০৯!!
" প্রেমা চেঞ্জ করে তার দুই'দাদুর রুমে যায়।সেখানে গিয়ে দেখে তাঁরা ফিসফিসয়ে কি যেনো কথা বলছে। প্রেমাকে দেখতেই চমকে যায় এবং কথা থামিয়ে ফেলে। তাই প্রেমা তাদের দিকে সন্দেহের দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।"
"কী নিয়ে কথা হচ্ছিলো যে আমাকে দেখতেই চুপ করে গেলে তোমরা??" (প্রেমা)
" আরে না তোর দাদির বাপের বাড়ি থেকে বিয়ের দাওয়াত আসছে। তার ছোট ভাইয়ের ছেলের বিয়ে। তো আমার বাপের বাড়িও তো সেখানে। তো তোর দাদির ভাই আমাকেও দাওয়াত দিয়েছে যাওয়ার জন্য। সেটাই বলছিলাম। "(প্রেমার দাদি আমতা আমতা করে বলল)
" ওওহ.. দাদির আপন ভাই নাকি??(প্রেমা)
" হ্যাঁ আমরা তিন বোনের ছোট ভাই...(অভ্রের দাদু)
" দাদি আমি কাল চলে যাবো প্রিয়া এসেছে ওর নানুর বাড়ি থেকে মিস করছি খুব..."(প্রেমা)
" এ্যামা একি কথা প্রেমু?? প্রিয়া এসেছে চলে যাওয়ার কী দরকার আমি ড্রাইবার পাঠিয়ে এখানে নিয়ে আসবো।তোর কোথাও যাওয়া হবে না আমি বলে দিলাম।যদি যাস তাহলে আমি বিষণ রাগ করবো তোর সাথে..."(অভ্রের দাদি)
প্রেমাও আর ওদের মুখের কথা বলতে পারেনি। এখানে মন টিকছিলো না তাই তো চলে যাওয়ার কথাটা বলে। প্রেমা কিছুক্ষন গল্প করে তাদের সাথে আবার রুম থেকে বের হয়ে যায়...
বের হয়ে ড্রাইংরুমে এসে আরিয়ানকে দেখে যায় চমকে যায় প্রেমা। সাথে সেদিনের ছবির কথা মনে পরতেই রাগ উঠে।তাদের বাড়িতে আছে তাই কিছু বলছে না অন্য কোথাও হলে বুঝিয়ে দিতো ওর সাথে অসভ্যতামী করার মজা...
কিছু না বলে পেছন ফিরে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেই আরিয়ান ডাক দেয়। প্রেমাও সুযোগ খুঁজছিলো কয়েকটা কথা শুনানোর জন্য। তাই পেঁছন ফিরে তাকাল। ততক্ষনে আরিয়ান প্রেমার সামনে এসে দাড়ায়...
" আমি খুব দুঃখীত প্রেমা! সেদিন ছবিগুলো..?
" ভালোই হয়েছে ছবিগুলো তুলিয়েছিলেন।নাহলে আপনার সম্পর্কে আমার কোনো ধারনাই হতো না যে আপনি আসলে কেমন মানুষ..??"(দাঁত কটমট করে কথাটা বলল প্রেমা)
" বিশ্বাস করো আমি তুলাইনি ছবিগুলো।এটা অন্য কেউ করেছে।আমার এসবে কোনো হাত ছিলো না। এটা আমাদের পরিচিত কেউ করেছে হয়তো।যা আমরা জানি না প্লিজ বিশ্বাস করো।"(আরিয়ান)
"আচ্ছা ঠিক আছে। করলাম বিশ্বাস।এবার বলেন আপনি প্রমাণ করতে পারবেন? যে ছবিগুলো আপনি না অন্য কেউ তুলেছিলো।" (প্রেমা)
" নিশ্চুপ...(আরিয়ান)
" পারবেন না আমি জানতাম..কারন আপনিই করেছেন এমন জগন্য কাজটা।একথায় আমাকে ভার্সিটি থেকে বের করিয়েছেন।আর কিছু বলার ইচ্ছে নেই আপনাকে।নেক্সট টাইম যেচে আমার সাথে কথা বলতে আসবেন না।(প্রেমা)
কথাগুলো বলেই প্রেমা আর না দাড়িয়ে সুইমিংপুলের দিকে পা অগ্রসর করল। আর কিছুক্ষন আরিয়ানের সামনে থাকলে হয়তো থাপ্পর লাগিয়ে দিতো। কারন প্রেমার হাত বেশি চলে কথার চেয়ে।
"[কীভাবে করবো প্রমাণ? গত দুইদিনতো আমি তার খুঁজেই ছিলাম যে এই কাজটা করলো-মনেমনে]"
উপর থেকে অভ্র ওদের কথাগুলো শুনতে হাসতে লাগলো। এটাইতো চেয়েছিলোম সে। প্রেমা আরিয়ানকে সহ্য করতে না পারুক। নিজের রুমে চলে যায়।
অনেক্ষন ধরে সুইমিংপুলের পাশে বাগানের ঘাসের উপর বসে আছে প্রেমা। ভালো লাগছে না এখানে তার। মিম আর আসিফকে ফোন করে বলে কোথায় যেনো ঘুরতে বেরুবে।তাই প্রেমাও রাজি হয়ে যায়।মনটা একটু হালকা লাগে..
ফোন কাটতেই প্রেমার ভাইয়ের ফোন আসে।কলটা দেখতেই দ্রুত রিসিভ করে সালাম দেয় প্রেমা।
" কেমন আছিস প্রেমা?? (পিয়াস)
"আলহামদুলিল্লাহ্ ভাইয়া! তুমি কেমন আছো?? কোথায় এখন?(প্রেমা)
" আমিও ভালো আছি। আজ বিকালে এসেছি বাড়িতে আছি এখন। তোর পড়াশুনা কেমন চলছে?? ভার্সিটি তো কাছে মনে হয় সেখান থেকে তাই না?
ভাবনাই পরে যায় প্রেমা। কী বলবে? পরে ভাবলো সত্যিটা বলে দেয়।
" পড়াশুনা ভালো।(কিছুক্ষন চুপ থেকে) ইয়ে মানে ভাইয়া আমি ভার্সিটি চেঞ্জ করে অন্য একটাতে ভর্তি হয়েছি। সেটা একটু কাছে তাই।(অনেক ভয় নিয়ে কথাটা বলে)
" আচ্ছা সমস্যা নেই তোর সুবিধামতো তুই কর। পড়াশুনা তো তুই করবি তাই না। ভালো মন্দও তুই বুঝবি।আচ্ছা আমি রাখলাম এখন ভালো থাকিস।
" জ্বি! (অবাকের কারনে কথা বলতে পারছে না। তাই আস্তে করে বলো) কল রাখতেই প্রেমা ভাবতে লাগলো কেসটা কী?? ওকে তো বকা দেওয়ার কথা...কিন্তু??
হঠাৎ আদ্রের ডাকে ধ্যান ভাঙে.. আদ্র প্রেমার পাশে এসে বসে এবং সাইরাও..
" কী করছিলে আপু এখানে একা বসে??"(আদ্র)
"এমনি বসে আছি..ভালো লাগছিলো না,তাই!!(প্রেমা)
" আপু আমি আজ তোমার সাথে থাকবো। আমার চুলে বিলি কেটে ঘুম পারিয়ে দিও প্লিজ।ওই খাট্টুশের সাথে থাকবো না।(বিনয়ীসূরে)
আদ্রের কথা শুনে হাসতে লাগলো। ছেলেটার বিহেভ এখনো বাচ্চার মতো অথচ সাথে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে চলাফেরা করছে।
"আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু খাট্টুশের সাথে থাকবে না কেন??(প্রেমা)
" কেন থাকবো?? বিছানা একটু কোঁচকে গেলেও আমার দোষ।বিছানায় একটু ময়লাও থাকতে পারবে না।তাহলে আমাকে দিয়ে আবারো ঝাড়ু দেওয়াবে।নাহলে আমাকে ঝাড়ু দিয়ে পেটাবে।আর নিজে সোফায় দুই'পা দুই দেশে ছড়িয়ে বসে থাকবে।আর আমি হাঁটু তুলে বসলেও দোষ।(ভীষণ রাগ নিয়ে কথা গুলো বলে)
প্রেমা তো হা করে আদ্রের কথাগুলো শুনে। অভ্র এমন?? না জানি বিয়ে-টিয়ে করলে বউরে দিয়ে কেমন কাটানি কাটায়।মনেমনে প্রেমা ভাবতে লাগলো কথাগুলো। হঠাৎ কারো গলার স্বরে ধ্যান ভাঙে প্রেমার।
আশেপাশে তাকিয়ে দেখে আদ্র আর সাইরা নেই।পেছন ফিরে দেখে অভ্র দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। অভ্রকে দেখে তারা পালিয়ে গিয়েছে। প্রেমা মাথা ঘুরিয়ে সামনের দিকে তাকাল।
অভ্র বুঝতে পেরেছে প্রেমা রাগ করেছে৷ তাই প্রেমার পাশে গিয়ে অনেকটা দূরত্ব রেখে বসে পরে। প্রেমা একটু করে পাশে তাকিয়ে আবার সামনের দিকে তাকায়।
প্রেমার কান্ড দেখে অভ্র হালকা হাসলো।
"তখনকার ব্যাপারের জন্য সরি বলতে এসেছি। এটা যদি ভেবে থাকেন তাহলে আপনার ধারণা ভুল.."
এবার প্রেমা অভ্রের দিকে তাকাল,
"আমি সরি বলবো না।(অভ্র,)
" আমি কিছু বলেছি তোমাকে? যেচে কথা বলতে এসেছো কেন?? (রাগ নিয়ে কথাটা বলে)
" আপনার সাথে কথা বলতে আমার পার্মিশন নিতে হবে??" (অভ্র)
অভ্রের এসব কথা শুনে প্রেমার রাগ আরো বাড়তে লাগলো এ মুহূর্তে! মুখ থেকে একটা শব্দ বের করে "ধ্যাত" বলে উঠে চলে যেতে চাইলে অভ্র প্রেমার হাতটা ধরে ফেলে।তারপর টেনে বসিয়ে দিল।
হাত ধরা অবস্থায় ছিলো অভ্র প্রেমার দিকে না তাকিয়ে সামনের দিকে চোখ রেখে বলে উঠলো...
" কাল কোথায় যাবেন?(অভ্র)
" আমার ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরতে যাবো।( অভ্র খুব আলতো করে প্রেমার হাতটা ধরেছে। যার ফলে প্রেমার মধ্যে অদ্ভুদ রখমের অনুভুতি হচ্ছিলো। তাই কথা না বাড়িয়ে স্বাভাবিক ভাবে উত্তরটা দেয়)
প্রেমা কথাটা বলার পরেই অভ্র হাতটা ছেড়ে দিল। হাত ছাড়া পেতেই প্রেমা অভ্রের দিকে তাকাল।
" কোথাও যেতে হবে না কাল...! বাসায় থাকবেন আপনি!!(অভ্র)
"আরে কাল শুক্রবার! বাসায় থেকে কী করবো একটু ঘুরতে যাবো। তোমার এতো সমস্যা কেন??
কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠে...
" আপাকে বলেছিলাম আমার সাথে ফ্রেন্ডশীফ করার সময় কিছু শর্ত পালন করতে হবে আপনাকে?? আমার কথা শুনাটা সেই শর্তের মধ্যে একটা।তাই আপনাকে শুনতে হবে..।
" শুনবো না আমি কাল যাবোই যাবো..(দাঁত চেপে বলে)
" আচ্ছা 0181******* এটা আপনার ভাইয়ার নাম্বার না???(অভ্র)
নাম্বারের কথাটা শুনতেই চমকে অভ্রের দিকে তাকাল ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে। এতো তার দূর্বলতার উৎসের খুঁজটাও নিয়ে নিয়েছে, শেষ।
" ওকে ফাইন যাবো না।ভাইয়াকে বলার দরকার নেই!
" ওকে এক্ষুনি আপনার ওই ফ্রেন্ডেদের বলে দিন যে যাবেন না। (অভ্র)
প্রেমা বাধ্য মেয়ের মতো ফোনটা বের করে মিম আর আসিফকে না করে দেয় ঘুরতে যাওয়ার জন্য।
কথা শেষ হতেই টুপ করে প্রেমার মোবাইলটা নিয়ে মিম আর আসিফের নাম্বার ব্লকলিস্টে ফেলে দিল অভ্র। প্রেমার চোখের আঁড়ালে কারন অভ্র ফোন নেওয়ার পর প্রেমা তাকিয়ে দেখেনি।
মোবাইলটা হাতে দিয়ে অভ্র উঠে চুপচাপ চলে যায়। যেতে যেতে মনে মনে একটা অদ্ভুদ হাসি ফুঁটে তুলে ঠোঁটে।
—————
" আরে কী বলছো তখন না বলেছিলে ও যাবে তাহলে এখন আবার না করেছে বলছো কেন??(আরিয়ান)
" স্যার সত্যি আমাকে আর আসিফকে বলেছিলো যাবে।এখন আবার ফোন দিয়ে বলছে যাবে না।তারপর ফোন কেটে দেয়। (মিম)
" আবার ট্রাই করো..(আরিয়ান)
" দিয়েছিলাম কল ঢোকছে না আর..(মিম)
আরিয়ান রেগে কলটা কেটে দেয়। প্রেমাকে কাল প্রপোজ করবে ভেবেছিলো। কিন্তু......
—————
রাতের খাওয়ার পর বিছানায় শুয়ে পরে তিনজনে। প্রেমা মাঝখানে আদ্র আর সাইরা তার দু'পাশে।
দুজনেই বেঘোরে ঘুম। প্রেমার ঘুম আসছিলো না তাই ফোনটা নিয়ে একটু ফেসবুকে লগ ইন করে....
লগ ইন করতেই হঠাৎ দেখে..
১০!!
"দশমিনিট যাবৎ প্রেমা একজনের প্রপাইল ঘাটাঘাটি করছে। তখন ফেসবুকে তার আইডিতে লগ ইন করার পরেই দেখে!!
"বসন্ত প্রেমিক" নামের একটা আইডি থেকে ফ্রেন্ডরিকুয়েস্ট এসেছে। নামটা দেখতেই প্রেমা পুরো শরীর শিউরে উঠে..বুঝতে পারছিলো না কেন এমনটা হয়েছে?? বারবার প্রেমার মস্তিষ্কে জানান দিচ্ছে এটা সেই অজানা ব্যাক্তিটির নিকট হইতে আসা রিকুয়েস্ট!!"
বিশ্বাস হচ্ছিলো না বিধায় আইডিটির প্রপাইলে যায়। একটা ছেলের ব্যাকসাইড পিক ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না। কিছুক্ষন ভাবনা-চিন্তা করে প্রেমা রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করে। কেন করলো বুঝতে পারছিলো না।শুধু নিজের ইচ্ছেটা পূরন করলো একসেপ্ট করে!
একসেপ্ট করার সাথে সাথেই মেসেঞ্জারের কিউট মেসেজ টুনটি ভেজে উঠে। মেসেজ ওপেন করতেই দেখে সেই আইডি থেকে আসা...মেসেজ দেখেই প্রেমা চমকে যায়...
"কী সমস্যা...(মেসেজটি)
এমন একটা মেসেজ দেখে প্রেমা কী রিয়েকশন দিবে বুঝতে পারছিলো না। নিজেকে সামলে প্রেমা পাল্টা প্রশ্ন করে!!
" আপনার কী সমস্যা?? (প্রেমা)
-ওপাশ থেকে উত্তর আসে...
"রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করেছেন কেন?? (মেসেজ)
"এবার প্রেমা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। বলে কী? রিকু দিলে একসেপ্ট করতে হয়। সেটা কী জানে না??"
" আপনি রিকুয়েস্ট দিয়েছেন কেন?? (প্রেমা)
"আমি রিকুয়েস্ট দিলেই কী আপনাকে একসেপ্ট করতে হবে??(এবার কয়েকটা এংগ্রি ইমুজি ছিলো)
এবার প্রেমা চুপ হয়ে যায়। ওপাশ থেকে আর কোনো মেসেজ আসেনি। নিশ্চুপ দু'পাশেই....
হঠাৎ মেসেজ টুন আসলেই আবার প্রেমা ওপেন করে মেসেজটি। এবার কোনো মেসেজ ছিলো না। একটা ছবি ছিলো। ছবিটির দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে হঠাৎ ভয়ে প্রেমার পশম দাঁড়িয়ে যায়। একি দেখছে সে...
বেশ উত্তেজিত হয়ে পরে প্রেমা। ছবিটি প্রেমার ব্যাকসাইড ছিলো। শাড়ির পরা অবস্থায় সাথে চুলে খোঁপা করা। এ শাড়িটা তো প্রেমা কলেজের " বসন্ত বরন " উৎসবে পরেছিলো। তাই চিনতে বেশ সময় লাগে নি। প্রেমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে মুহুর্তেই।
আবারে ওই আইডিতে যায়। গিয়ে দেখে ছবিটা ডিলেট করে দিয়েছে। এবং সাথে প্রেমাকেও ব্লক করে দেয়।
এবারতো রাগ, ক্ষোভ হাজার গুন বেড়ে গেলো। কে হতে পারে? কার কাছে ওর ছবিটা রয়েছে?? ভাবতে ভাবতে ঘাম বেঁয়ে পরছে কপাল থেকে।
নিজেকে সামলে নেওয়ার জন্য বড় বড় শ্বাস নিতে লাগলো। তবুও চিন্তা মাথা থেকে যাচ্ছিলো না। উপায় না পেয়ে ওয়াসরুমে গিয়ে শাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে যায়। পানির নিচে কিছুসময় অতিক্রম করার পর মাথাটা বেশ হালকা লাগছিলো। তাই বের হয়ে আসে...
"যা হবার হবে...এটা নিয়ে চিন্তা করে লাভ নেই।(মনেমনে কথাটা বলে বিছানায় শুয়ে পরে।এবং তলিয়ে যায় ঘুমের দেশে)
—————
নিজের রুমের সাথে এটাচড্ বেলকনিতে রাখা একটা মিনি সোফায় বসে আছে অভ্র। হাতে তার ফোন। দৃষ্টি ফোনের দিকে। অপলক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে ফোনের ছবিটির দিকে। ছবিটি প্রেমার।
কিছুক্ষন পর মুচকি হাসির রেখা ফুটে উঠে ঠোঁটের কোণায়। একটু আগে প্রেমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলো সেটা মনে পরতেই ঠোঁটের কোণার হাসিটা আরো বড় হতে লাগলো।
ফোনটা পাশের রেখে নিজের দু'হাত বুকে গুজে নেয়। এবার দৃষ্টি বাইরের দিকে। রাত গভীর হচ্ছে অথচ চোখে ঘুমের চিটেপুটাও নেই। আবারো ফোনটা হাতে নিয়ে প্রেমার সে শাড়ি আর চুলে খোপাওয়ালা ছবিটি দেখতে লাগে। ফোনটা বুকের উপর রেখে চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা শ্বাস নেই এবং ছাড়ে। চোখ বন্ধ অবস্থাই চোখের সামনে ভেসে আসে সেদিনে মুহুর্তের কথা। যেদিন প্রেমাকে প্রথম দেখেছিলো।
ফ্ল্যাশব্যাক......
দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিলো অভ্র। আর আরিয়ান ছিলো কলেজ এবং ভার্সিটির টিচার। " বসন্ত বরণ" উৎসবের দিনে আরিয়ান একা যায়নি। সাথে নিজের দু'ভাই অর্থাৎ অভ্র আর সাইকানকেও সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলো।
টিচার হওয়ার সুবাধে কাজের চাপ ছিলো প্রচুর। সব আয়োজন সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তারও খেয়াল রাখতে হয়েছিলো। মাঠের মাঝখানেই বিভিন্ন ফুলের সাজে সজ্জিত ছিলো স্টেজ।
অভ্র আর সাইকান গেইটের একপাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো। সে মুহুর্তে অভ্রের চোখ যায় লাল শাড়ি পরিহিত এক মেয়ের দিকে। অবশ্যই শাড়ি না অভ্রের দৃষ্টি ছিলো চুলের খোঁপার দিকে। খুব সুন্দর দেখাচ্ছিলো চুলের খোঁপাটায় সেই মেয়েটিকে। চুল সুন্দর হলে খোঁপাটাও সুন্দর হবেই এটা অভ্রের ধারনা ছিলো।
কথা বলার ছলে যখন মেয়েটি ফিরে সাথে সাথে অভ্রের বুকটা ধুক করে উঠে। বুঝতে পারে হার্ড-বিট করছে তার। বুকে হাত রেখে চোখ সরানোর তুমুল প্রচেষ্টায় লেগে পরে। কিন্তু ব্যার্থতা সেদিন ওর সঙ্গী হয়েছিলো যেনো। যাতবার ভাবতো মেয়েটির দিকে তাকাবেনা ততবারই বেহায়া চোখ সেদিকে চলে যায়।
নিজেকে ধমাতে পারেনি মেয়েটির আরেকটু নিকটে গিয়ে দাঁড়ালে শুনতে পায় কেউ মেয়েটিকে ডাক দেয় 'প্রেমা' বলে।
"ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি ফুটিয়ে নিচু স্বরে বলে উঠে " প্রেমা"
তারপর থেকেই প্রেমার দিকে নিজের দৃষ্টি নিক্ষিপ্ত অবস্থায় রেখেছিলো অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত। সবঠিক ছিলো শুধু একটা জিনিস মিসিং ছিলো সেটা হচ্ছে প্রেমার খোঁপায় বসন্তের ফুলের মালা। যদিও তখন সে ফুল কোথায় পাবে তার ধারনা ছিলো না অভ্রের। জোর করে সাইকানকে "ফুলবাড়িয়া" পাঠিয়েছিলো ফুল আনার জন্য। সেখানেও পেয়েও যায় বসন্তকালের তাজা লাল টকটকে ফুল। মালা করিয়ে এনেছিলো একেবারে। পাঠিয়ে দেয় সেই ফুলের মালা এবং চিরকুট সহ প্রেমার নিকটে।
চিরকুট পড়ার পর যখন প্রেমার মালাটা নিজের চুলের খোঁপায় গুজাল। সেদিন আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলো অভ্র। হয়ে যায় "প্রেমার বসন্ত ফুলের প্রেমিক!"অনুসরন করতে শুরু করে দেয় তার সেই বসন্ত ফুলের রানীকে....
এরপর যখন সে তাদের মাঝখানের বয়সের কমতিটা উপলব্ধি করতে পারে। মরিয়া হয়ে গিয়েছিলো প্রেমাকে ভুলে যাওয়ার জন্য। সেদিন আবারও ব্যার্থতা তার সঙ্গী হয়।
এরপর থেকেই আড়াল থেকে অভ্র অনেক কিছু করেছে যা প্রেমা জানলে.......
" চোখের কোণা বেঁয়ে একফোটা জল গড়িয়ে পরার আগেই অভ্র মুছে ফেলে। শক্ত করে নেয় নিজেকে। তাতেও শান্ত হচ্ছনা মনটা। মনের মধ্যে ভয়টা বেড়েই যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ভয় একটাই যদি সে তার
"বসন্তের ফুল" 🌺 প্রেমাকে হারিয়ে ফেলে।
"আত্মবিশ্বাসী হতে হবে নিজেকে। নাহয় হারতে হবে আমাকে। হারাতে দিবো না আপনাকে।রেখে দিবো নিজের মাঝে।স্থান হবে আমার বুকে!!
আগলে রাখবো প্রতিটা মুহুর্তে......!!!