৩৯!!
মাঝ পথে হাঁটু মোড়ে বসে যায় প্রেমা। বড় বড় শ্বাস নিতে শুরু করে। বসার পরোই শুরু হয়ে যায় বৃষ্টি।ঝুমঝুম বৃষ্টির পানি শরীরের সংস্পর্সে আসতেই উম্মাদ হয়ে উঠে অভ্র আর প্রেমা।
প্রেমার সামনে অভ্রও হাঁটু মোড়ে বসে। নরম স্বরে জিজ্ঞেস করে,
-"থামলে কেন? চলো।(অভ্র)
-" পারছি না,অনেক্ষণ ধরে দৌড়েছি।আর পারবো না।
-"আসো কোলে নিই।(অভ্র)
চট করে প্রেমা দাঁড়িয়ে যায়। হঠাৎ বিভ্রান্তিতে পড়ে।
নিজের মধ্যে লজ্জা অনুভব হচ্ছে। নতজানু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।অভ্রের দিকে তাঁকানোর সাহস পাচ্ছেনা।
প্রেমার নুইয়ে যাওয়া অবস্থা দেখে অভ্র ভ্রু কুঁচিত করে,
-" কুঁজো হয়ে যাচ্ছো কেন? (অভ্র)
-নিরুত্তর রয় প্রেমা।
অভ্র প্রেমা বিভ্রান্তিরুপ দেখে দু'হাত তুলে প্রেমাকে স্পর্শ করার জন্য।প্রেমা ছিটকে দু'কদম পিঁছিয়ে যায়। বিষণ কাঁপছে প্রেমা।ঠান্ডায় এবং লজ্জায়।দুটোই প্রেমাকে আঁকড়ে ধরেছে গভীরভাবে।
প্রেমাকে মাথা থেকে পা অবধি দেখে নেয় অভ্র। নিজের গায়ের শার্টটা খোলে প্রেমার শাড়ির উপরে পড়িয়ে দেয়। প্রেমা চেয়েও মুখ থেকে একটা শব্দ উচ্চারণ করতে পারে নি।
ব্যর্থ হয়।
অভ্র আগের ন্যায়ে প্রেমার হাত ধরে হাঁটতে শুরু করে।
প্রেমা আঁড়চোখে অভ্রের দিকে তাঁকায়। কালো গেঞ্জিতে চমৎকার লাগছে। প্রেমার ইচ্ছে করছে মুখফুটে অভ্রের প্রশংসা করতে।দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে বলতে পারছেনা।মনেমনে ব্যর্থতার শ্বাস ছাড়ে।
এক-পা দু-পা করে হেঁটে নদীর কিনারায় চলে আসে দুজনে। দেখা মিলে নৌকার। উৎফুল্লতা গত বারের তুলনায় আরো দ্বীগুন উপচে পড়ে প্রেমা সর্বাঙ্গজুরে।
আমোদিত চোখে অভ্রের তাঁকয়। সেসময় অভ্রও তাঁকায়।ভ্রু নাচিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করে কেমন হয়েছে।
প্রেমা নদীতে থাকা নৌকাটির দিকে তাঁকিয়ে খুশীতো স্বরে বলে উঠে,
"প্রকাশ করতে পারবো না।
অভ্র হেসে বলে, " থাক এসব প্রকাশের দরকার নেই,আমাকে কেমন লাগে সেটা বললেই হবে।
প্রেমা লজ্জামিশ্রিত হাসি হেসে,চুল কানের গুঁজে।
সাদা বিভিন্ন ফুল ভর্তি নৌকা। প্রেমা উঠার পরেই অভ্র উঠে। দুজনে মুখোমুখি হয়ে বসে। ছোট একটা ছেলে নৌকা চালাতে শুরু করে।নদীর স্রোত এবং বৃষ্টিত স্রোত উভয়ের গতিবেগ অত্যন্ত গভীর। সবে তিনটা বাজে।কিন্তু গগনস্পর্শী কালো মেঘ।যেনো সন্ধ্যা নামার পূর্বমুহুর্ত। বৃষ্টি সমেত সমান তালে বাতাস বইছে।সাথে বিভিন্ন ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ। মাতাল করার মতো মুহুর্ত।
অভ্র মাথা তুলে উপরের দিকে তাঁকায়।একঝাঁক পাখি উড়ে যাচ্ছে।সে দৃশ্য আঁটকে যায় অভ্রের দৃষ্টিতে। আর প্রেমার দৃষ্টি আঁটকায় অভ্রতে। ভেজা চিপচিপে শরীরে সঞ্চিত বিন্দুজল।দারুন লাগছে অভ্রকে। প্রৃকৃতির বাতাস-বৃষ্টিতে মানুষের সংস্পর্শে আসলেই অন্যরুপে ধারিত হয় মানুষ। উপরের দিক থেকে হেসে চোখ সরায় অভ্র।প্রেমার দিকে তাকিয়ে রসিকতার স্বরে বলে উঠে,
-" বারবার এভাবে তাঁকালে,
পাগল হয়ে যাবে আমার জন্য।পরে নিজেকে সামলাতে পারবেনা। (অভ্র)
এবার প্রেমার কান্না করে দেয়। অর্থহীন কান্না। নাহ একদমি না।সুখের কান্না কাঁদছে।সত্যিই বলেছে অভ্র।
নিজমনে বলে প্রেমা।বৃষ্টির পানির সাথে প্রেমার চোখের পানিও মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।তবে তা আলাদা করতে সক্ষম অভ্র।
পেঁছন ফিরে তাঁকায় অভ্র,ছেলেটা নৌকা চালাচ্ছে উল্টো দিক ফিরে। প্রেমার আরো নিকটে এসে বসে অভ্র। প্রেমার দু'হাত নিজের হাতের মধ্যে নেয়।তখনি প্রেমা অভ্রের দিকে তাকায়।
-"আমি তোমাকে ভালোবাসি না প্রেমা।(অভ্র)
আচমকা এই বাক্যটা প্রেমার কর্ণে মেঘের গর্জন তুলে।
হাত-পা শীতল হয়ে আসে। জোরে শ্বাস নিতে শুরু করে। অভ্রের কথাটা শুনার জন্য প্রেমার প্রস্তুত ছিলোনা। টলোমলো চোখে চেয়ে থাকে অভ্রের দিকে।
ঝাঁটকা মেরে হাত সরাতে নিলে অভ্র শক্ত করে চেপে ধরে। এবং কড়া কন্ঠে বলে,
"-আমার কথা এখনো শেষ হয়নি।কান্না থামাও।
-মাথা নিচু করে ফেলে।লাগামহীন চোখ জল ছেড়েই চলেছে। অভ্র ঠোঁট টিপে হেসে বলে উঠে,
-আমি তোমাকে ভালোবাসি না ঠিক,কিন্তু আমার স্পন্দনে তোমারি নাম। আমার অনুভুতির রাজ্যে অনুভুতিরা রোজ কোলাহলে মত্ত থাকে তোমার নাম জপে। তোমাকে দেখলে আমি যেমন পাগল হয়ে যায়,তেমনি আমিও চাই তুমিও আমার জন্য পাগল হও। একে-অপরকে ছাড়া দিন-দুনিয়া বিষাক্ত হোক।
আমার জন্য এখন তুমি যেভাবে ছটপট করো,তেমন আমিও করি,করতাম এবং করবো।তবে এসব অনুভূতির নাম আমি 'ভালোবাসা' দিতে চাই না। এ শব্দটার প্রতি আমার কোনো বিশ্বাস নেই।ভালোবসা একদিন পুরিয়ে যায়।কিন্তু অনুভূতি এবং চাওয়া সময়ের তালে বাড়ে।এটা আমার বিশ্বাস।
অনুভূতিরা হোক সীমাহীন। উভয়ের!(অভ্র)
অভ্রের সব কথায় মৌনতার সহে প্রেমা শুনে যায়।এবার প্রেমা বুঝত সক্ষম। কেন অভ্র ভালোবাসার কথা বলেনি।তার মনেও এ শব্দটি আসেনি।যার দ্বারা অভ্রকে কাছে টানবে।সে সোজা বলে দিয়েছিলো।" আমার তোমাকে চাই।তারমানে ভালোবাসার চেয়ে অনুভূতির চাহিদা খর্ব নয় বরং বেশিই।
এবার প্রেমা হাসিমুখ নিয়ে অভ্রের দিকে তাকায়। তখনি
অভ্র বলে উঠে,
-আই ওয়েন্ট টু সি দ্যিস চার্মিং লুক ওফ ইউর'স।
প্রেমা হাসি সমেত রেখে বলে উঠে,
-হয়েছে,এবার আমাকে নাকের
ইমুজির রহস্যটা কী বলো। (প্রেমা)
প্রেমার কথায় অভ্র শব্দ করে হাসে। এবং হুট করে প্রেমার কাছে গিয়ে প্রেমার নাকের সাথে নিজের নাকটা আলতো স্পর্শ করে।এবং দ্রুত সরে আসে। আচমকা ঘটনায় প্রেমা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে চেয়ে থাকে।অভ্র ওর নাক স্পর্শ করেছে।প্রেমার বিশ্বাসই হচ্ছেনা। প্রেমা নাকে হাত দিতে চাইলে অভ্র হাত ধরে ফেলে।
টেনে দাড় করায় প্রেমাকে। দুজনে পাশাপাশি দাড়ায়।তবে অভ্র হালকা দূরত্ব রাখে।যার ফলে প্রেমা রেগে অভ্রের হাত ধরে। মৃদু হেসে প্রেমার দিকে তাঁকিয়ে অভ্র বলে।
"আজ দুজনে সাংঘাতিক জ্বর বাঁধাবো।(অভ্র)
"-তাতে কী? 'আনন্দ নৌকা ভ্রমনটা' তো সম্পূর্ণ হবে।
দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থা থেকে অভ্র প্রেমাকে নিয়ে বসে যায়। তারপর বলে উঠে,
-ফুল,নদী,বৃষ্টি আর তুমি এ চারটা আমার বিষণ পছন্দের। আর সেই সাথে আমার দুর্বলতাও।
-কিন্তু আমার পছন্দ একটাই এবং সেটা 'তুমি।(গাল ফুলিয়ে বলে প্রেমা)
নিঃশব্দে হাসে অভ্র। প্রেমার গাল দুটো টেনে দিতে ইচ্ছে করে অভ্রের। নিজের ইচ্ছে নিজের মধ্যেই পুষে রাখে।সব ইচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণ করতে নেই।সময় দিতে হয়।
-আচ্ছা কাল তো বলেছিলে আরিয়ান স্যারকে নাকি কী ভাবে আটকাবে। কিন্তু বিয়ের কথাতো বলোনি।
প্রেমার দিকে চোখ ছোট করে তাকিয়ে অভ্র বলে,
-মেয়েদের নাড়িভুড়ি ছোট,সব বললে বিপদে পড়তে হতো তাই বলিনি। (অভ্র)
প্রেমা হালকা রাগে, তবে অভ্রকে সেটা বুঝতে না দিয়ে বল," প্লিজ বলো না জান। (প্রেমা)
চওড়া কন্ঠে বলে উঠে অভ্র,
-এসব ওয়ার্ড আমার অপছন্দ। আমার নাম ধরেই ডাকবা। আর আমি যেটা বলতে চাইবো না সেটা জানতে না চাইলেই বেশি খুশী হবো।(অভ্র)
অভ্রর কথায় প্রেমা একটা ভেংচি দেয়।এবং বাঁ হাতটা এগিয়ে দেয় অভ্রের সামনে।অভ্র হাতের তালুর দিকে তাঁকিয়ে হেসে দেয়।
"থ্যাংক'স আমার কথাটা রাখার জন্য।(অভ্র)
প্রেমা বিদ্রুপ কন্ঠে বলে, 'হুহ"
অভ্র প্রেমার চুল এলোমেলো করে দেয়।
এবং সামনের দিকে দৃষ্টি রেখে ভাবে সেদিন রাতের কথা। আরিয়ানের পানির বোতলে হালকা ড্রাগস মিশিয়ে ছিলো অভ্র। পরে শুরু হয় অারিয়ানের উল্টা পাল্টা প্রলাপ। নেশার ঘোরে অভ্রের কথাটাই শুনেছিলো সে।অভ্র যা বলেছিলো তাই করেছিলো। বিয়ে করতে বলেছিলো। সেটাও নেশার ঘোরে হাসিমুখে করে নেয়। প্রথমবার হুট করে ড্রাগস শরীরে প্রবেশ করায় আর নিজের প্রতি নিজের কাবু ছিলোনা।অভ্র যাই বলেছে তাই মেনে নিয়েছে।অভ্র নিজের স্বার্থের জন্য এটা করেছিলো।প্রেমাকে পাওয়াও অভ্রের স্বার্থের মধ্যে পড়ে। অরির সাথে আগে থেকেই পরিচিত অভ্র। নিজের বড়বোনের দৃষ্টিতে দেখে।
অভ্রের কথায় না করতে পারেনি।অরির একটা শারীরিকগত সমস্যার কারণেই মূলত এই বিয়েতে রাজি হয়।
-আমি বাড়ি যাবোনা অভ্র।(প্রেমা)
স্তম্ভিত ফিরে অভ্রের। অবাক হয়ে তাঁকায় প্রেমার দিকে,
-তাহলে কোথায় থাকবে?(অভ্র)
-তোমার সাথেই। (প্রেমা)
অভ্র চোখ গরম করে প্রেমার দিকে তাঁকায়।সাথে সাথে প্রেমা চুপসে যায়।ভিতু কন্ঠে বলে " মজা করছিলাম"
অভ্র অন্যদিকে তাকিয়ে হাসে। এরপর চুপ মেরে যায়।
আধঘণ্টা পর বৃষ্টি থেমে যায়।তবে নৌকা করে তাদের ভ্রমণ থামেনি। বরং চলেছে বিকেল পর্যন্ত।
৪০!!
প্রেমা অভ্রকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার পর মন খারাপ করে ফেলে। একবার অভ্রকে দেখে একবার নিজের হাতের দিকে চোখ দেয়।
মন খারাপ করে বলে উঠে,
-তুমিতো আমার থেকে বেশি ফর্সা,আর আমি তোমার থেকে বেশি কাইল্লা। (প্রেমা)
প্রেমার কথায় অভ্র ভ্রু কুঁচিত করে প্রেমার দিকে তাঁকায়।দেখে প্রেমার গাল ফুলিয়ে একবার নিজের হাত দেখছে আরেকবার অভ্রের হাত দেখছে।
অভ্রের হাসি চলে আসে। প্রেমার চুল একপাশে এনে বলে, "কে বলেছে তুমি কালো,তুমি সুন্দরী,আমর চেয়ে দ্বিগুন সুন্দরী তুমি।কিন্তু আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম তোমার চুলের খোঁপা দেখে,যেটা আমাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছিলো।
তো,কাইল্লা, ফর্সা এসব ভাবনা বন্ধ রাখো।(অভ্র)
-তুমি কার মতো হয়েছো?(প্রেমার)
প্রেমার প্রশ্নে অভ্রের চোখমুখের রঙ বদলে যায়। যেনো প্রেমার প্রশ্নটা তার সহ্য হয়নি। হাত মুষ্টিবদ্ধ করতে গিয়েও থেমে যায়। নিজের হঠাৎ প্রতিক্রিয়াটা প্রেমার চোখে আবদ্ধ হওয়ার আগে নিজেকে সামলায়।জোরপূর্বক একটা ম্লান হাসি হাসে। যা দেখে প্রেমা অদ্ভুদ দৃষ্টিতে তাঁকায়। প্রেমা অভ্রের চেহারায় মলিনতার চাপ লক্ষ্য করে। ঠোঁট মেলে কিছু বলতে যাবে তার আগে ঝড়ের গতিতে প্রেমাকে জড়িয়ে ধরে। যা দেখে প্রেমাও হতবাক হয়ে যায়। অভ্রকে কেমন অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে তার।তাহলে কী অভ্র কিছু লুকাচ্ছে?
হাত আলগা করে অভ্রের ভেজা পিঠে রাখে। চোখ বন্ধ করে প্রেমা। অভ্র ও চোখ বুজে ফেলে।চোখের কর্ণিশ ভেদ করে একফোঁটা জল গড়িয়ে পরে অভ্রের।
কাঁধে গরম তরলের স্পর্শ পেতেই প্রেমা ধরে ফেলে অভ্র কান্না করছে। দ্রুত অভ্রের থেকে সরতে চাইলে অভ্র আরো শক্তভাবে নিজের সাথে
আবদ্ধ করে রাখে প্রেমাকে।
মিনিট দুয়েক পর প্রেমার থেকে সরে যায়।এবং দাঁড়িয়ে যায়।প্রেমাকে দাঁড়ানোর জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়। অভ্রের হাতে প্রেমা হাত রাখলেই অভ্র টান দিয়ে দাড় করাই প্রেমাকে। প্রেমার মুখে কোনো হাসি নেই। তবে প্রেমা কিছু বলতে যাবে,অভ্র বলে উঠে,
-নামো আমরা এ পাড়ে চলে এসেছি। (অভ্র)
প্রেমা অভ্রের পেঁছনে তাঁকায়, দেখে চলে এসেছে।তাই বিনাবাক্যে নেমে যায় নৌকা থেকে।
অভ্রও নেমে প্রেমার হাত ধরে হাঁটতে চাইলে প্রেমা দাঁড়িয়ে যায়।পেঁছন ফিরতেই দেখে প্রেমা একরাশ কৌতূহল নিয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।
অভ্র কিছু একটা ভেবে প্রেমার দিকে এগিয়ে আসে। তা দেখে প্রেমা চোখ ছোট করে তাঁকায়।
কানে পাশে এসে মৃদু কন্ঠে অভ্র বলে উঠে,
-তুমি এতো সফ্ট কেন? (অভ্র)
অভ্রের এমন কথায় প্রেমা চমকে যায়,সরতে চাইলে অভ্র হাত ধরে ফেলে। এবং বলে, " উত্তর দাও"(অভ্র)
প্রেমা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে বলে, "মেয়েরা সফ্ট হয়।
অভ্র ঠোঁট চেপে হাসি আটকিয়ে বলে,
" ওহ আমি জানতাম না তো,মাত্র জানলাম। (অভ্র)
এবার প্রেমা রেগে যায়,
"তুমি যাবে? নাকি আমি চলে যাবো।
-আমি যাবোনা বলেছি? তুমিই তো....(অভ্র)
অভ্রকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে,প্রেমা হাঁটতে শুরু করে। যা দেখে অভ্র শব্দ করে হাসে।
-বড় বাঁচা বাঁচলাম।(অভ্র)
মূলত প্রেমার মনোযোগ সরানোর জন্য অভ্র কথাগুলো বলে। নাহলে প্রেমার প্রশ্নের প্যাঁচালে পড়তে হতো।
লম্বা পায়ে হেঁটে অভ্র প্রেমার পাশে চলে আসে অভ্র।
-আমরা কোথায় যাচ্ছি প্রেমা।(অভ্র)
হঠাত অভ্রের কথায় প্রেমা থেমে যায়।রাগের মাথায় হাঁটছিলো। তাই কোথায় যাচ্ছে বুঝতে পারেনি।এসেছে তো অভ্রের সাথে।
" জানিনা,কোথায় যাচ্ছি,তুমি বলো আমরা কোথায় যাচ্ছি। (প্রেমা)
"চলো, আমার সাথে হাঁটতে থাকো তারপর দেখবা কই যাচ্ছি। (অভ্র)
অভ্র হাঁটতে নিলেই প্রেমা হাত ধরে ফেলে অভ্রের সাথে হাঁটতে শুরু করে।
দু'পাশে বিশাল বড় উঁচু গাছপালা। মাঝখানে ইটের রাস্তা। জনমানবহীন পরিবেশ।মাঝে মাঝে কয়েকটা পাখির কিচিরমিচির শব্দ কানে আসছে।আবার হিমশীতল বাতাসও শরীর স্পর্শ করে। আর কিছুদূর এগোতেই একটা কাঠের বাড়ি দেখতে পায় প্রেমা।
হঠাৎ বিস্ময়ে চোখ বড় করে তাঁকায় বাড়িটির দিকে।
তেঁতুল বিচি রঙে বাড়িটির সৌন্দর্য আরো দুইগুণ বাড়িয়ে তুলেছে। বাড়ির দক্ষিণ দিকে দৃষ্টি পড়তেই দেখতে পায় ফুলের বাগান। রঙবেরঙের ফুল।
প্রেমার সামনে তুড়ি বাজিয়ে অভ্র প্রেমার ধ্যান ভাঙায়।
-"আজ থাকছো এখানে,তাই আশেপাশে দেখতে পাবে কাল।এখন চলো,তোমার ভেজা কাপড় চেঞ্জ করতে হবে।ঠান্ডা লেগে যাবে।" (অভ্র)
অভ্রের কথায় প্রেমা খুশী হয়ে জিজ্ঞেস করে,
"-তোমার সাথে থাকবো? (প্রেমা)
অভ্র কর্কশ কন্ঠে বলে উঠে,
-সবসময় আমার সাথে থাকার চিন্তা করো নাকি?
তাহলে সব ভুলে যাও। সোজা বাড়ি পাঠিয়ে দিবো এমন চিন্তাভাবনা করলে।এখন চলো (অভ্র)
অভ্রের ধমকানিতে প্রেমা চুপ হয়ে অভ্রের
পেঁছনে হাঁটা দেয়।
বাড়িটির দরজার সামনে এসে কলিংবেলে চাপ দেয়।
সাইকান দরজা খুলেই অভ্রের দিকে তেড়ে আসে। তাখনি অভ্র হাত বাড়িয়ে সাইকানকে থামিয়ে পেঁছনের দিকে ইশারা করে।প্রেমাকে দেখে সাইকান চুপ হয়ে যায়।সেও রেগে আছে অভ্রের উপর। এতো কিছু ঘটালো অথচ ঘটনার 'ঘ' ও জানেনা সে।অভ্র ওকে কিছু জানায়নি তারজন্য সে প্রচুড় ক্ষেপে আছে। সাইকানের পেঁছন পেঁছন জেরিনও বেড়িয়ে আসে।
-বাড়ির খবর কী সাইকান?(অভ্র)
বাড়িতে প্রবেশ করতে করতে জিজ্ঞেস করে,
"-অরিপু এর পরিচয় পেতেই স্বানন্দে গ্রহণ করে নিয়েছে বুঝ এবার কতোটা...(সাইকান)
অভ্র আবারও চোখ রাঙানি দেয়,তাতে সাইকান চুপ মেরে যায়। অভ্র জেরিনের দিকে তাঁকিয়ে বলে,
- প্রেমাকে রুমে নিয়ে যা,আর ওর ড্রেস
গুলো বের করে দিস।আর বডি লোশনটা বের করে দিস।(অভ্র)
-আচ্ছা, (জেরিন)
অভ্র প্রেমার কানের কাছে গিয়ে বলে,
-বৃষ্টিতে অনেকক্ষণ ভিজেছিলে জ্বর আসতে পারে।শাওয়ার এর পর লোশন মেখে তারপর ড্রেস পড়বা।
হঠাৎ অভ্রের কথায় প্রেমা লজ্জায় পড়ে যায়।শরীরের পশম দাঁড়িয়ে যায়। অভ্রের দিকে না তাকিয়ে প্রেমা জেরিনকে ইশারা করে রুমে নিয়ে যাওয়ার জন্য। প্রেমা-জেরিন যেতেই অভ্র সাইকানের গালে থাপ্পর লাগিয়ে দেয়।
-ইডিয়েট কেন বলিনি বলছিস? তোর নাড়িভুড়ি ও মেয়েদের মতো শর্ট।কোথায় কী মুখ ফসকে বলে ফেলবি তার কোনো ইয়াত্তাও নেই। (অভ্র)
সাইকান ভয়ে চুপ মেরে যায়। বুঝতে পেরেছে অভ্র রেগে আছে।তাই চুপ থেকে যায়।মনমনে ভয়ানক একটা গালি দেয়।
অভ্র রেগে কাঠের সিঁড়ি বেঁয়ে উপরে নিজের রুমে চলে যায়। রুমে আসতেই ফোনের শব্দে আরো দ্বিগুন রাগ বাড়ে তাঁর। ফোন হাতে নিয়ে দেখে প্রেমার বাবার নাম্বার।ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করে ফোনটা রিসিভ করে,
-আসসালামু আলাইকুম আংকেল। (অভ্র)
-ওয়ালাইকুম আসসালাম,বাবা দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলল। প্রেমার কোনো খোঁজ কী পাওনি।আমি অনেকবার ফোন দিয়েছিলাম তোমার ফোনে।
-দুঃখীত আংকেল,ফোন সাইলেন ছিলো তাই খেয়াল করিনি।আর প্রেমার খোঁজ পেয়েছি।(অভ্র)
-কো..কোথায় বাবা আমার মেয়েটা কোথায় এখন?
-জ্বি আংকেল উনার এক ফ্রেন্ডের বাড়িডে আছেন প্রেমা।আমাকে এড্রেস বলেনি। উনি বলেছেন গ্রামে ফিরবেন না।ওখানে নাকি লোকজনদের কথা শুনতে হবে। তাই আর ফিরে যাবেন না।আপনাদের চিন্তা করতে বারন করেছিলো।আংকেল আপনি চিন্তা করবেন আমি কাল আবারও উনার সাথে কথা বলবো।
রাখছি আংকেল।
প্রেমার বাবা ফোনা কান থেকে নামিয়ে টেবিলে রেখে দেন।তখনি পিয়াস এসে বলে,
'-ওই অচেনা ছেলেটার বলা কথা তুমি বিশ্বাস করে নিলে বাবা? আমি..
পিয়াসের কথার মধ্যে প্রেমার বাবার উঠে কষে একটা চড় বসিয়ে দেয়।পরপর আরো দু'টো চড় মারে।
-তোর জন্য,তোর জন্য হয়েছে আজ সব।আমার মেয়েটা আজ বাড়ি ফিরছেনা।কী দরকার ছিলো এতো জামেলা করার। মেয়েটার জীবণ শেষ করার জন্য উঠে-পড়ে ছিলি।আমি বলে দিচ্ছি আমার মেয়ের জন্য আলাদা একটা ফ্ল্যাট কিনে আমরা সেখানে থাকবো।আমার সেই সামর্থ্য আছে এখনো।তুই থাক তোর মতো।
বলেই পিয়াসের বাবা রেগে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যান।প্রেমার দাদিও নিশ্চুপ আজ।এসবে উনি নিজেকেও দ্বায় করছেন।
ফোনের অপরপাশে কথাগুলো শুনে ঠোঁটের কোণায় বাঁকা হাসি ফুটে উঠে অভ্রের। শান্তিপূর্ণ একটা শ্বাস ত্যাগ করে ওয়াসরুমে চলে যায় শাওয়ারের জন্য।
অভ্রের কথামতো প্রেমা হাত,পায়ে,মুখে লোশন মেখে নেয়। প্রচুর ক্ষিদে পেয়েছে প্রেমার। মিষ্টি কালারের উরনা গায়ে জড়িয়ে রুম থেকে বের হয়।প্রচন্ড শীত করছে তার। বাইরে আবারও বৃষ্টি পড়ছে। নিচে নামতে গেলে একটা সুগন্ধ প্রেমার নাকের সংস্পর্শে আসে।প্রেমা উপলব্ধি করতে পারে ঘ্রাণটা সবসময় অভ্রের শরীর থেকে পেতো সে। মাতাল করা ঘ্রাণ। প্রেমা নিচে না নেমে পাশের রুমটাতে নক দেয়।সারাশব্দ না পেয়ে প্রেমা দরজা মেলে ঢোকে যায় রুমে।
দেখে কাঠের বারান্দায় গালি গায়ে দাড়ানো অভ্র। ফোনে কারো সাথে কথা বলায় ব্যস্ত। ফর্সা উন্মুক্ত শরীর দেখে প্রেমা আর সামনে এগোয়নি।জেরিনকে খোঁজতে শুরু করে। সিঁড়ির মাঝ বরাবর আসতেই দেখে সাইকান আর জেরিন পাশাপাশি বসে আছে।আরো কিছু দৃশ্যমান হওয়ার আগেই লজ্জায় পেঁছন ফিরে উপরের দিকে দৌড় দেয়।
-আজকালকার ছেলে-মেয়েরা একটু বেশিই ন্যাকামি করে ফেলে।আল্লাহ্(প্রেমা)