অবেলার অভিলাষ - পর্ব ০৮ - শারমিন আক্তার সাথী - ধারাবাহিক গল্প


      আয়াত ওর বাবার (আমজাদ হো‌সেন) সা‌থে কথা ব‌লে তা‌কে পিছ‌নের সব কাজ গু‌ছি‌য়ে বু‌ঝি‌য়ে দি‌লো। আয়াত তা‌কে তনয়ার সা‌থেও প‌রিচয় ক‌রি‌য়ে দিলো। তনয়া অনেকটা ভ‌য়ে ভ‌য়ে তার সা‌থে কথা বলল। অনেকক্ষন পর আয়াত নি‌জের কে‌বি‌নে গি‌য়ে তনয়া‌কে ওর কে‌বি‌নে ডাক‌লো। তনয়া কে‌বি‌নে যাবার পর আয়াত বলল,

__‌কী ব্যাপার তু‌মি কি বাবা‌কে ভয় পা‌চ্ছো?

__একটু!

__‌রি‌য়ে‌লি! ত‌ু‌মি না তনয়া! যে মানু‌ষের মাইন্ড ব্লক ক‌রে দেয়। তাহ‌লে তু‌মি কেন ভয় পা‌চ্ছো? 

__জা‌নিনা ঠিক। মা‌নে ওনি তো অফি‌সের হেড ভয় তো পাবই।

__আ‌রে ভয় পাবার কিছু নেই। বাবা‌কে যতটা গম্ভীর দেখায় ততটা গম্ভীর নয়। একটু খেয়াল কর‌লে দেখ‌বে সে খুব বন্ধুসুলভ। আস‌লে এত বড় অফি‌সের বস সো বুঝ‌তেই পার‌ছো নি‌জের গাম্ভীর্য ধ‌রে না রাখ‌লে অফিসের কর্মচারীরা হয়ত মান‌বে না। কিন্তু যে বাবার সা‌থে বন্ধুসুলভ, বাবাও তার সা‌থে মনখু‌লে মি‌শে যায়। সো বাবা‌কে ভয় পে‌য়োনা। 

__‌জি স্যার। তারপর তনয়া যে‌তে নি‌লে আয়াত তনয়ার হাতটা ধ‌রে চেয়া‌রে বসায় আর নি‌জেও একটা চেয়ার টে‌নে তনয়ার সাম‌নে ব‌সে তনয়ার হাতদু‌টো নি‌জের হা‌তের মু‌ঠোয় নি‌য়ে বলল,
রাগ কর‌ছো?

__‌কেন?

__তাহ‌লে তোমার জন্ম‌দি‌নের পর থে‌কে ইগ‌নোর কেন কর‌ছো?

__না---- আস‌লে----- স্যার----- মা‌নে-----!

__তনয়া এমন তো নয় তু‌মি আমার চো‌খের ভাষা বুঝ‌তে পা‌রোনা। আর এমনও নয়‌ যে, আমি তোমার চো‌খের ভাষা বুঝ‌তে পা‌রিনা। সে‌দিন তোমার চো‌খে যেটা দে‌খে‌ছি, তোমার অনুভূ‌তি‌তে যেটা অনুভব ক‌রে‌ছি সেটা কখ‌নোই মিথ্যা হ‌তে পা‌রেনা। আচ্ছা তনয়া তু‌মি‌ তো সে‌দিন আমার হৃদ‌য়ের আওয়াজ শুন‌তে পে‌রে‌ছি‌লে ত‌বে কেন আমার হৃদ‌য়ের ডাক শু‌নেও না শোনার ভান ক‌রে চুপ ক‌রে আছো!

আয়া‌তের কথা শু‌নে তনয়া কি বল‌বে ভে‌বে পা‌চ্ছে না। তাই কথা ঘুরা‌নোর জন্য বলল, স্যার আমার কিছু জরু‌রি কাজ আছে। তারপর আয়া‌তের কে‌বিন থে‌কে চ‌লে ‌গে‌লো। 

১৯!!

       এভা‌বেই চল‌ছি‌লো ওদের দিনগু‌লো। তনয়া ক‌য়েকবার ওর বাবার কা‌ছে ক্ষমা চাই‌তে গি‌য়ে‌ছি‌লো কিন্তু তি‌নি প্র‌তিবারই ফি‌রি‌য়ে দি‌য়ে‌ছে।
তানভী ভাব‌লো প্রথ‌মে কোন কোম্পা‌নি‌তে প্রাক‌টিস কর‌বে তারপর BSC কর‌বে তা‌তে অভিজ্ঞতা হ‌বে। আর তাছাড়া তানভী BSC এখন দে‌শের বা‌হি‌রে কর‌তে চা‌চ্ছে। তাই চল‌তি একবছর তানভী একটা কোম্পা‌নি‌তে পার্টটাইম জব নি‌য়ে‌ছে, আর কো‌চিং কর‌বে। আর বা‌হি‌রে যাবার সকল ব্যবস্থা কর‌বে। কিন্তু সমস্যা হল, ওর কো‌চিং আর জব যেখা‌নে তা‌তে ও রোজ বা‌ড়ি থে‌কে কর‌তে হ‌বে। ও চে‌য়ে‌ছি‌লো তনয়ার সা‌থে আলাদা ফ্ল্যাট নি‌য়ে দু ভাই বোন থাক‌বে। কিন্তু যেটা এখন আর চে‌য়েও সম্ভব হ‌বেনা। আর মেঘা? তানভী তার সা‌থে ফো‌নে ফো‌নে বেশ ভা‌লো বন্ধুত্ব তৈরী ক‌রে ফেল‌ছে।

এ‌দি‌কে র‌শ্মির ফ্ল্যা‌টে র‌শ্মির ছোট বোন আর বড় ভাই ভা‌বি এসে থাক‌বে। মূলত ফ্ল্যাটটা র‌শ্মির বড় ভাই‌য়ের। তারা এখন থে‌কে সেখা‌নে থাক‌বে। র‌শ্মির ছোট বোন রুমাও আস‌বে ভা‌র্সি‌টি‌তে পড়ার জন্য। র‌শ্মির ফ্ল্যা‌টে মাত্র দু‌টো বেড রুম। তাই র‌শ্মি না চাই‌তেও তনয়া‌কে ওর ফ্ল্যাট ছাড়‌তে হ‌বে। অবশ্য যে দুমাস তনয়া থে‌কে‌ছে র‌শ্মিকে সে দুমা‌সের ফ্ল্যা‌টের ভাড়া আর যাবতীয় খরচ দি‌য়ে দি‌ছে। তনয়া এখন নতুন ব‌াসা খুঁজ‌ছে। সাম‌নের মা‌সে র‌শ্মির ভাইয়া ভা‌বি আস‌বে। এ মাস শেষ হ‌তে মাত্র আট দিন বা‌কি। এই আট দিনে তনয়া‌কে বা‌ড়ি খুঁজ‌তে হ‌বে, নি‌জের ট‌ুকটাক জি‌নিস কিনতে হ‌বে। 

গত দেড়মাস যাবত আয়াত তনয়ার সম্পর্কটা তেমনই। দুজন বুঝ‌তে পা‌রে একে অপর‌কে কতটা ভা‌লোবা‌সে। কিন্তু কেউ কাউ‌কে মুখ ফু‌টে একটা বারও ব‌লেনা। দুজ‌নের কথা বলা অফিস পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। আয়া‌তের খুব কষ্ট হয়। কিন্তু যখন ভা‌বে তনয়া নি‌জে থে‌কেই ওর সা‌থে সম্প‌র্কে জড়া‌তে চায়না তাই ওকে জোড় ক‌রে কি লাভ? একটা অদৃশ্য অভিমা‌নের প্র‌লেপ প‌রে আছে দুজনার মা‌ঝে। কিন্তু আয়াত খুব ভা‌লো ক‌রে জা‌নে তনয়া আয়াত‌কে অনেক বে‌শি ভ‌লোবা‌সে। কিন্তু প‌রি‌স্থি‌তির কার‌নে হয়ত তনয়া আয়া‌তের ভা‌লোবাসা‌কে গ্রহন কর‌তে পার‌ছে না।
তনয়ার এ সংগ্রামী জীবন দে‌খে আয়া‌তের খুব কষ্ট লাগে। মে‌য়েটা এতটুকু বয়‌সে কত কি সামলা‌চ্ছে। অথচ কা‌রো হেল্প পর্যন্ত পা‌চ্ছেনা। আয়াত কর‌তে চাই‌লেও সেটা নি‌চ্ছেনা।

দু মাস আগে তনয়ার জন্ম‌দি‌নের পর থে‌কেই তনয়া আয়া‌তের সা‌থে কথা বলা ক‌মি‌য়ে দি‌য়ে‌ছে। তনয়া কোন মায়ায় নি‌জে‌কে বাঁধ‌তে চায়না। ও মুক্ত থাক‌তে চায়। আজ তনয়া একটা ভাড়া বাসা ঠিক ক‌রে আস‌লো। বাসাটা নি‌রি‌বি‌লি, দোতলা বা‌ড়ি নিচ তলায় বা‌ড়ি ওয়ালার প‌রিবার থা‌কে। দোতলায় টু ইউনিট করা এক ইউনি‌টে বল‌তে পা‌শের ফ্ল্যাটে একটা ছোট্ট প‌রিবার থা‌কে। তনয়ার বা‌ড়িটা বেশ পছন্দ হ‌য়ে‌ছে।  নি‌রি‌বি‌লি হ‌লেও দু‌টো প‌রিবার আছে। আর পাঁচ দিন পর তনয়া বাসায় উঠ‌বে। পাঁচ দি‌নে তনয়ার অনেক কাজ আছে। আয়া‌তে বাবা আমজাদ হো‌সে‌নের সা‌থে তনয়ার ভা‌লো সম্পর্ক হ‌লেও নতুন জ‌য়েন ক‌রে বারবার ছু‌টি নেয়া তার পছন্দ নয়। এ জন্য অফিস থে‌কে এসে রা‌তে টু‌কিটা‌কি নি‌জের বাসার কাজ ক‌রতে হ‌চ্ছে তনয়া‌কে। 

২০!!

     আজ হঠাৎ তানভী সবাই‌কে ডিনার ট্রিট দি‌বে। সেখা‌নে আয়াত মেঘা, তনয়ার বান্ধবী র‌শ্মি আর ‌রিমা থাক‌বে। সা‌থে তানভীর চার পাঁচ জন বন্ধু।

রাত সা‌ড়ে নয়টায়, 
সবাই ব‌সে মোটামু‌টি কথা বল‌ছে, হা‌সি ঠাট্টা কর‌ছে, চুপ ক‌রে আছে শুধু আয়াত তনয়া। দুজনার চো‌খে হাজা‌রো কথা, কিন্তু মু‌খে বলার মত কোন কথা পা‌চ্ছেনা। ‌কেমন যে‌নো জড়তা কাজ কর‌ছে দুজনার মা‌ঝে। ওদের নীরবতা র‌শ্মি খেয়াল কর‌লো। তাই সবার দৃ‌ষ্টি আকর্ষন করার জন্য আয়াত‌কে বলল,

__স্যার আপ‌নি তো অনেক ভা‌লো ক‌বিতা আবৃ‌ত্তি করতে পা‌রেন। প্লিজ স্যার একটা ক‌বিতা শোনান না!

__নাহ র‌শ্মি ভা‌লো লাগ‌ছেনা। 

__‌প্লিজ স্যার প্লিজ। র‌শ্মির সা‌থে সা‌থে বা‌কি সবাইও অনু‌রোধ কর‌তে লাগ‌লো। আয়াত আর না কর‌তে পার‌লো না। তাই বলল,

__‌কিন্তু এখা‌নে ক‌বিতা শুনা‌নোর মত প‌রি‌বেশ নেই। 

__তানভীর বন্ধু শুভ বলল, ভাইয়া এই রেস্তরায় বাই‌রের বাম পা‌শের জায়গাটাও বেশ সুন্দর। মূলত ওখা‌নে ব‌সে সবাই আড্ডা দেয়। ওখা‌নে চলুন। এখন ওখা‌নে মানু‌ষের চাপও কম।

সবাই মি‌লে রেস্তরায় বাম পা‌শের খোলা জায়গায় গি‌য়ে দাড়া‌লো। উপ‌রের চাঁ‌দের আ‌লো, আর দূর থে‌কে আসা রাস্তার নিয়ন আলো প‌রি‌বেশটাকে বেশ মনমুগ্ধকর ক‌রে ফেল‌ছে। ঘা‌সের উপর বসা যায় কিন্তু রাত বেড়ে যাবার সা‌থে সাথে ঘা‌সে শি‌শির প‌রে ঘাস গু‌লো ভি‌জে জবজ‌বে হ‌য়ে গে‌ছে। এখন ঘা‌সে বসা সম্ভব নয় তাই সবাই দা‌ড়ি‌য়েই কথা বল‌ছে। আয়াত তনয়ার দি‌কে তা‌কি‌য়ে মৃদু হে‌সে, "হুমায়ুন আজাদ" এরএক‌টি ক‌বিতা বলা শুরু কর‌ল,

        ফুলেরা জানতো যদি আমার হৃদয়
              ক্ষতবিক্ষত কতোখানি,
        অঝোরে ঝরতো তাদের চোখের জল
              আমার কষ্ট আপন কষ্ট মানি ।

          নাইটিংগেল আর শ্যামারা জানতো যদি
             আমার কষ্ট কতোখানি-কতোদুর,
            তাহলে তাদের গলায় উঠতো বেজে
             আরো ব হু বেশী আনন্দদায়ক সুর ।

           সোনালী তারারা দেখতো কখনো যদি
               আমার কষ্টের অশ্রুজলের দাগ,
         তাহলে তাদের স্থান থেকে নেমে এসে
           জানাতো আমাকে সান্ত্বনা ও অনুরাগ ।

              তবে তারা কেউ বুঝতে পারেনা তা-
       একজন,শুধু একজন,জানে আমার কষ্ট কতো;
           আমার হৃদয় ছিনিয়ে নিয়েছে যে
             ভাংগার জন্য-বারবার অবিরত ।

সবাই হাত তা‌লি দি‌য়ে আরেকটা ক‌বিতা বল‌তে বলল। আয়াত না কর‌তে পার‌লো না। তনয়ার দি‌কে তা‌কি‌য়ে দে‌খে ওর চোখ দু‌টে‌া ছল ছল কর‌ছে। তনয়া ম‌নে ম‌নে বল‌ছে আয়াত ইচ্ছা ক‌রে এমন ক‌বিতা আবৃ‌ত্তি করছে। তনয়া‌র ম‌নে হ‌চ্ছে আয়াত ইঙ্গিত ক‌রে ওকে ঠে‌সি‌য়ে ঠে‌সি‌য়েই ক‌বিতা বল‌ছে। ম‌নে মনে বল‌ছে কেন এমন ক‌বিতা কেন বলা লাগ‌বে? পৃ‌থিবীতে ক‌বিতার অভাব আছে? আয়াত তনয়ার দি‌কে একনজড় তা‌কি‌য়ে আবার ক‌বিতা বলা শুরু কর‌ল, ক‌বির নামটা ম‌নে নেই ত‌বে ক‌বিতাট‌ার নাম
**তোমার মাঝে কি পেয়েছি**

                    পথ চলতে চলতে
     কি জানি কি কথা ভেবে থমকে দাঁড়িয়ে গেলাম,
                    রাতে ঘুমাতে ঘুমাতে
    কি জানি কি স্বপ্ন দেখে এ বুকে ব্যাথাই পেলাম ।

                    তোমায় ভেবে ভেবে
    মনের অজান্তেই আমার দুচোখে পানি আসে,
                     আমি ভুলে গেলেও
     এ মনটা তোমাকে আজও যে কত ভালবাসে ।

                  ঐ চাঁদ দেখতে গিয়ে
   আমি তোমার ঐ চাঁদ মুখ দেখে ফেলেছিলাম,
                  ফুলের ঐ মধু নিতে
    আমি ভ্রমর হয়ে উড়ে যেতে ডানা মেলেছিলাম ।

                  জীবনটা বয়ে বয়ে
     আজও তো ফিরে যাই তোমার চোখে মুখে বুকে,
               চোখের জলে জলে
  আমি যে নীরবে নিভৃতে কেঁদে মরি গভীর দুখে ।

                    শুধু আমার জন্য
      তোমার ঐ মনের কোথাও একটু জায়গা রেখ,
                   কাছে নাইবা আস
      শুধু ঐ দূর হতে দয়া করে আমাকে একটু দেখ ।

                       আমি কি দেখেছি
     তোমার মধ্যে কি পেয়েছি কখনও ভেবে পাইনা,
                      মনে ও প্রাণে ভাবি
     তোমাকে ছাড়া এ জীবনে আর কিছুই চাইনা ।

ক‌বিতাটা শেষ কর‌তে না কর‌তেই কেউ একজন ঝ‌ড়ের বে‌গে দৌ‌ড়ে আয়া‌তের বু‌কে ঝা‌পি‌য়ে পড়‌লো। আয়াতের বুঝ‌তে কিছুটা সময় লাগ‌লো ওর বু‌কে কে ঠাঁই ক‌রে নি‌য়ে‌ছে। যখন বুঝ‌তে পার‌লো তনয়া! তখন চারপা‌শের তোয়াক্কা না ক‌রেই তনয়া‌কে জ‌ড়ি‌য়ে নি‌লো নি‌জের মা‌ঝে। তনয়া কাঁদছে, একটু ‌জো‌ড়ে জো‌ড়েই কাঁদ‌ছে। ওদের আশে পা‌শের সবাই ওদের অবস্থা দে‌খে হা হ‌য়ে গে‌ছে। কারন এতগু‌লো মানু‌ষের ম‌ধ্যে তনয়া এভা‌বে আয়াত‌কে জ‌ড়িয়ে ধর‌বে তা কেউ কেন, আয়াত নি‌জেও কল্পনাও কর‌তে পা‌রে‌নি। কিন্তু যখন তনয়া ওর বু‌কে এল তখন ভু‌লে গে‌লো ওর চারপা‌শে মানুষ আছে। শুধু তনয়া‌কে অনুভব কর‌তে শুরু কর‌লো।
মেঘ‌া আর র‌শ্মি মুখ টি‌পে মিটমিট হাস‌ছে। তানভী চোখ বড় বড় ক‌রে তা‌কি‌য়ে আছে। কারন তনয়া আয়াত‌কে ভা‌লোবে‌সে ফেল‌ছে সেটা ও জান‌লেও তনয়া আজ এমন কর‌বে তা কল্পনাও কর‌তে পা‌রে‌নি।

 তনয়া ফু‌পিয়ে ফু‌পি‌য়ে কাঁদ‌ছে। আয়াত তনয়ার মাথাটা তু‌লে গা‌লে নি‌জের হাতদুটো দি‌য়ে চো‌খের জলগু‌লো মু‌ছে বলল,

__আই ক্যান্ট লিভ উইথ আউট ইউ। এন্ড আই নো ইউ অল‌সো ক্যান্ট লিভ উইথ আউট মি। এ্যাম আই রাইট?

তনয়া মাথা না‌ড়ি‌য়ে সায় দি‌য়ে বলল,
__হুমম

আয়াত এই প্রথমবার তনয়ার কপা‌লে ভা‌লোবাসার পরশ দিয়ে নি‌জের বু‌কের মা‌ঝে শক্ত ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
__আ‌রেকটা ক‌বিতা শুন‌বে অভিলাষী?

__হুমম। (কান্না‌ভেজা গলায়)

আয়াত তনয়া‌কে আরো শক্ত ক‌রে জড়ি‌য়ে ধ‌রে মৃদু হে‌সে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর "অনন্ত প্রেম" ক‌বিতা‌টি আবৃ‌ত্তি শুরু কর‌ল,

    তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি শত রূপে শতবার
           জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।
        চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয় গাঁথিয়াছে গীতহার–
    কত রূপ ধরে পরেছ গলায়, নিয়েছ সে উপহার
           জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।

   যত শুনি সেই অতীত কাহিনী, প্রাচীন প্রেমের ব্যথা,
            অতি পুরাতন বিরহমিলন কথা,
  অসীম অতীতে চাহিতে চাহিতে দেখা দেয় অবশেষে
  কালের তিমিররজনী ভেদিয়া তোমারি মুরতি এসে
              চিরস্মৃতিময়ী ধ্রুবতারকার বেশে।

  আমরা দুজনে ভাসিয়া এসেছি যুগলপ্রেমের স্রোতে
             অনাদি কালের হৃদয়-উৎস হতে।
আমরা দুজনে করিয়াছি খেলা কোটি প্রেমিকের মাঝে
       বিরহবিধুর নয়নসলিলে, মিলনমধুর লাজে–
               পুরাতন প্রেম নিত্যনূতন সাজে।

    আজি সেই চির-দিবসের প্রেম অবসান লভিয়াছে,
          রাশি রাশি হয়ে তোমার পায়ের কাছে।
   নিখিলের সুখ, নিখিলের দুখ, নিখিল প্রাণের প্রীতি,
একটি প্রেমের মাঝারে মিশেছে সকল প্রেমের স্মৃতি–
             সকল কালের সকল কবির গীতি।

আয়া‌তের হৃদস্পন্দন যে‌নো তনয়ার গা‌লে মাথায় শত শত চু‌মো একে দি‌চ্ছে। আয়াত তনয়ার পুরো পৃ‌থিবীর কোন খেয়াল নেই। 

তানভী এসে আয়াত তনয়া‌কে একে অপ‌রের বুক থে‌কে আলাদা ক‌রে বলল,

—————

        তানভী ওদের দুজন‌কে আলাদা ক‌রে দি‌তেই তনয়ার হুশ ফির‌লো। চার পা‌শে তা‌কি‌য়ে দে‌খে তানভী আর তনয়ার ফ্রেন্ড গু‌লো হা হ‌য়ে ওদের দুজনার দি‌কে তা‌কি‌য়ে আছে। তানভীও চোখ বড় বড় করে তনয়ার দি‌কে তা‌কিয়ে আছে। তনয়ার যেমন ভয় হ‌চ্ছিল তেমন লজ্জা পা‌চ্ছিল। কিন্তু আয়াত তনয়ার হতটা নি‌জের হা‌তের মু‌ঠোয় নি‌য়ে তনয়া‌র দি‌য়ে তা‌কি‌য়ে ওকে ভরসা দি‌তে লাগ‌লো। তানভী গম্ভীর গলায় বলল,

__এসব কী তনয়া?

তনয়া মাথা নিচু ক‌রে আছে। আয়াত তানভী‌কে বলল,
__তানভী আমি বল‌ছি। তানভী সে‌দিন তু‌মি আমায় দু‌টো প্রশ্ন কর‌ছি‌লে!
*আমার প‌রিবার আত্মীয় কি তনয়া‌কে মে‌নে নি‌বে? আর নি‌লেও তারা যে তনয়ার ত্রু‌টি নি‌য়ে ওকে কথা শোনা‌বেনা তার কী গ্যারা‌ন্টি?
*আ‌মি যে সারা জীবন তনয়া‌কে আগ‌লে রাখ‌বো তার কী নিশ্চয়তা?

‌তো তানভী তোমার প্রথম প্র‌শ্নের উত্তর হল,
*হ্যাঁ আমার প‌রিবা‌রে তনয়া‌কে মে‌নে নি‌তে একটু কষ্ট হ‌বে। কিন্তু আমার নি‌জের উপর ভরসা আছে যে, তা‌দের মা‌নি‌য়ে নি‌তে পার‌বো। আর তাছাড়া তনয়ার উপর আমার পূর্ণ ভরসা আছে যে, ও নি‌মি‌ষেই আমার প‌রিবা‌রের মাইন্ড ব্লক ক‌রে দি‌বে।
আর তনয়ার ত্রু‌টি নি‌য়ে আমার আত্মীয় ওকে কটু কথা বল‌বে কিনা তার কোন গ্যারা‌ন্টি দি‌তে পার‌বো না। কারন আমা‌দের চারপা‌শের লোকজন অন্যের সমা‌লোচনা কর‌তে বে‌শি ভা‌লোবা‌সে। শত চেষ্টা ক‌রেও তা‌দের মুখ বন্ধ ক‌রে রাখ‌তে পার‌বেনা। না তু‌মি পা‌রবে আর না আমি। সমা‌লোচক শুধ‌ু সেসব মানু‌ষের সমা‌লোচনা ক‌রেনা যা‌দের ত্রু‌টি আছে বরং সম্পূর্ণ সুস্থ ভা‌লো, সৎ মানু‌ষের সমা‌লোচনাও ক‌রে। সমা‌লোচক‌দের সমা‌লোচনা শুধু তনয়ার জন্য হয়না এটা সবার জন্য হয়।
ত‌বে হ্যাঁ কেউ য‌দি তনয়া‌কে অপমান কর‌তে চায় বা ওকে কটু কথা ব‌লে তার মু‌খের উপর জবাব দিয়ে তার মুখ বন্ধ ক‌রে দেয়ার মত সামার্থ্য আমার আছে। তা‌তে সামান্য পিছপা হ‌বো না। কথা দি‌চ্ছি পার‌তে সা‌ধ্যে কেউ তনয়া‌কে কটু কথা শুনা‌তে পার‌বে না।

আর তোমার দ্বিতীয় প্র‌শ্নের উত্তর।
আয়াত‌কে থা‌মি‌য়ে তানভী বলল,

__‌সেটা আমি পে‌য়ে গে‌ছি!

__‌কিভা‌বে?

__যখন তনয়া এতগু‌লো মানু‌ষের তোয়াক্কা না ক‌রে সর্বসম্মু‌খে আপনা‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধর‌লো তখন। কারন তনয়া যতই চঞ্চল হোক ছে‌লে‌দের ক্ষে‌ত্রে ও খুব ভীত। সে যখন এত গু‌লো মানু‌ষের ম‌ধ্যে আপনার ভা‌লোবাসার তীব্রতার কার‌নে আপনার কা‌ছে আস‌তে পা‌রে তার মা‌নে নিঃস‌ন্দে‌হে আপনার ভা‌লোবাসার গভীরতা অনেক। লাস্ট দেড় মাস যাবত তনয়ার থে‌কে সব শু‌নে ওর ম‌নের অবস্থা আপনার ম‌নের অবস্থা দে‌খে যা বু‌ঝে‌ছি তা‌তে আপনারা কখ‌নো একে অপর‌কে ধোঁকা দি‌বেন না। আর আপ‌নি যে তনয়া‌কে আগ‌লে রাখ‌বেন তা আমি খুব ভা‌লো ক‌রে জা‌নি।

__তার মা‌নে তু‌মি রা‌জি তাই তো?

__তানভী মৃদু হে‌সে বলল, কোন স‌ন্দেহ? 

তনয়া মি‌ষ্টি হা‌সি দি‌য়ে তানভী‌কে জ‌ড়িয়ে ধ‌রে বলল,
__Thanks ভাই। 

__তানভী তনয়ার কপা‌লে চু‌মো খে‌য়ে বলল, পাগলী বোন একটা। ত‌বে আয়াত ভাইয়া আমার বা‌কি দু ভাই‌য়ের কথা আমি জা‌নিনা। তা‌দের কিভা‌বে সামলা‌বেন?

__তা‌দের দুজন‌কে তু‌মি আমার উপর ছে‌ড়ে দাও।

তানভীর বন্ধুরা সবাই হই হই ক‌রে বলল,
__বাহ্ আজ সুন্দর একটা মুহূর্তের সা‌ক্ষী হলাম। এ উপল‌ক্ষে আমা‌দের নতুন দুলাভাই সবাই‌কে মিষ্টি খাওয়া‌বে।

__আয়াত বলল, মাই প্লেজার।

তারপর সবাই মি‌লে খাওয়া দাওয়া ক‌রে, আড্ডা ‌দি‌য়ে বা‌ড়ি গেলো। তানভী এই প্রথমবার তনয়া‌কে আয়াতের সা‌থে যে‌তে দি‌চ্ছে। আজ তানভী এর ম‌নে তনয়া‌কে নি‌য়ে কোন ভী‌তি নেই। অবশ্য তনয়া একা না গা‌ড়ি‌তে সা‌থে র‌শ্মি আর মেঘাও আছে। তানভী ওর বন্ধুদের সা‌থে চ‌লে গে‌লো। আয়াত ড্রাইভ কর‌ছে আর তনয়া ওর পা‌শে বসা। র‌শ্মি আর মেঘা পিছ‌নে ব‌সে গল্প কর‌ছে। আয়াত তনয়া দুজ‌নেই নীরব। মা‌ঝে মা‌ঝে চোখা‌চো‌খি হ‌তেই মৃদু হে‌সে চোখ না‌মি‌য়ে ফে‌লে। মেঘা আর র‌শ্মি বিষয়টা খেয়াল ক‌রে মুখ টি‌পে টি‌পে হাস‌ছে। 

আয়াত গ‌া‌ড়ি চালা‌তে চালা‌তে মা‌ঝে মা‌ঝে নি‌জের হাত দি‌য়ে তনয়ার হাতটা ছুঁ‌য়ে দি‌চ্ছে। তনয়া ক‌য়েবার খেয়াল ক‌রে যেই হাতটা সরা‌তে নি‌বে আয়াত তখন তনয়ার হাতটা নি‌জের হা‌তের মু‌ঠোয় নি‌য়ে নি‌লো। তনয়া ছাড়া‌নোর চেষ্টা ক‌রে পার‌ছেনা। লজ্জামাখা চো‌খে আয়া‌তের দি‌কে তা‌কি‌য়ে আছে। আয়াত তনয়ার হাতটা নি‌জের মু‌খের কা‌ছে নি‌য়ে হা‌তে একটা চু‌মো খে‌লো। আয়াত তনয়া ভু‌লেই গে‌ছি‌লো যে, ওদের গা‌ড়ির পিছ‌নের সি‌টে দুজন লোক আছে। র‌শ্মি আর মেঘা কা‌ঁশি দি‌য়ে বলল, স্যার আমরা কিন্তু এখা‌নেই আছি। আয়াত হাতটা ছে‌ড়ে দি‌য়ে মৃদু হে‌সে গা‌ড়ি চালা‌তে লাগ‌লো। তনয়া লজ্জা পে‌য়ে জানালা দি‌য়ে বাই‌রে তা‌কি‌য়ে রইল।

র‌শ্মি‌দের ফ্ল্যা‌টের সাম‌নে ওদের না‌মি‌য়ে দিতেই র‌শ্মি উপ‌রে উঠে গে‌লো। মেঘা গা‌ড়ি‌তেই ব‌সে রইল। তনয়া একটু এগি‌য়ে যে‌তেই আয়াত ডাক দি‌লো, তনয়া‌ দাড়া‌তেই তনয়ার কা‌ছে এসে, মেঘার চো‌খের আড়া‌লে গি‌য়ে বলল,
__আ‌মি তো তোমা‌কে আমার ম‌নের কথা এখনও কিছু ব‌লি‌নি। ত‌বে আমার কা‌ছে তোমার হদসমার্প‌নের কারন কী? কিভা‌বে আমার হৃদ‌য়ের ডাক শুন‌তে পে‌লে?

__আপ‌নিই তো বলেন অনুভূ‌তি‌কে অনুভব কর‌তে। আপনার হৃদসমার্প‌নের অনুভূ‌তি‌কে অনুভব ক‌রেই তো আমার হৃদয় আপনার হৃদ‌য়ে সমার্পন করলাম। 

আয়াত তনয়ার কপা‌লে ভা‌লোবাসার পরশ দিয়ে বলল, ভিত‌রে যাও। শোন ঠিকভা‌বে ঔষধ খে‌য়ো কেমন।

__তনয়া হুমম ব‌লে আয়াত‌কে বিদায় দি‌য়ে সিড়ি বে‌য়ে উপ‌রে উঠার পর আয়াত চ‌লে গে‌লো। ইশ ওর মন চা‌চ্ছে তনয়া‌কে সবসময় নি‌জের বু‌কে জ‌ড়ি‌য়ে রাখতে। ওকে ছাড়া নিজে‌কে মরুভূ‌মির শুষ্ক বা‌লির মত ম‌নে হয়। কেন কিভা‌বে তনয়া‌কে এত ভা‌লো‌বে‌সে ফেল‌ছে আয়াত নি‌জেও বুঝ‌তে পারছে না।

২১!!

      __আপ‌নি তনয়া‌কে এত ভা‌লোবাস‌তেন?

__আয়াত কিছুক্ষন নীরব থে‌কে বলল, হ্যাঁ। নি‌জের থে‌কেও হাজার গুন বে‌শি। তনয়া বি‌হীন আমার নিঃশ্বাস নি‌তেও কষ্ট হয়।

__ত‌বে তনয়ার মাডার কর‌তে চাওয়ার দা‌য়ে আপ‌নি আজ জে‌লে কেন? কেন তা‌কে খুন কর‌লেন? কী অপরাধ ছি‌লো তার? যা‌কে এত ভা‌লোবাস‌লেন তা‌র সা‌থে এমন কর‌তে কিভা‌বে পার‌লেন?

‌জে‌লের সাম‌নের কয়েদির (সুমন) কথা শু‌নে আয়াত নিথর চো‌খে তার দি‌কে তা‌কি‌য়ে রইল। আয়া‌তের সাম‌নে বসা কয়েদি সুমন হয়ত আয়া‌তের চো‌খের ভাষা বুঝ‌তে পার‌ছে। তাই সুমন আয়াত‌কে বলল,

__খুব বে‌শি ভা‌লোবাস‌তেন তনয়া‌কে?

__বললাম না ওকে ছাড়া নিঃশ্বাস নি‌তে কষ্ট হয়।

__এতক্ষন যে কথাগু‌লো বল‌লেন, তনয়ার সা‌থে দেখা হবার পর মা‌নে, তনয়ার বি‌য়ে থে‌কে পা‌লি‌য়ে আসার পর থে‌কে তনয়া আপনার ভা‌লোবাসা গ্রহন করার পযর্ন্ত (পর্ব ১-১৫) তা কতদিন আগের ঘটনা?

__এক বছর দু‌দিন হ‌য়ে‌ছে। তনয়ার বি‌য়ে থে‌কে পা‌লি‌য়ে আসার পর আমা‌দের পরিচয়, সম্পর্ক সব মি‌লিয়ে আজ এক বছর দু‌দিন হল।

__আচ্ছা তারপর কী হ‌য়ে‌ছি‌ল? মা‌নে আপনা‌দের সম্পর্ক হবার পর? আপনা‌দের কী বি‌য়ে হ‌য়ে‌ছি‌লো? সম্প‌র্ক কেমন চল‌ছি‌লো? সম্প‌র্কের মা‌ঝে কি কোন ফাঁটল ধর‌ছি‌লো? না‌কি তনয়া আপনা‌কে ধোঁকা দি‌ছি‌লো? কী এমন হ‌য়ে‌ছি‌লো যার কার‌নে আপ‌নি তনয়ার হত্যা মামলায় আজ জে‌লে। কী হলো বলুন?
সুমন একসা‌থে অনেকগু‌লো প্রশ্ন ক‌রে বস‌লো। কারন এমন ভা‌লোবাসাময় প্রেম কাহী‌নির এমন প‌রিন‌তি সুমন মে‌নে নি‌তে পার‌ছেনা। আয়া‌তের চো‌খ দেখ‌লে স্পষ্ট বোঝা যায় ও চো‌খে তনয়ার জন্য অপ‌রিসীম ভা‌লোবাসা আছে। যে ভা‌লোবাসা শুধু তনয়া‌কে দি‌তে পা‌রে সুন্দর জীবন, তনয়ার জীবন কে‌ড়ে নি‌তে পা‌রেনা। তাহ‌লে তা‌দের মা‌ঝে এমন কী হল? 

আয়াত তখনও অপলক চো‌খে সুম‌নের দি‌কে তা‌কি‌য়ে আছে। চোখ থে‌কে টুপটাপ ক‌রে ক‌য়েক‌ফোটা জল গ‌ড়ি‌য়ে প‌ড়ে আয়া‌তের হা‌তে থাকা তনয়ার রক্ত মাখা আয়া‌তের শা‌র্টে মি‌লি‌য়ে যা‌চ্ছে। 

চলুন আগের ঘটনায় মা‌নে কল্পনায় ফি‌রে যাই।

আগামী শুক্রবার তনয়া নি‌জের বাসায় উঠ‌বে। বৃহস্প‌তিবার রা‌তে মোটামু‌টি টুকটাক জি‌নিস কি‌নে বাসায় রে‌খে আস‌ছে। যেমন খাঁট, আল‌মিরা, ইত্যা‌দি ইত্যা‌দি। আয়াত র‌শ্মি দুজ‌নেই বৃহ‌স্পতিবার হেল্প কর‌ছে। তানভী সে ডিনা‌রের প‌রের দিন কোম্পা‌নির ট্রে‌নিংএ শহ‌রের বাই‌রে গে‌ছে। আস‌তে আরো সপ্তাহ খা‌নিক লাগবে। আর র‌শ্মি‌কে অফি‌সের প্র‌জেক্ট সাব‌মিট কর‌তে শুক্রবারও যাওয়া লাগ‌ছে। তনয়া টেনশ‌নে প‌ড়ে গে‌লো শুক্রবার বাসার এত জি‌নিস একা কিভা‌বে গোছা‌বে!

আয়াত এসে তনয়ার সব মুশ‌কিল আসান ক‌রে দিল। বলল ও হেল্প কর‌বে। তনয়া মুচ‌কি হে‌সে বলল, ঠিক আছে।

২২!!

     বা‌ড়িওয়ালার সা‌থে আয়াত তনয়া দেখা করল। আয়া‌তের প‌রিচয় জান‌তে চাই‌লে আয়াত তাকে বলল, 
__তনয়ার ফিও‌ন্সি। খুব শিঘ্রই বি‌য়ে কর‌বে ওরা।

রু‌মে ঢু‌কে সব কিছু গোছা‌তে লাগ‌লো দুজন। কতক্ষন কাজ করার পর তনয়া রান্না ঘ‌রে ঢুক‌লো চা বানা‌তে। আয়াত এসে তনয়া‌কে পিছন থে‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধরল। প্রথমবার আয়াত তনয়া‌কে এমন ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে ধর‌ছে। তনয়ার নিঃশ্বাস যে‌নো বন্ধ হ‌য়ে যা‌চ্ছি‌লো। একটা অপা‌র্থিব সু‌খ তনয়ার পু‌রোটা জু‌ড়ে বিচরন কর‌তে ছি‌লো। এতটা সুখ তনয়া সহ্য কর‌তে পার‌ছেনা। তাই আয়া‌তের হাত ছা‌ড়ি‌য়ে ওর হা‌তে চা‌য়ের মগটা দি‌য়ে লজ্জা মাখা একটা হা‌সি দিয়ে আয়া‌তের সাম‌নে থে‌কে চ‌লে গে‌লো। আয়াত তনয়ার লজ্জার কারনটা বুঝ‌তে পে‌রে মৃদু হে‌সে চা‌য়ে চুমুক দি‌লো।

দুজন মি‌লে দুপু‌রের ম‌ধ্যে প্রায় সব কাজ গু‌ছি‌য়ে ফেলল। এর মা‌ঝে আয়াত ফোন ক‌রে খাবার অর্ডার ক‌রে দিলো। কারন রান্না করার মত অবস্থা এখন নেই। তনয়া আয়াত‌কে ডাক দিয়ে বলল,

__আয়াত ওয়াল‌মেটটা একটু টা‌নি‌য়ে দিন‌ তো। আমার হাত পা‌চ্ছেনা।

আয়াত দুষ্ট‌মি ক‌রে পিছন থে‌কে তনয়ার কোমর জ‌ড়ি‌‌য়ে ধ‌রে উপ‌রে তু‌লে বলল, 
__এখন টা‌নি‌য়ে নাও। তনয়া ওয়াল‌মেটটা টা‌নি‌য়ে বলল, এখন নি‌চে নামান। আয়াত তনয়া‌কে নি‌চে না না‌মি‌য়ে উল্টো পাজ‌কোলা ক‌রে নি‌লো। তারপর তনয়া‌কে নি‌য়ে পু‌রো ঘ‌রে হাঁট‌তে লাগ‌লো। তনয়া আয়া‌তের গলা আল‌তো ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে ওর চো‌খের দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল,

__র‌শ্মি‌কে আপ‌নি ইচ্ছা ক‌রে আজ অফি‌সের কা‌জে লা‌গি‌য়ে‌ছেন তাইনা?

__আয়াত মৃদু হে‌সে বলল, নয়ত আমার অভিলা‌ষীর সা‌থে সময় কিভা‌বে কাটাতাম?

__ওহ তা অভিলাষীর সাথে সময় কাটা‌তে কেমন লাগ‌ছে?

আয়াত তনয়া না‌কে নাক ঘ‌ষে ***কবি অধ্যাপক শফিক তপন*** এর
***তোমার প্রেমে পড়েছি*** ক‌বতিা‌টি বলা শুরু কর‌লো,

  তোমার জন্য এই বুকে বেঁধেছি ছোট্ট একটি বাসা,
   মনের মাঝে সারাক্ষণ শুধু তোমায় দেখার আশা।
   তুমি যে শুধু আমারই হবে এইতো মোর প্রত্যাশা,
    মোর সব অনুভবেই তুমি এইতো মোর ভালবাসা।
   আমি তোমাকে শুধু ভাবি শয়নে স্বপনে জাগরণে,
    তোমার ঐ মুখটি ভেসে উঠে এই মনে ক্ষণে ক্ষণে।
    এজীবনে আমি কিছুই চাইনা শুধু তোমাকেই চাই,
    ভালবেসেই যাব জানিনা তোমায় পাই কিনা পাই।
   শুধু তোমার জন্য মন কাঁদে ওগো কাঁদে মোর প্রাণ।
   শুধু তোমার জন্য মন করে ছটফট করে আনচান।
   শুধু একটি অনুরোধ আমাকে কভু যেয়োনা ভুলে,
   শুধু মোরই জন্য তোমার মনের দুয়ার রেখো খুলে।
   সারাক্ষণই আমি ঘুরে বেড়াই তোমার মনের প্রান্তে,
   তোমাকে ভাললেগে গেছে মোর মনেরই অজান্তে।
   তোমায় ভালবেসে সত্যি আজ আমি যেগো মরেছি,
   মন প্রাণ সপে দিয়ে আমি তোমারই প্রেমে পড়েছি।

ক‌বিতা‌টি শেষ হ‌তেই তনয়া আয়াতের কো‌লে থাকা অবস্থায়ই ওকে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল, 
__আপ‌নি কি আমায় ক‌বিতা দি‌য়ে পাগল কর‌বেন?

__নাহ! অভিলাষীর প্রেম প্রন‌য়ে পাগল হ‌য়ে অভিলাষী‌কে মাতাল কর‌বো। 

__মাতাল তো হ‌য়েই আছি। আর কত হ‌বো?

__যতটা মাতাল হ‌লে একে আপ‌রের মা‌ঝে সমা‌হিত হওয়া যায় ততটা হব।

২৩!!

      আয়াত সুম‌নের সাম‌নে ব‌সে বিড়‌বিড় ক‌রে ক‌বিতা‌টি বল‌ছে আর তনয়ার র‌ক্তে‌ভেজা শার্টটা‌কে বু‌কে আক‌ড়ে ধ‌রে চো‌খের জল ঝড়া‌চ্ছে!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন