অনাকাঙ্ক্ষিত সে - পর্ব ০৯ - মুন্নি আক্তার প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


নুয়াজ মিশ্মিকে ছেড়ে দু'হাতে চোখের পানি মুছে দিচ্ছে। আলভী তখন ভেতরে প্রবেশ করে বলে,
"কান্নাকাটি হয়েছে তোমাদের?"

আলভীর কথা শুনে নুয়াজ হাসলেও মিশ্মি লজ্জা পায়। আলভীকে উদ্দেশ্য করে বললো,
"আমি মিশ্মিকে নিয়ে যেতে চাই।"
"আপনার ভালোবাসার মানুষ আপনি নিয়ে যেতেই পারেন। কোথায় নিয়ে যাবেন?"
"আমার বাসায়। আমি আজই মিশ্মিকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে যাবো।"
"পরিবারকে না জানিয়েই?"
"পরিবারকে জানাতে গেলে ঝামেলা হবে। আগে মিশ্মিকে পুরোপুরি নিজের করে নিই তারপর না হয় সব ঝামেলার মোকাবেলা করবো।"
"আপনারা যেটা ভালো মনে করেন।"
নুয়াজ মিশ্মির দিকে তাকিয়ে বলে,
"তোমার কোনো সমস্যা নেই তো?"
"বাবাকে না জানিয়ে বিয়ে করতে পারবোনা।"
উত্তরে আলভী বললো,
"তোমার বাবাকে বোঝানোর দায়িত্ব না হয় আমাকে দাও।"
নুয়াজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বললো,
"অনেক ধন্যবাদ আলভী।"
"তাহলে চলুন যাওয়া যাক কাজী অফিসে।"
"হ্যাঁ চলুন।"

কাজী অফিসে আলভী, অভিসহ নুয়াজের আরো কিছু বন্ধু সাক্ষী হিসেবে ছিল। কোনো কিছু ভাবা ছাড়াই চোখের পলকে বিয়েটা হয়ে গেলো। সবাই মিলে রাতের খাবার খেয়ে মিশ্মিকে নিয়ে নিজের বাড়ির দিকে গেলো। বাড়ির গেটের সামনে গাড়ি যেতেই দাঁড়োয়ান গেট খুলে দিলো। জানালার কাঁচ দিয়েই মিশ্মি দেখতে পাচ্ছিল সুবিশাল বাড়িটা। নুয়াজরা যে বেশ বড়লোক সেটা বুঝতে কোনো সমস্যা হলো না। ভয়টা মিশ্মির এখানেই। নুয়াজ যেখানে এত বড়লোকের ছেলে সেখানে মিশ্মিদের কিছু নেই বললেই চলে। মিশ্মির কি বিয়ে করাটা ঠিক হলো। মেনে নিবে কি এই বাড়ির লোকজন মিশ্মিকে!
নুয়াজ গাড়ির দরজা খুলে বললো,
"নামো।"
মিশ্মি মৃদু হেসে নেমে দাঁড়ালো। গাড়ির দরজা লাগিয়ে দিয়ে মিশ্মির হাত শক্ত করে ধরলো। এতক্ষণ মিশ্মি যেই ভয়টা পেয়েছে সেটা একটু হলেও কমেছে। নুয়াজের শক্ত করে হাত ধরাটা মনে হচ্ছে ভয়টা ভরসায় পরিণত হলো। হয়তো মিশ্মি যেটা ভাবছে সেটা ভুল। সুখ বুঝি মিশ্মিকে ধরা দিবে।
দরজা নক করতেই মধ্যবয়সী এক লোক দরজা খুলে দিলো। পরণে পুরনো লুঙ্গি, ফতুয়া আর কাঁধে একটা গামছা। দেখে মনে হচ্ছে এই বাড়িতে কাজ করে। নুয়াজ মিশ্মিকে নিয়ে ভেতরে গেলো। ড্রয়িংরুমে টিভি দেখছিল নুয়াজের বাবা-মা। মিশ্মি দূর থেকেই তাদের দেখছিল। বয়স হলেও কারো চেহারা বা শরীরে একদম বয়সের ছাপ নেই। নুয়াজ তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই তারা একটু হকচকিয়ে গেলো। নুয়াজের মা বললো,

"গার্লফ্রেন্ড নিয়ে বাড়িতে আসতে নিষেধ করেছিলাম নুয়াজ। বাংলো বাড়িটা কি জন্য ফাঁকা রেখেছি? তোমার জন্যই তো। যতখুশি গার্লফ্রেন্ড নিয়ে সেখানে টাইম স্পেন্ড করো। কিন্তু বাসায় নিয়ে আসছো কেন?"
"মা, তুমি না জেনেই এতসব কথা বলছো। গার্লফ্রেন্ড হলে অবশ্যই বাড়িতে আনতাম না।"
"তাহলে ও কে?"
"ওর নাম মিশ্মি। আমার বউ।"

এবার যেন নুয়াজের বাবা তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন। বসা থেকে দাঁড়িয়ে নুয়াজকে ধমকে বললেন,
"ড্রিংক করে কি বাসায় এসেছো?"
"না পাপা। আজ আমি একটুও ড্রিংক করিনি। যা বলছি সব সজ্ঞানে।"
"এই মেয়ের কোয়ালিফিকেশন কি? বাবা কি করে? বাড়ি কোথায়?"
"ওর কোয়ালিফিকেশন কি, বাবা কি করে, বাড়ি কোথায় এসব আমার কাছে ইম্পোর্ট্যান্ট নয় বিধায় জানার প্রয়োজন মনে করিনি। আমার কাছে ইম্পোর্ট্যান্ট হচ্ছে মিশ্মি। আমি ওকে ভালোবেসেছি। সারাজীবন ও আমার কাছে থাকবে। আমি ওকে জানি। তাই তুমি যদি আমায় জিজ্ঞেস করতে, মিশ্মি কেমন তাহলে হয়তো আমি উত্তর দিতে পারতাম।"
"একটা সিরিয়াস প্রশ্নের উত্তর তুমি নিশ্চয় এরকম হেয়ালিভাবে দিতে পারোনা।"
"একটা সহজ বিষয়কে তুমি অযথাই জটিল করছো পাপা।"
"কোথা থেকে না কোথা থেকে একটা মেয়েকে ধরে এনে বলবে আমার বউ আর আমি সেটাই মেনে নিবো?"
"না। তা কেন? আমার কাছে প্রমাণ আছে। এই দেখো বিয়ের কাগজপত্র।"
"নুয়াজ তুমি কিন্তু ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে দিচ্ছো।"
নুয়াজের মা এবার মিশ্মিকে প্রশ্ন করে,
"তোমার বাড়ি কোথায়?"
মিশ্মির উত্তরের আগে নুয়াজ বলে,
"যা প্রশ্ন করার আমায় করো।"
"কেন? বোবা মেয়েকে বিয়ে করেছো?"
"না। তবে তোমাদের প্রশ্নের সম্মুখীন ওকে করতে চাইনা। এনিওয়ে, আমি খুব টায়ার্ড। ঘরে যাচ্ছি।"

নুয়াজ মিশ্মিকে নিয়ে ঘরে যায়। পেছন থেকে নুয়াজের বাব-মা দুজনই খুব রাগারাগি করছে। নুয়াজের বাবা ওর মাকে বলছে,
"তোমার জন্যই আজ ছেলের এত অধঃপতন। মান-সম্মান সব শেষ করে দিলো। আল্লাহ্ ভালো জানে কোন ফকিন্নির মেয়েকে ঘরে তুলে এনেছে।"

ঘর থেকেই সব স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে মিশ্মি। কথাগুলো কাঁটার মত লাগছে। মনে হচ্ছে মিশ্মি বড় কোনো ভুল করে ফেলেছে। নুয়াজ ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে বলে,
"যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।"
"আমি বাসায় যাবো।"
"কি?"
"আমি বাসায় যাবো। আপনার বাবা-মা আপনাকে কতকিছু বলছে। আমার মনে হয় আমাদের বিয়ে করাটা ঠিক হয়নি।"
"থাপ্পড় দিয়ে সব কয়টা দাঁত ফেলে দিবো বেয়াদব। আমি তোকে ভালোবাসি সেটা তুই জানিস না? কে কি বলছে সেগুলো নিয়ে ভেবে আমায় ছেড়ে যাবি?"

নুয়াজের হঠাৎ করে তুই-তোকারি করে বলাতেই মিশ্মি বুঝে যায় নুয়াজ খুব রেগে গেছে। তাই কিছু বলতে গিয়েও চুপ হয়ে যায়। নুয়াজ নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে বলে,
"চুপচাপ ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।"

মিশ্মি কথা না বাড়িয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। নুয়াজ ড্রয়িং রুমে গিয়ে টি-টেবিলে লাথি দিয়ে বলে,
"আর কোনো শাউট যেন এই বিষয় নিয়ে না হয়। আমার লাইফ আমি কিভাবে লীড করবো সেটা একান্তই আমার বিষয়। তোমাদের যদি কোনো সমস্যা থাকে তাহলে সেটা আমায় বলো। আমি মিশ্মিকে নিয়ে এই বাড়ি থেকে চলে যাবো।"
"আমাদের থেকে দুইদিনের ঐ মেয়েটা তোমার কাছে বেশি হয়ে গেলো?"
"হ্যাঁ হলো। কারণটা না হয় নিজেদেরই জিজ্ঞেস করো। আর ফ্যামিলি সম্পর্কে জানতে যাচ্ছো? তাহলে শোনো, কিছুই নেই ওদের। ও নিঃস্ব শুধু আমায় নিয়ে পরিপূর্ণ। আর কিছু জানার আছে?"
"তুমি কি সোসাইটির বিষয়টাও দেখলে না?"
"সোসাইটি? হাহ্! যাক, এসব নিয়ে আর কিছু বলতে চাচ্ছি না। আর যেন কোনো চেঁচামেচি না হয় বলে দিলাম।"
কথাগুলো বলে নুয়াজ রুমে গেলো।


মিশ্মি ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে নুয়াজ বিছানায় বসে সিগারেট খাচ্ছে। নুয়াজের পাশে বসে সিগারেটটা নিয়ে এ্যাশট্রে তে রাখে।
"সিগারেট খেলে কি আপনার রাগ কমে?"
নুয়াজ মুচকি হাসলো।
"না। শান্তি লাগে।"
"আমি আপনার পাশে থাকার পরও সিগারেট আপনাকে বেশি শান্তি দেয়?"

মিশ্মির একটা হাত নিজের হাতে নিয়ে নুয়াজ বলে,
"তোমার মধ্যে শান্তি খুঁজে পেয়েছি বলেই তো তোমায় গার্লফ্রেন্ড বানাইনি। বউ বানিয়ে নিয়ে এসেছি।"
"আমার মনে হচ্ছে, পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করাটা ঠিক হয়নি।"
"তুমি কি আমায় ছেড়ে যেতে চাচ্ছো?"
"না। শুধু ভুলটার কথা বললাম।"
"সব ভুলকে ভুলে যাও। ভালোবেসে এক হতে পেরেছি এটাই সত্যি।"

মিশ্মি কিছু বললো না। নুয়াজের বুকে মাথা রেখে পাড়ি জমালো ঘুমের দেশে।


সকালে মিশ্মি ঘুম থেকে উঠে দেখে নুয়াজ পাশে নেই। ওয়াশরুমে বা ব্যালকেনিতেও নেই। এত সকালে কোথায় গেলো। বিছানায় উঠে বসতেই পাশের টি-টেবিলে দেখলো একটা চিরকুট। চিরকুট খুলে দেখে সেখানে লিখা আছে,
"স্যরি বউ, জরুরী একটা কাজ থাকায় সকাল সকাল বের হতে হলো। আর তোমায় বলে আসিনি কারণ তোমার ঘুম ভাঙ্গাতে ইচ্ছে হলো না। রাগ করো না প্লিজ। ভালোবাসি বউটা।"
চিরকুট পড়ে হেসে ফেললো মিশ্মি। বালিশের নিচ থেকে ফোন নিয়ে নুয়াজকে ফোন করলো। নতুন ফোনটা আলভী কিনে দিয়েছিল। ফোন দেখতেই আলভীর কথা মনে হলো। নুয়াজ ফোন রিসিভড করছেনা দেখে মিশ্মি আলভীকে কল দিতে যায়। তখনই নুয়াজ কল করে। মিশ্মি রিসিভ করে বলে,
"হ্যালো।"
"গুড মর্নিং জান।"
"গুড মর্নিং।"
"কখন উঠলে?"
"এখনই। উঠেই চিরকুট দেখে আপনাকে ফোন দিলাম।"
"আচ্ছা। আমি কাজের খালাকে বলে এসেছি তোমার ব্রেকফাস্ট দিতে। তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও কেমন?"
"আচ্ছা।"
"রাখি তাহলে?"
"ঠিক আছে।"
"এই শোনো?"
"কি?"
"ভালোবাসি।"
মিশ্মি হালকা হেসে বলে,
"আমিও ভালোবাসি।"
"এই এই এই।"
"কি?"
"একটা চুমু দাও।"
"অসভ্য।"
বলে মিশ্মি ফোন কেটে দেয়। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ঘরে খাবার রাখা। নিশ্চয়ই কাজের খালা রেখে গেছে। তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বিছানায় বসে মিশ্মি। নয়/দশ বছর বয়সী একটা মেয়ে পানির জগ নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। জগ রেখে কোনো কথা না বলেই চলে যাচ্ছিলো। তখন মিশ্মি ডেকে বলে,
"শোনো।"
মেয়েটা পেছন ঘুরে বলে,
"কিছু কইবেন ম্যাডাম?"
"এদিকে এসো।"
মেয়েটা মিশ্মির দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,
"কন ম্যাডাম।"
"ম্যাডাম ম্যাডাম বলছো কেন?"
"এই বাড়িতে এইটাই নিয়ম। স্যার, ম্যাডাম ছাড়া কিছু কওন যাইবো না।"
"ওহ। আমার বেলায় নিয়মটা আমি চেঞ্জ করলাম। তুমি আমাকে আপু ডেকো কেমন?"
"ছোট স্যার যদি বকে?"
"বকবে না। তোমার নাম কি?"
"নাঈমা। আপনার নাম কি?"
"মিশ্মি।"
"এই নাম আমি আগে কোনোদিন শুনি নাই। কিন্তু আপনার নামডা অনেক সুন্দর।"
"থ্যাঙ্কিউ। তুমি এই বাড়িতে কাজ করো?"
"হ মায়ের লগে টুকিটাকি কাম করি।"
"পড়ো না?"
"পড়ি তো।"
"আচ্ছা। পড়ার বিষয়ে কোনো হেল্প লাগলে আমাকে জানাবে।"
"আচ্ছা।"
"ঠিক আছে তুমি এখন যাও।"
"একটা কথা কই আপু?"
"বলো।"
"আপনি অনেক সুন্দর।"
এটা বলেই জিহ্বায় কামড় দিয়ে দৌঁড় দিলো নাঈমা। নাঈমার পাগলামি দেখে মিশ্মি হেসে ফেললো।
খাওয়ার আগে আলভীকে ফোন দিলো। আলভী কেটে দিয়ে কলব্যাক করে বললো,
"বাব্বাহ! কিসমিসের কি আমার কথা মনে পড়লো?"
"মনে না পড়ার কি আছে?"
"না তা নয়। নতুন নতুন বিয়ে হলো। এখন তো স্বামী আর শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের নিয়েই ব্যস্ত থাকবে।"
"তাই বলে আপনাদের ভুলে নিশ্চয়ই যাবো না।"
"তা তো জানি। মজা করলাম। কেমন আছো?"
"আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভালো আছি। আপনি?"
"আলহামদুলিল্লাহ্‌।"
"আঙ্কেল-আন্টি কেমন আছে?"
"ভালো আছে। আজ হসপিটালে আসবে?"
"হ্যাঁ। কাল নুয়াজকে বলেছি। কিন্তু বাবা যদি কোনো রিয়াক্ট করে?"
"আমি আছিতো। চিন্তা করো না। খেয়েছো তুমি?"
"না খাবো। আপনি?"
"খেয়েছি। শ্বশুরবাড়ির লোকজন কেমন?"
"ভালো।"
"আলহামদুলিল্লাহ্‌।"
কিছুক্ষণ চুপ থেকে আলভী বললো,
"শোনো মিশ্মি, তোমাকে একটা কথা বারবার বলেছি। এখনো বলছি। সব জায়গায় নরম হয়ে থেকো না। কখনো কোনো সিচুয়েশনে হতাশ হবেনা, ভেঙ্গে পড়বে না। সব সিচুয়েশনে মনোবল দৃঢ় রাখবে।"
মিশ্মি ছোট করে শ্বাস নিয়ে বললো,
"হুম।"
"এখন তাহলে খাও তুমি। আমি হাসপাতালে যাচ্ছি।"
"আচ্ছা। আল্লাহ্ হাফেজ।"
"আল্লাহ্ হাফেজ।"

খাবার একবার মুখে তুলতেই শুনতে পেলো শ্বাশুরী কার কাছে যেন কেঁদেকেটে বলছে,
"বারবার কি ওর এসব অত্যাচার সহ্য করা যায় বল? যখন যা মনে চাইবে তাই করবে। ছোটবেলা থেকে যা চেয়েছে তাই দিয়েছি। শেষমেশ যা একটু সম্মান ছিল সেটাও শেষ। কোন জায়গার কোন ফকিন্নি নিয়ে আসছে কে জানে। কিছু বলতে গেলে উল্টো রাগ দেখাচ্ছে।"
"তুমি কান্না করো না। আমি দেখছি।"

মিশ্মির রুমের দরজায় একটা মেয়েলি কন্ঠ বললো,
"ভেতরে আসবো?"
"জ্বী।"
মেয়েটা ভেতরে এসে বললো,
"তুমিই মিশ্মি?"
"হুম।"
"আমি নুয়াজের বোন। কতদিন ধরে চিনো নুয়াজকে?"
"দুই বছরের মত।"
"বড়লোক ছেলে দেখে গলায় ঝুলে পড়লে?"
"আপু আপনি নুয়াজের বোন। তাই আশা করবো আপনি এমন কোনো কথা বলবেন না, যাতে আমি ভুলে যাই আপনি নুয়াজের আপন কেউ।"
"থ্রেড করছো তুমি আমায়?"
"জ্বী না। আপনাকে থ্রেড করার সাধ্যি আমার নেই।"
"শোনো মেয়ে, স্বামী সংসার আমারও আছে। বিয়ে বিষয়টা হয় সমানে সমানে। তুমি কোন সাহসে নুয়াজকে বিয়ে করলে?"
"স্বামী সংসার সমানে সমানে হয়? ভালোবাসা নিশ্চয়ই সমানে সমানে হয়না।"
"মুখে মুখে তর্ক করছো?"
"উত্তর দেওয়াটাকে যদি তর্ক বলে তাহলে নিশ্চুপ থাকাকেও অসম্মান বলে। আমি তো আপনাকে অসম্মান করতে পারিনা।"
"আমার সাথে সাহস দেখাতে এসো না। বেশি ডানা মেলে উড়তে চাইলে ডানা ছেঁটে দিতেও আমি জানি। তুমি তো আমায় চিনো না।"
"না চেনার তো কিছু নেই। আপনি নুয়াজের বোন। আপনাকে চেনার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। আর হ্যাঁ, আমি শুনেছি মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেলে নাকি পর হয়ে যায়। তখন তার সব অধিকার, প্রায়োরিটি থাকে শ্বশুরবাড়িতে। আপনিও তো বিবাহিত তাই এত সাহসিকতা এই বাসায় দেখিয়েন না। অন্তত আমার সাথে তো নয়'ই।"
নুয়াজের বোন রাগে মিশ্মিকে বাজে গালি দিলো। মিশ্মি মৃদু হেসে বললো,
"এমন ভাষায় কথা বলে নিজেকে বস্তির মেয়ে বলে দাবি না করলেই কি নয়?"
"তোমার এত্ত বড় সাহস? তুমি আমায় বস্তির মেয়ে বলছো?"
"আমি বলিনি তো। আপনার ব্যবহার বলে দিচ্ছে।
নুয়াজের বোন যখন রাগে মিশ্মির দিকে এগিয়ে যায় তখনই নুয়াজ রুমে আসে। বোনকে উদ্দেশ্য করে বলে,
"নিশি তুই এখানে?"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন