১৩!!
সেদিন রাতে জ্বরের তাড়নায় অবস্থা খারাপ জুঁই । নাফিস ইফসিকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে জুঁইয়ের মাথার কাছে বসে আছে । শরীরের ব্যাথায় ককিয়ে উঠে জুঁই । জুঁইয়ের যন্ত্রণায় ছটফট করে উঠে নাফিসের ভেতরটা । তখন নাফিস জুঁইয়ের খুব কাছে চলে যায় ,
- কি হলো জুঁই ?
-...............
- এই ,,,,,, এই কাদম্বরী , কি হয়েছে ?
- নাফিস পুরো শরীর ব্যাথা করছে , উফফফ কোমড় ফেটে যাচ্ছে , পা টাও ব্যাথা করছে অনেক ।
- পেইন কিলার দিলাম এরপরেও কমছে না ?
- উহু ।
নাফিস জুঁইয়ের চোখে পানি দেখে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারে নি । পুরো রুম খুজে মুভ মলম খুজে আনে সে । আজকে না হয় সে স্বামীর দায়িত্বটাও পালন করবে । লাজ লজ্জা এক পাশে রেখে জুঁইয়ের শরীরে হাত দেয় নাফিস । জুঁইয়ের সেলোয়ার উপরে তুলে দিয়ে মুভ দিয়ে দেয় নাফিস । নিজের শরীরে নাফিসের হাত পড়েছে কিন্তু তাতে তার খেয়াল নেই কারণ সে জ্বরে ঘোরের মধ্যে । নাফিস জুঁইকে ঘুরিয়ে জুঁইয়ের জামা তুলে কোমড়ে মুভ দিয়ে দেয় । প্রায় অনেক্ষণ পর জুঁইয়ের ব্যাথাটা দমে আসে । শেষ রাতের দিকে জুঁই ঘুমিয়ে যায় । জুঁইয়ের পাশে ইফসিটাও ঘুম । নাফিস ঘড়িতে দেখে তখন ভোর রাত ৪ টা । জ্বরের প্রকটে জুঁইয়ের হয়তো কিছুই খেয়াল নেই । নাফিস সামনের রুমে গিয়ে পাশে থাকা খাটে নিজের শরীরটাকে ছেড়ে দেয় । মনে তার একটু হলেও শান্তি আসে । তার ক্লান্তু শরীরে কিসের যেনো একটা প্রশান্তি কাজ করে । আজ যেন তার করা কিছু কৃতকর্মের জন্য সে অনেকটাই দ্বায় মুক্ত । শুয়ে তো আছে সে কিন্তু বার বার জুঁইকেই মনে পড়ছে তার । জুঁই তখনও ঘুমে বেহুশ । এদিকে নাফিসের অন্তর পুড়ে ছাই ।
আগুন মানুষকে শারীরিক ভাবে যতটা না পোড়ায় তার চেয়েও বেশি পোড়ায় মনে । আগুনের কাছে আগুন শরীরকে পুড়িয়ে শেষ করে দেয় । আর প্রেমের আগুন মনকে জ্বালিয়ে শেষ করে দেয় । নাফিসকে প্রেমের আগুন গ্রাস করেছে বর্তমানে ।
সকাল ৯ টার পরে জুঁইয়ের ঘুম ভেঙে যায় । আজ শরীর অনেকটাই ভারমুক্ত মনে হচ্ছে তার নিজের কাছে । শরীরের ব্যাথাটাও আজ কম । হঠাৎ খেয়াল এলো নাফিসের কথা । কাল রাতে হয়তো নাফিস তার বাসাতেই ছিল । কিন্তু জুঁই বুঝতে পারছে না কিছুই ।
- আশ্চর্যের বিষয় হলো নাফিস কিভাবে টের পেলো আমি অসুস্থ । অফিসে কেউ কিছু বলেছে নিশ্চয়ই ।
পাশে থাকা ওড়নাটা নিজের গায়ে জড়িয়ে নিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায় জুঁই । পর্দা সরিয়ে সামনের রুমে এসে দেখে নাফিস রান্নাঘরে কি যেন করছে । সেই কালকের জামাকাপড় পরা । অন্যদিকে নাফিস জুঁইকে দেখে একটু অবাক হয়ে যায় । অবাক হওয়ার কারণ আছে তা হচ্ছে সে ভাবে নি জুঁই এত তাড়াতাড়ি উঠে যাবে । ঠোঁটের কোণে হাল্কা মুচকি হাসি দিয়ে নাফিস জুঁইয়ের দিকে এগিয়ে আসে ।
- ঘুম ভেঙেছে ?
- হু , তুমি এখানে এখনও ?
- ঘুম কেমন হলো , শরীরের কি অবস্থা এখন ?
- নাফিস আমি প্রশ্ন করেছি , তুমি এখনও এখানে কি করছো ? অফিসে যাবে না ? আর কাল রাতে এখানে ছিলে ?
- এখানে আছি তোমাদের জন্যে । অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি একদিন । কাল রাতে এখানেই ছিলাম ।
- কেন নাফিস ?
- তোমার শরীর ভালো না , তোমার দিন দুনিয়ার খবর থাকে নাকি জ্বর হলে ? তার উপর তোমার মা মানে আন্টিকেও বলো নি আসতে । তা আমি কিভাবে যাই , বলো তো ?
জুঁইয়ের মন যেনো আবার নাফিসের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে । কেন জানি মন আবারও বেহায়া হতে চাচ্ছে । নাফিস জুঁইয়ের কাছ থেকে সরে গিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে যায় । আর বলতে থাকে ,
- কাদম্বরী এক কাজ করো , ফ্রেশ হয়ে নাও । পরোটা বানিয়েছি আর তোমার ফেভারিট গাজর আর আলুর ভাজি । এক সাথে খাওয়া যাবে । আর তোমার যেটা সব থেকে বেশি প্রিয় আমার হাতের মালাই চা । সেটাও করেছি ।
নাফিসের কথায় চমকে গেলেও নিজেকে দমিয়ে রাখে জুঁই । শরীরে শক্তিও নেই যে দাঁড়িয়ে থাকবে । তাই নিজের শরীরটাকে রান্নাঘরের দরজার সাথে ছেড়ে দিয়ে হেলে দাঁড়ায় জুঁই । তারপর নাফিসকে উদ্দেশ্য করে বলে ,
- প্রিয় মানুষটাই যখন জীবনে নেই তখন প্রিয় খাবার গুলো আর নাই বা থাকলো ।
জুঁইয়ের কথা শুনে নাফিসের হাত সেখানেই স্তব্ধ হয়ে যায় । জুঁই কথাটা এমন ভাবে বললো , যে সব কিছুই ভেস্তে গেলো । নাফিস খুব দ্রুত জুঁইয়ের সামনে দাঁড়ায় । জুঁইয়ের একদম কাছে চলে আসে নাফিস ।
- একবার অপরাধ করেছি বলে কি আরও একবার সুযোগ দিয়ে ভালোবাসা যায় না আমায় ?
- আমি তো আমার মাঝেই নেই । ভালোবাসবো কি ? এখন আর সেই সুযোগ টাও নেই , তুমি যাকে ছেড়ে গিয়েছিলে সে একজন কুমারী ছিল । আর এখন যাকে আপন করতে চাইছো সে এক বাচ্চার মা ।
কথাটা বলে জুঁই পেছনে ফিরে রুমে যেতে নিলে নাফিস জুঁইকে পেছন থেকেই জড়িয়ে ধরে । নাফিসের স্পর্শ পেয়ে জুঁই কেঁপে ওঠে । নাফিস এইভাবে তাকে জড়িয়ে ধরবে ভাবে নি সে ।
- নাফিস ছাড়ো আমায় ।
- চুপ ,,,
- নাফিস , ছাড়ো আমায় , বলছি ছাড়ো ।
- নাহ ,,
- তুমি এই মুহুর্তে আমার কাছে পর পুরুষ । তোমার স্পর্শেও পাপ হবে আমার ।
- চুপ করতে বলছি । তুমি আমার কাছে আগে যেমন আমার কাদম্বরী ছিলে এখনও সেই কাদম্বরীই আছো ।
এই বলে নাফিস জুঁইয়ের ঘাড় থেকে চুল সরিয়ে ঘাড়ে চুমু দিয়ে জুঁইকে ছেড়ে দেয় । নাফিসের ঠোঁটের স্পর্শে জুঁই আরও কাবু হয়ে যায় । পেছন থেকে নাফিস আবারও বলে উঠে ,
- ফ্রেশ হয়ে আস্তে আস্তে ইফসিকে ডাকো , দেখো উঠে কিনা । যাও ,
নাফিস আগেও জুঁইকে এমন শাসন করতো আর এখনও করে ঠিক আগের মত । কিন্তু সময়টাই আর আগের মত নাই ।
দুপুরের দিকে সব কিছু গুছিয়ে দিয়ে জুঁইকে মেডিসিন বুঝিয়ে দিয়ে ইফসিকে খাইয়ে দিয়ে নাফিস বাসা থেকে চলে যায় । যাওয়ার আগে দরজা অবদি এগিয়ে আসে জুঁই । আর নাফিস সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগায় । দরজার কাছে এসেই চট করে জুঁইকে জড়িয়ে ধরে সে । জুঁইয়ের মন যেন আরও দুর্বল হয়ে যায় , নাফিসের স্পর্শ তার শরীরে পড়া মাত্র নিজেকে আবার নতুন করে আবিষ্কার করে জুঁই । তবুও অতীতের কথা মনে পড়লে নিজের মনের মধ্যে যেন কেউ ছুরি চালাচ্ছে । তাই জুঁই নিজ থেকেই বলে দেয় ,
- বার বার এভাবে আমায় কেন জড়িয়ে ধরছো নাফিস ? আমি তোমার প্রাক্তন , তুমি আমার প্রাক্তন ।
- মানি না ,
- কোনটা মানো না , সব তো নিজের হাতে শেষ করে দিয়েছো ।
- কিন্তু ফিরেও এসেছি ।
- কখন এলে , যখন ফিরে আসার কথা ছিল তখন তো ফিরে এলে না । কথা তো দিয়েছিলে ফিরবে ।
- ফিরে তো এসেছি ,
- সময় টা আর নেই ।
নাফিস জুঁইকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দেয় । তারপর জুঁইয়ের দুই গালে নিজের দুই হাত রাখে । তারপর জুঁইয়ের আরও কাছে চলে আসে সে ।
তুমি মোর প্রাণ বীনা
মোর স্বপনে আছো মিশিয়া
দূরে সরিয়ে রেখেছিলেম তোমায়
তবে সদা ছিলে মনতে প্রিয়া
ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি
আমি যে তোমায় ভালোবাসি
যত দূরে ছিলে তুমি মোর থেকে
তত কষ্টে রেখেছি আমি নিজ আমাকে
একটা কথাই বলবো তোমায়
ওগো আমার কাদম্বরী
শুনতে পাচ্ছো তুমি
হ্যাঁ গো আমি তোমাকেই ভালোবাসি
কাব্যটা বলে নাফিস জুঁইয়ের কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে এক পা পিছনে দিয়ে আবার ঘুরে তাকায় জুঁইয়ের দিকে । তারপর বলে যায় ,
- রেডি থেকো তুমি কাদম্বরী , আমি এই সাদায় রাখবো না তোমায় । রাঙা শাড়িতে তোমায় তোমায় রাঙিয়ে আমার মনের রানী করে নিয়ে যাবো তোমায় কাদম্বরী ।
এই বলে নাফিস চলে যায় । আর জুঁই সেথায় অবাক নয়নে নাফিসের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয় ।
১৪!!
দুইদিন পর আজ নাফিস অফিসে এসেছে । এদিকে দুইদিন পর আজ জুঁইও অফিসে এসেছে । এক সাথে এক দিনে অফিসে দুজনের আগমনে স্টাফদের মাঝে হাজারো কথার জন্ম দিয়ে দিয়েছে । যা নাফিস আমলেও নেয় নি আর জুঁই যেটা নিয়ে ভয় বেশি পেয়েছে সেটাই হচ্ছে ভেবে আরও বেশি করে ভয় পাচ্ছে ।
আজ দুইদিন পর দুজনকে অফিসে দেখে মাহবুব সাহেব তাদের এক সাথে ডেকে রুমে পাঠান । নাফিস নিজের মত করেই আছে , ভয় পাচ্ছে জুঁই । আর তার রাগ হচ্ছে ভিষণ নাফিসের উপর । এতকিছুর কোন প্রয়োজন ছিল না সেদিন ।
অতঃপর দুজনই বসের রুমে দাঁড়িয়ে আছে । মাহবুব সাহেব দুজনকেই ইংগীত করে বললেন ,
- নাদিরা আপনু কি সুস্থ হয়েছেন ?
জুঁই বসের কথায় একটু ঘাবড়ে গেলেও নিজেকে শক্ত রাখে । তারপর অত্যন্ত সাবলীল ভাবেই উত্তর দেয় ,
- আলহামদুলিল্লাহ স্যার । আমি ভালো আছি ।
তখন মাহবুব সাহেব নাফিসিকে উদ্দেশ্য করে বলে ,
- নাফিস সাহেব , আপনার ঝামেলা শেষ হয়েছে তো ?
নাফিস তখন অত্যন্ত ভদ্রতার সহিত জবাব দেয় ,
- জ্বি স্যার , ঝামেলা শেষ হয়ে গেছে ।
তখন মাহবুব সাহেব দুজনকেই বলে ,
- অদ্ভুত ব্যাপার তাই না দুজনের কাজ এবং অসুস্থতা এক সাথেই শেষ হলো । যাক ভালো লাগলো শুনে । ওকে , নাদিরা আপনি যেতে পারেন ।
- জ্বি স্যার ,
- নাফিস সাহেব , আপনি দাড়ান । কিছু কথা আছে আপনার সাথে আমার ।
- জ্বি স্যার ।
মাহবুব সাহেব এর কথায় জুঁই চলে যায় আর নাফিস থেকে যায় । সেখানে মাহবুব সাহেব আর নাফিসের চোখে চোখে কথা হয় । তার কিছুক্ষণ পর নিরবতা ভেঙে মাহবুব সাহেব হেসে দেয় । সেই সাথে নাফিসও হেসে দেয় । আর তখন নাফিসকে মাহবুব সাহেব বলে ওঠে ,
- শালা বস এইখানে ,
- ভাইয়া বাঁচালে তুমি ।
- কি দরকার ছিল এত কিছু করার ?
- ওর যা অবস্থা ছিল তুমি জানো ?
- খালাম্মা কি বললো বাসায় যাওয়ার পরে ?
- তেমন কিছুই না ।
- দেখ নাফিস , তুই কি ভেবে চিন্তে এগুচ্ছিস ?
- হ্যাঁ ভাইয়া ।
- তোর মা মানবে বলে মনে হচ্ছে না । তখনই মানলেন না আর এখন তো জুঁইয়ের একটা মেয়েও আছে , এখন কি করে মানবেন ।
- মায়ের জন্যেই তিন বছর আগে অনেক ভুল করেছি ভাইয়া , আর না । আর হ্যাঁ তোমাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ বুঝলা , এইভাবে সাহায্য করার জন্যে ।
- ধুর , কি সব বলিস না । আচ্ছা যা কাজ কর গিয়ে ।
- ওকে ।
মাহবুব আর নাফিস খালাতো ভাই । জুঁইয়ের ব্যাপারে মাহবুব আগে থেকেই জানতো কিন্তু জুঁইকে কখনো দেখে নি সে । আর নাফিস এই অফিসে জয়েন হওয়ার পরেই নাফিস মাহবুবকে সব শেয়ার করে । অফিসের কোন কর্মচারীই জানেন না যে এরা দুজন সম্পর্কে ভাই হয় । মাহবুব তার নিজের দিক দিয়ে পুরো চেষ্টা করছে যাতে এই দুটো মানুষ আবার মিলিত হতে পারে ।
লাঞ্চ আওয়ারে ক্যান্টিনে বসে জুঁই ইফসিকে খাইয়ে দিচ্ছে । এমন সময় সেখানে নাফিস গিয়ে দাঁড়ায় । ইফসিকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করে । আর ইফসিও নাফিসের কোলে চড়ে বেশ মজা করে । তখন নাফিস জুঁইকে বলে ,
- কেমন আছো কাদম্বরী ?
-.................
জুঁইয়ের স্তব্ধতা দেখে নাফিস আবারও প্রশ্ন করে ,
- কি হলো , কথা কেন বলছো না ?
- এটা অফিস নাফিস , এইখানে অন্তত ড্রামা করবেন না ।
- যা করি সবটাই ড্রামা মনে হয় তোমার কাছে ।
- হ্যাঁ , আজকাল যা করেন সবটাই ড্রামা লাগে আমার কাছে । আর কিছু ?
- রেগে যাচ্ছো কেন ?
- ইফসিকে নামান আর এখান থেকে যান । এমনিতেও অফিসে সবাই নানান কথা তুলে ফেলেছে । দয়া করে আমায় রেহাই দিন । নামান ও-কে ।
জুঁইয়ের কথা শুনে নাফিস অবাক হয়ে যায় নি । বরং জুঁইয়ের রাগান্বিত মুখটা দেখে যাচ্ছে । তারপর ইফসিকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে জুঁইকে উদ্দেশ্য করে একটা কথা বলে নাফিস ,
- ভুল যখন করেছি আমি তার প্রায়শ্চিত্তও আমিই করবো । কথা যখন দিয়েছিলাম ফিরবো , ফিরে তো এসেছি । এইবার আমার শহরে তোমাকে আপন করে তোমার পায়ে শিকল পরানোর পালা ।
নাফিসের এমন কথায় জুঁই ভড়কে যায় । তৎক্ষনাৎ মেজাজ তার বিগড়ে যায় আর তখন সেও পালটা জবাব দিয়ে দেয় ।
- খবরদার , খবরদার নাফিস । আর যাই হিয়ে যাক না কেন আমায় করুণা কিংবা দয়া দেখাতে আসবেন না । আমার দুর্বল চিত্তে একবার আঘাত করেছিলেন । সেই আঘাতের ঘা টা আজ তিন বছর পরও সাড়ে নি । এই ঘা তে নতুন ঘা দিতে আসবেন না ।
তখন নাফিস একবার জুঁইয়ের দিকে তাকায় আবার এদিক ওদিক তাকায় । তারপর টুপ করে ইফসির সামনেই জুঁইয়ের কপালে চুমু খেয়ে নেয় । এই মুহুর্তে জুঁই কি রিয়েকশন দিবে তা তার অজানা । স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে জুঁই নাফিসের সামনে । আর ইফসিও নাফিস আর জুঁইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে টুক টুক করে তাকিয়ে আছে । তারপর নাফিস আবার বলে ,
- ললাটে ভালোবাসার পরশ তো একে দিয়েছি । এখন শুধু তোমার রাজ্যে রাজ করার পালা । রেডি থেকো আমার কাদম্বরী ।
- জোর করছো নাফিস ?
- জোর না , অধিকার ফলাচ্ছি ।
- সব চুকে যাওয়ার পরেও অধিকারবোধ জন্মায় কি করে ।
- যেভাবে এখনও তোমার ওই মনে আমার নামটা খোদাই করা আছে সেইভাবে ।
এই বলে নাফিস চলে যায় । আর জুঁই তখন নিজের মনে জমাট বেঁধে থাকা কষ্ট গুলোকে পানি রূপে নিলাম করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ।
পর মুহুর্তেই মোহি সেখানে উপস্থিত হয় । মোহি আচমকাই জুঁইয়ের চোখের পানি দেখে ফেলে । জুঁইও মোহিকে আচমকা দেখে ভড়কে যায় । চট করেই চোখের পানি গুলো মুছে নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে সে । মোহি বুঝেও চুপ করে থাকে । কারণ মোহি তখন ১০০% এর মধ্যে ৭০% বিশ্বাস করে নিয়েছে নাফিস আর জুঁইয়ের মাঝে কিছু তো আছে ।
- তাহলে কি নাফিস স্যার আর ম্যাডামের মাঝে অবৈধ সম্পর্ক হয়ে গেছে ? কিন্তু ম্যাডাম তো বিবাহিত । আর দেখেও তেমন মনে হয় না । কিন্তু সেদিন পার্টির পরে যে ওনারা এক সাথে চলে গেলেন । আবার আজ দুজনই দুই দিন পর এলেন । এসব তো একটা দিকই নির্দেশ করে ।
পর মুহুর্তেই মোহি ইফসির দিকে নজর দেয় । কত নিষ্পাপ একটা বাচ্চা জুঁইয়ের পাশে । এখন মাইন্ড আবার অন্যদিকে ঘুরছে তার।
- নাহ নাহ , ছি ছি , কি সব বলছি আমি । ম্যাডাম তো মোটেও এমন চরিত্রের না । তাহলে অবৈধ সম্পর্ক কেন বললাম । আল্লাহ পাক আমায় ক্ষমা করুন । আমি কিসব ভেবে যাচ্ছি ।
ইফসিকে নিয়ে জুঁই তখন নিজের কেবিনে চলে যায় । ইফসিকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে জুঁই কাজে মন দেয় । কিন্তু কাজে তার মন নেই , মন শুধু একটা জিনিসের উপরই ঘুরপাক খাচ্ছে । কি হতে পারে তার ভবিষ্যৎ , কি হতে পারে তার বাচ্চার ভবিষ্যৎ । নাফিস কেন ফিরতে চায় । কেন দায়িত্ব নিতে চায় । কিছুই বুঝে আসে না তার ।
নানান টেনশন আর উদ্বেগের সাথে কেটে যায় প্রায় এক সপ্তাহ । নাফিস এই এক সপ্তাহে প্রতিদিন জুঁইয়ের বাসায় আসে । ইফসির সাথে খেলা করে , ইফসিকে নিয়ে বাহিরে যায় আর জুঁইকে আড় চোখে দেখে যায় ।
এর মাঝে জুঁই শত দুর্বল হয়েও নিজেকে নাফিসের সামনে তুলে ধরে নি । কারণ এই সময়ে এইসব সবাই ভালো ভাবে নিবে না । তার নিজের ভাই ভাবীই বা এই ব্যাপার টা কিভাবে মেনে নিবে । আর নাফিসের পরিবার যেই পরিবারের জন্যে মিথ্যা অজুহাতে সে জুঁইকে ছেড়ে গিয়েছিল সেই পরিবার তাকে কিভাবে গ্রহণ করবে ।
দিনটি শুক্রবার ,
নাফিস আজও এসেছে । বিকেলের দিকে নাফিসকে নিজের বাসায় থেকে খানিকটা অবাকই হয়ে যায় জুঁই । নাফিস হাতে করে ইফসির জন্যে অনেক কিছুই নিয়ে আসে । যা জুঁইয়ের চোখে লাগে । নাফিস সোজা ইফসির কাছে চলে যায় । জুঁই দরজা লাগিয়ে দিয়ে সোজা নাফিসের কাছে গিয়ে দাঁড়ায় ।
- নাফিস এইসব ঠিক না , কেন বার বার আসো তুমি এখানে ?
- তোমার কাছে আসি আমি ?
- আমার মেয়ের কাছে তো আসো । কেন আসো ?
- আমার মন চায় তাই আসি ।
- মানুষ নানান কথা বলতে শুরু করে দিয়েছে নাফিস ।
- মানুষের কথায় আমি কান দেই না ।
- আমায় দিতে হয় নাফিস , আমায় দিতে হয় ।
- তুমিও দিও না , তাহলেই হয় ।
নাফিসের এমন বাকা বাকা কথা শুনে জুঁই রেগে যায় । তারপর নাফিসকে হুট করেই নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয় জুঁই ।
- উফফফফফ নাফিস , আমার কথা শুনো তুমি । তুমি আর কোন দিন এখানে আসবে না , কোন দিন না ।
তখনই নাফিস জুঁইকে জড়িয়ে নেয় নিজের মাঝে । শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখে সে । জুঁই যেন তার নিজের সব শক্তি হারিয়ে ফেলেছে । নাফিসের গায়ের গন্ধটা সেই আগের মতই আছে । কোন পরিবর্তন হয় নি । নাফিস জুঁইয়ের ঘাড়ের কাছে মুখ নিয়ে চুলের ভাজেই আলতো করে চুমু দিয়ে দেয় । জুঁইয়ের চুলের মাতার করা ঘ্রাণে নিজেকে পাগল পাগল লাগছিল নাফিসের কাছে । তখন সে জুঁইকে আরও বেশি করে জড়িয়ে নেয় ।
- নাফিস ছাড়ো আমায় , ছাড়ো বলছি ।
- উহু ,
- নাফিস ছাড়ো , ইফসি এখানে । ছাড়ো আমায় ।
তারপর নাফিস জুঁইয়ের কপালে আরেকটা চুমু দিয়ে দেয় । তারপর বলে ,
- বিয়ে করে রঙিন বেনারসিতে রাঙিয়ে নিয়ে যাবো তোমায় , ভালোবাসি তোমায় আমি । ভালোবাসি বলেই ফিরে এসেছি আমি । ফিরিয়ে দিও না আমায় । কথা দিলাম ভালোবাসায় ভরিয়ে দিবো । রাঙিয়ে দিবো তোমার জীবন ।
নাফিসের কথা গুলো শুনে জুঁইয়ের চোখের পানি গুলো গড় গড় করে বেয়ে পড়ে যায় । আর নাফিস হালকা হাসি বলে জুঁইয়ের দুচোখের পাতায় আলতো করে চুমু খায় ।