আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

প্রেমাতাল - পর্ব ০৭ - মৌরি মরিয়ম - ধারাবাহিক গল্প


১৩!!

গেস্ট হাউজের বিল মিটিয়ে, আর্মি ক্যাম্পে এন্ট্রি করে তারপর নৌকার ঘাটে গেল ওরা। নৌকা খুঁজছিল মুগ্ধ। হঠাৎ কোত্থেকে এক ছেলে দৌড়ে মুগ্ধ দাদা মুগ্ধ দাদা করতে করতে এল। তাকে দেখেই মুগ্ধর সেকি আনন্দ। তিতির বুঝলো না এই পাহাড়ী ছেলেটার সাথে এমন কি সম্পর্ক মুগ্ধর! কাছে আসতেই তাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-"মংখাই, তোমাকে পেয়ে যে কি আনন্দ হচ্ছে কি বলবো! ঢাকা থেকে আসার আগেই তোমাকে ফোন করেছিলাম। তোমার ফোন বন্ধ ছিল। ভেবেছি পাহাড়ে আছো বোধহয়। তারপর আবার থানচি এসে থেকে তোমাকে ফোন করছি। তোমার ফোন বন্ধ বলছিল। আমার মনটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল।"
-"দাদা, ফোন বন্দু না। আমি ইক্ষন রেমাক্রি তিকা আসলাম। উখানের নেটওয়াক তো জানেন।"
-"আচ্ছা আচ্ছা ঠিকাছে, আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন।"
মংখাই নামের পাহাড়ী ছেলেটি দাঁত কেলিয়ে হাসলো। মুগ্ধ বলল,
-"শোনো, জানি তুমি মাত্র এসেছো। কিন্তু কিছু করার নাই, তোমাকে রেস্ট নেয়ার টাইম দিব না। তোমাকে আমাদের সাথে যেতে হবে।"
মংখাই হেসে বলল,
-"দাদা আমার পা যদি বাংগাও তাকে তাও আমি যাব আপনের সাতে। আপনি না নিলেও জোড় করি যাব। নৌকা ঠিক করিচেন?"
-"না। তুমি যখন এসে পড়েছো তুমিই ঠিক করো। আর ইঞ্জিন নৌকা নিও।"
-"ইঞ্জিন নৌকায় তো ম্যালা শব্দ। আপনের না বাল্লাগেনা।"
-"হ্যা। কিন্তু যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যেতে চাই। কাল যে কি বিপদে পড়েছিলাম ভাই। আর কোনো বিপদ চাইনা।"
মংখাই এতক্ষণে তিতিরকে খেয়াল করলো। বলল,
-"ভাবী?"
মুগ্ধ হেসে বলল,
-"আরে না না, আমরা এক দলে ট্রিপে এসেছি। পরে ওদের হারিয়ে ফেলেছি। দুদিন আগেও কেউ কাউকে চিনতাম না কিন্তু এখন আমরা ভাল বন্ধু হয়ে গেছি।"
তিতিরের মনটাই খারাপ হয়ে গেল। ভাবী কিনা জিজ্ঞেস করলো আর ও না বলে দিল! হ্যা বললে কি এবার ওর জাত যেত? মুগ্ধ তিতিরের দিকে ফিরে বলল,
-"ও হচ্ছে আমার এক ছোটভাই মংখাই। ও পাহাড়ী। কিন্তু দেখেছো কি সুন্দর বাংলা বলে?"
ছেলেটি হাসলো। হাসলো তিতিরও। মুগ্ধ বলল,
-"ও হলো এখানকার গাইড। ও সাথে থাকলে কোন চিন্তা নেই।"
মংখাই তো মুগ্ধর এমন কথায় ব্যাপক লজ্জা পাচ্ছিল। বলল,
-"দাদা, আমি নৌকা ঠিক করি?"
-"হ্যা হ্যা, আর প্লিজ একটা ছইওয়ালা নৌকা ম্যানেজ করো ভাই, আপু আছে তো।"
-"আচ্ছা আচ্ছা।"
যে সুন্দর সে সুন্দরই। নৌকার গুলুইয়ের উপর ঘোমটা মাথায় বসে থাকা কুচকুচে কালো তিতিরকে মুগ্ধর কাছে অপূর্ব রুপবতী লাগছে। তিতির তাকিয়ে নদীর চারপাশ দেখছে। ওর চোখ দুটো যেন নদীর সৌন্দর্যের তালে তালে তা তা থৈ থৈ করে নাচছে। নদীটা খুব বেশি প্রশস্ত না। তবে খুব কর্মচঞ্চল। নৌকায় নৌকায় মাঝিরা মাছ ধরছে। নদীর পাড়ে পাহাড়ী মহিলারা তাদের নিত্য কাজ করছে। কেউ কেউ কলসি কাখে হেটে যাচ্ছে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা পাহাড় থেকে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ার খেলায় মেতেছে। পুরো নদীতেই ভেলার মত লম্বা লম্বা কি যেন! দেখেই বোঝা যাচ্ছে এগুলো ইচ্ছে করে ভাসিয়ে রাখা হয়েছে। এগুলো কি মুগ্ধকে জিজ্ঞেস করতে হবে, কিন্তু এখন না পরে। এখন কোনো কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। শুধু সৌন্দর্য উপভোগ করতে ইচ্ছে করছে।
মুগ্ধ নৌকার মাঝখানে শুয়ে ছিল। নৌকায় শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখার মজাই আলাদা। মাঝিকে বলল,
-"ও মাঝি ভাই তোমার নাম কি?"
-"জ্বী আমার নাম লোকমান।"
-"এই তুমি বাঙালী! বাড়ি কই তোমার?"
-"ময়মনসিংহ।"
-"ও, তা এইখানে যে?"
-"পেট চালানের লাইগা আব্বায় আইসিলো।"
-"ও। বিয়াসাদি কি কইরালছ?"
-"হ, কইরলাছি।"
-"ও যাই হোক, আমরা তিনজনের একজনও বিয়াসাদি করিনাই। সাবধানে নৌকা চালাইয়ো কিন্তু। তোমার যেমন বউ আছে আমাদেরও কিন্তু হবু বউ আছে। ওই যে আপুরে দেখতেসো ওনারও কিন্তু হবু জামাই আছে, তো সবারই এখন জীবনের দাম অনেক। এখন তাড়াতাড়ি চালাও যাতে তিন্দুর পর আস্তে চালাইলেও সময়ের অভাব না পরে। বুঝলা রাত্রে নৌকায় থাকা যাবে না। সন্ধ্যার মধ্যে রেমাক্রি পৌঁছাতে হবে।"
লোকমান হাসতে হাসতে বলল,
-"কুনো চিন্তা কইরেন না বাইজান। এক্কেরে টাইমের মইধ্যে লইয়া যাইবাম।"
মংখাই বলল,
-"দাদা, ও ছোটকাল তেকেই এই সাংগুতে নৌকা চালায়। চিন্তা করিয়েন না। খুব অবিজ্ঞ।"
-"ভাল কথা মনে করসো।"
তারপর মুগ্ধ তিতিরের দিকে তাকিয়ে ডাকলো,
-"তিতির.."
তিতির বলল,
-"হ্যা বলুন।"
-"আমরা যে নিলগিরি থেকে অনেক নিচে নদী দেখেছিলাম না? এটা কিন্তু সেই নদী, সাঙ্গু। সুন্দর না?"
-"হ্যা, সুন্দর। কিন্তু আমরা তো পাহাড়ি রাস্তায়ই এলাম। নদী তো অনেক নিচে ছিল। এত নিচে কিভাবে এলাম?"
-"কেন খেয়াল করোনি নিলগিরির পর খালি ডাউনহিল ছিল। তারপর থানচি বাজার থেকেও তো ঘাট অনেক নিচে।"
-"ও।"
হঠাৎ মনে পড়লো তিতির ভাত খেতে চেয়েছিল। উঠে বসে মংখাইকে বলল,
-"আমাদের রান্না করতে হবে বুঝলে? নৌকায় সব ব্যবস্থা আছে তো?"
-"জ্বী দাদা, সব ব্যবস্তাই আছে।"
তিতির জিজ্ঞেস করলো,
-"কি রান্না হবে?"
-"ভাত, মুরগি, ডাল, আলুভর্তা। চলবে তো?"
-"দৌড়োবে! আচ্ছা রান্নাটা আমি করি?"
-"তুমি! রান্না করতে পারো?"
-"সব পারিনা। তবে এসব পারি।"
-"কিন্তু তুমি পারবেনা তো। কেরোসিনের স্টোভে রান্না করতে হবে। করেছো কখনো? স্টোভ সামলানো অনেক ঝামেলার কিন্তু।"
-"না করিনি কখনো।"
-"তাহলে থাক, আমিই করি।"
-"আচ্ছা দুজনে মিলেই করি? আপনি চুলাটা সামলাবেন, আর আমি রান্না।"
মুগ্ধ হেসে বলল,
-"আচ্ছা আচ্ছা।"
মংখাই বলল,
-"দাদা, আমিও আছি কিন্তু।"
মুগ্ধ বলল,
-"ও হ্যা হ্যা, মংখাই কিন্তু অনেক ভাল রান্না করে।"
-"দাদা, কুনোদিন রানতে দিননাই তো। নিজেই করিচেন।"
-"তা করেছি। কিন্তু তুমি তো পারো।"
মংখাই আর কথা বাড়ালো না।
নৌকা থানচি ছাড়তেই আস্তে আস্তে জনবসতি কমে যেতে লাগলো। ২০-২৫ মিনিট যেতেই তিতিরের মনে হলো নদীটা গহীন কোনো জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ভয় পাওয়ারও সময় নেই। রান্না নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তে হবে।
রান্না করতে গিয়ে তিতির সত্যিই ঝামেলায় পড়লো। একটা ধার ছাড়া বটি যা দিয়ে কিছুই কাটা যাচ্ছেনা। তার উপর আস্ত মুরগি তিতির জীবনে কাটেনি। সব সময় তো মায়ের কেটে রাখা মুরগি রান্না করেছে। এখন কি হবে! তিতির মুরগিটা হাতে নিয়ে অনেক চিন্তা করলো। কোনদিক দিয়ে যে কাটা শুরু করবে তা বুঝতেই পারছেনা। এজন্যই সব কাজ শিখে রাখতে হয়। মাছ মুরগি কাটা শিখতে গেলে বাবা সবসময়ই বলে এসব শিখে তুই কি করবি? তুই কি এসব করবি নাকি? তোকে রাজপুত্রের সাথে বিয়ে দেব। সে কি তোকে দিয়ে মাছ-মাংস কাটাবে? কাজের লোকেরাই তো সব করে দেবে। কিন্তু বাবা কি জানে ট্যুরে গেলে কেউ কাজের লোক নিয়ে যায়না! তাও ভাল জোর করে কয়েকটা রান্না শিখেছিল। ইশ মুরগিটা যদি কাটতে না পারে তো প্রেস্টিজের বারোটা বেজে যাবে। হঠাৎ মুগ্ধ ওর হাত পাতলো। বলল,
-"মুরগিটা আমাকে দাও। দেশী মুরগি তো, অনেক শক্ত। তুমি কাটতে পারবে না।"
তিতির দিয়ে দিল। মুগ্ধ বুঝতে পেরেছে যে ও মুরগি কাটতে পারেনা। তাই সরাসরি বলে লজ্জা না দিয়ে দেশী মুরগির দোহাই দিয়ে নিজে কাটতে নিল। মংখাই বলল,
-"দাদা, আমাকে দেন আমি কেটে দি।"
-"না না তুমি আপুর রান্নায় হেল্প করো। আমার সময় লাগবে না।"
তিতির চাল ধুয়ে ভাত বসিয়ে দিল। তাতে আলুসেদ্ধও দিয়ে দিল। মংখাই চুলাটা কন্ট্রোল করছে। মুগ্ধ মুরগিটা হাতে নেয়ার পর থেকে তিতির মুগ্ধ হাতের দিকে তাকিয়ে রইলো। কিভাবে মুরগি কাটে সেটা এখনি শিখে নেবে ও। মুগ্ধ প্রথমে মুরগিটা হাতে নিয়ে পাঁজরার হাড়দুটো আলাদা করে একহাতে গলা আরেক হাতে পাঁজর ধরে টান দিয়ে দুভাগ করে ফেলল। মাগো এই টানটা কি করে দেবে তিতির! এত জোড় আছে নাকি ওর। তারপর ভাবলো সব মেয়েরা পারলে ও অবশ্যই পারবে। তারপর রান, থান আলাদা করে টুকরো করে কেটে নিল। তারপর বুকের মাংসটা কিভাবে কাটলো সেটাও দেখে নিল। এরপর মাথাটা কেটে নিল। তিতিরের মনে হলো মাথা কাটাটা আরো বেশি ডিফিকাল্ট। তারপর দেখলো মুগ্ধ মুরগিটার নাড়িভুঁড়ির মধ্যে থেকে গিলা, কলিজা বের করে আনলো। গিলাটা লম্বালম্বি একটু কেটে আংগুল দিয়ে টেনে টেনে ভেতরের ময়লাটা বের করে ফেলে দিল। এএএহ! এভাবে গিলা পরিস্কার করে। আর ভেতরে এত বিচ্ছিরি ময়লা থাকে! ইয়াখ.. ও আর জীবনে গিলা খাবেনা। সবশেষে মুরগির পা দুটো চুলায় পুড়িয়ে পুড়িয়ে চামড়া খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ছিঁড়ছিল মুগ্ধ। পায়েও এত কাহিনী করা লাগে! তিতির জিজ্ঞেস করলো,
-"পা কে খাবে?"
-"কেন খাওনা?"
-"না।"
-"আমি খাই, মংখাই খাও?"
-"জ্বী দাদা, খাই।"
-"হয়ে গেল! তুমি আর পাচ্ছো না।"
একথা বলেই মুগ্ধ হাসলো। তিতিরও হাসলো। তারপর মুরগিটা ধুয়ে এগিয়ে দিল। বলল,
-"নাও এবার রান্না করো।"
-"আপনি এত সুন্দর মুরগি কাটা শিখলেন কোত্থেকে?"
-"কেন মায়ের কাছ থেকে!"
-"ওহ।"
-"মা কি বলতো জানো?"
-"কি?"
-"বলতো, 'মুগ্ধ মুরগি কাটা শেখ, মাছ কাটা শেখ, রান্না শেখ। তোর জন্য তো রাজকুমারী নিয়ে আসবো। সে যদি না পারে তোকে তো পারতে হবে। তাড়াতাড়ি শিখে নে।' আর জানো আমিও দৌড়ে দৌড়ে গিয়ে আগ্রহ নিয়ে শিখতাম। যাতে বউকে এসব করে দিতে পারি.. হা হা হা।"
তিতির ওর বাবার কথাগুলো আর মুগ্ধর মায়ের কথাগুলো মিলিয়ে নিল। এটা কি শুধুই কো-ইন্সিডেন্স নাকি কোনো ইশারা! খুশি যেন উপচে পড়ছিল তিতিতের। তিতির খুব যত্ন করে ভাত, আলুভর্তা, ডাল করে ফেললো। মুগ্ধও হেল্প করলো। কিন্তু প্রব্লেম হলো মুরগি রান্নার সময়। কিছুতেই তিতির মশলা বাটতে পারছিলনা। জীবনে প্রথম পাটায় হাত দিয়েছে। বাটছে ঠিকই কিন্তু কোনো কিছু আর এপাশ থেকে ওপাশে যাচ্ছেনা। মুগ্ধ তাকিয়ে ছিল তাই তিতির খুব লজ্জা পেয়ে গেল। মুগ্ধ নিশ্চই এখন এটাও এর হাত থেকে নিয়ে নিজেই বেটে দেবে! হায় খোদা! কেন ও এসব পারেনা। মুগ্ধ বলল,
-"কখনো পাটায় হাতও দাওনি বোধহয়?"
-"না।"
-"বুঝেছি। আচ্ছা রেখে দাও। আমি ব্যবস্থা করছি।"
তিতির মন খারাপ করে বলল,
-"আপনি বাটবেন এখন?"
মুগ্ধ বলল,
-"আরেনা। মা আবার এটা শেখায়নি। বলেছে বউকে ব্লেন্ডার কিনে দিতে। হা হা হা।"
তিতিরও হেসে দিল। মুগ্ধ আদা রসুন গুলো নিয়ে বটি দিয়ে কুচি কুচি করে কাটলো। তিতির বলল,
-"এগুলো কি করবেন?"
-"এভাবেই দেব মুরগিতে।"
-"আস্ত আস্ত?"
-"আস্ত কই? দেখোনা কুচি কুচি।"
-"কেমন যে লাগবে!"
-"আমি নিজের মত রান্না করি। খাওয়ার সময়েই দেখো কেমন লাগে!"
মুগ্ধ নিজ হাতে রান্না করলো মুরগিটা।
সত্যি মুরগিটা কতটা যে মজা হয়েছিল তা খাওয়ার সময় টের পেল সবাই। নৌকা একটা তীরে ভিড়িয়ে ওরা খেয়ে নিয়েছিল। খাওয়া শেষে মুগ্ধ বলল,
-"তিতির, তুমি এখন ছইয়ের মধ্যে চলে যাও, রেস্ট নাও। আমি না বললে বের হয়ো না।"
-"আচ্ছা।"
একথা বলেই ভেতরে ঢুকে গেল তিতির। মুগ্ধ ছইয়ের পর্দা টেনে দিল। তারপর ছইয়ে হেলান দিয় বাইরে বসে রইলো। হঠাৎ ভেতরের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল তিতির ঘোমটা ফেলে ছোট একটা আয়না হাতে নিয়ে নিজের মুখ ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে দেখছে। মুগ্ধ আস্তে করে পর্দাটা সড়িয়ে গান ধরলো,
"কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি..
কালো তারে বলে গায়ের লোক।
মেঘলা দিনে.. দেখেছিলেম মাঠে,
কালো মেয়ের কালো হরিন চোখ!
ঘোমটা মাথায় ছিলনা তার মোটে..
মুক্ত বেনী পিঠের ওপর লটে।
কালো!!!
তা সে যত কালোই হোক
দেখেছি তার কালো হরিন চোখ!
কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি।"
এটুকু গেয়েই মুগ্ধ আবার পর্দা টেনে দিল। তিতিরের এই প্রথম আফসোস হলো, "ইশ কালো কেন হলাম না।"
থানচির পর তিন্দুতে এসে কিছু জনবসতি দেখা গেল। কিন্তু সেটা খুবই কম। ১৫/২০ ঘরের বেশি হবেনা। এখানটায় প্রচুর স্রোত। ওদেরকে নেমে নদীর তীর ধরে হাটতে হলো। আর লোকমান, মংখাই মিলে নৌকায় দড়ি বেধে টেনে টেনে স্রোতের অংশটা পার করলো। তারপর ওরা আবার নৌকায় উঠলো। কিছুদূর পর আবার সেই স্রোত। আবার নামলো, আবার হাটলো। এভাবে অনেকবারই নামতে হলো। হাটতে হাটতে অনেক গল্পই হয়েছিল। তার মধ্যেই একবার তিতির বলল,
-"সাফি ভাইয়াদের হারিয়ে ফেলে ভালই হয়েছে বলুন। নাহলে এত এত এডভেঞ্চারের কিছুই হতো না। যদিও কাল ভয় পেয়েছিলাম বিপদে পড়ে কিন্তু আজ মনে হচ্ছে যারা দলেই আছে তারা তো এরকম পরিস্তিতিতে পড়েনি, তারা খুব মিস করলো।"
মুগ্ধ হাসলো। তিতির বলল,
-"হাসছেন যে?"
-"আমরা কিন্তু এখনো বিপদ থেকে বের হতে পারিনি।"
-"নাহলে না পেরেছি, আমার আর ভয় করছে না। আপনি আছেন তো!"
কিছুক্ষণের মধ্যে ওরা চলে এল বড়পাথর। এলাকার নামই বড়পাথর। এখানে কোন জনবসতি নেই। আছে শুধু বড় বড় পাথর। তাও আবার পানির মধ্যে। একতলা দোতলা বাড়ির সমান উঁচু বিশাল বিশাল পাথর। যার কিছু অংশ পানির নিচে, কিছু অংশ পানির উপরে। ছোট, বড়, মাঝারি বিভিন্ন সাইজের পাথর। তার মধ্য দিয়েই নৌকা চালাচ্ছে লোকমান। সোজা তো আর চালানো যায়না। এঁকেবেঁকে প্রকান্ড পাথর গুলোকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। পানির নিচে আবার আছে ডুবোপাথর। নৌকা যদি কোনক্রমে একটা ডুবোপাথরের সাথে ধাক্কা লাগে তাহলে পুরো নৌকাই উল্টেপাল্টে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। তিতিরের বোধহয় এসব দেখে ভয় করছিল। কিন্তু কিছু বলছিল না। ছইয়ের ভেতর থেকেই এসব দেখছিল। মুগ্ধ ওর ভয় কাটানোর জন্য ওর সাথে টুকটাক গল্প করছিল।
-"জানো তিতির, এখানকার স্থানীয় মানুষেরা মানে পাহাড়ীরা এই বড়পাথরের সবচেয়ে বড় পাথরটাকে পুজো করে।"
-"কেন?"
-"সবচেয়ে বড় পাথরটাকে ওরা রাজা বলে মানে। ওদের বিশ্বাস বহুকাল আগে তিন্দু রাজা যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তার পুরো পরিবার ও আত্মীয়স্বজন নিয়ে সাঙ্গু নদীর এই যায়গায় ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তারপর তারা সবাই পাথর হয়ে যায়। তাই স্থানীয়রা এটাকে ধর্মীয় স্থান বলে মানে, পুজো দেয়।"
রেমাক্রির দিকে যেতেই মুগ্ধ ছইয়ের পাশে দাঁড়িয়ে পড়লো। বলল,
-"লোকমান ভাই আমাদের একটু রেমাক্রি ফলসের দিকে নিয়ে চলো। তুমি অনেক তাড়াতাড়ি আর সেফলি এনেছো, আলহামদুলিল্লাহ। এখনো হাতে সময় আছে। এত সুন্দর একটা যায়গা তোমার এই আপুর মিস করা কি ঠিক হবে? দুদিন পর বিয়ে হয়ে যাবে তো, ওর হাসবেন্ড কেমন না কেমন হয় বলা তো যায়না বলো? সে যদি যদি ওকে নিয়ে এখানে না আসে?"
লোকমান হেসে বলল,
-"আচ্ছা ভাই।"
তিতির মনে মনে বলল, 'আপনিই আমার হাসবেন্ড হয়ে যাননা।' কিন্তু মুখে বলল,
-"রেমাক্রি ফলস আবার কোনটা?"
মুগ্ধ বলল,
-"এই যে সাংগু নদী, এটা রেমাক্রি খালের সাথে মিশে শেষ হয়ে গেছে। রেমাক্রি ফলস হলো রেমাক্রি খালের উৎপত্তিস্থল। ছোট ছোট পাহাড়ের কারনে ওখানে একটা ন্যাচারাল জলপ্রপাত তৈরী হয়েছে। অসম্ভব সুন্দর একটা জলপ্রপাত। রেমাক্রি যাওয়ার পথে পড়েনা। একটু ঘুরে যেতে হয় তাই অনেকেই ওখানে যায়না। ইভেন অনেকে জানেও না।"
-"ও।"
রেমাক্রি ফলসের দিকে যেতে যেতে দূর থেকেই যখন তিতির জলপ্রপাতটা দেখতে পেল তখন ও নিজের দুই গালে দুই হাত দিয়ে চোখগুলো বড় বড় করে অজান্তেই বলল,
-"ওয়াও। এটা কি? আমি কি সত্যি দেখছি, নাকি স্বপ্ন।"
মুগ্ধ মিটিমিটি হাসছিল আর মনে মনে বলছিল, 'আমি জানি তুমি তোমার জীবনে দেখা সবচেয়ে সুন্দর যায়গাগুলোর একটাতে যেতে চলেছো। তুমি খুশি হয়েছো। জানি তুমি আরো অনেক অনেক বেশি খুশি হবে যখন তুমি জলপ্রপাতের বাঁধনহারা পানিতে পা রাখবে। তুমি যেমন জলপ্রপাতটায় যাওয়ার অপেক্ষায় আছো, আমিও তেমন তোমার ওই সময়ের খুশিটা দেখার অপেক্ষায় আছি। হ্যা, আজ আমি আর জলপ্রপাতটা দেখবো না, তোমার খুশি দেখবো.. তোমাকে দেখবো। তুমি প্রকৃতির চেয়ে কোনো অংশে কম নও।'
নৌকা রেমাক্রি ফলসের যত কাছে যাচ্ছে পানির শব্দ বাড়ছে। তিতির বিস্ময়ে কি করবে বুঝতে পারছিলনা। সেটা বোঝা গেল যখন ও নৌকায় বসা থেকে উঠে এসে দুহাতে মুগ্ধর বাহু জড়িয়ে ধরে নৌকার মধ্যেই লাফাতে শুরু করে দিল। আর বলল,
-"উফ, বলেন না কখন যাব? আমি কিন্তু নামবো।"
মুগ্ধও এক্সাইটেড হয়ে যাচ্ছিল তিতিরের আনন্দ আর উচ্ছলতা দেখে। এ যেন অন্য তিতির। বলল,
-"হুম নামবে।"
তিতির বলল,
-"লোকমান ভাই তাড়াতাড়ি চালান না।"
যখন ওরা রেমাক্রি ফলসে পৌঁছলো তখন পড়ন্ত বিকেলের আলো যেন জলপ্রপাতে একটা মায়াবী সৌন্দর্য যোগ করেছিল। হয়তো প্রকৃতির এই আয়োজন প্রথমবার তিতিরকে মুগ্ধ করার জন্যই। প্রথমে মুগ্ধ নামলো রেমাক্রি ফলসের পানিতে। তারপর তিতিরের হাত ধরে ওকে নামালো। তিতির স্যান্ডেল খুলে নামছিল। মুগ্ধ বলল,
-"ওটা পড়ে থাকো। পাথর অনেল পিচ্ছিল আর অনেক ধার!"
তিতির তাই করলো। বিশাল জলপ্রপাত তবে প্রশস্তে, উচ্চতায় খুবই সামান্য। প্রায় ৮/৯ টি ধাপ একেবারে সিড়ির মত। কিন্তু একেকটা ধাপে অনেক যায়গা। একেকটা ধাপ যে কতটা ধারালো তা এর উপর থেকে পড়া পানির আকার দেখলেই বোঝা যায়। শেষ ধাপের পরই রেমাক্রি খাল। তিতিরকে হাত ধরে ধরে প্রত্যেকটা ধাপে নিয়ে গেল মুগ্ধ। তিতির পথরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পানির উপর দিয়ে হাটছিল আর খিলখিল করে হাসছিল। একেবারে উপরের ধাপে সবচেয়ে বেশি যায়গা। তিতিরকে নিয়ে মুগ্ধ সেখানে চলে গেল। সেখানে পানি ছিল অন্য সব ধাপের চেয়ে বেশি। এত পানি পায়ের নিচে পেয়ে তিতির লাফাতে শুরু করে দিল। মুগ্ধ বলল,
-"এত লাফিও না। পা কেটে যাবে।"
জলপ্রপাতের পানি পড়ার শব্দে শুনতে পেল না তিতির। যদিও হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে তবু চিৎকার করে বলল তিতির,
-"কি বলছেন? শুনতে পাচ্ছিনা.. জোড়ে বলুন, চিৎকার করে বলুন। আমার মত করে।"
তারপর আবার খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। মুগ্ধ হেসে তিতিরের মতই চিৎকার করে কথাটা আবার বলল। তিতির আবার চিৎকার করে উত্তর দিল,
-"যাক, পা কেটে যাক, সময় কেটে যাক। সারা জীবন কেটে যাক। আমি এখানেই থাকবো আর লাফাবো।"
তারপর আবার খিলখিলিয়ে হাসলো। আবার লাফাতে লাগলো। মুগ্ধ কিছু বলল না। শুধু শক্ত করে তিতিরের হাত ধরে রাখলো। পানির যেই স্রোত। ও ধরে না থাকলে এতক্ষনে তিতির রেমাক্রি খালে থাকতো। লাফাতে লাফাতে তিতির হঠাৎ পড়ে গেল। পড়ে যেয়ে ওর হাসি আরো বেড়ে গেল। মুগ্ধ তাড়াতাড়ি ওর হাত ধরে ওঠানোর চেষ্টা করলো। ও নিজে তো ওঠার চেষ্টা করলোই না বরং মুগ্ধর হাত ধরে টান দিয়ে ওকেও ফেলে দিল। মুগ্ধ পড়ে যেতেই তিতির আরো জোড়ে জোড়ে হাসতে লাগলো। আচমকা পড়ে যাওয়ায় মুগ্ধ ব্যালেন্স না রাখতে পেরে পানির স্রোতের সাথে ভেসে যাচ্ছিল। আর তিতিরের তো কোন ব্যালেন্স ছিলই না। দুজনেই ভেসে ভেসে যাচ্ছে। তিতির খিলখিল করে হাসছে। কিন্তু মুগ্ধ ভয় পাচ্ছিল। কি হবে এখান থেকে প্রথম ধাপে পড়লেই তো একে একে প্রত্যেকটা ধাপে পড়বে। তারপর সোজা উপড়ে! কি করবে! পা হাতড়ে খুজছিল, যদি কিছু একটা পাওয়া যায়। এখানে তো কত উঁচু নিচু পাথর আছে। যদি একটা উঁচু পাথরে পা টা আটকে যেত! তাহলে দুটো জীবন বেঁচে যেত!
একটা পাথর না হলেও একটা ছোট গর্তে পা আটকাতে পারলো মুগ্ধ। তিতির তখনও খিলখিলিয়ে চলেছে। মুগ্ধ একটা হাতে ধরে রাখতে পারছিলনা ওকে। তাই দুই হাত দিয়ে ধরে নিজের কাছে না এনে নিজেই কাছে চলে গেল। ওকে কাছে আনতে গেলে হয়তো পাথরের ঘষায় ও আঘাত পেতে পারে। পানির স্রোতে তিতির মুগ্ধর বুকের মাঝে এসে ধাক্কা খেল। তাতেও হাসি। খুশিতে মেয়েটার মাথার তার একটা ছিড়ে গেছে বোধহয়।
ওদের এই অবস্থা থেকে উদ্ধার করলো মংখাই আর লোকমান।
যখন ওরা রেমাক্রি পৌঁছল, সূর্য ডুবতে শুরু করেছে। লাল আলোর আভায় ভরে গেছে চারপাশ। যায়গাটা বেশ পছন্দ হলো তিতিরের। থানচি ছিল সাধারন মফস্বলের বাজার এলাকার মত, তিতিরের একটুও পছন্দ হয়নি। কিন্তু এখানে নৌকার ঘাট থেকেই রেমাক্রি গ্রাম শুরু। ৩০/৪০ পাহাড়ী পরিবারের বসতি হবে। পুরো গ্রামটাই পাহড়ের উপর। চারদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ। গ্রামের একপ্রান্তে দেখা গেল একটা কাঠের ব্রিজ। ব্রিজ পার করে ওপাশে ছোট্ট একটা পাহাড়। মুগ্ধ বলল,
-"ব্রিজের ওপাশে পাহাড়টার উপর যে বড় ঘর দেখতে পাচ্ছো সেটাই রেমাক্রির একমাত্র গেস্ট হাউজ। পুরোটাই কাঠের তৈরী, ইভেন ফ্লোরও কাঠের।"
-"ও। আচ্ছা, একটা ঘর এত বড় কেন?"
-"আরে না না বাইরে থেকে দেখে মনে হচ্ছে একটা ঘর। কিন্তু ওর ভেতরে কয়েকটা ঘর আছে।"
কাঠের ব্রিজটা পার হয়ে গেস্ট হাউজে গিয়েই মুগ্ধর আক্কেলগুড়ুম! রেমাক্রি গেস্ট হাউজ পুরোটাই খালি। ২৬ জনের কোন দলই আজ আসেনি। সাফিরা আজ ভোরে রওনা দিল অথচ এখনো পৌঁছতে পারেনি! কি হলো! এখন তো সন্ধ্যা হয়ে গেছে। সন্ধ্যার পর ডুবো পাথরের জন্য নদীতে নৌকা চলা একেবারেই নিষিদ্ধ।

১৪!!

গেস্ট হাউজটা আসলে একটা কটেজের মত। চারদিকে ঘিরে আছে একটা বারান্দা। কটেজে মোট ৪ টি ঘর। প্রত্যেকটি ঘরে দুটো করে বিছানা। আর দুই বিছানার মাঝেও অনেক যায়গা। ফ্লোরিং করার প্ল্যান ছিল বাকিদের। কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেল। কোথায় চলে গেল সাফিরা। এতজন একসাথে থাকলে তো কোথাও কোন বিপদ হওয়ার কথা না। ওদের জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে মুগ্ধর। ৪ টা ঘরের একটাতে তিতির, একটাতে মুগ্ধ। আরেকটাতে যায়গা হলো মংখাই আর লোকমানের। যে যার ঘরে চলে গেল। মুগ্ধ ভেজা শার্টটা খুলে ফেলল। নদীতে গোসল করতে যাবে। গামছা আর টাউজার কাধে ঝুলিয়ে ঘর থেকে বের হলো। হঠাৎ পিছন থেকে সেই মিষ্টি ডাক,
-"এইযে শুনছেন?"
মুগ্ধ ঘুরে দাঁড়িয়ে হাসি হাসি মুখ করে বলল,
-"হুম শুনছি তো, বলো।"
তিতির হেসে বলল,
-"গোসলের কি ব্যবস্থা এখানে?"
-"নদীতে গোসল করতে হবে।"
তিতির অবাক হয়ে বলল,
-"নদীতে!"
-"কেন সাঁতার জানোনা?"
-"তা জানি।"
-"তাহলে?"
-"মানে খোলা যায়গায় সবার সামনে গোসল করতে হবে?"
-"খোলা যায়গায় তবে সবার সামনে নয়। কারন, এই গেস্ট হাউজের পাশ দিয়ে নদীতে নেমে পড়বে। গ্রামের কেউ তো আর এই সাইড টাতে আসবে না। ওইযে টয়লেট টা দেখতে পাচ্ছো ওটা বড় ভাগ্যের জোড়ে পেয়েছো। আমি আগের বার যখন এসেছিলাম তখন ওটা ছিলনা।"
-"ও। তাহলে কি করবো?"
-"গোসল করে আর কি করবে? গোসল তো রেমাক্রি ফলসে হয়েই গেছে।"
-"না, ওখানে তো শুধু ভেজা হলো।"
-"বাই দ্যা ওয়ে, সকালে না গোসল করে এলে?"
-"হুম, কিন্তু এই কালি গায়ে নিয়ে ঘুমাবো? স্কিন ভারী ভারী লাগছে। গোসল না করে বাঁচবো না। "
-"আচ্ছা, তাহলে যাও করে এসো। কেউ যাবেনা ওদিকে। আর গোসল করে চলে আসবে। ঘরে গিয়ে চেঞ্জ করবে।"
-"আপনিও চলুন না আমার সাথে।"
মুগ্ধ অবাক হয়ে বলল,
-"এই প্রথম শুনলাম কোনো মেয়ে গোসল করতে যাওয়ার সময় অপরিচিত কোনো পুরুষ মানুষকে সাথে ডাকে।"
-"উফ আপনি না একটা যাচ্ছেতাই।"
মুগ্ধ হেসে ফেলল। তিতির বলল,
-"আমি তো বলেছি শুধু আপনি পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন একটু। অপরিচিত যায়গা, তার উপর আলো কমে আসছে। আমার একা যেতে ভয় করছে।"
-"তাহলে বলছো যে মেয়েরা ছেলেদের উপর মাঝে মাঝে ডিপেন্ডেন্ট হয়?"
তিতির কপাল কুঁচকে বিরক্ত চোখে তাকালো। মুগ্ধ হেসে বলল,
-"ওহ সরি। তোমাকে তো আবার খোঁটা দেয়া যাবেনা। চলো চলো।"
-"আপনার কাধে দেখি কাপড়! আপনিও কি গোসলে যাচ্ছিলেন?"
-"হুম!"
-"ও। তাহলে তো হলোই।"
তিতির নদীর পাড়ে গিয়েই অবাক হয়ে গেল। এদিকটায় তীরটা একটু অন্যরকম। সিবীচে যেমন বালুর তীর থাকে এখানে ঠিক সেরকমই কিন্তু পাথরের তীর! অসংখ্য ছোট ছোট পাথর এখানে। পানিতে নেমেও পায়ের নিচে পাথর ছাড়া আর কিছু পেলনা। যায়গাটা কি যে ভাল লাগছিল তিতিরের! তিতির যখন গোসল করছিল মুগ্ধ তখন নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে মোবাইলে গেমস খেলছিল। কাজলের কালি উঠাতে বেশ কসরত করতে হলো তিতিরের। সাবান দিয়ে ঘষে ঘষে তুলল। পায়ের কয়েকটা যায়গা আর ঘাড়ের পেছনের দিকটায় সামান্য জলছিল। জলপ্রপাতের পাথরের ধারে কেটে গেছে কিনা কে জানে! গেলে যাক। কি আর করা.. তিতির গোসল শেষে সেই শালটা গায়ে জড়িয়েই উঠলো। তারপর বলল,
-"তাড়াতাড়ি গোসল করতে যান। আমি কি দাঁড়াবো?"
-"পাগল! তুমি যাও চেঞ্জ করে নাও গিয়ে।"
তিতির চলে যাচ্ছিল। মুগ্ধ ডাক দিল,
-"শোনো.."
-"হ্যা বলুন।"
-"আমার মোবাইল আর ওয়ালেট টা একটু নিয়ে যাবে? তুমি না এলে পাড়েই রেখে নামতাম। কেউ তো আর আসবে না। তারপরেও তুমি যখন যাচ্ছোই তখন নিয়ে যাও।"
-"হ্যা, দিন।"
মোবাইল ওয়ালেট পকেট থেকে বের করে দিল। ওগুলো নিয়ে তিতির হাটা ধরলো। মুগ্ধ বলল,
-"দাড়াও দাড়াও.."
মুগ্ধ পকেটে কি যেন খুঁজছে। তারপর তিতির দেখলো মুগ্ধ কতগুলো ভেজা টাকা বের করলো। তিতির বলল,
-"রেমাক্রি ফলসে নামার সময় আপনি না মোবাইল ওয়ালেট সব মংখাই এর কাছে রেখে গিয়েছিলেন? তাহলে এগুলো ভিজলো কি করে?"
-"হ্যা, কিন্তু এই টাকাগুলো পকেটে ছিল খেয়াল করিনি।"
-"ও। ইশ কিভাবে আপনাকে ফেলে দিয়েছিলাম! ব্যাথা পেয়েছিলেন?"
মুগ্ধ হেসে বলল,
-"নাহ, তুমি যাও। এ বিষয়ে পরে কথা হবে।"
তিতির চলে গেল। ঘরে ঢুকে দরজায় খিল দিয়ে ভাবলো, 'এ যে মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি!' এবার নিশ্চিন্তে "প্যারা" মেয়েটার মেসেজ পড়া যাবে। কত বড় সাহস মেয়েটার! মুগ্ধকে ওসব মেসেজ পাঠায়!
তিতির যত দ্রুত সম্ভব গা মুছে চেঞ্জ করে নিল। তারপর মেসেজ পড়া শুরু করলো। যেখানে রেখেছিল সেখান থেকেই শুরু করলো,
Mugdho: Biye to 100 miles dure.. tor moto behayar loge ami sex o korina.
Pera: Meyeder ke ektu to respect korbi mugdho!
Mugdho: Nijer somman nijeke dhore rakhte hoy. tui rakhte parish nai. prostitute der respect kori kintu toke na. cz ora nijer shorir sell kore r tui free te bilash.
Pera: Cox's Bazar er ghotonar jonno I'm really sry.. Shotti amr matha thik chilo na. Maf kore de na, jibon thakte ei dhoroner kono kaj r ami korbo na.
তিতির বসে পড়লো! মুগ্ধ এই মেয়েটাকে নিয়ে কক্সবাজার গেছে! এই মেয়েটা কি ওর কোনো এক্স? কষ্ট হচ্ছিল! কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছিল তিতিরের। ফোনটা বিছানার উপর ছুড়ে ফেলল তিতির। কয়েক সেকেন্ড পর মনে হলো বাংলা সিনেমার মত অর্ধেক টা পড়ে রিয়াক্ট করাটা কি ঠিক হবে? না পুরোটাই পড়বে তিতির। হয়তো ও যা ভাবছে তেমন কিছুনা। আবার ফোনটা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলো,
Mugdho: Campus er je tour e tui jabi oi tour e ami r jibon thakte jabo na..
Pera: Ami shotti toke valobashi re.. amr ekta second jayna toke na vebe!
Mugdho: Allah'r waste r msg dish na. onk koshte etokkhon natha thanda rakhsi. r partesi na.
Pera: Msg dibo na to ki korbo? Etobar call dilam ekbar to dhorli na!
এরপর মুগ্ধ কোন রিপ্লাই দেয়নি। বোধহয় ফোন করেছিল কারন অনেক্ষণ পর মেয়েটাই আবার আরেকটা মেসেজ দিয়েছিল,
Pera: Tui etota kharap bhv korbi vabte parini.
আর কোনো মেসেজ নেই। তিতিরের আনন্দে নাচতে ইচ্ছে করছিল। আহ আহ কি শান্তি!
চারপাশ পুরোপুরি অন্ধকার হয়ে গেল। বারান্দায় একটা বাল্ব জ্বালানো ছিল। মুগ্ধ কটেজের বারান্দায় বসে লাল রঙের ছোট ছোট কিছু খাচ্ছিল। লোকমান আর মংখাই বাজারে গেছিল। দরজা খোলার শব্দে মুগ্ধ তাকাতেই দেখতে পেল ভেজা কাপড় হাতে বেড়িয়ে এল তিতির। ওর পড়নে সাদা লং স্কার্ট আর নীল টপস। বাল্বের হালকা আলোয় মুগ্ধ দেখছিল তিতিরকে। এই রঙ দুটো বেশ মানিয়েছে তিতিরকে। বারান্দার একপাশে দড়ি টানানো ছিল। সেটাতে ভেজা কাপড় মেলার জন্য হাত উঠাতেই টপস টা উঠে গেল, আর তাতে কয়েক সেকেন্ডের জন্য ওর নাভি দেখা গেল। সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিল মুগ্ধ। ওর সারা শরীরে যেন ইলেক্ট্রিক শক লাগলো! কক্সবাজার ট্যুরে ইকরা যখন ওকে ইমপ্রেস করার জন্য ওর সামনে এসে কাপড় খুলে ফেলেছিল তখনও তো এরকম কোনো ফিলিং হয়নি। তিতির অবশ্য সুন্দরী কিন্তু ইকরাও তো তিতিরের চেয়ে কোনো অংশে কম ছিলনা। তবু তো ইকরার সৌন্দর্য ওকে টানেনি উল্টো অনীহা এসেছিল। তাহলে এখন ওর এরকম কেন লাগছে। অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো ভালবাসা কি সত্যিই হয়ে গেল!
হঠাৎ ঘোর কাটলো সেই মিষ্টি স্বরে,
-"বসবো?"
-"হ্যা হ্যা বোসো।"
তিতির মুগ্ধর উল্টোপাশে মুগ্ধর দিকে ফিরে বসলো। মুগ্ধ তিরিরের দিকে না তাকিয়েই বলল,
-"খাবে?"
-"কি এগুলো?"
-"ডুমুর! পাহাডী ডুমুর, একদম পাকা। খেয়ে দেখো অনেক মজা।"
তিতির একটা ডুমুর হাতে নিয়ে বলল,
-"এটা কিভাবে খায়?"
মুগ্ধ দেখিয়ে দিল প্রথমে ডুমুরকে দুহাতের আঙুল দিয়ে টেনে দুভাগ করতে হয়। তারপর একেকটা ভাগ উল্টে চুষে চুষে খেতে হয়। তারপর তিতির ডুমুর নিয়ে খাওয়া শুরু করলো। তিতিরের দিকে চোখ পড়তেই মুগ্ধ আর চোখ ফেরাতে পারছিল না। তিতির বোধহয় ভাল করে চুল মুছতে পারেনা। তাই গোসলের পর ওর চুল থেকে টপটপ করে ফোটা ফোটা পানি পড়তে থাকে। তখনও তাই হচ্ছিল। তিতিরের বড় বড় চোখগুলো ছিল ডুমুরের দিকে। আর ওর আলতো আলতো গোলাপি ঠোঁট দিয়ে চুষে চুষে খাচ্ছিল সেই ডুমুর! সেই পরিবেশে সেই দৃশ্য যে কতটা ভয়ঙ্কর, মারাত্মক আর নেশাতুর হতে পারে তা যে না দেখেছে সে কোনদিনও বুঝবে না।
নাহ এটেনশন অন্যদিকে নিতে হবে! কিন্তু সেটা কি করে সম্ভব? তার চেয়ে অন্তত এই ডুমুর খাওয়াটা বন্ধ করা যাক। মুগ্ধ বলল,
-"বেশি খেয়োনা। পেট ব্যাথা করতে পারে।"
-"উম্মম্মম্মম্ম! অস্থির ফল একটা। এত মজা কেন? পেটে ব্যাথা হলে হবে। তাও আমি খাবো!"
-"নাহ। ঢাকা যাওয়ার সময় কিনে দিব। বাসায় গিয়ে খেয়ো।"
ঝুড়িটা সড়িয়ে রাখলো মুগ্ধ। তারপর বলল,
-"কদিন আমাকে অনেক জ্বালিয়েছো। এবার একটু সেবা করো তো।"
-"সেবা! কি সেবা?"
-"আমার পিঠে খুব জ্বলছে। বোধহয় ছিলে টিলে গেছে, একটু স্যাভলন লাগিয়ে দাও। মংখাই কে দিয়ে লাগাবো ভেবেছিলাম। কিন্তু সেই যে বাজারে পাঠালাম আর তো খবর নেই।"
-"আমি লাগিয়ে দিচ্ছি। কোনো প্রব্লেম নেই।"
-"আচ্ছা, বোসো আমি স্যাভলন ক্রিমটা নিয়ে আসছি।"
তিতির এক লাফে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
-"আপনি চুপ করে বসুন। আমি নিয়ে আসছি। স্যাভলন আমার কাছেও আছে।"
তারপর চলে গেল ওর ঘরে। জীবনেও এটুকুতে স্যাভলন লাগায়নি মুগ্ধ। কিন্তু আজ লাগাতে চাইছে। ব্যাথা কমানোর জন্য না। তিতিরের একটু স্পর্শ পাওয়ার জন্য!
তিতির স্যাভলন এর সাথে মুগ্ধর ফোন আর ওয়ালেটও নিয়ে আসলো। বলল,
-"এই নিন ফোন আর ওয়ালেট! ভেজা টাকাগুলো টেবিলের উপর শুকোতে দিয়েছি।"
মুগ্ধ ওগুলো নিল তিতিরের হাত থেকে। তিতির ওর পাশে বসে বলল,
-"ওদিকে ঘুরুন আর শার্টটা খুলুন।"
মুগ্ধ শার্টটা খুলে ঘুরে বসতেই তিতির ওর পিঠে হাত রেখে আঁৎকে উঠলো,
-"ওমাগো! পুরো পিঠ ছিলে গেছে! লাল হয়ে গেছে। ইশ এটা রেমাক্রি ফলসে আমার ওই বোকামির জন্য হয়েছে না?"
-"সুন্দরীর হাতের ছোঁয়া দেখছি স্যাভলনের চেয়েও বেশি কাজে দিচ্ছে! হাতটা সরিওনা কিন্তু।"
একথাটা মুগ্ধ শুধু মজা করে বলেনি। মন থেকে বলেছে। তিতির ফাজলামো ভেবে ওর পিঠে আলতো করে স্যাভলন লাগাতে লাগাতে বলল,
-"আপনি পারেনও।"
স্যাভলন লাগানো শেষ হতেই মুগ্ধ আবার ঘুরে বসলো। আর সাথে সাথে দেখতে পেল রিতিরের বাহুতে আর ঘাড়েও ছিলে গেছে। মুগ্ধ বলল,
-"এই পাক্নি! তোমার ঘাড়ে আর হাতেরও তো একই অবস্থা!"
-"তাই নাকি? এজন্যই বোধহয় জ্বলছিল গোসলের সময়!"
-"ওখানে স্যাভলন লাগাও।"
তিতির বাহুর ক্ষততে নিজেই স্যাভলন ক্রিম লাগালো। তারপর স্যাভলনের টিউবটা মুগ্ধর দিকে এগিয়ে দিয়ে হেসে বলল,
-"নিন এবার আপনি একটু সেবা করুন।"
মুগ্ধ ওটা তিতিরের হাত থেকে নিতেই তিতির সব চুলগুলোকে ভাল করে সরিয়ে নিল একপাশে। তারপর ক্ষতর সাইডটা মুগ্ধর দিকে ধরলো। মেয়েটা কি পাগল! এমনটা কেউ করে? ও কি জানে মুগ্ধর ইচ্ছে করছিল ওই ভেজা চুল সরানো ঘাড়ে একটা গাঢ় চুমু খেতে! কিন্তু মুগ্ধর বিবেক খুব সহজেই সে লোভ সংবরন করলো। অঙুলের মাথায় স্যাভলন নিয়ে তা তিতিরের ঘাড়ে লাগিয়ে দিল। তিতির আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলল। কালও তো ভয় পেয়ে জড়িয়ে ধরেছিল মুগ্ধকে। কিন্তু তখন তো এমন অনুভূতি হয়নি! খুব স্বাভাবিক লেগেছিল তিতিরের। আর আজ এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে কি অমূল্য সম্পদ যেন পেল। মনে মনে বলল, 'কোন পুরুষের স্পর্শ আমি আজও লাগতে দিইনি আমার শরীরে। আপনিই প্রথম। আমি জানতাম আপনার স্পর্শ এতটাই মধুর হবে। আমি এ স্পর্শ সারাজীবনের জন্য চাই। ভাগ্যিস ঘাড়ে আঘাতটা পেয়েছিলাম।'
এর মধ্যেই মংখাই আর লোকমান চলে এলো। মংখাই বলল,
-"দাদা, হাঁস খুঁজতে খুঁজতে দেরী হয়ে গেল।"
কথা শেষ করে তিতরের দিকে তাকিয়েই মংখাই চমকে উঠলো,
-"আপু না কালা ছিলো?"
তিতির হেসে দিল। মুগ্ধও হেসে বলল,
-"ওইটা ছিল, প্রোটেকশন! বেশী রূপবতী মেয়েদের নিয়ে এই হলো প্রব্লেম। বুজলে মংখাই?"
-"জ্বী দাদা, বুজছি।"
তিতির লজ্জায় কি বলবে বুঝতে পারছিলনা। কথা ঘুড়িয়ে বলল,
-"আচ্ছা হাঁস কেন আনালেন?"
-"বার-বি-কিউ করবো। কাল মিস করেছিলাম মনে নেই?"
-"আপনার এত এনার্জি? এখন রান্না করবেন? কেন রেমাক্রি বাজারে না দেখলাম কত দোকান? ওখান থেকে কি খাওয়া যেত না?"
-"হ্যা, আমার এনার্জি একটু বেশি।"
গেস্ট হাউজের পাশেই আগুন জ্বালিয়ে বার-বি-কিউ এর ব্যবস্থা করেছে ওরা। হাঁস বার-বি-কিউ করতে করতে মুগ্ধ বলল,
-"এনার্জি কিন্তু তোমারও কোনো অংশে নেহাৎ কম না। এতদূর এসে পড়লে এখনো তোমার চেহারায় টায়ার্ডের ছাপ পড়েনি। এখনো কতটা প্রানোচ্ছল! ম্যাক্সিমাম মেয়েরা এই পর্যন্ত এসে হাল ছেড়ে দেয় আর মাফাখুম যাবেনা।"
তিতির হাসলো শুধু কিছু বলল না।
হাঁস বার-বি-কিউ টা এত টেস্টি হয়েছে! তিতির কখনো এত মজার বার-বি-কিউ খায়নি! খাওয়ার পর পরই সবাই শুয়ে পড়েছে।
মুগ্ধর ঘুম পাচ্ছিলনা। বার বার তিতিরের সেই ভেজা চুলের মুখটা ভেসে উঠছিল চোখের পাতায়। কি অদ্ভুত! কখনো কোনো মেয়ের জন্য তো ও এতকিছু করেনি। কখনো কোনো মেয়ের জন্য এতটা ফিলও করেনি ও। পাশের রুমেই আছে অথচ ওর জন্য কি অস্থিরতা! বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে রাখলে হয়তো এ অস্থিরতা কমবে। ও কি তিতিরকে প্রোপোজ করবে নাকি আরেকটু টাইম নেবে! মাত্র দুদিনের পরিচয়ে এতো সিরয়াস একটা ডিসিশান নিয়ে নেবে! আগের সম্পর্কগুলোর মত কোনো ভুল সম্পর্কে আর জড়াতে চায়না ও। কারন এখন আর সময় নেই, মা ইমিডিয়েটলি ওর বিয়ে দিতে চান?
পাশের ঘরে কুম্ভকর্ণ তিতিরেরও কিনা ঘুম পাচ্ছিল না! ও খালি কাল থেকে মুগ্ধর সাথে কাটানো সময়গুলোর কথা ভাবছিল। ইশ কাল রাতে এমন সময় ও আর মুগ্ধ পাশাপাশি শুয়ে ছিল। আর আজ দুজন পুরো দুঘরে! এটা কোনো কথা হলো! আচ্ছা ও কি করবে? ও কি মুগ্ধকে বলবে ওর ভালবাসার কথা? নাকি মুগ্ধর বলার জন্য অপেক্ষা করবে? মুগ্ধর ভেতর যদি ভালবাসা না জাগে মুগ্ধ কেন বলবে! ফোনের ওই প্যারা মেয়েটা প্রোপোজ করেছিল বলেই তো মুগ্ধ ওর উপর বিরক্ত। বেহায়া ভাবে। ও ভালবাসার কথা বললে যদি ওকেও বেহায়া ভাবে! ঘরের ভেতর পায়চারী করছিল। হঠাৎ দরজায় টোকা পড়লো। প্রায় সাথে সাথেই মুগ্ধর গলা,
-"এই তিতির?"
তিতির দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলল। বলল,
-"কিছু বলবেন?"
-"ঘুমাওনি দেখলাম। মানে পায়ের আওয়াজ পেলাম। আমারও ঘুম আসছেনা। তোমার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে একটু বারান্দায় বসি?"
-"গান শোনাবেন?"
-"সিওর!"
তিতির বারান্দায় এসে বসলো। মুগ্ধ বলল,
-"দেখেছো পাহাড়ের পূর্নিমা কত অসাধারণ!"
-"হ্যা এত সুন্দর পূর্নিমা আমি আগে কখনো দেখিনি। কাল তো জঙ্গলে এত ভাল দেখাও যায়নি। তাছাড়া এই পুরো যায়গাটাই অসাধারণ। বান্দরবান আসার পর থেকে যতগুলো যায়গায় গিয়েছি তার মধ্যে এটা বেস্ট।"
মুগ্ধ হেসে বলল,
-"আর নিলগিরি?"
-"দুটোর তুলনা চলেনা। দুটোই দুটোর মত সুন্দর।"
-"এখানে আসতে আসতে তো প্রায় অন্ধকার হয়ে গেছিল। আসল সৌন্দর্য দেখতে আলো লাগবে। কাল সকালে দেখো, তখন বুঝবে কি সুন্দর যায়গা!"
-"তা নাহয় দেখবো কিন্তু এখন গান শুনতে চাচ্ছি। মনটা আকুপাকু করছে গানের জন্য।"
মুগ্ধ তিতিরের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে গান ধরলো...
"আবার এলোযে সন্ধ্যা, শুধু দুজনে।
চলোনা ঘুরে আসি অজানাতে
যেখানে নদী এসে থেমে গেছে...
ঝাউবনে হাওয়াগুলো খেলছে,
সাঁওতালি মেয়েগুলো চলছে।
লাল লাল শাড়ী গুলো উড়ছে,
তার সাথে মন মোর দুলছে।
ওই দূর আকাশের প্রান্তে,
সাতরঙা মেঘগুলো উড়ছে।
এই বুঝি বয়ে গেল সন্ধ্যা,
ভেবে যায় কি জানি কি মনটা!
পাখিগুলো নীড়ে ফিরে চলছে,
গানে গানে কি যে কথা বলছে!
ভাবি শুধু এখানেই থাকবো,
ফিরে যেতে মন নাহি চাইছে!
আবার এলোযে সন্ধ্যা, শুধু দুজনে।
চলোনা ঘুরে আসি অজানাতে
যেখানে নদী এসে থেমে গেছে...।"
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।