০১!!
"চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো
এখন আর কেউ আটকাতে পারবেনা
সম্বন্ধটা এই বার তুমি ভেস্তে দিতে পারো
মা-কে বলে দাও বিয়ে তুমি করছো না।।
চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা সত্যি
আর মাত্র কয়েকটা মাস ব্যাস
স্টার্টিংয়েই ওরা ১১০০ দেবে তিন মাস পরে কনফার্ম
চুপ করে কেন বেলা কিছু বলছো না?!
এটা কি 244 11 39
বেলা বোস তুমি পারছো কি শুনতে
১০-১২ বার রং নাম্বার পেরিয়ে তোমাকে পেয়েছি
দেবো না কিছুতেই আর হারাতে
হ্যালো 244 11 39
দিন না ডেকে বেলাকে একটিবার
মিটার যাচ্ছে বেড়ে এই পাবলিক টেলিফোনে
জরুরি খুব জরুরি দরকার।
স্বপ্ন এবার হয়ে যাবে বেলা সত্যি
এতোদিন ধরে এতো অপেক্ষা
রাস্তার কতো সস্তা হোটেলে
বদ্ধ কেবিনে বন্দী দুজনে
রুদ্ধশ্বাস কতো প্রতীক্ষা।।
আর কিছু দিন তারপর বেলা মুক্তি
কসবার ঐ নীল দেওয়ালের ঘর
সাদা-কালো এই জঞ্জালে ভরা মিথ্যে কথার শহরে
তোমার আমার নাল-নীল সংসার,
এটা কি 244 11 39
বেলা বোস তুমি পারছো কি শুনতে
১০-১২ বার রং নাম্বার পেরিয়ে তোমাকে পেয়েছি
দেবো না কিছুতেই আর হারাতে
হ্যালো 244 11 39
দিন না ডেকে বেলাকে একটিবার
মিটার যাচ্ছে বেড়ে পাবলিক টেলিফোনে
জরুরি খুব জরুরি দরকার।
চুপ করে কেন? একি বেলা তুমি কাঁদছো?
চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি সত্যি
কান্নাকাটির হল্লাহাটির সময় গেছে পেরিয়ে
হ্যালো? তুমি শুনতে পাচ্ছো কি?
এটা কি 244 11 39
বেলা বোস তুমি পারছো কি শুনতে?
১০-১২ বার রং নাম্বার পেরিয়ে তোমাকে পেয়েছি
দেবো না কিছুতেই আর হারাতে
হ্যালো 244 11 39
দিন না ডেকে বেলাকে একটিবার
মিটার যাচ্ছে বেড়ে এই পাবলিক টেলিফোনে
জরুরি খুব জরুরি দরকার।
হ্যালো 244 11 39
244 11 39
হ্যালো ধুর ছাই
হ্যালো......"
এই মুহূর্তে আবীরের উপরে গুরুতর পর্যায়ের রাগ হচ্ছে বেলার। আচ্ছা বারবার আবীর বেলাকে এই গানটাই কেন শুনাবে? একটা গানই তো শুনতে চেয়েছিল বেলা আবীরের কাছে! কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেছে তাতে?
আর এই গানটাইবা কেন? তাও প্রতিদিন? হ্যাঁ-তার নাম বেলা হতেই পারে-তাই বলে আবীর ওকে সব সময় এই গানটা শুনিয়েই কেন টিজ করবে? বেলা তাসমিহা-নামটা কি সে শখ করে রেখেছে? বাবাটাও না যাচ্ছে তাই! মাঝে মাঝে বেলার নিজের বাবার উপরেও রাগ হয়। দুনিয়ায় কি আর কোন নামই ছিল না রাখার মতো? বাবা থাকলে কড়া করে জিজ্ঞেস করতে পারতো হয়তো। কিন্তু সেটা ও তো সম্ভব না।
বাবাকে কখনো দেখে নি বেলা। এমনকি একটা ফটোও না। মা বাবার গল্পও আর আজকাল করে না। এখন আর বেলাও মাকে জিজ্ঞেস করে না বাবার কথা। তবে নিজের মনে হাজারটা প্রশ্ন তার জাগে।বাবা কেমন ছিল দেখতে? খুব সুন্দর?সুদর্শন? লম্বা-স্বাস্থ্যবান? কি জানি?
যা হোক-বেলার মেজাজ এখন সপ্তমে চড়ে আছে। আর বেলার রাগে লাল মুখ দেখে আবীর হেসে গড়িয়ে পড়ছে। বেলা আবীরের কাছে গান শুনবে বলে বায়না করলেই আবীরের কেন জানি এই গানটাই গাইতে ইচ্ছা হয় প্রথমে। রাগ ভাঙাতে পরে যদিও আরো কয়েকটা গান গাইতে হয়-তবুও প্রতিদিন-প্রতিবারেই আবীর অঞ্জন দাশের এই "বেলা বোস" গেয়েই বেলার মুডটাই খারাপ করে দেয়।
আবীর বেলার দিকে তাকিয়ে হাসছে আর ভাবছে। বেলা আজ নিজ থেকে গান শুনতে বায়না করেছে। তার মানে কিছু একটা সুখবর বা কোন খবর তো আছে। কি হতে পারে?
-হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছো কেন বাচ্চাদের মতো? আশ্চর্য!
-গড়াগড়ি কোথায় খাচ্ছি বেলা? বসেই তো আছি। তাছাড়া এই শহরে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো কোন জায়গাও নেই। থাকলে তোমাকে নিয়ে যেতাম। গানটা শুনাতাম। আর তোমার মিষ্টি মিষ্টি লাল নীল মুখ দেখে ইচ্ছে মতো গড়াগড়ি খেতাম----৷
-চুপ করো তো আবীর-। অসহ্য---। যাও তো যাও এখন।
-বেলা?
-------------------------------
-বেলা শুনো না? কাল মাকে তোমার কথা বলেছি। মা তোমাকে দেখতে চায়।
বেলা আবীরের দিকে তাকাল। আবীর তার মাকে বেলার কথা বলেছে? সত্যি? সত্যি বলতে পেরেছে? দেশের নামকরা ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট আসাদ চৌধুরীর একমাত্র ছেলে আবীর চৌধুরী। সে কোন এক গরীব স্কুল টিচারের মেয়েকে ভালোবাসার কথা তার মাকে জানাতে পেরেছে? লজ্জায় তার গলা কি একবারো আটকায় নি? একবারো কাঁপে নি গলাটা? একবারো মনে হয়নি তার বাবা জানতে পারলে ব্যাপারটা কতটা ভয়ংকর হবে?আবীর কি একবারো ভাবে নি যে মেয়েটা নিজের পড়ার খরচ চালাতে বাসায় বাসায় গিয়ে টিউশন করাতে হয় সেই মেয়েটাকে কি করে তার কোটিপতি বাবা মা বউ হিসেবে মেনে নিবেন?
বেলার চুপ করে থাকা দেখে আবীরও চুপ করে বেলার শান্ত ভাবুক মুখ দেখছে। হ্যাঁ, আবীর মাকে বলেছে বেলার কথা। বেলার মা স্কুল টিচার সেটাও বলেছে। স্কুল টিচার হওয়া কি খারাপ? নাকি বেলা গরীব মায়ের মেয়ে বলে খারাপ কোন মেয়ে? গরীব হওয়া তো বেলার দোষ না। বড় কথা হলো আবীর বেলাকে ভালোবাসে। বেলা যখন আবীরকে পাত্তাও দিতো না তখনো আবীর বেলাকে ভালোবাসত। আজ এতোকিছুর পর বেলা যখন চুপ করে আবীরের হাতটা ধরে পাশে বসে থাকে তখনো আবীর বেলাকে ভালোবাসে।আরো কয়েক যুগ পরে যখন বেলা আর আবীর দুজনেই থুরথুরে বুড়ো হবে তখনো আবীর বেলাকে এতোটাই ভালোবাসবে। ব্যাপারটা চিন্তা করেই আবীর একটু শব্দ করেই হেসে ফেলল।
আবীর হাসছে আর বেলা সেটাই প্রাণ ভরে দেখছে। আবীরের হাসি মুখটা দেখে মনটা ভরে যাচ্ছে। এই মূহুর্তে আর কোন দুশ্চিন্তা মাথায় খেলা করছে না। এটা মনে আসছে না-আবীরের বাবা মায়ের সামনে গেলে ঠিক কি কি হতে পারে৷ এটা একবারও মাথায় আসছে না আবীরের বাবা মা ওকে মেনে না নিলে ঠিক কি হতে পারে। বা আদৌ মেনে নিবে কিনা কখনো।
আবীরের হাসিটা একেবারে ছেলেমানুষি হাসি।এতো সুন্দর করে হাসছে ছেলেটা যে বেলার মন চাইছে সারাদিন বসে থেকে ওর হাসিটাই দেখতে। কিন্তু সেটা করা বেলার পক্ষে সম্ভব না। বেলার অনেক কাজ-অনেক দায়িত্ব। তবু বেলার ইচ্ছে করছে সমস্ত দায়িত্ব-সমস্ত কাজ ভুলে সারাজীবন আবীরের পাশে বসে ওর হাসি মুখটা দেখতে৷
মাকে বেলা আবীরের কথা বলেছে আজ। বেলার মা কথাটা শুনে একটু চিন্তিত হয়েছিলেন। পরে অবশ্য চিন্তাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছেন। বেলা যখন পছন্দ করেছে তাহলে আবীরের ব্যাপারে কোন সন্দেহ করা চলে না।
-এভাবে কি দেখছো বেলা?
-দেখছি অনেক কিছু--।
-দু একটা শুনি--। বলো--।
-আবীর-----।
-হুম---।
-তোমাকে গান শুনাতে বলেছিলাম। তার কি হলো?
-আরও শুনবে? এখনো বাকি?
-কি?
বেলার নাকের ঢগায় রাগ দেখে আবীর আবার হাসল। রাগ ভাঙাতেই তাই গান ধরল। আর রাগিয়ে কাজ নেই।
"ওগো, সুখ নাহি চাই।
তোমার পরান পাশে
দিয়ো মোরে ঠাঁই।
তুমি যদি থাক সুখে,
আমারে রাখিয়ো সুখে;
তুমি যদি পাও দুঃখ
যেন দুঃখ পাই।
ওগো, সুখ নাহি চাই।
তোমার পরান পাশে
দিয়ো মোরে ঠাঁই।
নাহি বুঝি কান্না হাসি,
দারিদ্র্য সম্পদরাশি;
তোমা ছাড়া সুখ দুঃখ
সকলি বালাই।।
ওগো, সুখ নাহি চাই।
তোমার পরান পাশে
দিয়ো মোরে ঠাঁই।
ওগো,সুখ নাহি চাই।।"
আবীরের গানের কথাগুলো শুনে বেলা হেসে ফেলল।
-এটা কি ছিল আবীর?
-অতুল প্রসাদের প্রেমের সঙ্গীত---।
আবীরের "প্রেমের সঙ্গীত" শুনে বেলা শব্দ করেই হাসল এবার।আর আবীর ওর দিকে চেয়ে আছে অপলকে।
-এতোক্ষণ কি ভেবে হাসছিলে?
-এখন একদমই বলা যাবে না--।
-কখন বলা যাবে?
-সময় হোক----। চলো বেলা উঠি- তোমার দেরি হচ্ছে না আজ?
-চলো।
আবীর আর বেলা দুজনই গাড়ি থেকে নেমে হাঁটা ধরল। বেলার টিউশনটা এখান থেকে প্রায় ১০ মিনিটের রাস্তা। বেলা একাই যেতে পারে। তবু এই রাস্তাটুকু আবীরের ওকে এগিয়ে দেয়া চাই ই চাই। বেলা জানে আবীরকে এখন যেতে বললেও ও যাবে না। তাই আর বললোও না কিছু।দুজনে নিজেদের মতো করেই কথা বলতে বলতে হাঁটতে হাঁটতে চললো। এক সময় ওরা ওদের গন্তব্যে পৌঁছাবে। কিন্তু জীবনের চলার পথটা ওদের কোন গন্তব্যে নিয়ে ঠেকাবে কে জানে!
০২!!
বেলাকে এগিয়ে দিয়ে অফিসে গেল আবীর। স্বভাবতই আজো দেরি হয়ে গেছে অনেকটাই। নিজেদের অফিস বলেও রক্ষে নেই। সাধারণ কর্মচারীর মতো অনেক বকা খেতে হয় বেচারাকে প্রতিদিন। সেটা অবশ্য কাজ দিয়ে পুষিয়ে দেয় আবার। তবে আজ বকা খেতে হলো না। বকা দেয়ার মানুষটা আজ নিজেই অফিসে নেই।
ভ্রু কুঁচকে চিন্তা করতে লাগলো আবীর। আসাদ সাহেব অফিস কামাই দেয়ার মানুষ নন। তবে আজ হঠাৎ কি হল! শরীর খারাপ! কথাটা চিন্তা করতেই আবীরের বুকের ভিতরটা ধ্বক করে উঠল। প্রায় সাথে সাথেই মোবাইলটা হাতে নিয়ে বাসার ল্যান্ডলাইনে কল দিল। বিজি আসছে লাইন। মায়ের মোবাইলে কল দিল। কল বাজতে বাজতে কেটে গেল দুবার। তৃতীয় বারে রিসিভ করল আবীরের মা মাইশা।।
-কিরে আবীর--। কি হয়েছে?
-মা, বাবা কোথায়?
-কি এক জরুরী মিটিংয়ে গেছে। কেন তুই জানিস না?
-জরুরী মিটিং! কোথায় মিটিং জানো কিছু?
-কই না তো--। জানিসই তো ব্যবসার ব্যাপারে তোর বাবার সাথে আমার আলোচনা হয় না--।কিন্তু মিটিংয়ের কথা তুই জানিস না কেন?
-কিসের মিটিং সেটাই তো বুঝতে পারছি না--। আচ্ছা আমি দেখছি--।
-এতো চিন্তা করছিস কেন? জরুরী কোন মিটিংয়ে গেছে হয়তো---।
-হুম---। আচ্ছা মা। বাবা বাড়ি ফিরলে আমাকে জানিয়ো---।
-আচ্ছা--।
-রাখছি মা।
আবীর চিন্তায় পড়ে গেল। কি এমন মিটিং যার কথা আবীর জানে না? সচরাচর মিটিংগুলো আবীর নিজেই হেন্ডেল করে। সুতরাং অফিসের কোন মিটিং হবে আর আবীর জানবে না তা অসম্ভব। তবে কি হতে পারে?
অপেক্ষা করতে করতে আবীর একসময় হাঁপিয়ে উঠলো। কিছুতেই কাজে মন দিতে পারছে না। এর মধ্যে বাসায় দুবার কল করেছে আবীর। দুবারই হতাশ হয়েছে ওকে। শেষমেশ না পেরে অফিস থেকেই বের হল। বেলাকে কল দিল। জানে বেলা এখন টিউশনে। রিসিভ করবে না। তবু কল দিয়ে একটা মেসেজ দিয়ে রাখল।
"বেলা আমি বাসায় ব্যাক করছি। একটু সমস্যা হয়েছে বাসায়। তুমি সাবধানে যেও। আর আমাকে কল দিও ফ্রি হয়ে।"
বেলাকে মেসেজটা করেই আবীর গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল বাড়ির দিকে। আর এদিকে মোবাইলে মেসেজের টোনটা শুনেই ওপেন করে দেখল আবীরের মেসেজ। কি সমস্যা সেটা বুঝে উঠতে পারল না বেলা। তবে এই মূহুর্তে বেলা নিজেই মহা মুশকিলে আছে। ও এখন বসে আছে আসাদ সাহেবের সামনে। ভয়ে বুকের ভিতরটা ঢিপঢিপ করছে। টিউশনে পৌঁছানোর ১৫ মিনিটের মাথায় একটা নাম্বার থেকে কল এলো। আসাদ সাহেব একটা কফি শপে অপেক্ষা করছে ওর জন্য। কথাটা শুনে আত্মারাম খাঁচা ছাড়া হবার জোগাড় ওর। হন্তদন্ত হয়েই এসেছে। এখন আসাদ সাহেবের সামনে বসে মাথাটা নিচু করে টেবিলের দিকে চেয়ে আছে বেলা। নিজেকে বড্ড বেমানান লাগছে এই বিশাল আর আলিশান রেস্টুরেন্টটাতে।
এখানেই কেন এনেছে আসাদ সাহেব ওকে? আবীরের মা কি আসাদ সাহেবকে সত্যি বলেছে বেলার কথা? সামনে বসা মানুষটা কি অকপটে বসে পাস্তা খাচ্ছে! বেলার সামনেও এক প্লেট পাস্তা। বেলা সেটার দিকেও তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। কি বাহারি জীবন এদের! এটা ওটার পিছনে কতো ফালতু খরচ। আর বেলাদের! সারা মাসের খরচটা জোগাতে ওর আর ওর মায়ের কাল ঘাম ছুটে যায় যেন। আচ্ছা? আসাদ সাহেব কি ওকে আবীরের থেকে দূরে যেতে বলবেন? নাকি মেনে নিবেন নিজের মেয়ের মতো করে?
-এভাবে নার্ভাস হয়ে যাচ্ছো কেন? কি যেন নাম তোমার?
-তা-তাস-তাসমিহা।
-তা তুমি নাকি আবীরকে বিয়ে করতে চাচ্ছো?
-------------------------------
বেলা আসাদ সাহেবের দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো৷ কি বলে মানুষটা! উনি কি এভাবে অপমান করবে বলেই বেলাকে ডেকে এনেছেন? খুব কি জরুরি ছিল কাজটা করার?
-তুমি নাকি আবীরকে বিয়ে করতে চাচ্ছো?
এই প্রশ্নের জবাবে কি বলবে সেটা বেলা বুঝে উঠতে পারল না৷ এমন পরিস্থিতিতে কখনো পড়তে হয় নি। সামনের মানুষটার মুখে অমায়িক হাসি। মনোযোগ দিয়েই ওর মুখের ভঙ্গি বুঝার চেষ্টা করছে মানুষটা। রাগ বা ক্ষোভের ছিটেফোঁটাও দেখতে পাচ্ছে না বেলা। হয়তো উনি স্বাভাবিকভাবেই কথা বলছেন-হয়তো কথাটা বেলাকে অপমান করার জন্য নয়-হয়তো--।
এতোগুলো হয়তোর মাঝে কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল ধরতে পারল না বেলা। মানুষটার চোখ মুখ এক কথা বলছে। আর তীক্ষ্ম কণ্ঠস্বর অন্য কথা বলছে। ঠোঁটের কোণের হাসি দেখলে কানে শোনা শব্দটা বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় না।। আর কানে বাজতে থাকা শব্দটা আর চোখের তীক্ষ্ম চাহনি তার অমায়িক হাসিতেও একটা মলিনতা যোগ করছে-যেটা বেলার নজর এড়াচ্ছে না। মানুষটাকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে আর ভয় দুটোই হচ্ছে। সে এক অদ্ভুত অজানা অনুভূতি। কি করবে বেলা! কি বলবে?
-একটা ব্যাপার জানো? আমি আসাদ চৌধূরী। --ছেলেকে কখনো কোন কাজে বাঁধা দেই নি। কারণ বাঁধা দেয়ার প্রয়োজন হয় নি কখনো--। আবীর এমন ছেলেই না যে ভুল কিছু করবে--। তবে মনে হচ্ছে এইবার ওকে বাঁধা দেয়ার সময় এসেছে-----।
বেলা ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো। পরের অংশটা শোনার জন্য দম আটকে বসে রইলো।
- তা কতো চাও? আই মিন কতো টাকা--। কতো হলে আবীরের জীবন থেকে বিদায় হবে? নাটক করে বিয়ে করবে--। এক দুমাস ঘর করার নাটক করবে- তারপর ডিভোর্স--। টাকা দাবি---। এতো লং প্রোসেসে যাওয়ার সময় নেই আমার। এখনই কতো চাও বলে আবীরের জীবন থেকে চলে যাও। প্রয়োজনে টাকার পরিমাণ ডাবল করে দেয়া হবে---।
ভালোবাসা ব্যাপারটায় টাকার সম্পর্ক কোথা থেকে আসছে বেলা সেটা বুঝে না। ভালোবাসাকে কেন প্রতিবার টাকার সাথে পরীক্ষা দিয়ে পাস করতে হবে? পৃথিবীতে অর্থ-প্রতিপত্তি এসবই কি সুখের মাপকাঠি হয়ে গেছে? নাকি আমরাই একটা অর্থগন্ডির মধ্যে চক্কর খাচ্ছি? বেলা একমনে আসাদ সাহেবের দিকে তাকিয়ে নিজেকেই যেন প্রশ্নগুলো করলো। কিন্তু সেখানেও কোন উত্তর পেলো না।
-এই মেয়ে--। কি? কথা বলছো না কেন?
-আমার জায়গায় আপনার মেয়ে থাকলে কি তাকেও একই কথা বলতে পারতেন? আপনি আমার বাবার বয়সী। বাবাকে কখনো দেখি নি। হয়তো থাকলে আপনার মতোই হতেন----।
-ন্যাকামি করে আত্মীয়তা পাতাতে আসবে না মেয়ে--৷ তোমাদের ছলা কলা আমার জানা আছে।
-কে আপনার সাথে কি করেছে সেটা আমার জানার কথা না আঙ্কেল। তবে আমি আপনার কাছে টাকার বিনিময়ে ভালোবাসা বিক্রি করতে আসিনি---।
-কত টাকা হলে আমার আবীরের পিছা ছাড়বে বলো--। এতো তর্ক করার সময় নেই আমার--।
-আমি বিনা পয়সাতেই আপনার কাজটা করে দিবো। হাজার হোক-আপনি আবীরের বাবা---। আসছি---। আসসালামু আলাইকুম।ওয়েটার?বিলটা দিয়ে যান---।
ওয়েটারকে খাবারের ২৫০ টাকা বিল ধরিয়ে দিয়ে বেলা বেরিয়ে এলো রেস্টুরেন্ট থেকে। চোখ বেয়ে অশ্রু ঝর্ণা হয়ে ছুটতে চাইছে। কিন্তু তাদেরকে দমিয়ে রাখার শক্তি আর মনের জোর দুটোই বেলার আছে। তাই তারা চোখের ভিতরেই আকুতি মিনতি করতে লাগলো। ধীরে ধীরে হাঁটতে লাগল বেলা। কালকে আবীরের সাথে একটা বোঝা পড়া করতেই হবে তার।