০১!!
কাঁপা কাঁপা হাতে কোনমতে রুমের দরজাটা ঠেলা দিয়ে খুলেই বরফের মূর্তির মতো জমে গেল যেন নীলা। ওর থেকে মাত্র কয়েক হাত দূরেই দুজন মানুষ ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। মেয়েটা ছেলেটার দু হাতের মাঝেই বন্দী হয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে আছে। আর ছেলেটি ঠোঁটের কোণে নেশাভরা হাসি ফুটিয়ে মেয়েটির ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসছে। দৃশ্যটা দেখে নীলা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার শক্তিটুকুও যেন হারিয়ে ফেললো। চোখ মুখের সামনে অন্ধকার হয়ে আসার আগেই কিছু একটা ধরে তাল সামলানোর চেষ্টা করতেই নীলার হাত লেগে কিছু একটা ফ্লোরে পড়ে ঝনঝন করে ভেঙ্গে গেল। আর সেই শব্দে সামনের দুজন কিছুটা আঁতকে উঠে তাকাতেই নীলার সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল ছেলেটার৷ আজ প্রথমবারের মতো সেই চাহনির ভাষা বুঝতে পারলো না নীলা। অন্য মেয়েটা কিছুটা ইতস্তত করে ছেলেটাকে কিছু একটা ইশারা করতেই ছেলেটাও সরে এলো তাড়াতাড়ি। নীলা কোনোমতে টলমল পায়ে এক পা দু পা ফেলে দুজনের দিকে এগিয়ে এলো।
-আরে? নীলু? তুমি? তুমি হঠাৎ এখানে এভাবে? একটা কল করে আসবে তো----? আমমমম নীল? তুমি যা ভাবছ আসলে তেমনটা নয় নীল-----।
ছেলেটা নিজের সাফাইয়ে কিছু বলার আগেই নীলার কাঁপা হাতের একটা থাপ্পড় এসে তার গালে পড়লো। ছেলেটা কিছু বলার চেষ্টা করতেই নীলা ওর শার্টের কলার চেপে ধরলো। ছেলেটার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা কিছুটা ভয় পেয়েই বাড়ির ভিতরের দিকে কোথাও ছুটে পালালো। নীলা একবার সেদিকে তাকিয়ে এবারে সোজা ছেলেটার চোখের দিকে তাকালো।
-অসময়ে চলে এসে খুব অন্যায় করে ফেলেছি না জিহান? গত দুদিন ধরে কাজের দোহাই দিয়ে এসবই চলছিল তাহলে আপনার এই ফার্মহাউজে তাই না? আগামী সপ্তাহে আমাদের বিয়ে। আর আপনি? আপনি অন্য মেয়ের সাথে এভাবে---এভাবে--নিজের কাজ করছেন তাই না? কাল রাত থেকে আপনার মোবাইল বন্ধ বলে আমি চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। আর আপনি? বেশ তো আছেন। না আসলে তো জানতেই পারতাম না মুখে ভালোবাসার লেকচার দিয়ে সবার আড়ালে এসব মেয়েবাজি করে বেড়ান আপনি----।
-নিলা? প্লিজ রিল্যাক্স? আর তোমাকে এখানে কে আসতে বলেছে? বলেছিলাম তো কাজ শেষ হতে দুটো দিন সময় লাগবে আমার। আর আমার ফার্ম হাউজের এড্রেসটা পেলে কোথায়? আমি তো তোমাকে এটার এড্রেসটা জানাই নি----।
-যেখান থেকেই পাই না কেন আজ এখানে না আসলে তো জানতেই পারতাম না আপনার আসল রূপ কোনটা। এসবই যদি ছিল আপনার মনে তাহলে কেন আমাকে বাধ্য করেছিলেন আপনাকে ভালোবাসতে? কেন পাগলের মতো আমার পিছনে ঘুরতেন? সবটাই কি নাটক ছিল জিহান?
-ওহ! কাম ওন নীলা? তোমাকে পাবার জন্য এতো কষ্ট করেছি যতটা কষ্ট বাকি সব মেয়েগুলোকে পটাতে করতে হয়নি। শেষমেশ দুটো ফ্যামেলি ব্যাপারটা বিয়ে পর্যন্ত নিয়ে গেছে। সো বোরিং। অথচ দেখো তোমাকে এখনো নিজের করে পাওয়াও হলো না।
-জিহান?
-কাম ওন নীলা? জাস্ট গ্রো আপ। এসব তো আজকাল সিম্পল ব্যাপার। এখানে এমন রিএ্যাক্ট করার কি আছে? তুমি এসব পছন্দ করো না বলে আমিও কখনো তোমাকে এসব নিয়ে কিছু বলি নি। বাট আমারও তো একটা নিড আছে। তুমি সেটা পূরণ না করলে অন্য কেউ তো করবে---।
-ছি জিহান! আপনি এতোটা নীচ! ঘৃণা হচ্ছে আমার নিজেকে যে আপনার মতো একজনকে ভালোবেসেছিলাম আমি।
-এবারে কিন্তু তুমি সত্যিই ওভার রিএ্যাক্ট করছ নীলা। এভাবে হাইপার হওয়ার তো কিছু হয়নি জান। জাস্ট রিল্যাক্স। নেক্সট উইকে বিয়ে। এভাবে কান্নাকাটি করে চেহারাটার কি হাল করছ সেই খেয়াল আছে? বিয়ের আগেই যদি চোখের নিচে এভাবে কালি ভরিয়ে রাখো কেমন লাগবে বিয়ের দিন-----। পার্লারের মেয়েরাও তো এতো ব্লুরিশ মার্ক ঢাকতে পারবে না মেকাপ দিয়ে। কি বিশ্রি লাগবে দেখতে ভাবো একবার?
-জাস্ট শাট আপ মিস্টার জিহান। শাট আপ। আপনার মতো একটা অমানুষকে আমি মরে গেলেও বিয়ে করবো না। কখনোই না।
-ভেবে বলছ তো জান? তোমার বাবা জানলে কি হবে একবার ভেবে দেখেছ? একবার নিজেই জেদ ধরলে আমাকে বিয়ে করবে বলে। আবার এখন বিয়ে করবে না বললে কি মেনে নিবে উনি? তাছাড়া উনার সম্মানের দিকটাও তো একবার ভাবো। আর ব্যাপারটা জানাজানি হলে তোমার বাবার ব্যবসারও কি পরিমাণ ক্ষতি হবে সেটা নাহয় আর নাইবা বললাম। ইউ আর এ স্মার্ট গার্ল। আই থিংক ইউ নো হোয়াট আই মিন।
-আপনার মতো লোককে বিয়ে করার চেয়ে মরে যাওয়াই প্রেফার করবো আমি। আর আপনি কি ভেবেছেন সবসময় এটা ওটা বলে যেমন পার পেয়ে গেছেন এবারেও যাবেন? কোনো কাগজের টুকরো আর আমাকে আপনার সাথে জোর করে রাখতে পারবে না জিহান। আর না এসব শোনার পরও আপনার সাথে আমার বিয়েটা হতে দিবে।
-ওহ! রিয়েলি? ওকে। দ্যান ওয়েট এ মিনিট। তাহলে তোমার মুক্তির কাগজটাও তুমিই নাহয় নিয়ে যাও---।
জিহান কথাগুলো বলতে বলতেই বেডরুমের দিকে হাঁটা ধরেছে। নীলা কোনমতে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার চেষ্টা করলো। সারারাত যার অপেক্ষায় দু চোখের পাতা এক করতে পারে নি সেই মানুষটার এমন রূপ দেখে নিজেকে কিছুতেই সামলাতে পারছে না মেয়েটা। লোকটার এই ভালোবাসার নাটকটার আজ এখানেই শেষ দেখতে চায় নীলা৷ কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই আধবোজা চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখায় চেষ্টা করলো। বাড়ির মেইন ডোরের সামনে দাঁড়িয়েই কথা বলছিল এতোক্ষণ ওরা৷ এতোই চাহিদা যে একদম দরজার সামনেই এসব করতে হচ্ছিল! ছিহ! কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই জিহান এসে নীলার হাতে একটা ভাঁজ করা মোটা কাগজ গুঁজে দিলো। নীলা কোনোমতে কাগজটার ভাঁজ খুলে দেখার চেষ্টা করেই আবার বন্ধ করে ফেললো কাগজটা৷
-এটা? এটা আমাকে কেন দিচ্ছেন?
-এইটাই তো তোমার আমার কাছে থাকার একমাত্র কারণ ছিল তাই না? লুকিয়ে ম্যারেজ রেজিস্ট্রি পেপারে তোমার সাইন নিয়ে রেখেছিলাম। এটা আমার আর কোনো কাজেই লাগবে না। তোমারও হয়তো লাগবে না। তাই চাইলে ছিঁড়ে ফেলতে পারো। দিয়ে দিলাম কারণ নইলে আবার কোনদিন আমার তোমাকে পেতে ইচ্ছে করবে। তখন হয়তো কাগজটার ফায়দা উঠাতেও ইচ্ছে হতে পারে। অবশ্য এই মূহুর্তে তোমার উপরে বিন্দুমাত্র আকর্ষণ নেই আমার৷ দুটো দিন রূপের সাথে একদম স্বপ্নের মতো কেটেছে বুঝলে? তোমাকে আর লাগবে না আশা করি। এমনিতেও তোমার বাবার কাছ থেকে কিছু পাওয়ার সম্ভবনাও নেই। আর তোমার চেয়ে রূপের সাথেই বেশ বিন্দাস আছি। ঝামেলা নেই, আরামসে ইন্জয় করছি লাইফটা।
নীলা এবারে নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে পাশের দেয়ালটা ধরে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো। জিহান সেটা দেখে একটু চুপ করে কাছে এসে নীলার হাত ধরার চেষ্টা করতেই নীলা হাত ঝাঁকিয়ে জিহানের থেকে ছিটকে দূরে সরে এলো।
-নীলা? তোমার চোখ মুখ এমন দেখাচ্ছে কেন? শরীর খারাপ লাগছে? আমাকে বলো প্লিজ কি হয়েছে তোমার?
-একদম নাটক করবেন না মিস্টার জিহান। আপনার এই ছেলেভোলানো নাটকে এবারে আর নীলা ধরা দিবে না। আপনি আপনার রূপের সাথেই এন্জয় করুন। বিয়েটা যে হচ্ছে না সেই খবরটা আপনার আত্মীয়দের জানিয়ে দিবেন। অনেকটা সময় নষ্ট করলাম আপনাদের মিস্টার জিহান। সরি ফর দ্যাট। ইউ গাইজ ক্যান কন্টিনিউ নাউ।
কথাগুলো বলতে বলতে এক পা এক পা করে পিছিয়ে যাচ্ছিলো নীলা। ফ্লোরে পড়ে থাকা ভাঙ্গা ফ্লাওয়ার ভাসটার উপরে পা পড়েছে সেদিকে একদমই খেয়াল ছিল ওর। জিহান ছুটে এসে নীলাকে ধরে ফেলার চেষ্টা করলেও নীলা সরে গেল এবারে। আর সরে যেতে গিয়ে কাঁচের টুকরোটা হড়বড় করে আরো টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙ্গে গেল। আর কয়েকটা টুকরো মেয়েটার পায়ে গেঁথেও গেল। ব্যথায় ককিয়ে উঠতে গিয়েও দাঁত দাঁত চেপে ব্যথাটা সহ্য করে সামনের দিকে পা বাড়ানোর চেষ্টা করতেই জিহান ওকে এবারে আটকালো। নীলা জিহানের হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে দেখে এবারে জিহান ধমকে উঠলো। নীলা সেসবে পাত্তা না দিয়ে সমানে কাঁদতে কাঁদতে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য জিহানের হাত ঠেলছে।
-নীল? গাধার মতো এমন করছ কেন? পায়ে এতো বড় কাঁচের টুকরো গেঁথে গেছে তোমার। কাঁচটা বের করতে হবে তো। নইলে ব্যথা যেমন পাবে, ইনফেকশনও তো হয়ে যেতে পারে নাকি? আর এমন খালি পায়ে কেন তুমি?
-ছাড়ুন জিহান। আপনার এই সিম্প্যাথি অন্য কাউকে গিয়ে দেখান। আমার আপনার কোনো সাহায্য লাগবে না। ছাড়ুন?
-এভাবে পাগলামি করো না তো নীল প্লিজ? আমার জন্য তুমি কেন নিজেকে কষ্ট দিবে এভাবে? আমি জাস্ট তোমার পা থেকে কাঁচের টুকরোগুলো বের করে ব্যান্ডেজ করে দিবো। ওকে? আজীবন আটকে রাখবো না তো তোমাকে। একটু চুপ করে বসো এখানে। আমি যাবো আর আসবো---।
জিহান নীলাকে আলতো করে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে ড্রইংরুমে একটা সোফার উপরে আধশোয়া করে বসিয়ে দিয়ে প্রায় ছুটে রুমে গেল ফার্স্ট এইড বক্স আনতে। নিজের লাগেজ থেকে ফার্স্ট এইড বক্সটা বের করে হাতে নিয়ে আবার ছুটে এসে আর নীলাকে দেখতে পেল না সেখানে। নীলার বদলে ফ্লোরে পড়ে আছে রক্তে ভেজা কয়েকটা ভাঙ্গা কাঁচের টুকরো আর ছোপ ছোপ রক্তে নীলার পায়ের ছাপ। ছাপগুলোই বলে দিচ্ছে নীলা ছুটে ফার্ম হাউজটা থেকে বেরিয়ে গেছে। জিহান একটু এগিয়ে এসে জানালা দিয়ে নীলার গাড়িটাকে চলে যেতে দেখে সেখানেই থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। মেয়েটা কতোটা ভয় নিয়ে এভাবে খালি পায়ে ছুটে এসেছিল সেটা জিহান নীলার চোখ মুখ দেখেই বুঝতে পেরেছিল। আসার সময় যতটা ভয়, আতঙ্ক নিয়ে এসেছিল, যাওয়ার সময় ঠিক ততটাই ঘৃণা নিয়ে ফিরে যাচ্ছে মেয়েটা। কথাটা মনে হতেই কেউ যেন জিহানের বুকের ভিতরটা শত শত ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাতে আঘাতে ক্ষত বিক্ষত করে দিচ্ছে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই কেউ একজন এসে ওর পাশে দাঁড়িয়েছে টের পেয়ে চট করে তার গলা চেপে ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। এই মেয়েটার কারণেই আজকে ওর নীলা ওকে ভুল বুঝেছে, নিজেকে রক্তাক্ত করে গেছে ভাবতেই আরো জোরে মেয়েটার গলায় চাপ বাড়ালো। জিহানের শক্ত হাতের চাপে মেয়েটার প্রায় দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড়।
-স্যার প্লিজ? আমাকে মেরে ফেলবেন না প্লিজ? আমি--। আমি আপনার সব কথা মানবো স্যার। আমাকে মারবেন না প্লিজ? আপনি চাইলে আমি ম্যামকে সব সত্যিটা গিয়ে বলবো। এক্ষুণি গিয়ে বলবো স্যার। আমাকে প্লিজ মারবেন না স্যার।
মেয়েটার আকুল আবেদনে জিহান কিছুটা শান্ত হয়ে ধাক্কা দিয়ে মেয়েটাকে সরিয়ে দিতেই মেয়েটা দুহাতে নিজের গলা ধরে কাশতে লাগলো। কাশতে কাশতে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড় মেয়েটার। জিহান আর কয়েক সেকেন্ড গলা চেপে ধরে রাখলে হয়তো এতোক্ষণে মরেই যেত মেয়েটা।
-কিছুক্ষণ আগে যে কথাগুলো বলেছিলে সেগুলো কি সত্যি ছিল? যদি মিথ্যে বলো তাহলে তোমাকে খুঁজে বের করে খুন করতেও দ্বিধা করবো না আমি বলে দিলাম।
-জি স্যার। বিশ্বাস করুন আমি সত্যি বলছি। আমি এক্ষুণি ম্যামের কাছে গিয়ে সব সত্যিটা বলে দিচ্ছি----।
-নীলাকে কথাগুলো বলার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করি নি মিস ফ্রড। জিজ্ঞেস করেছি আমাকে কনফেস করেছিলে যেগুলো তা কি সব সত্যি ছিল? নাকি বাঁচার জন্য নাটক করেছিলে?
-নো নো স্যার। আমি আপনাকে সবটাই তো বললাম। আমার মায়ের অপারেশনের জন্য টাকার খুব প্রয়োজন ছিল তাই এমন নিকৃষ্ট কাজ করতে রাজি হয়েছি। বিশ্বাস করুন আমি আগে জানলে-----।
-তোমার নামটা কি? মিস ফ্রড?
-আম। আমি সুনয়না।
-মিস সুনয়না। ঠিক যেটুকু আপনাকে করতে বললাম সেটুকুই করুন। এখান থেকে সোজা আপনার বসকে গিয়ে রিপোর্ট করবেন। যা যা বলতে বলেছি বলবেন। বাকি কাজটা নীলা নিজেই করে দিবে----।
-কিন্তু স্যার ম্যামকে তো সব সত্যিটা-----।
-লুক মিস সুনয়না। নীলাকে কখন কি বলতে হবে সেটা আমি নিজেই ঠিক করে নিবো। ইউ মে গো নাউ। কোনোরকম চালাকি করার চেষ্টা করলে তোমার মা আর তুমি কেউই কালকের সূর্যটা দেখতে পারবে না। মাথায় রেখো কথাটা।
-জি স্যার।
-গেট লস্ট নাউ।
সুনয়না নামের মেয়েটা কাঁধে নিজের ব্যাগটা ফেলে ছুটে পালালো জিহানের ফার্ম হাউজটা থেকে। জিহান নীলার পায়ের রক্তের ছোপগুলোর সামনেই বসে পড়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো রক্তভেজা পায়ের চিহ্নগুলোর দিকে। ওর মাথায় এখন একটাই কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। যাদের কারণে আমার নীলার শরীর থেকে এতোটা রক্ত ঝরলো তাদের এর চেয়েও কয়েক শ গুণ বেশি যন্ত্রণা দিবে জিহান। এর চেয়েও বেশি রক্ত ঝড়াবে তাদের শরীর থেকে। যতটা চোখের পানি ঝড়েছে মেয়েটার চোখ থেকে তার চেয়েও বেশি কাঁদাবে ওদেরকে জিহান। শুধু সময়ের অপেক্ষা।
০২!!
-মা চলে যাওয়ার পর আপনাকেই তো সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস আর ভরসা করেছিলাম জিহান। সবার চেয়ে বেশি। বাবার, ভাইয়ার সবার মতের বিরুদ্ধে গিয়েও আপনাকেই চেয়েছি। সেই আপনিই কিনা এভাবে ঠকালেন? তাহলে কি সত্যিই আপনার এতোদিনের ভালোবাসাটা নাটক ছিল? আমাকে নজর দেখার জন্য ছুটে আসাটা? ঘন্টার পর ঘন্টা ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে আপনার অবাক চোখে তাকিয়ে থাকাটাও নাটক ছিল? কত সহজে বলে দিলেন চাইলে কাগজটা ছিঁড়ে ফেলতে পারো। এই কাগজটা! আমাদের ম্যারেজ রেজিস্ট্রির পেপারটা? কথাটা বলতে গিয়ে একবারও গলাটা কাঁপে নি আপনার জিহান? একবারও মনে পড়ে নি কতো শত স্বপ্ন সাজিয়েছিলেন আমাকে নিয়ে? এতো তাড়াতাড়ি আপনার ভালোবাসার সবটুকু রঙ মুছে গেল? এতো সহজেই অন্য কারো রূপে তলিয়ে গেলেন জিহান? ছি! আজকের পর থেকে মরে গেলেও আপনার কথা ভাববো না। কখনো ভাববো না। আই হেইট ইউ জিহান, আই হেইট ইউ, হেইট ইউ, আই হেইট ইউ।
জিহানের দেয়া রেজিস্ট্রি পেপারটা শক্ত করে বুকে চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতে রীতিমতো হেঁচকি উঠে গেছে নীলার। তবু চোখ বেয়ে নামা কান্নার ঢল থামছেই না মেয়েটার। জিহান ওকে সোফায় বসিয়ে অন্য একটা রুমের দিকে যেতেই রক্তাক্ত পা ফেলে ছুটে এসে গাড়িতে বসেছিল নীলা। ওর সাথে আসা ড্রাইভার বিনা বাক্যব্যয়ে আবার বাড়ির দিকেই রওনা হয়েছে। আর নীলা ফোঁপাতে ফোঁপাতে পায়ে ভাঙা কাঁচের টুকরোর আঘাতে মাঝে মাঝে কঁকিয়েও উঠছে। না মেয়েটার কান্না থামছে, আর না চোখের সামনে থেকে জিহান আর ওই মেয়েটার কাছাকাছি ঘনিয়ে আসার দৃশ্যটা। রাগে, অভিমানে, ঘৃণায় হাতে ধরা কাগজটা কুঁচি কুঁচি করে টুকরো করে ফেলতে ইচ্ছে করলেও কিছুতেই কাগজটা ছিঁড়তে পারলো না নীলা। এই জীবনে এই ছোট্ট এক খন্ড কাগজ নষ্ট করার শক্তি যে নীলার কখনোই হবে না। আরো কয়েকবার কাগজটা ছিঁড়তে চেয়েও সামনের সিটে মাথা ঠেকিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ফেললো মেয়েটা। কতোক্ষণে বাড়ির পার্কিংয়ে গাড়িটা এসে দাঁড়িয়েছে টেরই পায়নি নীলা। ড্রাইভারের ডাকে চমকে উঠে হাতের কাগজটা নিজের পার্সে ঢুকিয়ে নিয়ে খালি পা জোড়া গাড়ির বাইরে রাখতেই ব্যথায় কঁকিয়ে উঠলো মেয়েটা। মাঝবয়সী ড্রাইভার সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসার চেষ্টা করতেই বাম হাতের ইশারায় তাকে থামিয়ে দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ব্যথাটা হজম করে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো নীলা। পিছনে পড়ে রইলো ওর রক্তমাখা পায়ের ছাপ।
গাড়ি পার্কিং থেকে বাড়ির মেইন ডোর পর্যন্ত কি করে হেঁটে এসেছে নীলা নিজেও জানে না। মেইন ডোরের সামনে এসে দেয়াল আঁকড়ে ধরে কয়েক পা এগিয়ে আসতে আসতে আফসান খন্দকারকে ড্রইংরুমে বসে নিজের পি.এ র সাথে কিছু একটা নিয়ে আলোচনা করতে দেখে এবারে সমস্ত শরীরটা কেমন ভেঙ্গে আসলো নীলার। আরো কয়েক পা এগিয়ে মানুষগুলোর কাছে যাওয়ার শক্তিটাও পেল না মেয়েটা। ধপ করে ফ্লোরেই এলিয়ে পড়লো ওর অচেতন শরীরটা। চোখ মুখের সামনে অন্ধকার ঘনিয়ে আসার আগে একটা ছোট্ট শব্দই বের হলো নীলার গলা দিয়ে। 'পাপা'। চারপাশটা নিকষ কালো অন্ধকারে ছেয়ে যাওয়ার আগে কারো বহুদূর থেকে ধড়ফড় করে ছুটে আসা, কারো ওর মাথাটা পরম আদরে নিজের কোলে তুলে নেয়াটা, কারো চোখের কান্নার জলের ফোঁটা বৃষ্টি হয়ে কপালে ঝড়ে পড়াটাও টের পেল নীলা। ধীরে ধীরে সমস্ত অনুভূতি, পায়ে কাঁচের টুকরো বিঁধে থাকার অকথ্য ব্যথা সব অনুভূতি হারিয়ে কেমন ফুরফুরে হয়ে গেল মেয়েটা। মনে হচ্ছে যেন অন্য কোনো দুনিয়ায় চলে গেছে ও। যেখানে অনুভূতির কোনো বালাই নেই, ব্যথা যেখানে ছুঁতে পারে না, কষ্ট হাসি কান্না খুশি সমস্ত আবেগের যেখানে প্রবেশ নিষেধ এমন কোনো দুনিয়ায়।
-নীলা? নীলা বোন আমার একবার চোখ মেলে তাকা প্লিজ? একটাবারের জন্য তাকা না প্লিজ? লক্ষী বোন না প্লিজ তাকা? এই দেখ ভাইয়া এসে গেছি তো? তোর ভাই তোর কোনো কষ্ট হতে দিবে না। একবার চোখ মেলে দেখ না রে ছুটকি? এই নীলু? নীলাআআআআআ?
-আবরার শান্ত হও। কিছুক্ষণের মধ্যেই নীলা মায়ের সেন্স আসবে। ও সেন্স ফিরে পেয়ে যদি দেখে তোমরা দুজনে এমন কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছ তাহলে কি ওর ভালো লাগবে? আর এই যে নিহার? এমন কান্নাকাটি না করে নীলার হাত পাগুলো একটু মুছিয়ে দাও। ডক্টর তো ড্রেসিং করে দিয়ে গেল। একটু পরে নীলাই বলে দিবে ওর এই অবস্থাটা কে করেছে। তারপর তার কলিজাটা টেনে যদি আমি ছিঁড়ে নিয়েছি তাহলে আমিও আফসান খন্দকার নই।
-আমি জানি এই কাজটা ওই শূয়োরের বাচ্চাটার। ওই জিহানের জন্যই আজ নীলার এই অবস্থা। আ'ম ড্যাম শিওর ড্যাড। ওকে আমি আজ ছাড়বো না। এতোগুলো দিন ওকে সহ্য করেছি শুধু নীলার, আমার বোনটার মুখের দিকে তাকিয়ে। কিন্তু আর না। প্রতারকের রক্ত যে প্রতারণাই করবে এটা তো আমি আগেই জানতাম। শুধু তোমার দোষে ড্যাড, আজ আমার ছোট্ট পরীটার এই অবস্থা হয়েছে। তুমি যদি ওদের বিয়ের জন্য রাজি না হতে তাহলে এসব কিচ্ছু হতো না। নীলার যদি কিছু হয় ড্যাড আমি ওই শূয়োরের বাচ্চাটাকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলবো। তারপর প্রয়োজনে ফাঁসিতে ঝুলবো। বাট আজই জিহানের শেষ দিন। আমার বোনকে কষ্ট দেয়ার শাস্তি তো ওকে ভোগ করতেই হবে।
কানের সামনে এমন চ্যাঁচামেচির শব্দে আবার ধীরে ধীরে অন্ধকারের দুনিয়া থেকে আলোর দিকে যাত্রা শুরু হয়েছে নীলার। আবরারের বলা শেষের কথাগুলো নীলার সমস্ত স্বত্তাকে জাগিয়ে তুললো। আবরার, মানে নীলার একমাত্র বড় ভাই রাগে প্রায় পাগল হয়ে সত্যি সত্যিই জিহানকে মারার জন্যই বেরিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু নীলার বিছানার সামনে থেকে সরে আসার সুযোগটা পেল না। নীলার মাথার কাছ থেকে সরে আসার আগেই নীলার ক্লান্ত একটা হাত আবরারের হাত টেনে ধরে থামিয়ে দিয়েছে আবরারকে। নীলার হাতের স্পর্শ টের পেয়েই আবরারও নীলার মাথার কাছে হুড়মুড় করে বসে নীলার আধবোজা চোখ মুখের দিকে ঝুঁকলো। ছোট্ট বোনটা এতোক্ষণে চোখ জোড়া পিটপিট করে তাকাচ্ছে দেখে আবরার ব্যস্ত হয়ে নীলার কপালে মুখে বেশ কয়েকটা আদরের চিহ্ন এঁকে দিল। ছোট্ট পরীটাকে হারিয়ে ফেলার ভয়টা এখনো যেন আবরারের বুকের ভিতরে পাথরের মতো জেঁকে বসে আছে।
-ভাইয়া? যাস না প্লিজ? আমাকে একটু কোলে নিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দে না ভাইয়া? ভিষণ কষ্ট হচ্ছে আমার। ও ভাবি? ভাইয়াকে বলো না আমার পাশে আরো একটু বসতে? আমি ঘুমিয়ে পড়লে নাহয় চলে যেতে বলো। ভাবিমা? বলো না গো প্লিজ?
-তোর ভাইটু কোথাও যাচ্ছে না বনু। এই দেখ আমি তোর--আমি তোর মাথার পাশেই বসছি। তুই লক্ষী মেয়ের মতো ভাইয়ার কোলে মাথা দিয়ে ঘুমা কেমন? ভাইয়া একদম কোথাও যাবো না প্রমিস। এই নিহার সরো না? দেখছ না আমার বোন ডাকছে আমাকে? সরো তো সরো? এই নীলু? বেশি কষ্ট হচ্ছে তোর বনু?
-তুমি আবার আমার ভাবিমাকে বকছ ভাইয়া? তোমার সাথে কথাই বলবো না যাও। ও ভাবিমা? এই লোকটাকে সরতে বলো আমার সামনে থেকে। আমার ভাবিকে যে বকে তার সাথে আমার কোনো কথা নেই। কথা নেই। কথা নেই। যেতে বলো ওকে। পাপা? যেতে বলো না?
-আ'ম সরি সোনা বনু। আমি নিহারকে বকি নি তো বাবা। শোন না? বিশ্বাস না হলে তুই নিহারকে জিজ্ঞেস কর? এই নিহার তুমিই বলো বকেছি আমি তোমাকে? আমি তো শুধু তেমাকে সরে বসতে বলেছি।
-ভাবিকে সরি বলো? বলো সরি? নইলে আমি কিন্তু --আমি কিন্তু রাগ করবো বলে দিলাম ভাইয়া।
-সরি নিহার। আ'ম এক্সট্রেমলি সরি। এবার হয়েছ বনু? এবার খুশি তুই?
-হুম। এত্তোগুলা খুশি। ও ভাবিমা কষ্ট হচ্ছে আমার। ভিষণ কষ্ট হচ্ছে।
নীলার দুষ্টুমির ফাঁকে আবার কঁকিয়ে ওঠায় ওর ভাই, ভাবি আর বাবা তিনজনই যেন ছটফট করে উঠলো। নীলার চুলে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে নিহার, আবরার ব্যস্ত হাতে ডক্টরের নাম্বারটা ডায়েল করছে। আর আফসান খন্দকার রুমটায় ব্যস্ত পায়ে পায়চারি করছে। আফসান খন্দকারের পি.এ ছেলেটা এতোক্ষণ মোবাইলটা কানে লাগিয়ে কারো কথা শুনছিল। এবারে এগিয়ে এসে নিচু গলায় আফসান সাহেবকে কিছু একটা বলায় উনার চোয়াল জোড়া শক্ত হয়ে একে অন্যকে চেপে ধরলো। পি. এ ছেলেটাকে কিছু একটা ইন্সট্রাকশন দিচ্ছেন এমন সময় নীলার ডাকে বিছানার দিকেই এগিয়ে এলো আফসান সাহেব আর আবরার।
-পাপা? ভাইয়া?
-কি হয়েছে মামনি? কষ্ট হচ্ছে খুব? এক্ষুণি ডক্টর আঙ্কেল চলে আসবে মা। আবরার ডক্টরের সাথে কথা হলো তোমার? আর কতোক্ষণ লাগবে আসতে?
-পাপা? প্লিজ তোমরা শান্ত হও প্লিজ? আমার কিছু হয় নি প্রমিস।
-জানি তো মা। আমার নীলা মায়ের কিচ্ছু হবেও না। তুমি একটু শান্ত হয়ে শুয়ে থাকো মা।
-পাপা? আ'ম সরি পাপা। আমার একটা কথা রাখবে পাপা? কেউ কিচ্ছু জানতে চেও না প্লিজ। বিয়েটা ক- ক্যানসেল করে দাও প্লিজ?
-বিয়ে ক্যানসেল করবো মানে? নেক্সট উইকে বিয়ে তোমার আর জিহানের। সব রিলেটিভদের কার্ড দেয়া হয়ে গেছে। আর এখন বলছ বিয়ে ক্যানসেল করে দিতে? নীলা? কি হয়েছে পাপাকে বলো? জিহান কিছু বলেছে তোমাকে? আর তোমার এই অবস্থাই বা কি করে?
-পাপা প্লিজ? তোমাদের কাছে আর কক্খনো কিছু চাইবো না, কিছুর জন্য জেদ ধরবো না। প্রমিস। শুধু এই বিয়েটা ক্যানসেল করে দাও প্লিজ? আমি আর কিচ্ছু বলতে পারবো না পাপা প্লিজ? আমি জানি সবাই অনেক খারাপ খারাপ কথা বলবে, কিন্তু বিয়েটা হলে আমার মরে যাওয়া ছাড়া আর উপায় থাকবে না।
-নীলা? কিসব বলছিস মা?
নীলার কান্নাভেজা কথাগুলো শুনে আফসান সাহেব নিজেও কেঁদে ফেললেন। এগিয়ে এসে মেয়ের কপালে চুমো এঁকে দিয়ে নীলার চুলে হাত বুলিয়ে দিলেন।
-জিহান ছেলেটা যে তোর যোগ্য নয় সেটা আমরা আগেই তোকে বলার চেষ্টা করেছিলাম মা। কিন্তু তোর জেদ আর খুশির কাছে আমরা হার মেনে বিয়েতে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। এখন তুই নিজেই যখন চাইছিস না তাহলে অন্য কারো কথা ভেবে কেন ওই ছেলের সাথে তোর বিয়ে দিব? ওই ছেলে যে কিভাবে তোকে ঠকাচ্ছিল এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছিস? কিচ্ছু ভাবিস না মা। বিয়েটা হবে না। তুই নিশ্চিন্ত থাক। পাপা সব ব্যবস্থা করছি। তুই শুধু নিজের খেয়াল রাখ। আবরার নিহার? তোমরা নীলার খেয়াল রাখো। আমি ব্যাপারটা মিটমাট করে আসি। আরো দেরি হয়ে যাওয়ার আগে এখানেই ব্যাপারটা শেষ করে দিলেই ভালো হবে। চলো শিহাব।
রাফসান সাহেব পি.এ শিহাবকে নিয়ে বেরিয়ে যেতেই নিহার নীলার চুলে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিল। এতোক্ষণ নীলার বলা কথাগুলোই আনমনে ভাবছিল মেয়েটা। এবারে আবরার কিছুটা দূরে নিজের মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে দেখে নীলার দিকে একটু ঝুঁকলো নিহার। নীলার বন্ধ চোখের কোণা দিয়ে টপটপ করে ঝড়া কান্নার বিন্দুগুলো হাজারো না বলা কথা নিহারকে যে বলে দিচ্ছে। নিহার আলতো হাতে নীলার চোখ মুখটা মুছে দিয়ে নীলার মুখের কাছে এসে ফিসফিস করে কয়েকটা কথা বললো। যথা সম্ভব চেষ্টা করলো কথাগুলো যেন আবরারের কানে না যায়। নিহারের বলা কথাগুলো শুনেও নীলার কান্নার বিন্দুগুলো যেন আরো জোর পেল এবারে। কিন্তু গলা দিয়ে একটা টু শব্দ পর্যন্ত বের হলো না নীলার। মেয়েটার কানে শুধু নিহারের বলা কথাগুলোই বারবার বাজছে।
- তোর কোথাও ভুল হচ্ছে নীলা। কোথাও একটা ভুল হচ্ছে সবার। জিহান ভাইয়া এমন ছেলেই নয় যে তোকে ধোঁকা দিবে। এর পিছনে নিশ্চয়ই গভীর কোনো চক্রান্ত আছে নীলা। ভাবির কথাটা একবার শোন সোনাপাখি? ভাবিকে বল কি হয়েছে? তুই যাই বলবি আমি বিশ্বাস করতে রাজি। কিন্তু জিহান ভাইয়া তোকে ঠকাচ্ছে এটা আমি মরে গেলেও বিশ্বাস করতে পারবো না রে। তুই নিজের মনকেই প্রশ্নটা কর না? যে লোকটা তোর জন্য এতোটা পাগল সে কি সত্যিই তোকে ঠকাবে? তোর বিশ্বাস হয় এই কথাটা? তুই কি দেখেছিস না দেখেছিস আমি জানি না। কিন্তু বিশ্বাস কর সব ভুল, সব মিথ্যে। শুধু নিজের মনের কথাটা শোন সোনা। তাহলেই বুঝতে পারবি জিহান ভাইয়া তোকে কখনো ঠকায় নি, ঠকাতে পারে না। মরে গেলেও ঠকাতে পারবে না লোকটা তোকে।