আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

অবহেলিত সম্পর্ক - অন্তিম পর্ব ০৭ - মুন্নি আক্তার প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


১৩!!

হঠাৎ করে রূপকথার এমনভাবে জড়িয়ে ধরায় হকচকিয়ে যায় আরিশ।
- এসব তুমি কি করছো আরিশ? কেন করছো? কেন নিজেকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছো।? একটা মেয়েই কি জীবনের সব? প্লিজ এভাবে আর নিজেকে কষ্ট দিয়ো না। তুমি কষ্ট পেলে যে আমি সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাই।

রূপকথার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় আরিশ। 
- এত রাতে তুমি আমার ঘরে কেন? আর এরকম অসুস্থ অবস্থায় তুমি ঘরের বাহিরে একা বের হয়েছো! আরিশা কোথায়? মরার মত ঘুমাচ্ছে তাই না? ওর ঘুম আমি ছুটাচ্ছি।
এই বলেই আরিশ, আরিশার রুমের দিকে আগাতে ধরলো। পা এক কদম আগাতেই পেছন থেকে রূপকথা আরিশের হাত চেপে ধরলো। রূপকথার চোখ ছলছল করছে। আরিশ নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রূপকথা আরিশকে জড়িয়ে ধরে বলেই দেয় নিজের মনের কথাটি।
- ভালোবাসি। আমি তোমাকে ভালোবাসি আরিশ।

রূপকথার মুখ থেকে ভালোবাসার কথা শুনে অবাক হয়নি আরিশ। কারণ প্রিয়া আগেই বলেছিল রূপকথা আরিশকে ভালোবাসে। কিন্তু আরিশের পক্ষে রূপকথাকে ভালোবাসা অসম্ভব। আর এ কথাটা রূপকে বলাও ঠিক মনে করছেনা  আরিশ এই মুহুর্তে।
আরিশকে এভাবে চুপ থাকতে দেখে, রূপকথা আরিশকে ছেড়ে দেয়। নিজের ওড়না দিয়ে আরিশের হাত বেঁধে দেয়। আরিশের হাতটি ধরে বলে,
- শ্রুতি তোমাকে কতটা ভালোবাসে আমি জানিনা। কিন্তু তুমি যে ওকে অসম্ভব রকম ভালোবাসো সেটা আমি বুঝি। তবে বিশ্বাস করো আরিশ, আমিও তোমাকে প্রচন্ড রকম ভালোবাসি। তুমি শ্রুতিকে যতটা ভালোবাসো, জানিনা আমি তোমাকে ততটা ভালোবাসি কি না  তবে ভালোবাসি, খুব বেশিই ভালোবাসি তোমাকে। প্লিজ ফিরিয়ে দিয়ো না আমায়। আমার এই অবহেলিত শূন্য জীবনে আমার কিছুই নেই। খুব ইচ্ছে গো, তোমাকে নিয়ে নতুন একটি জগৎ তৈরি করার। যেখানে থাকবে না কোনো অবহেলা থাকবে শুধু ভালোবাসা।
তবে আর একটি কথাও বলি, যদি তোমার শ্রুতি তোমার জীবনে ফিরে আসে তাহলে আমি তোমাকে জোর করবো না আমায় ভালোবাসতে। আর যদি সে ফিরে না আসে তাহলে প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিয়ো না। তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না।

আরিশ কি করবে, কি বলবে বুঝতে পারছে না। তবে এই মুহুর্তে রূপকে থামাতে হবে। 
- দেখো রূপ, আমি এখনো জানিনা শ্রুতি আমার জীবনে ফিরবে কি না! আর তোমাকে ভালোবাসতে পারবো কি না! তবে আমি বিষয়টা নিয়ে ভাববো। খুব ক্লান্ত লাগছে আমার। চলো তোমাকে রুমে দিয়ে এসে আমিও ঘুমাবো। তোমারও এখন যথেষ্ট পরিমাণ রেষ্ট নেওয়া দরকার।

রূপকথা আস্তে আস্তে হেঁটে যাচ্ছে পায়ের ব্যথার জন্য। 
- এরকম পিঁপড়ার মত হাঁটলে তো এখান থেকে এখানে যেতেই সকাল হয়ে যাবে।
এটা বলেই রূপকথাকে কোলে তুলে নেয় আরিশ। রূপকথা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরিশের দিকে। আরিশের এই কেয়ারই যেন রূপকে আরো বেশি দূর্বল করে দেয়।

পরেরদিন সকালঃ
প্রিয়া সকাল ১০টা নাগাদ আরিশদের বাসায় যায় রূপকে দেখতে। আর মনে মনে প্রার্থনা করছে যাতে আরিশের মুখোমুখি হতে না হয়। তাহলে যে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবে না প্রিয়া।
আরিশদের বাড়িতে গিয়ে রূপকে অনেকবার ফোন দেয় প্রিয়া। কিন্তু কোনো রেসপন্স নেই। আরিশারও একই অবস্থা। রূপের থেকে বাড়ির এড্রেস নিলেও কোন রুমে থাকে তা তো জানে না প্রিয়া।
প্রিয়া বাড়ির ভেতরে ঢুকে। আরিশের মায়ের সাথে দেখা হয়ে যায় প্রিয়ার। প্রিয়ার কথা অনেক শুনেছে আরিশার কাছে কিন্তু শুধু নামটা জানতো শ্রুতি। ছবি দেখেনি কখনো তাই চিনতেও পারেনি।
প্রিয়া, আরিশের মাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
- আন্টি রূপকথা কোথায়?
- ও তো উপরের রুমে। কিন্তু তুমি কে?
- আমি রূপের ফ্রেন্ড প্রিয়া।
- ওহ আচ্ছা। যাও উপরের রুমেই আছে। ঘুমাচ্ছে হয়তো এখনো। 
- আচ্ছা আন্টি ধন্যবাদ
- ধন্যবাদ দেওয়া লাগবে না পাগলী মেয়ে। তুমি যাও আমি রান্না করছি তো, রান্না পুড়ে যাবে আবার।
- আচ্ছা আন্টি।

প্রিয়া সিড়ি বেয়ে উপরে যায়। কিন্তু সেখানে তো অনেকগুলো রুম। প্রথম রুমেই ঢুকে প্রিয়া। রুমে কেউ নেই। তবে বারান্দা থেকে গানের শব্দ পাচ্ছে প্রিয়া। বারান্দায় গিয়ে দেখে, আরিশ রকিং চেয়ারে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে আর গান শুনছে। 

" তোর রক্তে মিশশা গেছে মিথ্যা বলার স্বভাব,
কোন দোষেতে ছাইড়া গেলি দিবি কি তার জবাব!
বুকের ভেতর অনল আমার ভাঁটার মতন জ্বলে রে, তোর কারণে চোখ দুটি হায় মোমের মতন গলে!!
চাইলাম তোর আলতো পরশ, দিয়া গেলি দাগ,,
আমার থেকে তোরে তুই কইরা নিলি ভাগ,,
চাইলাম তোর আলতো পরশ, দিয়া গেলি দাগ
আমার থেকে তোরে তুই কইরা নিলি ভাগ!!"

প্রিয়া অবাক হয়ে যাচ্ছে, যেই আরিশ আরমান মালিক, আরিজিৎ সিং  ছাড়া, কোনো হিন্দি গান শুনে না। সেই আরিশ আজ বাংলা গান শুনছে তাও আরমান আলিফের! নিজেকে যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না।
- অবিশ্বাসের কিছুই নেই শ্রুতি। এই আরিশটাকে তুমি পাল্টে দিচ্ছো।
আরিশ গানটা বন্ধ করে চেয়ার থেকে উঠে প্রিয়ার সামনে দাঁড়ালো। চোখ দুটি ফুলে লাল হয়ে আছে। মনে হচ্ছে সারা রাত ঘুমায়নি। এখনো চোখটা ছলছল করছে। প্রিয়ার ভেতর যেন তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে এই আরিশকে দেখে। এ কি হাল করেছে নিজের! প্রিয়া আর আরিশের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারছে না। নিজেকে বড্ড বেশি অপরাধী মনে হচ্ছে। 
- চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছো কেন শ্রুতি? আমার মুখটাও কি তোমার দেখতে ইচ্ছে করছে না?
- এ কি হাল করেছো তুমি নিজের? 
- সুখে থাকছি। চেষ্টা করছি। তুমি না বলে গেলে?
- আমি তোমাকে এমন সুখে থাকতে বলিনি আরিশ। নিজের চেহারার দিকে তা......
আরিশ প্রিয়াকে আর কিছু বলতে দেয়, প্রিয়ার মুখে হাত দিয়ে থামিয়ে দেয়।
- চুপ! আমি বলি তুমি শুনো,
এই আরিশ তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না। এই আরিশ তার শ্রুতিকে ছাড়া থাকতে পারবে না। এই আরিশের মুখে হাসি ফোঁটানোর জন্য শুধু শ্রুতিকেই দরকার।

আরিশের হাত সরাতে গিয়ে খেয়াল করলো আরিশের হাত কাটা।
- এটা কি করেছো আরিশ? কেন করেছো এমন? কেন করলে বলো? পাগল তুমি?
- হ্যাঁ পাগল! পাগল আমি। শুধু তোমার জন্য পাগল বুঝো না তুমি?  কেন এত অবহেলা করছো আমাকে কেন? কি দোষ আমার বলো।
প্রিয়ার মুখে কোনো ভাষা নেই। খুব শক্ত করেই জড়িয়ে ধরে আরিশকে। সেই সাথে আরিশও যেন আরো বেশি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে প্রিয়াকে। নিজের ভেতর লুকিয়ে রাখার বৃথা চেষ্টা তবুও আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে প্রিয়াকে। কাঁদছে দুজনেই।
কান্নাজড়িত কণ্ঠেই প্রিয়া বললো,
- প্লিজ আরিশ, এভাবে নিজেকে কষ্ট দিয়ো না। তুমি জানোনা তোমার শ্রুতি তোমার কষ্ট সহ্য করতে পারেনা। তোমার এমন পরিবর্তন আমি চাইনি আরিশ। 
- আমার থেকে নিজেকে আলাদা করে নিয়ো না শ্রুতি। দুনিয়ার সবার অবহেলা সহ্য করতে পারলেও তোমার অবহেলা সহ্য করার ক্ষমতা আল্লাহ্ আমাকে দেয়নি। প্লিজ ভালোবেসে আমাকে কাছে টেনে নাও প্লিজ শ্রুতি!

- একি! কি করছি আমি। আমাকে এমন দূর্বল হলে চলবে না। রূপের থেকে আমি আরিশকে কেড়ে নিবো না। পারবো না আমি। আমি নিজে কষ্ট পেতে রাজি আছি কিন্তু রূপকে কষ্ট দিতে পারবোনা। (মনে মনে)
আরিশের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় প্রিয়া।
- দেখো আরিশ, এসব পাগলামি করে কোনো লাভ হবে না। আমি তোমাকে ভালোবাসি না আর বাসতেও পারবো না।
- শ্রুতি!  তোমার এই চোখ-মুখই বলে দিচ্ছে তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো। অবহেলা করছো তো? করো কোনো সমস্যা নেই। এই অবহেলিত সম্পর্ককেই আমি একদিন ভালোবাসায় রূপান্তর করবো, এটা আমার ভালোবাসার কসম শ্রুতি!
প্রিয়া আর কিছু বলে না। বলার মত কোনো ভাষাই নেই। নিজেরও যে অনেক বেশি কষ্ট হয় এভাবে আরিশকে কষ্ট দিতে। কিন্তু ঐদিকে রূপকেও কষ্ট দিতে পারবে না প্রিয়া। এক কঠিন দোটানায় পড়ে গিয়েছে প্রিয়া।

এভাবে কেটে যায় আরো তিনটি মাস। আরিশ পারেনি প্রিয়াকে নিজের কাছে ফেরাতে। রূপকথাও পারেনি আরিশের মনে নিজের জন্য ভালোবাসা তৈরি করতে। হাল ছাড়েনি কেউই। আরিশ যেমন প্রিয়ার অবহেলায় নিজের ভালোবাসাকে খুঁজে রূপকথাও ঠিক তাই করে। আরিশের অবহেলায় নিজের ভালোবাসা খোঁজার বৃথা চেষ্টা। তবে আরিশ বন্ধু হিসেবে যথেষ্ট কেয়ার করে রূপকথাকে। কিন্তু রূপকথা শুধু বন্ধুত্বই নয় আরিশকেও চায়। প্রিয়াও আরিশের খোঁজখবর নেয় আরিশার কাছ থেকে। আরিশা সবটাই জানে। 
অবহেলার মত এক কঠিন খেলা চলছে যার গুটি নেই কারো হাতে। কারণ প্রিয়া চাইলেও কখনো রূপকে কষ্ট দিতে পারবেনা আর আরিশও পারবে না প্রিয়াকে ছেড়ে রূপকে ভালোবাসতে। এই করুণ অবহেলার সম্পর্কের সমাপ্তিটা শুধু আল্লাহর হাতেই আছে।
কি হবে এর শেষ পরিণতি!!...........

১৪!!

আরিশ অফিসে যাচ্ছে। যাওয়ার আগে কেয়ার টেকারকে খুব কড়ামত নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছে যাতে প্রিয়ার খেয়াল রাখে। কোনো ত্রুটি যেন না থাকে।
- আহ্ আরিশ! এত কেন ভাবছো বলো তো?
- ভাববো না? তোমার কথা না ভাবলেও তার কথা তো আমাকে ভাবতে হয়।
- হু! বুঝি তো। এখন তো সেই সব। আমি কিছুই না
- তুমি দুধভাত হাহাহা
- আরিশ!!
- রাগ করে না লক্ষী। আমি আসি। নিজের খেয়াল রেখো। একা একা কোথাও যাবে না। কিছু লাগলে কাজের আন্টিকে ডাকবে। আর মা তো আছেই।
- আচ্ছা বাবা ঠিক আছে।
- এই বাবা বললে কেন?
- এটা তো কথার কথা বলেছি।
- তাও বলবা কেন?
- আচ্ছা স্যরি। হয়েছে?
- না হয়নি
- তাহলে এখন আমাকে কি করতে হবে?
- চুমু দিতে হবে।
- এহ্! মামা বাড়ির আবদার হুহ।
- জ্বী না। শ্বশুরবাড়ির আবদার। এখন দাও
- পারবোনা
- রাগ করেছি কিন্তু।
- ওলে বাবালে! তুমি আবার রাগ ও করতে পারো। ঠিক আছে ভুল যখন করেছি ভুল তো সংশোধন করতেই হবে।
এই বলে প্রিয়া আরিশের ডান গালে একটা চুমু দেয়।
-খুশি তো?
- নাহ্। শুধু এক গালে দিলে কেন? বাম গালেও দাও
- সরো তো!
- হাহাহা। আচ্ছা শুনো একটা কথাই তো তোমাকে বলা হয়নি।
- কি কথা?
- বলবো?
- হ্যাঁ।
- তাহলে আরেকটা চুমু দিতে হবে
- ঢং না করে বলো তো!
- শর্তে রাজি হলেই বলবো।
- আচ্ছা যাও দিবো। এবার তো বলো।
- আজকে আরিশাও আসছে।
- সত্যি?
- হুম। 
- তাহলে তো অনেক মজা হবে।
- কচু হবে।
- এই কচু হবে কেন?
- তা নয়তো কি?  আরিশা আসলে কি আর তোমার ধারেকাছে ঘেষতে পারি। সারাক্ষণ তো তোমার পাশেই বসে থাকে আর এখন তো তোমাকে ছাড়বেই না।
- হু! হিংসে তাই না?
- উহু! কষ্ট হয়, বউকে ছাড়া থাকতে।
- ঐ তোমার অফিসে যেতে লেট হচ্ছে না? তাড়াতাড়ি যাও।
- আগে শর্ত পূরণ করো। এবার কিন্তু ঠোঁটে দিবা।
প্রিয়া আরিশকে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে বলে,
- যাও সরো তো!
- হাহাহা আচ্ছা যাচ্ছি যাচ্ছি।
আরিশ প্রিয়ার কপালে আর পেটে আলতো করে চুমু দিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে।

হুম আরিশ আর প্রিয়া এক হয়েছে। আরিশ হারাতে দেয়নি তার ভালোবাসাকে। হাজার অবহেলা সহ্য করেও নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে আপন করে নিয়েছে। ওদের বিয়ের ৩ বছর হয়ে গিয়েছে। একটা নতুন অতিথিও আসতে চলেছে ওদের জীবনে।

বিকালঃ ৪টা ২৫
প্রিয়া ধীরে ধীরে ব্যালকোনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে কিছু অতীত। যা না চাইতেও মনের কোণায় উঁকি দেয়। বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়া। বাতাসে খোলা লম্বা চুলগুলো উড়ছে। প্রিয়া হারিয়ে যাচ্ছে আজ থেকে তিন বছর আগের অতীতে।

প্রিয়া ডিসিশন নিয়ে নিয়েছিল। এভাবে ওর পক্ষে আরিশকে কষ্ট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না আবার রূপের কষ্টও সহ্য করতে পারছে না। তাই ডিসিশন নিয়ে নিয়েছে আরিশ আর রূপকে না জানিয়েই দেশের বাহিরে চলে যাবে। যাওয়ার সব ব্যবস্থাও হয়ে গিয়েছিল।
আরিশাকে বলে দিয়েছিল ওদের বাড়িতে আরিশ আর রূপের বিয়ের কথা যেন ওই জানায়। একবার যদি বিয়ে হয়ে যায় তাহলে আস্তে আস্তে ঠিকই মেনে নিবে আরিশ রূপকে। 

ইদানীং রূপ একটু বেশিই অসুস্থ থাকে। মাথায় যন্ত্রণা করে ভীষণ। শারীরিক অবস্থাও দিনকে দিন খারাপের দিকে যাচ্ছিলো। এটা নিয়ে রূপের বাবা একটু বেশিই চিন্তিত। কিন্তু রূপের যেন আরিশ নামটা ছাড়া আর কোনো মাথা ব্যথা নেই। রূপকথা ভেবেই পায়না যে কেন আরিশ ওকে ভালোবাসতে পারেনা। কেন আরিশ সেই শ্রুতিকে নিয়েই পড়ে আছে। তবে রূপ দমে যায়নি। সহ্য করেছে আরিশের করা অবহেলা। 
একদিন রূপ প্রচন্ড মাথা ব্যথায় কাঁদতে থাকে। এ যেন অসহনীয় ব্যথা। রূপের বাবা রূপকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ডাক্তার বলে দেয় পরেরদিন এসে যেন রিপোর্ট নিয়ে যায়।
পরেরদিন:
- ডাক্তার সাহেব রূপকথার রিপোর্ট'টা? (রূপের আব্বু)
- ওহ আপনি। বসুন
রূপকথা এখন কেমন আছে? মেডিসিন দিচ্ছেন?
- হ্যাঁ আপনার কথামতই।
- হুম!! দেখুন আপনাকে কিছু কথা বলবো নিজের মনকে এই মুহুর্তে একটু শক্ত করুন।
- এভাবে কেন বলছেন আপনি? কি হয়েছে আমার রূপের?
ডাক্তার একটা লম্বার দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো,
- ব্রেইন ক্যান্সার!!
নিজের কানকে যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না। 
- আপনি এসব কি বলছেন ডক্টর?
- শুনতে কষ্ট হলেও এটাই সত্যি।
- এর কি কোনো অপারেশন করা যাবে না?
- দেখুন ক্যান্সার এমন একটা জিনিস যা থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন। অপারেশন করলে বাঁচার সম্ভাবনা একেবারে নেই বললেই চলে। আর অপারেশন না করলে আল্লাহ্ যে কয়দিন রাখে! তবে খুব বেশি সময় নেই ওর হাতে।

বাড়িতে এসে চুপচাপ বসে আছে রূপকথার বাবা। কি করবে না করবে ভেবে পাচ্ছে না। কি করেই বা রূপকে বলবে এই কথা। 
- না, না রূপকে কিছুতেই জানতে দেওয়া যাবে না। আমার মেয়েটাকে আল্লাহ্ যে কয়দিন আছে হাসিখুশিতেই রাখুক।

নিজের মনকে অনেক কষ্টে শান্ত করেন তিনি। নিজেকে যথাসম্ভব কন্ট্রোল করে রূপকথার রুমে যান।
- কেমন আছিস এখন আম্মু?
- ভালো বাবা। ডক্টর কি বললো?
- তেমন কিছু না। ওষুধ খেলেই ঠিক হয়ে যাবে।
- তোমার চোখ এমন লাল হয়ে আছে কেন? তুমি কাঁদছো?
- না রে আম্মু।
রূপকথার আব্বুর গলা ধরে আসছিলো। কোনো রকম কথা বলে তিনি রূপকথার রুম থেকে বেড়িয়ে যান। কিন্তু রূপকথার মনে খটকা লাগছে। বাবা কি কিছু লুকাচ্ছে!!

পরেরদিন রূপকথার বাবা অফিসে যাওয়ার পর তার রুমে ঢুকে রূপকথা। তোষকের নিচে, সোকেসে, আলমারিতে তন্নতন্ন করে রিপোর্ট খুঁজতে থাকে। অবশেষে আলমারীর এক কোণায় রিপোর্ট পেয়ে যায়। রিপোর্ট দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না রূপ। চোখের পানিতে বুক ভেসে যাচ্ছে।
তড়িঘড়ি করে রিপোর্ট যেখানে ছিল সেখানে রেখেই নিজের রুমে চলে যায় রূপ। দরজা আটকে দুকরে কাঁদতে থাকে রূপ।
- কেন আল্লাহ্ কেন! কেন এমন হলো আমার সাথে? তবে কি আরিশকে পাবো না বলেই আমাকে নিয়ে যাচ্ছো? আরিশের ভালোবাসা পাওয়ার ভাগ্য আমার হলো না।
সারা রাত কেঁদে রূপ সিদ্ধান্ত নিলো এভাবে কাঁদলে চলবে না। অনেক কাজ রূপের এখন। রূপ তো আরিশকে আর পাবে না, আরিশ চাইলেও আর তা সম্ভব না। তার আগে খুঁজে বের করতে হবে শ্রুতিকে। শ্রুতির হাতে আরিশকে তুলে দিলেই শান্তি পাবে রূপ। কিন্তু কি করে খুঁজে পাবে রূপকথা শ্রুতিকে!

১ সপ্তাহ্ পরঃ
রূপকথা সকাল সকাল আরিশের বাসায় রওনা দেয়। আরিশের রুমে গিয়ে দেখে আরিশ ঘুমুচ্ছে। মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে। আগের মত চেহারা শরীর কিছুই নেই। থাকবেই বা কিভাবে? যদি ভালোবাসার মানুষটার কাছেই এভাবে দিনের পর দিন অবহেলিত হয়।
রূপকথা আরিশের পাশে বসে। 
- আরিশ! তোমাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে আমার জন্য। আমি তো তোমার ভালোবাসা পাই'ই নি। কিন্তু তুমি তো তোমার ভালোবাসা পেয়েও হয়েছো শুধু অবহেলিত। আর তার কারণটাও আমি। আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো আরিশ। আমিও যে তোমাকে খুব ভালোবাসি। 
ঘুমন্ত আরিশের কপালে চুমু খায় রূপকথা। আরিশ ঘুম থেকে লাফ দিয়ে ওঠে।
- এত সকালে তুমি?
- কেন অবাক হলে?
- না, তা নয়। কিন্তু কি মনে করে?
- এক জায়গায় যাবো। উঠো ফ্রেশ হয়ে আসো।
- কোথায় যাবে?
- আগে ফ্রেশ তো হয়ে আসো।
আরিশ ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে রূপকথা ব্যালকোনিতে দাঁড়িয়ে আছে।
পেছন থেকে আরিশ রূপকথাকে ডাক দেয়
- রূপ
- হয়ে গেছে তোমার?
- হুম।
রূপ তাকিয়ে আছে। অবাক দৃষ্টি করুণাময়ী হয়ে। আজ তার ভালোবাসার মানুষটিকে ছেড়ে সে সারাজীবনের মত চলে যাবে। শেষবারের মত খুব ইচ্ছে করছিলো আরিশকে একবার জড়িয়ে ধরতে। না পেরে আর জড়িয়েই ধরলো আরিশকে। খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।
- রূপ? কি হয়েছে তোমার? কাঁদছো কেন?
- (চুপ)
- কি হলো বলবে তো?
- আজ কিছু চাইবো তোমার কাছে। দিবে? (কান্নাজড়িত কণ্ঠে)
- নিশ্চয় বলো
- আমার কপালে একটা চুমু দিবে প্লিজ?

আরিশ কি উত্তর দিবে বা কি বলবে বুঝতে পারছে না। আরিশ তো জানে যে রূপ আরিশকে ভালোবাসে। কিন্তু আজ এরকম আচরণের কোনো মানে খুঁজে পায় না আরিশ।
- প্লিজ আরিশ। আজ আর ফিরিয়ে দিয়ো না
অনেক সংকোচ নিয়েই আরিশ রূপকথার কপালে আলতো করে চুমু খেলো।
- ব্যাস! আমার সুখ আমি পেয়ে গেছি আরিশ। আর কিচ্ছু চাওয়া বা পাওয়ার নেই আমার।
- কি হয়েছে একটু বলবে প্লিজ?
- বলবো না, দেখাবো চলো।

রূপকথা আরিশকে টেনে বাহিরে নিয়ে যায়। একটা পার্কের সামনে গাড়ি দাঁড় করায়।
- নামো (রূপ)
- পার্কে কেন?
- তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে?
- সারপ্রাইজ?
- হ্যাঁ। পার্কে ঢুকে সোজা পুকুরের পাশটায় যাবে।
- তুমি যাবে না?
- না।
- কেন?
- উফফ! এত প্রশ্ন করো না তো। যাও এখন।
আরিশ পার্কের ভেতর ঢুকে। এই পার্কটা অচেনা নয় আরিশের। এর আগে কয়েকবার এসেছিলো বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে। পুকুরের কাছে যেতেই দেখলো পুকুরের সিঁড়িতে একটা মেয়ে বসা। চিনতে একটুও কষ্ট হলো না যে এটা শ্রুতি। কাছে গিয়ে পেছন থেকে ডাক দিলো আরিশ।
- শ্রুতি!!
প্রিয়া পেছনে ঘুরে অবাক চোখে তাকায়।
- আরিশ তুমি এখানে?
- আমাকে তো এখানে রূপ পাঠালো। বললো কি নাকি সারপ্রাইজ আছে
- আমাকেও তো এখানেই রূপই আসতে বললো। আর একই কথা আমাকেও বলেছে।
এরমধ্যেই আরিশের ফোনে ম্যাসেজ টোন টা বেজে উঠে। রূপকথার ম্যাসেজ
- সারপ্রাইজটা এখনো বুঝতে পারছো না? পুকুরের পাশে যে কৃষ্ণচূড়া ফুল গাছটা আছে ঐ গাছের নিচে দেখো ইটের টুকরো দিয়ে রাখা একটা চিঠি। ওটা পড়লেই সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে। আর হ্যাঁ চিঠিটা অবশ্যই প্রিয়াকে সাথে নিয়ে পড়বে।
আরিশ তাড়াতাড়ি কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে গিয়ে চিঠিটা নেয়। প্রিয়া আর আরিশ দুজনেই পড়তে শুরু করে,
- প্রিয়া,
তুই তো আমার ফ্রেন্ড নস শুধু। তুই আমার বোন আমার কলিজা। তুই সেই ব্যক্তি যে আমাকে হাসতে শিখিয়েছিস। যে আমাকে একটা সুন্দর মুক্ত জীবন দান করেছিস। চারদেয়ালে বন্দি থাকা আমিকে পাখির মত উড়তে শিখিয়েছিস। তোর কাছে অনেক ঋণিরে আমি। আমি জানি এই ঋণ আমি কখনো শোধ করতে পারবো না। তবে খুব বড় একটা ভুল আমি করতে যাচ্ছিলাম। আর এই একমাত্র এই ভু্লটাই সংশোধন করিসনি আমার। কেন করিসনি? আমি আরিশকে ভালোবাসি বলে? আমি জানি, আমি আরিশকে যতটা ভালোবাসি তার চেয়েও হাজারগুণ বেশি ভালোবাসিস তোরা দুজন দুজনকে।
মনে আছে তোর? 
একদিন তুই বলেছিলি, আমার জন্য সব করতে পারিস। এমনকি নিজের সবচেয়ে দামী বা প্রিয় জিনিসটাকেও তুই আমাকে দিতে পারিস সেটা যদি ভালোবাসাও হয়। আর আমিও মজা করে বলেই ফেলেছিলাম, যদি তোর ভালোবাসার মানুষটাকে চাই? কে জানতো মজা করে বলা এই কথাটাই যে সত্যি হয়ে যাবে।  কিন্তু বিশ্বাস কর, আমি যদি আগে জানতাম এই আরিশই তোর ভালোবাসার মানুষ তাহলে কখনোই এত বড় ভুল করতে যেতাম না। কিন্তু তুই কি করে পারলি আমার জন্য আরিশকে ছেড়ে দিতে? কি করে পারলি ওকে অবহেলা করতে? খুব ভালোবাসিস আমায়? আমিও তোকে খুব ভালোবাসিরে। আমার থেকেও তোর ভালোবাসার শক্তি অনেক বেশি জানিস! আর তাই তো তুই আর আরিশ সব লুকিয়ে যাওয়ার পরও আল্লাহ্ আমাকে সত্যটা জানিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
এই পথ যদি আল্লাহ্ না দেখাতো তাহলে হয়তো আমি তোর মত এত মহৎ হতে পারতাম না রে। আমি হয়তো ঠিকই আরিশকে চাইতাম। 
ভাবছিস কি বলছি এসব? এসবই সত্যি। আমার ব্রেইন ক্যান্সার হয়েছে। ডক্টর জানিয়েছে আর বেশিদিন নেই আমি দুনিয়ায়। এই কষ্ট পাচ্ছিস? খবরদার কাঁদবি না একদম।
আরিশ,
তুমি প্রিয়াকে মানে তোমার শ্রুতিকে সারাজীবন আগলে রেখো। আমি যেই ভু্লটা করেছি পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো। আমার জন্য তোমাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে কিন্তু আর নয়। আর কোনো কষ্ট পেতে হবে না তোমাদের।
তোমার শ্রুতিকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দিলাম।
ভাবছো তোমাদের কথা কি করে জানলাম? আরিশা! আরিশা বলেছে। অনেক কষ্টে জানতে পেরেছি। 
প্রিয়ার কাছে অনুরোধ, আরিশকে এবার আর ফিরিয়ে দিস না। আর কষ্ট দিস না, অবহেলা করিসনা। ভালোবেসে এবার কাছে টেনে নে। ওকে কষ্ট দিলে যে আমিও কষ্ট পাবো। 
আর একটা কথা, চিঠিটা পড়ার পর আমাকে খোঁজার বৃথা চেষ্টা করিস না একদম। আমি বাবাকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাচ্ছি। আমি মরে গেলে বাবা তোদের জানাবে বুঝলি! তখন একবার আমাকে দেখতে আসিস? তোরা দুজন একবার হলেও আমার মরা দেহটাকে বুকে জড়িয়ে নিস?
ভালো থাকিস তোরা। খুব শিঘ্রয় বিয়ে করে নিস। তোদের মাঝখানে থেকে আর কেউ কাউকে অবহেলা করার সুযোগ দিবো না। অবহেলিত আর কোনো সম্পর্ক তোদের জীবনে স্থায়ী হতে দিবো না।
আল্লাহ্ হাফেজ।

ইতি
রূপকথা

চিঠি পড়ে প্রিয়ার হাত কাঁপছে। চোখ দিয়ে অশ্রুকণা পড়ছে দুজনেরই। এমনটা না হলেও হয়তো পারতো। অনেক খুঁজেও রূপকথাকে পায়নি ওরা।
তার ঠিক মাস দুয়েক পর রূপকথাকে দেখতে পায় ওরা। তবে জীবিত অবস্থায় নয় মৃত!!

অতীতের কথা মনে পড়তেই প্রিয়ার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। প্রিয়া চায়নি এমন কিছু হোক। এভাবে রূপকথাকে কেড়ে না নিলেও পারতো আল্লাহ্। আজ খুব বেশিই মনে পড়ছে রূপের কথা।

অতীতের স্মৃতি ঘাটতে গিয়ে কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে সেদিকেও খেয়াল নেই প্রিয়ার। 
আরিশ রুমে এসে দেখে লাইট অফ। সন্ধ্যার লাইটও জ্বালায়নি প্রিয়া। আরিশ বারান্দায় গিয়ে পেছন থেকে প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে। তাড়াতাড়ি করে চোখের পানি মুছে নেয় প্রিয়া। কিন্তু দৃষ্টি এড়ায় না আরিশের।
প্রিয়াকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,
- কি হয়েছে বাবুই?  কাঁদছো কেন?
- (চুপ)
- বাবা-মায়ের কথা মনে পড়ছে?
- উহু
- আপুকে মিস করছো?
- উহু
- পেইন করছে পেটে? বাবু নিশ্চয় পেটে কিক দিচ্ছে তাই না? দাঁড়াও আমি ওর সাথে কথা বলছি, আমার বাবুইকে ব্যথা দেওয়া!
এই বলেই আরিশ হাঁটু গেড়ে বসে। প্রিয়ার পেটে কান দিয়ে বলে,
- কি ব্যাপার ছোট সাহেব, আমার বউকে ব্যথা দিচ্ছো কেন হুম? ও না তোমার মাম্মাম হয়? মাম্মামকে কেউ এভাবে কষ্ট দেয় সোনা?!

প্রিয়া এবার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেই দেয়,
- রূপের কথা মনে পড়ছে আমার।

রূপের কথা শুনতেই বুকে মোচর দিয়ে ওঠে আরিশের। নিজেরই চোখটা কেমন ছলছল করছে। কিন্তু প্রিয়াকে এটা বুঝতে দেওয়া যাবে না আর ওর এই সময়ে ওকে এসব চিন্তাও করতে দেওয়া যাবে না।
আরিশ উঠে দাঁড়ায় প্রিয়ার সামনে। প্রিয়ার দু'গালে আলতো করে হাত রাখে আরিশ
- আমার দিকে তাকাও
- হু
- দেখো! যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এসব ভেবে এখন কোনো লাভ আছে বলো? তোমার মাঝে এখন আরেকজন বেড়ে ওঠছে তার কথা ভাবতে হবে না?
প্রিয়া আরিশকে জড়িয়ে ধরে,
- মাঝে মাঝে নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হয় আরিশ। মনে হয় এসবকিছুর জন্যই যেন আমিই দায়ী।
- ধুর পাগলী! এসব কোনো কিছুই তোমার বা আমার হাতে ছিল না। জন্ম মৃত্যু সব তো আল্লাহর হাতে।
তুমি প্লিজ আর কেঁদো না।
প্রিয়া আরিশের বুকেই কাটিয়ে দেয় সন্ধ্যাটা। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,
যদি কোনো ভুল করে থাকি ক্ষমা করে দিস রূপ! ভালো থাকিস ওপারে। আর জানিস তো, আমাদের না মেয়ে হবে। আর তার নাম রাখবো তোর নামের সাথে মিলিয়ে। "রূপসা" নামটা কে রেখেছে জানিস? তোর ভালোবাসার মানুষ আরিশ!
খুব মিস করি তোকে রূপ খুব।
আপনমনেই এসব ভেবে যাচ্ছে প্রিয়া।
- বাবুই
- হু
- রুমে চলো
- হুম
আরিশ প্রিয়াকে কোলে করে রুমে নিয়ে যায়। বিছানায় বসিয়ে দেয়।
- তুমি বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসি
- কিছু দেওয়া বাকি ছিল
- কি?
- মুখে না বলে দিয়েই দেই? 
আরিশের ঠোঁটে গভীরভাবে নিজের ঠোঁট মিশিয়ে নেয় প্রিয়া।
- সকালে এটাই বাকি ছিল সাহেব
বলেই লজ্জায় মুখ লুকায় আরিশের বুকে।
- ভালোবাসি পাগলীটা
- আমিও ভালোবাসি পাগলটা!
রূপ আর কষ্ট দিবো না, কোনোভাবে অবহেলা করবো না তোর ভালোবাসার মানুষটিকে!! সারাজীবন এভাবেই ভালোবেসে আগলে রাখবো। আমি জানি দূর থেকে তুই সব দেখিস। তোর শূন্যতা অনেক ভাবায় আমায়। মনে হয় যদি তুই ফিরে আসতি আরেকটাবার!!



                                  ***(সমাপ্ত)***
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।