অবেলার অভিলাষ - পর্ব ০৩ - শারমিন আক্তার সাথী - ধারাবাহিক গল্প


ছে‌লেটার দি‌কে তা‌কি‌য়ে আয়াত ভাব‌ছে এটা‌ তো তনয়ার দাদাভাই নয় কারন তনয়া অফি‌সে জ‌য়েন করার প‌রের দিন ওর দাদাভাই আমা‌দের অফি‌সে এসে আমার সা‌থে দেখা ক‌রে গে‌ছে। তাহ‌লে ছে‌লেটা কে? ছে‌লেটা‌কে দেখ‌লে তনয়ার বয়‌সি ম‌নে হয়। বন্ধু নয়‌তো? কিন্তু বন্ধু হ‌লে কেউ এভা‌বে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে! 

আয়াত নি‌জে‌কে নি‌জে বল‌ছে এত কিছু না ভে‌বে সরাস‌রি তনয়া জি‌জ্ঞেস কর‌লেই তো পা‌রি? আয়াত তনয়ার দি‌কে তা‌কি‌য়ে দে‌খে ছে‌লেটা তনয়ার কপা‌লে চুমো দি‌য়ে গা‌লে হাত দি‌য়ে কি যে‌নো বল‌ছে?

আয়া‌তের কেন জা‌নি প্রচন্ড রাগ হ‌চ্ছে।‌ ও তনয়ার কা‌ছে গি‌য়ে দাড়া‌লো। তনয়া আয়াত‌কে দে‌খে বলল,

__স্যার ও আমার ভাই তানভী। আর তানভী এনি আমার অফি‌সের বস আয়াত স্যার।

তানভী আয়া‌তের দি‌কে হাত বা‌ড়িয়ে বল‌ল,
__হ্যা‌লো! নাইস টু মিট ইউ ভাইয়া।

__আয়‌াত বলল, নাইস টু মিট ইউ টু। কিন্তু তনয়া এনি তোমার বড় ভাই না‌কি ছোট?

__তনয়া বলল, স্যার ও আমার বড় ভাই।

__তানভী বলল, মিথ্যা কেন বল‌ছিস! তুই বড় আমি ছোট।

__তনয়া বলল, তুই বড় আমি ছোট।

__আয়াত বলল, হেই ওয়েট ওয়েট! তোমা‌দের দুজন‌কেই সমবয়‌সি লাগ‌ছে। তোমরা কি কা‌জিন না‌কি!

__তনয়া বলল, না স্যার। একদম এক মা‌য়ের পে‌টের র‌ক্তের ভাই‌বোন। ওকে আমি মা‌য়ের পেট থে‌কে জা‌নি। এক নাম্বা‌রের বাদর। মা বল‌ছে ও আমার থে‌কে আঠা‌রো মি‌নি‌টের বড়।

__তানভী বলল, ঐ চু‌ন্নি মা বল‌ছে তুই বড়।

__আয়াত বলল, প্লিজ তোমরা দুজন চুপ ক‌রো। এখন ব‌লো তোমরা কি জমজ?

__তনয়া বল‌ল, হ্যাঁ স্যার। কিন্তু ও সবার সাম‌নে ছোট হবার জন্য আমাকে আপু ডা‌কে।

__তানভী বলল তো বড় বোন‌কে বড় আপু ডাকব না কি ডাকব!

দু ভাই বোন রাস্তায় ব‌সেই বড় ছোট নি‌য়ে ঝগরা কর‌ছে। আয়াত নি‌জে‌কে নি‌জে বল‌ছে,

__ছি আয়াত, ‌কি নিচু মানু‌সিকতার প‌রিচয় দি‌লি! কোন কিছু না জে‌নেই তনয়া‌কে স‌ন্দেহ কর‌লি। আমার দে‌শের বা‌হি‌রের যে, সব বন্ধু আছে তারা ঠিক ব‌লে বাংলা‌দে‌শের মানু‌ষের মেন্টা‌লি‌টি চিপ। এরা ভাই‌-বোনকে একসা‌থে হে‌ঁটে যে‌তে দেখ‌লেও নোংড়া স‌ন্দেহ ক‌রে। 

আস‌লেই আমা‌দের মানু‌সিকতা খুব নিচু। কারন আমারা দ‌ুজন ছে‌লে মে‌য়ে‌কে এক সা‌থে হেঁ‌টে যে‌তে দেখ‌লেই তা‌দের নি‌য়ে বা‌জে মন্তব্য ভাবা শুরু ক‌রি। হ‌তে পা‌রে তারা ভাই বোন, বাবা মে, চাচা ভা‌তি‌জি, মামা ভা‌গ্নি বা অন্য কোন সুন্দর সম্পর্ক তা‌দের ভিতর থাক‌তে পা‌রে। কিন্তু না আমা‌রা ‌নে‌গি‌টিভ ভাব‌তে ভাব‌তে, নি‌জে‌দের মান‌ু‌সিকতাই নে‌গি‌টিভ ক‌রে ফেল‌ছি। ছি।

তনয়ার কথায় ধ্যান ভাঙ‌লো আয়া‌তের। তনয়া বলল,
__স্যার আপনার কষ্ট ক‌রে আমা‌কে ড্রপ কর‌তে হ‌বেনা। আমাকে তানভী ড্রাপ ক‌রে দি‌বে। ধন্যবাদ স্যার। 

__আয়াত বলল, আরে তানভী প্রথমবার তোমার অফি‌সে আস‌লো ওকে কিছু না খাই‌য়ে নি‌য়ে যা‌বে। চ‌লো সাম‌নের ক্যা‌ফে‌টো‌রিয়া‌তে চ‌লো।

__তানভী বলল, আরে না না ভাইয়া। কিছু খা‌বো না। প‌রে আস‌বো।

__তা তনয়া তু‌মি তো কখ‌নো তানভী এর কথা বলনি? তোমার দাদাভাই বা মে‌জো ভাই‌য়ের কথা বল‌ছো। বাট ওর কথা ব‌লোনি বা তানভীও কখ‌নো তোমার সা‌থে দেখা কর‌তে আসে‌নি।

__তানভী বলল, আমি বল‌ছি ভাইয়া। আস‌লে তনয়ার বি‌য়ে ভাঙার প‌রের দিন আমা‌কে আমার ক‌লে‌জে পরীক্ষা দি‌তে যাওয়া লাগ‌ছি‌লো। আস‌লে আমি হো‌স্টেলে থে‌কে পড়াশুনা ক‌রি। পরীক্ষার মা‌ঝের ব‌ন্ধে ও বি‌য়ে‌তে আসি। বি‌য়ে ভাঙার প‌রের‌ দিন চ‌লে যাই। আজ সকা‌লে বা‌ড়ি ফিরলাম। তনয়া‌কে ছাড়া আমার বা‌ড়ি একদম ভা‌লো লা‌গেনা। রোজ ফো‌নে কথা হয় কিন্তু তবুও এই বাদর মেয়েটা যে, আমার ক‌লিজা। আস‌লে মা‌য়ের পেট থে‌কে দুজনের খুনসু‌টি চল‌ছে, তাই ওকে না দে‌খে থাক‌তে খুব কষ্ট হয়। এখন তো ওর বাসায় যা‌বো আর ও আমা‌কে রে‌ঁধে নিজ হা‌তে খাওয়া‌বে। ধন্যবাদ স্যার। ওকে জবটা দেয়ার জন্য। 

আ‌মিও হো‌স্টে‌লে আর থাকবো না। পরীক্ষা শেষ, BSC এ ভ‌র্তি হবার জন্য তনয়ার বাসার কা‌ছেই বাসা নি‌বো। তখন দু ভাই‌বোন মি‌লে থাক‌বো। এর ম‌ধ্যে বাবা য‌দি তনয়া‌কে মাফ ক‌রে দেয় ত‌বে বা‌ড়ি থাক‌বো। এম‌নি‌তেও এবার বাবা বাইক কি‌নে দি‌ছে, এখন বা‌ড়ি থে‌কে ক্লাস কর‌তে প্রব‌লেম হ‌বেনা। কিন্তু আমি তনয়া‌কে একা ছাড়ার রিক্স নি‌তে চাইনা। বোন তো, তারপর আজকাল শহ‌রের যে অবস্থা। 

__তনয়া বলল, এত বড় বড় ভাব ক‌রিস না। আমি নি‌জে‌কে সামলা‌তে জা‌নি।

__তানভী বলল, হ্যাঁ সে জন্যই তো পালা‌নোর সময় আমার তো‌কে হেল্প করা লাগ‌ছে।

আয়াত চোখ বড় বড় ক‌রে বলল, কী তু‌মি তনয়া‌কে পালা‌তে হেল্প কর‌ছো?

__তানভী বলল, হা হা হা। জি ভাইয়া। আস‌লে তনয়া যখন বল‌ছি‌ল ছে‌লেটা‌কে ওর পছন্দ না তখনই আমি বল‌ছি বি‌য়ে ভে‌ঙে দে। কিন্তু বাবা ওর কথা শো‌নে‌নি। তাই বি‌য়ের দিন আমি ওকে পালা‌নোর ব্যবস্থা ক‌রে দি। ঐ রিসাদ হারাজাদা‌কে তো আমি ছাড়‌বো না, ও প্যা‌ন্টের ভিতর ইদুর ছে‌ড়ে দি‌বো। হারামজাদা আমার বোন‌কে নোংড়া কথা বল‌ছে। আচ্ছা ভাইয়া অ‌নেক কথা বললাম। চ‌লি এখন। বাই ।

__আয়াত: বাই

__তনয়া বলল, বাই স্যার ভা‌লো থাক‌বেন। কাল দেখা হ‌বে।

তানভী বাইকে ক‌রে তনয়া‌কে নি‌য়ে যা‌চ্ছে‌। আয়াত কতক্ষন তা‌কি‌য়ে থে‌কে বলল, ওরা যে ভাই বোন তা‌তে স‌ন্দেহ নেই। কারন দুজ‌নের স্বভাব এক। দুজ‌নেই ম‌নের কথা হরহর করে ব‌লে দেয়। স‌ত্যি ভাই বো‌নের সম্পর্ক সব‌চে‌য়ে মধুর সম্পর্ক। আরে আমারও তো ভাই বোন দু‌টোই আছে। যাই মেঘার জন্য কিছু কি‌নে নি‌য়ে বা‌ড়ি যা‌ই।

০৮!!

    তানভী তনয়া দুজন র‌শ্মির ফ্ল্যা‌টে গি‌য়ে এক সা‌থে রান্না কর‌লো সা‌থে দুজনার খুনশু‌টি‌ তো আছেই। তনয়ার শরীরটা ভা‌লো লাগ‌ছেনা। সেটা বুঝ‌তে পে‌রে বে‌শির ভাগ কাজ তানভী কর‌ছে। তনয়া ব‌সে ব‌সে চেয়া‌রে ঝিমু‌চ্ছে। ত‌ানভী তনয়ার দি‌কে তা‌কি‌য়ে ভাব‌লো তিন ভাই‌য়ের একটা বোন। বাবার বিশাল সম্প‌ত্তি। তার থাকা উচিৎ রাজকন্যার মত অথচ আজ তা‌কে চাক‌রি ক‌রে, আবার বাসায় এসে রান্না খে‌তে হ‌‌চ্ছে।
তার ভিতর তনয়ার থাইর‌য়ে‌ডের প্রব‌লেমটার কার‌নে মা‌ঝে মা‌ঝেই ওর শরীর খুব খারাপ হয়। তখন তো হাঁটা চলা কর‌তেও প্রব‌লেম হয়। এত কিছু কি করে সামলা‌বে ও? সব দোষ বাবার! সবসময় একঘে‌য়ে‌মি করা তার অভ্যা‌সে প‌রিনত হ‌য়ে‌ছে। ছোট বেলা থে‌কে নি‌জের মতামত গু‌লো মা‌য়ের উপর চা‌পি‌য়ে দি‌তো। এখন আমা‌দের উপর। 

এই আমিই ডাক্তা‌রি পড়‌তে চে‌য়ে‌ছিলাম কিন্তু বাবা ইঞ্জি‌নিয়া‌রিং এ জোড় ক‌রে ভ‌র্তি ক‌রে দি‌লো। ডি‌প্লোমার ফাইনাল ইয়া‌রের ফাইনাল পরীক্ষা কেবল দিলাম। এখ‌নো তিন বছর BSC কর‌বো তারপর পরিপূর্ণ ইঞ্জি‌নিয়ার হ‌বো। নি‌জের অপছন্দের কাজ করা‌ যে কতটা কষ্টকর তা কেবল সেই জা‌নে যে ক‌রে। কিন্তু বাবা‌কে এগু‌লো কে বোঝা‌বে! সবসময় নিজের দম্ভ নি‌য়ে থাক‌বে। তার ম‌তে সে যা বো‌ঝে সেটাই স‌ঠিক বা‌কি দু‌নিয়া কিছু বো‌ঝেনা।

দাদাভাই‌কে জোড় ক‌রে লা‌বিবা ভা‌বির সা‌থে বি‌য়ে দি‌য়ে তা‌দের দুজনার জীবনই প্রায় দুঃ‌খে ভ‌রে দি‌ছে। মেজ দাদাভাই‌কে নি‌জের মত ক‌রে নি‌লো, আমা‌কে নি‌জের মনমত পড়‌তে দি‌লো না, তাও আমরা প্র‌তিবাদ ক‌রি‌নি। কিন্তু তনয়া‌কে তো বি‌য়ে দি‌তে চে‌য়ে‌ছি‌লো। তাও রিসা‌দের মত জা‌নোয়ারটা সা‌থে। কেন বি‌য়ে দি‌তে চে‌য়ে‌ছি‌লো? কারন রিসা‌দের বাবা তার ছোট বেলার বন্ধু। বন্ধু মাই ফুড। নি‌জের মে‌য়ের সুন্দর ভ‌বিষ্য‌তের চে‌য়ে বন্ধত্ব বড় হ‌লো না‌কি? বি‌য়েটা হ‌লে আমাদের ক‌লিজা বোনটার জীবনটা শেষ হ‌য়ে যে‌তো।

হ্যাঁ পা‌লি‌য়ে যাওয়ায় হয়ত ওর বদনাম হ‌য়ে‌ছে কিন্তু সেটা ক‌দিন পর মানুষ ভু‌লে যা‌বে। কিন্তু পা‌লি‌য়ে না গে‌লে আমার বোনটার জীবনটা শেষ হ‌য়ে যে‌তো। বাবা আমা‌দের ইচ্ছা দাম দেয়‌নি তবুও চুপ ছিলাম কিন্তু তনয়ার সা‌থে আমাদের মত কিছু কর‌তে চাই‌লে আমরা চুপ থাক‌বো না। আমার বোন আমা‌দের পৃ‌থিবী। 

এসব সাত পাঁচ ভাব‌তে ভাব‌তে তানভী নুডুলস বা‌নি‌য়ে ফেল‌লো। তনয়ার সাম‌নে নি‌য়ে গি‌য়ে বলল,
__‌নে খে‌য়ে নে।

__না‌রে খে‌তে ইচ্ছা কর‌ছেনা। মাথাটা ঘোরা‌চ্ছে।

__‌দেখ তোর মনমত বা‌নি‌য়ে‌ছি। ঝাল বে‌শি দি‌য়ে‌ছি। আচ্ছা আমি খাই‌য়ে দি‌চ্ছি। তনয়া তানভী এর কা‌ঁধে মাথা এ‌লি‌য়ে দি‌য়ে বলল, 

__ভাই মা‌কে খুব দেখ‌তে ইচ্ছা কর‌ছে। 

__তানভী তনয়ার মাথায় হাত বু‌লি‌য়ে দি‌তে দি‌তে বলল, ঠিক আছে দু এক দি‌নে মা‌কে বু‌ঝি‌য়ে তোর সা‌থে দেখা ক‌রি‌য়ে নি‌য়ে যা‌বো। তনয়া তানভীর কথায় ভরসা পে‌লো। কারন তানভী শুধু ওর জমজ ভাইনা ওর সব থে‌কে কা‌ছের বন্ধু।

__ভাই বাবা‌ কি আমায় মাফ কর‌বে?

__‌কেন কর‌বেনা? অবশ্যই কর‌বে। এখন হা কর‌তো। বোন কদি‌নে তুই খুব শু‌কি‌য়ে গে‌ছিস, কা‌লোও হ‌য়ে গে‌ছিস। খুব প‌রিশ্রম যা‌চ্ছে না‌রে বোন। 

__একটু।

__আমা‌দের তিন ভাই‌য়ের ক‌লিজা পরীটার এমন অবস্থা দে‌খে আমা‌দের কেমন লাগ‌ছে বুঝ‌তে পার‌ছিস?

__বাদ দে তো ভাই। দে খাই‌য়ে দে। 

দু ভাই বোন খে‌য়ে বিছানায় ব‌সে র্কাটুন দেখ‌ছে আর গ‌ল্পের ঝু‌ড়ি খু‌লে বস‌ছে। তখন র‌শ্মি আস‌লো। র‌শ্মি‌কে দে‌খে তানভী বলল,
__হাই মে‌জো ভা‌বি! কেমন আছো?

__তানভী তুইও তনয়ার সা‌থে যোগ দি‌লি?

__‌তো কি কর‌বো ভা‌বি। যান ফ্রেস হ‌য়ে আসেন, দেব‌রের সা‌থে গল্প কর‌বেন। 

__চুপ বাদর। 

রা‌তে খে‌য়ে তানভী বা‌ড়ি চ‌লে গে‌লো। নয়‌তো বাবা রাগ কর‌বে। তানভী যে‌তেই তনয়া কাল আয়া‌তের সা‌থে ডাক্তার কা‌ছে যা‌বে সেটা বলল, র‌শ্মি তনয়া‌কে বলল, 

__তনয়া একটা কথা জি‌জ্ঞেস ক‌রি?

__হ্যাঁ বল?

__আয়াত স্যা‌রের সা‌থে তোর প‌রিচয় মাত্র প‌নে‌রো কি বিশ দি‌নের অথচ তোর ম‌নে হয়না তুই তা‌কে একটু বে‌শিই বিশ্বাস ক‌রিস। এত অল্প‌দি‌নে কাউ‌কে একটা ভরশা করা কি ঠিক?

__‌তো‌কে কে বলল আয়াত স্যার‌কে আমি বিশ দিন যাবত চি‌নি? হ্যাঁ হয়‌তো আয়াত স্যার আমায় বিশ দিন যাবত চি‌নে ‌কিন্তু আ‌মি আয়াত স্যার‌কে তিন মাস আগে থে‌কে চি‌নি। আর তা‌কে অনেক বে‌শি বিশ্বাস করি।

__‌কী? কিন্তু কিভা‌বে?

__সে অনেক লম্বা ঘটনা। প‌রে কখ‌নো বল‌বো?

র‌শ্মি ম‌নে ম‌নে ভাব‌ছে, তার মা‌নে এরা দুজন দুজ‌নকে অনেক আগে থে‌কে চি‌নে। কিন্তু কিভা‌বে? আর মজার বিষয় হ‌লো ওরা দুজনেই জা‌নেনা দুজন দুজনার অনেক আগের চেনা। হি হি। দুজ‌নের একজনও কারন বল‌ছে না। দু‌টোই পা‌জির বাসা।

০৯!!

    রা‌তের খাবার খে‌য়ে আয়াত ব্যালক‌নি‌তে দা‌ড়ি‌য়ে ভাব‌ছে তনয়া‌কে প্রথম দেখার কথা।

—————

       নাহ্ তনয়ার সা‌থে প্রথম তো দূ‌রের কথা,  আয়া‌তের সামনা সাম‌নি কখ‌নো দেখাই হয়‌নি। শুধু চো‌খের দেখা দে‌খে‌ছি‌লো একবার তনয়া‌কে, তাও তনয়ার ছ‌বি দেখার অনেক প‌রে। আয়া‌তের বোন মেঘাকে খুব বড় বিপ‌দের হাত থে‌কে বাঁ‌চি‌য়ে‌ছি‌লো তনয়া। মেঘা আয়া‌তের ছোট বোন, বয়স ১৮ বছর। এবার অনার্স প্রথম ব‌র্ষে ভ‌র্তি হল কেবল।

আয়াত বরাবরই সাহ‌সী আর আত্ম‌বিশ্বাসী মে‌য়ে‌দের পছন্দ ক‌রে। ওর ম‌তে মে‌য়েরা ছে‌লে‌দের থে‌কে কোন অং‌শে কম নয়। প্র‌তিটা মেয়ের উচিৎ স্বাবলম্বী  আত্ম‌বিশ্বা‌সী, আর সাহসী হওয়া। হ্যাঁ এসব মে‌য়ে‌দের আমা‌দের সমাজ বেয়াদপ বা উগ্র ব‌লে। কিন্তু আয়া‌তের ম‌তে সমা‌জের কথায় কান না দি‌য়ে মে‌য়ে‌দের নি‌জের কথা ভে‌বে সাম‌নে এগি‌য়ে যাওয়া উচিত। তেমনি সৎ সাহস আয়াত দে‌খে‌ছি‌ল তনয়ার মা‌ঝে।

প্রায় দু আড়াইমাস আগের কথা,
মেঘা ক‌লেজ থে‌কে ফেরার সময় কিছু ছে‌লে মেঘা‌কে কিডন্যাপ করার চেষ্টা ক‌রে। তারা মেঘা‌কে গ‌া‌ড়িতে ক‌রে র্নিজন জায়গায় নি‌য়ে যা‌চ্ছি‌ল। ভাগ্যক্র‌মে তনয়া ওর স্ক্রু‌টি নি‌য়ে সে প‌থেই যা‌চ্ছি‌ল। গা‌ড়ি‌তে মে‌য়ে‌দের চিৎকার শু‌নে গা‌ড়ির পিছু নেয়, সা‌থে সা‌থে পু‌লিশ‌কে ফো‌নে জানায়। 

‌ছে‌লেগু‌লো (মোট তিন‌টি ছে‌লে ছি‌লো) গা‌ড়ি থা‌মি‌য়ে মেঘা‌কে গা‌ড়ি থে‌কে বের ক‌রে নি‌য়ে যে‌তে নি‌লে তনয়া ছে‌লেগু‌লো‌কে লা‌ঠি দি‌য়ে কোন ম‌তে আঘাত ক‌রে মেঘার হাত ধ‌রে মেইন রাস্তার দি‌কে দৌড়াতে লাগ‌লো। কারন স্ক্রুটারে ব‌সে চালু করার সু‌যোগ ওরা পায়‌নি। দৌড়া‌তে দৌড়া‌তেই পু‌লিশ‌কে নি‌জে‌দের আর ছে‌লেগু‌লোর লো‌কেশন বল‌ছি‌লো। পু‌লিশ আগেই তনয়ার কথামত সে প‌থে আস‌ছি‌লো। ছে‌লেগু‌লো তনয়া আর মেঘার পিছ‌নে দৌড়া‌চ্ছি‌লো। বু‌দ্ধি ক‌রে তনয়া মেইন রো‌ডের দি‌কে দৌড়া‌চ্ছি‌লো বিধায়, কপাল ভা‌লো হ‌লো পু‌লি‌শের গা‌ড়ির সাম‌নে পড়‌লো।

‌পু‌লিশ ছে‌লেগু‌লো‌কে ধাওয়া ক‌রে দু‌টো‌কে ধরতে পে‌রে‌ছি‌লো, একটা পা‌লি‌য়ে যায়। তারপর মেঘা আর তনয়ার বয়ান নি‌য়ে ওদের বা‌ড়ি পৌঁ‌ছে দেয়। তখন আয়াত বা‌ড়ি ছি‌লো না। বা‌ড়ি এসে ‌মেঘার কাছ থে‌কে সব শু‌নে আয়াত। মেঘার কাছ থে‌কে তনয়ার প্রশংসা শু‌নেই তনয়ার প্র‌তি আয়া‌তের ম‌নে একটা আলাদা ভা‌লোলাগার তৈরী হ‌লো। 

‌মেঘা‌কে পৌঁ‌ছে দি‌তে তনয়া আয়া‌তের বা‌ড়ি আস‌ছি‌লো। তখন প্রায় অনেকক্ষন মেঘার সা‌থে থে‌কে ওকে সাহস দি‌য়ে‌ছে। নয়‌তো মেঘার মত ভীতু মে‌য়ে মাত্র দু দি‌নে স্বাভা‌বিক হ‌য়ে গে‌লো শুধু মাত্র তনয়ার দেয়া ভরসায়। তখন তনয়া যাবার সময় নি‌জে মেঘার সা‌থে ছ‌বি তু‌লে মেঘার ফোন থে‌কে। আর ব‌লে, ভয় লাগ‌লে আমার ছ‌বি দে‌খো ভয় লেজ গু‌টি‌য়ে পালা‌বে। হি হি। 

তখন সবাই মেঘা‌কে নি‌য়ে এতটা চি‌ন্তিত ছি‌লো যে, কেউ তনয়া কোথায় থা‌কে? কি ক‌রে? এসব জি‌জ্ঞেস ক‌রেনি। মেঘা শুধু তনয়ার নাম জান‌তো। মেঘার ফো‌নে তনয়ার ছ‌বি দেখে আয়াত ভাব‌ছে, 
__এই ইনো‌সেন্ট চেহারার মে‌য়েটা এত সাহসী। বাহ্ ভা‌লো। মে‌য়ে‌দের অবশ্যই সাহসী হওয়া উচিত।

__‌মেঘা তখন বলল, ভাইয়া তুই বি‌য়ের জন্য ঠিক যেমন গু‌ণী মে‌য়ে খুঁজ‌ছি‌লি এই আপুটা মা‌নে তনয়া আপু একদম তেমন। বাই‌রে আর মে‌য়ে খুঁ‌জে কি লাভ? এই আপুটা‌কেই আমার ভা‌বি বা‌নি‌য়ে দেনা ভাইয়া। 

আয়া‌তের তনয়ার বিষ‌য়ে শু‌নেই ভা‌লো লে‌গে গে‌ছি‌লো। তারপর তনয়া‌কে অনেক খুঁ‌জেঔ কিন্তু পায়‌নি। শেষ‌মেস র‌শ্মির মাধ্য‌মে পে‌লো তাও র‌শ্মি মিথ্যা বল‌ছিল।
আর সে‌দিন তনয়া বি‌য়ে থে‌কে পা‌লি‌য়ে আসার পর তনয়ার চাঞ্চল্য, বাচ্চা‌মি, হা‌সি ঠাট্টা‌ে কথা, সাহসীকতা, প‌রিশ্র‌মীতা, আত্ম‌বিশ্বাসী জি‌নিসগুলা দে‌খে আয়াত তনয়া‌কে কিভা‌বে যে‌নো অসম্ভব রকম ভা‌লো‌বে‌সে ফে‌লে। আয়াত ভাব‌ছে জীব‌নে বি‌য়ে য‌দি ক‌রি ত‌বে তনয়া‌কেই কর‌বো। আয়াতের না‌মের পা‌শে কেবল তনয়া আস‌বে, আয়াতনয়া। 

আয়া‌তের ভাবনায় ছেদ কর‌লো মেঘা।
__ভাই কি ক‌রিস ঘুমা‌বিনা?

__‌মেঘা তুই এত রা‌তে জে‌গে আছিস যে? ঘুমাস‌নি কেন?

__এম‌নি ঘুম আস‌ছি‌লো না ভাই। 

__‌বোন তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। দেখ‌বি?

__হ্যাঁ ভাই। জল‌দি দেখা। 

আয়াত ফোনটা বের ক‌রে তনয়ার অনেকগু‌লো পিক দে‌খি‌য়ে বলল,
__তনয়া‌কে পে‌য়ে গে‌ছি। খুব শিঘ্রই তোর ভা‌বি বানা‌নোর ব্যবস্থা কর‌ছি। 

__ওয়াও ভাই। খুব ভা‌লো খবর? তা কতদূর এগোলো? 

__এখন গোল গোল ঘুর‌ছি দুজ‌নেই। আমি চাই ও আমার ভা‌লোবাসাটা অনুভব করুক। ওকে সরাস‌রি ব‌লে বোঝা‌তে চাইনা, অনুভ‌বে বোঝা‌তে চাই। যখন ও বুঝ‌বে তখন ওর চোখ আমায় ভা‌লোবা‌সি বল‌বে, ওর মু‌খে বলার দরকার নেই।

__ওহ তার মা‌নে ফিল্মী স্টাই‌লে!

__আ‌রে না। আয়াত স্পেশাল স্টাই‌লে। হা হা হা। 

__তা বাসায় ক‌বে বল‌ছিস ভাই?

__সেটাই তো ভয়‌ রে! 

__‌কেন ভাই?

__আস‌লে বোন তনয়া প্র‌তিবন্ধী। মা‌নে ওর ডান হা‌তের দু‌টো আঙুল নেই। তাই ভাব‌ছি মা মান‌বে তো? মা তো সবসময় সব জি‌নি‌সে ক্ষুদ ধ‌রে। সেটা নি‌য়ে ভ‌য়ে আছি খুব।

__তা‌তে কি হ‌য়ে‌ছে ভাই! তনয়া আপুর মত ভা‌লো মে‌য়ে, ভা‌লো বৌ সে কোথায় পা‌বে! সে প‌রের মেয়ে‌র ক্ষুদ ধরার আগে তা‌কে এটা চিন্তা কর‌তে হ‌বে তার নি‌জের মে‌য়েও শ্যামলা, বল‌তে গে‌লে কা‌লোই। সে অন্যের মে‌য়ে‌কে যেটা দি‌বে, তার মে‌য়েও সেটাই পা‌বে। 

__বাপ‌রে মেঘা তুই তো বড়‌দের মত কথা বল‌ছিস।

__না‌রে ভাই স‌ত্যিটা বল‌ছি। আচ্ছা ভাই তুই এত সুন্দর ফর্সা, ছোট ভাইয়া মা‌নে (আহনাফ) ভাইয়াও এত সুন্দর অথচ আমি কেন কা‌লো হলাম? জা‌নিস ভাই মা ও আমার গা‌য়ের রঙ নি‌য়ে মা‌ঝে মা‌ঝে বকা দেয়। আমি কি নিজ থে‌কে নি‌জে‌কে কা‌লো বা‌নি‌য়েছি!  আচ্ছা ভাই গা‌য়ের রঙ, শারী‌রিক পূর্ণতাই কি সব? মানু‌ষের মেধার তার যোগ্যতার কি কোন দাম নেই?

__আয়াত মেঘা‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধরে বলল, কেন থাক‌বে না! অবশ্যই আছে। তো‌কে তো তনয়া ঘটনা বলল‌াম। কিভা‌বে সমা‌জের কলু‌ষিত ম‌নের চো‌খে আঙুল দি‌য়ে নি‌জের পা‌য়ে নি‌জে দাড়া‌চ্ছে। জা‌নিস তনয়া কমাস আগে হিসাব‌ বিজ্ঞা‌নের অনার্স ‌শেষ ক‌রে‌ছে। বর্তমা‌নে এম বি এ কর‌ছে প্লাস জব কর‌ছে। ওর ইচ্ছা বি সি এস ক্যাডার হ‌বে। দেখ বর্তমা‌নে ও একা নি‌জের পথ চল‌ছে। তোর সাথে তো আমরা সবাই আছি। তুই কেন পার‌বি না। আর বোন গা‌য়ের রঙ ওটা কোন ম্যাটার না। মানু‌ষের মনটা ম্যাটার ক‌রে। আর আমার বো‌নের মনটা পৃ‌থিবী‌তে সব থে‌কে বে‌শি সুন্দর। 

‌মেঘা আয়া‌তের বুকে মাথা ঠে‌কি‌য়ে কাঁদ‌ছে। আয়াত বল‌ছে, বোকা মে‌য়ে কাঁ‌দিস না। তুই নি‌জে‌কে প্রমাণ কর দেখ‌বি পু‌রো দু‌নিয়া তখন তোর গা‌য়ের রঙ নি‌য়ে কিছু বল‌বেনা। চল তো‌কে ঘুম পা‌ড়িয়ে দি। 

‌মেঘা‌কে শু‌য়ে দি‌য়ে আয়াত মেঘার চু‌লে বি‌লি কাট‌তে কাট‌তে বলল, জা‌নিস বোন তোর যখন জন্ম হ‌লো তখন আমি নয় কি দশ বছ‌রের। তোর জ‌ন্মের পর দা‌দি আমা‌কে ব‌সিয়ে তো‌কে আমার কো‌লে দি‌লো। বোন জা‌নিস ঐ স্মৃ‌তিটু‌কো আমি এখনো ভু‌লি‌নি। তোর নরম নরম হাত পা গু‌লো অনবরত নাড়াচাড়া কর‌ছি‌লি। চোখ দু‌টো বড় বড় ক‌রে চার পাশ তা‌কি‌য়ে দেখ‌ছি‌লি। আমার ম‌নে হ‌চ্ছি‌লো কোন নরম পরী পুতুল আমার কো‌লে হাত পা নাড়া‌চ্ছে। তারপর কি কর‌লি জা‌নিস?

__‌কি কর‌ছি ভাই?

__আমার কো‌লে হিসু ক‌রে দি‌লি! হা হা হা

__‌মেঘা লজ্জা পে‌য়ে বলল, ভাই ভা‌লো হ‌চ্ছেনা কিন্তু। তারপর কি হ‌লো?

__আ‌মরা দু ভাই সবসময় তোর কা‌ছে থাকতাম। তখন আহনাফ চার বছ‌রের। দু ভাই সারা দিন তো‌কে নি‌য়ে খেলাম, সারা বা‌ড়ি ঘু‌রে বেড়াতাম, তোর জন্য অনেক খেলনা কিনতাম।
যখন তোর বয়স একবছর, তখন আহনাফ ফুল দি‌য়ে দুষ্ট‌মি কর‌তে গি‌য়ে তোর না‌কের ভিতর ফুল গু‌জে দি‌য়ে‌ছি‌লো। তোর ‌সে কি কান্না। তোর কান্না দে‌খে আমরা দু ভাইও খুব কান্না কর‌ছিলাম। অনেক ক‌ষ্টে তোর নাক থে‌কে ফুল গু‌লো বের কর‌ছি‌লো। তখন মা আহনা‌ফের উপর রে‌গে গি‌য়ে, ওকে একটা চর মার‌ছি‌লো। আহনাফ কান্না করায় তুই ওর থে‌কে বে‌শি কান্না কর‌ছি‌লো। তখন দা‌দি বল‌ছি‌ল, এরা তিনজন একই না‌ড়ি‌তে বাঁধা। একজন ব্যাথা পে‌লে বা‌কি দুজনও কাঁ‌দে। তুই ছি‌লি আমা‌দের দু ভাই‌য়ের খেলার পুতুল। তো‌কে ঘি‌রেই আমা‌দের দু‌নিয়া ছি‌লো, আছে থাক‌বে। ভাই বো‌নের সম্পর্ক এমন যেখা‌নে শুধু ভাই বোন দেখা হয় গা‌য়ের রঙ না। বুঝ‌লি আমার পরীটা। 

আয়াত মেঘার দি‌কে তা‌কি‌য়ে দে‌খে মেঘা ঘু‌মি‌য়ে গে‌ছে। আয়াত মেঘার মাথাটা বা‌লি‌শে ঠিকভা‌বে রে‌খে, গা‌য়ে চাদড় দি‌য়ে, মশা‌রি টা‌নি‌য়ে মেঘার কপা‌লে ভাই‌য়ের আদর দি‌য়ে লাইটা বন্ধ ক‌রে নি‌জের রু‌মে গি‌য়ে ঘু‌মি‌য়ে পড়ল।

১০!!

      প‌রের দিন বিকাল চারটা। 
আয়াত নি‌জেই তনয়া‌কে নি‌তে আস‌লো। তানভীও ওদের সা‌থে ছি‌লো। সকাল থে‌কে তনয়ার শরীরটা একটু বে‌শিই খারাপ। সেটা শু‌নে তানভী সকালেই তনয়ার কা‌ছে চ‌লে আস‌ছে। আয়াত গা‌ড়ি চালা‌চ্ছে আর তনয়া তানভীর কা‌ঁধে মাথা দি‌য়ে ঘুমা‌চ্ছে। তানভী বলল,

__স্য‌রি ভাইয়া। আপ‌নি গা‌ড়ি চালা‌চ্ছেন আর আমরা পিছ‌নে ব‌সে আছি। খারাপ লাগ‌ছে খ‌ুব।

__আ‌রে না না। ঠিক আছে। তনয়ার শরীর কি বে‌শি খারাপ?

__হ্যাঁ সকাল থে‌কে তো হাঁট‌তেই পা‌রে‌নি। আল্লাহ রহমত যে, আমি শহ‌রে আছি। নয়‌তো ও একা কি ক‌রে সামলা‌তো। 

__তানভী! খুব ভা‌লো‌বাসো তনয়া‌কে?

__নি‌জের বোন‌কে কে না ভা‌লোবা‌সে! তার ভিতর ও আমা‌দের সবার আদ‌রের। আমার ক‌লিজা, আমি পৃ‌থিবী‌তে সব থে‌কে বে‌শি ওকে ভা‌লোবা‌সি। ওর জন্য সব কর‌তে পা‌রি। তা‌তে দু বার ভাব‌বো না। আপনার কোন বোন নেই ভাইয়া?

__হ্যাঁ আছে। আর তোমার বো‌নের মতই সেও আমার ক‌লিজা। নাম মেঘা!

__নাইস নেইম। বাট আপনার না‌মের সা‌থে মি‌লেনা।

__ওর পু‌রো নাম আনিসা সুলতানা মেঘা। মেঘা আমিই রাখ‌ছি। 

কথা বল‌তে বল‌তে ওরা হস‌পিটা‌লে পৌঁ‌ছে গে‌লো। ডাক্তার দে‌খি‌য়ে সব রকম টেস্ট ক‌রলো। রি‌পো‌র্টের অপেক্ষা কর‌ছে। তানভী বারবার আয়া‌তের দি‌কে তাকা‌চ্ছে। আজ তনয়া তানভী‌কে আয়া‌তের বিষ‌য়ে সব ব‌লে‌ছে। তানভী অবশ্য আয়া‌তের বিষ‌য়ে তিন মাস আগে থে‌কেই জা‌নে কিন্তু তখন আয়াত‌কে সরাস‌রি চিন‌তো না। আজ তনয়ার মুখ থে‌কে অনেক কথা শোনার পর বারবার আয়া‌তের দি‌কে তা‌কি‌য়ে আয়াত‌কে খু‌টি‌য়ে খু‌টি‌য়ে দেখ‌ছে। তনয়া সেটা খেয়াল ক‌রে বলল,

__ভাই গো‌য়েন্দা‌গিরী বন্ধ কর‌বি?

__নাহ্। আগে আয়া‌ত ভাইয়ার বিষ‌য়ে সব খোঁজ নি‌তে হ‌বে। আর তুই কিভা‌বে আয়াত ভাই‌কে চি‌নিস তাও ক্লিয়ার ভা‌বে ব‌লিস‌নি। আচ্ছা শোন একটা প্ল্যান আছে।

__‌কী?

__যা ভাগ। তো‌কে কেন বলব? আয়াত ভাইয়া শুনুন।

__হ্যাঁ ব‌লো তানভী।

__পরশু আমা‌দের দুজনার জন্ম‌দিন। সন্ধ্যার পর ছোট খা‌টো একটা পা‌র্টির আয়োজন কর‌ছি। আপ‌নি আপনার ভাই বোন‌কে নি‌য়ে অবশ্যই আস‌বেন। 

__‌ঠিক আছে।

__তানভী ম‌নে ম‌নে বল‌ছে, এখন মজা হ‌বে। র‌শ্মি  কাল রা‌তে ফো‌নে যে বলল, আয়াত ভাইয়াও তনয়া‌কে চি‌নে প্রায় আড়াই মাস আর তনয়া চি‌নে তিন মা‌সের বে‌শি। এগু‌লো কি কাকতালীয় না‌কি অন্য‌কিছু? সেটা জানা যা‌বে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন