অনুভবে - পর্ব ১০ - নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা - ধারাবাহিক গল্প


এখন কী তুমি ভালোবাসার ব্যাখা দিতে বলবে? আমি তা দিতে পারবো না। ভালোবাসা তো কেবল অনুভূতি, তা শব্দে প্রকাশ করা সম্ভব না। ভালোবাসা তো কেবল থাকে অনুভবে...."
সভ্যের কথায় ইনারা ধ্যান দেয় না তেমন। বলে, "যার অভিজ্ঞতা নেই তার এসব নিয়ে কথা বলা উচিত না।"
"অভিজ্ঞতা করতে হলে অনেকবারই করতে পারতাম। কিছু অনুভূতি অভিজ্ঞতাহীনই মধুর লাগে। ভালো কথা আমি তোমাকে কৈফিয়ত দিচ্ছি কেন? ফোন রাখছি, আগামীকাল সময় মতো এসে পড়বে।"
"দাঁড়ান একটু আমার তদন্ত... মানে জিজ্ঞাসা তো কমপ্লিট করতে দিবেন।"
"তুমি ঘুমাবে না?"
"আমার রাত দুইটার আগে ঘুম আসে না।"
"দুইটা! তাহলে তুমি ঘুমাও কখন?"
"দুইটার পর।"
সভ্য বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে, "তোমার মা বাবা জানে না? তারা তোমাকে ঘর থেকে বের করে দেয় নি শুকরিয়া আদায় করো।"
"আমার মা তো নেই, আর বাবা বাসায় সহজে আসে না। তাই কেউ জানে না।"
কথাটা শুনে একপ্রকার ধাক্কা খেল সভ্য, "তোমার মা নেই মানে?" 
"আমি যখন এগারো বছরের ছিলাম তখনই মা মারা গেছে।"
অনেকক্ষণ ধরে চুপ থাকে সভ্য। কি বলবে বুঝতে পারে না। ইনারা এত স্বাভাবিক ভাবে কথা বলার ধরনেও সে লুকানোর উদাসীনতা আভাস করতে পারছে। 

সভ্যের উওর না পেয়ে ওপাশ থেকে ইনারা বলে, "কি হলো শুনছেন?"
"হুম।" নরম সুরে বলে সভ্য।
"তাহলে কথা বলেন না কেন?"
"তোমার বাবাও বাসায় আসে না?"
"আসে, মাঝেমধ্যে। কাজ অনেক থাকে তো। আর এসব বাদ দিয়ে সত্যি বলেন না আপনি আসলে কোনো সম্পর্কে ছিলেন না?"
ইনারার কথার পর সভ্য আর তার সাথে ঝগড়া করতে চায় না। একথাটা খানিক সময় আগে বললেও সে রাগ দেখাতো, রুক্ষভাবে কথা বলতো। কিন্তু এখন সে তা পারছে না। তাই সে সরল ভাষায় উওর দেয়, "না।" 

উওরে মজা পায় না ইনারা। তার এই রাত বেরাতে সভ্যের সাথে ঝগড়া করতে মন চাইছে। কিন্তু সভ্যের এমন কোনো নিয়ত দেখতে পায় না ইনারা। তাই আবার খোঁচা মেরে বলে, "হবেও না। আমার জোহানের মতো হলে তো হবে। কোন মেয়ে আপনার মতো ভূতকে জেনেশুনে মাথায় নিয়ে ঘুরবে?"
"গিটার শুনবে?"
ইনারা অবাক হয়। হঠাৎ সভ্যের আচরণে এত পরিবর্তন কীভাবে এলো? তার চেয়ে বেশি দুঃখ হয়ে যে সভ্য তার সাথে ঝগড়া করছে না। কিন্তু সে গিটার শোনার লোভে অন্যকিছু বলে না। সংগীতের প্রতি আলাদা একটা দুর্বলতা আছে। যখনই তার মন খারাপ হয়, সে গান শুনে। হঠাৎ কেমন করে কিভাবে যেন তার মনটা ফুরফুরে হয়ে উঠে। 

সভ্য গিটার বাজানো শুরু করে। মধ্যরাতের নীরবতার মাঝে ফোনের ওপারে গিটার বাজানো শুনার মাঝে কি কোনো জাদু আছে? নাহয় ইনারার এমন কেন মনে হচ্ছে যে সে অন্যকোনো জগৎ-এ হারিয়ে গেছে। কানে হেডফোন লাগিয়ে দোলনায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে রইল ইনারা। গিটারের সুর তার হৃদয়ে প্রশান্তি ছড়িয়ে দিলো। তার ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে এলো তার। অনেকক্ষণ ধরে সে এভাবে বসে থাকলে একটা কখন যে ঘুমিয়ে গেল টের পেল না। 

সে ঘুম থেকে উঠে ভোরে। সূর্যের প্রথম রশ্মি চোখে পরতেই সে হড়বড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে সভ্য কল কেটে দিয়েছে অনেক আগেই। সে বিছানায় যেয়ে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করে। কিন্তু আর তার ঘুম আসে না। 

আজ অফিসের পরিবর্তে সভ্যের বাসায় যাবার কথা। সে আজ সঠিক সময়ে যেয়ে পৌঁছায়। কলিংবেল দেবার অনেকক্ষণ পর দরজা খুলে সভ্য। সে চোখ ঢলে ভালো করে তাকায় ইনারা দিকে। ঘুমন্ত গলায় বলে, "তুমি?"
"আপনি এখনও ঘুমাচ্ছেন? জিমে যান নি?"
"আজ আমার ছুটির দিন। তুমি এত তাড়াতাড়ি এলে কেন?"
"আপনি তো বললেন আটটার দিকে আসতে।"
"তুমি এত দেরি করো সবসময়ই একারণেই বলেছি। আচ্ছা তুমি সোফায় যেয়ে বসো, আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।"
সভ্য যাবার পরে ইনারা বসলো না। সে ঘুরে ঘুরে ঘরটা দেখতে শুরু করলো। এক বেড, ড্রইং, ডাইনিংরুমের ফ্লাট। প্রতিটা রুমের থিম অন্যরকম। সভ্যের বেডরুম সাদা-কালো এবং সাধারণ। অথচ তা ড্রইংরুম রঙিনে সাজানো। নীল রঙের সোফা, শোপিজও রঙিন এবং রুমে কতগুলো বড় রঙিন পেইন্টিং আছে, যা দেখতে অসম্ভব সুন্দর। অন্যদিকে ডাইনিং রুম কেবল কাঠ রঙের থিমে করা। ইনারার সবচেয়ে বেশি আজব লাগলো সব থিম আলাদা হওয়া সত্ত্বেও বাজে লাগছে না। উল্টো সুন্দর দেখাচ্ছে। ইনারা খুঁজেও সভ্যের পরিবারের কোনো ছবি পেল না। 

সভ্য ডাইনিং রুমে এসে দেখে ইনারা সেখানে ঘুরঘুর করছে। সভ্য রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করল, "এভাবে কি দেখছ?"
"আপনার পরিবারের কোনো ছবি রাখেন নি কেন?"
"সারাক্ষণ জোহান জোহান করো, তাহলে তার পরিবারের খোঁজ রাখো। আমার পরিবারে দিয়ে তুমি কি করবে?"
ইনারা মুখ বানায়। ভেংচি কেটে বলে, "একটু বললে কি হয়?"
"ছয় বছর ধরে ঐশি এবং সামির সাথে বন্ধুত্ব আছে, ইরফানের সাথে তিনবছরের বন্ধুত্ব। আজ পর্যন্ত ওদের বলিনি, তোমাকে বলব?"
"আচ্ছা আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করে নি কোম্পানিতে সাইন করার পূর্বে?"
"আমি নিজে দলে যুক্ত হবার জন্য প্রস্তাব দেই নি। মিঃ হক নিজে আমার পিছনে একবছর ঘুরে দলে আসার জন্য মানিয়েছেন। কিছু শর্ত দিয়েছিলাম। এর মধ্যে একটি শর্ত আমার পরিবারের সম্পর্কে ঘাটাঘাটি করা যাবে না।"
ইনারা কুড়কুড় করে সভ্যের পাশে দাঁড়ায়। চোখ দুটো ছোট করে তাকায় তার দিকে, "আপনার পরিবার কি মাফিয়ার না'কি? নাহলে এত লুকাচ্ছেন কেন আপনি? কুছ তো গারবার হে।"
সভ্য বিরক্ত হয়ে তাকায় ইনারার দিকে, "টিভি কম দেখো। টিভি দেখে দেখে এসব ফালতু জিনিস মাথায় ঢুকিয়ে রাখো।"
"কোনো কারণ না থাকলে আপনি নিজের ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করান নি কেন?"
"তোমারও তো ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা হয় নি। সাইদের উপর বিশ্বাস করে না করাটা ভুল হলো। একবার করা উচিত তাই না? কী বলো?"
ইনারা খানিকটা বিচলিত হয়ে উঠে। সভ্য বলে, "তোমায় একটুখানি ব্রেনে কি চলে আমি ভালোমতো বুঝতে পারছি। উপদেশ দিচ্ছি, অকারণে আমার পরিবার সম্পর্কে খোঁজ করে নিজের সময় নষ্ট করবে না। কিছু তো পাবেই না, উল্টো নিজের চাকরিটা হারাবে।"
"আপনি কথায় কথায় আমাকে চাকরি থেকে বের করে দেন ধমক দেন কেন?"
"ধমক? আমি আসলেই বের করতে পারি।"
" আমি আপনার চাকরি করার জন্য মরে যাচ্ছি না। কেবল জোহানের জন্য আছি, আপনার চেহারা দেখে দিন খারাপ করার আমার কোনো শখ নেই।"
সভ্য ভ্রু কুচকে তাকায় ইনারার দিকে, "তোমার না পরিবারে অভাব দেখে তুমি চাকরি করতে এসেছ?"
"উফফ দুটো মিলিয়েই তো। আগেরটা আপনি জানেন আমি ওটা আবার কেন বলবো?"
"আচ্ছা এখন চুপচাপ সেখানে যেয়ে বসো। আমার মাথা খেও না।"
"কোনো কাজ দেন না আমি করি।"
"তুমি না'কি পানিও গরম করতে পারো না, কি কাজ করবে।"
"আরে একবার বলেনতো ইনারাকে দিয়ে কোন কিছুই অসম্ভব না।"
"আচ্ছা পিছনের কেবিনেট থেকে আটার ডিবা বের করে আনো।"
ইনারা কথামতো পিছনের কেবিনেট থেকে আটার ডিবা বের করতে নেয়। কিন্তু তার জন্য অনেকটা উঁচু হয়ে যায়। সে পায়ের পাতায় ভর দিয়ে ডিবায় পৌঁছানোর চেষ্টা করে। হাত পৌঁছাতেই সে ডিবাটা নিতে যেয়ে তার উপরই পরে যায়। তার মাথায় উপর ডিবাটা পরতেই সে শব্দ করে উঠে। 

শব্দ শুনে সভ্য পিছনে ফিরে দেখে আটার ডিবা নিচে পরা। আটা মেঝেতে ছাড়ানো। সে চোখ তুলে ইনারার দিকে তাকায়। দেখে আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না। শব্দ করে হেসে দেয়। ইনারার চুলে, মুখে, জামায় আটা ভরে আছে।
সভ্য তাকে এই অবস্থায় দেখে হাসতে হাসতে কাহিল। বহু কষ্টে সে হাসি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে বলে, "তুমি গতকাল আমাকে ভূত করে ডাকছিলে তাই না? এখন দেখো, তোমাকে একদম ভূতের মতো দেখাচ্ছে।"
"হাসবেন না বলে দিচ্ছি।"
"তোমাকে এত ফানি দেখাচ্ছে না হেসে পারা যায়? "
" তাই না?" ইনারা মেঝে থেকে একমুঠো আটা নিয়ে সভ্যের সামনে এসে তার মুখে মাখিয়ে দিলো। আবার বলল, "এবার নিজেকে আয়নায় দেখে হাসুন। আপনাকে আরও ভয়ংকর লাগবে।"
সভ্য রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে, "তোমার সাহস কত বড় হলে..."
সভ্যের কথা শেষ হবার পূর্বেই ইনারা ভয়ে দৌড় দেয়। সভ্য যায় তার পিছনে, "এই মেয়ে তুমি দাঁড়াও। তোমাকে আমি আজ ছাড়বো না।" 

ইনারা দৌড়াতে দৌড়াতে বলে, "আপনি এত বড় সেলিব্রিটি হয়ে আমার মতো সাধারণ মেয়ের পিছনে এভাবে দৌড়াচ্ছেন। মানায় আপনাকে?"
"সেলিব্রিটি মাই ফুট। তোমাকে আজ আমি ছাড়ব না। আমাকে জ্বালিয়ে খাচ্ছ তুমি।"
"আমি জ্বালিয়েছি? আপনি দুইদিন ধরে আমাকে কাজ দিয়ে জান ছাড় ছাড় করে ফেলছেন।"
"এই মেয়ে তোমাকে বলেছি না সুন্দর ভাবে কথা বলবে আমার সাথে?"
"এখন দৌড়ে আপনার থেকে বাঁচবো, না-কি সুন্দর ভাষার ডিকশিনারির খুলে বসবো?"
ইনারা হাঁপিয়ে ওঠে দৌড়াতে দৌড়াতে। তার গতি কমে আসে৷ রান্নাঘর থেকে বেডরুমে তিন চার চক্কর লাগানোর পর অবশেষে ইনারাকে নাগালে পায় সভ্য। তাই পিছন থেকেই ধরে নেয়। বলে, "এবার কোথায় যাবে শুনি।" 

ইনারা কম কিসের? সে হাওয়ায় পা নাচাতে থাকে। নড়তে থাকে। পিছনে ফিরে সভ্যের বুকে মারতে শুরু করে। হাতাহাতিতে পা পিছলে দু'জনেই মেঝেতে পড়ে যায়।
তবুও দুইজনে একে অপরের উপর রাগ দেখাতে চায়৷ থেমে যায় দু'জন। এতক্ষণের লড়াইয়ে একজনও খেয়াল করে নি এরা একে অপরের কতটা কাছে! 

সভ্য চমকে উঠে এই ঘটনায়। সে ভাবে নি তাদের ঝগড়ার মাঝে এমন কিছু হয়ে যাবে। ইনারা তার বুকের উপর এসে পরে। ইনারার চোখে চোখ পড়ে তার। হয় মধুর নয়নবন্ধন। ব্যালকনির হাওয়া এসে তার স্বর্ণোজ্জ্বল কেশ এলোমেলো করে দেয়। তার মুখ এসে ছুঁয়ে যায় ইনারার কেশ। তবুও সে চোখ সরায় না ইনারার চোখ থেকে। তাকিয়ে থাকে। কেমন নীলচে ভাব তার সে দু'চোখে। তার দূর থেকে বুঝা যায় না, কিন্তু এতটা কাছে এলে কিছুটা আন্দাজ করা যায়। তার চোখ দুটো যেন কেমন! যেন গাঢ় কোনো সাগরের জলের মতো। 

ইনারা সংকোচিত হয়ে যায়৷ সে ঠিক সভ্যের উপর পড়েছে। সভ্যের বুকেতে। সভ্যের নিশ্বাসের উষ্ণতা পাচ্ছে সে৷ একটি ছেলে তার এতটা কাছে ভাবতেই কেমন যেন অস্বস্তিতে পড়ে যায় সে। এক ঢোক গিলে। ভীষণ লজ্জায় পড়ে যায় সে। দ্রুত উঠে দাঁড়ায়। লজ্জায় আর একটিবারও তাকাতে পারে না সভ্যের দিকে। তার ফর্সা গালদুটো লালচে হয়ে যায়। 

সভ্যের অবস্থাও অনেকটা এমন। সেও আর তাকাতে পারে না ইনারার দিকে। অস্বস্তি ছড়িয়ে যায় বাতাসের আছে। সে গলা পরিষ্কার করে নরমসুরে বলে, "তোমার জামা কাপড় আটা ভরে গেছে। রুমে যেয়ে পরিষ্কার করে নেও।"
"হুম।"
ইনারা দৌড়ে সেখান থেকে পালায়। কেমন অস্বস্তি জড়িয়ে ধরে তাকে। যেন তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। সভ্যের রুমের ওয়াশরুমে যেয়ে আয়নাতে নিজেকে দেখে। তার গাল দুটো লালচে হয়ে গেছে। আচ্ছা সভ্য তার গাল দেখে নি তো? দেখলে কি না ভেবে বসে। সে নিজেকে পরিষ্কার করে বাহিরে যায়। সেখানে যেয়ে দেখে আগের থেকেই ডাইনিংরুমে সামি এবং ইরফান বসা। সামি জিজ্ঞেস করে, "গুড মর্নিং পার্টনার। তুমি কখন এলে?"
"কিছুক্ষণ আগেই। এসে দেখি মিঃ অসভ্য ঘুম থেকেই উঠে নি। অথচ আমাকে প্রতিদিন সকাল সাতটায় উঠে আসতে বলে। কী নির্দয় তোমার বন্ধু!" সে ইরফানের দিকে আবার তাকিয়ে বলল, "আপনি কি অসভ্যের থেকেও কম কথা বলেন?"
মৃদু হাসে ইরফান, "কম না। তবে ও সম্ভবত সভ্য তোমার সাথে বেশি কথা বলে। তাই না সভ্য?"
সভ্যের নাম শুনে ইনারা তার পিছনে তাকিয়ে দেখে সভ্য নাস্তার প্লেট নিয়ে আসছে। সভ্যকে দেখতেই ইনারা চোখ ফিরিয়ে নেয়। সভ্যের ক্ষেত্রেও তাই। 

সভ্যের পিছনে আসছে আরেকটি মধ্যবয়সী মহিলা। সামি তার সাথে পরিচয় করায় ইনারাকে, "ইনারা ইনি হলেন আন্টি শোভা। উনি এবং উনার সাথে কয়েকজন কর্মী আমাদের ফ্লাট পরিষ্কার করে।"
ইনারা তার সাথে পরিচিত হয়। সভ্য তার সামনে একটি প্লেট দিতেই ইনারা মৃদু স্বরে বলে, "আমি আ-আসলে বাসা থেকে খেয়ে এসেছি।"
"ওহ, আচ্ছা। খিদে লাগলে পরে খেও।"
একে অপরের দিকে তাকানো তো দূরের কথা কথাও বলে না। দুইজনে চুপচাপ বসে থাকে। সভ্যের ক্ষেত্রে তা স্বাভাবিক হলেও ইনারার এই ব্যবহার হজম করতে পারে না সামি। সে ভ্রু কপালে তুলে বলে, "কিছু হয়েছে?"
ইনারা ঘাবড়ে যায় সামির প্রশ্নে, "কী হয়েছে? কী হবে? না, কিছুই তো হয় নি।"
সন্দেহের দৃষ্টি আরও গাঢ় হয় সামির, "কিছু তো হয়েছে। তোমার মুখ দেখে যেকেউ বলতে পারবে। তোমার এবং সভ্যের ভেতর কিছু হয়েছে। কতক্ষণ থেকে দেখছি, একে অপর থেকে দৃষ্টি লুকাচ্ছো। দুইজনে সামনা-সামনি বসা কিন্তু ঝগড়া করছো না। এটা তো অস্বাভাবিক। আর চুপ বসে আছো এটা আরও অস্বাভাবিক। বলো কী হয়েছে? নিজের পার্টনারকে বলবে না?"
সভ্য টোকা মারে সামির মাথায়, "এই পার্টনারগিরি বেশি করতে গেলে তোমার কি অবস্থা করব নিজেও বুঝতে পারবি না। চুপচাপ বসে খাওয়া শেষ কর। খাবারের টেবিলে বসে কথা বলা আমার পছন্দ না।"
সামি আর কিছু বলে না। মুখ ফুলিয়ে খেতে থাকে। 

খাবারের মাঝে কলিংবেল বাজে। শোভা আন্টি যেয়ে দরজা খুলে। সাইদ প্রায় দৌড়ে ঢুকে বাসায়। ভেতরে ঢুকেই সভ্যকে জিজ্ঞেস করে, "আর ইউ ওকে?"
"আমার কি হবে? আর তুমি আজ ছুটির দিনে এখানে কীভাবে? আরও এই এই অবস্থায়!"
"সোশ্যাল মিডিয়াতে তোমার নাম ট্রেন্ডিং এ চলছে। তুমি কিছু জানো না?"
সামি বলে, "এটা তো প্রতিদিনই হয়। সভ্য এত জনপ্রিয়, ট্রেন্ডিং হওয়াটা স্বাভাবিক। এখানে এত অস্থিরতার কী আছে ব্রো?"
"গতকাল কোম্পানির কোন মেয়ে যেন সভ্যের নামে কোন গ্রুপে পোস্ট করেছে সে কোম্পানিতে চাকরি করে এবং কাজে সভ্য তাকে জ্বালাতন করছে। আই মিন শারীরিক... আমি কীভাবে বলি! মানে উত্ত্যক্ত করার কথা উঠেছে। এ নিয়ে রাতারাতি অনেক কথা ছড়িয়ে গেছে। অনেকে নানান ধরনের কথা বলছে। এই কথা মিঃ হকের কানে গেলে অনেক বড় সমস্যা হতে পারে৷ এমনকি জনগণ তোমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে তোমার ক্যারিয়ার নষ্ট হতে পারে।" 

ইনারা চমকে উঠে। গতকাল সে রাগে জোহানের সদস্য দলে এমন পোস্টই করেছিলো। কিন্তু সে বুঝে নি এত বড় কোনো ঘটনা ঘটতে পারে। এমনকি সে এভাবে কিছুই লিখে নি। তাহলে কীভাবে এক ছোট সাধারণ পোস্ট এত বড় ঘটনায় পরিবর্তন হলো?
.
.
.
চলবে...................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন