মহুয়া - পর্ব ১২ - শারমিন আক্তার সাথী - ধারাবাহিক গল্প


     প্রেমার থে‌কে অনেকটা দূ‌রে গি‌য়ে প্রিয়‌তি ব্যাগ থে‌কে পা‌নির বোতল বের ক‌রে এক নিশ্বাসে পু‌রো বোতলের পা‌নিটু‌কো শেষ ক‌রে ফেললো। শরীরটা থরথর ক‌রে কাঁপ‌ছে ওর। এমন শক্ত গলায় কখ‌নো কথা বলতে পার‌বে ব‌লে ভাবে‌নি ও। তাও আবার প্রেমার মত মে‌য়ের মু‌খের উপর। প্রিয়‌তি নি‌জেও ভাব‌তে পা‌রে‌নি ও এমন ক‌রে কা‌রো সা‌থে কথা বল‌তে পার‌বে। ত‌বে কথাগু‌লো বল‌তে পে‌রে প্রিয়‌তির মনটা স‌ত্যি হালকা লাগ‌ছে। কিছুদূর যে‌তেই দেখল হৃ‌দিতা দাঁ‌ড়ি‌য়ে ফুচকা খা‌চ্ছে।

প্রিয়‌তি ওর কা‌ছে গি‌য়ে বলল,
" আমার জন্যও এক‌প্লেট অনেক ঝাল দিয়ে।"
হৃ‌দিতা বলল,
" ভা‌বি তু‌মি তো ঝাল তেমন পছন্দ ক‌রো না।"
" আজ একজ‌নের উপর নি‌জের ম‌নের অনেক ঝাল ঝে‌ড়ে‌ছি। এখন অনেক ঝাল খা‌বো, তারপর কেকের দোকা‌নে গি‌য়ে চিজ কেক খা‌বো। বা‌ড়ির জন্য রেড ভেল‌ভেট ‌চিজকেক কি‌নে নি‌য়ে যা‌বো।"
" আজ এত চিজ খা‌বে যে?"
" একটা শয়তান চিজ‌কে একটু শা‌য়েস্তা ক‌রে‌ছি।"
" কী হ‌য়ে‌ছে ভা‌বি পু‌রোটা বলো তো।"

‌প্রিয়‌তি ফুচকার প্লেটটা হা‌তে নি‌য়ে এক পা‌শে গি‌য়ে দাঁড়া‌লো, হৃ‌দিতা ওর পা‌শে দাঁ‌ড়ি‌য়ে বলল,
" হুঁ ব‌লো।"
‌প্রিয়তি পু‌রোটা বলার পর হৃ‌দিতা বলল,
" ভা‌বি তু‌মি স‌ত্যি এসব কথা প্রেমা‌কে ব‌লে‌ছো?"
" হুঁ।"
" বাহ্ ভা‌বি সাব্বাস! দেখ‌লে তো আমার সা‌থে থাকার ফল। আরও ক‌দিন আমার সা‌থে থা‌কো দেখ‌বে তোমা‌কে পুরা চালু বা‌নি‌য়ে দিব।"

হৃ‌দিতা আর প্রিয়‌তি বাড়ি ফি‌রে কিছুক্ষণ ড্র‌য়িং রু‌মে বস‌লো। প্রিয়‌তি হৃ‌দিতা‌কে বলল,
" তুই বসে রেস্ট নে। আমি রুমে গেলাম। মা কোথায়?"
‌প্রিয়তি রিদুর মা‌য়ের কা‌ছে গি‌য়ে বলল,
" মা কী কর‌ছেন?"
‌দিলারা হে‌সে বল‌লেন,
" মাছটা ভাজা শেষ এখন একটু ভূনা করব।"
" স‌রি মা ক‌দিন যাবত ঘ‌রের সব কাজ আপনা‌কে কর‌তে হ‌চ্ছে। এখন তো আমার শরীর ভা‌লো। এখন থে‌কে আপনা‌কে কিছু কর‌তে হ‌বে না।"
" ‌সে নাহয় তুই পু‌রোপু‌রি সুস্থ হ‌য়ে ক‌রিস। এখন ঘ‌রে যা হৃদয় ফি‌রে‌ছে অনেক্ষণ হলো।"
" রিদ‌ু এত তাড়াতা‌ড়ি বা‌ড়ি ফিরল?"
" বিকা‌লে না‌কি আবার যা‌বে। অফি‌সের কাজ না‌কি আজ‌কে শেষ। বা‌কি বিকা‌লে না‌কি মি‌টিং আছে একটা।"
" ওহ।"
" যা তুই ফ্রেশ হ‌য়ে নামাজ প‌ড়ে নে। আর রিদু‌কেও বল জল‌দি ফ্রেশ হ‌তে।"
" আচ্ছা মা।"

‌প্রিয়‌তি রু‌মে ঢু‌কে দেখ‌লো হৃদয় নি‌জের ফো‌নে কিছু একটা কর‌ছে। প্রিয়‌তি রিদুর দি‌কে কো‌নো ভ্রু‌ক্ষেপ না ক‌রে নি‌জের কাপড় নি‌য়ে গোসলখানায় চ‌লে গে‌লো, গোসল ক‌রে বের হ‌য়ে গুনগুন ক‌রে গান গাই‌তে গাই‌তে মাথার চুল মুচ‌ছে। রিদু ভ্রু কুচ‌কে সে‌দিক তাকাল। তারপর বলল,
" জান তোমার শরীরটা কী আজ ভা‌লো, মনটাও ম‌নে হ‌চ্ছে বেশ ভা‌লো?"
‌প্রিয়‌তি গান থা‌মি‌য়ে ‌বেশ খু‌শি ম‌নেই বলল,
" হ্যাঁ মনটা আমার ভীষণ ভা‌লো।"
‌প্রিয়তির মন ভা‌লো দে‌খে রিদুর বেশ ভা‌লো লাগ‌ছে। তাই বেশ উৎসুক হ‌য়েই বলল,
" কে‌নো?"
" আজ আমার ভীষণ প্রিয় বন্ধু সৌর‌ভের সা‌থে দেখা হ‌য়ে‌ছিল। আহা কত‌দিন পর তার সা‌থে দেখা। দে‌খেই খু‌শি‌তে জ‌ড়ি‌য়ে ধরতে চে‌য়ে‌ছিল, কিন্তু পাব‌লিক প্লেস ব‌লে ধর‌তে পা‌রে‌নি।"
‌রিদু ভ্রু কুচকাল। ম‌নে ম‌নে বলল এ সৌরভটা আবার কে? একটু হিংসা বোধও কর‌ছে ও। নি‌জের হিংসা নি‌জের ম‌ধ্যেই গোপন রে‌খেই বলল,
" সৌরভ কে?"
" আমার খুব খুব খুব ভা‌লো বন্ধু।"
" আগে তো কখ‌নো তার কথা ব‌লোনি। আর তু‌মি তো ব‌লে‌ছি‌লে তোমার কো‌নো ছে‌লে বন্ধু ছিল না। ত‌বে সৌরভ কোথা থে‌কে উদয় হ‌লো?"
" ব‌লে‌ছিলাম না‌কি? হ‌তে পা‌রে ভু‌লে গে‌ছি। বা ইচ্ছা ক‌রে ব‌লি‌নি।"
" ওহ। ত‌া ইচ্ছা ক‌রে ব‌লো‌নি কেন? আমি কী তোমার বন্ধু‌দের কথা জান‌তে পা‌রি না?"
" অবশ্যই জান‌তে পা‌রো। ত‌বে আমি এম‌নি ব‌লি‌নি। তু‌মিও তো প্রেমার কথা ব‌লোনি।"

‌প্রেমার প্রসঙ্গ টানায় রিদু খা‌নিকটা চুপ হ‌য়ে গেল। তারপর বলল,
" সব কথায় প্রেমা‌কে টানা কী জরু‌রি?"
" তু‌মি আমার সংসা‌রে প্রেমা‌কে টান‌তে পার‌লে আমি কেন কথায় টান‌তে পারব না। তাছ‌াড়া বাদ দাও আমি এখন তুমি কিংবা প্রেমা‌কে নি‌য়ে কথা বল‌তে ইন্টা‌রে‌স্টেট না। আজ মনটা ভীষণ ভালো।"
" বাহ্। তা কারণ কী এত খু‌শির?"
" সৌরভ আবার কে? যা মজার মানুষ। ও এমন মজার মজার কথা ব‌লে না যে, আমা‌কে হাসা‌তে হাসা‌তে পেট ব্যথা ক‌রে দি‌য়ে‌ছে।"

‌রিদু খা‌নিক সময় চুপ থে‌কে রুম থে‌কে বের হ‌য়ে গেল। রিদু বের হ‌তেই প্রিয়‌তি মৃদু হে‌সে বলল,
" আজ খুব জ্বল‌ছে সা‌হে‌বের। তোমার আর প্রেমার কান্ড শু‌নে আমার যেমন জ্ব‌লে‌ছিল তোমার ততটা না জ্বল‌লেও, বেশ জ্বল‌ছে।"
‌রিদু অন্য রুমে গি‌য়ে শব্দ ক‌রে হাসল বেশ। তারপর বলল,
" পাগলী একটা। ও ভে‌বে‌ছে অন্য ছে‌লের কথা শু‌নে আমি খুব জ্বলব। অথচ পাগলীটা এখনও বুঝ‌তে পা‌রেনি ওর প্র‌তিটা শ্বাস প্রশ্বাস কে আমি চিনি। সৌরভ না‌মে কেউ নেই। জাস্ট আমা‌কে পিঞ্চ কর‌তে একটা নাম হাওয়া থেকে তু‌লে দিল। যে মে‌য়ে তার ব‌রের কা‌ছে কে ‌কে প্র‌পোজ কর‌ছে, ফেইসবুকে কে বা‌জে ক‌মেন্ট কর‌ছে, কে বা‌জে মে‌সেজ কর‌ছে সব ব‌লে, সে কিনা তার ছে‌লে বন্ধুর কথা তার ব‌রের থে‌কে লুকা‌বে। দুষ্টুপাখি তে‌ামার দুষ্টু‌মি আমি ধ‌রে ফে‌লে‌ছি। যাক তু‌মি যখন আমা‌কে জ্বলা‌তে চাচ্ছ তাহ‌লে আমিও নাহয় কদিন জ্বলার নাটক ক‌রি।"

‌রিদু রান্না ঘর থে‌কে চা নি‌য়ে রু‌মে ঢুক‌তেই হা হ‌য়ে গেল। প্রিয়‌তি কাঁচা হলুদ র‌ঙের সুন্দর একটা জর‌জেট শা‌ড়ি প‌রে‌ছে। ওদের বি‌য়ের গা‌য়ে হলু‌দের দিনও এত সুন্দর হলুদ শা‌ড়ি প‌রেছিল। সেটা সু‌তির ছিল কিন্তু এটা জর‌জে‌টের হওয়ায় ওর শরী‌রের শেপটা সুন্দর লাগ‌ছে। রিদু প্রিয়‌তির কা‌ছে গি‌য়ে বলল, 
"‌তোমা‌কে খুব সুন্দর লাগ‌ছে। ঠিক হলুদ প্রজাপ্র‌তির মতো।"
" শা‌ড়িটা সৌরভ গিফ্ট ক‌রে‌ছে।"
‌রিদু ম‌নে ম‌নে হাস‌লেও, মু‌খে বিরস ভাব এনে বলল,
" প্রথম দেখায়ই শা‌ড়ি গিফ্ট করল?"
‌প্রিয়‌তি খোঁচা মে‌রে বলল,
" কত মানুষ ক‌'দি‌নের দেখায় কত কী ক‌রে, সেখা‌নে সৌরভ শা‌ড়ি গিফ্ট কর‌লে দো‌ষের কী?"
‌রিদু বলল,
" তাও ঠিক।"

‌প্রিয়‌তি রিদুর সাম‌নে গুন গুন ক‌রে গান গাইতে রিদুর সাম‌নে থে‌কে চ‌লে গেল। গানটা সুন্দর ছিল,
গুন গুন গুন গান গাহিয়া নীল ভ্রমরা যায়
গুন গুন গুন গান গাহিয়া
নীল ভ্রমরা যায়।
সেই গানের তালে ফুলের বনে
ফুলের মধু উছলায়, উছলায়।
গুন গুন গুন গান গাহিয়া
নীল ভ্রমরা যায়।
আহা গুন গুন গুন গান গাহিয়া
নীল ভ্রমরা যায়।
প্রিয়‌তির এমন সব কান্ড দে‌খে ‌রিদু ম‌নে খুব হাসল। ত‌বে প্রিয়‌তি‌কে আজ কিছুটা স্বাভা‌বিক দে‌খে ওর ভা‌লো লাগ‌ছে।

২৬!!

আজ অনেক‌দিন পর প্রিয়ম খুলনা থে‌কে বা‌ড়ি‌তে ফিরল। প্রিয়ম‌কে দে‌খে ওর মা রে‌হে‌না বেগ‌মের স‌ত্যি খুব মায়া হ‌লো। ছে‌লেটার চোখমুখ একদম ব‌সে গি‌য়ে‌ছে। চো‌খের নি‌চে কা‌লি জ‌মে গে‌ছে। এত সুন্দর ছে‌লেটার কি অবস্থা হ‌য়ে‌ছে। রে‌হেনা বেশ মায়াভরা ক‌ন্ঠে বলল,
" কেমন আছিস বাবা?"
‌প্রিয়ম ফ্যাল ফ্যাল ক‌রে তা‌কি‌য়ে বলল,
" ভা‌লো আছি মা তোমরা?"
" হ্যাঁ ভালো।"
‌প্রিয়ম আর কো‌নো কথা বল না। চুপ ক‌রে নি‌জের রু‌মের দি‌কে পা বাড়াল। রু‌মে ঢোকার ঠিক আগ মুহূ‌র্তে তি‌থি‌কে দেখল। মে‌য়েটা বি‌য়ের পর দেখ‌তে আরও রূপবতী হ‌য়ে‌ছে। চেহারার লাবন্যতা আরও বে‌ড়ে‌ছে। বেশ ক‌‌য়েক দি‌নে বয়‌সেও যে‌নো বড় লাগছে। সু‌তির শা‌ড়ি‌তে বেশ বড় বড় লাগ‌ছে ছোট্ট তি‌থি‌কে। তি‌থি আজ সু‌তির প্র‌িন্টের শা‌ড়ি প‌রে‌ছে। কারণ আজ সন্ধ্যার পর র‌কিব আস‌বে। ইদা‌নিং র‌কি‌বের জন্য সাজ‌তে তি‌থির বেশ লাগে। প্রিয়ম‌কে দে‌খে ‌তি‌থি খা‌নিকটা অপ্রস্তুত হলেও নি‌জে‌কে যথা সম্ভব স্বাভা‌বিক রে‌খে বলল,
" কেমন আছেন প্রিয়ম ভাই।"
" ভা‌লো তুই?"
" হ্যাঁ খুব ভা‌লো আছি।"
" র‌কিব সা‌হেব কেমন আছেন?"
" হ্যাঁ ভা‌লো।"
" ‌বি‌য়ের পর তোর সা‌থে তার দেখা হ‌য়ে‌ছিল?"
" হ্যাঁ অনেকবার।"
‌প্রিয়ম বলল,
" লম্বা জা‌র্নি ক‌রে এসে‌ছি তো তোর সা‌থে প‌রে কথা বলব।"
" আচ্ছা।"
‌তি‌থি চ‌লে যে‌তেই প্রিয়ম ওর যাবার পা‌নে ক‌য়েক মুহূর্ত তা‌কি‌য়ে থে‌কে নি‌জের রু‌মে গি‌য়ে দরজা বন্ধ করল। 

সন্ধ্যার পর র‌কিব আস‌লে তি‌থির মা জাহানা র‌কি‌বের বেশ খা‌তির যত্ন কর‌লেন। নতুন জামাই ব‌লে কথা। দু তিন রকম পিঠা বা‌নি‌য়ে‌ছি‌লেন। তাছাড়া আরো ক‌য়েক রক‌মের নাস্তা। র‌কিব সব থে‌কে একটু একটু খে‌তে খে‌তেই পেট ফুল হ‌য়ে গেল। প্রিয়ম নি‌চে আস‌তেই র‌কিব‌কে দে‌খে কুলশ বি‌নিময় করল। র‌কিব প্রিয়ম‌কে ওদের বি‌য়েতে না থাকার কারণ জান‌তে চাই‌লে বলল,
" আস‌লে বি‌দেশ যাবার ট্রাই কর‌ছি। সে কার‌ণে সেসব কা‌জে একটু ব্যস্ত ছিলাম।"
‌তি‌থি বা জাহানা দুজ‌নেই চুপ ক‌রে রইল। জাহানা তি‌থি‌কে বলল,
" তি‌থি তুই র‌কি‌বকে রু‌মে নি‌য়ে গি‌য়ে গল্প কর। ততক্ষ‌ণে আমি রা‌তের খাবার রে‌ডি ক‌রি। র‌কিব না‌কি আবার চ‌লে যা‌বে। তো খে‌য়েই যাক। তি‌থিও যে‌নো প্রিয়‌মের নজ‌রের বাই‌রে যে‌তে চা‌চ্ছিল। ওর মা যে‌নো ওর ম‌নের কথা বুঝতে পে‌রে‌ছিলেন। তি‌থি র‌কিব‌কে বলল,
" চলো রু‌মে গি‌য়ে কথা ব‌লি।"
র‌কিব প্রিয়‌মের কাছ থে‌কে যে‌তে খা‌নিক অস্ব‌স্তি বোধ কর‌লেও ‌প্রিয়ম বিষয়টা সহজ কর‌তে বলল,
" র‌কিব সা‌হেব চ‌লে যে‌হেতু যা‌বেন সে‌হেতু আপনার উচিত আপনার স্ত্রীকে একটু সময় দেয়া।"
র‌কিব প্রিয়‌মের থে‌কে বিদায় নি‌য়ে তি‌থির সা‌থে হাঁটা শুরু করল। হাঁট‌তে গি‌য়ে তি‌থির কোম‌রে ছোট্ট একটা চিম‌টি কাটল। তারপর তিথির হাত ধরল। সব দেখে প্রিয়‌মের প্রচন্ড কষ্ট হ‌লেও ওর করার কিছু ছিল না। যা হবার তা হ‌য়ে গে‌ছে।

—————

     তি‌থি র‌কিব‌কে নি‌য়ে রু‌মে ঢুক‌তেই র‌কিব রুমের দরজা বন্ধ ক‌রে তি‌থি‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
" ইস কত‌দিন পর তোমায় জ‌ড়ি‌য়ে ধরলাম।"
" এমনভা‌বে বল‌ছো যে‌নো কত বছর পর জ‌ড়ি‌য়ে ধর‌লে। অথচ গত পরশুও ক‌লেজে গি‌য়ে সুযোগের সৎ ব্যবহার ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে‌ছি‌লে।"
" গত পরশু থে‌কে আজ পর্যন্ত কতটা সময় জা‌নো?"
" হিসাব কর‌তে হ‌বে।"
" দরকার নেই। এখনও নি‌জের বউ‌কে ঠিকভা‌বে কা‌ছেই পেলাম না, হিসাব ক‌রে কী হ‌বে?"
" তোমার মা মা‌নে শাশু‌ড়ি আম্মা আমা‌কে সবস‌ময়ের জন্য তোমা‌দের বা‌ড়ি নি‌য়ে গেলেই তো পা‌রেন, তাহলেই কা‌ছে পা‌বে।"
" তোমার পরীক্ষা শেষ না হ‌লে তো সেটা পার‌ছি না।"
" পরীক্ষার তো বে‌শি দিন বা‌কি নেই। পরীক্ষার দিনগু‌লো সহ মাস দুই এর মতো আছে।"
" দুই মাস তোমার কা‌ছে কম ম‌নে হয়?"
" হাসল তি‌থি।"
" আচ্ছা তি‌থি তু‌মি তো এবার এইচএস‌সি দি‌বে।"
"হুঁ।"
"তাহ‌লে তোমার বয়স বড়‌জোর স‌তে‌রো কী আঠে‌রো হ‌তে পা‌রে, ঊনিশ কেন?"
"‌ছোট‌বেলা একটু দেরী‌তে স্কু‌লে ভ‌র্তি হ‌য়ে‌ছি। কেন? হঠাৎ আমার বয়স নি‌য়ে পড়‌লে?"
" না মা‌নে প্রথ‌মে ভে‌বে‌ছিলাম আমি আন্ডার এইটিন মে‌য়ে‌কে বি‌য়ে ক‌রে‌ছি। আইনের লোক হ‌য়ে বেয়াইনি কাজ কারবার করব, বুঝ‌তেই পারছ।"
" হুঁ বুঝলাম।"

২৭!!

     প্রিয়‌তি সৌর‌ভের সা‌থে ফো‌নে মি‌ষ্টি মি‌ষ্টি কথা বল‌ছে। একটু দূ‌রে বস কান খাড়া ক‌রে সব শুন‌ছে রিদু। প্রিয়‌তির কথা শুন‌ছে আর ম‌নে ম‌নে অট্টহা‌সি হাস‌ছে। রিদু জা‌নে প্রিয়‌তি বর্তমা‌নে হৃ‌দিতার কা‌ছে থাকা নতুন সি‌মে কথা বল‌ছে। কথাগুলো এমনভা‌বে বল‌ছে যে‌নো শু‌নে ম‌নে হয় ওর বয়‌ফ্রেন্ড এর সা‌থে কথা বল‌ছে। রিদু কথা ধর‌নে প্রথ‌মেই বু‌ঝে গি‌য়ে‌ছিল এটা সৌরভ নয় অন্য কেউ। সে কার‌ণে প্রিয়‌তি যখন ঘু‌মে ছিলো তখন খুব সাবধা‌নে, লু‌কি‌য়ে ওর ফোন সৌরভ নাম দি‌য়ে সেইভ করা ফোন নাম্বারটা নিয়ে নেয়। তারপর ভাবল কল ক‌রে জান‌বে কার সা‌থে কথা বল‌ছে? তখন ভাবল য‌দি প‌রি‌চিত কেউ হয় ত‌বে ওর নাম্বার বা কন্ঠ চি‌নে ফেল‌তে পা‌রে। সে কার‌ণে বু‌দ্ধি ক‌রে নি‌জের নাম্বার দি‌য়ে কল না ক‌রে ওর বন্ধুর নাম্বার থে‌কে কল করল। আর সা‌থে নি‌জের মু‌খে রুমাল চে‌পে নিল। যা‌তে ক‌রে ওর কন্ঠ চিন‌তে না পা‌রে। কিন্তু প্রথম ক‌য়েক সে‌কেন্ড কথা ব‌লেই ও বুঝ‌তে পা‌রল ওটা হৃ‌দি। আর হৃ‌দিরও স‌ন্দেহ হল না কারণ রিদু এমনভা‌বে কথা ব‌লে‌ছে যে‌নো শু‌নে মনে হয় ও ভুল নাম্বা‌রে কল ক‌রে‌ছে। সৌরভ মানে হৃ‌দিতার সা‌থে হাস‌তে হাস‌তে কথা বল‌ছে প্রিয়‌তি। তা দে‌খে রিদু ম‌নে ম‌নে বলল,
" আহা বেচা‌রি কত চেষ্টা কর‌ছে আমা‌কে জেলাস ফিল করা‌নোর। আচ্ছা আমিও এ নাট‌কের অবসান আজ রা‌তে করব। ত‌বে তোমা‌কে হা‌তে না‌তে ধ‌রে নয় বরং ভা‌লোবেসে। তোমা‌কে হা‌তে না‌তে ধর‌লে তু‌মি অনেক লজ্জা পা‌বে, অস্ব‌স্তি‌তে পড়বে তা আমি চাই না।"

রাত দশটার দি‌কে প্রবল বৃ‌ষ্টি নে‌মে‌ছে। সন্ধ্যা থে‌কে গু‌ড়ি গু‌ড়ি বৃ‌ষ্টি পড়‌লেও রাত বাড়ার সা‌থে সা‌থে বৃ‌ষ্টিটাও বে‌ড়ে‌ছে। রিদু ভাবল, আজ প্রিয়‌তির পছ‌ন্দের একটা গান গাই‌বে। গিটারটা নি‌য়ে বারান্দায় ব‌সে গান ধরল,

এই চলোনা বৃষ্টি তে ভিজি 
চলোনা কণ্যা যায় ছাদে 
আজ আমরা বৃষ্টি বন্ধী 
ভালবাসার অপরাধে 
মনে কর তুমি জলের রাণী 
আমি বৃষ্টির রাজপুত্র 

বা‌কিটু‌কো গাইবার আগেই প্রিয়‌তি বলল,
" বৃ‌ষ্টির এমন ম‌নোমুগ্ধকর শব্দ শু‌নোর পর, আমার কা‌ছে তোমার কন্ঠ কা‌কের মত লাগ‌ছে। বৃ‌ষ্টি কো‌কিল আর তু‌মি কাক, এহ নি‌জেকে আবার বৃষ্টির রাজপুত্র ব‌লে। যেই না চেহারা নাম রাখ‌ছে পেয়ারা।"
‌বেচারা রিদু লজ্জা পে‌য়ে গান থা‌মি‌য়ে বলল,
" তাহলে আগে যে বল‌তে আমার গান তোমার কা‌ছে ভা‌লো লাগে।"
" ম‌নের ভু‌লে ব‌লে‌ছিলাম হয়‌তো। গান তো গায় সে‌ৗরভ! উফ! কী গা‌নের গলা ওর দূর্দান্ত! একেবা‌রে বু‌কের ভিত‌রে গি‌য়ে লা‌গে।"

এবার রিদু প্রিয়‌তির কা‌ছে গি‌য়ে আষ্টে পি‌ষ্টে জ‌ড়িয়ে ধ‌রে ওর কা‌নে ছোট্ট একটা কামড় দি‌য়ে বলল,
" তোমার সৌরভ‌কে আমি কচকচ ক‌রে কাঁচা চি‌বি‌য়ে খে‌য়ে ফেলব।"
" হাত তো দি‌য়ে দে‌খো। আমি তোমা‌কে খে‌য়ে ফেলব।"
" নাও খাও। আমি তোমার ভোজন হবার জন্য অধির আগ্র‌হে ব‌সে আছি।"
‌রিদুর কথা শু‌নে প্রিয়‌তির বেশ হা‌সি পে‌লো। প্রিয়‌তি মুখ টি‌পে হে‌সে বলল,
" আমি সে‌কেন্ড হ্যান্ড মাল খাই না।"
" আমি মাল? যাক ভা‌লো। ত‌বে ম্যাডাম ফর ইউর কাইন্ড ইনফর‌মেশন আমা‌কে আপ‌নি বহুবার খে‌য়ে‌ছেন। খে‌য়ে আমা‌কে পুরা শুকনা ঝি‌ঙের খোসা জালি বানাই দি‌ছেন। যা এখন কো‌নো কা‌জে লা‌গে না।"
‌প্রিয়‌তির এবারও বেশ হা‌সি পে‌লো। তাও মুখ টি‌পে বলল,
" প্রথ‌মে তো আর আমি খাই‌নি। ভ্রমর হ‌য়ে তখন আপ‌নি অন্য ফুলের মধু খে‌য়ে নি‌জে‌কে বি‌লি‌য়ে বে‌ড়ি‌য়ে‌ছি‌লেন।"

‌রিদু একটা দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে বলল,
" প্রিয়‌তি আর কত? এখন স‌ত্যি খুব কষ্ট হ‌চ্ছে। প্রিয় তু‌মি নি‌জেও ভা‌লো ক‌রে জা‌নো আমি তোমা‌কে কতটা ভা‌লোবা‌সি। হয়ত আমি অতী‌তে বড় একটা ভুল ক‌রে‌ছি, ত‌বে আমার সে অতীত আমার সুন্দর বর্তমান‌কে নষ্ট কর‌ছে আর তু‌মি যেমন কর‌ছো তাতে তো আমাদের ভ‌বিষ্যৎও খারাপ হ‌য়ে যা‌বে। অতীত নি‌য়ে বর্তমান আর ভ‌বিষ্যৎ নষ্ট করা নিশ্চয়ই বু‌দ্ধিমা‌নের কাজ নয়!"
" এ জন্যই গু‌নীজনরা কো‌নো কাজ করার আগে ভে‌বে কর‌তে ব‌লেন।" 
" কিন্তু সে গুনীজনরাই আবার ব‌লেন মানুষ মাত্রই ভুল।"

‌প্রিয়‌তি কিছুক্ষণ চুপ থাকল। তারপর একটু ভে‌বে বলল,
" ঠিক আছে আজ তোমা‌কে ক্ষমা করব, য‌দি পাঁচ সে‌কেন্ড সময় এর ম‌ধ্যে একটা বাংলা বা‌ক্যের ইং‌রেজী ট্রান‌সেলেশন বল‌তে পা‌রো ত‌বে।"
" কি বাক্য?"
" মানুষ মাত্রই ভুল এটার ট্রান‌সে‌লেশন ক‌রো।"
‌রিদু কিছু না ভে‌বেই হুট ক‌রে ব‌লে ফেলল,
" ম্যান ইজ মট্রাল।"
‌প্রিয়‌তি শব্দ ক‌রে হে‌সে বলল,
" বাহ! বাহ! এই ‌তোমার এম বি এ করার নমুনা?"
‌রিদু প‌রোক্ষ‌নে জিবে কামড় দি‌য়ে বলল,
" না মা‌নে বাক্যটা হ‌বে, পিপল আর জাস্ট রং।"
" পাঁচ সে‌কেন্ড অনেক আগেই শেষ।"
" আস‌লে বন্ধু‌দের সা‌থে এটা নি‌য়ে বহু দুষ্টু‌মি করার ফ‌লে এমন হ‌য়ে‌ছে।"
" সেটা আমার জানার বিষয় না। তু‌মি ফেল কর‌ছো। মাফি ক্যা‌ন্সেল।"

রিদু প্রিয়‌তি‌কে জ‌ড়িয়ে ধরে বলল,
" প্লিজ প্রিয় অনেক হ‌য়ে‌ছে এবার প্লিজ এসব বন্ধ করো। আই লাভ ইউ।"
‌প্রিয়‌তি রিদু‌কে নি‌জের থে‌কে ছাড়া‌নোর চেষ্টা কর‌ছে না। তা দে‌খে রিদু প্রিয়‌তি‌কে আরও শক্ত ক‌রে জ‌ড়িয়ে ধ‌রে চু‌লে নাক ঘসল। এবার প্রিয়‌তি খা‌নিক স‌ন্নিধ্য পে‌লে রিদুর থে‌কে নি‌জে‌কে ছা‌ড়ি‌য়ে রিদুর হাত ধ‌রে বলল,
" রিদু একটা কথা ব‌লি। জাস্ট ইমা‌জিন কর‌বে তু‌মি বিষয়টা।"
" হুঁ ব‌লো।"
‌প্রিয়‌তি রিদুর কপা‌লে চু‌মো আঁকল। তারপর ওকে বিছানায় ব‌সিয়ে ওর চু‌লে হাত বু‌লো‌তে বুলা‌তে বলল,
" আমা‌কে এভা‌বে ব‌সে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রো রিদু। যতক্ষণ না আমি ছাড়‌তে বল‌বো ততক্ষণ ছাড়‌বে না প্লিজ। ব‌লো প্র‌মিজ?"

‌রিদু ম‌নে ম‌নে ভাবল হয়ত প্রিয়‌তি ওকে ক্ষমা ক‌রে দিয়ে‌ছে। তাই বসা অবস্থায় প্রিয়‌তির কোমর শক্ত ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে ধরল। কোম‌রে চু‌মোও আঁকল ক‌য়েকটা। তারপর আদু‌রে ভ‌ঙ্গি‌তে বলল,
" প্র‌মিজ ছাড়ব না। এখন ব‌লো?"
‌প্রিয়তি রিদুর চু‌লে হাত বুলা‌তে বুলা‌তে বলল,
" জাস্ট চিন্তা ক‌রো আমার বি‌য়ের আগে আমার একটা ফ্রেন্ড ছি‌লো যার নাম সৌরভ। তার সা‌থে আমার গভীর অন্তঃরঙ্গ সম্পর্ক ছি‌লো। আমরা একে অপ‌রের সা‌থে বহুবার শারী‌রিক সম্পর্ক ক‌রে‌ছি। সৌর‌ভের বাচ্চা আমার পে‌টে আসল। তারপর আমি সে বাচ্চা এবরশন ক‌রে ফেললাম। আমা‌দের বি‌য়ের পর তোমা‌কে সবটা বললাম। তখন তু‌মি কী সহ‌জে ক্ষমা কর‌তে আমায়?"
‌রিদুর হাত অল‌রে‌ডি ঢিলা হ‌য়ে গি‌য়ে‌ছে। প্রিয়‌তি আবার বলল,
" একবার ভা‌বো আমার শরী‌রের গোপন প্রাই‌ভেট পার্টগু‌লো যেখা‌নে কেবল তু‌মি স্পর্শ ক‌রে‌ছো, কিন্তু এখন জান‌তে পার‌লে সেসব স্থা‌নে তোমার পূ‌র্বেও কা‌রো ছোঁয়া আছে। কেউ দি‌নের পর দিন সেসব স্থান স্পর্শ ক‌রে‌ছে। যেসব গোপন কাজ মা‌নে ফিজিক্যাল রি‌লেশন আমি তোমার সা‌থে ক‌রে‌ছি, তোমার পূ‌র্বেও সেসব কাজ আমি অন্য কা‌রো সা‌থে ক‌রে‌ছি। যে গ‌র্ভে তে‌ামার ভ্রুন ছিল, সেখা‌নে পূ‌র্বেও কা‌রো ভ্রুন স্থান পে‌য়ে‌ছি‌লো। এসব শোনার পর আমার প্র‌তি তোমার ঠিক কী রিয়াকশন হ‌তো? খুব সহ‌জে ক্ষমা করতে পার‌তে আমা‌কে? য‌দিও সৌরভ‌ না‌মের কেউ নেই আমার জীব‌নে। তা‌কে নি‌য়ে এত‌দিন যা ব‌লে‌ছি সব মিথ্যা। ফো‌নে সৌরভ না‌মে যে নাম্বার সেইভ করা সেটা আস‌লে হৃ‌দির। এখন ব‌লো, নি‌জে‌কে আমার জায়গায় রেখে ভা‌বো, পার‌তে কী এত সহ‌জে ক্ষমা কর‌তে?"

‌রিদুর হাত সেই কখনই প্রিয়‌তি‌কে ছে‌ড়ে দি‌য়ে‌ছে। ওর চোখ থে‌কে অঝোর ধারায় জল ঝর‌ছে। প্রিয়‌তি রিদুর কপা‌লে চু‌মো খে‌য়ে বলল,
" থাক তোমার কিছু বলতে হ‌বে না। তে‌ামার অনুশোচনাময় চোখদু‌টো আমা‌কে সব ব‌লে দি‌য়ে‌ছে। যাও ক্ষমা ক‌রে দিলাম তোমা‌কে।"
তারপর প্রিয়‌তি যে‌তে নি‌লে রিদু প্রিয়‌তির হাত ধ‌রে বলল,
" না প্রিয়‌তি তু‌মি আমা‌কে এত সহ‌জে ক্ষমা ক‌রো না। আমি স‌ত্যি ক্ষমা পাবার যোগ্য নই।"
‌প্রিয়‌তি কিছুই বলল না শুধু রিদু‌কে জ‌ড়ি‌য়ে নি‌লো নি‌জের বু‌কের মা‌ঝে। আর রিদু কান্নায় ভা‌সি‌য়ে দি‌চ্ছে প্রিয়‌তির জামা ওড়না।"
প্রিয়‌তি ‌রিদুর মাথা তু‌লে ‌ওর গা‌লে হাত দি‌য়ে বলল,
" অনু‌শোচনার থে‌কে বড় কো‌নো শা‌স্তি নেই রিদু। আমি চাই তু‌মি বুঝ‌তে পা‌রো তু‌মি যেটা ক‌রে‌ছো সেটা কত বড় অন্যায়!"
" সেটা আমি বহু‌দিন আগে থে‌কেই বুঝ‌তে পে‌রে‌ছিলাম। ভেত‌রে ভেত‌রে অনুশোচনার আগু‌নে জ্বল‌ছিলাম। কিন্তু আজ তু‌মি যেভা‌বে বল‌লে সেভা‌বে কখ‌নো ভে‌বে দে‌খি‌নি। স‌ত্যি আজ তোমার বলার পর বুঝলাম আমার অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। তু‌মি আমা‌কে একদম ক্ষমা ক‌রো না প্রিয়‌তি, একদম না। আমা‌কে শা‌স্তি দাও  যত‌দিন না পর্যন্ত তোমার মন শান্ত হয় তত‌দিন পর্যন্ত শা‌স্তি দাও। আমার শা‌স্তি হওয়া দরকার, খুব দরকার। আমার স্থা‌নে তু‌মি হ‌লে হয়ত আমি তোমা‌কে সহ‌জে ক্ষমা কর‌তে পারতাম না। ত‌বে তুুমি কেন সহ‌জে ক্ষমা কর‌বে।" 
‌প্রিয়‌তি রিদু‌কে শক্ত ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
"আজ অনুশোচনার আগু‌নে পু‌ড়ে রিদু তার ভা‌লোবাসা‌কে জয় ক‌রে নি‌য়ে‌ছে। রিদু তু‌মি নি‌জেও জা‌নো না কতটা ভা‌লোবা‌সি তোমা‌কে। তোমা‌কে আমি কবেই ক্ষমা ক‌রে দি‌য়ে‌ছি। কিন্তু তোমার ভিত‌রের অনু‌শোচনাটা আমি ঠিকভা‌বে দেখ‌তে চাইতাম তাই এত‌দিন এতদূ‌রে থাকা।"
‌রিদু কিছু বল‌ছেই না। লজ্জায়, নি‌জের প্র‌তি ঘৃণায় মাথা প্রিয়‌তির বু‌কেই লু‌কি‌য়ে রে‌খে‌ছে। ম‌রে যে‌তে ইচ্ছা কর‌ছে ওর। 

রাত গভীর তখন।
রিদু প্রিয়‌তি‌কে যতটা পারা যায় ততটা গভীরভা‌বে নি‌জের বু‌কের মা‌ঝে আগ‌লে রে‌খে‌ছে। প্রিয়‌তির কপা‌লে ভা‌লে‌াবাসার গভীর পরশ দি‌য়ে ম‌নে মনে বলল,
" আর তোমার সা‌থে কো‌নো রকম ধোঁকা ক‌রব না। মিথ্যা বলব না তোমার সা‌থে। আমি তোমা‌কে স‌ত্যি খুব ভা‌লোবা‌সি প্রিয়‌তি।"

২৮!!

     নি‌জের প্রেগ‌নে‌ন্সি টে‌স্ট কি‌টে ফলাফল প‌জে‌টিভ দে‌খে থ মে‌রে ব‌সে পড়ল তি‌থি। বিড়‌বিড় ক‌রে বলল,
" হয়ত আমার সব স্বপ্ন শেষ। ডাক্তার হওয়া বু‌ঝি আমার কপা‌লে নেই।"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন