বসন্তের ফুল - পর্ব ০১ - তারিন জান্নাত - ধারাবাহিক গল্প


০১!!

--"দেখ দেখ তিন-তিনডা জ্যান্ত জামাই ঘিলে খাইয়া এখন নাকি ভেরসিটি যাইতাছে হেতি' অপয়া, (একমহিলা)

--"হ আপা,এক্কেরে হাসা কথা কইলেন।লাজ-লজ্জা আছে নি হেতির।আঁর মাইয়া হলে শুআইয়া জবাই কইরা নদীতে ভাসায় দিতাম"।(২য় মহিলাটি)

--"পুরো গ্রামের মাইয়াগোরেও হেতি অভিশপ্ত করবো দেখিস,,বুড়ি হইয়া যাইতেছে কেডায় করবো বিয়া এমন অপয়ারে"!!

গ্রামের রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে প্রেমা ভার্সিটিতে এডমিশন নিতে যাচ্ছিলো।সেখানেই মহিলা গুলোর কথার আক্রমন। তারা শুধু মানুষদের নানা ভাবে অপদস্থ করার জন্য উঁত পেতে থাকে। আর তাদের আজকের শিকার ছিলো প্রেমা। চোখ-মুখ খিঁচে মহিলাগুলোর কথা হজম করে নেয়।কারন এখানে মহিলাগুলোর সাথে গলা তুলে কথা বলাটা প্রেমার কামনীয়তা নয়। তারা তো সত্যিটায় বলেছে।

আচমকা মুখে রুমাল বাঁধা দুটো ছেলে দুইবালতি গোবর আর গোবরের পানি সহ এনে মহিলাগুলোর মুখে ছুড়ে মেরে চলে যায়। গোবরের পানি  ছুড়ে মারার গতি এতোটাই বলিষ্ঠ ছিলো যে তারা ভুলক্রমে পানি কিছুটা খেয়ে ফেলে। 

তারপরেই শুরু হয় তাদের গলা ফাটানো আত্মচিৎকার এবং অসভ্য ভাষায় গালিগালাজ।চেঁচামেচির শব্দে প্রেমা ঘাড় হালকা বাঁকা করে দেখে মহিলাগুলো গোবরে গোসল করা। পেট ফেটে হাসি চলে আসে প্রেমার। এতক্ষন যে তাকে কথা শুনালো সেটা মনে আসতেই আরো জোরে তাদের শুনিয়ে হাসতে লাগলো।প্রেমার হাসিতে তারা তেলে বেগুনে ভেজে উঠে। 

--"স্যার কাজ হয়ে গেছে"..(ছেলেগুলোর মধ্যে থেকে একজন বলে উঠে)

--"গুড!'তোমাদের পেমেন্ট পেয়ে যাবে"!!...(অজ্ঞাত ব্যাক্তি)

কথাটা বলেই ফোনটা কেটে স্বস্তির শ্বাস ফেলে অচেনা ছেলেটা। গাড়ির গ্লাস অল্প করে নামিয়ে হাতে ক্যামরাটা নিয়ে নেয়। হাত বের করে প্রেমার কয়েকটা ছবি ক্যামরায় ক্যাপচার করে নেয়।এটা তার দৈনন্দিন কাজ গুলোর মধ্যে থেকে একটা। তারপর প্রেমার ছবিগুলো গভীরভাবে মন দিয়ে দেখতে লাগলো। কিছুসময় অতিক্রম করার পর দেখে প্রেমা আবারো ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য হাঁটা ধরেছে।তাই ক্যামরা রেখেই গাড়ি স্টার্ট দিয়ে প্রেমার পিছু নেয় সে।

আরো বেশ কিছুক্ষন হাঁটার পর প্রেমা বড় রাস্তায় উঠে দাঁড়ায় । এখন বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।এখানে আরেক মুশকিল স্টেশন বাদে এই জায়গায় বাস,রিক্সা,সিএনজি পাওয়া অসম্ভভ। হয় একগাধা সময় নিয়ে দাড়িয়ে থাকতে হবে নয়তো স্টেশন থেকে গিয়ে আবার পূনরায় এ পথে আসতে হবে।যা বেশ বিরক্তিকর ব্যাপার। প্রেমা দাড়ানোর পাঁচ মিনিট পরেই একটা সিনএনজি এসে প্রেমার সামনে দাড়ায়। এভাবে সিএনজ আসায় একটুও হতচকিত হয় নি।

এটা ওর সাথে রোজকার ব্যাপার।কিন্তু আড়াল থেকে ওকে যে এভাবে সাহায্য করছে তার অনুসন্ধান এখনো করতে পারেনি। প্রেমা দেরী না করেই সিএনজিতে উঠে যায়।মাথা বের করে পেছনে তাকাতেই দেখে সেই ব্ল্যাক কালারের কারটা ওর পিছুন পিছুন আসছে।

প্রেমা মাথা ডুকিয়ে ফেলে আর তাকায়নি পেছনের দিকে।একসময় ভার্সিটির গেইটের কাছে চলে আসে।ভাড়াটা মিটিয়ে পাশে তাকাতেই দেখে কারটা একসাইডে এসে থেমেছে। প্রেমা আর না তাকিয়ে গেইট দিয়ে ভেতরে চলে যায়। 

প্রেমা ভেতরে গেলেই অচেনা ছেলেটি  নিজের হাতের ফোনটা বের করে একজনকে কল দেয়।

--'আমি একটু কাজে যাচ্ছি,আমার ফুলরানীর খেয়াল রাখিস কেউ যেনো বিরক্ত করতে না পারে' বুঝেছিস??

--"জ্বি স্যার!

০২!!

গ্রামের রাস্তায় ঢোকে আবারো হেঁটে বাড়ি যাচ্ছে প্রেম!এ মুহূর্তে মেজাজ ভীষণ গরম প্রেমার। একে তো বাড়ি থেকে ছাতা আনতে ভুলে যাওয়ার ফলে রোদের মধ্যে হেঁটে বাড়ি যেতে হচ্ছে তার উপর আজকের ভার্সিটিতে আরিয়ান স্যারের প্রেমার হাত ধরাটা। 

রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছিলো।শিক্ষক হয়েছে শিক্ষকের মতো না থেকে স্টুডেন্টকে প্রপোজ করে কোন আক্কেলে।এতোদিন চুপ ছিলো আজ তো হাত ধরে ফেলেছে। রাগ সংযত করতে না পেরে প্রেমার তার স্যারের মুখে পানি ছুঁড়ে মেরে চলে এসেছে।

--ভাই ফুলভাবি তো এখনো আসেনি?""(নিরাজ)

--""আসবে!!"

--""ওহ" (সাহিল)

---""ভাই একটা কথা বলি"(সাহিল)

--"হুম।

--আপনি যে নতুন গাড়ি নিয়েছেন বাসায় জানে??(সাহিল)

--"নাহ। 

--"তাহলে যখন জানবে তখন কী করবেন?" আর গাড়ি নেওয়ার কারনটা কী??"

-- জানলে জানবে তাতে আমার ভয় নেই।আর গাড়ি নেওয়ার কারন আমি রিক্স নিতে চাই না।গতবার কী হয়েছে মনে নেই??

  মনে পড়তেই তাঁরা তিনজনেই হেসে উঠে। 

-"ভাই আপনি গাড়ি চালানো শিখলেন কিভাবে"?

--গাড়ি চালানো শেখা এতো কঠিন না,এই নাও এই ছাতাটা নিয়ে উনাকে দিয়ে এসো। আমি এখানেই আছি।

--জ্বি আচ্ছা ভাইয়া।(সাহিল)
 তারপর দুজনে ছাতা নিয়ে প্রেমার জন্য অপেক্ষা করতে লাগে ব্রিজের কিছু দূরে দাড়িয়ে।

—————

প্রেমার হাঁটতে হাঁটতে একটা ছোট ব্রিজের কাছে চলে আসে।  প্রতিদিনের মতো আজো  রাফিন দাড়িয়ে আছে।  প্রেমা চুপচাপ রাফিনকে ক্রস করতেই রাফিন গেয়ে উঠে...

--"প্রেমি ও প্রেমি দেখা দাও তুমি!!" হেই প্রেমিকা কোথায় গিয়েছিলে??(প্রেমাকে উদ্দ্যশ্যে করে)

আজকে যে রাফিনের কপালে শনি আছে সেটা একটু দূর থেকে সাহিল আর নিরাজ দেখে বুঝতে পারলো।

আচমকা রাফিন প্রেমার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁত খেলিয়ে হাসি দিতে লাগলো।যা প্রেমার রাগকে আরো দ্বিগুন করে তুলে।

ঝড়ের গতীতে রাফিনের হাত ঘুড়িয়ে পেছনের সাইডের জোরে একটা লাত্তি মারে প্রেমা। হুড়মুরিয়ে মাটিতে পরে যায়। পাশ থেকে সাহিল বলে উঠে..

--"ওয়াহহ,কিয়া সিন হে।

সাথে সাথে প্রেমার তাদের দিকে তাকাল রাগ নিয়ে।সাহিল ভয়ে ছাতাটা নিরাজকে দিয়ে পালিয়ে যায়।নিরাজ  ভয়ে ভয়ে প্রেমার দিকে এগিয়ে যায়।

--""প্রেমাপু, এই ছাতাটা নেন এখানে অনেক 
রোদ মাথা ঘুরবে।

প্রেমা ছাতাটা নিয়ে হনহন করে পা চালিয়ে চলে যায়!এরপর রাফিনও আস্তে আস্তে উঠে চলে যায়।

—————

সাহিলের দৌড়ানি দেখে গাড়িতে বসে অচেনা ছেলেটি হাসতে হাসতে ঘড়াঘড়ি খেতে লাগলো।

নিরাজ গিয়ে গাড়িতে বসে...

--"ভাই আপনি হাসছেন?? প্রেমাপুর রাগ উঠলে তো সবাইরে ধুলায় দেয় আমিও খাইছি তাই আপুকে কিছু বলি না। "

--গুড কিছু বলতে হবে না।শুধু উনার দিকে খেয়াল রাখলেই হবে।আমি তো আর সবসময় তোমাদের গ্রামে আসতে পারবো না এখন। স্টাডি আছে...

-ভাই প্রেমাপুরে খুব ভালোবাসেন তাই না??

--"ভালোবাসি কী না জানি না।কিন্তু আমার উনাকেই চাই যেকোন মূল্যে।উনার সবকিছুর উপরে...(বলতে গিয়েও থেমে যায়) তুমি ছোট মানুষ এতো জেনে লাভ নেয়। 

--আচ্ছা ভাইয়া আপনি বাড়ি যান।আমিও বাসায় যায়।(বলেই গাড়ি থেকে নেমে চলে যায়)

—————

মানুষের এমন বাজে স্বভাব কখনো পরিবর্তন হবে না।নিজেদের চরকায় তেল তো দিবেই না কিন্তু অন্যের চরকায় তেল দেওয়ার জন্য সর্বক্ষণ প্রস্তুত!!
এসব মনে মনে প্রেমার দাদি ভেবে যাচ্ছিলো!!

সকালের মহিলা দুটো প্রেমার বাড়িতে এসেছে
প্রেমার নামে নালিশ দিতে। 

--খালাম্মা আন্নি কহেন তো  মাইয়ার এমন বিয়াদবি
কেডায় হজম করবো??(মহিলা)

--আমার নাতনি কী করেছে??

--"কিয়া করে নাই হেইডা কন খালম্মা।
আমাগো দুজনরে গোবরের পানি দিয়া 
গোসল করাইছে হেতি!!"(২য় মহিলা)

--"আচ্ছা কাজ করছে আমার নাতনি!!
 গুত যব!!"(প্রেমার দাদি)

পাশ থেকে প্রেমার ভাবি বলে উঠে..

--"গুড জব হবে দাদি গুত যব না।" (নাতাশা)

--"হ্যাঁ হ্যাঁ সেটাই। তো আমার নাতনি
 তোমাদের উপর গোবর ছুড়ে মেরে গোবরিং-বাথ করাইছে তাইতো??""(দাদি)

প্রেমার দাদির কথা শুনে নাতাশার মাথায় হাত!!

--"হ আরো গাল ভাইঙা ভাইঙা হাসছিলো"।

তখনি  মহিলাটির ছেলে এসে বলতে লাগে....

--দাদিজান আম্মায় মিছা কথা কচ্ছে।
প্রেমাপুরে আম্মায় আর চাচি কইছে তিনটা জ্যান্ত
জামাই ঘিলে খাইয়া ভেরসিটি যাইতাছে তখনি
দুইটা ভাইয়া আইসা আম্মা-চাচিগোর মুখে গোবর ছুইরা মারছে,,প্রেমাপু কিচ্ছু করে নাই।

এবার মহিলাটি নিজের ছেলের দিকে রাগী চোখ নিয়ে তাকাল। প্রেমার দাদি রওসন বেগম এতক্ষন কিছু 
না বললেও এবার আর না বলে থাকতে পারলো না।
কারন ওরা প্রেমার উপর মিথ্যে অপবাদ দিতে এসে ছিলো এবং........

--"তোরা আমার নাতনিকে এমনটা বললি কোন সাহসে।"(প্রচন্ড রেগে) আমার নাতনি জামাই ঘিলে
খায়ছে মানে?? বিয়ে তো হয়নি জামাই হইবো কেমনে?
বিয়ের আগেই তো তাদের উপর গজব 
পরে এসপিডেন্ট"(এক্সিডেন্ট) হয়। 
তারপর মরছে।আমার নাতনির কী
দোষ!!"" 

এরপর শুরু হয় প্রেমার দাদির গালি মহিলাগুলো অপমান পেয়ে রাগ আর ক্ষোভ নিয়ে প্রেমাদের বাড়ি 
ত্যাগ করে।

মহিলাগুলো যাওয়ার পরপরেই প্রেমা বাড়িতে প্রবেশ করে প্রচন্ড রেগে।নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন