১১!!
কতোক্ষণ পরে জ্ঞান ফিরেছে সেটা আবীর হিসেব করতে পারলো না। চারপাশটা প্রথমে একটু অন্ধকার, পরে আবছা আলো আর শেষে একদম স্পষ্ট দেখতে পেল। ওর হাত দুটো একটা চেয়ারের সাথে পিছমোড়া করে বাঁধা। নীলিমা কোথায় সেটা ভেবে একটু আঁতকে উঠলেও পরমূহুর্তেই নিজেকে সামলে নিলো আবীর। এখন ঠান্ডা মাথায় সবটা চিন্তা করা দরকার। তার আগে এখান থেকে যে করেই হোক বের হওয়ার একটা রাস্তা খুঁজতে হবে। এসব ভেবে হাত নাড়ানোর চেষ্টা করতেই হাতে কারো বাঁধা হাতের স্পর্শ পেল আবীর। নিজের বাঁধা হাতটা দিয়ে সেই কোমল হাতটা প্রাণপণে ছুঁয়ে দেয়ার চেষ্টা করলো আবীর। মানুষটাকে স্পর্শ করতে পেরে বুকের ভিতরের একটা চাপা ভয় অনেকটাই কেটে গেছে ওর। চারদিকে আরেকবার দৃষ্টি বুলিয়ে নিয়ে নিচু কণ্ঠে কয়েকবার নাম ধরে ডাকলো আবীর।
-নীলিমা? নীলি? শুনছ? নীলু?
-------------------------------
-নীলি? চোখ খোলো না প্লিজ?
বেশ অনেকক্ষণ ধরে ডাকার পর আবীরের ধরে রাখা হাতটা একবার কেঁপে উঠলো।
-নীলি? তুমি ঠিক আছো? ঠিক আছো তুমি?
-কে!
-আমি আবীর----।
-আ------।
-শশশশ। আস্তে--।
-আমরা এখানে কি করে এলাম--। আর হাত বাঁধা কেন? কি হচ্ছে আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না----।
-রিল্যাক্স নীলি---। আপাতত হাতের বাঁধন খোলার চেষ্টা করি--।
-নীলি---!
-প্যানিক করো না। আমাকে পাঁচটা মিনিট সময় দাও--। আমি দেখছি।
নীলিমা আর কিছু না বলে কিছু একটা ভাবতে লাগলো। আর আবীর নিজের হাত খোলার চেষ্টা করলো। টাইট করে বাঁধা রশিটা হাতে ঘষা লেগে কেটে রক্ত ঝড়ছে হাত থেকে৷ সেটাকে পাত্তা না দিয়ে হাত দুটোকে আড়াআড়ি করে বাঁকিয়ে রশিটার গিট দেয়া অংশটা ধরার চেষ্টা করলো। অনেকক্ষণ হাতটা ঘুরিয়ে বাঁকাতে সক্ষম হলো আবীর৷ তারপর আরো মিনিট খানেক চেষ্টা করে হাতের বাঁধন খুলে ফেললো আবীর। তারপর না ঘুরেই হাতের আন্দাজেই নীলিমার হাতটা খোলার কাজে মন দিলো আবীর৷ নীলিমার হাতের বাঁধন খোলা হয়ে গেলেই আবীর আর নীলিমা দুজনেই মুখোমুখি ঘুরলো। আবীর নীলিমাকে শক্ত করে বুকে চেপে ধরলো।
-আম এম সো সরি নীলি৷ আমার জন্য এতো কষ্ট পেতে হলো আমার ঘুমপরীটাকে--। সরি----।
-কি সব বলছেন? স্যার?
-হুম?--- নীলি? সরি তো?----?
আবীর আরো কিছু বলবে এমন সময় রুমটার বাইরে কারো গলার আওয়াজ শুনতে পেয়ে থেমে গেল৷ নীলিমাকে টেনে রুমের একটা কোণায় গিয়ে লুকিয়ে গেল আবীর৷ নীলিমা থতমত খেয়ে আবীরের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে৷ কি হচ্ছে সেটাই বুঝতে পারছে না বেচারি। আবীর নীলিমার দিকে তাকিয়ে একবার ওর হতভম্ব মুখটা দেখে আলতো করে মুখে হাত ছুঁইয়ে দিলো।
-সরি নীলি--। একটু ওয়েট করো৷ আমি এখান থেকে বের হওয়ার রাস্তা পাই কিনা দেখছি---। এই একটু দাঁড়াও----। তোমার ঘাড়ের এখানে রক্ত কেন? কি হয়েছে?
-কোথায়?
নীলিমা নিজের ঘাড়ের কাছে হাতটা নিয়ে চোখের সামনে ধরতেই বেশ খানিকটা রক্ত দেখতে পেল।
-কি জানি! ঘাড়ের এখানটায় এতো ব্যথা করছে। আপনার ঘাড়েও তো রক্ত লেগে আছে---।
-তুমি----!
-ওয়েলডান মিস্টার তন্ময় এন্ড মিসেস নীলিমা। ওপস। সরি৷ মিস্টার তন্নয় এন্ড মিসেস নাতাশা। ওরফে নাশু---।
পরিচিত একটা কণ্ঠস্বর শুনে আবীর আর নীলিমা দুজনেই সামনে তাকালো। দরজাটা ততক্ষণে হাট করে খুলে গেছে৷ সামনে একটা মানুষ এসে দাঁড়িয়েছে। সরাসরি আলোয় সামনে এসে দাঁড়িয়েছে বলে আবীর লোকটার আধো ছায়া মুখটা দেখে চিনতে পারলো না। কিন্তু নীলিমার মুখটা শক্ত হয়ে গেল।
-মিস্টার ! নাইস টু সি ইউ ব্যাক ইন বিজনেস---।
-বাহ!! আরে! হোয়াট এ সারপ্রাইজ! আবীর আহমেদ এখানে কেমন করে! ওহ! মিস নাশু! ইট দিস ইজ নট রাইট। প্রথমে দিশার আর এখন আবীর! আর কতজনকে কেইসে জড়াবে বলে তো! এবার আমার এন এস আইয়ের বেস্ট ডিটেকটিভকেও মরতে হবে--। বাই দা ওয়ে--। মিস্টার তন্ময় কি করে দি আবীর আহমেদ হয়ে গেল সেটা একটু ক্লিয়ার করে বলো তো।
-------------------------------
-এজেন্ট নাশু--। রিপোর্ট ফাস্ট ফাস্ট--। ইউ নো আই ডোন্ট হ্যাভ মাচ টাইম--। এদিকটা সামলে নিয়ে আবার সেই সেইম নাটক কন্টিনিউ করতে হবে--। আবার মরার মতো পড়ে থাকতে হবে--।
আবীর এতোক্ষণ থতমত খেয়ে এন এস আই চিফ জেনারেল আতিকুর রহমানের কথা শুনছিল। এক বছর আগের বোম ব্লাস্টে তনয়া আবীরের স্পটে ছুটে গেছে খবর পেয়ে তনয়ার বাবা আতিকুর রহমানও ছুটে যান। ব্লাস্টের পর তনয়া গুরুতর আহত হলে হসপিটালে নেয়ার পথেই মারা যায় মেয়েটা৷ আর এন এস আই চিফ গুরুতর আহত হয়ে কোমায় চলে যান। সেই ঘটনারও আজ এক বছরের বেশি পার হয়েছে। তাহলে চিফ সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে ওদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে কি করে? আর নীলিমাকে নাশু কেন বলছে উনি!
-স্যার? আপনি? আপনি ঠিক আছেন?
-ইয়েস ইয়াং ম্যান। আম টোটালি ফাইন। বাট তোমরা দুজনেই অনেক বেশি জেনে ফেলেছো। তাই তোমাদের আর বাঁচিয়ে রাখতে পারছি না। সরি---। ভেবেছিলাম দিশার ছেলেটা মারা যাওয়ার পর সবটা ঠিক হয়ে যাবে--। মাই ব্যাড--। আর এজেন্ট নাশু? আম রিয়েলি সো প্রাউড ওফ ইউ। ফার্স্ট টাইম কেউ আমার প্ল্যানিং ধরতে পেরেছে--। বাট ইউর ব্যাড-। কাউকে জানানোর আর সুযোগ পাচ্ছ না----।
-স্যার? ও নাশু না। সি ইজ মাই ওয়াইফ---। নীলিমা---।
-ওহ! রিয়েলি আবীর! তোমার কাছে এমন সিলি মিসটেক আশা করি নি আমি৷ এই মেয়েটাকে আগেরবার হাতে পেয়েও সরাসরি খুন করতে পারি নি--। আমার গর্ধব লোকগুলো ওকে হাই ডোজের ড্রাগ পুশ করছিল প্রতিদিন। প্রায় সপ্তাহ তো দিয়েছিল। একদিন কি করে কে জানে মেয়েটা ওদের হাত ফসকে পালিয়ে গেল--। ড্যাম ইট!
-ও মারা যেতে পারতো স্যার!
-তো? তোমার জন্য যে আমার মেয়েটা---।
-তনয়া আমার কারণে মারা যায় নি স্যার--। আপনার মতো কোন এক শয়তানের কাজের ফল ভোগ করতে হয়েছে ওকে----।
-তোমাকে কে বলেছে তনয়া মারা গেছে? আর ব্লাস্টটা তোমার জন্য করানো হয়েছিল আবীর---। কিন্তু লাস্ট মূহুর্তে মেয়েটা সেটা শুনতে পেয়ে যায়--। পাকিস্তানের যে টিমটা বোমটা লাগিয়েছিল তাকে বাসায় দেখে চিনে ফেলে আমার বোকা মেয়েটা--। পাগলের মতো তো ভালোবাসতো তোমাকে--। আর তুমি কিনা সে মরার খবর রটার ১ মাসের মধ্যে বিয়ে করে একেবারে সেটেল্ড! বাহ!
-রটিয়েছে মানে! তনয়া?
-তোমার কি মনে হয়? আমি নিজের মেয়েকে এমন সুইসাইড করতে দিব? সিরিয়াসলি!
-তনয়া! তনয়া ঠিক আছে?
-অফকোর্স সি ইজ অল রাইট। বেশ গুরুতর আঘাত পেয়েছিল। বাট এখন অনেকটাই সুস্থ। আপাতত বন্দী--। বলা যায় না কি করে বসে--। তাই---।
-আপনি মানুষ?
-হা হা হা। এতো বছর সরকারের আর দেশের হয়ে কাজ করে কি পেয়েছি বলো তো আবীর? মাস শেষে একটা এমাউন্ট! আর? কোন কেইস নিয়ে কাজ করতে গিয়ে মারা গেলে যোগ্য সম্মানটুকু পর্যন্ত পায় না-। কি হবে এদের জন্য কাজ করে! অথচ দেখো! এখন আমার কাড়ি কাড়ি টাকা----।
-আর দেশের চোখে, আইনের চোখে, নিজের মেয়ের চোখে একজন ক্রিমিনাল আপনি---।
-ওহ কাম অন আবীর---। লেকচার ডান আবীর। রুলস নাম্বার ওয়ান। অলওয়েজ লিসেন টু ইউর সিনিয়রস। মিস সরি--। মিসের নাতাশা ওরফে এজেন্ট নাশু--। তুমি বড্ড জ্বালিয়েছ আমাকে। তোমাকে এপয়েন্ট করাটাই ভুল ছিল আমার। নাউ টাইম টু গুড বায়৷ বোথ ওফ ইউ--। আপাতত পরপারে গিয়ে তোমাদের টোনাটুনির সংসার করো--। বায়---। ওপস। মিস্টার আবীর--। স্কেপ ইফ ইউ ক্যান---।
কথাটা শেষ হতেই বিশ্রি শব্দে হা হা করে হাসতে হাসতে দরজাটা বাইরে থেকে আটকে দিয়ে চলে গেল এন এস আই চিফ আতিকুর রহমান। আবীর আর নীলিমা দুজনেই কিছুক্ষণ দরজাটা ধাক্কা দিয়ে খোলার চেষ্টা করলো। কিন্তু দরজাটা এক ইঞ্চিও নড়াতে পারলো না। নীলিমা ভীত চোখে আবীরের দিকে তাকালো। আবীর পুরো রুমটা পায়চারি করে বের হওয়ার রাস্তা খুঁজে হতাশ হয়ে আবার ফিরে এলো।
-স্যার! এবার কি হবে?
আবীর উত্তরে কিছু বলার আগেই দরজার নিচের ছোট্ট ফাঁক দিয়ে গলগল করে সাদা একটা ধোঁয়া ঢুকতে লাগলো। আবীর নীলিমাকে টেনে রুমের পিছনের দিকে নিয়ে এলো। নীলিমার পড়নের শাড়ির আঁচলটা দিয়ে নাকটা বেঁধে দিলো। তারপর পকেট থেকে রুমাল বের করে নিজের নাক ঢাকলো আবীর। বের হওয়ার শেষ একবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো দুজনে। চোখ মুখের সামনে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে। আর নিঃশ্বাসও আটকে আসতে চাইছে দুজনেরই। কোনমতে রুমের একটা কোণে বসে পড়লো আবীর৷ আলতো করে নীলিমাকে জড়িয়ে ধরলো।
-আম সরি নীলি--। এখান থেকে হয়তো আর বেঁচে ফেরা হবে না--।
কথাটা শেষ করতে পারলো না আবীর। চোখের সামনে আবার এক রাশ অন্ধকার ঘনিয়ে এসে সবটা কালো হয়ে গেল।
১২!!
ঠিক কতোক্ষণ পর আবীরের জ্ঞান ফিরেছে সেটা ঠাহর করতে পারলো না। কিন্তু বুঝতে পারলো ও সেই শক্ত ফ্লোরেই শুয়ে আছে। কেউ যেন বহুদূর থেকে ওর নাম ধরে ডাকছে। কণ্ঠস্বরটা বেশ পরিচিত লাগছে আবীরের কাছে। তবুও মনে করতে পারছে না কার গলা এটা। কয়েক সেকেন্ড কাটতেই আবীর যেন একটা ঘোর কেটে বেরিয়ে এলো। একজনের গলা না। দুইজন মানুষ ওর গায়ে হালকা ধাক্কা দিয়ে নিচু গলায় ডাকছে ওকে। কন্ঠে ব্যস্ততা, ভীতি, আশঙ্কা সব যেন একসাথে খেলা করছে। প্রায় জোর করেই চোখ খুলে মানুষ দুটোকে দেখার চেষ্টা করলো আবীর। এক মূহুর্ত পর নিজের মুখের উপরে প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়া মুখ দুটি আবীরের কাছে স্পষ্ট হলে। আর সাথে সাথে দুজনকেই চিনতে পেরে তড়াক করে উঠে বসলো আবীর। এতো ধড়মড় করে উঠে বসায় একবার চোখ মুখ একবার অন্ধকার হয়ে এলো ওর। তবু নিজেকে সামলে নিলো আবীর।
-আবীর? তুই ঠিক আছিস?
-তাহমীদ! তনয়া! তোরা? তোরা এখানে?
-আবীর? আবীর! তুই ঠিক আছিস? আর ভাবি কোথায়?
-নীলিমা? ও তো এখানেই ছিল--।
আবীর নিজের পাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো। নীলিমাকে পেল না সেখানে। পুরো রুমটাই ফাঁকা। কোথাও নীলিমার চিহ্নটুকু পর্যন্ত নেই। সেটা দেখেই আবীরের বুকের ভিতরটা ধ্বক করে উঠলো। তাড়াহুড়ো করে উঠতে গিয়ে আবার পড়ে যাচ্ছে দেখে তাহমিদ আর তনয়া দুজনেই আবীরকে ধরে ফেললো।
-আবীর? কি করছিস? রিল্যাক্স!
-তনয়া? ও আমার পাশেই ছিল। কোথায় গেল আমার নীলিমা!
-আবীর? রিল্যাক্স প্লিজ---।
-ওকে ছাড়া আমি বাঁচবো না তনয়া। আমার ওকে খুঁজতে যেতে হবে--। তোরা প্লিজ চলে যা----।
-আবীর! চুপ করে দু মিনিট আগে কথা শোন আমার--।
-তাহমিদ? আমি-----।
-আমি জানি তুই ভাবিকে কতটা ভালোবাসিস। কিন্তু ভাই ঠান্ডা মাথায় একবার ভাবার চেষ্টা কর। এভাবে এতো হাইপার হলে হিতে বিপরীত হতে পারে---। একটু সাবধানে চেষ্টা করলে আমরা ভাবিকেও খুঁজে পেতে পারি--। যেভাবে আমি আজ তনয়াকে পেলাম--। তুই শান্ত থাক--।
-তাহমিদ! তুই তনয়াকে পেলি কোথায়! ও যে বেঁচে আছে সেটাই আমি একটু আগেই----।
-আজ সকালেই একটা নাম্বার থেকে একটা কল পাই। কলটা রিসিভ করার পাঁচ সেকেন্ডের মাথায় কলটা ডিসকানেকটেড হয়ে যায়। তারপর আবার কল। এবার সময়টা দশ সেকেন্ড। এরপর আবার একটা কল। আর সময় পনেরো। এই তিনবারের কলের সাথে আরো একটা ব্যাপার কমন ছিল। একটা নিঃশ্বাসের শব্দ। সেই নিঃশ্বাসের প্রত্যেকটা স্পন্দন আমার কতোটা পরিচিত সেটা কেবল আমিই ভালো জানি। তনয়ার এই কাজটার মানে না বুঝলেও বেশ পরিচিতই ছিলাম এটার সাথে। ও যে কি মেসেজ দেয়ার চেষ্টা করতো বা কি সিগনাল পাঠাতো সেটা কখনোই ধরতে পারি নি--। কিন্তু আজ সকালে যখন সেইম কাজটা ঘটলো আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। যে মানুষটাকে আমরা চোখের সামনে আহত হতে দেখেছি। ব্লাস্টে স্পট ডেড ছিল যে মেয়েটা-সে কি করে! কিছুই মাথায় ঢুকছিল না ঠিকই। কিন্তু আমার মন বলছিল এটা তনয়াই। ওর প্রতিটা শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ আমার পরিচিত-।
-তা-তারপর?
-তারপর আর কি! খবরটা দিতে বিকেলে ছুটলাম তোর বাসায়--। কলে এতো কথা বলে বোঝানো সম্ভব নয়--। আর নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না কিছুই--। কাউকে যে বলবো----। এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতেই দুপুর কাবার হয়ে গেল--। বিকেলে তুই অফিসে যাবি জানি--। তাই তাড়াহুড়ো ছিল না--। বিকেলে অফিসে গিয়ে দেখি তুই আসিস নি। তাই বাসায় যাওয়া-। এসে যা দেখলাম--।
-কি!
-তোর বাসার গেইটে দারোয়ান নেই দেখেই কেমন একটা সন্দেহ হলো আমার---। তাই সামনের গেইট দিয়ে না গিয়ে বাড়ির পিছন দিকটায় চলে এলাম--। দেয়াল টপকে বাড়ির কম্পাউন্ডে ঢুকলাম---। সেখানে দুটো লাশ পড়ে আছে--। একটা তোর দারোয়ানের--। আর একটা মেয়ের লাশ। সম্ভবত কাজের লোক তোদের---।
-হোয়াট?
-বাড়ির ভিতরে ঢুকে দেখলাম একদম ফাঁকা বাড়ি--। নিয়াজ স্যারকে সবটা জানাতেই উনি তোকে ট্রেস করতে লোক লাগিয়ে দিলেন-।
-এখানে এলি কি করে?
-তোকে কোনভাবেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না--। স্যারকে শেষে বাধ্য হয়ে তনয়ার সিগনালের কথাটা বললাম। স্যার প্রথমে বিশ্বাস করলেন না। আমিও ওই নাম্বারটায় সেইম সিগনাল পাঠালাম--। আবার জবাব এলো---। নিয়াজ স্যার কতটা বিশ্বাস করেছিলেন জানি না। তবে হয়তো কোন চান্স নিতে চান নি--। নাম্বারটা ট্র্যাক করে আমরা একটা বাড়ি থেকে তনয়াকে উদ্ধার করি---। সেখানে বেশ কয়েকজন লোক গার্ডে ছিল--। লোকগুলোকে তুইও চিনে থাকবি--। আমাদের সাথে ডিল করতে এসেছিল সেদিন।
-ওরাই! ওরাও এসবে জড়িত? ওহ শিট!
-হুম--। ওদের কাস্টাডিতে নিয়ে তনয়ার কাছে সবটা জানলাম। ওর দেয়া তথ্য অনুযায়ী এসেছি আমরা-। তবে আপাতত শুধু আমরা দুজনে ঢুকেছি--। রুমের বাইরে থেকে ধোঁয়া দেখে সেটা বন্ধ করে এসেই দেখি তোর সেন্স নেই---।
-তাহমিদ! আমার নীলিমা?
-আমরা এসে তো ওকে দেখতে পেলাম না রুমে--।
-তাহলে? তাহলে কি ওকে ----।
-আবীর! আসলেই কি চিফ এসবের সাথে জড়িত?
-উনি নিজের মুখে সেটা বলেছেন তাহমিদ----।
-চল তাহলে--। ভাবির কিছু হওয়ার আগে আমরা উনাকে গ্রেফতার করি--।
-তাহমিদ!
-প্রিয়জন হারানোর ব্যথা কতোটা গভীর সেটা আমি জানি আবীর--। একবার হারিয়ে তনয়াকে ফিরে পেয়েছি--। তাই আর ওকে হারাতে যেমন দিতে পারবো না, তেমনি তুইও ভাবিকে হারিয়ে ফেলবি, সেটাও হতে দিবো না--।
-তাহমিদ! চল--। নীলিকে যে করেই হোক খুঁজে বের করি----।
আবীর নীলিমাকে খোঁজার জন্য রুম থেকে বেরিয়ে গেল। তাহমিদ আলতো করে তনয়ার মুখটা তুলে ধরলো।
-তনু--। তুমি প্লিজ আমার কথাটা একবার শোনো? আমার গাড়িটা নিয়ে হেডকোয়ার্টারে চলে যাও--। নিয়াজ স্যার ফোর্স পাঠিয়ে দিবেন। কিচ্ছু উল্টাপাল্টা হবে না৷ আই প্রমিস---।
-আমি কোথাও যাবো না তাহমিদ-। বেশি জোর করলে ভালো হবে না বলে দিচ্ছি---। জোর করলে কিন্তু সত্যি সত্যি--।
-তনু প্লিজ? এমন জেদ করো না৷ তোমাকে একবার হারিয়েছি-। আর হারাতে পারবো না---।
-আমি তোমাকে আর আবীরকে এভাবে বিপদে ফেলে পালিয়ে যেতে পারবো না। কক্খনো না।
-শোনো না? লক্ষী মেয়ে না তুমি প্লিজ?
-না না না---।
-আচ্ছা তুমি লক্ষী বউটা--। একবার শোনো না কথাটা?
-তাহমিদ! মাইর দিবো? আর বাইরে গেলে কিছু হবে না আমার সেটা কে বলেছে তোমাকে? মৃত্যু যদি আসে তবে -----।
তাহমিদ শক্ত করে তনয়াকে বুকে জাপটে ধরলো। তনয়াও মুচকি হেসে তাহমিদকে জড়িয়ে ধরলো। তার ভয় লাগানোটা কাজে দিয়েছে৷ তাহমিদ একটু পরেই নিজেকে সামলে নিয়ে তনয়াকে ছেড়ে দিয়ে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।
-আপনাকে কোথাও যেতে হবে না মিস ব্ল্যাকমেইলার। আর যদি এভাবে ভয় দেখাও তো দেখবা--।
-হি হি----।
-হাসবাই তো৷ ভালো তো আর বাসো না। তাই কষ্ট দিয়ে মজা পাও। হুহ। কিন্তু কি করবো? তোমাকে যে বড্ড ভালোবাসি---।
-আমিও সবটা ভুলে তোমার সাথে ভালো থাকতে চাই তাহমিদ-। তবে সে সব পরে ভাবা যাবে--। আপাতত নীলিমাকে খুঁজি চলো। আবীরটা মেয়েটাকে না পেলে পাগলই হয়ে যাবে---।
-হুম। এসো?
তাহমিদ আর তনয়া রুমটা থেকে বেরিয়ে করিডোর দিয়ে কিছুটা যেতেই দেখলো একটা রুমের সামনে থমকে দাঁড়িয়ে আছে আবীর। আবীরের পাশাপাশি তনয়া আর তাহমিদও গিয়ে দাঁড়ালো। ভিতর থেকে বন্ধ করা দরজাটা। দরজার কাঁচে ঘেরা অংশটা দিয়ে রুমের ভেতরটা দেখা যাচ্ছে। আর সেটা দেখেই ওরা তিনজনে থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রুমের ভেতরে একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসানো নীলিমার অবচেতন দেহটা। আর তার ঠিক সামনেই আতিকুর রহমান দাঁড়ানো। তার হাতে তীক্ষ্ণ সিরিঞ্জের ফলাটা আলোয় চিকচিক করছে৷ আর লোকটা দানবের মতো হাসি দিয়ে ধীরে ধীরে সিরিঞ্জটা নীলিমার দিকে এগিয়ে নিচ্ছে।