_" কী ন্যায় করব? তুই খোলাখুলি ভাবে সত্যিটা বললে তো ন্যায় করব? মানুষ কোনো কিছু নিয়ে বিচার তখন করে যখন সে বিষয়ে পরিষ্কার ভাবে কিছু জানে। কিন্তু সেদিন কী ঘটেছিল তা পরিষ্কার ভাবে তুই কিছু বলেছিলি? কারণ ছাড়া, যুক্তিছাড়া, কতগুলো কথা বলেছিলি। আর তোর ভিত্তিহীন কথা নিয়ে বাবা-মা কত কত ঝামেলা করল। তোকে বাবা-মা সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে তারমানে এটা নয় যে তুই অন্যায় করলেও তা সঠিক হয়ে যাবে। লজ্জা করে না তোর বোন হয়ে বোনের হয়ে বোনের সংসার ভাঙছিস? আমরা ছোট বেলা থেকে একসাথে বড় হয়েছি কিন্তু বাবা-মা তোর দিকে সবসময় একচোখাগিরি করেছেন। কেন? তুই একা তো তাদের মেয়ে নস! আমিও তাদের মেয়ে। তোর চেয়ে বয়সেও দেড় বছরের বড়ও। আর বড় ভাইয়া তিনি আছেন নিজ দুনিয়ায়। পরিবারে কি হল না হলো তা নিয়ে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। বাবা মায়ের তিনটি সন্তানই আপন কিন্তু তোর প্রতি তাদের আদরের ভাগ বরাবরই বেশি থাকে।
_" তো থাকবে না কেন?
_" বাবা মায়ের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা যখন পেয়েছিস তখন আমার সাংসারিক ভালোবাসা কেন নষ্ট করছিস? আমি তো তোদের থেকে দূরে চলে গিয়েছিলাম। দিব্যি সুখে নিজের সংসার করছিলাম। কিন্তু না ছোটবেলা থেকে যেমন আমার সব জিনিসে তুই ভাগ বসাতি তেমনি আমার সংসারটাও ভাঙতে গেলি। নিজের বোনকে কষ্ট দিতে তোর লজ্জা করে না?
প্রেমা খানিক চিৎকার করে বলল,
_" না করে না। কারণ তুই আমাকে বোন ভাবলেও আমি তোকে ভালোবাসি না। বলতে পারিস এক রকম ঘৃণা করি।
_" কেন? আমি তোর কী ক্ষতি করেছি?
_" ছোট বেলা থেকে ক্ষতি করিসনি, বড় হবার পর থেকে বহু ক্ষতি করেছিস। তবে কথায় আছে না কিছু মানুষ কারণ ছাড়াই আপনাকে অপছন্দ করে, ঘৃণা করে। তেমনি ছোট বেলা থেকেই তোকে আমি কারণ ছাড়াই ঘৃণা করি। আর বড় বেলায় ঘৃণার কারণটা আসিফ।
_" আসিফ কে? আমাদের যিনি ম্যাথ পড়াতেন তিনি? আসিফ স্যার?
_" হ্যাঁ। আসিফ স্যারকে আমি ভালোবাসতাম। তাকে প্রপোজ করলাম কিন্তু স্যার আমাকে অপমান করলেন। বললেন, তোমার বোন কত ভালো, ভদ্র হও। নিজের বোনের মত পড়াশুনায় ভালো হও, মানসিক দিক থেকে ভালো হও। এসব বাজে দিকে চিন্তা বাদ দাও। তোমার বোন তো এমন বাজে চিন্তা করে না। তবে তুমি ইঁচরে পাকা কেন? নিজের বোনের থেকে কিছু শিখো। কেন রে তুই এমন কি মহামানব যে তোর মত হতে হবে? শুধু তাই নয় আমাদের প্রায় আত্মীয় স্বজন তোর প্রশংসা করে, তোর গুনগান গায়। তুই ভদ্র, পড়াশুনায় ভালো হ্যান ত্যান কত কি! এসব সহ্য করে তোকে ঘৃণা করাটা কি অস্বাভাবিক কিছু?
_" ও তার মানে তুই প্রতিশোধ নিচ্ছিস?
_" নারে প্রতিশোধ কেন নিব। প্রতিশোধ নেবার হলে তোর জীবন নরক করে দিতাম না!
_" এখন নরকের চেয়ে কম কি?
_" নারে এখন তো শুধু তোকে নরকের দরজা দেখাচ্ছি। পুরোপুরি নরকে ধাক্কা দেইনি। তবে দেবার ব্যবস্থা করব।
প্রিয়তি কান্নাভেজা গলায় বলল,
_" কেন এমন করছিস প্রেমা?
_" ন্যাকা কান্না করিস না তো? এসব দেখলে গা জ্বলে। জীবন পুরোপুরি নরক বানাতে না চাইলে তোর শ্বশুরকে সত্যিটা বলতে বল। বাকিটা আমি ঠিক করে দিব।
_" আমার বিশ্বাস হয় না বাবা এমন কিছু করেছেন।
_" বাহ্ কয়মাস আগে পয়দা হওয়া শ্বশুরের জন্য এত দরদ। অথচ ২৩-২৪ বছর যাবত যে তোর বোন তার প্রতি বিন্দু মাত্র ভরসা নেই!
_" তুই নিজেই বল, তোর কথা কি ভরসা করার মত!
প্রেমা প্রিয়তির কাছে এসে বলল,
_" শোন প্রিয়তি আমি কিন্তু তোর সুখের শেষ করে ছাড়ব। মনে রাখিস। আমাকে কষ্ট দিয়ে কেউ সুখী হতে পারবে না।
প্রেমা চলে গেল। প্রিয়তি বালিশে মুখ গুজে কান্না করতে লাগল। প্রিয়তি বড্ড নরম মনের মেয়ে। প্রিয়তি মনে মনে বলল,
_" ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি বাবা মায়ের প্রেমার প্রতি একচোখা ভালোবাসা। বড় ভাইয়া আর আমাকে ভালোবাসলেও প্রেমার প্রতি তাদের টানটা যেনো সবচেয়ে বেশি। ছোট বেলায় দু বোনোর জন্য জামা কিনে আনলে প্রথমে প্রেমা নিজের পছন্দমত নিত তারপর আমাকে নিতে বলত। মাঝে মাঝে দেখা যেত প্রেমা একটা জামা পরে ঘুরে ফিরে সেটা প্রিয়তিকে দিত আর ও নতুনটা নিত। বাসায় ভালো কিছু রান্না হলে সবাইকে সমান ভাগে দেয়া হলেও প্রেমার ভাগে বেশি থাকত, এমনকি প্রেমা পরে খাবে সে জন্যও তুলে রাখা হত। আমি বা ভাই চাইলে বলত তোরা তো খেয়েছিস। প্রেমাও তো আমাদের সাথেই খেত তবুও ওর জন্য আলাদা করে তুলে রাখা হত। মাঝে মাঝে আমি রাগ করলে বাবা মা বলত ওতো ছোট। ছোট বোনের সাথে হিংসা করতে নেই। নিজের মনকেও তাই ভেবে বুঝ দিতাম ও ছোট। ভাইয়াও তাই বলত। কিন্তু সেই ছোট বোনটা যখন আমার সুখেও ভাগ বসাতে শুরু করল তখন কী বলব? বাবা মা তো ওর প্রতি অন্ধ বিশ্বাসী। প্রিয়তি চোখ বন্ধ করে বলল, হে আল্লাহ আমাকে পথ দেখাও। আমি আমার রিদুকে চাই শীঘ্রই চাই। ওকে যে আমার খুব প্রয়োজন।
রিদুর কথা মনে পড়তেই প্রিয়তির ফোনটা বেজে উঠল। কলটা রিদুর। প্রিয়তি ফোনটা রিসিভ করল না। কেটে মেসেজ করল,
_" কিছুক্ষণ পর কল করছি। আসলে প্রিয়তি চায় না রিদু আবার ওর কান্না ভেজা কন্ঠ শুনুক। তবে আবার টেনশন করবে।
০৫!!
রিদু ওর বাবার সামনে বসে বলল,
_" বাবা আমি আপনাকে সবচেয়ে বেশি সম্মান করি, বিশ্বাস করি। প্লিজ বাবা সত্যি করে বলুন সেদিন কী হয়েছিল? সত্যিটা না জানলে তো সমস্যার সমাধান করতে পারব না।
হারুন সাহেব শান্ত হয়ে বসলেন। ধীর গলায় রিদুর হাত ধরে বললেন,
_" হৃদয় শোন বাবা আমি আগে যা বলেছি এখনও তাই বলব। তুই জানিস আমি মিথ্যা বলি না। আর তোর নিজেরও কি প্রেমার কথা ভরসাযোগ্য মনে হয়?
রিদু ভাবনায় পড়ে গেল। মনে মনে ভাবলেন,
_" সত্যি তো বাবাকে তো কখনো মিথ্যা বলতে শুনিনি। তবে হয়েছিলটা কি সেদিন? সত্যিটা কী? তা তো এখন প্রেমার মুখ থেকেই বের করতে হবে। যা ঘাপলা ওর মাঝে আছে। এমনি ও মেয়েকে ভরসা করার জন্য মন সায় দেয় না।
রিদু প্রিয়তিকে কল করল। কিন্তু প্রিয়তি ফোনটা রিসিভ করল না। বেশ কয়েকবার কল করল। কিন্তু ফোন রিসিভ করছে না বা কল কেটেও দিচ্ছে না। প্রিয়তি ব্যস্ত থাকলে কল কেটে মেসেজ করে। কিন্তু আজ কিছুই করছে না। রিদু তিথিকে কল করল।
_" হ্যালো তিথি।
_" হ্যাঁ ভাইয়া।
_" প্রিয়তি কোথায়? ফোন কেন তু্লছে না?
তিথি মুখ গোমরা করে বলল,
_" কিছুক্ষণ আগে প্রেমা আপু কি কথা নিয়ে যেন প্রিয়তি আপুকে ধাক্কা মারে, তখন প্রিয়তি আপু পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। মাথা ফেটে গেছে বোধ হয়। রক্ত বের হয়েছে অনেক। চাচা-চাচি তাকে হসপিটালে নিয়ে গেছে।
রিদু উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,
_" কী?
_" হ্যাঁ
_" কোন হসপিটালে?
_" তিথি নাম বলল।
—————
রিদু সময় না নিয়ে বাড়ি থেকে বের হতে নিল। ওর মা দিলারা বেগম ওকে তাড়াহুড়ো বের হতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন,
_" কিরে হৃদয় এত তাড়াহুড়োয় কোথায় যাচ্ছিস?
_" প্রিয়তি নাকি পড়ে গিয়ে মাথা ফেটে গেছে।
দিলারা বেগম বিচলিত হয়ে বললেন,
_" কী বলিস? কিভাবে হলো?
রিদু প্রেমার কথাটা চেপে গেল, বলল,
_" সঠিক জানি না। গিয়ে জানতে পারব।
দিলারা বেগম বললেন,
_" চল আমিও যাব।
_" তুমি কেন শুধু শুধু কষ্ট করবে মা?
_" কি যা তা বলছিস? মেয়েটার মাথা ফেঁটেছে, হসপিটালে আর আমি যাব না? ওর সাথে তো আমাদের কোনো ঝামেলা নেই। নেহাৎ তোর বাবার খামখেয়ালির কারণে মেয়েটা ওখানে পড়ে আছে, নয়ত আমার ছেলের বউ কেন মাসের পর মাস বাপের বাড়ি থাকবে! সে যা হোক ঝামেলা পারিবারিক সেটা পারিবারিক ভাবে সমাধান হবে। তবে আমি যেমন তোর আর হৃদিতার (হৃদয়ের ছোট বোন) মা তেমনি প্রিয়তিরও মা। তুই পাঁচ মিনিট বস আমি বোরকাটা পরেই আসছি।
রিদু ওর মাকে নিয়েই হসপিটালে গেলো। তিথির কাছ থেকে আগেই কোথায় কি আছে বিস্তারিত জেনে নিয়েছে। কারণ রিদু জানে ও কল করলে প্রিয়তির বাবা ফোন রিসিভ করবেন না বা সঠিক করে ওকে কিছু বলবেন না। তাই তিথির কাছ থেকে আগে জেনে নিয়েছে। রিদু আর ওর মা যখন পৌঁছাল তখন প্রিয়তিকে মাথায় স্কান করানোর জন্য ভিতরে ঢুকানো হয়েছে। মাথায় আঘাত কতটা গভীর তা স্কান না করে বলা মুশকিল। রিদুকে দেখে প্রিয়তির বাবা পলাশ খান বললেন,
_" তোমরা এখানে কেন? কি চাই এখানে?
রিদু কিছু না বললেও দিলারা বেগম বললেন,
_" আমার ঘরের বউ অসুস্থ তাকে দেখতে আসব না?
পলাশ খান বেশ আক্রোশ নিয়ে বললেন,
_" বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার সময় মনে ছিল না যে, ঘরের বউ?
দিলারা বেগম শান্ত ভঙ্গিতেই বললেন,
_" ভুলে যাচ্ছেন আপনি নিজেই ঝামেলা পাকিয়ে প্রিয়তিকে নিয়ে এসেছেন। আপনার ত্যাড়া কথায় হৃদয়ের বাবা রাগ করে বলেছেন তবে নিয়ে যান আপনাদের মেয়েকে। মূল দোষটা কিন্তু আপনাদের।
রেহেনা রাগে বেগম চোখ মুখ লাল করে বললেন,
_" কী বলতে চান?
দিলারা বেগম হাত তুলে বললেন,
_" থাক বেয়ান। এটা হসপিটাল। ঝামেলা না করি। নিজেদের পরিবারের কথা পাবলিক প্লেসে বলে নিজের সম্মান হানি না করি। তার চেয়ে বরং প্রিয়তির জন্য দোয়া করি। মেয়েটার যেনো কোনো ক্ষতি না হয়।
রেহেনা বেগম চুপ হয়ে গেলেন। তখন দিলারা বেগম বললেন,
_" প্রিয়তি পড়ে গেল কিভাবে?
রেহেনা বেগম বললেন,
_" সিড়ি দিয়ে পড়ে গেছে।
রিদুর মাথাটা চট করে গরম হয়ে গেল। বেশ রাগ করেই বলল,
_" লজ্জা করে না বয়ষ্ক মানুষ হয়ে মিথ্যা কথা বলতে? আপনি না মা? মেয়ে তো দুটোই আপনার গর্ভের। তবে এক মেয়েকে কষ্ট দিয়ে অন্য মেয়ের দোষ কেন ঢাকছেন?
রেহেনা নিচু স্বরে বললেন,
_" কী বলতে চাও?
_" প্রিয়তিকে যে প্রেমা ধাক্কা মেরে ফেলেছে তা আমি শুনেছি। এখন হসপিটালে বলে চুপ আছি। আগে প্রিয়তিকে দেখি তারপর বাকিটা বলব।
কিছুক্ষণ পর প্রিয়তিকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে বাইরে নিয়ে আসা হলো। প্রিয়তি রিদুকে দেখে যেনো ওর প্রাণে প্রাণ ফিরল। প্রিয়তি ভেতর থেকে বের হতেই রেহেনা প্রিয়তিকে ধরে বলল,
_" এখন ডাক্তার দেখিয়েই তোকে বাড়ি নিয়ে যাব।
প্রিয়তি ওর মায়ের হাতটা ছিটকে বলল,
_" যাতে তোমার ছোট মেয়ে আমার সন্তানকে আবার মারার চেষ্টা করতে পারে, সে জন্য বাড়ি নিয়ে যাবে?
রিদু আর দিলারা বেগম অনেক অবাক হলেন। রিদু অবাক হয়ে বলল,
_" সন্তান মানে?
প্রিয়তির কান্নায় চোখ ভরে আসল। তারপর বলল,
_" সন্তান মানে আমাদের অনাগত সন্তান। তোমার সন্তান যে আমার পেটে বেড়ে উঠছে।
রিদু প্রিয়তির হাত ধরে, হাঁটু গেরে ওর সামনে বসে বলল,
_" মানে?
প্রিয়তি চোখ মুছে বলল,
_" আজ সকালে তুমি যাবার পর আমি প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট দিয়ে ইউরিন টেস্ট করি। কারণ গত মাসে আমার পিরিয়ড হয়নি। এ মাসেও পিরিয়ড ডেট চলছে কিন্তু পিরিয়ড হবার কোনো লক্ষণ দেখছি না। বরং কদিন যাবত আমার শরীরটা বেশ খারাপ লাগছে। সন্দেহ হলো যে কনসিভ করেছি কিনা! সে কারণে গতকাল ফার্মেসি থেকে টেস্টকিট কিনে এনেছিলাম। আজ বাসায় বসে টেস্ট করাতেই রেজাল্ট পজেটিভ পেলাম। ভাবলাম হসপিটালে এসে টেস্ট করে ১০০% শিওর হয়ে তোমাকে জানাব। কিন্তু তার আগে প্রেমা আজ সকালে বেশ হাঙ্গামা করেছে, মন খারাপ ছিল ভীষণ। দুপুরে ও আমার রুমের বাথরুমে গোসল করতে গিয়ে টেস্ট কিটটা পেয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করে
_" প্রিয়তি এটা কি? তুই প্রেগনেন্ট?
আমি বললাম,
_" যখন বুঝতে পারছিস তখন জিজ্ঞেস কেন করছিস!
প্রেমা প্রচন্ড রেগে অকথ্য ভাষায় আমাকে গালাগাল করল। তারপর বলল,
_" ঐ লম্পট ছাগটার বাচ্চা তুই পেটে বাঁধালি কি করে? ও বংশের কোনো চিন্হ আমি এ ঘরে রাখব না। এ পাপটাকে আমি লাত্থি মেরে পেট থেকে ফেলে দিব। প্রেমা সত্যি সত্যি আমার পেটে লাত্থি মারতে নিলে আমি ঘুরে যাই লাথিটা আমার পায়ে লাগে। নিজেকে সামলাতে না পেরে পড়ে গিয়ে দেয়ালের সাথে মাথায় আঘাত লাগে। মাথা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোতে দেখে প্রেমা ঘাবড়ে যায়। আল্লাহ মেহেরবান যে পেটে তেমন কোনো আঘাত লাগেনি। আমার বাচ্চাটা হয়ত সুস্থ আছে! কিন্তু তবুও পেটে চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে। ভয় করছে খুব। রিদু তুমি ডাক্তারকে বলো আমাকে আল্ট্রাস্নো করাতে। আমাকে যখন এখানে আনা হয়েছে তখন আমার হুস তেমন ছিল না বিধায় ডাক্তারকে বলতে পারিনি। আমাদের বাচ্চাটা ঠিক আছে কিনা তা দেখতে হবে। প্লিজ রিদু।
রিদু আর দিলারা বেগম হতভম্ব হয়ে প্রিয়তির কথা শুনছিল। রেহেনা আর পলাশ খানও যে বেশ অবাক তা তাদের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে। রিদু প্রিয়তির হুইল চেয়ার ধরে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
_" মা সব শুনে তুমি কি বলবে?
রেহেনা বেগম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,
_" প্রিয়তি আমাদের সাথে যাবে। তোর বাবাকে আমি সামলে নিব।
রিদু বলল,
_" হ্যাঁ। আগে ডাক্তার দেখাই তিনি কী বলেন তা দেখে তারপর ওকে বাড়িতে নিয়ে যাব।
রেহেনা তখনও বেশ রেগে বলল,
_" অসম্ভব। আমার মেয়ে আমাদের অনুমতি ছাড়া কোথাও যাবে না।
দিলারা বেগম বললেন,
_" আপনার মেয়ে ছিল। এখন আমার ছেলের স্ত্রী। আর একটা বিবাহিত মেয়ের বিয়ের পর তার স্বামী এবং শ্বশুর বাড়িই প্রথম। বাবার বাড়ি তখন পর হয়ে যায়। তার উপর তার স্বামীর অধিকার সবচেয়ে বেশি থাকে।
রেহেনা প্রিয়তির দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে বলল,
_" তুই কি আবার ঐ বাড়িতে যাবি যেখানে আমাদের এত অপমান হতে হয়েছে?
প্রিয়তি মাথা চেপে ধরেছে। ওর মাথা প্রচন্ড ব্যথা করছে। হয়ত যখন তখন জ্ঞান হারাবে। সব কিছু ঝাপসা ঝাপসা লাগছে ওর। দুই হাতে মাথা চেপে ধরে বলল,
_" মা বেশি কথা বলব না। তবে এতটুকো বলি আমি আমার সন্তানের জীবন বিপন্ন করতে পারব না। সমস্যা তোমাদের আদরের মেয়ের কারণে হয়েছে। আমি কেন --------।
প্রিয়তি আর তেমন কিছু বলতে পারল না। বা যা বলল তা কেউ বুঝল না। রিদু প্রিয়তিকে হুইল চেয়ার থেকে তুলে কোলে নিয়ে স্টেচারে শুইয়ে দিল। দিলারা বেগম গেলেন ডাক্তার ডাকতে।
ডাক্তার এসে টেস্ট করে বলবেন রিদু আর প্রিয়তির বাচ্চা সুস্থ আছে কিনা? নাকি বাচ্চাটা পৃথিবীতে আসার আগেই বিদায় নিবে।