ভোরের রোদ - পর্ব ১০ - সুলতানা পারভীন - ধারাবাহিক গল্প


১৯!! 

রোদের মাথায় যেন কাজই করছে না। বাবার কথাগুলোই যেন রোদের কানে বারবার বাজছে। ভোর বাসায় নেই বা কারো বিয়েতে গেছে কথাটা বাবাকে কে বলতে পারে? ছোটোমা? সেটা কিছুতেই সম্ভব না। অন্তত রোদ ভোরকে বিয়েতে যাওয়ার পারমিশন দিয়েছে বা বিয়েতে নিজে গিয়ে দিয়ে এসেছে এই কথাগুলো তো ভুলেও কখনো বলবে না চাচ্চু আর ছোটোমা। রইলো পড়ো আভার কথা। ও কেন বলতে যাবে বাবাকে! কিন্তু আর কে এই খবরটা জানে? অথবা কেইবা ইচ্ছে করে রোদের বাবাকে কল করে মিথ্যে কথাগুলো বলবে? লোকটা কি জানে ভোরকে কেউ আটকে করে রেখেছে? কথাটা ভাবতেই রোদ তড়িঘড়ি করে বাবার নাম্বারে কল করলো। পর পর দুবার কলটা কেটে দেয়ার পর রোদ আরেকবার কল করার পর কলটা রিসিভ হলো। অপর প্রান্ত থেকে বাবার বিরক্তিমাখা কণ্ঠ শুনেও রোদ মাথা ঘামালো না।

-আমি মিটিংয়ে আছি রোদ। আর তোমাকে বলা হয়েছে ভোরকে নিয়ে বাসায় ফিরতে। আমাকে কল করতে নয়।

-আব্বু আমি একটা কথা জানতে তোমাকে কল করেছি। ভোর ওর বান্ধবীর বোনের বিয়েতে গেছে এ কথাটা তোমাকে কে বলেছে? আর কখন----।

-তুমি কি বলতে চাচ্ছ ভোর যায় নি বিয়েতে?

-প্লিজ বাবা। কে বলেছে সেটা বলো। 

-তাসমিদ একটু আগে কল করে জানিয়েছে আমাকে পুরো ব্যাপারটা। 

-হোয়াট? কখন! 

-এখন আশা করি ওর পিছনে না ছুটে ভোরকে নিয়ে বাসায় ফিরো। আর আমি তাসমিদকে অনেক করে বলেছি ভোরকে আবার পড়াতে আসার জন্য। ছেলেটা রাজি হয় নি। এভাবে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়ার পর আবার যে আসবে না সেটা আমিও জানি। তবু-----।

-তুমি বললে আসবে না বাবা। বাট আমি বললে নিশ্চয়ই আসবে। আমিই উনাকে কল করে বা উনার সাথে মিট করে সরি বলে নিব। আর বাসায় আসারও ব্যবস্থা করবো। তুমি প্লিজ উনার নাম্বারটা আমাকে দাও।

-তুমি বলবে! তাও আবার তাসমিদকে? এবং সেটা আমাকে তুমি বিশ্বাস করতে বলছ?

-প্লিজ বাবা? দুদিন পরেই তো আমি চলে যাবো। ভোরের জন্য এই মূহুর্তে নতুন টিচার এরেঞ্জ করাও পসিবল না। এর চাইতে তাসমিদ সাহেব রাজি হলেই তো ঝামেলা মিটে যাবে। আর আশা করি আমি সরি বললে উনিও আর মাইন্ড করে থাকবেন না। এমনিতে ভোরের জন্য কনসার্ন উনি। নইলে ও কোথায় যাচ্ছে সেসব খবর তোমাকে দিত না, তাই না?

-এসব কথা তুমি বলছ রোদ? নাকি আমি স্বপ্ন দেখছি?

-বাবা? উনার নাম্বারটা আমাকে দাও। ভোরকে আনতে যেতে হবে আমার। দেরি হয়ে যাচ্ছে আমার। 

-ওকে। তবে যদি উল্টোপাল্টা কিছু করো বা আবার ছেলেটাকে অপমান করো তাহলে কিন্তু রোদ----।

-আরে? চিন্তা করো না বাবা। আমার ভোরের জন্য এতো কনসার্ন একজন মানুষ। তাকে কি আমি আর অপমান করতে পারি বলো? তুমি উনার নাম্বারটা আমাকে টেক্সট করে দাও। আমি কল করে সরি বলে নিচ্ছি উনাকে।

-ওকে।

বাবার কলটা কেটেই প্রায় সাথে সাথেই মেঘের নাম্বার ডায়েল করলো রোদ। প্রায় চোখের নিমিষেই কলটা রিসিভও হলো।

-রোদ? কি রে? তুই এতো তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেছিস? আরো তো মিনিমাম হাফ এন আওয়ার লাগার কথা----।

-মেঘ মেঘ মেঘ? তোকে একটা নাম্বার পাঠাচ্ছি আমি। যে করেই হোক ওই নাম্বারটা এক্স্যাক্ট লোকেশনটা আমাকে দে তুই। তুই কি করে করবি আমি জানি না। কিন্তু ওই নাম্বারটা এই মূহুর্তে কোথায় আছে সেটা তুমি আমাকে বের করে দে।

-রোদ! কার নাম্বার?

-এখন এতো কথা বলার সময় নেই মেঘ। একটু তাড়াতাড়ি কর ভাই।

-ওকে নাম্বার পাঠা। আর তুই সাবধানে ড্রাইভ কর।

-হুম।

রোদের এমন হঠাৎ পরিবর্তনে আতিক আহমেদ কিছুটা অবাক হলেও রোদকে তাসমিদের নাম্বারটা মেসেজ করে দিয়ে নিজের মিটিংয়ে মন দিলেন। আর রোদও মেঘকে নাম্বারটা সেন্ড করে ফুল স্পিডে গাড়ি ছুটিয়েছে শহর থেকে বেশ খানিকটা দূরের সেই ইন্ড্রাস্টিয়াল এরিয়ার দিকে। রোদের এখন একটাই লক্ষ্য। যে কোনো মূল্যে ভোরকে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনা। আর তার জন্য যা যা করতে হয় রোদ করবে। আর ভোরকে কষ্ট দেয়া একজন লোককেও ছাড়বে না রোদ। কিছুতেই না। 
 

এদিকে আবছা আঁধারটা চোখ সওয়া হয়ে যেতেই সামনে পরিচিত মুখটা দেখে চমকে গিয়েছিল ভোর। লোকটাকে ঠিক করে চিনে ওঠার আগেই রোদের দেয়া মোবাইলটা হাত থেকে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলেছে দেখে ভোর একটু থমকে গেল। লোকটার চেহারা আর কণ্ঠস্বরটা মিলাতে পারছিল না বলে দ্বিধা কাটিয়ে উঠতে উঠতে যে বহু দেরি হয়ে গেছে সেটা এবারে টের পেল ভোর। আর বিপদটা আঁচ করতে পেরে তাই এবারে আরো বেশি ভয় পেল। মেঘ ভাইয়া কলটা ট্রেস করতে পেরেছে কি না সেটাও জানা নেই ভোরের। আর না জানা আছে রোদ ওকে এই বন্দিদশা থেকে আধো মুক্ত করতে আসবে কি না। কথাগুলো ভাবার মাঝেই মোবাইলটা ফ্লোরে আছড়ে টুকরো টুকরো হওয়ার দৃশ্যটায় ভোরের এবারে যেন হুঁশ ফিরলো। 

-তোমার কি ধারণা এতো সহজে তোমার প্রেমিক তোমার খোঁজ পেয়ে যাবে? হাহ!

-স্যার? আপনি? আপনি এসব কেন করছেন? আর রোদ ভাইয়া তো আসবেই। এসে আমাকে নিয়েও যাবে। দেখবেন আপনি। 

-হা হা হা। আমি তো জানি ওই ধোঁকাবাজটা যে আসবেই। ওর আসার ব্যবস্থাও করে ফেলেছি। তবে ও যতক্ষণে আসবে, ততক্ষণে তো অনেক দেরি হয়ে যাবে মিস বিউটিফুল।

-আপনি ধোঁকাবাজ কাকে বলছেন? রোদকে? রোদ ধোঁকা দিয়েছে? নাকি আপনি দিয়েছেন ধোঁকা? বড়আব্বু আর আব্বু আপনাকে ভরসা করে আমাকে পড়ানোর দায়িত্ব দিয়েছিল। আর আপনি আমাকে জোর করে তুলে এনে----।

-হা হা। আমি যেটা করেছি সেটাকে ধোঁকা বলে না মিস। এটাকে বলে বদলা, রিভেঞ্জ। তোমার কি ধারণা সামান্য একটা টিউশন চলে গেছে বলে তোমাকে এখানে এনেছি ভোর? এখনো বড় হলে না তুমি। কি যে হবে তোমাকে নিয়ে----।

-তাহলে? তাহলে কেন এনেছেন আমাকে? রোদকেই বা ধোঁকাবাজ বলছেন কেন আপনি? আর আপনার কণ্ঠস্বরটা তো এমন ছিল না। তাহলে হঠাৎ করে আপনার ভয়েস এতো বদলে গেল কেন?

-মাই গড! এতো প্রশ্ন একসাথে? উমমম। প্রশ্নগুলোর আনসার দিবো? নাকি সাসপেন্সই রাখবো বলো তো? এতো বকবক করার মানে আছে কোনো?

-প্রশ্নের উত্তর থাকলে তবে না দিবেন। কি ভেবেছেন নিজের দোষ ঢাকতে একটা কথা বলে দিলেই আমি বিশ্বাস করে নিবো? অসম্ভব। কক্খনো না। কিছুতেই না।

-ওকে রিল্যাক্স। এতোই যখন তোমার কৌতূহল তাহলে বলছি শোনো। তার আগে চেয়ারে বসো তো চুপ করে। পায়ে তো ব্যথা পেয়েছ। দেখি কোথায় লেগেছে?

তাসমিদ এক পা এগিয়ে ভোরের দিকে আসতেই ভোর ক্ষিপ্র গতিতে পিছিয়ে এলো। তাসমিদ সেটা দেখে আবার শব্দ করে হাসলো। লোকটার হাসিটা এই বহুদিনের বদ্ধ ঘরটায় প্রতিধ্বনি তুলে আরো ভয়ংকর শোনালো। ভোর সেটা বুঝতে না দেয়ার চেষ্টা করে প্রায় দেয়ালের সাথে মিশে গেল। তাসমিদ আর এগোলো না। নিজেই ভোরের মুখোমুখি হয়ে চেয়ার টেনে বসলো। 

-কিছুক্ষণ পরে তোমাকে ছোঁয়ার অধিকারটা তো পেয়েই যাবো ভোর। তাহলে এখন এতো লাফালাফি করে সরে যাচ্ছে কেন বলো তো? আমার স্পর্শটাও একসময় তোমার মুখস্থ ঠোঁটস্থ হয়ে যাবে বুঝলে মেয়ে? সবারই হয়ে যায়। সেটা ইচ্ছেয় হোক, বা বাধ্য হয়ে।

-বাজে কথা ছাড়ুন। কি বলছিলেন সেটা বলুন। আর আমার ব্যথা লাগা নিয়ে আপনার না ভাবলেও চলবে। 

-তো কে ভাববে? তোমার ওই রোদ? ওই চিটারটা? হা হা। দেখো গিয়ে এতোক্ষণে নতুন কাউকে জোগাড় করে ফেলেছে কি না।

-মুখ সামলে কথা বলুন স্যার।

-আমি তো মুখ সামলেই বলছি। তবে নিজের পেয়ারের মানুষটার আসল চেহারাটা দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারবেন তো মিস বিউটিফুল? 

-কি বলতে চান আপনি? 

-কিছুই বলতে চাইছি না। শুধু কিছু অজানা সত্যের উপর থেকে পর্দা সরাতে চাচ্ছি। যেটা জানা তোমার জন্যও জরুরি। 

-রোদকে নিয়ে একটাও বাজে কথা বলবেন না একদম।

-হুহ! বাজে কথা! জানো তোমার মতোই দুষ্টু মিষ্টি একটা বোন ছিল আমার। আমার একেবারে কলিজার টুকরো বোন, রশ্নি। বাবা মা একটা গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা যাওয়ার পর ওকে নিজের সন্তানের মতো করে আগলে রেখেছি আমি। ছোট্ট একটা শিশুর মতো আদর দিয়ে বড় করেছি। ওর মুখে হাসি ফোটানোর জন্য আমি পুরো দুনিয়াটা ওলটপালট করে দিতাম। কিন্তু আমার ছোট্ট রশ্নি আমাকে মুখ ফুটে কিছু না বলেই ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে। যে পিচ্চিটার চোখের কোণায় এক বিন্দুও পানি জমা হতে দিই নি কখনো সেই বোনকেই দুদিন আগে নিজের হাতে।মাটি চাপা দিয়ে এসেছি। কেন জানো? কারণ তোমার ওই ঠগবাজ রোদকে ভালোবেসেছিল আমার বোনটা। ওই ঠগবাজটা ওকে শেষ পর্যন্ত ধোঁকা দিয়েছে------।

ভোর অবাক চোখে তাসমিদের দিকে তাকিয়ে তাসমিদের বলা গল্পটার সাথে রোদের কানেকশনটা কি সেটা বোঝার চেষ্টা করছিল। এবারে তাসমিদের শেষের কথাটা শুনে ভোরের রাগে মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার জোগাড় হলো। লোকটা এতো সহজে এতো মিথ্যে কি করে বলতে পারে ভাবতেই ভোরের গা জ্বলে যাচ্ছে। হাতের কাছে কিছু থাকলে এতোক্ষণে সেটা এই মিথ্যেবাদী লোকটার মাথায় ছুঁড়তো সন্দেহ নেই। ভোরের মুখের দিকে তাকিয়ে তাসমিদও সেটা বুঝতে পেরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে নিল।

-বিশ্বাস করলে না তো সুইটহার্ট? তোমার রোদের এমন পার্ফেক্ট ধোঁকাটা আমার বাচ্চাটাও বিশ্বাস করে নি। ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর পিচ্চিটা যখন রাত জেগে টুংটাং মেসেজিং করতো তখনই বুঝতে পেরেছিলাম কিছু একটা হচ্ছে ওর জীবনে। অপেক্ষা করছিলাম পিচ্চিটা নিজে থেকে আমাকে সবটা বলার। বেশ খুশিতেই ছিল আমার বোনটা। ক্লাস করে ফিরে ক্লান্ত হলেও চনমনে আর আমি বাসায় থাকলেই সারাক্ষণ দুষ্টুমিতেই দিন কাটছিল রশ্নির। একদিন অফিস থেকে ফিরে দেখলাম পিচ্চিটা মুখ কালো করে বসে আছে। সেদিন রোদের কথাটা প্রথমবার আমাকে বলে রশ্নি। বেশ কয়েক মাস ধরেই ওদের সম্পর্কটা বেশ ভালে চলছিল। রোদ অনার্স করতে করতেই একটা জব জয়েন করছিল। বেশ ভালোই চলছিল ওদের। সমস্যা শুরু হয় রোদের অনার্স ফাইনালের পর। সে নাকি আগের মতো মেসেজ দেয় না, কথা বলে না। তাই নিয়ে মন খারাপ পিচ্চিটার। আমিও ওকে বোঝালাম হয়তো ব্যস্ত আছে। পিচ্চিটা আর কিছু বললো না। এর দুদিন পর সকালে অফিসে যাওয়ার আগে রশ্নিকে কয়েকবার ডাকার পরও দরজা খুলছে না দেখে আমার কেন জানি না ভয় ভয় লাগছিল। ওর রুমের এক্সট্রা চাবি ছিল আমার কাছে। দরজা খুলে দেখি মরার মতো পড়ে আছে আমার বোনটা।

-কি হয়েছিল উনার?

-তখনও কিছু হয়নি। বেশ কয়েকটা পাওয়ারফুল ওষুধ খেয়েছিল। হসপিটালে নেয়ার দরকার হলো না। বাসাতেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়ে দিন রাত ওর পাশেই বসে থাকতাম আমি। তখন জানতে পারি, রোদ নতুন করে তার কোনো এক কাজিনের প্রেমে পড়েছে। তাই রশ্নিকে যোগাযোগ রাখতে বারণ করেছে। 

-কি বলছেন আপনি এসব? রোদ কখনো এমন কিছু করতে পারে আমি মরে গেলেও বিশ্বাস করবো না। কিছুতেই না।

-জানি। কিন্তু তুমি জানো? আমার পিচ্চিটা রোদকে অসম্ভব ভালোবাসতো। ওকে অনেক বুঝিয়েছি ওই খারাপ ছেলেটাকে ভুলে যেতে। কিন্তু আমার বাচ্চাটা পারে নি ভুলতে। আর একদিন চুপচাপ নিজের কষ্টটা নিজের বুকেই চাপা দিয়ে দিল মেয়েটা। বাড়িতে থেকেও আমি এক মূহুর্তের জন্যও টের পাই নি মেয়েটা কখন নিজের হাতের শিরা----। ও কি করছে চেক করতে রুমে এসে দেখি রক্তে ফ্লোরটা ভেসে যাচ্ছে এমন অবস্থা। কি করে ওকে হসপিটালে নিয়েছি, আর কি করে ডক্টররা ওর ট্রিটমেন্ট করেছে কিছুই জানি না আমি। বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছিল জানো ভোর? অনেক রক্ত বেরিয়ে গেছিল আমার বোনটার শরীর থেকে। অনেক রক্ত দেয়ার পরও স্টেবল হয়নি ও। কোমায় চলে গেছে। আর গত ছয়টা মাস মরার মতো পড়ে থাকলেও অন্তত বেঁচে ছিল আমার বোনটা। ডাক্তাররা আগেই বলে দিয়েছিল, বেশিদিন এভাবে ওকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। আসলেই তো বলো। যে নিজেই বাঁচতে চায় না, তাকে বাঁচিয়ে রাখার সাধ্য কার? আমিও তাই তখনই প্ল্যান করে ফেলেছিলাম। আমার বোনের এই অবস্থা যে করেছে তাকে উপযুক্ত শাস্তি আমি দিবোই। 

-আপনার বোনের আর জ্ঞান ফিরে আসে নি স্যার?

-নাহ। তোমার বাবা কল করে তোমাকে পড়াতে আসতে মানা করে দেয়ার পর নতুন প্ল্যান বানাতে হচ্ছিল। তার মধ্যেই গত পরশু হসপিটাল থেকে বোনটাকে দেখে ফিরে আসার কিছুক্ষণ পরই হসপিটাল থেকে আবার কল আসে। রশ্নির অবস্থা ভালো নয়। আমার হাতের মধ্যে বোনটা শেষ নিঃশ্বাসটা ছেড়েছে জানো? 

-স্যার?

-তোমাকে এসবে জড়ানোর কোনো প্ল্যানিংই ছিল না আমার ভোর। কিন্তু যে কষ্টটা আমি আমার সবচেয়ে আদরের, সবচেয়ে প্রিয় মানুষটাকে হারিয়ে পেয়েছি সেটা তো তোমার ওই রোদকেও পেতে হবে ভোর। আর সারাজীবন এই আক্ষেপটা নিয়ে বাঁচতে হবে যে, যার জন্য ও আমার ফুলের মতো বোনটাকে ঠকিয়েছে, তাকেও রোদ পাবে না। অন্তত আমি বেঁচে থাকতে তো নয়ই।

-আপনার ভুল হচ্ছে স্যার। রোদ ভাইয়া কখনো কাউকে ঠকাতে পারে না। 

-আমার মুখের কথা তোমার বিশ্বাস হলো না তো ভোর? আমার কাছে প্রমাণও আছে। এই নাও রশ্নির মোবাইল। মেসেজ ফোল্ডারে চেক করে দেখো। কিছু পাও কিনা। আর হ্যাঁ? মোবাইল দিচ্ছি বলে মনে মনে খুশি হয়ে লাভ নেই। রশ্নির মোবাইলের সিমটা আমি যত্ন করে নিজের কাছে রেখে দিয়েছি। আর তোমার মোবাইলের সিমটাও আপাতত আমার কাছেই থাক। ২০ মিনিট সময় দিয়ে যাচ্ছি। কাজী সাহেব চলে আসবেন। এর মধ্যেই শাড়ি, গয়না পড়ে রেডি হয়ে নাও। নইলে যে অবস্থায় আছো সেই অবস্থাতেই বিয়ের জন্য 'কবুল' বলতে হবে। বারবার কিন্তু তোমাকে সুযোগ দিবো না আমি।

তাসমিদ ভোরের হাতে একটা মোবাইল ধরিয়ে দিয়ে ভোরের মোবাইলের ভাঙা অংশগুলো আর সিমটা কুড়িয়ে নিয়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। আর ভোর ব্যস্ত হাতে রশ্নির মোবাইলের মেসেজ বক্স চেক করতে গিয়ে রোদের নাম্বারে কতোগুলো মেসেজ পাঠানো দেখে থমকে গেল। এতোক্ষণ ভোরের মনে হচ্ছিল হয়তো তাসমিদের কোথাও ভুল হচ্ছে। লোকটা যার কথা ভাবছে সেটা ভোরের রোদ নয়। অন্য কেউ। কিন্তু রশ্নির মোবাইল থেকে রোদকে এতোগুলো মেসেজ করা দেখে কি ভাববে সেটাই বুঝতে পারছে না ভোর। রোদকে অবিশ্বাস করার চেয়ে হয়তো মরে যাওয়া সহজ ভোরের জন্য। কিন্তু বিশ্বাসের ভিদটাও কোথাও যেন একটু নড়বড়ে হয়ে গেছে এই মূহুর্তে। না ভোরের এখন রোদকে বিশ্বাস হচ্ছে, না তাসমিদকে, আর না নিজের নিয়তিটাকে। ঘন রহস্যেঘেরা আঁধার কাটিয়ে সত্যিটা ভোরের রোদ হয়ে ফুট উঠবে কি না কে জানে?

২০!! 

"আমি জানি রোদ আপনি আমার সাথে মজা করছেন। তাই না বলুন? আমি মানছি আমি ভুল করেছি। আমি মানছি আমার উচিত হয়নি ভোরকে নিয়ে আপনাকে সন্দেহ করা আমার উচিত হয়নি। আমি প্রমিস করছি আর কোনোদিন আপনাকে ভুল বুঝবো না, সন্দেহও করবো না। প্লিজ এবারের মতো মাফ করে দিন? আম সরি রোদ।"

"রোদ কাল থেকে কতোবার কল করলাম আপনাকে। আপনি কেন এভাবে আমাকে ইগনোর করছেন রোদ? শুধু শেষবারের মতো মাফ করে দিন না প্লিজ? বিশ্বাস করুন আমি আর আপনাকে কখনো কিছু নিয়ে প্রশ্ন করবো না। প্রমিস। শুধু এটা বলবেন না যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন না। প্লিজ। আপনাকে না পেলে সত্যি মরে যাবো আমি।"

"আপনি কেন এমন করছেন রোদ? আপনি যদি আর দশ মিনিটের মধ্যে আমাকে কল ব্যাক না করেন তাহলে- তাহলে কিন্তু আমি-- আমি সুইসাইড করবো রোদ। আর আমার মৃত্যুর জন্য আপনি দায়ী থাকবেন। শুধু আপনি নন। আপনি আর আপনার ওই ভোর।"

ভোর রশ্নির প্রত্যেকটা মেসেজ পড়ছিল আর মনে হচ্ছিল মেয়েটার বুঝি হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। রোদ মেয়েটাকে ভালোবাসত কিনা বা ঠকিয়েছে কিনা সেসব আর এখন ভোরের মাথায় নেই। ভোর শুধু ভাবছে একটা মেয়ে এতো ব্যাকুল হয়ে আকুতি মিনতি করছে রোদের কাছে ভালোবাসা পাওয়ার আশায়। আর রোদ? সে কি কোনো রিএ্যাক্টই করে নি? ভোর আবার পরের মেসেজটা পড়ার চেষ্টা করলো।

"থ্যাংক ইউ সো মাচ রোদ আজকের এতো সুন্দর একটা দিন আমাকে উপহার দেয়ার জন্য। আমি তো জানতাম এই রোদের প্রত্যেকটা কণায় কণায় রশ্নির নাম লেখা। অযথা এতো নাটক করে আমাকে এতো কষ্ট দিলে কেন তুমি হ্যাঁ? আর ভুলেও কখনো বলবা না যে তুমি আমাকে ভালোবাসো না। তাহলে সত্যি সত্যি মরে যাবো আমি।"

"তুমি আবার আমাকে ইগনোর করা শুরু করেছ না? তোমাকে না বারণ করেছি ও ভোরের সামনেও যাবে না? তবু কেন তুমি ওকে নিয়েই ঘুরছ? ভাবছ আমি জানলাম কি করে? আমি তো আজ তোমাদের দুজনকে একসাথে দেখলাম। কেন নিয়ে যাবা তুমি ওকে? কেন আদর করে নিজের হাতে করে ফুসকা খাইয়ে দিচ্ছিলা ওভাবে? জানো না আমার সহ্য হয় না এসব। তবু কেন বারবার ওই মেয়েটাই তোমার আর আমার মাঝে চলে আসে? কেন কেন কেন? এবার তোমার জীবনে হয় ভোর থাকবে, আর নাহয় আমি থাকবো রোদ। দুজনের একজনকে তোমার বেছে নিতে হবে।"

রশ্নির এতোগুলো মেসেজের মাঝে রোদের একটাই ছোট্ট রিপ্লাই পেল ভোর। সেটা পড়ে পুরো থতমত খেয়ে গেল ভোর। 

"তোমার সাথে আমার না কখনো কোনো রিলেশন ছিল, না এখন আছে, না ভবিষ্যতে কখনো থাকবে। আর ভোরের সাথে আমার কি সম্পর্ক সেটার জবাব আমি তোমাকে দেয়ার কোনো প্রয়োজনও দেখি না। তবু বলছি শোনো। ভোরকে আমি ভালোবাসি। ওর জন্মের পর ওকে প্রথমবার যখন কোলে তুলে নিয়েছিলাম তখন থেকেই ও শুধু আমার ভোর। আমার একার। ওর উপরে আমি কারো নাক গলানো মানবো না। তোমারও না। আর সিনিয়রের সাথে কি করে কথা বলতে হয় শিখে নিও। আর ভালো কোনো ডক্টরের কাছে কাউন্সিলিং করাও তুমি। আর লাস্ট একটা কথা বলছি রশ্নি। তোমার এসব নাটকের এফেক্ট যদি আমার ভোরের উপরে পড়ে তবে তোমার সুইসাইড করা লাগবে না, আমিই তোমাকে আমার আর ভোরের মাঝখান থেকে সরিয়ে দিবো।"

রোদের মেসেজটা পড়ে ভোর কি রিএ্যাক্ট করবে সেটাও ভেবে পাচ্ছে না। রোদ ওকে এতোটা ভালোবাসে সেটা কখনো কল্পনাতেও হয়তো ভাবতে পারে নি ভোর। ভালোবাসার অনুভূতিটা তাই যতটা প্রখর ততটা প্রখর শেষ মূহুর্তে হারিয়ে ফেলার ভয়টাও। রশ্নির দেয়া আরো দুটো মেসেজ পড়তে শুরু করলো ভোর। 

"আমি এতোগুলো ওষুধ খেয়েছি শুনেও তুমি একবার দেখতে পর্যন্ত এলে না রোদ? আমি কি এতোই অবহেলা করার মতো মেয়ে? এতোটাই নিকৃষ্ট যে আমার মৃত্যুতেও তোমার কিছু যায় আসে না? ওকে। ঠিক আছে তাহলে। তোমাকে আর বিরক্ত করবো না আমি রোদ। তোমার অপেক্ষায় থাকবো। যদি কখনো তোমার মনে হয় এক মূহুর্তের জন্যও আমাকে ভালোবেসেছিলে, যদি মনে হয় তোমার বিশাল হৃদয়ের কোনো এক কোণে আমার নামটা এখনো রয়ে গেছে, তাহলে ফিরে এসো। তোমাকে আমি ফিরিয়ে দিবো না প্রমিস।"

"সবাই বলে ভুইলা যা,
কেমন কইরা আমি ভুলি রে
যার লাইগা হৃদয় পুইড়া কয়লা রে মন ময়না রে,
কেমন কইরা ভুলি যে তারে?

গানটা শুনেছ কখনো রোদ? আমার বর্তমান মনের অবস্থাটা ঠিক এই গানটার কথাগুলোর মতো। সবাই বলে যে ছেড়ে গেছে তাকে মনে রেখে কষ্ট পাচ্ছিস কেন? কেন তার জন্য মরে যেতে চাস বারবার? নতুন করে সবটা শুরু কর। নিজের উপরে ফোকাস কর। ইত্যাদি ইত্যাদি। আরো কতো কতো ডায়লগ জানো? কিন্তু ওরা তো জানে না রোদ তোমাকে ছাড়া আমার প্রত্যেকটা দিন কাটে অসহ্য যন্ত্রণায়। প্রত্যেকটা দিনের শুরুতে মনে হয় আমি মরে যাই না কেন? মনে হয় তুমিহীনা জীবনটা না বয়ে বেড়ানোই বোধহয় সহজ হবে। কিন্তু দেখো না? সবাই মিলে জোর করে বাঁচিয়ে রাখতে চাইছে। এভাবে জোর করে কি কয়দিন বাধ্য করবে বেঁচে থাকতে বলো? একটা না একটা সু্যোগ তো পাবোই তাই না? একটা ফ্রুট কাটার বা ছুরি বা ব্লেড? কিছু না কিছু তো পেয়ে যাবোই। তবে তোমার উপরে আর আমার কোনো রাগ নেই রোদ। রাগ নেই তোমার ভোরের উপরেও। কিন্তু কি বলো তো? তুমি অন্য কারো হয়ে গেছ সেটা আমি বেঁচে থাকতে তো মেনে নিতে পারবো না রোদ। ভালোবাসি যে ভিষণ। অধিকার নেই জেনেও অধিকার নিয়ে আঁকড়ে ধরতে যাই বারবার। ভালোবাসবে না জেনেও ভালোবাসার লোভে ছুটে আসি তোমার কাছে। তবে আর আসবো রোদ। তোমার অপেক্ষায় এই রশ্নির শেষ রক্ত বিন্দুটুকুও মাটিতে ঝড়ে পড়লেও তোমার কাছে আসতে চাইবো না আর। রোদের আলোক ছটায় নাহয় ভোরই আলোকিত হোক। রশ্নি দূর থেকেও সেটা সহ্য করতে পারবে না হয়তো। তাই আল-বিদা ভোরের রোদ। ভালো থেকো।"

এটাই রোদকে পাঠানো রশ্নির শেষ মেসেজ। এর পর আর কোনো মেসেজ নেই মোবাইলটায়। মেসেজগুলো পড়তে গিয়ে ভয়ে হাত পা যেন অবশ হয়ে আসছিলো ভোরের। এতো সাংঘাতিক মেসেজ পেয়েও রোদ কেন রশ্নিকে একটু ভালো করে বুঝিয়ে বলে নি সেটাই ভোরের মাথায় ঢুকছে না। একটা মেয়ে সুইসাইড করার প্ল্যানিং করছে সেটা জানার পরও কি করে চুপ করে ছিল রোদ? এরকম আরো বেশ কিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ভোরের মাথায়। কিন্তু প্রশ্নগুলোর উত্তর জানার জন্য কখনো রোদকে সামনে পাবে কিনা কে জানে! আর রোদ ওকে খুঁজে পেলেও দেরি হয়ে যাবে না তো ততক্ষণে?

রোদ ওকে খুঁজে পাবে কিনা কথাটা মাথায় আসতেই ভোরের খেয়াল হলো যে করেই হোক এই বন্ধ ঘরটা থেকে ওকে পালাতে হবে। অন্তত কোনোভাবে রাস্তায় বের হতে পারলে নিশ্চয়ই তাসমিদ কিছু করতে পারবে না। যদিও রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে ভয়টা হুড়হুড় করে বাড়ছে ভোরের। রোদের ওকে খুঁজে পাওয়া পর্যন্ত সময়টা দরকার ওর। একবার রোদ চলে এলে আর কোনো ভয় থাকবে না ভোরের। ভোর আবছা অন্ধকার হাতড়ে রুম থেকে বের হওয়ার রাস্তা খোঁজার চেষ্টা করলো। হাতের ছোঁয়ায় বের হওয়ার একটা দরজা খুঁজে পেতেই টের পেল বড্ড দেরি হয়ে গেছে। ভোর দরজার মরচে পড়া হাতলটা ধরে টেনে খোলার জন্য হাত বাড়ানোর আগেই বাইরের দিক থেকে দরজাটা খুলে গেল। আর সেই দরজা দিয়ে আবার স্টোররুমটায় এসে ঢুকলো তাসমিদ। আর দরজার বাইরে যে বদি নামের গুন্ডা মতন লোকটা দাঁড়িয়ে আছে সেটা বুঝতে দেরি হলো না ভোরের। 

তাসমিদ রুমে ঢুকে ভোরের দিকে চোখ পড়তেই ভ্রু কুঁচকে তাকালো। ভোর ঠিক দরজার সামনে এসে কেন দাঁড়িয়ে আছে সেটা বলে দেয়ার প্রয়োজন হলো না। ভোরের ভীত সন্ত্রস্ত চোখ জোড়াই নিজের ধরা পড়ে যাওয়ার কথা যেন নিরবেই স্বীকার করে নিয়েছে। তাসমিদ ভোরের পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার নজর ঘুরিয়েই হুট করে ভোরের একটা হাত চেপে ধরে রুমের বাইরের দিকে পা বাড়ালো। আর তাসমিদের এমন কাজে ভোর আরো বেশি ভয় পেল। এতোক্ষণ মরিয়া হয়ে বাইরে বের হওয়ার পথ খুঁজলেও এবারে নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে তাসমিদের হাত থেকে ছোটার চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু তাসমিদের লোহার মতো শক্ত হাতের মুঠো থেকে মুক্তি পাওয়া তো দূরে থাকুক, লোকটার ওকে টেনে নিয়ে যাওয়াই আটকাতে পারছে না ভোর। শেষমেশ ভয়ে কেঁদেই ফেললো মেয়েটা। তাসমিদ সেটাও পাত্তা না দিয়ে ভোরকে টেনে স্টোররুমটা থেকে বেরিয়ে আসছে।

-আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আপনি? ছাড়ুন। আমি যাবো না। স্যার ছাড়ুন।

-তোমাকে ২০ মিনিট সময় দিয়েছিলাম রেডি হওয়ার জন্য। কিন্তু তুমি কি করলে? পালাতে চাইছিলে তাই না? এর শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে সুইটহার্ট।  এই পোশাকে বিয়ে করতে চাই নি আমি। কিন্তু তুমি তো নিজেই আমাকে কাজটা করতে বাধ্য করিয়েছ। তাই না বলো? 

-ছেড়ে দিন না আমাকে প্লিজ? আপনার কোনো ভুল হচ্ছে। আপনি একবার আমার কথাটা শুনুন না প্লিজ? রোদ ভাইয়া আসলেই সব-----।

-হুহ। এখনো রোদ! এতো কিছু জানার পরও এখনও সেই রোদের নাম জপ করে যাচ্ছ তুমিও? এই ছেলেটার মাঝে কি আছে সেটাই তো আমি বুঝি না।

-প্লিজ আমাকে যেতে দিন না? আমি প্রমিস করছি স্যার। সত্যিই যদি উনি আপনার বোনের সাথে অন্যায় করে থাকে তাহলে উনিও তার শাস্তি পাবে। আপনি প্লিজ এই অন্যায়টা করবেন না স্যার প্লিজ?

-শাস্তি? শাস্তি দিবে তুমি রোদকে? আচ্ছা বুঝলাম। দিলে শাস্তি। তারপর? আমি আমার কলিজার টুকরো বোনটাকে কি ফিরে পাবো? যাকে তোমার ওই রোদের জন্য হারাতে হয়েছে? বলো? পাবো না। আর অন্যায়ের কথা বলছ? রোদকে ধ্বংস করে দিতে আমি খুন পর্যন্ত করে ফেলতে পারবো এখন, বিয়েটা তবু সাধারণ ব্যাপার।

-দেখুন। আমাকে মেরে ফেললেও তো আপনার বোন ফিরে আসবে না স্যার। তবু কেন-----।

-আর একটাও কথা বলবে না তুমি ভোর। মনে রেখো তোমার রোদকে কিন্তু এখানেই আসতে হবে তোমার খোঁজে। আমার কথার অবাধ্য হয়ে ওর মৃত্যুটা তাড়াতাড়ি ডেকে এনো না। ওকে বিউটিফুল? আপাতত বিয়েটা করে ফেলি চলো? কাজী সাহেব অপেক্ষা করছেন না?

-না প্লিজ।

ভোরের হাজার অনুনয় বিনয় স্বত্বেও তাসমিদ ভোরকে টেনে নিয়ে একটা রুমে নিয়ে এলো। তাসমিদ ভোরকে নিয়ে রুমে ঢুকতেই বদি রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে রইলো। ভোর একবার চেয়ারে বসা লোকটার দিকে তাকিয়ে আবার তাসমিদের দিকে তাকাতেই তাসমিদ চোখের ইশারায় কোনোরকম চালাকি না করার জন্য সতর্ক করে দিলো। ভোর ভয়ে ভয়ে আবার কাজী সাহেবের দিকে ফিরে তাকাতেই দেখলো কাজী সাহেবও ওর দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। ভোরকে এক নজর ভালো করে দেখে নিয়ে লোকটা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ভোরের দিকে এগিয়ে আসছেন। আর ভোর ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে ভাবছে এখানেই কি সব শেষ? ঘুম ভাঙতেই এই দুঃস্বপ্নটা থেকে কি জেগে উঠবে না কখনো? নাকি এটাই ভোরের রোদের জীবনের ক্রুর বাস্তবতা হয়েই থেকে যাবে?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন