে।আলতো হেসে প্রেমাকে নিয়ে বসে পরে।লোক গুলোর উপস্থিতি তখন আর ছিলো না।
প্রায় একঘন্টা যাবৎ এখানেই বসে আছে।তাও প্রেমার ঘুম ভাঙছেনা।আর অভ্রও চাইছে না প্রেমার ঘুমটা ভাঙুক। 
কিন্তু এই জায়গা থেকে দ্রুত চলে যেতে হবে।নাহলে সকাল হলেই সকলের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বা কথার আক্রমণ হতে হবে।তাই এবার অভ্র উপায়ন্তর না পেয়ে প্রেমা ডাকা শুরু করে।পাঁচমিনিট পর প্রেমার ঘুম ভাঙে।ধড়ফড়িয়ে উঠে যায়।
"আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম,তুমি ডাকো নাই কেন?(ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে উঠে)
অভ্র প্রেমার কথার উত্তর না দিয়ে বলে উঠে,
" প্রেমা আমাদের যেতে হবে।সকাল হলে জামেলায় পড়তে হবে।(অভ্র)
"কিন্তু উঠবো কিভাবে?(প্রেমা)
প্রেমা কথা শুনে অভ্র দাঁড়িয়ে যায়। এবং প্রেমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে উপরের দিকে তুলে ধরে।সাথে সাথে প্রেমা হেসে উঠে,এবং বুঝতে পেরে যায় কিভাবে উঠতে হয়।দেড়ি না করে দ্রুত উঠার চেষ্টা করে।এবং উঠেও যায়।অভ্রও নিজেনিজে কেমন করে যেনো উঠে যায়।
 অভ্র উঠতেই প্রেমা বলে উঠে,
" ভাগ্যিস তুমি লম্বা ছিলে তাই উঠতে পেরেছি,যদি খাঁটো হতে তাহলে গর্তেই সারাজীবণ পার করতো হতো?(প্রেমা)
প্রেমার কথায় অভ্র একটু হেসে বিড়বিড় করে বলে উঠে,"তাহলে সারাজীবণের জন্য গর্তে সংসার পাতাতাম "(অভ্র)
" কিছু বলেছো অভ্র?(প্রেমা)
"খাও না?  এতো পাতলা কেন তুমি?(অভ্র)
অভ্রের কথায় প্রেমা মন খারাপ করে বলে,
" ছোটবেলায় কেউ কোলে নিতো না আমাকে,অনেক মোটা ছিলাম।আর অর্পণ তো আমাকে এখনো মুটকি ডাকে (প্রেমা)
"ওহ" (অভ্র)
কথাটা বলে অভ্র চুপ মেরে যায়। অর্পণের নাম শুনতেই কান দিয়ে ধোঁয়া বের হতে শুরু করে কোনো রকম নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।  এখন অন্তত সময়টা সে প্রমার সাথে উপভোগ করতে চাই। 
পিচঢালা রোডে আসার সাথে সাথেই লাইট জ্বালায় অভ্র।লাইট জ্বালানোর সাথে সাথে অভ্রের দৃষ্টি যায় প্রেমার পায়ের দিকে,
"আরে তুমি জুতো ছাড়া চলে এসেছো? পাগল তুমি? আমাকে বলোনি কেন? পায়ে ব্যথা পাওনি তো? এই আমার জুতা পড়ে নাও,(উত্তেজিত হয়ে বলে উঠে অভ্র)

" আরে সমস্যা নেই,আমি খালি পায়ে হাঁটতে পারি।
"মেজাজ খারাপ করিও না পরে নাও,একটা শব্দও করবে না আর,(অভ্র)
অভ্রের ধমকানিতে প্রেমা জুতাজোড়া পায়ে দেয়।এবং বাকিটা সময় তারা নিঃশব্দে বাড়ি পথে যাওয়ার জন্য হাঁটে, 

সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রেমা...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন