অবেলার অভিলাষ - পর্ব ০৯ - শারমিন আক্তার সাথী - ধারাবাহিক গল্প


__ভাইয়া! ভাইয়া ডাক‌তে ডাক‌তে আর কান্না কর‌তে কর‌তে মেঘা আয়া‌তের সাম‌নে এলো

__‌মেঘা! মেঘা! বোন তুই এসে‌ছিস।

__ভাইয়া তুই কেমন আছিস?

__আমার কথা বাদ দে। বোন তনয়ার কী খবর? ও ঠিক আছে তো? ও কেমন আছে?

__‌মেঘা নিশ্চুপ

__কী হল মেঘা বলনা তোর ভা‌বি কেমন আছে?

মেঘা ঠিক কী বল‌বে ভে‌বে পা‌চ্ছেনা। কারন স‌ত্যিটা আয়া‌তকে বল‌লে আয়াত কি কর‌বে তা ভে‌বেই মেঘার বুক কেঁ‌পে উঠ‌ছে। তাই মাথা নিচু ক‌রে মিথ্যা বলল,
__ভা‌বি ঠিক আছে ভাইয়া। তুই চিন্তা ক‌রিস না। সব ঠিক হ‌য়ে যা‌বে।

__নাহ তুই মিথ্যা বল‌ছিস! আমার মন বল‌ছে তনয়া ঠিক নেই। বা‌বা তানভী ওদের কা‌ছেও তনয়ার বিষ‌য়ে জান‌তে চে‌য়ে‌ছিলাম কেউ কিছু ব‌লে‌নি। বোন আমা‌কে এখান থে‌কে তারাতা‌রি বের করার ব্যবস্থা কর।  যতক্ষন তনয়া‌কে না দেখ‌ছি আমি কা‌রো কথা মান‌বো না। আমার দম বন্ধ হ‌য়ে আস‌ছে।

__ভাইয়া তো‌কে বৃহস্প‌তিবার রা‌তে গ্রেফতার করা হ‌য়ে‌ছে। আর শুক্রবার শ‌নিবার আদালত বন্ধ থা‌কে। তাই বাবা বা তানভী কেউই তোর জা‌মিন করা‌তে পা‌রে‌নি। ত‌বে জা‌মি‌নের সকল ব্যবস্থা হ‌য়ে গে‌ছে। আগামীকাল দুপু‌রের ম‌ধ্যে তুই বের হ‌তে পার‌বি। আর একটা দিন ধৈর্য্য ধর ভাই।

__আ‌মি যে আর পার‌ছিনা বোন। অামার তনয়াটার কোন খবর পা‌চ্ছিনা ওকে দেখ‌তে পার‌ছিনা। আমি কি ক‌রে থাক‌বো বল?

__ভাইয়া বললাম তো ভা‌বি ঠিক আছে।

__তুই মিথ্যা বল‌ছিস আমি জা‌নি। আমার মনটা ছটফট কর‌ছে। তনয়া‌কে না দেখা পর্যন্ত এ ছটফটা‌নি কম‌বে না। আচ্ছা বোন তানভী তো হস‌পিটা‌লে এখন, তুই এক কাজ কর তানভী‌কে ফোন দে তারপর আমার সা‌থে তনয়া‌কে কথা বলা‌তে বল। নয়‌তো ভি‌ডিও কল দে? আমি একবার তনয়া‌কে দেখ‌বো। প্লিজ বোন তোর পা‌য়ে প‌ড়ি না ক‌রিস না। আমি শুধু একবার আমার তনয়াটা‌কে দেখ‌বো। প্লিজ বোন।

আয়া‌তের এমন করুন আকু‌তি দে‌খে পা‌শের টে‌বি‌লে বসা থানার এস এ পি এরও চোখ ভ‌রে গে‌লো। আয়া‌তের পা‌শের থাকা তিনজন ক‌য়ে‌দি যার ম‌ধ্যে একজন ধর্ষক সেও কাঁদ‌ছে। মেঘা ডুক‌রে কাঁদ‌ছে। যে, ভাই‌কে ছোট বেলা থে‌কে সব প‌রি‌স্থি‌তে শক্ত আর শান্ত থাক‌তে দেখ‌ছে। যা‌কে কখ‌নো কাঁদ‌তে দে‌খেনি সে আজ পাগ‌লের মত কাঁদ‌ছে। আচ্ছা ভা‌লোবাসা মানুষ‌কে এত অসহায় আর দুর্বল ক‌রে কেন দেয়? এই দ্বিতীয়বা‌রের মত আয়াত‌কে কাঁদ‌তে দেখ‌ছে মেঘা। পাঁচ মাস আগে তনয়া যখন আয়াত‌কে ছে‌ড়ে গে‌ছি‌লো তখনও আয়াত কেঁদে‌ছি‌লো আর আজ তনয়াকে হত্যা কর‌তে চাওয়ার দা‌য়েও আয়াত জেল বন্দী আর উদ্ভ্রান্ত এর মত কাঁদ‌ছে। মেঘার খুব রাগ হ‌চ্ছে তনয়ার উপর। তনয়ার থে‌কেও বে‌শি রাগ উঠ‌ছে নি‌জের উপর। কারন না মেঘা বিপ‌দে পড়‌তো, না তনয়া ওকে বাঁচা‌তো আর না আয়া‌তের সা‌থে তনয়ার প‌রিচয় হ‌তো। আর না আয়াত‌কে এত কষ্ট পে‌তে হ‌তো। মেঘা ভাব‌ছে মাত্র এক বছরের প‌রিচয় আর দশ মা‌সের সম্প‌র্কে ওদের মা‌ঝে এত গভীর সম্পর্ক কি ক‌রে তৈরী হল। দুজন মানুষ কতটা মাতাল হ‌লে একে অপর‌কে এতটা ভা‌লোবা‌সে তা বু‌ঝি আয়াত তনয়া‌কে না দেখ‌লে বুঝ‌তো না মেঘা। আয়া‌তের ডা‌কে ধ্যান ভাঙ‌লো মেঘার।

__‌কি‌রে মেঘা ফোন দি‌চ্ছিসনা কেন? পাস থে‌কে এস এ পিও মেঘা‌কে উদ্দেশ্য ক‌রে বলল, বোন আপ‌নি ভি‌ডিও কল দি‌য়ে ওনা‌কে একবার তনয়া‌কে দেখ‌তে দিন। আমি অনু‌মো‌তি দি‌চ্ছি। মেঘা তানভী‌কে ফোন দি‌লো ক‌য়েকবার ফোন দেয়ার পরও ফোন রি‌সিভ কর‌লো না। মেঘা বলল,
__ভাইয়া তানভী ফোন রি‌সিভ কর‌ছে না।

__‌বোন তুই বস। হয়ত ও বি‌জি। ফ্রি হ‌লেই ফোন দি‌বে। বস আমার কা‌ছে। মেঘা জে‌লের এ পা‌শে বসা আর আয়াত ওপা‌শে ব‌সে অপলক চো‌খে ‌মেঘার ফোন থে‌কে তনয়ার ছ‌বিগু‌লো দেখ‌ছে। আয়া‌তের কো‌লের রক্ত মাখা শার্টটা দে‌খে মেঘা বলল,

__ভাইয়া তুই এই রক্ত মাখা শার্টটা কো‌লে নি‌য়ে আছিস কেন? দেখ গত দু‌দিন যাবত তুই এটা‌কে কা‌ছে রে‌খে‌ছিস, রক্ত শু‌কি‌য়ে আশ‌টে গন্ধ আস‌ছে। শার্টটা আমার কা‌ছে দে।

__আয়াত শার্টটা‌কে বু‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল, এটা আমার শার্ট যা আমার তনয়ার র‌ক্তে ভি‌জে গেছে। এটা‌কে আমি দি‌বোনা। গতকাল বাবা জোড় ক‌রে আমার গা‌য়ের শার্ট পা‌ল্টে দিছে কিন্তু এটা আমি নি‌তে দেইনি। জা‌নিস বোন তনয়া‌কে যখন কো‌লে ক‌রে হসপিটা‌লে নি‌য়ে যা‌চ্ছিলাম তখন তনয়ার র‌ক্তে আমার শার্টটা ভি‌জে গে‌ছে। ওর খ‌ুব কষ্ট হ‌চ্ছি‌লো বোন। খুব কষ্ট হ‌চ্ছি‌লো ওর। ও আমার গা‌লে হাত দি‌য়ে কি বল‌ছি‌লো জা‌নিস বোন
**খুব বে‌শি ভা‌লোবা‌সি তোমায়**
সম্প‌র্ক হবার দশ মা‌সের মাথায় ও আমায় ভা‌লোবা‌সি বলল। তারপর আর কোন কথা ব‌লে‌নি। কিন্তু বিশ্বাস কর বোন তনয়ার নিঃশ্বাস তখনও চালু ছি‌লো। বোন------
এর ম‌ধ্যে মেঘার ফোন বেঁ‌জে উঠ‌লো। তানভী ফোন ক‌রে‌ছে। মেঘা ফোন রি‌সিভ ক‌রে তানভী‌কে অনেক বোঝা‌নোর পর তানভী ভি‌ডিও কল দি‌তে রা‌জি হল। তানভী আয়াতের ম‌নের অবস্থা বুঝ‌তে পার‌ছে তাই ও জা‌নে, তনয়া‌কে এ অবস্থায় দে‌খে আয়াত হয়ত নি‌জে‌কে ঠিক রাখ‌তে পার‌বেনা।

‌কিন্তু আয়া‌তের ভা‌লোবাসাময় অসহায় আকু‌তির কা‌ছে তানভী হার মানল। ভি‌ডিও কল হ‌তেই আয়া‌তের বু‌কের ধুকপুকা‌নি হাজার গুন বে‌ড়ে গে‌লো। ডাক্তার‌কে অনেক অনু‌রোধ ক‌রে তানভী আই সি ইউ এর ভিতর গে‌লো। ফো‌নের ব্যাকসাইড ক্যা‌মেরা অন ক‌রে দি‌য়ে তনয়ার সাম‌নে নি‌লো। তনয়ার চেহারাটা শুধু দেখা‌চ্ছে তানভী। পুরোটা দেখ‌লে হয়ত আয়াত সহ্য কর‌তে পার‌বেনা।

আয়াত অপলক চো‌খে তা‌কি‌য়ে আছে। তনয়ার মু‌খে অক্সি‌জেন মাস্ক লাগা‌নো, কপা‌লের কাটা অং‌শে ব্যা‌ন্ডেজ করা। আয়াত ফো‌নের স্ক্রিনটা আলত ক‌রে স্পর্শ কর‌লো। মন চাই‌ছে তনয়া‌কে ছু‌য়ে দি‌তে। কিন্তু চে‌য়েও সেটা পার‌ছেনা। এ কি সেই তনয়া যার চাঞ্চল্য আয়াত‌কে পাগল ক‌রে রাখ‌তো? এই কি সেই তনয়া যে দু দন্ড শা‌ন্তি‌তে ব‌সে থাক‌তে পা‌রতো না। সে আজ দু দিন যাবত কত শান্ত ভা‌বে ঘু‌মি‌য়ে আছে। আয়াত খুব ক‌ষ্টে কথা উঠি‌য়ে আ‌স্তে ক‌রে তনয়া‌কে ডাক‌লো, 

__তনয়া! তনয়া! তনয়া দে‌খো আমি। ‌দে‌খো অভিমান ক‌রোনা। সে‌দিন রা‌তের দুষ্ট‌মির জন্য স্য‌রি। আর ওমন কর‌বোনা। ওমন কথা জীব‌নেও বল‌বো না। এভা‌বে চুপ ক‌রে থে‌কে তোমার আয়াত‌টা‌কে আর কষ্ট দিওনা। তনয়া! 

‌কিন্তু তনয়া আজ নিশ্চুপ। সে যে, আজ চেতনাহীন। প্রাণটা কোনম‌তে আট‌কে আছে। সে আজ কিছু বল‌বেনা। যে তনয়া ,আয়া‌তের একটু কথায় কথার ঝু‌ড়ি খু‌লে বসত, ‌সে আজ নিশ্চুপ। যে আয়া‌তের কথা কম বলা স্বভা‌বের কার‌নে আয়াতের ঠোঁ‌টে কামড় দি‌য়ে রক্ত বের ক‌রে দিয়ে বল‌ছি‌লো, আমার সা‌থে কম কথা বল‌লে আমি তোমার ঠোঁ‌টে এভা‌বেই কামর দি‌বো। সে আজ নীরব সে কথা বল‌ছেনা। আজ আয়াত কথা বল‌ছে অথচ তনয়া নীরব, র্নি‌লিপ্ত, নিস্তব্ধ। 

আয়াত তনয়াকে আবার বল‌ছে তনয়া একটা ক‌বিতা শুন‌বে? তু‌মি না ব‌লো, আমার ক‌বিতা তোমা‌কে জাদু ক‌রে। তাহ‌লে আজ‌ সে জাদুর টা‌নে তু‌মি ফি‌রে আসোনা প্লিজ। আয়াত তনয়ার দি‌কে তা‌কি‌য়ে ভাঙা গলায় ***জীবনানন্দ দাশ***এর **অনেক আকাশ** ক‌বিতাটা বলা শুরু কর‌লো,

    গানের সুরের মতো বিকালের দিকের বাতাসে
    পৃথিবীর পথ ছেড়ে — সন্ধ্যার মেঘের রঙ খুঁজে
    হৃদয় ভাসিয়া যায়—সেখানে সে কারে ভালোবাসে! 
   পাখির মতন কেঁপে—ডানা মেলে—হিম চোখ বুজে

    অধীর পাতার মতো পৃথিবীর মাঠের সবুজে
   উড়ে উড়ে ঘর ছেড়ে কত দিকে গিয়েছে সে ভেসে 
        নীড়ের মতন বুকে একবার তার মুখ গুঁজে
     ঘুমাতে চেয়েছে, তবু — ব্যথা পেয়ে গেছে ফেঁসেঁ
                 তখন ভোরের রোদে আকাশে
                  মেঘের ঠোঁট উঠেছিল হেসে!

তনয়া আমি না আর বলতে পার‌ছিনা। ক‌বিতার লাইনগু‌লো কেন জা‌নি হা‌রি‌য়ে যা‌চ্ছে। কেন যা‌বেনা ব‌লো? তু‌মি বিহীন আমার ক‌বিতা যে, ছান্দহীন, শব্গেু‌লো যে, তখন আমায় ধোঁকা দেয়।

আয়াত ক‌বিতা বল‌ছে কিন্তু চো‌খের ভিতর হাজা‌রো জলকনা এসে ওর চোখ দু‌টো‌কে ঝাপসা ক‌রে দি‌চ্ছে। শা‌র্টের হাতার অংশ দি‌য়ে চোখটা মু‌ছে তনয়ার দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল, 
__তনয়া জা‌নো সবাই বল‌ছে আমি না‌কি তোমায় মার‌তে চে‌য়ে‌ছি। কিন্তু স‌ত্যি ক‌রে ব‌লো তো তনয়া সেটা কি সম্ভব ব‌লো? কেউ কি নি‌জের হৃদয় নি‌জে ছি‌ড়ে ফেল‌তে পা‌রে? তু‌মি চিন্তা ক‌রোনা, কালকে দুপু‌রেই তোমার কা‌ছে আস‌বো। তারপর আল্লাহ ব্যাতীত কেউ আমা‌কে তোমার কাছ থে‌কে দূ‌রে নি‌তে পার‌বেনা। তু‌মি  জল‌দি সুস্থ হ‌য়ে ওঠো। আমা‌দের এখন অনেক স্বপ্ন পূরন করা বা‌কি আছে।
আমার অভিলাষীর কোন অভিলাষ আমি অপূর্ণ রাখ‌বো না। আমার অভিলাষী যে বড্ড অভিমানীও। 

আয়াতের এমন কথা শু‌নে মেঘা আর এক মুহূর্তও সেখা‌নে থাক‌লোনা। মুখ চে‌পে কাঁদ‌তে কাঁদ‌তে বের হ‌য়ে গে‌লো। কি বল‌বে ও? তনয়ার অবস্থা যে খুব খারাপ। বাঁচার সম্ভাবনা খুব কম। আয়াত চুপ ক‌রে নি‌চের দি‌কে তা‌কি‌য়ে রইল।

২৪!!

সুমন আয়াতের কাঁ‌ধে হাত রে‌খে বলল, প্লিজ নি‌জে‌কে শান্ত করুন। তনয়া আপু ঠিক খুব শিঘ্রই সুস্থ হ‌য়ে উঠ‌বে। আপ‌নিও শিঘ্রই তার কা‌ছে যে‌তে পার‌বেন। আচ্ছা বাসা ভাড়া নেয়ার পর কি হ‌য়ে‌ছি‌লো?

((চ‌লেন পিছ‌নের ঘটনা জে‌নে নেই আবার,))

তনয়ার নতুন বাসায় সুন্দর ভা‌বে সব‌কিছু ঘু‌ছি‌য়ে নি‌য়ে‌ছি‌লো। ওর থাইর‌য়ে‌ডের প্রব‌লেমটাও নিয়ন্ত্র‌নে ছি‌লো। সব কিছু খুব সুন্দর ভা‌বেই চল‌ছি‌লো। তা‌মি‌মেরে সা‌থে আয়া‌তের তনয়ার জন্ম‌দি‌নের পর একবার দেখা হয়ে‌ছি‌লো তখন তা‌মিম আয়া‌তের সা‌থে কোন কথা ব‌লে‌নি। ‌যে যার মত ইগ‌নোর ক‌রে গে‌ছে।

এক‌দিন অফি‌সে লান্সটাই‌মে আয়াত শুন‌তে পে‌লো ওর বাবার কে‌বিন থে‌কে হইহুল্লর এর আওয়াজ আস‌ছে। বিষয়টা খ‌তি‌য়ে দেখ‌তে আয়াত আমজাদ হো‌সে‌নের কে‌বি‌নে গে‌লো।  তার কে‌বি‌নে গিয়ে আয়াত যা দেখলো তা‌তে ওর চোখ চরকগাছ। 

আমজাদ হো‌সেন আর তনয়া দু‌টো ইঁদু‌রের লে‌জে সুতা বেঁ‌ধে সাম‌নে কেক রে‌খে দি‌য়ে‌ছে। ইঁদুর ছু‌টে সামান্য সাম‌নে এগো‌লেই আমজাদ আর তনয়া ‌সু‌তো টে‌নে ইঁদুর আবার নি‌জে‌দের কা‌ছে নি‌য়ে এসে হো হো ক‌রে হাস‌ছে। ইঁদুর‌কে কষ্ট দি‌য়ে এভা‌বে পৈশা‌চিক আনন্দ পে‌তে আয়াত প্রথম বার দেখ‌লো। আয়াত আমজাদ হো‌সে‌নের সা‌ম‌নে গি‌য়ে বলল,
__বাবা এগু‌লো কী কর‌ছেন?

__‌চো‌খে কি ন্যাপা হ‌য়েছে দেখ‌ছিস না রেস লা‌গি‌য়ে‌ছি।

__বাবা তু‌মি এগু‌লো কি ভাষায় কথা বল‌ছো?

__চুপ হারামজাদা বিরক্ত ক‌রিসনা।

__আয়াত তনয়া‌কে উদ্দেশ্য ক‌রে বলল, বাবা‌কে এসব ভাষা তু‌মি শি‌খি‌য়ে‌ছো?

__স্যার আপনার বাবা মা‌নে আমা‌দের বস কি ছোট বাচ্চা যে আমার কা‌ছে কথা শিখ‌বে!

এর ম‌ধ্যে তনয়ার ইঁদুর সুতো ছি‌ড়ে পা‌লি‌য়ে গে‌লো। আয়া‌তের বাবা জি‌তে গে‌লো। তনয়া বলল, 
__‌দেখ‌লেন স্যার আপনার জন্য আমি হে‌রে গেলাম।

__ওপস স্য‌রি (আয়াত শয়তা‌নি হা‌সি দি‌য়ে)

__আমজাদ হো‌সেন বলল, তো তনয়া তু‌মি হে‌রে গে‌ছো এখন আমীকাল সন্ধ্যায় ফুচকা ট্রিট তু‌মি আমা‌কে দি‌বে। 

__তনয়া বলল, ওকে বস। ডান। কিন্তু বস আমি আয়াত স্যা‌রের জন্য হে‌রে গে‌ছি। 

__আমজাদ হো‌সেন বলল, সেটা তোমা‌দের ব্যাপার তনয়া কা‌ছে এসে ধীর গলায় বলল, অফি‌সে য‌দি ও স্যারগিরি ক‌রে ত‌বে তু‌মি বাই‌রে ম্যাডাম গি‌রি করবা। আফরঅল বয়‌ফ্রেন্ড গার্ল‌ফ্রেন্ড ব‌লে কথা। আয়াত তনয়া দুজ‌নেই চোখ বড় বড় ক‌রে আমজাদ হো‌সে‌নের কথা শুন‌ছে। কারন ওদের ধারনা তি‌নি ওদের সম্প‌র্কের বিষ‌য়ে কিছুই জা‌নেনা। 

তনয়া কা‌জের বাহানা ক‌রে, লজ্জা পে‌য়ে কে‌বিন থে‌কে বে‌রি‌য়ে আস‌লো। আয়াত বলল, 
__তা বস আপ‌নি কি ক‌রে জান‌লেন?

__তনয়া পি এ আমার অথচ আপ‌নি দি‌নের ম‌ধ্যে কম হ‌লেও দশবার তা‌কে বি‌ভিন্ন কা‌জের বাহানায় নি‌জের কেবি‌নে ডা‌কেন। রোজ তা‌কে বাসায় ড্রপ ক‌রে দেন, অফিস নিয়ে আসেন, তা‌কে রেস্ট্রু‌রেন্টে ব‌সে খাই‌য়ে দেন তাহ‌লে না বু‌ঝে উপায় কি ব‌লেন?

__তা সব যখন জে‌নেই গে‌ছেন বস, তখন বাবা হিসা‌বে আপনার মতামত কী? ছে‌লের বৌ হিসা‌বে মান‌বেন?

__বাবা হিসা‌বে বললে নি‌জের ছে‌লের জন্য আর আমাদের বা‌ড়ির বৌ হিসা‌বে সর্বগুণ সম্পন্ন। এখন আপনার মা‌কে রা‌জি করানোর দা‌য়িত্ব আপনার।

__‌সেটা আমি দে‌খে নি‌বো। ত‌বে আপ‌নি কী তনয়ার বি‌য়ে ভাঙার কথা জা‌নেন?

__হ্যাঁ। তনয়া আমা‌কে সব ব‌লে‌ছে। ওগু‌লো কোন বিষয় না।

__ধন্যবাদ বস।

২৫!!

    আজ আয়াত তনয়ার রি‌লেশ‌নের বয়স দেড় মাস পূর্ণ হ‌লো। শুক্রবার তাই দুজনারই ছু‌টির দিন। আয়াত সকা‌লেই তনয়ার বাসায় চ‌লে আস‌লো। ছু‌টির দিন দে‌খে তনয়া ঘুমো‌চ্ছি‌লো। আয়াত নি‌জের কা‌ছে থাকা তনয়া বাসার চা‌বি দি‌য়ে ভিত‌রে ঢু‌কে দে‌খে তনয়া বে‌ঘো‌রে ঘুম‌চ্ছে। তনয়ার পা‌শে তনয়ার বিড়াল ইতু, ইতুন আর তুতন ঘুমা‌চ্ছে।

তনয়া একটা সি‌ল্কির নাই‌টি পরা। ঘু‌মের ঘো‌রে যেটা পা‌য়ের হাঁটু পর্যন্ত উঠে গে‌ছে। আর কোম‌রের অং‌শেও স‌রে গি‌য়ে পেট না‌ভি দেখা যা‌চ্ছে। আয়া‌তের ঘোর লে‌গে যা‌চ্ছে। কামনা নামক শয়তানটা মাথায় ভর কর‌তে চাই‌ছে। কিন্তু নি‌জে‌কে নিয়ন্ত্রন ক‌রে তনয়ার এব‌লো থে‌ব‌লো কাপড় ঠিক ক‌রে শরীর ঠিকভা‌বে ঢে‌কে দি‌লো। তনয়ার চুলগু‌লো ঠিক ক‌রে দি‌য়ে মাথায় হাত ব‌ু‌লি‌য়ে বলল,
__হ্যা‌লো প্রিন্সেস। ঘুম থে‌কে উঠ‌বেন না।

__তনয়া ঘুম ঘুম চো‌খে আয়া‌তের দি‌কে তা‌কি‌য়ে আদু‌রে গলায় বলল, আয়াত আপনার বু‌কে মাথা রাখ‌তে ইচ্ছা কর‌ছে।

আয়াত আধা শোয়া অবস্থায় খা‌টে হেলান দি‌য়ে ব‌সে তনয়া‌কে নি‌জের বু‌কে টে‌নে নি‌লো। তনয়া বিড়া‌লের মত গু‌টিশু‌টি মে‌রে আয়া‌তের বু‌কে ঘু‌মি‌য়ে রই‌লো। আয়াত তনয়ার মাথায় হাত বু‌লি‌য়ে দি‌তে দি‌তে বল‌লো, এভা‌বেই সারা জীবন তু‌মি আমার বুকে থাক‌বে। কখ‌নো নি‌জের থে‌কে দূ‌রে কর‌বো না।

সকাল দশটা,
তনয়া ফ্রেস হ‌য়ে বের হ‌তেই আয়াত নি‌জেই চা বা‌নি‌য়ে তনয়াকে দি‌লো। চা খে‌তে খে‌তে আয়াত তনয়া‌কে জি‌জ্ঞেস কর‌লো,
__তনয়া তোমার বড় ভাইয়া মা‌নে তান‌ভির আর তার স্ত্রীর ভিতর সম্পর্ক ঠিক নেই কেন?

__আস‌লে আয়াত,

—————

      তনয়া চা‌য়ে চু‌মোক দি‌য়ে বলল,
__বাহ্ চা টা দারুণ হ‌য়ে‌ছে। একদম আপনার মত।

__তু‌মি কি আমায় খে‌য়ে দেখ‌ছো না‌কি? (দুষ্ট‌মি ক‌রে)

__যাহ্। (লজ্জা‌পে‌য়ে) আমি বল‌ছি আপনার মত ভা‌লো। ঠিক আমার ম‌নের মত।

__‌তাই কিন্তু তু‌মি আমার মত হও‌নি।

__এ্যাঁ। কেন?

__প্রায় দেড় মাস যাবত সম্পর্ক চল‌ছে অথচ তোমার মুখ থে‌কে আপ‌নি শব্দটা নড়া‌তে পারল‌াম না? ‌প্লিজ তনয়া তু‌মি ক‌রে ব‌লো না।

__হুহ। পার‌বো না।

__‌কেন? (মুখ গোমরা ক‌রে)

তনয়া আয়া‌তের কাঁ‌ধে হাত দি‌য়ে অনেকটা গলা জ‌ড়ি‌য়ে ধরার মত ক‌রে বলল,
__‌মিঃ আয়াত ওর‌ফে বস। আপ‌নি প্রথ‌মে আমার বস তারপর বয়‌ফ্রেন্ড। তো অফি‌সে ব‌সে আপনা‌কে তু‌মি বললে লো‌কে কি বল‌বে?

আয়াত তনয়ার কোমর জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
__‌মিস তনয়া ওর‌ফে ফিউচার মি‌সেসঃ আয়াত আমি লো‌কের কথার ধার কখনো ধা‌রিনা। আমি তো আমার মতই চল‌বো। তনয়া‌কে নি‌জের বু‌কের সা‌থে মি‌শি‌য়ে শক্ত ক‌রে জ‌ড়িয়ে ধ‌রে বলল, আমি তো আমার অভিলাষী‌কে সারাজীবন শুধু ভা‌লোবাস‌তে চাই। বা‌কি দু‌নিয়া হয় মূলা খাক নাহয় গোল্লায় যাক। তা‌তে আমার কি?

__আচ্ছা জনাব। কিন্তু মিঃ আয়াত আমি যে, আপনা‌কে এভা‌বেই আপ‌নি বল‌বো। যত‌দিননা আপনার জব থে‌কে রিজাইন কর‌ছি।

__‌কিন্তু মি‌সেস ফিউচার আয়াত আমি যে, কখ‌নোই আপনার রিজাইন লেটার গ্রহন কর‌বো না। 

__‌কেন?

__আপনা‌কে যে, সারাজীবন আমার কাছেই জব কর‌তে হ‌বে। এখন পি এ হিসা‌বে আর তারপর ওয়াইফ হিসা‌বে সারা জীবন। তো মি‌সেস আয়াত আপ‌নি চাই‌লেও আমার কাছ থে‌কে দূ‌রে যে‌তে পার‌বেন না।

__মিঃ আয়াত আমি তা সারা জীব‌নেও চাইনা। সারাজীবন এভা‌বেই আপনার বু‌কে থাক‌তে চাই।

আয়াত তনয়ারে কপা‌লে ভা‌লোবাসার পরশ দিয়ে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল, চাই‌লেও যে‌তে পার‌বেনা। জোড় ক‌রে হ‌লেও তোমা‌কে নিজের কা‌ছে রে‌খে দি‌বো।‌ এভাবে কিছুক্ষন দুষ্ট‌মি করার পর আয়াত তনয়া‌কে খাই‌য়ে দি‌চ্ছে আর কথা বল‌ছে। তখন আয়াত জি‌জ্ঞেস কর‌লো,
__আচ্ছা তনয়া একটা কথা জি‌জ্ঞেস ক‌রি?

__হুমম

__‌তোমার দাদ‌াভাই মা‌নে তানভির আর তার স্ত্রী লা‌বিবা ভা‌বির ভিত‌রে সম্পর্ক ঠিক নেই কেন? না মা‌নে তোমার জন্ম‌দি‌নের দিনও খেয়াল করলাম তারা আর পাঁচটা স্বাভা‌বিক হ্যাজ‌বেন্ড ওয়া‌ইফের মত না। কেমন যে‌নো দুজনার মা‌ঝে খুব দূরত্ব। না মা‌নে আমার ধারনা ভুলও হ‌তে পা‌রে তবুও !

তনয়া একটা দীর্ঘ‌নিঃশ্বাস ছে‌ড়ে বলল,
__হ্যাঁ আয়াত আপনার ধারনা ঠিক। তা‌দের ভিতর সম্পর্ক ঠিক নেই।

__‌কেন?

__আস‌লে তান‌ভির দাদ‌াভাই বি‌য়ের আগে আয়মন আপু‌কে ভা‌লোবাস‌তো। আয়মন আপু মধ্য‌বিত্ত প‌রিবা‌রের মে‌য়ে হ‌লেও অনেক ভা‌লো মে‌য়ে সে। দাদাভাই আর আয়মন আপু দুজন দুজনকে পাগ‌লের মত ভা‌লোবাস‌তো। কিন্তু বাবা তা‌দের সম্প‌র্কের কথা জানার পর আয়মন আপু‌কে যা নয় তাই ব‌লে অপমান ক‌রে। আয়মন আপু সেটা সহ্য কর‌তে না পে‌রে আর দাদাভাইয়ের উপর রাগ ক‌রে তার বাবার পছন্দ করা ছে‌লে‌কে বি‌য়ে ক‌রে ফে‌লে। 
দাদাভাই বিষয়টা মে‌নে নি‌তে পা‌রে‌নি। সে আয়মন আপু‌কে ভুল বুঝলো। তারপর বাবার পছন্দ করা মে‌য়ে লা‌বিবা ভা‌বি‌কে বি‌য়ে ক‌রে। লা‌বিবা ভা‌বিও অসম্ভব ভালো। দাদাভাই‌কে খুব ভা‌লোবা‌সে। কিন্তু দাদাভাই এখ‌নো আয়মন আপু‌কে ভুল‌তে পা‌রে‌নি। তাই এখনো ভা‌বি‌কে মন থে‌কে মান‌তে পা‌রে‌নি। তারা একই রু‌মে থাকা দু প্রা‌ন্তের মানুষ। বাবা‌ যে, আয়মন আপু‌কে অপমান কর‌ছে সেটা আমরা দাদাভাই আর লা‌বিবা ভা‌বির বি‌য়ের পর জে‌নে‌ছিলাম। যেটা দাদাভাই আর ভা‌বির সম্পর্ক আরো খারাপ ব‌রে দি‌ছে।

__আচ্ছা বুঝলাম। কিন্তু একটা কথা জানার ছিলো।

__‌কী?

__‌তোমার দাদাভাই আর ভা‌বির মা‌ঝে স্বাভা‌বিক সম্পর্ক না থাক‌লে তা‌দের বাচ্চা তৃ‌প্তি আস‌লো কোথা থে‌কে? (দুষ্ট‌মি হা‌সি দি‌য়ে)

তনয়া চোখ বড় বড় ক‌রে বলল,
__সবাই তো আর আপনার মত সাধু না যে, নি‌জের জিএফ বা ওয়াই‌ফের কাপড় এবলো থেব‌লো দে‌খেও উল্টা পাল্টা ‌কিছু না ক‌রে সুন্দর ভা‌বে শরীর ঢে‌ঁকে দেয়। 

__এ্যাঁ তু‌মি তখন দেখ‌ছো?

__না অনুভব কর‌ছি। আর দাদাভাই সেও তো ছে‌লে না‌কি? লা‌বিবা ভা‌বি যতটু‌কো বল‌ছে তা‌তে মা‌ঝে মা‌ঝে দাদাভাই‌য়ের ভা‌বির প্র‌তি আকর্ষ‌নের ফল তা‌দের সন্তান তৃ‌প্তি। এখন তৃ‌প্তি আছে ব‌লেই তা‌দের সম্পর্কটা হয়‌তো টি‌কে আছে  নয়‌তো টিক‌তো না। জা‌নো খু্ব ইচ্ছ‌া ক‌রে দাদাভাই যে‌নো লা‌বিবা ভা‌বিকে একটু বু‌ঝে। সে যে‌নো তার আকর্ষ‌নের জায়গা হিসা‌বে ভা‌বি‌কে না খুঁ‌জে ভা‌লোবাসার জায়গা হিসা‌বে ভা‌বি‌কে বেঁ‌ছে নেয়। কিন্তু নি‌জের বড় ভাই তাই তা‌কে ঠিক কী ভা‌বে বুঝাবো তা ভে‌বে পাইনা।

আয়াত একটা দীর্ঘ‌নিঃশ্বাস ছে‌ড়ে বলল,
__হ্যাঁ বে‌শির ভাগ ছে‌লেরাই স্ত্রী‌দের শরী‌রটা পে‌লেও ম‌নের গভীরতা পায়না। কিন্তু এটা ঠিক না। স্ত্রীই একজন পুরুষ‌কে পূর্ণ ক‌রে কিন্তু সেটা আমরা ভু‌লে যাই। নারী পুরুষ একে অপ‌রের প‌রিপূরক, চা‌হিদা পূর‌নের উপকরন নয়। এরা দুজন মি‌লে সম্পূর্ণ হয় সেটা য‌দি বুঝ‌তো ত‌বে একে অপর‌কে কখ‌নো কষ্ট দি‌তো না।

__জা‌নেন এদিক দি‌য়ে আমি খুব লা‌কি?

__‌কিভা‌বে?

__এই যে, আপনার মত কাউ‌কে পে‌য়ে‌ছি। যে, নি‌জের ভা‌লোবাসার মানুষটা‌কে নি‌জের রু‌মে নয় ম‌নে পে‌তে যায়। 

আয়াত তনয়াকে খাওয়া‌নো শেষ ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে কপা‌লে গভীর চু‌মো দি‌য়ে বলল, আমি তোমায় পে‌তে চাই না, তোমায় অজর্ন কর‌তে চাই। আমার অভিলাষীটা।

২৬!!

      তনয়ার বাসার বা‌ড়ি ওয়ালা আন্টি নাম (দিলরুবা)। তি‌নি ভিষন রে‌গে তনয়ার ঘ‌রের সাম‌নে আস‌লো। দাঁত কটমট কর‌তে কর‌তে তি‌নি নি‌জে নি‌জে বল‌ছে, 
__‌প্রায় ছে‌লেটা আসে ঘন্টার পর ঘন্টা তনয়া সা‌থে সময় কাটায়। ‌ছে‌লেটা না‌কি ফিওন্সি ব‌লি বি‌য়ের আগে এত মেলা‌মেশা কি‌সের? আজ তনয়া‌কে শক্ত গলায় কিছু বল‌বোই বল‌বে‌া। আর‌ ছে‌লেটা‌কে মা‌নে আয়াতকেও এতবার আস‌তে নি‌ষেধ কর‌বো। বি‌য়ের আগে ছে‌লে মে‌য়ের এত মেলা‌মেশা কি‌সের?

‌তি‌নি দরজায় ধাক্কা দি‌লেন কিন্তু দরজা ভেজা‌নো থাকায় খু‌লে গে‌লো। তি‌নি ধী‌রে ধী‌রে ভিত‌রে দি‌কে গে‌লো। রু‌মে গি‌য়ে যা দেখ‌লো তা‌তে সে হা হ‌য়ে গে‌লো?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন