বসন্তের ফুল - পর্ব ০৪ - তারিন জান্নাত - ধারাবাহিক গল্প


০৭!!

বাইক থেকে নেমে প্রেমার আর অভ্র দু'জনে মুখোমুখি হয়ে দাঁড়াল। ব্ল্যাক শার্টে অসাধারন লাগছে অভ্রকে।প্রেমা অভ্রের দিকে এক পলক চেয়ে আবার গেইটের দিকে উঁকি দিচ্ছে।গাড়িটির উপস্থিতি দেখার জন্য। কিন্তু দেখতে পায়নি। 

তাই একটা স্বস্তির শ্বাস ছাড়ে। অভ্র বরাবরেই প্রেমার দৃষ্টিগুলো লক্ষ্য করছে। এবং মনে মনে হাসছে..

-"আমি  প্রিন্সিপ্যাল স্যার মানে আমার ফুফার সাথে কথা বলেছি কাল। এখন শুধু আপনি স্যারের সাথে গিয়ে কথা বলবেন।তারপর নিজের ক্লাসে  চলে যাবেন ওকে??"(অভ্র)

প্রেমা মাথা নাড়িয়ে একবার গেইটের দিকে দৃষ্টি ছুঁড়ে  চুপচাপ চলে যায় অভ্রের কথা মতো।  অভ্র প্রেমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে একমনে।

ব্ল্যাক কারটি সেই মুহুর্ত গেইট দিয়ে প্রবেশ করল। সেখান থেকে কেউ একজন বের হয়ে অভ্রের পেঁছনে এসে দাঁড়াল। এবং খুবই জোরে একটা তাপ্পর লাগালো অভ্রের পিঠে।

অভ্র পেঁছন ফিয়ে সাথে সাথে বলে উঠে,

--"শালা...(অভ্র)"

--আমার বোনকে তুই বিয়ে করবি??(ভ্রু কোঁচকে জিজ্ঞেস করে)

--"ওই বিচুটিপাতাকে কে বিয়ে করবে!!?(অভ্র)

--" না তা  করবি কেন?? তোর টেস্ট তো আবার আলাদা!! (খোঁচা মেরে)

--" শালা!! (অভ্র)

--তুই শালা!

--"আমার বোন নাই। একটা ভাই আছে সে ও এ বয়সে তোর বোনের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে! "

বলেই দু'জনে হাসতে লাগলো। 

--"আচ্ছা এখানে বেশিক্ষন থাকা ভালো হবে না
 চল...(অভ্র)" 

--" ক্লাস করবি না?? "

"নাহ" বলেই অভ্র সেই ব্ল্যাক কারটির দিকে হাঁটা ধরল। অভ্র ড্রাইভিং সিটে বসে এবং তার পাশের সিটে সাইকান এসে বসে। তারপর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে তাঁরা চলে যায়।

সাইকান হলো অভ্রের ফুফাতো ভাই। সেম এজের দু'জনে। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। 

নদীর পাশে এসে গাড়িটা থামায় অভ্র। সাইকান একটা বিয়ার এগিয়ে দেয় অভ্রকে। বিয়ারের বোতল নিয়ে চুমুক দিয়ে কয়েক ঢোক গিলে ফেলল। প্রচন্ড গরমে ঠান্ডা বিয়ার বা অন্য সব কুল ড্রিংকস বেশ তৃপ্তি দেয়। 

--"আজকে হঠাৎ তোদের ফলো করতে বললি কেন??"[সাইকানের প্রশ্ন]

--"কারন আছে তাই তো বললাম! " 

--" কারনটা বল ভাই!  তিন বছর ধরে কম কাটাস নাই আমারে দিয়ে। এইবার বল ক্যান তোগোরে ফলো করতে কইছিলি!!??[সাইকান]

--" আরে বলছি।আসলে আমি উনার রিয়েক্টটা দেখতে চায়ছিলাম! যেহেতু ফ্রেন্ডশীফ করছে সেহেতু ফ্রেন্ড হিসেবে আমার সাথে সব কথা বা সমস্যা সেয়ার করবে! ব্যাস আমিও সেই অপেক্ষায় আছি!!

--ভাইরে ভাই সোজাভাবে গিয়ে বলে দিতে পারিস প্রেমাপু থুক্কু প্রেমা ভাবি আরে না না "প্রেমা আমি তোমাকে ভালোবাসি" তাহলেই তো হলো!! [সাইকান]

কথাটা বলেই অভ্রের দিকে তাঁকাল। তখন দেখলো অভ্র চোখ-মুখ লাল করে তাঁর দিকেই তাঁকিয়ে আছে। সেটা দেখেই সাইকান ভয়ে চুপসে যায়। অভ্র বেশ ভয়ংকর একটা গালি*** দেয় সাইকানকে।

--"আমার ফিলিংসটাকে তুই প্রেম ভালোবাসা বলে ইনসাল্ট করছিস। এই নাম তুই আমার গাড়ি থেকে নাহলে এখন আমার একটা লাত্তি খাবি তুই শালা।[প্রচন্ড রেগে কথাটা বলে অভ্র]

--" আমি কখন ইনসাল্ট করলাম! আমি তো সত্যিটা বললাম।আর এভাবে ক্ষেপে যাচ্ছিস কেন?? আমি কিন্তু প্রেমা ভাবিরে সব বলে দিমু তুই যা যা করেছিস সব। "[সাইকান]

--" যা বল গিয়ে আমিও তোর বাপরে বলমু জরিনার সাথে যে তুই ইটিসপিটিস করস সে কথা। [অভ্র]

--" ওর নাম জেরিন জরিনা না!!..... (কিছুক্ষণ থেমে) আচ্ছা ভাই বাদ দে এমনি তোর লগে মজা করছিলাম।  কিন্তু আমি এখনো কনফিউজড! 

"--কি কারনে??"

--"প্রেম ও না ভালোবাসা না তাহলে কিসের টানে এমন করস??(সাইকান)

এবার অভ্র নড়চড়ে বসে সিটে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে।তারপর চোখ খুলে সাইকানের দিকে দৃষ্টি রাখলো,

--" এটা খুব হার্ড একটা ফিলিংস আমার জন্য। ফিলিংসটার নাম আমি প্রেম ভালোবাসা দিতে চায় না। কারন উনার প্রতি আমার ফিলিংসটা প্রেম ভালোবাসার উর্ধে। প্রেম ভালোবাসা এসব একদিন হয়তো ফুরিয়ে যায় পরিস্থিতির কারনে সেটা আমার বিশ্বাস। কিন্তু চাওয়া কখনোই শেষ হবে না না বরং সময়ের তালে তালে সেটা বাড়তে থাকবে।

 তাই আমি উনাকে চাই,এখন আমার একটাই চাওয়া উনি আমার এই চাওয়া নামক ফিলিংসটা বুঝে আমার কাছে আসেন।আর যদি তাতে কাজ না হয় তো আমি বাধ্য করবো।
কথাগুলো বলেই সাইকানের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দেয়। সাইকান তো অবাক হয়ে তাঁকিয়ে আছে অভ্রের দিকে। 

--সেলিউট ব্রো! বড় বড় প্রেমিক পুরুষরাও আজ তোর যুক্তিতে হার মানবে।আচ্ছা প্রেমা ভাবি যদি বাই চান্স জানতে পারে তোর সব কীর্তির কথা তখন কি করবি??(সাইকান)

--" সে পরে দেখা যাবে...! 

দুজনে আর কিছুক্ষন কথা বলে এরপর নদীর পাড়ে হাঁটে। কলেজ ছুটির টাইম হলেই দুজনে কলেজে ফিরে যায়। অভ্র যাওয়ার পর পরেই সব ক্লাসে ছুটি হয়ে যায়।

প্রেমা বের হয়ে দেখে অভ্র বাইকের উপর বসে আছে।তাই অভ্রের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। অভ্র প্রেমার দিকে এক পলক তাকিয়ে বাইকে বসার জন্য ইশারা করে। 
বাইকে বসতেই অভ্রের প্রশ্ন,

--"ফার্স্ট ক্লাস কেমন লেগেছে??" (অভ্র)

--"ভালো! তুমি ক্লাস করেছিলে??(প্রেমা)

অভ্র থমথম খেয়ে যায়।কী বলবে এখন?? মিথ্যা বলা অভ্রের পছন্দ নয়।তাই সত্যিটাই বলে দেয়।

--"ক্লাস করিনি আজ!! একটা ফ্রেন্ডের সাথে একটু বাইরে গিয়েছিলাম!(অভ্র)

--"দেখেছিলাম! (প্রেমা)

তারপর দুজনে চুপ হয়ে যায়। অভ্র বাইক স্টার্ট দেয়। আর ভাবছে প্রেমা কিছু জানতে পারলো না তো??

—————

বাইক থেকে নেমে প্রেমা আগে হেঁটে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলো তখনি দেখে অাদ্র দাড়িয়ে আছে সাথে তার সমবয়সী একটা মেয়ে দাড়িয় আছে। প্রেমা তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।

আদ্র আরেকটু এগিয়ে আসে প্রেমার সামনে...

--"এতক্ষনে আসছো! আমার গার্লফ্রেন্ডকে তোমার সাথে দেখা করানোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম! 

এবার প্রেমা আবারো একটা ঝাটকা খায়। কী বলে ছেলেটা?? এমন সময়ে কী বলবে সেটাই ভেবে পাচ্ছে প্রেমা।

০৮!!

"প্রেমা আদ্র আর সাইরার দিকে তাকিয়ে আছে..কী বলবে বুঝতে পারছে না!নিজেকে সামলে নিয়ে আদ্র আর সাইরার দু'জনের গাল ধরে টেনে দিলো।"

"উনি কে আদ্র....???? (সাইরা)

" আমার প্রেমাপু....!! সাইরা তুই তোর মায়ের সাথে গিয়ে বসে থাক! আমি এখন আমার প্রেমাপুকে টাইম দিবো..তুই যা....!!"(আদ্র)

"আরে আমাকে টাইম দেওয়ার কী আছে..যেহেতু তোমরা...?? তো তোমরা তোমাদের মতো থাকো আমি বরং যায়...!!"

"কিন্তু....??(আদ্র)

" কী হচ্ছে এখানে...???(অভ্র)

অভ্রকে দেখে আদ্র বলে উঠে "আসছে খাট্টুশ...চল সাইরা....(বলেই হাত ধরে টেনে নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে...!! 

আদ্রের কান্ড দেখে প্রেমা তো এবার হেসে দেয়।তারপর অভ্রের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগে...

" তোমাকে তো খাট্টুশ বলে ডাকে..."

"হুম...(পাশে ফুলের টব থেকে কিছু ফুল
             ছিড়তে ছিড়তে)"....!!!

" কেন ডাকে...?? (প্রেমার প্রশ্ন) 

"ছোট মানুষ কী বা আর ডাকবে..ওর কাজে ওকে বাঁধা দেয় তাই আমি খাট্টুশ! নাহলে তো বেস্ট ভাইয়া হতাম!

" হ্যাঁ,সেটাও ঠিক..ফুলগুলো কার জন্য...?? (প্রেমার প্রশ্ন)

"অভ্র কিছুনা বলে ফুলগুলো প্রেমার দিকে এগিয়ে দেয়।

" ভালোভাবে ধোয়ে বিছানার পাশে টেবিলে রেখে দিয়েন খুব সুন্দর স্মেল এই ফুলগুলোর ভালো লাগবে। প্রেমা হাত এগিয়ে দিয়ে ফুলগুলো নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে! অভ্র প্রেমার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে....

—————

প্রেমা ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখে। একজন মহিলা এবং তার একপাশে সাইরা বসা এবং অপরপাশে একটি মেয়ে বসা চেহেরাটা সাইরার সাথে মিল আছে।বোন হবে হইতো। এবং মেয়েটির পাশেই বসে আছে একটি ছেলে। অভ্রের বয়সের হবে,,কিন্তু অভ্রের চেয়েও খাটো। 

প্রেমাকে দেখতেই আরিয়ানে মা বলে উঠেন....

"এইতো ওই হচ্ছে প্রেমা! তোমাকে একটু আগে যার কথা বললাম...(আরিয়ানের মা)

মহিলাটি প্রেমার দিকে তাকায় তারপর উঠে প্রেমার সামনে গিয়ে দাড়ায়  আর তখনি প্রেমা সালাম দেয়। প্রেমার থুতনি ধরে বলে " বাহ বেশ মিষ্টিতো" পছন্দ আছে...

কথাটা শুনেই প্রেমা ভ্রু কোঁচকে তাকায়...হটাৎই এমন একটা কথা বলার কারন খুঁজছে প্রেমা...!!! পরক্ষনে আরিয়ানের মা বলে উঠেন...

"হ্যাঁ... তবে প্রেমা মা তুমি যাও ফ্রেস হয়ে খেতে এসো। সবাই এতক্ষন তোমাদের অপেক্ষায় করছিলাম যাও মা...!

" প্রেমা একটা মুচকি হাসি দিয়ে ফ্রেস হতে চলে যায়। "

—————

"তোরা তো খুব সুন্দর মেয়ে পছন্দ করেছিস 
ছেলের জন্য!"(আরিয়ানের ফুফি--তখনকার মহিলাটি আরিয়ান ও অভ্রের ফুফি ছিলো)

" ছেলের পছন্দ খারাপ কিভাবে হবে শুনি..??(আরিয়ানের মা)

মাঝখান থেকে সাইকানের মাথায় হাত এখানে এসে কিসব শুনছে সে। তখনি দেখে অভ্রকে চুপচাপ ফোন চালাতে চালাতে উপরের যাচ্ছে। কারো দিকে তাকাচ্ছে না। সাইকান ভাবছে  এতক্ষন তার মা আর মামিদের কথা শুনে ফেলেছে হয়তো...তাই..!!

" কিরে অভ্র কখন এলি। আমাদের দেখিস নি?? "

ফুফির কথা শুনে তারপর উত্তর দেয়....!!

"না খেয়াল করিনি ..(ফোন থেকে চোখ না সরিয়ে কথাটা বলে তারপর একটা সালাম দেয়)

" সালাম নিয়ে অভ্রের ফুফি বলতে লাগলো...

"ওহ,,আচ্ছা তো বাবু কেমন আছিস,,,!(অভ্রের ফুফি)

এবার ফোন থেকে চোখ সরিয়ে অভ্র সোজা সাইকানের দিকে চোখ ফাকিয়ে তাকায়...সাইকান অসহায় দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে...মনে মনে বলছে কবে যে ওর মা অভ্রকে বাবু ডাকা ছাড়বে..এই ডাকটা শুনলেই অভ্রের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।

" ভালো...!! আমি  ফ্রেস হয়ে আসছি..(বলেই অভ্র উপরে দিকে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়..)

"সাইকা মনি! যাহ দেখ তোর অভ্র ভাইয়ার কিছু প্রয়োজন হয় কিনা??(সাইকানের মা...সাইকা আর সাইরা সাইকানের বোন)

সাইকা ও যেনো এ সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো। ওর মা বলতেই টুস করে দাড়িয়ে যায়...এবং অভ্রের রুমে দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়..তার কিছুক্ষন পরেই চোখ মুখ আঁধার করে নেমে আসে....

" কিরে চলে এলি যে..??(সাইকানের মা শারমিনের প্রশ্ন)

"ভাইয়া দরজা বন্ধ করে দিয়েছে...!!(সাইকা)

পাশ থেকে সবার চোখের আড়ালে সাইকান হেসে দেয়। 

'" (কয়'শো বার বুঝামো তােমাদের...যারে মেয়ের জামাই বানাইতে চাচ্ছো,,,সে অনেক আগেই অন্য কারো হবু জামাইয়ের লিস্টে আছে...)(সাইকান)

ব্যাচারা সাইকান কার পক্ষে বলবে।একদিকে মা আর বোন অন্যদিকে কাজিন ভাই বন্ধু সব অভ্র...সবশেষে অভ্রের পক্ষ নেই সাইকান।

"আচ্ছা ঠিক আছে হয়তো কাপড় চেঞ্জ করবে তাই..আয় বস এখানে আগে....!!!(শারমিন)

প্রেমা চেঞ্জ করে আশেপাশে তাকাচ্ছে দেখছে আরিয়ান আছে কিনা।কিন্তু দেখতে পায়নি,,,হয়তো বাড়িতে নেই তাই স্বস্তির একটা শ্বাস ছাড়ে..

দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় সবাই ছিলো আরিয়ান বাদে।তাই প্রেমাও খাওয়ার সময় কম্পর্টেবল ফিল করে। সবার দিকে খেয়াল করে করে খাচ্ছে,,,প্রেমার দুইপাশে আদ্র আর সাইরা। সাইকার দিকে চোখ দিলেই দেখে সাইকা বার বার অভ্রের দিকে তাকাচ্ছে।  অনেক সময় আবার না খেয়েও তাকিয়ে আছে। কিন্তু অভ্রের সেদিকে কোনো হেলদেল নেই। নিজমনে খেয়ে যাচ্ছে..খাওয়া শেষ করে প্রেমার দিকে তাকালে চোখাচোখি হয়ে যায়। তখন অভ্র একটা মুচকি হাসি দেয়। 

অভ্রের মুচকি হাসিটা বেশ সুন্দর তাই প্রেমার ইচ্ছে করছে আরো কিছুক্ষন  তাকিয়ে থাকতে,,কিন্তু এটা করলে অভ্র কী ভাববে?তাই আবার খাওয়াই মনেযোগ দিল।

বিকালের দিকে সাইকা আর ওর মা চলে যায়।সাইকান আর অভ্রও বাইরে বের হয়ে যায়।সাইরা থেকে যায়...

সন্ধ্যার দিকে আদ্র আর সাইকা পড়ছিলো,,,অভ্র তখন বাসায় আসেনি। প্রেমার দাদুও তার বান্ধবীর সাথে গল্পে ব্যাস্ত..আরিয়ান অভ্রের মাও নিজেদর রুমে। 

প্রেমা একা বসে বসে টিবি দেখছিলো। টিবি দেখতে দেখতে সেখানে সোফায় কখন যে ঘুমিয়ে পরে তার খেয়াল ছিলো না।বেগোড়ে ঘুমোচ্ছে প্রেমা..... 

—————

দুইদিন পর বাসায় ফিরে আরিয়ান। এ দুইদিন বাসায় আসেনি। বেশ ক্লান্ত লাগছিলো তখন। বাড়িতে প্রবেশ করে নিজের রুমের দিকে যেতে যেতে সোফার দিকে চোখ যায়। প্রেমাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতেই দাড়িয়ে যায় মুহূর্তে সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায় ....... 

না চাইতেও পা দু'টো প্রেমার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। চুলগুলো মুখে এসে পরেছে..তার প্রচন্ড ইচ্ছে হচ্ছিলো আলতো করে চুল সরিয়ে দেওয়ার...নিজের এই লোভটা সামলাতে না পেরে হাত বাড়ায় প্রেমার চুল মুখ থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে। 

ঠিক সেই মুহূর্তে ঝড়ের গতীতে কেউ একজন এসে আরিয়ানের হাত ধরে টান দেয়। আকস্মিক ভাবে আরিয়ান হাতে টান অনভূব করতেই চমকে পেছন ফিরে তাকাল। 

দেখে অভ্র দাড়িয়ে আছে।বেশ কঠিন একটা দৃষ্টি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। এবার আরিয়ানের ও ভয়ে পশম দাড়িয়ে যায়। অভ্র কেমন ধাচের ছেলে সেটা আরিয়ান জানে,,,এখন যদি অভ্র ওকে এ ব্যাপারে ভুল বুঝে সম্মানতো দূর ভাইও ডাকবে না ওকে। কিন্তু দেখে তো ফেলেছে...??

" কী করছিলে ভাইয়া এখানে...(বেশ গম্ভীরগলায় বলে উঠে)

আরিয়ান থমথম খেয়ে যায়। এবার কী উত্তর দিবে অভ্রকে?? নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে উঠে...

"ওআব..আসলে দেখনা.. প্রেমা টিবি ওন করে ঘুমিয়ে পরেছে..তাই রিমোর্টটা নিচ্ছিলাম টিবি ওফ করে দেওয়ার জন্য....(কথাটা বলে আস্তে করে রিমোর্টটা নিয়ে টিবিটা ওফ করে অভ্রের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে আরিয়ান টুপ করে নিজের রুমে চলে যায়)

অভ্রের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছিলো। ঠিক টাইমে না আসলে হয়তো আরিয়ান প্রেমাকে স্পর্শ করেই ফেলতো।এটা ভাবতেই মাথা আরো গরম হয়ে যাচ্ছিলো। 

তারপর আশেপাশে তাকিয়ে টেবিলে গ্লাস ভর্তি পানি দেখতে পায়।পানির গ্লাস এনে প্রচন্ড জোরে প্রেমার দিকে ছুঁড়ে মারে...

আচমকা মুখে পানির ছুঁড়ে মারার আঘাতে ধড়পড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে যায় প্রেমা। তখনি অভ্রের গলার আওয়াজ শুনতে পায়....অভ্রের দিকে শূন্য দৃষ্টি নিয়ে তাকাতেই অভ্র বলে উঠে....

" এতো খেয়ারলেস কেন আপনি?? ঘুমানোর জন্য রুমে জায়গা ছিলো না। এখানে কেন ঘুমিয়েছেন..?? (প্রশ্ন করে উত্তরের আশায় না থেকে ধপাধপ পা চালিয়ে নিজের রুমে চলে যায় অভ্র..)

প্রেমা তখনো আবুলের মতো তাকিয়ে ছিলো অভ্রের যাওয়ার দিকে। কি হয়েছে কিছুই বুঝতে পারে নি....!!

"আজব এভাবে রাগ করলো কেন?? (প্রেমা)

নিজের দিকে তাকাতেই দেখে ভিজে জুবুথুবু অবস্থা। 

" উফফ কতোখানি পানি মারলো কে জানে পুরো ভিজে গেলাম! (কথাটা বলে প্রেমা নিজেরও এবার অভ্রের উপর রাগ উঠে যায়)

তারপর চেঞ্জ করার জন্য নিজের রুমের দিকে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন