২৭!!
ভোর অবাক চোখে রুমটা দেখার ফাঁকেই রোদ ভোরকে ফ্লোরে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ভোর যেন ব্যাপারটা টেরও পায় নি একদমই। অবাক বিস্ময়ে রুমটা দেখতে দেখতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে গিয়েও যেন বারবার পা থমকে যাচ্ছে মেয়েটার। বিশাল রুমটার পর্দা ঢাকা বিশাল জানালার ঠিক অপজিটে দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়ানো খাটটা ঠিক যেন ভোরের নিজের বিছানাটার মতো। এমন কি বিছানার পাশেই রাখা পড়ার টেবিল, অন্যপাশের দেয়ালে থাকা ওয়ারড্রব, ড্রেসিংটেবিল, বিছানার মুখোমুখি থাকা মাঝারি সাইজের একটা সোফা-সবই যেন ভোরের রুমটার ফটোকপি। ভোরের এক সেকেন্ডের জন্যও মনে হচ্ছে না ও নিজের বাসার বাইরে আছে। কয়েক মূহুর্তের জন্য ভোর যেন একটা শব্দও করতে পারলো না। অজান্তেই কখন রোদের একটা হাত খামচে ধরেছে সেটা একদমই টের পায়নি ভোর নিজেও। রোদের দিকে তাকাতেই রোদের হাসি হাসি মুখটা দেখতে পেয়ে ভোরের ঠোঁটের কোণেও একটা হাসির রেখা ফুটে উঠলো।
-এসব কি রোদ? পুরো আমার রুমটাকেই তুলে নিয়ে এসেছ নাকি?
-তেমন কিছু না রে পাগলি। তোর রুমের মতো করেই সাজালাম রুমটাকে। যাতে নতুন বাড়িতে এসে তোর নিজের রুমটাকে মিস না করিস। এই আর কি।
-এতো পাগল কেন তুমি বলো তো?
-এই লক্ষী বউটার জন্য এইটুকু পাগলামি করাই যায়।
-আচ্ছা তাই নাকি?
-হুম।
রোদ কয়েক পা এগিয়ে এসে ভোরকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরতে গিয়েও কিছু একটা ভেবে থেমে গেল। আর সেটা দেখে ভোর ভ্রু কুঁচকে রোদের মুখের দিকে তাকাতেই রোদ ভোরের মুখটা আলতো করে দুহাতে তুলে ধরে চোখে চোখ রাখলো।
-কি?
-এই যে ম্যাডাম? কতো রাত হলো সে খেয়াল আছে আপনার? বারোটা বাজতে চললো রাতের। ঘুম টুম নেই চোখে? নাকি মডেল টেস্ট শেষ বলে খুশির ঠ্যালায় ঘুম, পড়া সব ছেড়ে দিয়েছিস?
-ঘুম তো আসছে না আমার এখন।
-আসবে কি করে? পড়নের ড্রেসটা পর্যন্ত চেইঞ্জ করিস নি এখনো। সেটারও তো খেয়াল নেই। তোকে নিয়ে যে কি করি আমি?
-তোমার মাথাটা বোধহয় খারাপ হয়ে গেছে রোদ। কাল সকালেই তোমাকে ডাক্তার দেখাতে হবে।
-কি বললি তুই?
-ঠিকই বললাম। আমি চেইঞ্জ করবো কি করে? আমি কি ব্যাগে করে বাড়তি জামা নিয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছি নাকি? অদ্ভুত কথা বলো খালি! আজব!
-ইশ! কথাটা আমার একদমই মনে ছিল না। অবশ্য তাতে বিশেষ কোনো সমস্যাও নেই। তোর জন্য টুকটাক জিনিসপত্র কিনে রাখছিলাম। ওয়ারড্রবটা খুল দেখ। যা।
-ওয়ারড্রবে কি!
-তুই গিয়ে ওয়ারড্রবটা খুলেই দেখ না বাবা। তারপর নিজেই বুঝবি।
-হুম। আচ্ছা।
ওয়ারড্রবটা খুলে ভোরকে আরেকবার অবাক হতে হলো। ওয়ারড্রবের যে ড্রয়ারটা ভোর খুলেছে সেটায় থরে থরে সাজানো অনেক রকমের শাড়ি। ভোর একবার শাড়ি ভর্তি ড্রয়ারটার দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার রোদের দিকে। ওয়ারড্রবের বাকি দুটো ড্রয়ারেও শাড়ি। সেগুলো এখনো পুরোপুরি ভর্তি হয় নি এখনও। আর শেষ ড্রয়ারটায় শুধু কয়েকটা শার্ট আর টিশার্ট। রোদের এমন পাগলামি কান্ড দেখে ভোর কিছু বলার মতোই খুঁজে পাচ্ছে না। আর ভোরের এমন ভ্যাঁবাচ্যাঁকা খাওয়া মুখটা দেখে রোদ এবারে হেসে ভোরের একটা হাত টেনে নিজের সাথে হালকা করে জড়িয়ে নিলো। ভোরও রোদের একটা হাত নিজের হাতের বাঁধনে বেঁধে নিলো।
-কি ভাবছিস ভোরপাখি? শাড়িগুলো পছন্দ হয়নি আমার বউটার? নাকি আরো লাগবে------?
-তুমি কি সত্যি সত্যিই পাগল হয়ে গেছ রোদ? নাকি আমাকে পাগল বানাতে চাইছ বলো তো?
-ওমা! এসব কি বলছিস বল তো? আমি এতো শখ করে আমার পিচ্চি বউটার জন্য শাড়ি কিনেছি, আর তুই কিনা আমাকে পাগল বানিয়ে দিচ্ছিস? এটা কোনো কথা হলো ভোর?
-তো কি বলবো? আমি এতোগুলো শাড়ি পড়বো কি করে বলো তো?
-কি করে পড়বি মানি? একটা একটা করে পড়বি আর কি। সবগুলো শাড়ি তোকে তো আর একদিনে পড়তে বলছি না আমি। বোকা একটা!
-ওই! আমি বোকা নাকি তুমি বোকা? এতোগুলা শাড়ি কিনে এনেছ সাথে আর যে জিনিসগুলো লাগে সেগুলো কোথায়? আজব! আমি কি শুধু একটা শাড়ি নিয়ে গায়ে পেঁচিয়ে নিবো? অদ্ভুত তো!
-ওহ শিট! আমার তো একদমই খেয়াল ছিল না। শিট!
-এতোগুলো শাড়ি কিনে বসে আছে, কিন্তু একটা যে পড়বো সেই সু্যোগটুকু পর্যন্ত নেই। কি যে করে এই লোকটা বুঝি না বাপু আমি। এখন আমি কি পড়বো? সরো তো? ছাড়ো? ধরবা না একদম।
-আরে এই ভোরপাখি?
ভোর কিছুটা বিরক্ত হয়ে রোদের কাছ থেকে সরে আসার চেষ্টা করতেই রোদ শক্ত করে ভোরের কোমড় জড়িয়ে ধরে ভোরকে আটকালো। ভোর অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে দেখে রোদ ভোরের মুখটা ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে চোখে চোখ রাখলো।
-কি রে বউসোনা? এভাবে রাগ করে মুখ ফিরিয়ে নিবি? এতো পাষাণ কেন তুই বল তো?
-জি আমি পাষাণ। ছাড়ুন।
-শাড়ি পড়তে পারবি না বলে আমাকে জেদ দেখাচ্ছিস? এটা কোনো কথা ভোর? আমি কি জানতাম তোকে এমন হুট করে বাড়িতে নিয়ে আসবো যে? জানলে তো তুই আসার আগেই পুরো বাড়িটাকে আজ আলোয় আলোয় ভরিয়ে দিতাম আমি।
-ভালো করেছ।
-আর বিশ্বাস কর আসলেই শাড়ির সাথে আরো যে হাবিজাবি লাগবে সেটা আমার মাথাতেই আসে নি। যখন যে শাড়িটা দেখে তোর মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল তখনই সেই শাড়িটা কিনে নিয়েছিলাম। আর কিছু আমার মাথাতেই আসে নি তখন। শুধু তোর মায়াভরা মুখটা ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারি নি তখন জানিস?
-ভালো করেছ। এখন আমি শাড়ি পড়বো কি করে? আমি এই ময়লা ড্রেসটা পড়েই ঘুমাবো নাকি তাহলে? ছি! কি বালি লেগেছে ড্রেসটায়! আমি এতোক্ষণ টেরই পাই নি। এতোক্ষণ এই ধূলো বালি মাখা ড্রেসটা পড়েছিলাম কি করে! ইইইইইই!
-আসলেই তো! বাচ্চা বাচ্চা স্কুলড্রেসটা তো বদলাতে হবে সোনাপাখি। ড্রেসটা চেইঞ্জ করে আমার বউপাখি হয়ে আয় তো তুই। চট করে একটা লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে নে। যা তাড়াতাড়ি কর। কত রাত হলো! ঘুমাতে হবে না নাকি আজকে?
-তোমার মাথাটাই পুরো গেছে মনে হচ্ছে রোদ। আমি শাড়ি পড়বো কি করে হ্যাঁ? শাড়ি পড়ার মতো ব্যবস্থা আছে কোনো? কাকে কি বলছি আমি? উফফ! এই লোকটা তো নিজেও পাগল হয়েছে, এবারে আমাকেও পাগল করবে বলে ঠিক করেছে। এই তুমি সরো তো? সরো সামনে থেকে।
ভোর বিরক্ত হয়ে রোদের শক্ত হাতের বাঁধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করতেই রোদ ভোরের কোমড়ে আরেকটু চাপ দিয়ে নিজের সাথে একদম নিবিড় করে মিশিয়ে নিয়ে ভোরের কানের কাছে ঠোঁট নিল। ভোরও একবার চমকে কেঁপে উঠলো রোদের আচমকা এমন গভীর স্পর্শে। ভোর কিছু বুঝে উঠার আগেই কানে রোদের উষ্ণ নিঃশ্বাস এসে লাগলো। আর সাথে রোদের উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া।
-কেমন করে পড়বি সেটাও কি এখন আমাকেই শিখিয়ে দিতে হবে ভোরপাখি? গ্রামের বউদের দেখিস না কেমন পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে শাড়ি পড়ে নেয়? কই ওদের তো এতো বায়না থাকে না সায়া নেই, ব্লাউজ নেই বলে? ওরা ওভাবে পড়তে পারলে তুই পারবি না কেন? আর ঠিকমতো প্যাঁচাতে না পারলেও তো কোনো সমস্যা নেই। আমিই তো। আমার কাছে তোর আর লজ্জা কিসের বল? তবুও না পারলে বল। আমিই কোনোমতো পেঁচিয়ে দিচ্ছি শাড়িটা তোর তুলতুলে শরীরটায়----। সাথে একটু আদর-----।
-ছি! কি খারাপ তুমি! কিসব বলো এগুলো? সরো তো---। ছাড়ো?
-ভালো একটা বুদ্ধি দিলাম তাও শুনবি না? গ্রামের বউগুলো যখন ওরকম আটপৌরে করে শাড়ি পড়ে কি সুন্দর দেখায় জানিস? একদম পার্ফেক্ট বউ। কোথায় ভাবলাম আমার বউটা সবসময় আমার সামনে সেভাবে পেঁচানো জড়ানো আটপৌরে ঢংয়ের শাড়ি পড়ে ঘুর ঘুর করবে। এখন দেখছি আমার আশায় তিনি পানি না, পুরো নদী, সাগর, মহাসাগরের সমস্ত জল পুরোটাই ঢেলে দিলেন। এসব কিন্তু আমি মানবো না বলে দিলাম ভোর।
-চুপ করো তো। সারাদিন কিসব বলে লোকটা?
-হ্যাঁ তাই তো। কেউ তো নিজেকে আমার বউ বলেই মানে না। তার কাছে আমি নাকি আবার শাড়ি পড়ে থাকার আবদার করছি! হা কপাল! হাহ। তুই ঠিকই বলেছিস ভোর। আসলেই আমি একটা পাগল। না না। পাগল না। বোকা।
-তুমি! রোদ! তুমি যাও তো? আমি ঘুমাবো।
-হ্যাঁ ঘুমাবিই তো। কি কপাল আমার! যা-ও বউটা আগে একটু ভালোবাসতো, একটু ভয় টয় পেতো-বিয়ে হয়েছে জানার পর না ভয় পায়, আর না ভালোবাসে। কি আর করা! শেষে এই ছিল আমার কপালে! না বউয়ের ভালোবাসা পেলাম, না তাকে নিজের মতো করে ভালোবাসার সুযোগটা পেলাম। এ জীবনে আর কিইবা পেলাম আমি!
-রোদ!
-যাচ্ছি বাবা! আর বিরক্ত করতে আসবো না তোকে। ঘুমা তুই। কিছু লাগলে আমাকে ডাকিস। পাশের রুমেই আছি।
-কিচ্ছু লাগবে না আমার। যাও তুমি।
-হুম। তা লাগবে কেন? হুহ। আমিও আসবো না আর যা। এবার তুই ডাকলেও আসবো না। গুড নাইট। বায়।
রোদ একটু মুখ বাঁকিয়ে বেরিয়ে যেতেই ভোর হেসে ফেললো। ওয়ারড্রবের ড্রয়ার থেকে একটা টুকটুকে লাল শাড়ি তুলে নিলো ভোর। শাড়িটা যে ভোরের ভিষণ পছন্দ হয়েছে। ভিষণ ভিষণ পছন্দ।
এদিকে রোদ ভোরের রুম থেকে বেরিয়ে পাশের রুমে আসলেও ওর চোখে এক বিন্দুও ঘুম নেই। কিছুক্ষণ রুমে পায়চারি করেও ঘুম আসছে না দেখে শেষে বিরক্ত হয়ে শুয়ে পড়লো বিছানায়। বিছানায় শুয়ে বেশ কিছুটা সময় পার হয়ে গেলেও ঘুম আসছে না দেখে আবার উঠে গেল রোদ। বিছানায় উঠে বসতেই রোদের খেয়াল হলো ভোরের ড্রেসটা চেইঞ্জ করা হয়নি। কথাটা খেয়াল হতেই রোদ চট করে উঠে দাঁড়ালো। পাশেই একটা সুপারশপ আছে, সেটা সম্ভবত সারা রাত খোলা থাকে। সেটায় একবার গিয়ে দেখতে পারে ভোরের জন্য ড্রেসের কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি না। একটা জামা পেলেও অন্তত আজকের রাতটা ঠিক করে মেয়েটা ঘুমাতে পারবে। কথাটা ভাবতেই এক মূহুর্তও আর দেরি করলো না রোদ। বেরিয়ে এলো রুম থেকে। ভোরকে ডাকবে কিনা চিন্তা করে আবার নিজের ভাবনাটা বাতিল করে নিচে ফিরে এলো রোদ। ভোর হয়তো ঘুমিয়েছে। মেয়েটার কাঁচা ঘুমটা ভাঙানোর কোনো মানেই হয়না।
পা টিপে টিপে নিচে এসে যত নিঃশব্দে সম্ভব বোধহয় তার চেয়েও নিরবে মেইনডোরের লক খুলে বাইরে বেরিয়েছে রোদ। গাড়িটা পিছনের দিকে কিছুটা ব্যাক করে নিয়ে গেইট থেকে বের করতে হবে। তাই পিছন থেকে তাকাতেই পিছনের সিটে রাখা শপিংব্যাগটার উপরে নজর পড়লো রোদের। ব্যাগটায় কি আছে সেটা দেখার কৌতূহলটা আটকাতে পারলো না রোদ। অপ্রয়োজনে কোনো কাজই মেঘ করে না। তাই ব্যাগটায় কাজের কিছু থাকলেও থাকতে পারে ভেবেই শপিংব্যাগটা খুলে রীতিমতো হা হয়ে যেতে হলো রোদকে। এই মেঘটা সব কিছু আগেভাগেই বুঝে ফেলে কি করে কে জানে! নয়তো আগে থেকেই ভোরের জন্য ড্রেসের ব্যবস্থা করে ফেলেছে ছেলেটা! কই কথাটা তো রোদ জানতেও পারে নি! এমনকি কি রোদের ব্যাপারটা খেয়াল পর্যন্ত ছিল না। কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই শপিংব্যাগটার ভিতরে একটা ছোট্ট চিরকুট দেখে সেটা হাতে নিলো রোদ। চিরকুটটা পড়ে রোদের কষ্ট হলো মেঘের জন্য, নাকি ভোর ওর সাথে, ওর জীবনে আছে বলে আল্লাহকে হাজার বার শুকরিয়া জানালো কে জানে! আর এক সেকেন্ডও দেরি না করে গাড়ি থেকে নেমে আবার ধীর পায়ে রুমের দিকে পা বাড়ালো রোদ। চোখের সামনে চিরকুটে লেখা কালো কালির লাইন দুটোই ভাসছে রোদের চোখের সামনে।
"যার জন্য ড্রেসদুটো কেনা তার তো কাজে লাগলো না। আজ নাহয় আমার ছোটো বোনটার কাজে লাগুক।"
২৮!!
মেইনডোর লক করে পা টিপে টিপে আবার ভোরের রুমের দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে রোদ। রুমে ঢুকবে কি ঢুকবে না এইটা ঠিক করতে করতেই কয়েকটা মিনিট কেটে গেল রোদের। নিজের সাথেই মনে মনে বহু তর্ক বিতর্কের পর শেষে রোদ ভোরের রুমে ঢোকারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভোর এতো রাতে নিশ্চয়ই ঘুমিয়ে কাদা হয়ে গেছে। আর রোদ তো রুমে গিয়ে শপিংব্যাগটা রেখেই নিজের রুমে ফিরে আসবে। এই দুটো কথা ভেবে রোদ নিজেকে ভোরের রুমে যাওয়ার জন্য কনভেন্স করেছে। অবশ্য আরো একটা ব্যাপার আছে। ভোরের ঘুমন্ত মায়াভরা মুখটা এক নজর দেখলে তার নিজেরও শান্তিতে ঘুম হবে, এটা ভেবেই হাজার দ্বিধা দ্বন্দ্বের পরও রোদ খুব ধীরে রুমটার দরজার লক খুলে ভিতরের দিকে উঁকি দিলো। দরজাটা খুলতেই রোদের প্রথমে চোখে পড়লো রুমে এখনো আলো জ্বলছে আর ভোর বিছানায় নেই। ভোরকে বিছানায় না দেখতে পেয়ে তাড়াহুড়ো করে রুমে ঢুকেই রোদ থমকে গেল। নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে রোদের।
রোদ যে রুমের দরজাটা খুলেছে সেটা ভোর একদম টেরই পায়নি। ভোরের হুঁশ হলো রোদ যখন হুড়মুড় করে রুমে ঢুকে পড়েছে ঠিক তখন। রোদের পায়ের শব্দে পিছনে পিছনের দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে যায় ওদের দুজনের। রোদ অবাক বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে ভোরের লজ্জারাঙা মুখটা দেখছে। আর ভোর লজ্জায় জড়সড় হয়ে চোখ বুজে নিয়েছে সাথে সাথেই। মেয়েটা নিজেকে শান্ত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করলেও বুকের ধুকপুকানি বাঁধ সাধছে সমানে। তার উপরে দেখতে দেখতেই হাত পা গুলো ঠান্ডা বরফ হয়ে যেন অবশ হয়ে আসতে চাইছে ভোরের। এ কেমন অনুভূতি আজ ওর? ভোর নিজেও জানে না। রোদ নিজের ঘোর কাটিয়ে যে এক পা দু পা করে ওর দিকেই এগিয়ে আসতে শুরু করেছে সেটাও বেশ টের পাচ্ছে ভোর। কিন্তু ভোর কেন যেন এক পা ও নড়তে পারছে না নিজের জায়গা থেকে। কেউ যেন ওর পায়ে কয়েক টন ওজনের পাথর বেঁধে দিয়েছে। রোদ এগিয়ে এসে ভোরের নত হয়ে থাকা মুখটা দু হাতের আঁজলায় ধরে চোখে চোখ রাখলো। আরো কয়েক মূহুর্ত মুগ্ধ হয়ে ভোরের লাল টুকটুকে মুখটায় লজ্জার খেলা দেখে আলতো করে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।
-কেউ একজন নাকি বিয়েটা মানে না, কিন্তু আমাকে আঁচড়ে খামচে নিজের দিকেই টানে ঠিকই। নিজেকে আমার বউ মানে না, আবার দেখ কি সুন্দর আমার লাল টুকটুকে রাঙা বউ সেজে বসে আছে? এসব কি ঠিক বল তো ভোর? নিজের স্টেটমেন্টে তুই নিজেই স্ট্রিক্ট থাকতে না পারলে আমি কি করে তোর কথাগুলো মানবো বল তো? যেখানে তুই নিজেই নিজের স্টেটমেন্ট মানছিস না। পরে তো আমি কিছু করলেই আবার ঠিকই আমার দোষ দিবি।
-তোমার দোষ কেন দিব?
-এই যে আমার ছোট্ট ছোট্ট আবদারগুলোকে তুই মানি না, মানবো না করেও মেনে নিচ্ছিস। এভাবে চললে তো আমার বেহায়া মনটা আরো বড় কিছু চেয়ে বসবে তোর কাছ থেকে ভোর। তখন তো আমারই দোষ দিবি বল? বলবি রোদ একটা খুব খারাপ ছেলে।
-তোমার কি এমন আবদার যে তোমাকে খারাপ বলবো? আর আমি ঘুমাতে পারছিলাম না তাই শাড়িটা পড়েছি।
-ওহ আচ্ছা। তাই নাকি? তা ম্যাডাম এভাবে পেঁচিয়েই শাড়িটা পড়তে হলো আপনাকে?
-তো আর কিভাবে পড়বো?
-দরজাটা বন্ধ করে নিলি না কেন?
-খেয়াল ছিল না। আর তাছাড়া বাসায় তুমি ছাড়া আর তো কেউ নেই। দরজা বন্ধ করলে সেই তো আবার বকতে----।
-তাই বলে চেইঞ্জ করার সময়ও দরজা লক করবি না? যদি হুট করে চলে আসতাম তখন? লজ্জায় লাল হতি কিনা কে জানে! কিন্তু রাগে তো লাল মরিচ হয়ে যেতি ঠিকই।
-কি!
-আমার বউকে তো আমি যেকোনো রূপেই দেখতে পারি। কিন্তু কপাল দেখ। তুই তো বিয়েটা মানিসই না তাই না? তাহলে তোকে হুট করে এসে দেখে ফেলাটা কি ঠিক হতো বল?
-আমম। তুমি--তুমি এতো রাতে না ঘুমিয়ে এখানে কি করছ?
-কি করবো বল? তোকে এতো কাছেও পেয়েও বুকে জড়িয়ে ধরতে পারছি না। ঘুম আসবে কি করে বল সোনাপাখি?
-কি!
-আরে! এতো অবাক হওয়ার কি হলো? আমার বউ, তাকে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর ইচ্ছে তো হতেই পারে আমার। তাই না? তুই বিয়েটা মানিস না ঠিক আছে। তাই বলে আমিও মানতে পারবো না এটা কোথায় লেখা আছে?
-তোমার এসব উদ্ভট যুক্তি রাখো তো রোদ। যাও তো ঘুমাও।
-হাহ! কি আর করা! বউটা একটু আদর করেও বলে না আজকে-----।
-রোদ!
-বাপরে বাপ! কি গলা মেয়ের! ম্যাডাম এতো জোরে চিৎকার করে আমার কানের চৌদ্দটা বাজাবেন না প্লিজ। আপনার জন্য দুটো ড্রেস নিয়ে এসেছি। একটা পড়ে নিন কষ্ট করে এখন। কষ্ট করে এখন আর শাড়ি পেঁচিয়ে ঘুমাতে হবে না। অন্য ড্রেসটা কাল বাসায় যাওয়ার সময় পড়ে নিবেন----।
-কাল বাসায় যাওয়ার সময় মানে?
-ওমা! তুই বাসায় যাবি না? আমি বলেছি বলেই কি সারাজীবন আমার কাছেই থাকবি নাকি? এই একটু আগেও তো বললি থাকবি না আর আমার কাছে, আমি খুব খারাপ। আরো কত কি বললি----। কি রে? চুপ করে গেলি কেন ভোর? চুপ কেন? আরে? কি হলো ভোরপাখি?
ভোর নিজেকে একটু সামলে নিয়ে এবারে নিজের সমস্ত ভয়, লজ্জা মুছে ফেলে রোদের চোখে চোখ রাখলো। রোদ একটু হেসে ভোরের কোমড় জড়িয়ে নিজের কাছে টেনে নিলো।
-কি রে ভোরপাখি? এভাবে কি দেখছিস? কাল দিয়ে আসবো তো তোকে বাসায়। এবার খুশি তো?
-আমি কি যেতে চেয়েছি? তোমাকে কি একবারও বলেছি আমাকে বাসায় দিয়ে আসতে?
-বলিস নি?
-না।
-থাকতেও তো চাস নি ভোর।
-কে বলেছে চাই না থাকতে? আমি তো এখানেই থাকবো। কোথাও যাবো না।
-বাহ! একটু পর তো সেই তুই নিজেই আবার কান্নাকাটি জুড়ে দিবি, রোদ একটা খারাপ, আমি থাকবো না, এসব বলে। তখন কি হবে?
-কাঁদবো না, যাবো না, কিছু বলবোও না।
-তাই? একদিনের জন্য সাহসটা একটু বেশিই হয়ে গেল না ভোরপাখি? এই অসভ্য লোকটার সাথে সারাজীবন কাটাতে পারবি কিনা সেই সিদ্ধান্তটা একটু ভেবেচিন্তে নিতে হবে তো নাকি? হুট করে আমিও তোকে নিয়ে এলাম, আর তুইও চলে এলি। এভাবে তো হয় না রে বাচ্চাটা। আর তার উপরে তোর ওই বড়আব্বু। আমাকে পেলে নির্ঘাত জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়বে। আর তখন তুইও লক্ষী মেয়ের মতো তোর বড়আব্বুরই সাপোর্টার হয়ে যাবি। মাঝখান থেকে আমি বাচ্চা ছেলেটা ফেঁসে যাবো। না না না। এভাবে বাঁশ খেতে চাই না আমি বাপু। একদমই না। কালই তোকে তোর বড়আব্বুর হাতে তুলে দিয়ে আসবো। জেলের ভাত খাওয়ার আমার এতো শখ নেই বাপু।
রোদ কথাগুলো শেষ করার আগেই ভোর রোদের সামনে থেকে সরে এসে আবার ড্রেসিং টেবিলের দিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। রোদ ভোরের অভিমানটা বুঝতে পেরে ভোরকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ভোরের কাঁধে নিজের থুঁতনি ঠেকিয়ে আয়নায় ভোরের মুখের দিকে তাকালো। ভোরের মুখের লাজুক আভাটা সরে গিয়ে মুখটায় গভীর বিষাদের মেঘ জমতে শুরু করেছে দেখে রোদ আলতো করে ভোরের কানে কামড় বসালো। রোদের দুষ্টুমিতে ভোর এবারে একটুও নড়লো না। ভোর চুপচাপ আগের মতোই নিচের দিকে তাকিয়ে আছে দেখে রোদ দু হাতে ভোরের পেটটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
-কি হয়েছে গো আমার ভোরসোনাটার? হুম? এই বউ? রাগ করেছিস? ভোর? এই পাখি? কথা বলবি না আমার সাথে? রাগ করেছিস কেন? আরে? এ দেখছি আচ্ছা মুশকিল হলো? ভোর? শোন না?
-ছাড়ো? ঘুম পাচ্ছে আমার। ঘুমাবো।
-একটু আগে না নিজেই থাকবি না বলে লাফাচ্ছিলি? এখন আমি বাসায় দিয়ে আসবো শুনে রাগ করছিস কেন বল তো? বিয়েটাও মানছিস না, আবার যেতেও চাইছিস না। তুই আসলে চাইছিস টা কি আমাকে বল তো ভোরসোনা?
-একটু ঘুমাতে চাইছি। ঘুমাতে দিবে প্লিজ?
রাগের চোটে কথাটা বলতে গিয়েও যে ভোরের গলাটা কেঁপে উঠেছে সেটা রোদের কানে এসে লেগেছে ঠিকই। রোদ আর কিছু না বলে ভোরকে টেনে নিজের দিকে ফিরিয়ে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে ভোরের সামনে হাঁটু মুড়ে বসে পড়লো। ভোর ঠোঁট ফুলিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে তো আছেই। ভোরের রাগটা দেখে রোদ হেসে ফেললো এবারে। একটু এগিয়ে এসে ভোরের বরাবর হয়ে আচমকা ভোরের মুখ তুলে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিল। হঠাৎ এমন উষ্ণ স্পর্শে ভোর কেঁপে উঠে চোখ বুজে নিয়ে রোদকে ঠেলে নিজের কাছ থেকে সরানোর চেষ্টা করলো। রোদ সেটা পাত্তা না দিয়ে ভোরকে নিয়েই বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে ভোরের অভিমানী মুখটার দিকে ঝুঁকলো কিছুটা। ভোর রোদকে সরানোর চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে চোখ মেলে রোদকে নিজের এতোটা কাছে দেখে থতমত খেয়ে গেল। রোদ সেটা দেখে হেসে ভোরের কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো আবার।
-এতো নাচানাচি করছিস কেন? আমি কি তোকে খেয়ে ফেলছি নাকি?
-কি করছ তুমি? বললাম না ঘুম পাচ্ছে ঘুমাবো এখন? আর সকাল সকাল তো উঠে রেডি হতে হবে------।
-বাব্বাহ! এতো রাগ! এতো রাগ যে একটামাত্র বরের আদরটুকুও নিতে ইচ্ছে করছে না?
-কিসের বর কিসের বউ? বউ ভাবলে দিয়ে আসার কথা বলতে পারতে?
-আমি কি সত্যি সত্যি দিয়ে আসবো নাকি রে পাগলি? আমি তো দুষ্টুমি করে বলেছি বাবা। তুই বুঝিস না? তোকে ছাড়া কি করে থাকবো আমি বল তো পাখিটা?
-দুষ্টুমি করে বলেছ না ছাই আমি জানি না ভেবেছ? আমি সব জানি। আর খুব বিদেশে যাওয়ার জন্য লাফাচ্ছিলে না তুমি? যাও। কালই চলে যাও। তোমাকে থাকতেই হবে না। আমিও থাকবোই না। কালই চলে যাবো। হ্যাপি তুমি? এখন ছাড়ো ছাড়ো ছাড়ো?
-আরে? ভোর?
কথাগুলো বলতে বলতেই ভোরের চোখ বেয়ে টপটপ করে কয়েক ফোঁটা উষ্ণ কান্নার বিন্দু হাজারো অভিমান নিয়ে গড়িয়ে পড়তে দেখে রোদ থমকে গেল। এক মূহুর্ত অপেক্ষা করে ভোরের মুখটা তুলে ধরে পুরো মুখটা ভালোবাসায় রাঙিয়ে দিলো রোদ। ভোর কিছু না বলে চুপ করে ফোঁপাচ্ছে দেখে এবারে ভোরকে বুকে টেনে নিলো রোদ। ভোরও রোদের বুকে গুটিশুটি হয়ে চুপটি করে শুয়ে রইলো। একটু পরে রোদ ভোরকে টেনে নিজের বুকের উপরে তুলে নিলে আবার চোখাচোখি হলো দুজনের। ভোর আবার চোখ সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতেই রোদ ভোরের মুখটা তুলে ধরে চোখে চোখ স্থির করলো।
-বউ হয়ে নাকি মেয়েরা অনেকটা বদলে যায়। তোকে না দেখলে কথাটা হয়তো এ জীবনে কখনোই বিশ্বাস করতাম না আমি। আর এই যে পাগলি? তখন তো রাগ করে বাবাকে বলেছি আর ফিরবো না। কিন্তু কাজটা কি ভালো হবে বল তো? বাড়িতে সবাই কত টেনশন করছে বুঝতে পারছিস না? তোকে কতোটা পাগলের মতো ভালোবাসে ওরা জানিস না? সকালের মধ্যে তোর খোঁজ না পেলে তোর বড়মা, বড় আব্বু ইভেন ছোট মা আর চাচ্চুর কি অবস্থা হবে ভেবে দেখেছিস রে পাগলি? আর ফাইনাল পরীক্ষার যে আর দু-তিন সপ্তাহ মাত্র বাকি সে খেয়ালও কি নেই ম্যাডাম আপনার? আপনার কি ধারণা আর পড়তে হবে না বলেছি বলে সত্যি সত্যিই পড়ালেখা সব লাটে তুলে পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকবেন আপনি? আর আমি সেটা মেনে নিবো?
-হুম?
-আর ম্যাডাম? এখন থাকতে পারছেন না বলে কিন্তু একদমই মন খারাপ করবেন না। ওকে? আপনার পরীক্ষাটা শেষ হোক, আর দুটো ফ্যামেলি রাজি হয়ে অফিশিয়ালি আমাদের বিয়েটা এনাউন্স করুক। তারপর যতদিন ইচ্ছে হয়, যখন ইচ্ছে হয় আপনার চলে আসতে পারবেন, থাকতে পারবেন। বুঝতে পারলেন? বাচ্চা বয়সের বিয়েটা আপনি আমি মানি আর না মানি সমাজ আর আইন কোথাও কিন্তু সেটা প্রাধান্য পাবে না। দেখা যাবে আপনাকে বউ দাবি করলে উল্টো এখন বাল্যবিবাহের অপরাধে ধরে জেলে পুরে দিবে। বুঝেছেন ম্যাডাম ভোর?
-হুম।
-দেখি? এখনো গাল ফুলিয়ে রেখেছে মেয়েটা? একটু নরমাল হও না বাবা? এমন করে কান্নাকাটি করলে ভালো লাগে বলো তো? আর কত রাত হলো? ঘুমাবো না নাকি আমরা আজকে? হুম?
-ঘুমান না? ধরে রেখেছে কে আপনাকে?
-দেখেছ? সেই ত্যাড়াব্যাঁকা কথা এখনো! একটু আদর করে বললেও তো হয় নাকি? হাহ! আপনার থেকে মিষ্টি ভালোবাসার কথা শোনার ভাগ্য এ জীবনে হবে কিনা কে জানে!
-ছাড়ো তো? ঘুমাবো আমি।
-জি ম্যাডাম। ঘুমাবেন তো। তার আগে আমার শার্ট বা টিশার্ট কিছু একটা পড়ে নিন। এভাবে শাড়িটা গায়ে র্যাপারের মতো পেঁচিয়ে না রেখে বুদ্ধি করে শার্টের উপর দিয়েও কিন্তু পড়া যেত। ঠিক যেভাবে পায়জামাটাকে সায়া হিসেবে ইউজ করেছেন, শার্টকে সেভাবে ব্লাউজ হিসেবে----।
-বেশি জ্ঞান দিতে আসবেন না তো। যান।
-হ্যাঁ তাই তো। এখন তো আর আমাকে ভালো লাগবে না। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। আপনি ততক্ষণে চেইঞ্জ করে নিন ম্যাডাম।
-হুম।
রোদ ওয়ারড্রব থেকে শার্ট আর ট্রাউজার বের করে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। আর ভোর ধীর পায়ে বিছানা থেকে নেমে ওয়ারড্রবে রোদের শার্ট নাড়াচাড়া করতে করতে ভাবতে লাগলো। সকাল হলে কি সত্যি সত্যিই ওরা চলে যাবে? এই স্বপ্নের মতো সুন্দর বাড়িটায় আর কি থাকা হবে না ওদের? এতো পাগলামিভরা আবেগ, অভিমান, ভালোবাসাগুলো অন্য কোনো সময়ের জন্যই তোলা থাকবে? নাকি ভোরের প্রথম কিরণের মতো আলো ছড়াতে ছড়াতে ধরা দিবে আজই?