অবহেলিত সম্পর্ক - পর্ব ০৪ - মুন্নি আক্তার প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


০৭!!

প্রিয়া অধিক আগ্রহ নিয়ে রূপকথার কাছে জানতে চাইলো স্নেহা কি এমন কেলেঙ্কারি ঘটনা ঘটিয়েছিল। 
- সুইসাইড করতে গিয়েছিল!
- কি বলছো? 
- হ্যাঁ।
- খুব সাংঘাতিক তো তোমার বোন। তারপর আদিত্য কি করেছিল?
- আদিত্য ভাইয়া হাসপাতালে এসে আপুকে দেখে কেঁদে দিয়েছিল।
- আদিত্য কি ভালোবাসতো নাকি স্নেহাকে?
- তখন বাসতো নাকি জানিনা। তবে পড়ে ভালোবেসে ফেলে। আর এতটাই ভালোবাসে যে এক কথায় বলা যায় আপু আদিত্য ভাইয়ার প্রাণ। 
- হুম বুঝলাম। আচ্ছা চলো আমি তোমাকে ড্রপ করে দেই বাড়িতে।
- না গো! আমি কোনো রিক্সা করে চলে যাবো।
- সত্যিই যেতে পারবে একা?
- হ্যাঁ
- শিওর?
- শিওর।
- আচ্ছা আমি তাহলে যাই। আপু বাহিরে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে। কালকে আবার দেখা হবে। টাটা
- টাটা।

এতক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে গল্প করছিল রূপকথা আর প্রিয়া। তাই কলেজ এখন ফাঁকা প্রায়। অনেকেই বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে গিয়েছে। রূপকথা কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কোনো রিক্সাও পাচ্ছে না  দেখে অটো নিলো। কিছুদূর যাওয়ার পরই  অটোর তেল শেষ। মহা মুশকিলে পড়লো মাঝ রাস্তায় রূপকথা। তাই হেঁটেই রওনা দিলো বাড়ির উদ্দেশ্যে। 
আজকেও আরিশের সাথে দেখা হয়ে যায় রূপকথার।
- আপনি?
- জ্বী মিস রূপ।
- রূপ!?
- হু রূপ। কত বড় নাম আপনার। ডাকতে অসুবিধা লাগে তাই ছোট করেই রূপ বললাম।
- জানেন, কখন কোনো ব্যক্তি কারো নাম ছোট করে ডাকে?
- নাহ্ তো! কখন ডাকে?
- যখন তাকে সে খুব বেশি ভালোবাসে।

আরিশ রূপকথার কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। এমন কিছু ভেবে আরিশ কিছু বলেনি। এবার রূপকথা ফিক করে হেসে দেয় আরিশের এমন চাহনি দেখে। এবার আরিশ একটু ভ্রু কুচকে তাকায় রূপকথার দিকে। রূপকথা মুচকি এসে বলে,
- রিভেঞ্জ নিলাম।
- মানে?
- সেদিন যে ছাদে আমাকে এমন অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলে দিয়েছিলেন।
- পাঁজি মেয়ে।
- হিহিহি আপনার থেকেই শিখেছি।
- হুহ! তো কোথায় যাচ্ছেন?
- বাড়িতে।
- হেঁটে কেন? 
- মাঝপথে গাড়ি নষ্ট হলো তাই।
- চলেন বাসায় পৌঁছে দেই। আর আজ অন্তত না করবেন না প্লিজ। কারণ এখান থেকে এখনো অনেক দূরে আপনার বাসা।
- ঠিক আছে চলুন।
- কালকে কলেজ আছে?
- হ্যাঁ।
- কখন আসবেন?
- কেন?
- আপনার ফোনটা দিয়ে যেতাম।
- নয়টায়।
- ওকে।
রূপকথাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আরিশ চলে যায়। ভদ্রতার খাতিরেও যে আরিশ কে বাড়িতে নিয়ে এক কাপ চা খাওয়াবে সেই সাহসটুকুও নেই রূপকথার যদি তার মা কিছু বলে বা আরিশকে অপমান করে!
রূপকথা উপরের রুমে যাওয়ার সময় তার মা ডেকে পাঠালো তার রুমে।
মিসেস মাহমুদা কফির মগে চুমুক দিতে দিতে বললেন,
- ছেলেটা কে?
- কোন ছেলে মা?
- ন্যাকাষষ্ঠী। একদম ন্যাকামি করবি না আমার সামনে। কার গাড়িতে করে আসলি বাসায়? (ধমক দিয়ে)
- মা, ও আরিশ।
- আরিশ? তা কে এই ছেলে? কি হয়  তোর?
- আমার কিছু হয়না। আরিশ বাবার বন্ধুর ছেলে।
- তোর বাবার বন্ধুর ছেলে? তোর সাথে পরিচয় কিভাবে?
- ঈদের দিন যে বাবার সাথে বাবার বন্ধুর বাসায় গেলাম তখনই পরিচয় হয়েছিল।
- বাহ্ বাহ্! বাবার বন্ধুর বাসায় গিয়ে প্রেমিকও জুটিয়ে ফেলেছিস? চরিত্র দিনদিন এত খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
- ওর সাথে আমার কোনো রিলেশন নেই মা।
- থাক আর নাটক করতে হবে না। কান শুনে খুলে রাখ, এই বাড়িতে থাকতে হলে আর পড়াশোনা করতে হলে এসব প্রেম পিরিতি চলবে না বলে দিলাম।
বুঝেছিস?
- হুম
- এখন যা, ফ্রেশ হয়ে রান্না বসা।
- আচ্ছা।

রূপকথা ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ায়। ভাত, মাছ আর ডাল রান্না করে রান্নাঘর পরিষ্কার করে নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৪:২০ বাজে। একটু ব্যালকোনিতে গিয়ে দাঁড়ায় রূপকথা। আকাশ'টা ভীষণ মেঘলা মেঘলা লাগছে। মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে আজ। ঈশা এসে ডেকে যায়।
- আপু
- কি হয়েছে পাখি?
- আম্মু তোমাকে ডাকছে
- আচ্ছা তুমি যাও, আমি আসছি।
- আচ্ছা।

এখন আবার হঠাৎ রূপকথার ডাক পড়লো কেন। ভেবে না পেয়ে মায়ের রুমে যায় রূপকথা। গিয়ে দেখে পাশে স্নেহা বসে ফোন টিপছে।
- মা আমাকে ডেকেছো?
- হ্যাঁ। রান্না করেছিস?
- হ্যাঁ।
- কি রান্না করছিস?
- ভাত, মাছ আর ডাল।
- আচ্ছা যেটা বলার জন্য ডেকেছি শোন।
- বলো।
-  তোর তো নিয়মিত কলেজে যাওয়ার কোনো দরকার নেই তাই না?
- কেন মা?
- কলেজে প্রতিদিন যেয়ে কি করবি? কলেজের পড়া সম্পর্কে আমার জানা আছে। সেই তো গিয়ে আড্ডা দিবি, গল্প করবি, ছেলেদের সাথে ঘুরবি। 

রূপকথা কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। স্নেহার দিকে তাকিয়ে বুঝতে বাকি রইলো না যে কাজটা স্নেহাই করেছে যাতে রূপকথা প্রিয়ার সাথে বেশি মিশতে না পারে। তার মধ্যে মা আবার আরিশের সাথে দেখেছে আবার!


দেখতে দেখতে ১ মাস ৬ দিন কেটে গিয়েছে। এর মধ্যে রূপকথা ক্লাশ করেছে মাত্র ১৭ দিন। কিন্তু ক্লাসের পড়াগুলো কলেজে গেলে প্রিয়ার নোট থেকে নোট করে নেয় এবং  অবসর সময়ে পড়ে।
কালকে আবার কলেজে যেতে দিবে বলে ভীষণ খুশি রূপকথা। চটজলদি সকল কাজ শেষ করে ঘুমিয়ে পড়ে রূপকথা।

সকালে কাজ শেষ করে কলেজে চলে যায় রূপকথা। গিয়েই দেখা হয় প্রিয়ার সাথে। সে কি গল্প দুজনের। এদিকে দূর থেকে সবই খেয়াল করে স্নেহা আর রাগে জ্বলেপুরে যায়। কিভাবে শায়েস্তা করা যায় প্রিয়াকে সে ভাবনাই যেন ঘুরে স্নেহার মাথায়।

এভাবে দিন যায় দিন আসে। মাঝখান থেকে পরিবর্তন হয় অনেক কিছু। কেটে যায় একটি বছর। প্রিয়ার সাথে গাঢ় হয় রূপকথার ফ্রেন্ডশিপ। প্রিয়ার বড় বোন পিংকির বিয়ে হয়ে যায় সাজ্জাদ ভাইয়ার সাথে। সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয় হলো স্নেহা। নিজ থেকে সম্পর্ক ঠিক করে নেয় রূপকথা আর প্রিয়ার সাথে। একদম নিজের বোনের মতই মিশে সে। আর অন্যতম একটি বিষয় হলো আরিশ! আরিশকে নিয়ে আজকাল একটু বেশিই ভাবছে রূপকথা।
আচ্ছা আমি কি আরিশকে ভালোবেসে ফেলেছি? না, না কিসব ভাবছি আমি। আনমনেই কথাগুলো ভাবছিল রূপকথা। পেছন থেকে প্রিয়া এসে ধাক্কা দিতেই হুস ফিরে রূপকথার।
- কি রে রূপ? এত কি ভাবিস?
- কই কিছুনা তো!
- বললেই হলো কিছুনা? বল কি ভাবছিস?
- সত্যিই বলবো?
- হ্যাঁ বল।
- আগে আমার পাশে বস।
প্রিয়া রূপকথা জড়িয়ে ধরে।
- এই নে বসলাম। এবার বল
- স্নেহার কথা ভাবছি।
- কেন কি হয়েছে ওর?
- কিছু হয়নি। ভাবছি কতগুলো বছর আমাকে দেখতে পারেনি। তোকেও সহ্য করতে পারতো না আর এখন দেখ কত আপন হয়ে গিয়েছে!
- মানুষের মন কখন কি করে তা কি বলা যায় পাগলী! তাছাড়া স্নেহা ওর নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে, প্রায়শ্চিত্ত করেছে। আমাদের উচিৎ ছিল ওকে ক্ষমা করা উচিত ছিল আমাদের।  আমরা করেছি। আর তাছাড়া আমরা তো বোনই বল।
- হুম রে। তুই আমার জীবনে আসার পর থেকে অনেক কিছু পাল্টে গিয়েছে প্রিয়া। আগে আমি হাসতে পারতাম না, কারো সাথে কথা বলতে পারতাম না। একদম নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকতাম। কিন্তু তোকে প্রথম যেদিন বৃষ্টিভেজা রাতে দেখি তুই রাস্তায় বৃষ্টিতে ভিঁজছিস, সেদিন খুব অবাক হয়েছিলাম। সেই সাথে পিংকি আপুর সাথে তোর খুনসুটি। সেদিনও বুঝতে পারিনি যে তোর মত একটা বোন পাবো আমার জীবনে। শুধু তুই কেন বলছি  পিংকি আপুকেও পেয়েছি। বড় বোনের ভালোবাসা কি আমি জানতাম না কিন্তু উপলব্ধি করতে পেরেছি তোর জন্য। তুই তোর বড় আপুর ভাগও দিয়েছিস আমায়। 
যেখানে এতগুলো বছর স্নেহার সাথে এতগুলো বছর একসাথে থাকার পরও ওর মন পাইনি সেখানে তুই মাত্র ২ মাসেই ওর মন জয় করে নিয়েছিস। নিজের বোন বানিয়ে আমাকেও ফিরিয়ে দিয়েছিস স্নেহাকে বোন হিসেবে।
বিশ্বাস কর প্রিয়া, তুই যে আমার জীবনে কি সেটা আমি তোকে বলে বোঝাতে পারবো না। যে আমি বৃষ্টিতে ভিজতে ভয় পেতাম সেই আমি এখন তোকে অনুসরণ করে তোর মত করে বৃষ্টিকে অনুভব করি। তোর থেকেই আমি শিখেছি হাসতে, দুষ্টুমি করতে, মনখুলে কথা বলতে, বোনের ভালোবাসা সব!!
- আর ভালোবাসার মানুষের ভালোবাসা? সেটা কার কাছ থেকে শিখেছিস?
- মানে?
- মানে?
রূপকথার হাতে থাকা বইটি তুলে ধরে প্রিয়া। বইতে "এ" লিখা।
- এই "এ" তে কে শুনি?
রূপকথা লজ্জামাখা দৃষ্টি নিয়ে তাকায়।
- ওরে আমার লজ্জাবতীরে। এটা নিয়ে পড়ে কথা বলছি, আগে তোর বলা কথাগুলোর উত্তর দেই।
রূপ, তুই যেমন আমাকে নিজের বোন ভাবিস আমিও তোকে আমার নিজের বোনই ভাবি। আমি জানিনা আমি সত্যিই তোর জীবনে কি। তবে আমার আগমন যদি তোর জীবন সুখকর হয়ে উঠে তাহলে কথা দিচ্ছি সারাজীবন থাকবো আমি তোর পাশে। 
রূপকথা আর কান্না আটকে রাখতে পারেনি। প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে রূপকথা।
- অনেক ভালোবাসি তোকে প্রিয়া। কখনো এই বোনকে ছেড়ে যাস না প্লিজ। তোর জন্য আমি সব ছেড়ে দিবো তবুও আমাকে তুই ছেড়ে যাবি না বল।
কথাগুলো রূপকথা কাঁদতে কাঁদতেই বললো। প্রিয়া রূপকথাকে আগলে বললো,
- তোর কিচ্ছু ছাড়া লাগবে না পাগলী। প্রয়োজনে আমার প্রিয় জিনিসও আমি তোর জন্য কুরবানি করতে রাজি আছি। তোর এই অবহেলিত জীবন থেকে তোকে মুক্ত রাখতে চাই সবসময়। আমি চাই তুই সবসময় সুখে থাক রূপ।

রূপকথা কিছু বলে না, শুধু কাঁদতেই থাকে। প্রিয়া জানে এখন কি করে হাসাতে হবে ওকে। রূপকথার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
- রূপ, তোর জন্য সবকিছুর ভাগ দিবো বলেছি বলে কি সত্যিই আমার ভালোবাসার মানুষটিরও ভাগ নিবি? 
রূপকথা এবার রেগে প্রিয়াকে চিমটি কাটে।
- হুহ! আমার বয়েই গেছে তোর ভালোবাসার মানুষের ভাগ নিতে। আমার কি কেউ নেই নাকি! (একটু ভাব নিয়ে)
- ওমা! তাই? আজ আমার কেউ নেই বলে।
- ফাজিল!
- হু আমি তো ফাজিলই। এবার বলতো কে সেই ব্যক্তি? আর তুই যে রিলেশন করিস এটা তো বলিসনি আমাকে একবারও। এই আপন ভাবিস আমাকে তুই?
- একদম ভুল বুঝবি না রাক্ষসী। আমাদের কোনো রিলেশন নেই।
- তাহলে? 
- শুধু আমিই ওকে ভালোবাসি। ও আমাকে ভালোবাসে নাকি  আমি জানিনা
- এটা কেমন কথা রূপ? 
- হু। জানিস ঐও আমাকে রূপ ডাকে।
- বাব্বাহ্!! আমার সাথে দেখা করিয়ে দিবি না?
- ও তো দেশের বাহিরে থাকে।
- তাহলে পরিচয় কিভাবে?
- আমার  বাবার বন্ধুর ছেলে।
- ওহ আচ্ছা। ছবি দেখা তাহলে।
- ২ দিন পরই ও আসবে দেশে। তখনই সরাসরি দেখিস 
- বাব্বাহ্! এখনই এত লুকিয়ে রাখছিস ডাইনী।
- হুহ! আমার সাথে কিন্তু সেদিন এয়ারপোর্টে  যাবি।
- আচ্ছা যাবো।


রাত: ১১:৫০
রূপকথার সাথে চ্যাটিং করছে প্রিয়া। এক পর্যায়ে প্রিয়ার মনে হলো রূপকথার পছন্দের মানুষটির নামই তো জানা হলো না।
- এই রূপ
- হুম বল
- নাম কি তার?
- কার?
- আরে তোর সেই ভালোবাসার মানুষটির নাম।
- আরিশ
প্রিয়া কিছুক্ষণের জন্য যেন থমকে গেল! ম্যাসেজটা সীন করেই রেখে দিলো। কোন আরিশ এটা? আমি যাকে ভাবছি সে নয়তো? আচ্ছা এক নামে তো কতজনই হয়।
দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায় প্রিয়া...

০৮!!

প্রিয়া কিছুক্ষণের জন্য যেন থমকে গেল! ম্যাসেজটা সীন করেই রেখে দিলো। কোন আরিশ এটা? আমি যাকে ভাবছি সে নয়তো? আচ্ছা এক নামে তো কতজনই হয়।
দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায় প্রিয়া।

রূপকথার কাছে একবার আরিশের ছবি কি চাইবো নাকি চাইবো না! কি ভাববে রূপকথা। আচ্ছা কিছু ভাবারই বা কি আছে? শুধু ছবিই তো চাইবো। কিন্তু...
আনমনে কথাগুলো ভাবছিল প্রিয়া। ফোনের রিংটোনে ভাবনার জগৎ থেকে বেড়িয়ে আসে প্রিয়া। পিংকি ফোন করেছে।
- হ্যালো আপু।
- হেয় মাই কিউটি! কি খবর?
- হুম আপু ভালো। তোমার কি খবর?
- আলহামদুলিল্লাহ। সত্যিই ভালো আছিস তুই?
- আরে বাবা হ্যাঁ।
- মা বকে না তো?
- কোনোদিন কি বকতে পেরেছে যে, এখন পারবে?
- তাও ঠিক। তোর মত দজ্জালের সাথে কি কেউ পারে নাকি!
- আপু!!(রেগে)
- হাহা রাগ করিস কেন? মজা করলাম। বাবা কেমন আছে?
- বাড়িতে নেই।
- কোথায় গিয়েছে?
- বিজনেস এর কোন কাজের জন্য যেন আমেরিকা গিয়েছে।
- আমাকে একবার জানালোও না।
- এটা কি জানানোর মত নাকি আপু? আমিই তো জানতাম না, প্রিয়ম বললো আমাকে।
- হু। ভালো কথা প্রিয়ম কই?
- ও তো বোধ হয় এখন ঘুমাচ্ছে। কথা বলবে?
- না থাক। কাল দিনে বলবোনি।
- হুম। তারপর বলো বজ্জাত ভাইয়ার কি খবর?
- প্রিয়া!! বজ্জাত না সাজ্জাদ হবে। 
- হু! এখন খুব লাগছে তাই না?
- লাগবেই তো। হাজবেন্ড বলে কথা।
- আমারও দুলাভাই হয় হুহ।
- ফাজিল
- তোমার বোন
- তুই
- একই! হিহিহি

কিছুক্ষণ কথা বলার পর ফোন রেখে ঘুমিয়ে পড়ে প্রিয়া।

পরেরদিন:
সকাল সকাল প্রিয়মের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে প্রিয়ার। প্রিয়ম হলো প্রিয়ার সৎ ভাই। কিন্তু প্রিয়ার খুবই ভক্ত।
- এই আপু এই দরজা খোলো।

ঘুমঘুম চোখে দরজা খুলে দেয় প্রিয়া।
- কি হয়েছে? সকাল সকাল এভাবে চেঁচাচ্ছিস কেন?
- তোমার ফোন বন্ধ করে রাখছো কেন?
- কি বলিস, ফোন বন্ধ নাকি। মনে হয় চার্জ শেষ। কি হয়েছে বলতো।
- সাজ্জাদ ভাই ফোন দিয়েছিল। হাসপাতালে যেতে বলছে তোমাকে তাড়াতাড়ি।
- হাসপাতালে? মানে? কেন? কি হয়েছে?
- আপুর নাকি পেটে খুব পেইন। তাড়াতাড়ি যেতে বলছে তোমায়।
- তুই একটা দাঁড়া আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

ফ্রেশ হয়ে প্রিয়মকে সাথে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে প্রিয়া। সাজ্জাদ চেয়ারে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে দেখে কলিজা শুকিয়ে গেছে প্রিয়ার। না জানি কি হয়েছে পিংকির।
- সাজ্জাদ ভাই
- প্রিয়া! আসছো তুমি
- কি হয়েছে ভাইয়া? আপুর কি হয়েছে?
- শান্ত হও। তেমন কিছুনা। এপেন্ডিসাইটিস  এর ব্যথা উঠছে। ডক্টর বলছে অপারেশন করলেই ঠিক হয়ে যাবে।

এতক্ষণে হাফ ছেড়ে বাঁচে প্রিয়া। অপারেশন সাক্সেসফুলও হয়। সারাক্ষণ প্রিয়া ওর আপুর কাছেই ছিল। ডাক্তার বলেছে কয়েকদিন হাসপাতালেই থাকতে হবে। 
পরেরদিন সাজ্জাদের ইম্পরট্যান্ট একটা মিটিং থাকায় অফিসে যেতে হয়। হাসপাতালে প্রিয়াকে রেখে যায়। পিংকিকে খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে পাশেই বসলো প্রিয়া। হঠাৎ করেই মনে হলো রূপকথার কথা। আজ তো ওর সাথে এয়ারপোর্টে যাওয়ার কথা। ব্যগ থেকে ফোনটা বের করে দেখে ১৯+ মিসডকল। তাড়াতাড়ি কল ব্যাক করে প্রিয়া।
- তোর এতক্ষণে ফোন দেখার সময় হলো?
- স্যরি রূপ স্যরি। ফোন সাইলেন্ট ছিল। দেখিনি আমি। তাছাড়া আপুকে নিয়ে হাসপাতালে আছি তো। টেনশনে মাথাতেই ছিল না কিছু।
- আপুকে নিয়ে হাসপাতালে মানে? কি হয়েছে আপুর?
- এপেন্ডিসাইটিস এর ব্যথা। অপারেশন করা হয়েছে, আপু এখন ভালো আছে।
- আচ্ছা আপুর খেয়াল রাখিস তুই।
- স্যরি রে রূপ! তোর সাথে এয়াপোর্টে যেতে পারলাম না।
- আরে ব্যাপার না। তুই আপুর কাছে থাকিস। 
- আচ্ছা রাখি।
- বাই

রূপকথা এয়াপোর্টে যাচ্ছে। মনের মধ্যে অজানা এক ভালোলাগা কাজ করছে রূপকথার। আজ কতদিন পর আরিশকে দেখতে পাবে। আনইজি ফিলও হচ্ছে রূপকথার। আজকে রূপকথা আরিশের জন্য সেজেছে।
লাল পাড়ের একটা সিল্কের সাদা শাড়ি পড়েছে রূপকথা। তার সাথে ম্যাচিং করে কানের দুল আর দু'হাতে লাল রেশমি চুড়ি। কপালে ছোট্ট একটা স্টোনের সাদা টিপ। ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক। একদম আরিশের মনমত সেজেছে রূপকথা।
আচ্ছা আরিশ কি আজ মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখবে রূপকথাকে? আরিশের মনমত সেজেছে বলছি কেন! এটা তো আমার ধারণা যে আরিশ এরকম পছন্দ করে। কিন্তু সত্যি কি এটাই? আমি তো জানিনা আরিশ কেমন সাজ পছন্দ করে! তবে হ্যাঁ, এটা আরিশের মনমত সাজ না হলেও অপছন্দ হবে না। কারণ প্রিয়াকে দেখেছিলাম এভাবে সাজতে। একদম পরীর মত লাগছিল। আমাকে পরী না লাগলেও পেত্নী নিশ্চয় লাগছে না, এটা আমি শিওর!
ধুর বাবা! কিসব ভাবছি। চোখ ঢেকে আনমনেই হেসে উঠে রূপকথা।
অলরেডি এয়ারপোর্টে পৌঁছে গিয়েছে রূপকথা। আর ২৫/৩০ মিনিট সময় লাগবে।


ফোনের গ্যালারি ঘেটে আরিশের সাথে কাটানো মুহুর্তের ছবিগুলো দেখছিল প্রিয়া। মনটা আজ খুব বেশিই আনচান আনচান করছে। তারমধ্যে রূপকথার আরিশ যে আবার কই থেকে এলো। এক নামে তো কত মানুষই থাকে। ধুর ঘোড়ারডিম!!
- আপনি রোগীর বোন?
প্রিয়া পেছনে তাকিয়ে দেখে একজন ডক্টর।
- জ্বী।
- এই ওষুধ টা আমাদের হাসপাতালে নেই। বাহির থেকে ওষুধটা নিয়ে আসুন।
- ঠিক আছে
পিংকির পাশে একজন নার্সকে রেখে ওষুধ আনতে বাহিরে যায় প্রিয়া।


অনেকক্ষণ আগেই এসে দাঁড়িয়ে আছে আরিশ। কিন্তু রূপকথার আসার কোনো নামগন্ধও নেই এখনো। প্রায় ২০ মিনিট পর রূপকথা এয়ারপোর্টে পৌঁছালো। গিয়ে দেখে আরিশ গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
- স্যরি, স্যরি আসলে আমার আসতে এত লেট হবে বুঝতে পারিনি।
আরিশ কিছু বলছে না, শুধু তাকিয়ে আছে।
- কি হলো? কি দেখছেন?
- তোমাকে
- কেন? ভালো লাগছে না?
- উহু।
- উহু?
- হু
- কেন বলুন তো? আমি এত কষ্ট করে সাজলাম আর আপনি বলছেন ভালো লাগছে না!
- না লাগছে না। তার কারণটা হলো চুল খোঁপা করেছো। চুলগুলো ছেড়ে দিলে আরো সুন্দর লাগবে।
- তাই?
- হ্যাঁ
- তাহলে খোঁপাটা খুলে দিন।
- আমি?
- হ্যাঁ আপনি
- এখানে?
- জ্বী এখানে।
- ধুর! কত লোকজন এখানে।
- ওমা! তাতে কি? আপনি কি লজ্জা পাচ্ছেন নাকি?
- আমি কি মেয়ে নাকি! লজ্জা তো নারীর ভূষণ।
- তাহলে যা করতে বলেছি করুন।

রূপকথার খোঁপা করা চুলগুলো খুলে দিলো আরিশ। বাতাসে চুলগুলো উড়ছে।
- হুম! এখন দারুণ লাগছে। একদম শ্রুতির মত!!
- শ্রুতির মত!? কে শ্রুতি?
- ছিল কেউ একজন।
- ছিল? এখন নেই?
- না। হারিয়ে ফেলেছি কোনো এক ভুলে।
- কার ভুল ছিল?
- আমার।
- ফিরিয়ে আনেননি?
- সেই সুযোগটাই দেয়নি।
- মানে? সুইসাইড.....?
- চুপ!! এসব কথা মুখেও আনবে না। ও অনেক শক্ত মনের মানুষ। শত কষ্টও শ্রুতি মুখ বুজে সহ্য করতে জানে। ও এমোনি একটা মেয়ে যে, কাঁদলেও পাশের মানুষটি বুঝবে না।
- আপনি বুঝতেন?
- হুম। তবে অনেক দেড়িতে।
- যদি কখনো ফিরে আসে?
- আসবেনা হয়তো
- কেন?
- আসার হলে আগেই আসতো। ২ বছরের বেশি  সময় পার হয়ে গিয়েছে আসেনি। কোনো খোঁজখবরও পাইনি।
কিন্তু তবুও অবেচেতন মন খুঁজে বেড়িয়েছে অনেক।
- যাওয়ার সময় কিছু বলেনি?
- হুম
- কি বলেছিল?
- আমার পছন্দমত কাউকে যেন জীবনসঙ্গী করে নিই।
- আপনার পছন্দ কেমন?
- শ্রুতি যেমন।
বাদ দাও। পুরনো স্মৃতি ঘেটে আর লাভ নেই। শ্রুতি যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক, সুখে থাকুক।  চলো এখন।
- হুম

আরিশ ড্রাইভ করছে আর পাশে রূপকথা চুপচাপ বসে আছে। মনে এক সংশয়, যদি শ্রুতি নামক মেয়েটা ফিরে আসে কখনো? আচ্ছা আরিশ কি এখনো শ্রুতিকে ভালোবাসে? শ্রুতিকে খোঁজে? আমি জানতাম আরিশের লাইফে কেউ ছিল কিন্তু এভাবে হুট করে যে গুম হয়েছিল তা তো জানতাম না। আরিশ কি আমাকে ভালোবাসবে না? তবে কি সুখ হাতছানি দিবে? না, কি ভাবছি আমি! আমি যে আরিশকে খুব ভালোবাসি। আচ্ছা আরিশ যদি আমাকে ভালোই না বাসে তাহলে আমার এত কেয়ার করে কেন? কিসে ভালো লাগে আর কিসে ভালো লাগেনা এতসব খুঁটিয়ে দেখবে কেন? নিশ্চয় ওর মনে আমার জন্য একটু হলেও জায়গা আছে।
- এই রূপ কি ভাবছো?
আরিশ রূপকথাকে আলতো করে ধাক্কা দেয়।
- এ্যাঁ? হ্যাঁ! কই কিছু না তো।
- বললেই হলো কিছু না? সত্যি করে বলো কি ভাবছো।
- আরে কিছু না তো! আপনি গাড়ি থামালেন কেন? 
- তুমি ভাবনাতে এতই বিভোর যে এটাও খেয়াল করোনি যে রেড সিগনাল দেওয়া।
- ওপস! স্যরি দেখিনি।
- শ্রুতি!!!!
- স্যরি?
- সামনে, রূপ সামনে তাকাও। ঐ যে শ্রুতি! শ্রুতি যাচ্ছে.......

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন