বসন্তের ফুল - পর্ব ১০ - তারিন জান্নাত - ধারাবাহিক গল্প


১৯!!

ক্রোধের গতি-বেগ এবার বেশ প্রকড়। তীব্র ঘুমে বিভোর প্রেমার।কিন্তু নিজের ক্রোধ ঘুমের মধ্যেও উপলব্ধি করতে সক্ষম সে। রীতিমতো যুদ্ধ শুরু করে দেয় ঘুমের সাথে। কারন একটায়।তার চুল কেউ টানছে।কে সে একবার আঁখি মেলে দেখবেই।

সফল হয় অবশেষে। ঘুম ভাঙতেই চোখ মেলে তাকায়।তখনো চুলে টান অনুভব করছে।হাতিয়ে চুলে হাত রাখতেই একটা কিছুর সাথে স্পর্শিত হয় প্রেমার হাত।এটা যে হাত সেটা মস্তিষ্ক সাথে সাথে বুঝিয়ে দেয় তাকে। প্রেমার হাতের স্পর্শ পেয়ে অপর হাতটি দ্রুত গতিতে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা চালাতে গিয়ে ব্যার্থ হয়।কারন প্রেমার তার নখের সহায়তায় সেই হাতটি খামছে ধরে।

বলিষ্ট হাতে প্রেমার হাত সরিয়ে দ্রুত পায়ে রুম প্রস্থান করে অভ্র। শ্বাস ছাড়ে বেলকনি টপকে নিচে নামতেই। আরেকটুর জন্য বাঁচা গেলো।

"এভাবে আর কতোদিন। তোমার সম্মুখীন তো আমাকে হতে হবেই। ব্যাপার না।তখন তোমাকে আমি সামলে নিবো। অবশ্যই" (অভ্র)

কথাগুলো একদমে বলে ফেলে অভ্র।কিন্তু মনে মনে।লাল ঠোঁট জোড়া হালকা বাঁকিয়ে হাসে। যার অর্থ আমি  প্রস্তুত।প্রেমার মুখোমুখি হতে।নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে  পড়ে অভ্র।

একজোড়া চোখ একদলা প্রশ্ন মনে নিয়ে এতক্ষণ অভ্রের দিকে তাকিয়ে ছিলো।অভ্র যাওয়ার পর একবার বেলকনির দিকে তাকায়। কে থাকে সেই রুমে? কাল অবদি অপেক্ষা না করলে জানা যাবে না।তাই মনের মধ্যে সব গেঁথে রেখে সে ও চলে যায়।ঘুমোতে।

প্রেমা চেয়েও নির্ঘুম থাকতে পারেনি। ভাবনার কূল কিনারা না খুঁজে ঘুমের রাজ্যে ডুব দেয় আবারও।

অভ্রের চোখের ঘুম সহজে নামে না।মধ্যরাত অবদি বিনা কারনে জেগে থাকা তার অভ্যাস।আজ ও তার ব্যাতিক্রম ঘটেনি। মনে মনে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। 

অভ্র প্রেমার হাসিমাখা একটা ছবির দিকে তাকিয়ে আছে। আচমকা একটা ইচ্ছে জাগে মনের মধ্যে। চোখ আটকায় প্রেমার সরু হালকা উঁচু নাকের দিকে।

" কি কিউট নাকটা?? (বলেই হালকা হাসে)

নিজের ইচ্ছেটা জাহির করেই ফেলে। নিজের নাকটা প্রেমার ছবির নাকের সাথে আলতো করে স্পর্শ করে। এটা যদি বাস্তবে হতো।তাহলে প্রেমার রিয়েকশন টা কি হতো সেটাই অভ্র কল্পনায় দেখে নিচ্ছে।

নিজের কান্ডে নিজেই হাসছে অভ্র। কবে তারা একান্তে থাকবে।নিজের করে পাবে। ছোট্ট একটা ঘরে সংসার পাতাবে। আদরে-ছাদরে জড়াবে একে অপরে। সেই দিনগুলো কতো সুন্দর এবং পরিপূর্ণ হবে।এসব ভাবনার মধ্যে অভ্রের শরীরে শীতল অনুভূতি খেল যায়। কল্পনাতে এতো সুখ। তারা যখন একে-অপরের হয়ে যাবে সম্পূর্ণ রুপে। তখন তো সুখের সাগরে তলিয়ে যাবে দু'জনে।

" ভালোবাসা চায় না।  শুধু পাশে চায়।কাছে চায়। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা অবদি।ভালোবাসা নামক শব্দটা আসতেই দিবো না আমাদের মাঝে। শুধু থাকবে আসক্তি। পাশে পাওয়ার প্রবল আকাঙ্খা। (অভ্র)

হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আয়েশে চোখে বুজে ফেলে অভ্র।ঠোঁটের কোণায় তৃপ্তিদায়ক হাসি।হাতে নখের আঘাতে ছিড়ে যাওয়া জায়গার ব্যাথার খেয়াল যেনো নেই তার।

 ||

মানুষের হৈচৈ এ ঘুম ভাঙে প্রেমার। ঘুমের রেশটা কাটিয়ে তুলতে পারছে না। তাই আবারও চোখ বন্ধ করে ফেলে। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ রেখে আবারও খুলে।মন মেজাজ স্বাভাবিক।রাতের কথা কিচ্ছুটি মনে নেই।এমনই হয় প্রেমার। ঘুমের ঘোরে কারো মার খেলেও সে সকাল অবদি তা মনে রাখতে পারে না। ফোনটা হাতে নিয়ে সময় দেখে নেয়।চমকে লাফ দিয়ে শুয়া থেকে উঠে বাসে যায়।সময় বেলা বারোটা বাজে। কেউ ডাকতেও আসেনি।আজব!

ওয়াসরুমে যাওয়ার আগে চিরুনিটা খুঁজে নেয়।চুল আঁচড়ানোর জন্য। এটা রোজকার অভ্যাস।মুখ ধুয়ার আগে চুল আঁচড়াবে। জানালা খুলে বিছানায় বসে চিরুনি নিয়ে। চুল হাতে নিয়ে সামনে আনতেই সচসিকত হয়। রাতে শুয়ার আগে চুল মেলে দিয়েছিলো স্পষ্ট মনে আছে।তাহলে বিনি করে দিলো কে?

আবার খেয়াল করে লম্বা চুলের ফিতার সাথে ছোট্ট একটা কাপড়ের ব্যাগ ঝুলানো ।এটা ব্যাগ নাকি চুলের ফিতার স্টাইল তা নিয়ে সন্দিহান প্রেমা। কী আজব কারবার। 

ফিতাটা খুলার সময় ঝুমঝুম শব্দ দিচ্ছিলো।ব্যাস্ত হাতে ফিতা খুলার চেষ্টায় লেগে পড়ে।ব্যাগটা খুলতেই আরো দ্বিগুন বিস্ফুরিত হয়। কি হচ্ছে এসব তার সাথে? এবারতো নিজেকে পাগল পাগল লাগছিলো প্রেমার।

এসব সমাধান করার মতো মেজাজ নেই প্রেমার।দ্রুত ফ্রেস হয়ে ছুট লাগায় অভ্রের কাছে ওই সব সমাধান দিবে।

সবখানে অভ্রকে খুঁজে না পেয়ে এবার ছাদের দিকে যায়। এ ছেলেটা সবসময় ছাদে কি করে ভেবে পায় না প্রেমা।  ঘন পায়ে হেঁটে অভ্রের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। প্রেমা আসতেই অভ্র প্রেমার দিকে ফিরে তাকায়।কিছু বলতে যাবে, তার আগেই,

প্রেমা ছেনছেন গলায় বলে উঠে,

কোন হারামজাদা,আমার সাথে মশকারি 
করছে আল্লায় জানে। (চোখ মুখ খিঁচিয়ে বলে)

প্রেমার কথায় অভ্রের কাশি উঠে যায়। বিরতিহীন ভাবে কাশতে লাগে।এক মিনিট পর থেমে বলে,

"ছিঃ প্রেমা! এভাবে গালি দিচ্ছো কেন?(অভ্র)

"গালি দিবো না তো সালাম দিবো।(রেগে)

"এসব শিখলেন কিভাবে ফাল্তু ভাষা।(হালকা রেগে)

" তুমি চুপ করবা। ধ্যাত,
বলেই চলে যেতে নিলে অভ্র ডাক দেয়।

" আচ্ছা বলো কি হয়েছে।হাইপার হচ্ছো কেন?(অভ্র)
অভ্রের কথায় প্রেমা একটু শান্ত হয়।রাগের মাথায় আবুল তাবুল বলে ফেলছিলো।যা এখন বুঝতে পারছে।

" তোমাকে বলছিলাম না? কাল একটা ভুত আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলো।  সত্যিই ভুত আছে।আমি রাতে শুয়ার আগে চুল মেলে দিয়েছিলাম।ঘুম থেকে উঠে দেখি চুলে বিনি করা। শুধু তাই নয়। চুলের ফিতার সাথে নুপুর ও একজোড়া। এই দেখো।(নুপুর এগিয়ে দিয়ে)

প্রেমার কথায় একবার প্রেমার দিকে একবার নুপুরের দিকে তাকায়। আচমকা অভ্র হাসতে শুরু করে দেয়।হাসার মাঝে একটু থেমে তারপর রসিকতার স্বরে গেয়ে উঠে,

গরম লাগে আমার দুপুরে,
শিহরিত তোমার নুপুরে,

প্রেমার দিকে তাকিয়ে দেখে প্রেমা চোখ মুখ খিঁচে ওর দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। 

" সরি। আসলে একটু বেশি হয়েছে তাই না? বাদ দাও এখন বলো এগুলা কে দিয়েছে??ভুত??(অভ্র)

"জানি না, (ঠোঁট বাঁকিয়ে) 

" কি জানো,

"কাল ওই আইডি থেকে আমার আরো একটা ছবি আসছে।বুঝতে পারছি না কে এসব করছে।সামনে আসে না কেন?? 

" সামনে আসলে কী করবে??(অভ্র)

"  গিলে খেয়ে ফেলবো,

অভ্র মনে মনে কিছু একটা ভাবে।এরপর বলে,
" আমি যদি তোমার সামনে এসে বলি। যে এতোদিন ধরে তোমাকে ফুল দেওয়া,ফলো করা, ছবি দেওয়া, জড়িয়ে ধরা,এবং নুপুর দেওয়া, সব আমি করেছি তাহলে কী করবে??

" ধুর!  তুমি কেন এসব করতে যাবে? (প্রেমা)

" যদি করে থাকি,

" ইহা একটি অবিশ্বাস্য কথা। 

" বিশ্বাস করতে পারো।

"উহু! বিশ্বাস করার প্রশ্নই আসে না।কারন তুমি এসব করোনি।'পাগল'।তাই আমার সাথে মজা করে আমার মনোযোগ ঘুরানোট চেষ্টা এখন বন্ধ করো।(পেমা)

" হু "(ছোট করে শ্বাস ফেলে)

" আচ্ছা আমি যায়।পরে আলোচনা করবো।ক্ষৃদা পেয়েছে খুব।

"নুপুর?? কী করবে??

" রেখে দিবো। কে না কে দিয়েছে?? (প্রেমা)

" নুপুরগুলা পায়ে পড়তে পারো।ভালো দেখাবে।

" দরকার নেই,

" আমি কিন্তু, তোমার বসন্ত পথিককে খুঁজে দিতে পারবো।যদি নুপুর পায়ে পড়ো তাহলে।(একটু থেমে কথাটা বলল)

অভ্রের কথায় চোখ ছোটছোট করে তাকায়।

" তোমার এতো মাথা ঘামানি কেন??

" কেন আর,নুপুরগুলোর জন্য মায়া হচ্ছে,একটা গার্লফ্রন্ড থাকতো তাকে দিয়ে দিতাম।এককাজ করো? আমাকে দিয়ে দাও, আমি একটা গার্লফ্রেন্ড খুঁজে তাকে পড়িয়ে দিবো।কি বলো??

অভ্রের কথায় প্রেমা কিছু একটা ভাবে, তারপর নুপুর পায়ে পড়তে পড়তে বলতে লাগে,

"দরকার নেই,আমাকে দিয়েছে আমিই পড়বো,(প্রেমা)

কথাটা বলেই চলে যায়।
তারপর অভ্র হাত দিয়ে নিজের চুল ঝাঁকানি দিয়ে শব্দহীন একটা হাসি দেয়।

" বলেই তো দিলাম,বিশ্বাস করলে না। এতো বিশ্বাস। (অভ্র)

কথাটা বলে আবারও চুল ঝাঁকানি দেয়।

২০!!

আকাশে মেঘ ছেঁয়ে আছে।কিন্তু বৃষ্টি পড়ার কোনো লক্ষণ দেখা দিচ্ছে না। বাতাসের কোনো আনাগুনা নেই বরং অতিরিক্ত মাত্রায় গরম পড়ছে।  অভ্রের শার্টটা ভিজে শরীরের সাথে ল্যাপ্টে আছে। গরম সহ্য করতে বেশ সক্ষম অভ্র।

প্রেমার যাওয়ার পর পর আরিয়ান আসে। চোখ মুখের ভাবভঙ্গি একদম আলাদা দেখাচ্ছে। সব জানতে পেরেছে সে এখন।আরিয়ানকে দেখতেই অভ্র শার্টের হাতা ভাঁজ করতে করতে অন্যদিকে ফিরে যায়। বুকের উপরে শার্টের দু'টো বোতাম খুলে দেয়। যাতে একটু হওয়া ঢুকতে পারে।

আরিয়ান অভ্রের পাশে এসে দাঁড়ায়। অভ্রের সেদিকে কোনো হেলদেল নেই।আরিয়ানকে দেখলেই ছোটবেলার একটা কথা মনে পড়ে যায় ভীষণ। এজন্যই অভ্র বরাবরেই আরিয়ানের প্রতি বিরক্ত। চোখ ভিজে আসছে অভ্রের। কোনো রকম বাইরে গড়িয়ে পড়ার আগেই  আটকায়। 

" তোর থেকে আমি এটা কোনোদিনও আশা করিনি অভ্র,শেষমেশ তুই এমনটা করলি? (আরিয়ান)

আরিয়ান কথাটা অভ্রের দিকে তাকিয়ে বললেও, অভ্রের  দৃষ্টি সামনের দিকে। 

"নিরুত্তর অভ্র,

অভ্রের নিশ্চুপতা দেখে আরিয়ান বলে উঠে,
" তোর সাথে কথা বলছি আমি,উত্তর দিচ্ছিস না কেন?

"কিসের উত্তর,(অভ্র)

" কাল তোকে প্রেমার রুম থেকে বের হতে দেখেছিলাম,মাঝরাতে একটা মেয়ের রুমে প্রবেশ করাটা কী আদৌ ভালো কাজ?? (আরিয়ান)

"  আমি কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নয়।(অভ্র)

অভ্রের ত্যাঁড়া উত্তরে আরিয়ানের ক্ষ্রিপ্তগতিতে রাগ উঠে যায়," আমি কিন্তু সবাইকে বলে দিবো? তখন কিন্তু ভীষণ পস্তাবি তুই,ভালোই ভালোই আগে থেকে সরে যা,নিজের সীমান্তের মধ্যে থাক। (আরিয়ান)

বিরক্তির স্বরে বলে উঠে,
" যেহেতু সীমান্ত আমার, লঙ্ঘন করার অধিকারও আমার,বাইরের মানুষের কথায় আমি আমার লক্ষ্য থেকে নড়বো না, রইলো কথা সবাইকে বলার; তো আমি বলবো এই কাজটা তুমিই করে দাও আমার হয়ে,(অভ্র)

মিনতির স্বরে আরিয়ান বলে উঠে,
"দেখ ভাই এখনো কিছুর শুরু হইনি,তোর মনের মধ্যেও যদি প্রেমাকে নিয়ে কোনো অনুভূতি থাকে,তাহলে প্লিজ ভাই মুছে ফেল, একটা কথা ভাব প্রেমা বয়সের তোর বড়, এটা কেমন যেনো দেখায় তাই না, আমি জানি এটা তোর ক্ষণিকের মোহ মাত্র, কেটে যাবে এটা আমার বিশ্বাস,তোর জন্য আমি আরো অনেক সুন্দরী মেয়ে খুঁজে আনবো,দেখিস!(আরিয়ান)

অভ্র আরিয়ানের কথায় মৃদু হাসে, আরিয়ানকে এভাবে কথা বলতে দেখে অভ্রের বড়সড় হাসি দিতে মন চাইছিলো।কিন্তু দেয়নি,এটা বেমানান এ মুহূর্তে। 

" বড় ভাই হিসেবে আমাকে উপদেশ দিয়েছো,তার জন্য  ধন্যবাদ। এখন ছোট ভাই হিসেবে আমি একটা উপদেশ দেই, সুন্দরী মেয়ে খুঁজে তুমি নিজে বিয়ে করে নাও, কারন প্রেমাকে আমি ছাড়ছি না,(অভ্র)

"সবই তোর রুচি। নাহলে বয়সে বড় কেউ চুজ করে,"

(আরিয়ান অভ্রকে ফোঁড়ন কেটে কথাটা বলে যাতে অভ্র রেগে যায়)

"জানোই তো আমি অন্যরকম! কেনো যে আসো আমার সাথে কথা বলতে, এমনিতেই তোমার সাথে আমি কথা বলি না প্রয়োজন ছাড়া।তার উপর আজ এতো কথা বললাম।ফুরিয়ে গেছে কথা,ইচ্ছুক নই তোমার সাথে কথা বলতে,
আরেকটা কথা, 
হেরে যাবে তুমি,যেমনটা ছোটবেলা থেকে হেরে আসছো।(অভ্র)

কথাগুলো বলে অভ্র নেমে যায়।নামতে নামতে ভাবে কাল রাতে আরিয়ানকে দাঁড়িয়ে থাকতে সে দেখেছিলো।আর আজ ওকে এইসব ব্যাপারে প্রশ্ন করবে জানতই, পরিবারে জানবে এসব নিয়ে অভ্রের ভয় নেই, 

অভ্রের কথাগুলো যনো আরিয়ানের শরীরে ফোসকা পড়ে জ্বলে উঠে,হাত মুঠো করে নেয়।এখন সে একটা বিষয় আন্দাজ করতে পারে,সেদিনের ছবিগুলো অভ্রই তুলেছে,কারন অভ্রের হুটহাট ছবির তুলার অভ্যাস আছে।
_________

কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে হবে। দু'টোর দিকে বরযাত্রা শুরু হবে। সবাই একসাথেই রওনা দিবে। তাই প্রয়োজনীয় সব ঠিকঠাক করে নেয়। 

প্রেমা নাস্তা করে রুমে এসে প্রিয়া আর আদ্রের সাথে গল্প করছিলো এবং মোবাইল টিপছিলো। তারা সিদ্ধান্ত নেয় তিনজনে সাদা রঙের জামা পরিধান করবে। 

"প্রেমাপু?? (আদ্র)

" হুম,বলো।( মোবাইলের দিকে তাকিয়ে) 

"আমি আর প্রিয়া একটু বাইরে যায়,হাঁটবো শুধু,

আদ্রের হঠাৎ অনুমতিতে প্রেমা ভ্রু কুঁচকে তাকায়।

" আসলে,তুমি যদি আবার খুঁজো,তাই জিজ্ঞেস করছি।

"আচ্ছা ঠিক আছে যাও,(মৃদু হেসে)

" ফুফি,আমি যাবো না,এ ছেলেটা পাগল,(প্রিয়া)

"আরে প্রিয়ু তোমার আংকেল হয়,এভাবে বলতে নেই,যাও কিছুক্ষণ পর আমরা রেডি হবো,(প্রেমা)

প্রেমার অনুমতি পেয়ে আদ্র প্রিয়াকে যেতে ইশারা করলেই,প্রিয়া প্রথমে মাথা নেড়ে ন জানায়,পরে আদ্র চকলেট দেখালে সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যায় যাওয়ার জন্য,

রুম থেকে বের হতেই আদ্র প্রিয়ার হাত ধরে হাঁটতে লাগে, কিছুদূর এগিয়ে যেতেই দেখে অভ্র ওদের দিকে আসছে,একসময় তাদের সামনে চলে আসে।আদ্র ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, অভ্র তাদের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদ্র বলে উঠে,
" এই প্রিয়া,বাইরে বাইরে ঘুরছো কেন?? যাও গিয়ে রেডি হও, বিয়েতে যাওয়ার জন্য, সবাই এখনি বের হবে,
দেখেছো ভাইয়া, এখানে ঘুরছে,যদি হারিয়ে যায়,তাই আমি হাত ধরেছিলাম। (আদ্র নরম গলায় বলে উঠে)

আদ্রের কথায় অভ্র ঠোঁট চেপে হাসি আটকায়।ভাই তার বয়সের আগে পেঁকে গেছে। বুঝাই যাচ্ছে।

আদ্রের কথায় প্রিয়া চলে যায় চুপচাপ।আদ্র চলে যেতে চাইলে অভ্র হাত ধরে আটকায়। একটু ঝুঁকে ভাইয়ের গালে একটা চুমু খায়।তারপর জড়িয়ে ধরে।  এই একজনই আছে তার আপন বলতে, নিজের শরীরের একটা অংশ ও বলা যায়।
______

প্রেমা সাদা একটা গাউন, প্রিয়া সাদা ফ্রক, আর আদ্র একটা সাদা শার্ট,এবং কালো পেন্ট পরে। তিনজনে রেডি হয়ে কয়েকটা ছবি তুলে নেয়।

রুম থেকে বের হয়ে তিনজনে গাড়ির কাছে চলে যায়।অভ্র আগে থেকে রেডি হয়ে গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো। অভ্রকে দেখেই প্রেমা থেমে যায়। সাদা শার্ট পড়েছে সেও। খুব ফ্রেস দেখাচ্ছিলো অভ্রকে। যেনো ছুঁয়ে দিলেই ময়লা লেগে যাবে। প্রেমার মনে সেই আবারও উদ্ভট চিন্তা এসে উঁকি মারে।মাথা ঝাঁকিয়ে এসব ভাবনা মাথা থেকে ফেলে দেয়।

 অভ্র প্রেমাকে দেখতেই একটা হাসি দেয়। অভ্রের হাসি দেখেই প্রেমা আনমনে বিড়বিড় করে বলে উঠে..

"লাগাইছে একগাদা লিপস্টিক। আমারটা যে কই হারালো।নাহলে আমিও এভাবে লিপস্টিক দিয়ে বসে থাকতাম।(প্রেমা)

" কিছু বলেছো?? (অভ্র)

"না,  কিছু বলিনি, (থমথম গলায় উত্তর দেয় প্রেমা)

অভ্র হাসে।কারন প্রেমার বিড়বিড়িয়ে কথা বলা সে শুনতে পেয়েছে।যে জোরে বলেছে কথাটা শুনতে পাওয়া স্বাভাবিক।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন