রিপোর্ট দিতে এখন অনেক দেরী। তাই ওরা পাশের রেস্তরায় গিয়ে খেতে গেলো। তখন রশ্মি তানভীকে ফোন করলো।
__হ্যালো রশ্মি বল?
__তানভী তোদের কতক্ষন লাগবে?
__এখন অনেক দেরী হবে। তুই রাতের খাবার খেয়ে নিস। আমরা খেয়ে আসবো। মেবি রাত এগারোটা বাজবে।
__আচ্ছা সেটা ঠিক আছে। কিন্তু আয়াত স্যার কি এখনও তোদের সাথে?
__হ্যাঁ কেন?
__তাহলে ওদের থেকে একটু দূরে যা কথা আছে তোর সাথে।
__হ্যাঁ এখন বল কি হয়েছে?
__তুই কিরে? কাবাবে হাড্ডি কেন হচ্ছিস? ছাগল!
__ঐ রশ্মির বাচ্চা, মুখ সামলে কথা বল। আমি কি করছি সেটা আগে বল ।
__আরে তোকে তনয়া আর আয়াত স্যারের বিষয়ে সব বললাম। তাই তোর উচিত ওদের একটু স্পেস দেয়া। যাতে নিজেরা কথা বলতে পারে! তুই কিছু একটা বলে বাইরে চলে আয়, নয়তো বাড়ি চলে যা। আয়াত স্যার তনয়াকে পৌঁছে দিবে।
__হুহ। বললেই হলো? আমি আমার অসুস্থ বোনকে একটা ছেলের কাছে রেখে চলে আসবো! তাও এই রাতের বেলা? ইমপছিবল!
__ওরে গাঁধা আয়াত স্যার খুব ভালো মানুষ। আমি স্যারকে খুব ভালো করে চিনি। আর তাছাড়া ওদের নিজেদের চেনা জানা দরকার?
__তুই স্যারকে চিনিস আর আমি ছেলেদের চিনি। শোন ছেলেরা যতই ভালো হোকনা কেন, মেয়েদের একলা পেলে তাদের মাথায় ইবলিশ শয়তান ভর করে। তখন নিজে না চাইতেও খারাপ কাজ করে ফেলে। এতে দোষ ছেলেটার নয়, দোষ শয়তানের। ইসলামিক বই পড়িসনা নাকি! আর দোষ শয়তানের হোক বা মানুষের ভুগতে তো হয় মেয়েটাকে। তাই যত ভালো মানুষই হোকনা কেন আমি আমার বোনকে রাতে কারো সাথে একা ছাড়বো না। আর ওদের নিজেদের সময় দেয়ার কথা তো! আগে আমি আয়াত ভাইয়ার বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বিশ্লেষণ করে সবকিছু জানবো তারপর বলব, তনয়া আয়াত ভাইয়াকে ভালোবাসতে পারবে কি পারবে না!
__তোর মত ভাই থাকলে প্রেমের শত্রুর দরকার হয়না।
__যা ভাগ। আমি তনয়াকে নিয়ে তবে আসবো। তার আগে ওকে একা ছাড়বো না।
ডাক্তারের কাছ থেকে রিপোর্ট নিয়ে, ঔষধ কিনে রশ্মির ফ্ল্যাটে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত সাড়ে দশটার মত বেজে গেলো। এতক্ষন বসে থাকায় তনয়ার শরীরটা বেশি খারাপ লাগছে। আসার পথেও তানভীর কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে এসেছে।
তখন আয়াত ভাবছিলো ইশ কবে যে, ঐ মাথাটা আমার কাঁধে দিবে। সে দিনটা যে কবে আসবে আল্লাহই জানে? আই হোপ জলদি আসুক। আয়াত ওদের বাসায় পৌঁছে দিয়ে চলে যেতে নিবে, তখন তানভী বলল,
__আয়াত ভাইয়া আমাকে আমাদের বাসায় ড্রপ করে দিবেন? বাইক আনিনি আর এত রাতে গাড়ি পেতে কষ্ট হবে।
__আচ্ছা ঠিক আছে। আসো।
__দশ মিনিট বসুন ভাইয়া, আমি তনয়ার ঔষধটা বুঝিয়ে দিয়ে আসছি। তানভী তনয়াকে বসিয়ে বলল, দেখ বোন এখন ঘুমিয়ে পড়বি, একদম রাত জাগবি না। ডাক্তার বলল, কদিন যাবত খাওয়া দাওয়া ঠিকমত করিস না, ঠিকমত ঘুমাস না, আর অতিরিক্ত টেনশন নিস। তার মধ্যে তোর থাইরয়েডের যে, মেডিসিনটা নিয়মিত নেয়া লাগে সেটাও নাকি গত কয়েকদিন ধরে খাসনি তাই হঠাৎ করে শরীর এত খারাপ করল।
তনয়া তুই তো এত কেয়ারলেস ছিলিনা! আমি তো আছি! তাহলে শুধু শুধু টেনশন কেন নিস?
সব ঠিক হয়ে যাবে। দাদাভাই আর আমি তো অলয়েজ তোর সাথে আছি আর মেজ দাদাভাইও কদিন যাবত তোকে খুব বেশি মিস করছে। বারবার তোর কথা আমাদের কাছে জিজ্ঞেস করে। আর মা সেতো মা ই। সন্তান শত অন্যায় করলেও তাকে মাফ করে দিয়ে নিজের মাতৃত্বের মান রাখে মা। তাই মা তোকে মাফ করে দিয়েছে। আর হ্যাঁ দেখিস দু একদিনেই মাকে তোর সাথে দেখা করাতে নিয়ে আসবো। আর বাকি রইলো ঐ হিটলার (তালিব মাহমুদ) মানে আমাদের বাবা! আরে সেও মানুষ কদিন পর ঠিক বদলে যাবে। পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে যুগের পর যুগ পরিবর্তন হয় তবে কি আমাদের বাবা পরিবর্তন হবেনা? আল্লাহর রহমতে খুব শিঘ্রই বাবাও তোকে মাফ জরে দিয়ে কাছে টেনে নিবে।
প্লিজ বোন টেনশন নিয়ে নিজের শরীরর নিজে খারাপ করিস না। একটু খেয়াল রাখ নিজের।
__আচ্ছা ঠিক আছে। তুই এখন জলদি যা।, রাত তো জম হল না! শোন সাবধানে যাস কেমন। গিয়েই ফোন দিবি।
__আচ্ছা। রশ্মি প্লিজ তনয়ার দিকে খেয়াল রাখিস।
__আচ্ছা তুই টেনশস করিস না (রশ্মি)
তানভী তনয়ার মাথায় চুমো দিয়ে বিদায় নিয়ে আয়াতের সাথে গেলো।
কেন জানি তানভী তনয়া বলতে অজ্ঞান। বোন তো কত জনেরই আছে। কিন্তু তানভীর মত বোন ভক্ত আজকালকার যুগে খুব কম।
তানভী আয়াতের সাথে যাবার আসল উদ্দেশ্য হল, আয়াতের সাথে তনয়ার বিষয়ে কথা বলা। তনয়াকে তো যার তার হাতে তুলে দিতে পারেনা! তানভী ভাবছে, বোনটা নিজের অপূর্ণতার জন্য অনেক কষ্ট পেয়েছে। অনেকে অনেক ভাবে আমার বোনকে তার অপূর্ণতার জন্য মজার ছলে কষ্ট দিয়েছে। সেগুলো তনয়া সহ্য করতে পারলেও আয়াত ভাইয়ার দেয়া কষ্টটা সহ্য করতে পারবে না। কারন তনয়ার কাছ থেকে আয়াত ভাইয়ার বিষয়ে শুনে যা বুঝেছি তাতে তনয়া আয়াত ভাইয়ার উপর দুর্বল। হয় তো কাউকে প্রকাশ করছে না। কিন্তু আমি আমার বোনের চোখের ভাষা বুঝি। ও যে, আয়াত ভাইয়াকে মনে মনে পছন্দ করে সেটা স্পষ্ট ওর চোখে ফুটে ওঠে। তাই আয়াত ভাইয়া আর তনয়ার সম্পর্ক পরের ধাপে যাবার আগে আমাকে আয়াত ভাইয়ার সম্পর্কে খুটিনাটি সব জানতে হবে।
কিছুদূর যেতেই তানভী আয়াতকে বলে উঠল,
__আপনি তনয়াকে ভালোবাসেন?
এ কথা বলায় আয়াত হার্ট ব্রেক করে গাড়ি থামিয়ে ফেলল। তানভীর প্রশ্নের কি জবাব দিবে ভেবে পাচ্ছেনা। তারপর মনে মনে কিছুক্ষন ভাবলো আর মনে মনে বলল, নাহ সত্যিটা বলে দি যা হবার আজই হবে। আয়াত একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে হালকা হাসি দিয়ে বলল,
__হ্যাঁ।
__কেন? কারন কি?
__ভালোবাসার জন্য কোন কারন লাগেনা তানভী। সেটা তো হয়ে যায়।
__কিন্তু রশ্মি যে বলল, আপনি তনয়াকে আগে থেকে চিনতেন?
__হ্যাঁ। ওহ তারমানে রশ্মি তাহলে তোমায় সব সত্যি বলে দিছে? আমি নিজেই ওকেও তিন চার দিন আগে বলছি।
__হ্যাঁ বলছে। কারন তনয়ার দিকে আপনি যেভাবে তাকাতেন সে তাকানোতে আমি অন্যরকম কিছু খেয়াল করেছি। তাই রশ্মির কাছে জিজ্ঞেস করছিলাম।
__ওহ। তা কি খেয়াল করলে?
__সত্যি আপনি তনয়ার খেয়াল রাখবেন তো আয়াত ভাইয়া?
__তোমার কি মনে হয়?
__দেখুন ভাইয়া আমার বোনটা এমনি অনেক মানুষের কাছ থেকে তাদের কথায়, কাজে অনেক কষ্ট পেয়েছে। ও অনেক শক্ত আর চঞ্চল মেয়ে, তাই কাউকে কিছু বুঝতে দেয়না। কিন্তু আমি আমার বোনকে জানি, ও ওর অপূর্ণতা নিয়ে প্রায়ই একা একা কাঁদে। আমি ওকে আর কষ্ট পেতে দেখতে চাইনা।
__তানভী ওয়াদা করছি, আমার থেকে তোমার বোন কখনো কোন কষ্ট পাবে না। যেদিন ও আমার থেকে সামান্য আঘাত পাবে সেদিন আমি নিজে ওর জীবন থেকে সরে যাবো।
__আপনি সত্যি আমার বোনকে ভালোবাসেন তো?
__তানভী তোমায় ঠিক বোঝাতে পারবো না। আমি তনয়াকে ঠিক কতটা ভালোবাসি। তুমি ঠিক যেমন তোমার বোনকে আগলে রাখো আমিও তেমন রাখবো। কথা দিচ্ছি।
তারপর ওদের ভিতর আরো অনেক কথা হলো। তানভী কিছু প্রশ্ন করল যার উত্তর আয়াতের কাছে তখন ছিলো না। তাই তানভী বলল, যখন এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন তখন আমি নিজে তনয়াকে আপনার হাতে তুলে দিবো। আয়াত তানভীকে ওদের বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে গম্ভীর মুখে চলে গেলো।
১১!!
পরের দিন তনয়া অফিসে গেলো। গতকাল ঔষধ খাবার পর থেকে শরীরটা বেশি খারাপ লাগছে। মাথাটা বড্ড ঘুরাচ্ছে। এটা সবময়ই হয়। তবে প্রতিবার ঔষধ বদলে দেবার পর, নতুন ঔষধ নিলে দু তিন দিন শরীর খুব খারাপ থাকে তনয়ার। কিন্তু অফিসে একদিনের ছুটি নিয়েছিলো। কদিন আগেই জয়েন করছে এর মধ্যেই ছুটি নেয়াই উচিত হয়নি। তার মধ্যেও নিয়েছে। আর এর থেকে বেশি ছুটি নিলে হয়তো জবটা থাকবে না।
তনয়া অফিস গিয়ে আয়াতের কেবিনের সব কিছু ঘুছিয়ে ফেলল। তনয়ার মনে হচ্ছে হাত পা কাঁপছে, দাড়িয়ে থাকার শক্তি হারিয়ে যাচ্ছে, চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। তারপর শক্ত হয়ে কাজ করার চেষ্টা করল কিন্তু আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। কারো গায়ের উপর পড়ছে বলে মনে হয় তনয়ার। তারপর আর কিছু মনে নেই।
তনয়া পরে যাচ্ছিল দেখে আয়াত ওকে ধরতে গিয়ে তনয়া আয়াতের বুকে এসে লুটিয়ে পড়লো। আয়াত তনয়াকে সাবধানে ধরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে ফেলল। প্রথমবার তনয়ার মাথাটা আয়াতের বুকে। আয়াতের ঠিক কেমন অনুভূতি হচ্ছে ও নিজেই বুঝতে পারছেনা। মনে হচ্ছে বুকের ভিতর কেউ ধরাম ধরাম করে হাতুরী পেটা করছে। তনয়া ভারী নিঃশ্বাসটা আয়াতের বুকে লাগছে। আয়াত তনয়াকে কোলে তুলে নিয়ে গাড়িতে উঠে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
এদিকে কদিন যাবত আয়াত তনয়াকে জড়িয়ে অফিসে অনেক কানা ফুসি হচ্ছিলো। কিন্তু আজ আয়াত তনয়াকে সবার সামনে থেকে কোলে করে নিয়ে যাওয়ায় ব্যপারটা আরো বাজে দিকে গড়িয়ে গেলো। তনয়ার অসুস্থতা দেখে আয়াত এতটা বিচলিত হয়ে পড়লো যে, আসে পাশের কিছু ওর খেয়ালই ছিলো না।
—————
গাড়িতে তনয়ার মাথাটা আয়াত নিজের কোলে নিয়ে ছিলো। তনয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো আর ড্রাইভারকে গাড়ি দ্রুত চালাতে বলছিল। আয়াত ভাবলো তানভী আর রশ্মিকে ফোন করে জানিয়ে দেয়া উচিত। কিন্তু তানভী এর নাম্বার তো আয়াতের কাছে নেই। তাই আয়াত রশ্মিকে ফোন দিলো কিন্তু রশ্মি ফোন রিসিভ করল না। তারপর মনে পড়লো রশ্মিকে তো আয়াত নিজেই এক ক্ল্যাইন্ট এর কাছে মিটিং এ পাঠিয়েছে। দুপুর সাড়ে বারোটার আগে রশ্মিকে ফোনে পাওয়া সম্ভব নয়। এদিকে গতকাল তানভীর নাম্বারটা যে রাখবে তাও মনে ছিলো না। আয়াত ভাবছে কিছু কিছু ভুল সত্যি ভুল।
আয়াত তনয়াকে হসপিটালে নিলে ডাক্তার চেকাপ করে বলল,
__ভয়ের কিছু নেই। হঠাৎ করে ঔষধ বদলে দেয়ায় এমন হয়েছে। আর বড় সমস্যা হল ওনার ঘুম। ওনি বোধয় ঠিকভাবে ঘুমায়না। তাই তো শরীর বেশি দুর্বল হয়ে গেছে। ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছি, ঘন্টা তিনেক এখন ঘুমাবে। চাইলে বাসায়ও নিয়ে যেতে পারেন বা এখানেও কেবিন নিয়ে থাকতে পারেন!
আয়াত ভি আই পি কেবিন নিয়ে তনয়াকে সেখানের বেডে শুয়ে ওর পাশে বসে রইলো। আয়াত অপলক চোখে তনয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
অনেক সাহস করে তনয়ার ডান হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিলো। তারপর ডান হাতের তিনটা আঙুলে পরম যত্নে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। আয়াতের মন চাইছে তনয়া কপালে ভালোবাসার উষ্ম পরশ দিতে। নিজেকে আটকাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। অনেক ভেবে তনয়ার কপালের কাছে ঠোঁট নিয়ে গিয়ে আবার পরক্ষনেই মনে পড়ল তনয়ার বলা সেই কথাটা,
__আচ্ছা আপনারা ছেলেরা সবসময় মেয়েদের রুমে নিয়ে যাবার জন্য ব্যস্ত হয়ে কেন পড়েন!
আয়াত নিজেকে সংযোম করে চেয়ারে বসে তনয়ার হাতটা ধরে নিজেকে নিজে বলল, ছি আয়াত! তনয়া যে ভয়টা পায় তুইও সেই একই কাজ করতে যাচ্ছিলি? মাত্র কিছু সময় নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারছিসনা। হ্যাঁ তনয়ার জন্য আমার মনে ভাবনাটা পবিত্র। কিন্তু তবুও ওর সাথে আমার এখন বিয়ে হয়নি। আর বিয়ে হবে কিনা তারও গ্যারান্টি নেই। আল্লাহ্ কার সাথে কার জুটি বাঁধছে তা কেবল সে জানে। তাই মানুষের তাদের লিমিট ক্রস করার উচিত না। সবসময় নিজেদের মনের উপর নিয়ন্ত্রন রাখা উচিত। তনয়ার ডান হাতটা নিজের দু হাতের মধ্যে নিয়ে বলল, নিজের সবটা দিয়ে হলেও তোমার হাতদুটোও ধরে রাখার চেষ্টা করবো। জানিনা তুমি বিশ্বাস করবে কিনা? তবে তোমাকে সত্যি এতটা ভালোবেসে ফেলছি যা বলে বোঝাতে পারবো না।
এভাবে ঠিক কতক্ষন তনয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলো খেয়লে নেই আয়াতের। তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় আয়াতের চোখেও ঘুম নেমে আসে। নিজের অজান্তেই মাথাটা তনয়ার পেটের উপর এলিয়ে দিলো আয়াত। আর তনয়ার হাতটা তখনও ধরে ছিলো।
এভাবে কতক্ষন সময় চলে গেছে তার খেয়াল নেই। তনয়ার ঘুমটা একটু হালকা হল। নিজের পেটের উপর ভারী কিছু অনুভব করছে। কারো গরম নিঃশ্বাস পেটে লাগছে। তনয়া মাথাটা হালকা ঊঁচু করতেই দেখলো আয়াত ওর পেটের উপর মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। তনয়া বুঝতে পারছে না কী হচ্ছে?
মনে করার চেষ্টা করল, ঠিক কী হয়েছিলো? লাস্ট মনে পরে ও অফিসে আয়াতের কেবিনে ছিলো। তারপর কিছু মনে নেই। কেবিনের চার দিকে চোখ বুলিয়ে বুঝলো ও হসপিটালে আছে। দেয়ালে টানানো ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখে দুপুর দুটো। তনয়া যখন অফিসে ছিলো তখন মেবি সাড়ে দশটার মত বাজে। তনয়া ভাবছে তার মানে এতক্ষন আমি এখানে ঘুমিয়ে ছিলাম! আর আয়াত স্যার এতক্ষন আমার পাশে বসে থাকতে থাকেতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ছে। আয়াতের মাথায় হাত রাখলো তনয়া। কিন্তু আয়াত উঠছে না। তনয়ার ডাকতেও মন চাইছে না। কিন্তু আয়াতের মাথাটা ওর পেটের উপর থাকায় ওর নিঃশ্বাস নিতে একটু কষ্ট হচ্ছিলো। তারপরও আয়াতের মাথায় আলত করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো। যাতে আয়াতের ঘুম ভেঙে যায়। কারন ডাক দিয়ে আয়াতের ঘুম ভাঙাতে মন চাচ্ছেনা। তাই মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আয়াত বুঝতে পারে তনয়া জেগে গেছে।
হঠাৎ আয়াতের ফোনটা বেজে উঠতেই আয়াত ধরপরিয়ে মাথা তুলল। হঠাৎ করে গাঢ় ঘুম ভেঙে যাওয়ায় আয়াতের চোখ দুটো লাল হয়ে গেলো। মাথাটা তুলে তনয়ার দিকে তাকালো। বিজ্ঞানের মতে ঘুম ভাঙার পর মানুষের মস্তিক কিছু সময় পর্যন্ত অচল থাকে। চিন্তা ভাবনার করার মত বোধ বুদ্ধি লোপ পায়। আয়াত কিছুটা সময় নিলো নিজেকে স্থির করতে। তারপর ফোনটা হাতে নিলো। ততক্ষনে ফোনটা কেটে গেছে। চেক করে দেখে রশ্মি ফোন দিয়েছে।
আয়াত কল ব্যাক করতেই বলল,
__স্যরি স্যার। আমার মিটিং শেষ হতে হতে দেড়টা বেজে গেছিলো। তারপর দুপুরের খাবার খেয়ে কেবল ফোন হাতে নিয়ে আপনার কল দেখে ব্যাক করলাম। কিছু বলবেন?
আয়াত রশ্মিকে সবটা খুলে বলে বলল, তানভীকে নিয়ে হসপিটালে চলে আসতে। আয়াত ফোনটা রেখে তনয়ার দিকে তাকাতে পারছিলো না লজ্জায়। কারন কখন যে, তনয়ার পেটে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ছে তা আয়াতের খেয়াল নেই।
আসলে গতকাল রাতে তানভী করা প্রশ্ন দুটো নিয়ে আয়াত এতটা টেনশন করছে যে, সারা রাত ঘুমাতে পারেনি। সারা রাত বিছানায় শুয়ে তানভী এর করা প্রশ্ন দুটোর উত্তর খুঁজে বেরিয়েছে আয়াত। কিন্তু শত চেষ্টা করেও যুক্তি সংগত কোন উত্তর দাড় করাতে আয়াত পারছে না। তানভী বলছে যুক্তিসংগত উত্তর দিলে তানভী নিজে তনয়াকে আয়াতের হাতে তুলে দিবে। এসব চিন্তায় আয়াতের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। তনয়ার কথায় ধ্যান ভাঙলো আয়াতের!
__স্যার কি ভাবছেন?
__স্যরি তনয়া।
__কেন?
__আমি বুঝতে পারিনি কিভাবে তোমার উপর ঘুমিয়ে পড়লাম। বিশ্বাস করো আমি ইচ্ছা করে করিনি।
__ইট'স ওকে স্যার। আমি জানি আপনি ইচ্ছা করে করেননি। সো মন খারাপ করবেন না।
__ধন্যবাদ। আচ্ছা তুমি বস আমি খাবার নিয়ে আসছি।
আয়াত বাইরের ওয়ার্ড বয়কে দিয়ে খাবার আনালো। তারপর নিজেই প্লেটে নিয়ে তনয়ার সামনে প্লেটটা এগিয়ে দিয়ে বলল, নাও খেয়ে নাও।
তনয়া কোন কথা না বলে প্লেট হাতে নিয়ে বলল,
__আপনিও নিন স্যার।
__হ্যাঁ নিচ্ছি।
তনয়া চুপচাপ খেতে লাগলো সেই সকালে খেয়েছে তাই প্রচন্ড খিদে পেয়েছে তনয়ার। আয়াত তনয়ার খাবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে নিজে খেয়ে নিলো। ওদের খাওয়া শেষ হতে আয়াত তনয়াকে ডাক্তারের দেয়া ঔষধ খাইয়ে দিলো। এর মধ্যে তানভী রশ্মি কেবিনে ঢুকলো। তানভী ঢুকেই তনয়াকে জড়িয়ে ধরে হাজারো প্রশ্ন করতে লাগলো।
তানভী আর রশ্মির সাথে আরো একজন আসলো। যাকে দেখে আয়াতের মেজাজটা গরম হয়ে গেলো।