উপল নূড়ি - পর্ব ০১ - সুলতানা পারভীন - ধারাবাহিক গল্প


০১!!

মেয়েটার কাঁধে হাত রেখে আলতো করে জড়িয়ে ধরে আছে ছেলেটা। ওরা দুজনে এখন দাঁড়িয়ে আছে দোতলা একটা ডুপ্লেক্স বাড়ির ফিতে বাঁধা গেইটের সামনে। ছেলেটা হাত বাড়িয়ে মেয়েটার দিকে কেঁচি বাড়িয়ে দিয়েছে অনেকক্ষণ হলো। মেয়েটা হাতটা বাড়িয়ে কেঁচি দিয়ে টুকটুকে লাল ফিতেটা কাটলেই ওরা ওদের নতুন বাড়িটায় প্রথমবারের মতো একসাথে পা ফেলবে। কিন্তু মেয়েটার কোন হেলদুলই নেই। ছেলেটা মুখ ফিরিয়ে মেয়েটার দিকে তাকাতেই দেখলো তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝড়ছে। ছেলেটা তাড়াতাড়ি কেঁচিটা পকেটে রেখে দু হাতে মেয়েটার মুখটা তুলে ধরলো। 

-তানু? কাঁদছো কেন এভাবে?

-আম সরি জীবন--। আজ আমার জন্যই তুমি-----।

-শশশশশশ। চুপ। অন্তত আজকের দিনটা এভাবে মাটি করো না প্লিজ তানিশা? 

-কিন্তু-----। 

-ম্যাডাম। আর কিছু বলে আমাকে এমন কিছু করতে বাধ্য করবেন না যার কারণে নিজেই লজ্জায় পড়েন---। 

-তুমি সবসময় এমন করো কেন?

-আমি এমনই--। তুমি কান্না থামাও এখন--। নইলে---।

-অসভ্য একটা---।

-জি ম্যাডাম--। জানি আমি। এখন ফিতে কেটে বাড়িতে চলুন--। অসভ্য নাকি অন্যকিছু সেটা পরে দেখাচ্ছি--।

-ধ্যাত----।

জীবন আবার কেঁচি বাড়িয়ে দিলে এবার তানিশাও আলতো করে সেটা ধরলো। তারপর দুজনে মিলে ফিতে কেটে নিজেদের স্বপ্নের জগতে প্রথমবারের মতো পা রাখলো। গেইটটা খুলে পা রাখতেই বাগানের অংশটায় এলো ওরা। বাগানটা এখনো খালি যদিও। ফুলের চারা লাগানো, পরিচর্যা এসব করলে হয়তো কখনো ওদের স্বপ্নের সেই গোছানো বিকেলের আড্ডা দেয়ার মতো হয়ে উঠবে। বাগানটা পেরিয়েই বাড়ির সদর দরজায় এসে দাঁড়ালো। তানিশা দরজার তালাটা খুলে হালকা করে ধাক্কা দিতেই দরজাটা খুলে গেল। আর দরজা খোলার সাথে সাথেই জীবন তানিশাকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিলো। তানিশা হেসে জীবনের গলা জড়িয়ে ধরলো। জীবন একবার হেসে তানিশার দিকে তাকিয়েই বাড়ির ভিতরে ঢুকলো। তারপর সিঁড়ি বেয়ে সোজা বেডরুমে নিয়ে তানিশাকে নিয়েই বিছানায় বসে পড়লো। আলতো করে তানিশার গলায় ঠোঁট ছুঁইয়ে দুষ্টুমিতে মাতলো জীবন।

-জীবন? তোমার কি দুষ্টুমি করা ছাড়া আর কোন কাজ নেই?

-আর কি কাজ বলো বউকে আদর করা ছাড়া? 

-কাজ না থাকলে আমাকে হেল্প করো জিনিসপত্র আনপ্যাক করতে--। দুষ্টুমি করবা না একদম--।

-হুম--। করবো তো। আগে তো মন ভরে আদর করি---।

-ফাজিল ছেলে--। এখানে বসে থাকলে আর আজকে আনপ্যাক করা হবে না। সরো---।

-উহু----।

-জীবন?

-আচ্ছা গো বাবা! সরছি--। চলো আনপ্যাক করি আগে--। তারপর তোমাকে দেখে নিচ্ছি আমি---।

-কথাটা বোধ হয় তোমাকে আমার বলা উচিত---।

-আরে নাহ--। তুমি তো চাইলে আমাকে এখনই দেখে নিতে পারো--। আমি কি তোমার মতো রোমান্সের সময় বাগড়া দিই--?

-কি বললা তুমি?

-যা তুমি শুনলে তাই বললাম বউটা--।

-উফফফ। অসহ্য----।

-অসহ্য না তো বউ। হেব্বি মজা। এই বাড়িটায় তুমি আর আমি ছাড়া কেউ নেই। সময় নিয়ে রোমান্স করা যাবে--। কেউ ডিস্টার্ব করবে না। 

------------------------------

-মন খারাপ করো না তানু--। বাবা নিজের ভুলটা বুঝতে পারলে দেখবে ঠিক একদিন নিজেই আমাদেরকে নিতে আসবে---।

-কিন্তু ভুলটা তো আমারই ছিল--। বিয়ের পর নিজের জমা টাকায় একটা মেয়ের যে বাড়ির স্বপ্ন পূরণ করতে নেই সেটা আমার জানা উচিত ছিল--। তুমি বিশ্বাস করো আমি তোমাকে নিয়ে আলাদা থাকার জন্য বাড়িটা কিনি নি---। আমি জাস্ট চেয়েছিলাম- কাজের ব্যস্ততার পর আমরা সবাই মিলে ছুটির দিনগুলো এখানে কাটাবো--। 

-আমি জানি তো পাগলিটা---।

-বিয়ের তিন মাসের মাথায় পরিবার থেকে এই বাড়ির কারণে আলাদা হতে হবে জানলে আমি কখনো---।

-শশশশশ---। বাদ দাও না এসব। বাবা এমনিতেই খেপে ছিল। তাই আর কিছু না ভেবেই রিএ্যাক্ট করে ফেলেছে--। দেখবে মা ঠিক বাবাকে বুঝিয়ে নিয়ে আসবে কয়েকদিনের মধ্যেই---।

-বাবার তো আমাকে আগেই পছন্দ ছিল না। তার উপরে আমার চাকরি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত। আর এখন এই বাড়িটা---।

জীবন তানিশার কোমড় পেঁচিয়ে আরেকটু কাছে টেনে নিয়ে চোখের পানিগুলো মুছে দিলো। তারপর আলতো করে চুমো খেল তানিশার চোখের পাতায়। তানিশা চোখ বুজতেই আরো দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। জীবন আলতো করে তানিশার কান্নার বিন্দুগুলো ঠোঁট দিয়ে শুষে নিলো।

-একটা বিয়েতে সবার যে মত থাকবে তাও কিন্তু না তানু। বিয়ের পর সবাইকে নিয়ে একসাথে গুছিয়ে চলতে পারার নামই হলো সংসার। বুঝসো??

-সেই কাজটাও তো করতে পারলাম না। তিন মাসের মাথায়ই তো আমার জন্য তুমিও আলাদা হয়ে গেলে পরিবারের কাছ থেকে---।

-আলাদা হই নি তো পাগলি। বাবাই তো বললো নিজেদের আলাদা বাড়িতে গিয়ে থাকতে ----।

-সেটা তো আমাকে বলেছে--। তোমাকে না----।

-তুমি কি আমার থেকে আলাদা পাগলী? বিয়ের পর দুটো মানুষের অস্তিত্ব এক সূতোয় বাঁধা পড়ে যায়। আর তোমাকে নিয়েই তো আমি!

-কিন্তু আমার জন্যই তোমাকে---।

-এই তানু? তখন তো খুব আনপ্যাক করতে হবে বলে লাফাচ্ছিলা? তার কি হলো?

-ছাড়ো----।

-হুম---।

তানিশা জিনিসপত্র আনপ্যাক করছে। আর জীবন একটু ওর কাজে সাহায্য করছে আর একটু দুষ্টুমি। কখনো তানিশার চুল খুলে দিচ্ছে, কখনো ঘাড়ে, কানে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিচ্ছে, আবার কখনো টেনে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিচ্ছে। আর তানিশা জীবনের এসব অতি রোমান্টিক কাজকর্ম হাসিমুখে সহ্য করতে করতে কাজ করছে। কখনো ধমক দিচ্ছে। কিন্তু ভদ্রলোক সেসব শোনার পাত্রই নন।।

জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখতে রাখতে প্রায় রাত হয়ে গেল। জীবন বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসার পর দুজনে একসাথে খেয়ে নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। কাজ করে দুজনেই ক্লান্ত অনেক। জীবন তানিশাকে বুকে টেনে নিয়ে চুলে হাত বুলিয়ে দিলো কিছুক্ষণ। 

-এই কাল তাড়াতাড়ি ফিরো অফিস থেকে--। আমরা রান্নাঘরের জন্য কিছু কেনাকাটা করবো---।

-ওক্কে ম্যাডাম--। তানু? বাড়ির নাম ঠিক করবা না? বাড়িটার সুন্দর দেখে, মিষ্টি দেখে একটা নাম দিতে হবে তো??

-আমিও ভাবছি--। কিন্তু কি নাম দিবো বাড়ির বুঝতে পারছি না--।

-স্বপ্নকুটির?

-উহু--। কমন নাম---।

-সুখনীড়?

-উহু।

-প্রেমনিবাস?

-নাআআআ।

-প্রেমকুঞ্জ?

-না--। কিসব নাম এগুলো?

-হাহ---। তাহলে তুমিই বলো?

-আমার মাথায় আসছে না এখন। পরে ভাবা যাবে--।

-পরে না এখনই নাম ঠিক করতে হবে-। কাল অফিস থেকে আসার সময় বাড়ির জন্য নেইমপ্লেট বানিয়ে নিয়ে আসবো---।

-এতো তাড়াহুড়ো করার কি আছে?

-এই এই? তানু? একটা নাম মাথায় এসেছে--। তোমার পছন্দ হলে এটাই ফাইনাল--। ওকে?

-হুম। বলো?

-উপল নূড়ি।

-বাহ! নামটা সুন্দর--।

-বাহ! একসাথে দুটো কাজ হয়ে গেল তাহলে---।

-কি দুটো কাজ!

-বাড়ির নাম আর সাথে আমাদের আপকামিং বেবিদের নাম--।

-কি?

-হুম--। আমাদের ছেলের নাম হবে উপল, মেয়ের নাম হবে নূড়ি। কিউট না নামগুলো?

-আগে মেয়ে হলে বাড়ির নাম বদলে নূড়ি উপল রাখবা?

-হা হা। করা যায়---।

-আর দুটো বেবিই ছেলে বা দুজনই মেয়ে হলে? বা দুটোর বেশি বেবি হলে??

-হুম---। আপাতত উপল নূড়িকে নিয়ে কনসেন্ট্রেট করি। বাকিটা পরে দেখা যাবে। 

-হুম? কি?

জীবন তানিশাকে ঘুরিয়ে বিছানায় শুইয়ে নিজে তানিশার দিকে এগিয়ে এলো।

-দেখা যাক। আগে কে আসে। উপল নাকি নূড়ি--। কি বলো? ওদের আসার ব্যবস্থা করি----।

-আরে? তোমার অফিস আছে সকালে----।

তানিশা আর কিছু বলার আগেই জীবনের ঠোঁট জোড়ার স্পর্শে বন্ধ হয়ে গেল। দুজনে হারিয়ে গেল অন্য এক ভালোবাসার রাজ্যে।

০২!!

উপল নূড়িতে কয়েকটা দিন বেশ ভালোমতেই কেটে গেল তানিশা আর জীবনের। রান্নাঘরের দিকটাও ঠিক মতো ঘোছানো হয়ে গেছে এ কয়দিনে। সন্ধ্যায় এক সাথে বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে তানিশা রান্না করতে গেল। জীবনও ফ্রেশ এসে রান্নাঘরের দরজায় এসে দাঁড়ালো। তানিশা এক মনে রান্না করছে। ফ্রেশ হয়ে মেয়েটা শাড়ি পড়েছে। স্নিগ্ধ লাগছে দেখতে। জীবন তানিশাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ গুঁজলো। তানিশা চমকে উঠলো। 

-এই? কি করো? রান্না করছি আমি।

-হুম। করো। আমি কি করলাম?

-কি করছো জানো না? অসভ্য ছেলে। ছাড়ো।

-উঁহু। ছাড়তে পারছি না। সরি। 

-তুমি?

-আরে! চিল্লাও কেন? তুমি রান্না করছিলে রান্না করো। আমি কিছু করছি না---।

-হুহ। দেখছি তো।

তানিশা নিজের কাজে মন দিলো। এই লোকটাকে কিছু বললেও কাজ হবে না সেটা ও ভালো করেই জানে। জীবনও সুযোগ বুঝে তানিশার সাথে দুষ্টুমিতে মেতে আছে। কখনো ঘাড়ে গলায় পিছন থেকেই ঠোঁট ছুঁইয়ে দিচ্ছে। আবার কখনো কানে আলতো করে কামড়ে ধরছে। কখনো শাড়ির আঁচল ভেদ করেই তানিশার পেটে আঙুল ছুঁইয়ে দিচ্ছে। তানিশার ছটফটানি দেখে আরো বেশি করে দুষ্টুমি করছে জীবন। তানিশা এবার রেগে গিয়ে জীবনের দিকে তাকালো।

-এই এই? তুমি কি ঠিক করেছ আমাকে কোন কাজ করতে দিবে না আজকে?

-যাব্বাবা! আমি কি করলাম? 

-কি করেছ জানো না? এতোক্ষণ কি করছিলে তুমি?

-আমি তো আমার একটা মাত্র বউকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম লক্ষী ছেলের মতো। আমি তো আর কোন হেল্প করতে পারছি না। তাই--।

-তোমার হেল্প করতেও হবে না। তুমি ড্রইংরুমে গিয়ে টিভি দেখো যাও?

-টিভি দেখতে গেলে এতো সুন্দর রোমান্টিক সিনটা মিস হয়ে যাবে--।

-কি বললা তুমি?

-কই কি বললাম? 

-তুমি যাবা এখন এখান থেকে?

-উঁহু----৷ এই তানু? পোড়া গন্ধ আসছে দেখো।

তানিশা তাড়াহুড়ো করে আবার রান্নায় মন দিলে জীবনও টুপ করে তানিশার কোমড় পেঁচিয়ে ধরলো পিছন থেকেই। শক্ত করেই শাড়ির মধ্যেই হাত ঢুকিয়ে দিয়ে একেবারে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরোো জীবন। তানিশা কেঁপে উঠলো একটু। 

-জীবন? কি করছো?

-বউটাকে সারাদিন তো কাছে পাই না৷ এখন পেলাম। তাই আদর করছি।

-তোমার সারাদিন রোমান্স ছাড়া আর কিছুর ভাবনা আসে না জনাব?

-আর কি ভাববো তুমি বলো?

-বাসায় ফিরবো কিভাবে?

-বাবাকে মা ম্যানেজ করে নিবে তো বাবা! এতো ভেবো না তো।

-হুম। সরো এখন---।

-জি না ম্যাডাম। আপনি এভাবে থেকেই রান্না করুন।

-কি মুশকিল!

-কি বললা! আমি মুশকিল! যাও কথা নাই--।

-------------------------------

তানিশা কিছু বলছে না দেখে জীবন তানিশার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে ছোট্ট করে একটা চুমো খেয়ে ড্রইংরুমের দিকে চলে গেল। তানিশাও ভদ্রলোকের রাগ বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে ড্রইংরুমে এলো। এসে দেখলো জীবন সোফায় শুয়ে শুয়ে চ্যানেল চেইঞ্জ করছে একটার পর একটা। তানিশা গিয়ে একেবারে টিভির সামনে গিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়ালো। জীবন কিছু না বলে রিমোর্টটা রেখে দিয়ে চুপচাপ শুয়ে রইলো।

-এই? কথা বলছো না কেন?

-------------------------------

-জনাব জীবন আহমেদ? আপনি কি আমার সাথে নিজে থেকে কথা বলবেন? নাকি আমি নিজে কোন ব্যবস্থা করবো?

-আমি নাকি মুশকিল! তাই আর কথা বলে কাউকে মুশকিলে ফেলব না আমি--। হুহ৷ যার যা ইচ্ছে হয় করতে পারে--।

-তাই?

তানিশা আস্তে করে এসে জীবনের গায়ের উপর দিয়ে এসে সোফায় শুয়ে গেল।

-ম্যাডাম? আরেকটা সোফা পুরোটাই খালি আছে। 

-জানি তো।

-তাহলে সেখানে গিয়ে শুয়ে থাকুন।

-উহু। আমার এভাবেই তোমার গায়ের উপরেই বেশ লাগছে। 

-আমার বেশ লাগছে না। মজাও লাগছে না। সরুন---?

-এমন করছো কেন? সরি তো? 

-সরো? আমার অফিসের কাজ বাকি আছে অনেক। সেগুলো করতে হবে---।

-না সরবো না। 

-কেন সরবা না কেন?

-সরবো না আমার ইচ্ছা। 

-ওকে----।

জীবন তানিশাকে সরিয়ে দিয়ে নিজে বেডরুমে এসে খাটের উপরে বসে ল্যাপটপে কাজ করতে  লাগলো। তানিশা একটু পর পর জীবনের সামনে দিয়ে ঘুরঘুর করে যাচ্ছে। কিন্তু সেদিকে জীবনের কোন পাত্তাই নেই। তানিশা শেষে বিরক্ত হয়ে জীবনের কোলের উপর থেকে ল্যাপটপটা সরিয়ে বিছানায় রেখে নিজেই জীবনের কোলের উপরে চড়ে বসে গলা জড়িয়ে ধরলো। জীবন ভ্রু কুঁচকে তানিশার দিকে তাকালো।

-আমি একটা কাজ করছিলাম তানিশা।

-না৷ তোমার কোন কাজ করা চলবে না এখন। মনে নেই কথা ছিল বাসায় অফিসের কোন কাজ টাজ হবে না।

-তো? কি করবো?

-আদর করবা।

-কাকে?

-কাকে মানে? ওই ওই? কাকে আদর করবা জানো না তুমি?

-না তো। কাকে আদর করবো একটু বলে দিলে ভালো হতো। এখানে আমি আর আপনি ছাড়া তো কেউ নেই। আর আপনার তো আমাকে মুশকিল মনে হয়। বিরক্ত ফিল করেন---। 

-সরি তো? এমন করছো কেন?

-আরে ম্যাডাম! আপনি সরি বলছেন কেন? আমি সরি। অহেতুক আপনার কাজের সময় বিরক্ত করছিলাম--। আর বিরক্ত করবো না। আপনি মনের খুশিতে কাজ করুন যান। আমিও আমার কাজই করি---।

-এই?

-বললাম না আমাকে নিজের কাজ করতে দাও? সরো?

তানিশা রাগ করে উঠে গেল। জীবন মনে মনে মিটিমিটি হেসে ল্যাপটপে কাজ করছে। আর তানিশাকে দেখছে। তানিশা চুপচাপ বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গাল ফুলিয়ে। জীবন এবার ল্যাপটপ ফেলে পা টিপে টিপে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। তার অভিমানীটা আবার অভিমান করে চাঁদের কাছে মনে মনে নালিশ করছে তার নামে। জীবন নিঃশব্দে এসে তানিশার পিছনে দাঁড়িয়ে এক হাতে মুঠো করে তানিশার চুলগুলো ধরে উঁচু করে তানিশার ঘাড়ে, পিঠে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। তানিশা কেঁপে উঠে জীবনের দিকে ঘুরতেই জীবন তানিশাকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিলো। তানিশা রাগ করে মুখ ভেংচি দিয়ে অন্য দিকে চোখ সরিয়ে নিলেই জীবন হালকা করে ছেড়ে দেওয়ার অভিনয় করলো। তানিশা বেচারি ভয় পেয়ে জীবনের গলা জড়িয়ে ধরলো। 

-ভেংচি কাটো আর যাই করো। অন্যদিকে মুখ ঘুরালেই ঠাস করে ফেলে দিবো বলে দিলাম।

-ফাজিল লোকটা। আমি পড়ে গেলে ব্যথা পাবো না?

-সে সব তো আর আমার দেখার বিষয় না। আমার দেখার বিষয় হলো--।

-কি?

-আমি রাগ করেছি দেখছ। তবু রাগ না ভাঙিয়ে নিজে রাগ করে চলে এলে কেন? আর তোমার চাঁদ মামাকে কি নালিশ করছিলে? হুম?

-আমি যে এতোক্ষণ ধরে সরি বলছিলাম কেউ পাত্তা দিচ্ছিলো?

-জানো না? এভাবে সরি বললে সেটা গ্রহণ হবে না। 

-তো আর কিভাবে সরি বলে?

-এই যে সরি বলা শিখিয়ে দিবো এখন। ওয়েট করো---।

-এই এই? ছাড়ো?

-সরি কি করে বলতে হয় সেটা আপনাকে আমি এখন শিখিয়েই ছাড়বো।

 তানিশার হাত পা নাচিয়ে ছোটার চেষ্টাটাও বৃথা গেল। জীবন সোজা তানিশাকে নিয়ে ফেললো বিছানায়। তারপর দুহাতে শক্ত করে বিছানার সাথে চেপে ধরে খুনসুটিতে মেতে উঠলো। আর এদিকে জীবনের ভালোবাসার অত্যাচারে বেচারি তানিশা কাহিল।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন