০৭!!
আজকে সারা রাত জেগে পড়তে হবে। কাল থেকে টেস্ট পরীক্ষা শুরু। আমাকে তো পাশ করতেই হবে। আমিও দেখিয়ে দিবো আকাশকে ছাড়া আমার চলা অসম্ভব কিছু না।
পরেরদিন,
হল রুমে গিয়ে দেখি বরাবরের মতই আকাশের সিট আমার সামনের সিটই। কিন্তু কেউই কারো মুখো হয়নি। বাংলা পরীক্ষা বেশ ভালোই হয়েছে।
পরীক্ষা শেষ করে বের হয়ে দেখি শুভ দাঁড়িয়ে আছে।
- আরে আপনি?
- জ্বী ম্যাম আমি
- কলেজে কেন?
- তোমাকে নিতে আসলাম।
- কেন? আমি কি একা যেতে পারি না?
- পারো। তবে কখন আবার সেদিনের মত ফোন টিপতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করো তার তো ঠিক নেই। বিয়ের আগেই আমি বিধবা হতে চাই না বউ।
- হিহিহি ছেলেরা আবার বিধবা হয় নাকি। আর তাছাড়া পরীক্ষার সময় আমি ফোন নিয়ে আসবো কি করে? নিষেধ তো!
- ওহহো! তাই তো। ঠিক আছে আমি তাহলে চলে যাচ্ছি। তুমি একাই বাসায় চলে যাও কেমন! (দুস্টুমি করে কথাগুলো বললো শুভ)
- অশুভ!! (রেগে)
- আবার রাগ করো কেন?
- তো? রাগ করবো না?
- না করবে না।
- আচ্ছা। এখন তো চলেন
- ওকে ম্যাম।
- বাইক এনেছেন?
- হ্যাঁ একটু সামনে রেখে এসেছি। চলো।
- আচ্ছা
আমি আর শুভ হাঁটছি আর কথা বলছি। কথা বলতে বলতে খেয়ালই করিনি যে শুভ আমার পাশে নেই। পিছনে তাকিয়ে দেখি শুভ আকাশের কাছে যাচ্ছে। আমি কিছুটা দূর থেকে তাকিয়ে দেখছি। শুভ তো জানেনা যে আমাদের কোনো ফ্রেন্ডশিপ নেই আর। আকাশ যদি শুভর সাথে কোনো বাজে ব্যবহার করে এটা ভেবে আমিও শুভর পেছন পেছন গেলাম।
- হেয় ব্রো! হোয়াট'স আপ? (শুভ)
আকাশ এতক্ষণ মেঘলা আর ওর ওর কিছু ফ্রেন্ডসদের সাথে কথা বলছিল। শুভর দিকে তাকিয়ে হাসলেও আমার দিকে তাকিয়ে মুখের বর্ণটাই পরিবর্তন করে ফেললো। খুব একটা বিরক্তিকর ভাব মুখে ফুটিয়ে শুভকে উত্তর দিলো,
- স্যরি ভাই! কে আপনি?
- মজা করছো?
- মজা কেন করবো? আমি সত্যিই আপনাকে চিনি না।
- দেখেছো প্রিয়া, তোমার বেষ্টফ্রেন্ড কি সুন্দর নাটক করে। ওর তো সিনেমায় সুযোগ হয়ে যাবে গো। আর এই যে আকাশ, আগে তো তুমি আমাকে প্রিয়ার জন্য অশুভ বলেই চিনতে। কিন্তু এখন তো সম্পর্ক আর তেমন না। তোমার বেষ্টফ্রেন্ডের হবু হাজবেন্ড বলে কথা। (মুচকি হেসে)
আকাশ বেশ অবাক হয়ে গেল হবু হাজবেন্ড কথাটা শুনে। কারণ আকাশ জানেনা যে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আর আমি ওকে জানানোরও প্রয়োজন মনে করিনি। কিন্তু এবার আকাশ কিছুটা অগ্নিমূর্তি ধারণ করেই বললো,
- এই যে মিস্টার শুভ। পাগল নাকি আপনি? কখন থেকে কিসব বলছেন? আর কে আমার বেষ্টফ্রেন্ড? আমার কোনো বেষ্টফ্রেন্ড নেই।
- মানে কি আকাশ? আর তুমি আমার সাথে এভাবেই বা কথা বলছো কেন?
- এরচেয়ে ভালো করে কথা আর বলতে পারিনা মিস্টার শুভ তাও আবার কোনো পাগলের সাথে।
আকাশের কথা শুনে আর চুপ করে থাকতে পারলাম না।
- আকাশ!! কথাবার্তা ঠিক করে বলেন। কার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেই নূন্যতম শিক্ষাও কি আপনার মধ্যে নেই?
- কার সাথে কি করে কথা বলতে হবে তা কি আপনার কাছ থেকে শিখতে হবে মিস প্রিয়া? আর বাকি রইলো শিক্ষা? হাউ ফানি। ভূতের মুখে রাম নাম। শিক্ষা যে কি তা কি আপনার মত মোবাইল পাগলী মেয়ে বুঝে? আপনি মোবাইল ছাড়া কিছু বুঝেন যে আপনার কাছ থেকে শিক্ষা কি তা শিখতে হবে।
- আকাশ কি হয়েছে? তুমি প্রিয়ার সাথে এভাবে কেন কথা বলছো? (শুভ)
- তো আপনার প্রিয়ার সাথে কি মিষ্টি করে কথা বলতে হবে নাকি?(মেঘলা)
- মেঘলা ঠিক করে কথা বলো। এর মধ্যে তুমি কেন ঢুকছো? থার্ড পার্সন না হলে ভাল্লাগেনা? (আমি)
- থার্ড পার্সন? মেঘলা? ইহুম! থার্ড পার্সন মেঘলা না থার্ড পার্সন আপনি প্রিয়া। সেই প্রথম থেকেই। আপনার থেকে মেঘলার গুরুত্ব অনেক বেশি আমার কাছে
- রিভেঞ্জ? রিভেঞ্জ নিচ্ছেন তো আপনি? আপনার চোখের সামনে খুব বড় একটা পর্দা রয়েছে যা ভেদ করা আপনার বোধগম্য নয়। কিন্তু যেদিন এই পর্দা টা সরে যাবে সেদিন খুব বেশিই দেরি হয়ে যাবে। আজকে এতগুলা মানুষের সামনে আপনি শুভকে অপমান করলেন না? কথা দিচ্ছি এর চেয়েও হাজারগুণ মানুষের সামনে এর শোধ আমি তুলবো আমি! আর হ্যাঁ মেঘলা, খুব গুটিবাজি শিখে গেছো। পাক্কা খেলোয়াড় যাকে বলে আরকি! তবে তুমি জেদ আর হিংসার বশে যা করেছো এর জন্য তোমাকে একদিন পস্তাতে হবে। খুব করে পস্তাতে হবে। এমনও একটা দিন আসতে পারে যে তুমি আমার পায়ে ধরে কান্না করবে আর সেদিন খুব বেশি দূরে নয়।
তবে একটা কথা কি জানো মেঘলা, তুমি আমার কাছ থেকে একটা ধন্যবাদ পাও। তার কারণ কি জানো? তার কারণ হলো তোমার কারণেই আমি জানতে ও বুঝতে পেরেছি যে বন্ধুত্বের মর্যাদা সবাই দিতে পারে। যে বিশ্বাসই করতে পারে না, যে লোক দুইদিনের প্রেমিকার জন্য ১০ বছরের বেষ্টফ্রেন্ডকে থার্ড পার্সন বলতে পারে সে আর যাই হোক না কেন কারো বন্ধু হওয়ার যোগ্য না।
- একটু বেশিই হয়ে গেল না? (মেঘলা)
- নাহ্ অনেক কম হয়ে গেছে অনেক। যেই গেমটা তুমি শুরু করেছো তা শেষ করবো আমি। মুখোশের আড়ালে থাকা তোমার আসল চেহারাটা যেদিন টেনে হিঁচড়ে বের করে আনবো সেদিন কোথাও লুকানোর আশ্রয়ও পাবে না।
- হাহা! প্রিয়া, ন্যাড়া বেলতলায় একবারই যায়। ঠিক তেমনভাবেই আমিও মানুষ চিনতে একবারই ভুল করেছি আর সেই মানুষটা হলো আপনি। আর মেঘলা? মেঘলা হলো আমার ভালোবাসা। আর ভালোবাসার মানুষকে চিনতে কেউ কখনো ভুল করে না। অন্তত আমি যে করিনি সেটা আমি শিওর।
- কনফিডেন্স থাকা ভালো তবে ওভার কনফিডেন্স থাকা মোটেও উচিত নয়।
- শুনো আপু, তুমি যতই চেষ্টা করো না কেন আমার আর আকাশের মাঝে কোনো প্যাঁচ সৃষ্টি করতে পারবে না। আর নিজেই তো দেখতে পাচ্ছো আকাশ আমাকে কতটা ভালোবাসে। আচ্ছা ভালোবাসা কি বুঝো? না মানে মোবাইলের বাহিরেও ভালোবাসাটা শিখে নিয়ো যেহেতু কয়েকদিন বাদে বিয়ে সংসার তো করতে হবে। (মেঘলা)
- প্যাচ আমি সৃষ্টি করতে চাই না। কারণ তোমার মত লো মেন্টালিটির মেয়ে আমি না। আর চাইলেও পারবোনা কারণ সম্পর্ক ভাঙ্গাতে তুমি খুব পটু আর এটা শুধু তোমার মত থার্ড ক্লাস মেয়ের দ্বারাই সম্ভব। আর বাকি রইলো ভালোবাসা? সেটা না হয় প্রমাণ হিসেবে বিয়ের পরই দেখো। সংসার আমি করবো মোবাইলও আমি চালাবো। ভালোবাসা দিয়েই সংসারকে আগলে রাখবো। তুমি শুধু দেখো তোমার মত মেয়ে সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে নাকি।
- প্রিয়া! এসব কি হচ্ছে? (শুভ)
- কিছুনা। বাড়িতে চলুন।
শুভ আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে চলে গেল।
বাড়িতে গিয়ে ড্রেস না চেঞ্জ করেই ফোন নিয়ে বসে পড়েছি। গেম খেলছিলাম। টায়ার্ড থাকায় কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছি।
ঘুম ভাঙ্গলো বিকেল বেলায়। ফ্রেশ হয়ে খেয়ে টিভি দেখছিলাম আর ফোন টিপছিলাম।
কিছুক্ষণ পরই শুভ ফোন দিলো।
- হ্যালো প্রিয়া
- হুম বলেন অশুভ
- আবার অশুভ?
- শুধু শুভ বললে যে ভাইয়া ডাকবো?
- তাহলে থাক অশুভই ডাকো। আচ্ছা একটা কথা বলি?
- হুম শিওর
- আকাশের সাথে তোমার কি হয়েছে?
- ঝগরা
- কি নিয়ে?
- সেটা আমিও জানিনা।
- মানে?
- মানে কোনো কারণ আমাকে বলেনি।
- হঠাৎ করেই?
- হ্যাঁ।
- ওহ আচ্ছা। খেয়েছো নাকি ফোন নিয়েই পড়ে আছো?
- হুম খেয়েছি। আপনি?
- হুম অনেক আগেই।
-পড়তে বসবে না?
- হু একটুপর।
- আচ্ছা পড়া শেষে রাতে ফোন দিয়ো
- আচ্ছা রাখি
- টাটা
- আল্লাহ্ হাফেজ।
পরেরদিন:
মরার মত ঘুমাচ্ছিলাম। শুভ ফোন দেওয়ায় ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো।
ঘুমঘুম চোখে বললাম,
- হ্যালো
- ঘুমাচ্ছো?
- হুম
- একটা কথা বলবো
- বলেন
- সত্যি করে উত্তর দিবা
- মিথ্যা বলেছি নাকি কখনো।
- না। তুমি কি আকাশকে ভালোবাসতে?
শুভর কথা শুনে ধরফড়িয়ে বিছানায় বসে পড়লাম!....
০৮!!
শুভর কথা শুনে ধরফরিয়ে আমি বিছানায় বসে পড়লাম। ঘুম ঘুম ভাবটা নিমিষেই চোখ থেকে উধাও হয়ে গেলো। শুভর কথাটা এখনো কানে বাজছে। শুভ আবারও বলা শুরু করলো,
- প্লিজ প্রিয়া চুপ করে থেকো না, বলো সত্যিটা।
- আমাকে বিশ্বাস করেন?
- করি
- আকাশের সাথে এমন কিছু দেখেছেন বা শুনেছেন যার জন্য মনে হলো আমি আকাশকে ভালোবাসি?
- না
- তাহলে কিসের ভিত্তিতে এই প্রশ্ন করলেন আপনি?
- আকাশ নিজে বলেছে!
- হোয়াট!! আকাশ বলেছে?
- হুম
- কি বলেছে আকাশ?
- কাল রাতে আকাশ ফোন দিয়ে বললো একটা রেস্টুরেন্টে দেখা করতে। তাই রাত আট'টা নাগাদ একটা রেস্টুরেন্টে গেলাম। গিয়ে দেখি আমার আগেই আকাশ এসে বসে আছে। সাথে মেঘলাও ছিল। আমি গিয়ে আকাশকে বললাম,
- বলো কি বলবা?
- আজকে বিকালের ঐ ব্যবহারের জন্য আমি দুঃখিত।
- ইট'স ওকে।
- কফি অর্ডার দিবো?
- না। আমি কিছু খাবো না। তোমরা খেলে অর্ডার দাও।
- আসলে ভাইয়া আপনাকে কিছু কথা বলার জন্য এখানে ডেকেছি।(মেঘলা)
- বলো
- আপনি প্রিয়াকে ভালোবাসেন? (আকাশ)
- হুম অনেক বেশিই ভালোবাসি।
- প্রিয়া কিন্তু আমাকে ভালোবাসে। (আকাশ)
- মানে?
- হ্যাঁ প্রিয়া আমাকে ভালোবাসতো কিন্তু আমি মেঘলাকে ভালোবাসতাম।
- তোমার কাছে কি প্রমাণ আছে যে আমি তোমার কথা বিশ্বাস করবো?
- মেঘলাকেই জিজ্ঞেস করে দেখুন।
- হুম ভাইয়া, আকাশ যা বলছে সব সত্যি। এজন্যই প্রিয়া আপু কখনোই চাইতো না যে আকাশ আর আমার সম্পর্কটা হোক। একদিন প্রিয়া আপু আকাশের ফোন থেকে আমাকে ফোন দিয়ে অনেক কিছু বলে।
- কি বলেছিল?
- বলেছিল, আমি আকাশকে ভালোবাসি। আমার আর আকাশের মধ্যে একদম আসার চেষ্টা করবে না। এমনকি আকাশের নামে মিথ্যাও বলেছিল।
- কি মিথ্যা?
- আকাশও নাকি প্রিয়া আপুকে অনেক ভালোবাসে। আর প্রিয়া আপুর সাথেই নাকি আকাশের বিয়ে ঠিক ছিল। আকাশের সাথেই নাকি প্রিয়া আপুর বিয়ে হবে। আকাশ শুধু আমাকে ব্যবহার করছে। আমি যেন আকাশের থেকে দূরে থাকি। আরো অনেক গালাগালিও করেছে যা আমি আপনাকে বলতে পারবো না।
- দেখুন শুভ ভাইয়া, আমরা আপনার ভালো চাই বলেই সব সত্যি কথাগুলো আপনাকে বলে দিয়েছি। আমরা আপনার খারাপ চাইনা। এখনো অনেক সময় আছে ভেবে দেখুন বিয়েটা করবেন নাকি করবেন না (আকাশ)
- তোমাদের বলা শেষ?
- হু
- ঠিক আছে আমি আসছি।
শুভর কথাগুলো শুনে পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেছে। এত্ত বড় মিথ্যা কথা তাও আবার আকাশ বলেছে। আমি ফোনটা কেটে দিয়ে উপরের ফ্লাটে আকাশদের রুমে চলে গেলাম। কলিংবেল বাজাতেই আকাশ দরজা খুলে দেয়।
- কি চাই? (আকাশ)
আমি আকাশের গালে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে একটা থাপ্পড় দেই।
- ছোটলোক ছেলে একটা! তোর সাহস কি করে হয় তুই শুভকে আমার নামে এসব উল্টাপাল্টা কথা বলিস? আমার সুখ তোর সহ্য হয় না? তোর সুখের পথে তো আমি কখনো কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়নি তাহলে তুই কেন আমার সুখ দেখতে পারছিস না?
সেদিন তুই আমাকেও বলেছিলি আমি নাকি তোকে ভালোবাসি? তোর মত একটা ছোটলোক ছেলেকে আমি ভালোবাসবো? যার মন এত ছোট সে আর যাই হোক কারো ভালোবাসার যোগ্য না। তবে সত্যি এটাই যে তোকে আমি কখনো আমার বেষ্টফ্রেন্ড ছাড়া কিছু ভাবিনি। ভালোবেসেছি ঠিকই কিন্তু বন্ধু হিসেবে লাভার হিসেবে নয়। এরপর কখনো যদি আমার পথে কাঁটা হওয়ার চেষ্টা করিস তাহলে আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না। মাইন্ড ইট!!
চলে যাওয়ার সময় দেখলাম মেঘলা ছাদ থেকে নিচে নামছে। মেঘলার পড়নে একটা লাল শাড়ি। কিন্তু সেদিকে আমি কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে মেঘলাকে টেনে ছাদে নিয়ে গেলাম।
- কি হয়েছে? এভাবে টেনে আনলে কেন ছাদে?
- সব নষ্টের মূল তুই তাই না? সবার সাথে সব প্যাচ তুই'ই লাগিয়েছিস। আকাশের সাথে আমার বন্ধুত্ব ভেঙ্গেছিস তুই এখন আবার শুভর সাথেও আমার সম্পর্কটা ভাঙ্গতে চাচ্ছিস। কেন রে? কেন? একজনে মন ভরে না? নাকি এখন শুভকেও চাই তোর? নাটক? খুব ভালো নাটক করিস তুই।
- ওহ হো! কাজটা তাহলে হয়ে গেছে। মানে শুভ ভাইয়া বলে দিয়েছে যে তোমাকে বিয়ে করবে না, তাই তো? সবকিছু যখন জেনেই গিয়েছো, তাহলে শুনো সেদিন যে আকাশের ফোনে একটা কল আসছিল? মনে আছে? সেই কলটা করেছিলাম আমি। এত সকালে তুমি আকাশের রুমে তাও আবার আকাশের ফোনটাও তুমি রিসিভ করেছিলে। যদিও জানতাম নিগেটিভ কিছুই না তবুও সুযোগটাকে কাজে লাগালাম। তোমাকে আমি আকাশের সাথে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম আর সেটা সেই শুরু থেকেই। জানিনা আকাশের কিসের এত দূর্বলতা ছিল তোমার প্রতি। কিন্তু এটা জানতাম যে তুমি আকাশকে শুধু বন্ধুই ভাবতে। কারণ তোমার ধ্যান, জ্ঞান জুড়ে তো ছিল শুধুই তোমার ফোন। তোমার প্রতি আকাশের এত কেয়ার, ভালোবাসা এগুলা আমার সহ্য হচ্ছিল না। আকাশকে পেয়েও মনে হচ্ছিল আমি আকাশকে পাইনি। মনে হতো আকাশ শুধু তোমাতেই আবদ্ধ। তারপর একদিন আকাশের কাছে শুভ ভাইয়ার কথা শুনলাম। শুনে যতটুকু মনে হয়েছিল শুভ ভাইয়া তোমাকে ভালোবাসে। মনে একটু প্রশান্তি পেয়েছিলাম এটা ভেবে যে এবার অন্তত তোমার ভূত আকাশের ঘাড় থেকে নামবে। কিন্তু না, আকাশ যেন শুভ ভাইয়াকে সহ্যই করতে পারতো না। আকাশ চাইতো শুভ ভাইয়ার থেকে তোমাকে দূরে রাখতে। তোমাকে আগলে রাখতে গিয়ে আমার প্রতি ওর অবহেলা বেড়েই চলছিল। কিন্তু আমি এসব মানতে পারছিলাম। তাই সেদিন আকাশকে তোমার নামে মিথ্যা কথা বলি যে তুমি আমাকে অনেক গালিগালাজ করেছো, আমাকে আকাশ ব্যবহার করছে ইত্যাদি ইত্যাদি। তোমার নামে ঢালা বিষ আকাশের কানে বেশ ভালো করেই প্রভাব ফেলে। আমি আগুনে ঘি ঢালতে সেদিন কান্নাজড়িত কন্ঠে আকাশকে বলেছিলাম,
আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আকাশ। প্লিজ আমাকে ঠকিয়ো না। তুমি চাইলে আমার সবকিছুই আমি তোমাকে দিয়ে দিবো। তবুও আমাকে ছেড়ে যেয়ো না।
ব্যাস তাতেই কাজ হয়ে গেল। আর ঠিক সেদিন থেকেই তোমাদের মধ্যে ফাটল ধরতে শুরু করে।
এর মধ্যে একদিন শুনলাম আকাশের পরিবারের সাথে তোমার আর তোমার পরিবারের খুব ভালো একটা সম্পর্ক তখনও পর্যন্ত বিদ্যমান। মনের মধ্যে একটা ভয় ছিল যদি আকাশের মা তোমাকে আকাশের বউ করে ঘরে তুলে নেয়। যদি আমি আকাশকে হারিয়ে ফেলি। এই ভয়ে আমি আন্টির কানেও তোমার নামে বিষ ঢালতে শুরু করলাম। কিন্তু খুব একটা রেসপন্স পাইনি আন্টির থেকে। মনে হয়েছিল উনি আমার কথাগুলো ঠিক বিশ্বাস করতে পারেননি বা করেননি। তাই মনের মধ্যে ভয়টা ছিলোই। আমি আকাশকে বলতাম চলো আমরা কোর্ট ম্যারেজ করি কিন্তু আকাশ রাজি হতো না।
এর মধ্যেই সেদিন তোমাদের বাংলা পরীক্ষার দিন আলোর দিশা হয়ে শুভ ভাইয়া তোমাদের বিয়ের কথা জানালো। এর প্রভাব আকাশের মনে দাগ কেটেছিল। আমিও আকাশকে জেদ দিতে থাকি। যার ফলস্বরূপ কাল আমি আকাশকে সারাজীবনের জন্য পেয়ে যাই। হ্যাঁ কালকেই আমরা কোর্ট ম্যারেজ করেছিলাম। কিন্তু এতকিছু করেও আমি যেন ঠিক শান্তি পাচ্ছিলাম না। কারণ আমি তো জানতাম যে তুমি আকাশকে ভালোবাসো না। তাই তুমি শুভ ভাইয়াকে বিয়ে করে সুখেই থাকবে এটা সত্যি। কিন্তু তোমার জন্য আমি যে কষ্টগুলো পেয়েছি তার রিভেঞ্জ নেওয়ার জন্য মনে মনে একটা ফন্দি আটলাম। আকাশকে ভুলিয়ে ভালিয়ে অনেক বুঝিয়ে বললাম চলো আমরা শুভ ভাইয়াকে সব সত্যিটা বলে দেই। আকাশ রাজি হলো। আর আমরা শুভ ভাইয়াকে সেই মিথ্যাগুলো উপস্থাপন করে শুনালাম।
আমি সেই কাজেও সফল হলাম। হাহাহা শুভ ভাইয়া তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়নি। বিয়েটা ভেঙ্গে দিয়েছে। খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না আপু? আহারে। কোথায় তোমার আর শুভ ভাইয়ার নতুন সংসার সাজানোর কথা সেখানে আমি আর আকাশ সুখে শান্তিতে সংসার করবো। আর তুমি শুভ ভাইয়ার বিরহে রাত্রি যাপন করবে।
- বাহ্ বাহ্ বাহ্! কি দারুণ নাটক মেঘলা!
হাত তালি দিতে দিতে শুভ কথাগুলো বলে আমাদের সামনে আসলো।
- আপনি!? (আমি)
- হুম আমি। আজ যদি আমি না আসতাম তাহলে তো এতসব সত্যি আমার অগোচরেই থেকে যেতো।
শুভ মেঘলাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
- মেঘলা, তুমি সব কাজে সফল হলেও একটা কাজে সফল হওনি। আর তা হলো তুমি আমাকে আর প্রিয়াকে আলাদা করতে পারোনি। ইচ্ছে করছে তোমাকে ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় মারি। কিন্তু তোমার মত রাস্তার একটা মেয়েকে মেরে আমি আমার হাত নোংরা করতে চাই না।
আমি প্রিয়াকে বিশ্বাস করতাম, করি আর করবো। কাল যখন রেস্টুরেন্টে প্রিয়ার নামে এসব কথা বলছিলে তখনই আমার তোমাকে সন্দেহ হয়েছিল। কিন্তু প্রমাণের অভাবে কিছুই বলতে পারিনি আর আজ তো সব নিজ কানেই শুনলাম।
শুভ এবার আমার দিকে ঘুরে আমার গালে হাত রেখে বললো,
- প্রিয়া! আই এম স্যরি। ট্রাস্ট মি আমি তোমাকে অবিশ্বাস করিনি। আমি যদি তোমাকে অবিশ্বাস করতাম তাহলে তোমাকে সব বলে দিতাম না। তুমি ফোন রাখার পর আমি তোমার কাছে ছুটে এসেছি এটা বলার জন্য যে, যে যাই বলুক আমি তোমাকে ভালোবাসি আর তোমাকেই বিয়ে করবো।
হয়তো মনের মধ্যে একটা কনফিউশন থেকেই যেত কিন্তু সেটাও আজ এখন কেটে গেছে।
খুব ভালোবাসি তোমাকে প্রিয়া।
মেঘলাকে আর কিছু বলার প্রয়োজন মনে করিনি। ওর শাস্তি ও পাবেই।
শুভ আমার হাত ধরে ছাদ থেকে নিচে নামছে। সিঁড়ির কাছে যেতেই দেখলাম একটা ছায়া আমাদের দেখে সরে গেল। কোনো মানুষের অবয়ব সেটা বুঝতে পেরেছি। কিন্তু কে ছিল আড়ালে.......