মহুয়া - পর্ব ০৬ - শারমিন আক্তার সাথী - ধারাবাহিক গল্প


      তি‌থিদের ঘর থে‌কে বাই‌রে এসে প্রিয়ম, প্রিয়‌তি‌কে কল করল। এসব বিষ‌য়ে প্রিয়‌তিই সর্বদা ওকে বন্ধুর মত সা‌পোর্ট ক‌রে‌ছে। আজও হয়‌তো প্রিয়তিই ওকে সাহায্য কর‌তে পার‌বে। প্রিয়‌তি আর রিদু ব‌সে চা খা‌চ্ছি‌লো। রিদু কিছুক্ষণ আগে অফিস থে‌কে ফি‌রে‌ছে। আজ অফি‌সে কা‌জের চাপ কম থাকায় বিকা‌লেই বা‌ড়ি ফি‌রে‌ছে রিদু। প্রিয়‌তিও রিদু‌কে চা নাস্তা দি‌য়ে ওর পা‌শে ব‌সে চা‌য়ে চুমুক দি‌লো। তখন ওর ফোনটা বে‌জে উঠল। প্রিয়‌তি চা‌য়ের কাপ রে‌খে ফোনটা রি‌সিভ করে সালাম দি‌লো।
" আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। কেমন আছিস?"
" ওয়ালাইকুম আসসালাম। ভা‌লো তুই?"
" এই তো আল্লাহ ভা‌লো রাখ‌ছে।"
" তা তোর শরীর কেমন এখন?"
" এই তো মোটামু‌টি। তোর কী খবর?"
" আর খবর। র‌কিব না‌মে তোর কো‌নো খালা‌তো দেবর আছে?"
" হ্যাঁ।"
" সে কি পু‌লিশ অফিসার?"
" হ্যাঁ।"
" র‌কি‌বের প‌রিবার ওর জন্য তি‌থি‌কে পছন্দ ক‌রে‌ছে তা কী তুই জা‌নিস?"
" শুধু র‌কি‌বের প‌রিবার নয়, র‌কিব নি‌জেই প্রথ‌মে তি‌থি‌কে দে‌খে পছন্দ ক‌রে‌ছে। ওর পছন্দ হবার পর খালা‌ম‌নিকে ব‌লে‌ছেন, তি‌নি আমা‌দের বা‌ড়ি মা‌সে চা‌চির কা‌ছে বি‌য়ে প্রস্তাব রে‌খে‌ছেন।"
" চা‌চি যে বি‌য়ে‌তে এক রকম রা‌জি তা কী তুই জা‌নিস?"
" হ্যাঁ। জানবো না কেন? গতকালও তো চা‌চির সা‌থে কথা হ‌য়ে‌ছে এ বিষ‌য়ে। আমি প্রথ‌মে এটা ব‌লে‌ছিলাম তি‌থির বয়স খুব কম। প‌রে ভে‌বে দেখলাম, চাচা ক‌বে সুস্থ হয় না হয়, তার ঠিক নেই। তারম‌ধ্যে পাড়ার ছে‌লেরা বা তি‌থির ক‌লে‌জে‌র ছে‌লেরা ওকে যেভা‌বে বিরক্ত ক‌রে, তা‌তে বি‌য়ে হ‌য়ে গে‌লে মে‌য়েটার একটা সুরক্ষার জায়গা হ‌বে। তাছাড়া র‌কিব পু‌লিশ অফিসার। সে‌দিক থে‌কে তি‌থির দি‌কে চোখ তু‌লে তাকা‌তেও লোকে ক‌য়েকবার ভাব‌বে।"

‌প্রিয়ম হালকা রে‌গে বলল,
" বাংলা‌দে‌শের সব স্বামীরা কি পু‌লিশ?"
" মা‌নে?"
" ম‌ানে তুই যেভা‌বে বল‌ছিস তা‌তে মনে হয়, পুলিশ ব্যতিত অন্য কেউ মেয়েদের নিরাপত্তা দি‌তে পা‌রে না। কিন্তু বাংলা‌দে‌শে কয়জন স্বামী পু‌লিশ? আর সাধারণ স্বামী কয়জন? তোর স্বামীও তো সাধারণ চাক‌রিজী‌বি। সে কী তো‌কে নিরাপত্তা দি‌তে পা‌রে না? র‌কিব পু‌লিশ দে‌খে তুই চা‌চি‌কে রা‌জি হ‌তে বল‌লি?"
" তোকে কে বলল র‌কিব পু‌লিশ দে‌খে রা‌জি হ‌তে ব‌লে‌ছি?"
" তোর কথায় তেমন ম‌নে হ‌চ্ছে।"
" না র‌কি‌বের জন্য নয়। আমি রা‌জি হতে ব‌লে‌ছি র‌কি‌বের মা‌য়ের কথা ভেবে।"
" তি‌নি আবার কী কর‌লেন?"

‌প্রিয়তি বেশ উৎসা‌হের সা‌থে বলল,
" তার মতো অমা‌য়িক ম‌হিলা আমি জীব‌নে খুব কমই দে‌খে‌ছি। চমৎকার মান‌সিকতার অধিকারিনী। চমৎকার ব্য‌ক্তিত্ব, দারুণ বু‌দ্ধিমত্তা, সা‌থে প্রচন্ড ভা‌লো একজন মানুষ। এমন শাশু‌ড়ি পে‌তে গে‌লে মে‌য়ে‌দের বহু পুণ্য কর‌তে হয়। তি‌নি সর্বদা ব‌লেন তার যে পুত্রবধূ হ‌বে তা‌কে পুতু‌লের মত যত্ন ক‌রে রাখ‌বেন। একটা মে‌য়ে তার প‌রিবার ছে‌ড়ে তার প‌রিবা‌রে আসবে, তার মা‌নে মে‌য়েটাকে বুঝ‌তে দেয়া যা‌বে না যে, সে তার নি‌জের প‌রিবার ছে‌ড়ে শ্বশুর বা‌ড়ি‌তে আস‌ছে। তা‌কে এটা বোঝা‌তে হ‌বে এটা তার নতুন প‌রিবার। তা‌কে তার প্রাপ্য সম্মান ভা‌লোবাসা দি‌তে হবে, তার ইচ্ছা অনিচ্ছার মূল্য দি‌তে হ‌বে। তার মতামত‌কে প্রধান্য দি‌তে হ‌বে। তাকে আপন ক‌রে নি‌তে হ‌বে, তার স্বপ্নগু‌লো‌কে আপন ক‌রে নি‌তে হ‌বে। সে আত্ম‌র্নিভরশীল হ‌তে চাই‌লে তা‌কে অনু‌প্রেরণা দি‌তে হ‌বে। তা‌কে বোঝা‌তে হ‌বে শ্বশুর বা‌ড়ি মা‌নে প‌রের বা‌ড়ি নয়, বরং একটা মে‌য়ের নি‌জের আসল বা‌ড়ি। যত‌দিন শ্বশুর বা‌ড়ির লোক একটা মে‌য়ে‌কে ঘ‌রের বউ মান‌বে তত‌দিন মে‌য়েটা বউ হ‌য়ে থাক‌বে, ধরাবাঁধা দা‌য়ি‌ত্বে আট‌কে থাক‌বে। কিন্তু যখন থে‌কে তা‌কে পুত্রবধূ নয় বরং কন্যা মানা হবে তখন থে‌কে সে ঘ‌রের বউ‌য়ের মত শুধু দা‌য়িত্ব পালন কর‌বে না, বরং মে‌য়ের মত সবাই‌কে পরম মমতায়, দুষ্টু‌মি‌তে আপন ক‌রে নি‌বে, ভা‌লোবাস‌বে। আমি আমার পুত্রবধূ‌কে ততটা ভা‌লোবাস‌বো যতটা আমার মে‌য়ে‌কে ভা‌লোবা‌সি, ততটা স্নেহ, যত্ন, শাসন করব, যতটা আমার মে‌য়ে‌কে ক‌রি। আর ভাইয়া যেখা‌নে রকি‌বের কথা, র‌কিব শুধু পু‌লিশ হিসা‌বে নয়, মানুষ হিসা‌বেও চমৎকার। যার মা এত উন্নত মান‌সিকতার, সে নি‌জেও তো এমনই হ‌বে তাই না ভাই! এখন বল ভাইয়া এমন প‌রিবা‌র আর এমন শাশু‌ড়ির সংসার কী হাতছাড়া করা উচিত হ‌বে? তি‌থি এখা‌নে সুখী হ‌বে কিনা বল?"

‌প্রিয়ম বেশ হতাশ গলায় বলল,
" সবই বুঝলাম। কিন্তু তুই তো জা‌নিস আমি তি‌থি‌কে-------!" 
" ভাই শুধু তুই পছন্দ কর‌লে তো হ‌বে না, তোর যা প‌রিবার, পুরা মার্কা মারা।"
" আমার প‌রিবার কী তোর প‌রিবার নয় প্রিয়‌তি?"
" ছি‌লো একসময়, এখন নেই! যে‌দিন আমার কোল খা‌লি ক‌রে‌ছে সে‌দিন থে‌কে তারা আমার কেউ নয়। শোন ভাই তুই জে‌নে শু‌নে একটা মে‌য়ে‌কে ঐ নর‌কে কেন ফেল‌তে চাস? যেখা‌নে প্রচন্ড দা‌ম্ভিক একজন শ্বশুর, ভয়ংকর শাশু‌ড়ি, আর অসভ্য, বেয়াদপ, রাক্ষসী টাই‌পের একটা ননদ আছে সে ঘ‌রে কী কো‌নো মে‌য়ে শা‌ন্তি পা‌বে? আর তি‌থির কথা না হয় বাদ দিলাম, ও আমা‌দের মতাম‌তের বাই‌রে যা‌বে না। কিন্তু তোর কি ম‌নে হয় চা‌চি রা‌জি হ‌বে? কখ‌নো না। চাচা বিছানায় পড়‌তেই তোর মা বা‌ড়ির কা‌জের লোক তা‌ড়ি‌য়ে সে কা‌জের দা‌য়িত্ব চা‌চি আর তি‌থির উপর দি‌য়ে দি‌য়ে‌ছে। চা‌চি‌কে ছোট বেলা থেকে জা‌নি, প্রচন্ড শান্ত আর নীরব মানুষ। কিন্তু বর্তমা‌নে চা‌চি কিন্তু আগের মত শান্ত নেই। তোর মা বোন তা‌কে শক্ত হ‌তে বাধ্য ক‌রে‌ছে। চা‌চি‌দের আমা‌দের সব কিছু‌তে বরাবর অধিকার থাকা স‌‌ত্ত্বেও তোর মা তার সাথে কা‌জের লো‌কের মত ব্যবহার ক‌রে‌ছেন, তি‌থির মত ফুটফু‌টে মে‌য়েটার সা‌থে ‌কেমন ব্যবহার করেছেন।

আর তোর বোন প্রেমা। বাপ‌রে বাপ ওমন দাজ্জাল মে‌য়ে পৃ‌থিবী দ্বিতীয় আরেকটা আছে না‌কি? ম‌নে তো হয় না! শোন ভাই তোর জীব‌নের সা‌থে তি‌থি‌কে জড়া‌লে তুই হয়ত সুখী হ‌বি কিন্তু ঐ বাচ্চা মে‌য়েটা নরক যন্ত্রনা ভোগ করবে। ছোট বেলা থে‌কে তি‌থি ওর বাবা মা‌য়ের পর আমা‌কে সব‌চে‌য়ে বে‌শি বিশ্বাস ক‌রে। আমি তোর প‌রিবা‌রে ওর বি‌য়ে দেয়ার কথা ব‌লে, ওর জীবন নষ্ট কর‌তে পারব না। তাছাড়া তি‌থির স্বপ্ন মে‌ডি‌কে‌লে পড়‌বে। কিন্তু তোর সা‌থে বি‌য়ে হ‌লে মে‌ডি‌কে‌লে পড়বে না, বরং মে‌ডি‌কে‌লের রুগী হ‌য়ে রোজ রোজ মে‌ডি‌কে‌লে ভ‌র্তি হ‌তে হ‌বে। চি‌কিৎসা করার জন্য নয়; করা‌নোর জন্য। ওর জন্য র‌কি‌বের প‌রিবার বেস্ট। র‌কি‌বের মা নি‌জেও একজন বড় গাই‌নো‌ক্লো‌জিস্ট। ওর বোন বি‌য়ে হ‌য়ে‌ছে কয় মাস আগে, সে কিন্তু এখন মে‌ডি‌কে‌লে তৃতীয়ব‌র্ষে পড়ছে। ঐ প‌রিবা‌রে গে‌লে তি‌থির স্বপ্ন স‌ত্যি হবার সম্ভবনা খুব বে‌শি। আর রকি‌বের সা‌থে তি‌থির বি‌য়ে না হ‌লেও, আমি চাই‌বো না তোর সা‌থে অন্তত ওর বি‌য়ে হোক! "

‌প্রিয়‌তির কথা শু‌নে প্রিয়ম দ‌মে গে‌লো একদম। ভে‌বে দেখ‌লো প্রিয়তি যা বল‌ছে তার প্র‌তিটা কথা স‌ত্যি। প্রিয়ম কথা বলার ম‌তো আর কো‌নো কথা না পে‌য়ে চুপ ক‌রে ফোনটা কে‌টে দি‌লো। প্রিয়‌তি ফো‌নের স্ক্রি‌নের দি‌কে কতক্ষণ তা‌কি‌য়ে রইল। তারপর চা‌য়ের কা‌পে চু‌ুমুক দি‌লো। চা'টা ঠান্ডা পা‌নি হ‌য়ে গে‌ছে। ম‌নে ম‌নে একটা দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে বলল,
" ভাই তুই খুব ভা‌লো। জা‌নি তি‌থি‌কে খুব ভা‌লোবা‌সিস। কিন্তু তোর সা‌থে বি‌য়ে হবার পর মে‌য়েটার জীব‌নে সুখ আস‌বে না। বরং দুঃখের একটা বড়সর ঢেউ আস‌বে। ‌যে ঢেউ‌তে তি‌থির সব স্বপ্ন ধু‌লিসাৎ হ‌য়ে যা‌বে।"

‌রিদু প্রিয়‌তির হাত ধ‌রে বলল,
" প্রিয়ম ভাইয়া‌কে এতগু‌লো কথা বলা কী ঠিক হ‌লো?"
" জা‌নি ঠিক হয়‌নি। কিন্তু যা ব‌লে‌ছি স‌ত্যি ব‌লে‌ছি এবং এখন ভাইয়া ভা‌লো ক‌রে ভাব‌তে পার‌বে এবং নি‌জে নি‌জে স‌ঠিক সিদ্ধান্ত নি‌তে পার‌বে। ভাই হয়তো কষ্ট পা‌বে কিন্তু ক‌দিন পর নি‌জে‌কে সাম‌লে নি‌তে পার‌বে। একবার ভা‌বো আমা‌দের ভুল সিদ্ধা‌ন্তে তি‌থির জীবন নষ্ট হ‌লে তখন তার দায়ভার কে নি‌বে?"
" তবে তি‌থি তু‌মি যাই ব‌লো প্রিয়ম ভাইয়া মানুষ হিসা‌বে কিন্তু অমায়িক।"
" ও অমা‌য়িক হ‌লে কি আসে যায়? ঘোড়ার ডিম! একটা মে‌য়ে শুধু ভা‌লো স্বামী পে‌লেই জীব‌নে সুখী হয় না। পু‌রো একটা ভা‌লো প‌রিবার পে‌লে সুখী হয়।"
"‌ কিভা‌বে?"

" ত‌বে তোমায় কারণটা ব‌লি। তু‌মি সারা‌দি‌নে আমার সা‌থে কয় ঘন্টা থা‌কো? বে‌শিরভাগ দিন রা‌ত ক‌য়েকঘন্টা। সকা‌লে তাড়াহু‌ড়া ক‌রে নাস্তা ক‌রে বে‌ড়ি‌য়ে যাও, রা‌তে ফি‌রো, তারপর খে‌য়ে শুয়ে প‌ড়ো। যেদিন জল‌দি ফি‌রো সে‌দিন বা ছু‌টির দি‌নে আমা‌কে মোটামুটি সময় দি‌তে পা‌রো। কিন্তু একটা মে‌য়ে দিন এবং রা‌তের বে‌শিরভাগ সময় কাটায় স্বামীর প‌রিবা‌রের সা‌থে মা‌নে, শ্বাশুড়- শাশু‌ড়ি, ননদ-‌দেব‌রের সা‌থে। এখন তারা য‌দি সারা‌দিন মে‌য়েটার সা‌থে খিট‌খিট ক‌রে, বা‌জে ব্যবহার ক‌রে ত‌বে ‌কী মে‌য়েটা সুখী হ‌তে পারবে? তা‌তে স্বামী যতই ভা‌লোবাসুক না কেন? হ্যাঁ যারা আলাদা থা‌কে তা‌দের বিষয়টা একটু আলাদা। জাস্ট একটু আলাদা বে‌শি না কিন্তু! কারণ কাউ‌কে জ্বালা‌নোর হ‌লে, কষ্ট দেয়ার হ‌লে তার কা‌ছে থাক‌তে হ‌বে তেমন কো‌নো কথা নেই। দূর থে‌কেও কলকাঠি নাড়া যায়। আর প্রযু‌ক্তির এ যু‌গে কলকা‌ঠি নাড়া তো খুব সহজ। কলকা‌ঠি নে‌ড়ে সুন্দর জীব‌নকে জ্বা‌লি‌য়ে কয়লার মত ক‌রে দেয়া যায়। আর আমার প‌রিবা‌রে কলকা‌ঠি নাড়ার মত লো‌কের তো অভাব নেই।"
" তা অবশ্য ঠিক। তুমি খুব বুঝদার গো প্রিয়তি।"
" কতটা?"
" যতটা বুঝদার হ‌লে একজন স্ত্রী তার স্বামীর জীবন‌কে স্বর্গ বানা‌তে পা‌রে ঠিক ততটা।"
" ত‌বে এবার অবু‌ঝের মত একটা আবদার ক‌রি!"
" কী?"

‌প্রিয়তি বল‌তে খা‌নিক লজ্জা পে‌লেও, লম্বা একটা নিশ্বাস নি‌য়ে বলল,
" আবার বাচ্চা নেয়ার প‌রিকল্পনা ক‌রি?"
" কী বল‌ছো! তোমার মিসক্যা‌রেজ হ‌লো মাত্র দুই মাস হলো। এত দ্রুত আবার বাচ্চা? তোমার অসু‌বিধা হ‌বে।"
" কিছু হ‌বে না। আজকাল ডাক্তাররাই ‌তো ব‌লেন মিসক্যা‌রেজ হবার পর যত দ্রুত সম্ভব বাচ্চা নি‌তে। নয়তো প‌রে কন‌সিভ কর‌তে প্রব‌লেম হয়।" 
" হ্যাঁ জা‌নি কিন্তু‌ তা ব‌লে মাত্র দুই মাস হ‌তে না হ‌তেই? তাছাড়া আমা‌দের বি‌য়ের বয়স তো কেবল ছয় মাস।" 
" তো! কোন গ্র‌ন্থে লেখা‌ আছে যে বি‌য়ের ছয় মাসের ম‌ধ্যে পর পর দু‌টো বাচ্চা নেয়া যা‌বে না! মা‌নে মিসক্যা‌রেজ হ‌লে দ্রুত বাচ্চা নেয়া যা‌বে না!"
" কো‌নো গ্রন্থে নেই। আমি তোমার সুস্থতার চিন্তা কর‌ছি।"
" সেটা ডাক্তার দেখ‌বেন। আর তু‌মি এমনভাবে কথা বল‌ছো যে‌নো তু‌মি আজই আমা‌কে বাচ্চার মা বা‌নি‌য়ে ফেল‌বে। আরে প্রস্তু‌তি নি‌তে বা কন‌সিভ কর‌তে তো কিছুটা সময় লা‌গে। এত‌দিন বা সপ্তা‌হে তো এসব সম্ভব না।"
" তা ঠিক। ত‌বে-----।"
" চ‌ুপ ক‌রো তো।"
‌প্রিয়তির ধম‌কে রিদু দ‌মে গে‌লো। তবে ম‌নে ভা‌লো লাগ‌ছে প্রিয়‌তি আবার আগের মত স্বাভা‌বিক হ‌চ্ছে দে‌খে।

১৫!!

       র্নিমল বাতা‌সে প্রাণ জু‌ড়ে যা‌চ্ছে। সমুদ্রের ঘ্রা‌নে হৃদয় সিক্ত হ‌চ্ছে। ভা‌লোবাসাময় দু‌টো প্রাণ ভা‌লোবাসার সন্ধান কর‌ছে সমুদ্র মা‌ঝে। দূর থে‌কে কা‌লো ছাঁয়া তা‌দের রে‌খে‌ছে নজরবন্দী।

—————

     এলো‌মে‌লো ঢেউগুলো পা‌য়ে স্পর্শ ক‌রে যা‌চ্ছে। শীতলতার আবেশ ছ‌ড়ি‌য়ে দি‌চ্ছে সারা অঙ্গে। আজ পূ‌র্ণিমার রাত। নি‌জের প্রিয় মানুষটা‌কে সা‌থে নি‌য়ে সমু‌দ্র দেখ‌তে চাই‌লে অবশ্যই ভরা পূ‌র্নিমায় সমুদ্র তী‌রে যাও। পূ‌র্নিমার আলো সমু‌দ্রের পা‌নি‌তে প্র‌তিফ‌লিত হ‌য়ে সৃ‌ষ্টি হয় এক অপার স্বর্গীয় সৌন্দর্য্য। যে সৌন্দ‌র্য্যের বর্ণনা ভাষায় ব্যক্ত করা স‌ত্যি সম্ভব নয়। চাঁদটা যখন পূর্ণভা‌বে উঠি নি‌জের প‌রিপূর্ণ আলো‌তে চার‌দিক প্র‌তিফ‌লিত করছে, তখন রিদু আর প্রিয়তি সমু‌দ্রের পা‌নি‌তে হেঁ‌টে হেঁ‌টে সমুদ্র‌বিলাশ কর‌ছে। হা‌তে হাত রে‌খে চল‌ছে দুজন, বল‌ছে ম‌নের হাজারো কথা। হুট ক‌রে প্রিয়তি রিদু‌কে শক্ত ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
" ধন্যবাদ রিদু।"
" কে‌ন?"
" কত‌দিন যাবত স‌ত্যি নি‌জে‌কে খুঁ‌জে পা‌চ্ছিলাম না। আজ এখা‌নে এসে মনটা সত্যি হালকা লাগ‌ছে। ম‌নে হ‌চ্ছে ম‌নের ভিত‌রের পাথরটা ধী‌রে ধী‌রে নাম‌ছে।"
" ক‌দিন থাক‌লে পাথরটা একেবা‌রে নে‌মে যা‌বে এবং মনটা সমুদ্রের বাতা‌সের মতই ফুরফুরা হ‌বে।"
" স‌ত্যি?"
" হুঁ।"
" ভা‌লোবা‌সি রিদু।"

মৃদু হাসল রিদু। প্রিয়‌তির গা‌লে হাত দি‌য়ে কপা‌লে গাঢ় চুম্বন আঁক‌ল। রিদুর ফোনটা বে‌জে উঠল। বির‌ক্তি ভঙ্গি নি‌য়ে ফোন তুলল রিদু্। নাম্বা‌রের দি‌কে খেয়াল না ক‌রেই রি‌সিভ ক‌রে বলল,
" আসসালামু আলাইকুম। কে বল‌ছেন?"
অপরপাশ থে‌কে কেউ একজন বলল,
" বাব্বাহ্, গভীর রা‌তে সমুদ্রের তী‌রে, বউ‌য়ের সা‌থে রোমান্স কর‌তে এতটা ব্যস্ত যে আমার ফোন নাম্বারও চিন‌তে পার‌ছো না?"
‌রিদু ফো‌নের দি‌কে তা‌কি‌য়ে দেখল প্রেমা ফোন ক‌রেছে। রিদু ম‌নে ম‌নে বলল,
" এমন মুহূ‌র্তে কালনা‌গিনীটা ফোন না কর‌লে পারত না? প্রচন্ড বির‌ক্তি নি‌য়ে বলল, হ্যাঁ বলো? ফোন কেন ক‌রে‌ছো?"
" শালী তার দুুলাভাই‌কে এম‌নি ফোন কর‌তে পা‌রে না না‌কি?"
" বা‌জে কথা না ব‌লে সোজা প‌য়েন্ট এ আসো।"
" কিছুই না তোমরা হা‌নিমু‌নে গে‌ছো, ভাবলাম কেমন কি কাটা‌চ্ছো সে‌কেন্ড হা‌নিমুন তা জানা দরকার তো! তা প্রিয়‌তি‌ কি সত্যিটা জা‌নে? না‌কি জানা‌নোর এ শুভ কাজটা আমি করব?"

‌রিদু প্রিয়‌তির থে‌কে খা‌নিক দূ‌রে গি‌য়ে ব‌লল,
" কী স‌ত্যির কথা বলছো?"
" ন্যাকা ভাজা মাছটা উল্টে খে‌তে পা‌রে না।"
" ঢ‌ঙ্গের কথা না ব‌লে সরাস‌রি কথা ব‌লো।"
" এই যে তে‌ামার আর প্রিয়‌তির বি‌য়ের আগেও তু‌মি আমা‌কে চিন‌তে সে কথাটা? প্রিয়‌তি কী জা‌নে সব?"
" হ্যাঁ জা‌নে?"
" সি‌রিয়াস‌লি!"
" হ্যাঁ।"
" গুড।"

‌প্রেমা আর কিছু বলল না। ওর ফোন করার মূখ্য উদ্দেশ্য ছি‌লো রিদুর মুড নষ্ট করা। তা‌তে সে সফল। রিদুর রাগ হ‌চ্ছে প্রচন্ড। সাথে চিন্তাও হ‌চ্ছে প্রিয়তি‌কে নি‌য়ে। এখন প্রিয়‌তি‌কে কিছু বল‌তে চায় না রিদু। প্রিয়‌তির আনন্দঘন এ মুহূর্ত নষ্ট কর‌তে চায় না রিদু। অনেক‌দিন পর প্রিয়‌তি মনটা ভা‌লো হ‌চ্ছে, এ মুহূ‌র্তে ওকে কষ্ট দি‌তে চায় না রিদু। রিদু প্রিয়‌তির কা‌ছে গি‌য়ে বলল,
" চ‌লো হো‌টে‌লে ফি‌রে চ‌লো।"
" কিছু হ‌য়ে‌ছে?"
" না।"
" কী ব‌লল প্রেমা?"
" ওর তো ফালতু কথা বলা ছাড়া আর কো‌নো কাজ নেই।"
" তা অবশ্য ঠিক। "
" হুঁ। রাত তো কম হলো না। সা‌ড়ে এগা‌রোটা বাজে। চ‌লো হো‌টে‌লে ফি‌রে যাই। খি‌দেও পে‌য়ে‌ছে খুব। গরম ভাত আর সমু‌দ্রের মাছ দি‌য়ে জ‌মি‌য়ে খা‌বো।"
মৃদু হে‌সে প্রিয়‌তি বলল,
" আচ্ছা চ‌লো।"

রা‌তের খাবার খে‌য়ে প্রিয়‌তি নাইন গাউন প‌রে জানালা দি‌য়ে বাই‌রে তা‌কি‌য়ে রইল। সমু‌দ্রের গর্জন শুন‌ছে। সমু‌দ্রের বিশলতার সা‌থে স‌ত্যি কো‌নো কিছুর ত‌ুলনা হয় না। মাঝে মা‌ঝে খুব ক‌রে ইচ্ছা ক‌রে সমু‌দ্রের বিশালতায় হারা‌তে। কী মায়া সমুদ্র বু‌কে! রিদুর গরম নিশ্বা‌সে ধ্যান ভাঙল প্রিয়‌তির। প্রিয়‌তির গলায় অসংখ্য চু‌মো‌তে ভ‌রি‌য়ে দি‌চ্ছে রিদু। প্রিয়‌তি রিদুর দি‌কে ঘু‌রে বলল,
" কী চাই আপনার?"
রিদু‌ প্রিয়‌তির পর‌নের গাউ‌নের ফিতাটা টান দি‌য়ে খু‌লে বলল,
"‌ লেট'স মেইক এ নিউ বে‌বি!"
লজ্জায় মাথা নিচু ক‌রে ফেলল প্রিয়‌তি।

১৬!!

     তি‌থি ব‌সে আছে একটা রেস্টু‌রেন্ট এ। সাম‌নে আইস‌ক্রি‌মের কাপ। আর সাম‌নের চেয়া‌রে ব‌সে একটু পর পর ক‌ফির ম‌গে চু‌মোক দি‌চ্ছে র‌কিব। অন্য পা‌শের এক কর্ণা‌রের টে‌বি‌লে ব‌সে হে‌সে হে‌সে কথা‌ বল‌ছে রকি‌বের মা আর তি‌থির মা। র‌কি‌বের মা বল‌লেন,
" আপা তি‌থি হ্যাঁ ব‌লে দি‌লে কিন্তু একদম দেরী করব না। সপ্তাহ খা‌নি‌কের ম‌ধ্যে পা‌রিবা‌রিকভা‌বে আকদ করে ফেলব। বড় ক‌রে অনুষ্ঠান তি‌থির প‌রীক্ষার পর করব। এখন শুধু আকদ হবে তাও মস‌জি‌দে ব‌সে। ছে‌লে মে‌য়েকে খবরদার এক সা‌থে ভু‌লেও দিব না। ফো‌নে ফো‌নে প্রেম করুক। কিন্তু দেখা কর‌তে পার‌বে না। এতে তি‌থির পড়া‌শোনার ক্ষ‌তি হ‌বে। কী ব‌লেন?"

‌তি‌থির মা শুধু স্মিত হাস‌লেন। স‌ত্যি বল‌তে রকিব‌কে তারও অনেক পছন্দ হয়েছে। ছে‌লেটা পু‌লি‌শে চাক‌রি করা সত্ত্বেও খুব বিনয়ী, নম্র, ভদ্র। সব‌চে‌য়ে ভা‌লো লে‌গে‌ছে র‌কি‌বের প‌রিবার‌কে। ছোট্ট, র্নি‌ভেজাল প‌রিবার। র‌কি‌বের বাবা নেই। বছর খা‌নিক আগে গত হ‌য়ে‌ছেন। বো‌নেরও বি‌য়ে হ‌য়ে‌ছে। বা‌ড়ি‌তে লোক বল‌তে র‌কিব আর ওর মা। অবস্থা খুব ভা‌লো র‌কিব‌দের। মা বড় ডাক্তার, বাবা সরকা‌রি চাক‌রি করতেন, মৃত্য‌ুর পর পেনশ‌নে মোটা অঙ্কের টাকা পে‌য়ে‌ছেন। সবটাই র‌কিব আর ওর বো‌নের না‌মে করা। তাছাড়া র‌কি‌বের মাও রোগী দে‌খে লাখ লাখ টাকা আয় ক‌রেন। তি‌থির মে‌ডি‌কে‌লে পড়া নি‌য়ে ওর মা‌য়ের খুব চিন্তা হ‌তো। তি‌থি য‌দিও নি‌জের যোগ্যতায় চান্স পে‌তো তবুও মে‌ডি‌কে‌লে পড়ার খরচ যোগার করা তো মু‌খের কথা না। 

তি‌থির মা জাহানা বেগম ম‌নে ম‌নে বল‌লেন,
" তি‌থির বাবার যা অবস্থা তা‌তে সুস্থ হ‌য়েও তেমন কিছু কর‌তে পার‌বেন না। আমার বাবার বা‌ড়ি‌তে যে জায়গা পে‌য়ে‌ছি তা বি‌ক্রি ক‌রার ব্যবস্থা ক‌রে‌ছি তার পু‌রোটাই হয়‌তো তার চি‌কিৎসায় যা‌বে। তি‌থির বি‌য়ের খরচও কম না। আমার ভাই‌য়েরা সাহায্য কর‌বে ব‌লে ম‌নে হয় না। আমার ভা‌গের জ‌মি বি‌ক্রি কর‌তে চাইবার পর থে‌কেই আমি যে‌নো তা‌দের তা‌দের চক্ষুসূল। প্রথ‌মে বললাম তাদের কি‌নে রাখ‌তে। মা‌র্কে‌টে যা দাম সে অনুসা‌রে টাকা দি‌য়ে দিক কিন্তু তারা তার অর্ধেক দি‌তেও রা‌জি হ‌লো না। বরং জ‌মি বি‌ক্রির কথা বল‌তেই সবাই তে‌লে বেগু‌নে জ্ব‌লে উঠল। তা‌দের বোনটা যে স্বামী সন্তান নি‌য়ে অসহায় সে দি‌কে তা‌দের খেয়াল করল না তারা। শুধু একটাই কথা বাবার কো‌নো জ‌মি বি‌ক্রি কর‌তে পারব না। অথচ মৃত্য‌ু পূ‌র্বে বাবা আমা‌র ভাগ আমার না‌মে ক‌রে দি‌য়েছি‌লেন। তি‌থির বাবা যখন সুস্থ ছি‌লেন তখন জ‌মি বি‌ক্রির প্র‌য়োজন প‌ড়ে‌নি ব‌লে‌নি সে জ‌মি ভাই‌য়েরা নি‌জে‌দের মত ক‌রে ব্যবহার ক‌রে‌ছেন কিন্তু এখন আমার দু‌র্দি‌নের সময়। ভাই‌য়াদের উচিত ছি‌লো আমার বলার পূ‌র্বে সহয়তা করা কিন্তু ভাই‌য়ারা কিছু ফল নি‌য়ে দুই এক‌দিন হস‌পিটা‌লে দেখ‌তে এসেই দায় সে‌রে‌ছে। প‌রে তি‌থির বা ওর বাবার ভা‌লো মন্দ খোঁজ পর্যন্ত নেয়‌নি। তাও ভাই‌দের কথা ভে‌বে‌ এত মাস অপেক্ষায় ছিলাম য‌দি ভাই‌য়ারা জ‌মির দাম বা‌ড়ি‌য়ে দেয়। কিন্তু এখন ম‌নে হ‌চ্ছে না তারা দি‌বেন। তাই তো এখন বাধ্য হ‌য়ে বাই‌রে জ‌মি বি‌ক্রি কর‌ছেন। তাও ভাই‌য়ারা ঝা‌মেলা কর‌ছে। যেই জ‌মি দেখ‌তে যায় তা‌কে উল্টা পাল্টা ব‌লে ভা‌গি‌য়ে দেয়। এ কেমন ভাই আমার? বাই‌রে জ‌মি বি‌ক্রি ক‌রতে পার‌লে যা টাকা পা‌বো তা দি‌য়ে তি‌থির বাবার চি‌কিৎসা করা‌তে পার‌বো আর বা‌কি টাকায় তি‌থির বি‌য়েটা মোটামু‌টি ভা‌বে সম্পান্ন কর‌তে পার‌বো হয়।"

তি‌থির মা র‌কি‌বের মা‌য়ের দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল,
" আপা তি‌থির যা সিদ্ধান্ত তাই আমার। মে‌য়ের ম‌তের উপর জোর করব না।"
" তা তো অবশ্যই। ভ‌বিষ্যৎ ওদের, তাই ওদের নি‌জে‌দের সিদাধান্তই চূড়ান্ত হ‌বে।"

র‌কিব তি‌থি‌কে বলল,
" দে‌খো তি‌থি পু‌লি‌শে চাক‌রি করার সুবা‌দে আমি কিছুটা সোজা কথা বলার মানুষ। ঘু‌রি‌য়ে পেঁ‌চি‌য়ে কথা বলা পছন্দ না।"
" জি বলুন।"
" তু‌মি কি ব্য‌ক্তিগত ভা‌বে কাউ‌কে পছন্দ ক‌রো?"
‌তি‌থি মাথা নিচু ক‌রে বলল,
" পছন্দ বল‌তে?"
" মা‌নে কাউ‌কে ভা‌লোবা‌সো? বা কো‌নো ছে‌লে‌কে পছন্দ ক‌রো?"
" জি না।"
" আমা‌কে পছন্দ হ‌য়ে‌ছে?"
" আমি এখন বি‌য়ে কর‌তে চাই না।"
" সাম‌নে পরীক্ষা, মে‌ডি‌কে‌লে ভ‌র্তি হ‌বে তাই তো? মা‌নে সে জন্যই না কর‌ছো?"
" জি।"

" বি‌য়ে ত‌বে মে‌ডি‌কে‌লে‌ চান্স পাবার পর হোক। ‌তোমার স্বপ্ন, আশার থে‌কে তো বর্তমা‌নে বিয়েটা জরু‌রি নয়! বি‌য়েটা জীব‌নে খুব জরুরি। ত‌বে সব জরু‌রি কা‌জের একটা স‌ঠিক সময় থা‌কে। তু‌মি যখন চাই‌বে তখন বি‌য়ে হ‌বে। ত‌বে হ্যাঁ আকদ হ‌য়ে থাক‌লে ভা‌লো হ‌বে। কারণ বি‌য়ের কথা পাকা হবার পরই আমা‌দের যোগা‌যোগ বাড়‌বে, প‌রে কো‌নো কার‌ণে বি‌য়ে ভে‌ঙে গে‌লে খুব খারাপ হ‌বে। আকদ হ‌য়ে থাক‌লে বি‌য়ে ভাঙার শঙ্কা থাক‌বে না। তোমার পড়া লেখার বিষ‌য়ে যা হেল্প দরকার আমি করব। বেস্ট কো‌চিংএ তোমা‌কে ভ‌র্তি ক‌রি‌য়ে দিব। মে‌ডি‌কে‌লের সব রকম খোঁজ খবর তু‌মি আমার মা আর বো‌নের মাধ্যমে র‌াখ‌তে পার‌বে। আশা ক‌রি আমার ছোট্ট প‌রিবা‌রে তু‌মি বড় একটা জায়গা দখল ক‌রে নি‌বে। তোমার কো‌নো অসু‌বিধা হ‌বে না সেখানে।"

‌তি‌থি মৃদু হে‌সে বলল,
" এত লোভনীয় প্রস্তাব কজন‌কে দি‌য়ে‌ছেন?"
" মা যা‌দের আমার জন্য পছন্দ ক‌রেছেন সবাই‌কে দি‌য়ে‌ছেন। মা তো ঘ‌রের বউ নয়, মে‌য়ে চায়। তার মে‌য়ে তো তার শ্বশুরবাড়ি। এখন আমা‌দের বা‌ড়ি কন্যাহীন। মা পুত্রবধূ রূ‌পে কন্যা চায়। তাই আমার বাড়ির বউ যেই হ‌বে তা‌কে ঠিক একই রকম ভা‌বে সম্মান করা হ‌বে। তে‌ামা‌কে যা দেবার কথা ব‌লে‌ছি তা তা‌কেও বলবো। য‌দি তু‌মি বউ হও ত‌বে আর কাউ‌কে বলার বা দেবার প্র‌য়োজন হ‌বে না।" 
" ভা‌লোবা‌সেন আমা‌কে?"
" স‌ত্যি বল‌তে তি‌থি তোমা‌কে ভা‌লো লে‌গে‌ছে। ভা‌লোবাসার কথাটা আপাতত বল‌তে পারব না। প্রেম পি‌রিতী বা ভা‌লোবাসার না‌মে টাইমপাস আমার দ্বারা সম্ভব নয়। তাই তো তোমা‌কে প্রথম দেখায় ভা‌লো লে‌গে‌ছে। প‌রে তোমার বিষ‌য়ে খোঁজ নি‌য়ে সব কিছু জানার পর প্রে‌মের প্যারায় না গি‌য়ে, মা‌কে দি‌য়ে সরাস‌রি বি‌য়ের প্রস্তাব ক‌রে‌ছি। আর যেখা‌নে ভালোবাসার কথা, ত‌বে আমি বলব বি‌য়ের পর স্বামী স্ত্রীর মা‌ঝে এম‌নি ভা‌লোবাসা হ‌য়ে যায়। পা‌রিবা‌রিক বি‌য়ে‌তে প্রথ‌মে বি‌য়ে হয় তারপর ভা‌লোবাসা। আমরা না হয় আমা‌দের ভা‌লোবাসার অধ্যায়টা বি‌য়ের পর শুরু করলাম। এখন তোমার মতামত কি?"
র‌কি‌বের কথা তি‌থির বেশ ভা‌লো লাগলো। মৃদু হে‌সে বলল,
" মা রা‌জি থাক‌লে আমার আপত্তি নেই।"
র‌কিব হে‌সে বলল,
" বেশ ত‌বে তা‌কেই ব‌লি।"

১৭!!

      প্রিয়ম তি‌থির বাবার কা‌ছে গি‌য়ে তার পা‌শে বসলো। তার মাথায় বু‌লি‌য়ে বলল,
" চাচ্চু কেমন আছো?"
‌তি‌থির বাবা হাঁটা চলা কর‌তে পা‌রে না। ত‌বে তি‌নি কথা বল‌তে পা‌রেন। য‌দিও আগে মা‌ঝে মা‌ঝে কথা আট‌কে যে‌তো। কিন্তু বেশ স্পষ্টভা‌বেই কথা বলতে পা‌রেন। প্রিয়‌মের দি‌কে তা‌কি‌য়ে তি‌নি হে‌সে বল‌ল,
" আলহামদু‌লিল্লাহ্। ভা‌লো তু‌ই?"
" এই তো চাচ্চু আছি কো‌নো রকম।"
" কো‌নো সমস্যা?"
" তি‌থির বি‌য়ে ঠিক হ‌য়ে‌ছে শু‌নে‌ছো? সাম‌নের শুক্রবা‌রে আকদ।"
" শুন‌বো না কেন? তোর চা‌চি তো আমা‌কে জি‌জ্ঞেস না ক‌রে কো‌নো সিদ্ধান্ত নেয় না। হয়‌তো আমি হাঁটাচলা কর‌তে পা‌রি না, নি‌জের কাজ নি‌জে কর‌তে পা‌রি না। কিন্তু তা ব‌লে তোর চা‌চি আমা‌কে না জা‌নি‌য়ে কিছু ক‌রেন না। আমিই মতামত দি‌য়ে‌ছি। " 

" ওহ। চাচ্চু একটা কথা ব‌লি?"
" বল?"
" তি‌থি‌কে এখন বি‌য়ে দেয়া কী জরু‌রি?"
" হয়তো না। কিন্তু আমার অবস্থা তো দেখ‌ছিস। আজ আছি কাল নেই। তোর চা‌চি‌কে নি‌য়ে যা চিন্তা না ক‌রি, মে‌য়েটা‌কে নি‌য়ে সারাক্ষণ চিন্তা ক‌রি। আমি অসুস্থ হবার পর ছে‌লেরা ওকে বে‌শি বিরক্ত কর‌ছে। তোর চা‌চি কত কষ্ট কর‌ছে। তি‌থি নিরাপদ জায়গায় গে‌লে, ভরসার মত একটা আশ্রয় পে‌লে আমা‌রা দু'জ‌নেই শা‌ন্তি পা‌বো।"
" এ বা‌ড়ি‌তে কী ও নিরাপদ নয়? এটা কি ওর ভরসার জায়গা হ‌তে পা‌রে না?"
" বু‌কে হাত দি‌য়ে এ কথাটা বলতে পার‌বি প্রিয়ম?" 
‌প্রিয়ম মাথা নিচু ক‌রে ফেলল। তি‌থির বাবা আবার বল‌লেন,
" যে মে‌য়ে‌কে ছোট বেলা থে‌কে রাজকুমারীর মত রে‌খে‌ছি আমি, সেই মে‌য়ে আমি অসুস্থ হবার পর এক রকম কা‌জের লো‌কে‌তে প‌রিনত হ‌লো। পাড়ার ছে‌লেরা ওকে বিরক্ত করায় তোর বাবার কা‌ছে মে‌য়ে ব‌লে‌ছি‌লো কিন্তু তোর মা বলে‌ছি‌লেন, আমার মে‌য়ের চলন ভা‌লো না। বাকি আরও কিছু বল‌বো?"

" চাচ্চু আমি তো ছে‌লে গু‌লো‌কে শ‌ায়েস্তা ক‌রে‌ছিলাম।"
" তুই বাবা নি‌জের দু‌নিয়ায় ব্যস্ত মানুষ। আমার তি‌থির দি‌কে কতটু‌কোই বা খেয়াল রাখ‌তি? খেয়াল রাখ‌লে ইদে নি‌জের দুই বোনের জন্য জামা কি‌নে আনার সা‌থে আমার মে‌য়ের জন্যও একটা অান‌তি। হোক কম দা‌মি, তাও আন‌তি। কিন্তু বৈষম্য তুইও কম কিছু ক‌রিস‌নি। আমি অসুস্থ হবার প্রিয়‌তি বা‌দে সবাই আমার মে‌য়েটার সা‌থে বৈষম্য ক‌রে‌ছে।"
" চাচ্চু আমি প‌ড়ে তি‌থির জন্য জামা এনে‌ছিলাম।"
" হ্যাঁ তখন এনে‌ছি‌লি তখন প্রিয়‌তি রাগ ক‌রে ব‌লে‌ছি‌লো ওর জামা তি‌থি‌কে দি‌বে অথবা তি‌থি‌কে জামা কি‌নে না দি‌লে ও পর‌বে না তখন বাধ্য হ‌য়ে এনে‌ছি‌লে।"

‌প্রিয়ম মাথা নিচু ক‌রে বলল,
" মাফ ক‌রে দাও চাচ্চু।"
" আমার মাফ করার যোগ্যতা নেই। যার আয় নেই, যে পঙ্গু তার কাউ‌কে মাফ করা শোভা দেয় না।"
" আর লজ্জা দিও না চাচ্চু।"
" তো‌কে কেন লজ্জা দিব। আমি পঙ্গু, অক্ষম, লজ্জা তো আমার পাবার কথা। ত‌বে তি‌থির যেখা‌নে বি‌য়ে ঠিক হয়ে‌ছে সেখানে মে‌য়েটা নিরাপ‌দে থাক‌বে, সুখী হ‌বে, ওর স্বপ্নগু‌লো স‌ত্যি হ‌বে।"

‌প্রিয়ম তি‌থির বাবা‌কে বল‌তে এসে‌ছি‌লো, তি‌থির বি‌য়েটা যা‌তে ভে‌ঙে দেয়। তি‌থি‌কে ও বি‌য়ে কর‌বে। কিন্তু বলার মত মুখটা ওর এখন নেই। বিড়‌বিড় ক‌রে বলল
" স‌ত্যি চাচ্চু অসুস্থ হবার পর আমার প‌রিবার তা‌দের সা‌থে খুব অন্যায় ক‌রে‌ছে। কিন্তু মন যে মা‌নে না। সে যে তি‌থি‌কেই চায়।"

হুট ক‌রে প্রিয়মের কী হ‌লো কে জা‌নে? ও তি‌থির রু‌মে গি‌য়ে দরজা বন্ধ ক‌রে দি‌লো। তি‌থি পড়‌ছি‌লো। আচমকা প্রিয়‌মের এমন করায় বেশ অবাক হ‌য়ে বলল,
" ভাইয়া কিছু বল‌বে?"
‌প্রিয়ম বেশ ভারী ক‌ন্ঠে বলল,
" তুই কি বু‌ঝিস না আমি তো‌কে ভা‌লোবা‌সি? তো‌কে বি‌য়ে কর‌তে চাই। তো‌কে পে‌তে হ‌লে কী কর‌তে হ‌বে? জনসম্মু‌খে আমার সা‌থে জ‌ড়ি‌য়ে বদনাম করতে হ‌বে? ত‌বে তো তোর বি‌য়ে ভ‌াঙবে! আচ্ছা ত‌বে তাই হ‌বে।"
প্রচন্ড ভ‌য়ে তি‌থি জ‌মে গে‌লো। প্রিয়‌মের এমন রূপ তি‌থি কখ‌নো দে‌খে‌নি। ম‌নে ম‌নে ভয় পা‌চ্ছে র্নিজন এ দুপু‌রে, বা‌ড়ি‌তে তেমন কেউ নেই, প্রিয়ম না ‌কো‌নো ভুল পদ‌ক্ষেপ না নি‌য়ে ফে‌লে! তি‌থি ভ‌য়ে কাঁদ‌তে লাগল। প্রিয়ম তি‌থির কা‌ছে গি‌য়ে ওর জামার পিছ‌নের দিকটা টান মে‌রে ছি‌ড়ে ফেলল।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন