মহুয়া - পর্ব ০৯ - শারমিন আক্তার সাথী - ধারাবাহিক গল্প


প্রিয়‌তি এবার হালকা গলায় বলল,
" সৃ‌ষ্টিকর্তা তোমা‌কে কী শা‌স্তি দি‌য়ে‌ছেন?"
" এই যে আমি দু দু‌টো সন্তান হারালাম। এর চে‌য়ে বড় শা‌স্তি কী হ‌বে? য‌দিও প্রেমা যে সন্তান‌কে আমার ব‌লে দা‌বি ক‌রে‌ছে সে আদৌ আমার ছি‌লো কিনা তা আমি জা‌নি না! ত‌বে তবুও কষ্ট হ‌য়ে‌ছি‌লো খুব। আর তোমার আমার সন্তান! যার আগ‌মনের বার্তা শোনার ক‌য়েকঘন্টা পরই তা‌কে হারালাম। প্রথম যখন তু‌মি বল‌লে যে, তু‌মি আমার সন্তা‌নের মা হ‌বে, বিশ্বাস করো নি‌জে‌কে পৃ‌থিবীর সব‌চে‌য়ে সুখী ম‌নে মানুষ হ‌চ্ছি‌লো। ‌কিন্তু ক‌য়েকঘন্টা পর ডাক্তার যখন বলল সব শেষ ঐ মুহূ‌র্তে বার বার ম‌নে হ‌চ্ছি‌লো সৃ‌ষ্টিকর্তা আমা‌কে আমার পা‌পের শা‌স্তি দি‌চ্ছেন। হয়‌তো আরো শা‌স্তি তি‌নি আমা‌কে দি‌বেন। কিন্তু যে সন্তান‌ আসছে শু‌নে মাত্র ক‌য়েকঘন্টায় ম‌নে হাজারটা স্বপ্ন বু‌নে ফে‌লে‌ছিলাম, মাত্র ক‌য়েকঘন্টায় আমার সে স্বপ্নগু‌লো ছাই হ‌য়ে উড়ে গে‌লো। আমি জা‌নি আমার এ শা‌স্ত‌িতে তোমার ম‌নে শা‌ন্তি আস‌বে না, তু‌মি বরং আমা‌কে আরও বে‌শি শা‌স্তি দাও। যা তোমার মন চায়।"

‌প্রিয়‌তি কতক্ষণ চুপ ক‌রে রই‌লো। দূর রাস্তায় ল্যাম্প‌পো‌স্টের আলোর দি‌কে কিছুক্ষণ একম‌নে তা‌কি‌য়ে থে‌কে বলল,
" রিদু মজা কথা শুন‌বে?"
‌রিদু একটু অবাক হ‌লেও বলল,
" হুঁ বলো।"
" তু‌মি বি‌য়ের আগে অবৈধ সম্পর্ক কর‌লে, ‌তোমার ম‌তে তু‌মি অনেক শা‌স্তিও পে‌লে। প্রেমাও হয়‌তো ওর কৃতক‌র্মের শা‌স্তি এক‌দিন ভোগ কর‌বে। কিন্তু আমি কোন পা‌পের শা‌স্তি পেলাম? বি‌য়ের আগে তো আমার কা‌রো সা‌থে বা‌জে সম্পর্ক ছি‌লো না। বা‌জে সম্পর্ক তো দূ‌রের কথা কো‌নো ছে‌লের সা‌থে তেমন বন্ধুত্বও ছি‌লো না। কা‌রো কো‌নো ক্ষ‌তি ক‌রে‌ছি ব‌লে ম‌নে পড়‌ছে না। যতদূর ম‌নে প‌ড়ে সর্বদা যা‌কে পে‌রে‌ছি উপকার ক‌রে‌ছি ক্ষ‌তি কা‌রো ক‌রি‌নি। ত‌বে আমি কোন পা‌পের শা‌স্তি পেলাম? প‌রিবার হারালাম, বোন বিশ্বাসঘাতকতা করল, নি‌জের শা‌রিরীক ক্ষ‌তি হ‌লো, স্বামী মিথ্যা বলল, ধোঁকা দিলো, সব শে‌ষে সন্তান হারালাম। তোমা‌দের শা‌স্তির কা‌ছে আমার শা‌স্তিটা কী হাস্যকর নয়?

তোমরা নাহয় অন্যায় ক‌রে শা‌স্তি পে‌লে? ত‌বে কি‌সের দো‌ষে আমি সবার চে‌য়ে বে‌শি শা‌স্তি পেলাম? আমা‌দের বি‌য়ের পর যত ঘটনা ঘ‌টে‌ছে, ঝা‌মেলা হ‌য়ে‌ছে বা যাই হ‌য়ে‌ছে তা‌তে সব‌চে‌য়ে বে‌শি কথা আমি শু‌নে‌ছি। সব‌চে‌য়ে বে‌শি কষ্ট কিন্তু আমি পে‌য়ে‌ছি। অথচ আমার অন্যায় কী ছি‌লো? প্রেম কর‌লে তু‌মি আর প্রেমা, মজা নি‌লে দুজন মি‌লে। তোমা‌দের মজার ফল প্রথ‌মে ভোগ করল প্রেমার আর তোমার অনাগত সন্তান। তারপর আমার সা‌থে বি‌য়ে হ‌লো, তু‌মি স্ত্রী হিসা‌বে আমা‌কে সহ আমার পু‌রো অস্তিত্ব পে‌লে, সুখী হ‌লে, প্রেমার হিংসা হ‌লো, সে প্র‌তি‌শোধ নি‌লো তোমার উপর। প‌রিবা‌রের থে‌কে বি‌চ্ছিন্ন হলাম আমি, শা‌রিরীক-মান‌সিক ক্ষ‌তি হ‌লো আমার, সন্তান হারালাম আমি, শা‌স্তি ভোগ করলাম আমি। তারপরও বল‌ছো সৃ‌ষ্টিকর্তা তোমা‌কে শা‌স্তি দি‌য়ে‌ছেন? বাহ মজার কথা বল‌লে। প্রিয়‌তি তা‌চ্ছিল্য হে‌সে বলল, যাই হোক আজকাল এসব মজায় আমার হা‌সি পায় না। মন থে‌কে হা‌সিরা হা‌রি‌য়ে গে‌ছে। রিদু আরেকটা মজার ডায়লগ শো‌নো তু‌মি, প্রেমা আর আমার সম্পর্ক নি‌য়ে বল‌তে গে‌লে, মজা তু‌মিও পাই‌ছো, প্রেমাও পে‌য়ে‌ছে কিন্তু মাঝখান থে‌কে শা‌স্তি প্রিয়‌তি না‌মের হতভাগী মে‌য়েটা পে‌লো।"

‌প্রিয়‌তি আর কোনো কথা না বলে ব্যালক‌নি থে‌কে উঠে রু‌মে গি‌য়ে বিছানায় গা এলি‌য়ে দিলো। ব‌সে থাকার মতো শ‌ক্তিটা এখন নেই ওর। শরীটা কাঁপ‌ছে খুব। পে‌টেও খুদায় চো চো কর‌ছে কিন্তু খাবার খাবার রু‌চি নেই। বি‌শেষ ক‌রে হস‌পিটা‌লের কে‌বি‌নে বে‌ডে শু‌য়ে রিদুর বাবার বলা কথা গু‌লো শোনার পর এ ঘ‌রের খাবার গু‌লো যে‌নো বিষ ম‌নে হ‌চ্ছে। রিদুর বাবা বা বা‌কি সবাই ভে‌বে‌ছে প্রিয়‌তির হয়তো হুঁশ নেই। কিন্তু চোখ বন্ধ ক‌রে প্রিয়‌তি সবই শু‌নে‌ছে। প্রিয়‌তি বিছানায় শু‌য়ে চোখ বন্ধ করল। চো‌খের কোন বেঁ‌য়ে কিছু নোনা তরল আবার বা‌লি‌শের গ‌হিনে হারা‌লো।

রিদু এতক্ষণ ব্যালক‌নি‌তেই ঠায় ব‌সে ছিলো। প্রিয়‌তির বলা প্র‌তিটা কথা বারংবার ভাব‌ছে। স‌ত্যি তো অন্যায় সবাই কর‌লো মাঝখান থে‌কে সব‌চে‌য়ে বে‌শি শা‌স্তি কেবল প্রিয়‌তিই পে‌লো। রিদু প্রিয়‌তি‌কে শু‌য়ে থাক‌তে দে‌খে ওর পা‌শে এসে বসলো। মাথায় হাত বু‌লি‌য়ে দি‌তে দি‌তে বলল,
" ঘু‌মি‌য়ো না। কিছু খে‌য়ে তারপর ঘুমা‌বে।"
‌প্রিয়তি ধীর গলায় বলল,
" খি‌দে নেই।"
" তা বল‌লে তো হ‌বে না। তোমার শরীর প্রচন্ড দুর্বল। না খে‌লে তো আবার অসুস্থ হ‌য়ে পড়‌বে। তু‌মি ব‌সো আমি খাবার নি‌য়ে আস‌ছি।"

‌রিদু রান্নাঘ‌রে গি‌য়ে দেখ‌লো হৃ‌দিতা প্রিয়‌তির জন্য ট্রে‌তে খাবার নি‌চ্ছে। রিদু‌কে দেখে বলল,
" ভাই এগু‌লো নি‌য়ে যে‌তে আমা‌কে সাহায্য কর তো। ভা‌বি‌কে কিছু খাওয়া‌তে হ‌বে। দেখ অসুস্থ মু‌খে ঝাল ঝাল খাবার ভা‌লো লাগ‌বে। ঝাল দি‌য়ে চিংড়ি মাছ ভূনা ক‌রে‌ছি, ভা‌বির তো পছন্দ। সা‌থে ভাত আর দু তিন রক‌মের সবজি। আর এই মগটায় দ‌ুধ। ভা‌বি চাই‌লে দুধ দি‌য়ে ভাত খে‌তেও পার‌বে।"
" হুঁ খুব ভা‌লো ক‌রে‌ছি‌স। চল এখন"

খাবার গু‌লো বিছানায় রে‌খে হৃ‌দিতা প্রিয়‌‌তি‌কে ডাকল।
" ভা‌বি ওঠো। খে‌য়ে নি‌বে।"
" আমার খি‌দে নেই হৃ‌দি।"
" বল‌লেই হ‌লো। সারা দিন কিছু খাও‌নি। চ‌লো খা‌বে।"
" না‌রে।"
" ভাইয়া খাই‌য়ে দি‌বে?"
" নাহ।"
হৃ‌তিদা রিদুর দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল,
" ভাই জা‌নিস। পৃ‌থিবীতে মে‌য়েরা বড় অসহায়। তোরা ছে‌লেরা তা‌দের কষ্ট দি‌তে বিন্দু মাত্র ছাড় দিস না। ‌রিদু মাথা নিচু ক‌রে ফেলল। হৃ‌দিতা বলল, হস‌পিটা‌লে বাবার বলা কথাগু‌লো মা আমা‌কে ব‌লে‌ছে। স‌ত্যি মা‌ঝে মা‌ঝে নি‌জের আপন মানুষ‌দের এমন জঘণ্য রূ‌পের কথা শুন‌লে রাগ হয় প্রচন্ড। আর তোর কথা কী বল‌বো? তোর কো‌নো বিষয় তো আমার অজানা নয়। যা হোক তুই রুম থে‌কে একটু বাই‌রে যা। ভাবীর সা‌থে কিছু কথা আছে আমা‌র।"

‌রিদু বাই‌রে যে‌তেই হৃতিদা প্রিয়‌তি‌কে ধ‌রে ব‌সি‌য়ে বলল,
" চো‌রের উপর রাগ ক‌রে মা‌টি‌তে ভাত খাওয়া বুদ্ধিমা‌নের কাজ নয় ভা‌বি।"
" প্রিয়‌তি নিশ্চুপ। 
" শো‌নো ভা‌বি তোমার বো‌নের আর ভাইয়ার বিষয়টা আমি সেই প্রথম থে‌কেই জা‌নি। ভাইয়া আমার কাছ থে‌কে কিছু লুকায় না। তোমার হয়তো অবাক লাগ‌তে পা‌রে ত‌বে গত ক‌য়েক‌দি‌নের ঘটনা শু‌নে আমি আজ বিকা‌লে ভা‌ই‌য়াকে চড় মে‌রে‌ছি। আমি ছোট বোন হিসা‌বে বড় ভাই‌য়ের গা‌য়ে হাত তু‌লি‌নি বরং একটা মে‌য়ে হ‌য়ে আরেকটা মে‌য়ের হ‌য়ে প্র‌তিবাদ ক‌রে‌ছি। মাও সব শু‌নে‌ছে। তি‌নি ভাইয়ার সা‌থে কথা বলা বন্ধ ক‌রে দি‌য়ে‌ছেন। ব‌লে‌ছেন যত‌দিন না তু‌মি ভাইয়াকে ক্ষমা কর‌বে তত‌দিন মা ভাইয়ার সা‌থে কো‌নো কথা বল‌বে না।"
 
‌প্রিয়তি বেশ অবাক হ‌য়ে বলল,
" মা জা‌নেন এসব?"
‌প্রিয়‌তি‌কে কথার জা‌লে ফে‌লে হৃ‌দিতা ঠিকই ওকে ভাত মে‌খে খাওয়া‌চ্ছে। প্রিয়‌তি সে‌দি‌কে খেয়াল নেই। হৃ‌দিতা প্রিয়‌তির মু‌খে আরেক লোকমা ভাত দি‌য়ে বলল,
" আগে জান‌তেন না। আজ ভাইয়া আমা‌কে বিগত ক‌য়েব‌দি‌নের কথা বলার পর আমি মাকে ব‌লে‌ছি। মা‌য়ের আর আমার সা‌পোর্ট সর্বদা তু‌মি পা‌বে। তোমা‌কে একটা কথা ব‌লি, তোমার মন খুব নরম। এক কথায় তু‌মি বলদ টাইপ মে‌য়ে। ভাইয়া একটু নরম হয়ে স‌রি বল‌লে যে‌নো গ‌লে যেও না। তু‌মি এত দ্রুত তা‌কে ক্ষমা কর‌বে না। কাঁ‌দি‌য়ে নাকা‌নি চুবা‌নি খাই‌য়ে ত‌বে তা‌কে ক্ষমা কর‌বে।

জা‌নি ক্ষমা না ক‌রে তো পার‌বে না। সংসার ভাঙা তো সহজ নয়। বি‌য়ে ক‌রে‌ছো সব কিছু মা‌নি‌য়ে বা নি‌জে গু‌ছি‌য়ে নি‌য়ে হ‌লেও সংসার কর‌তে হ‌বে। একটা সম্পর্ক ভাঙার মত পাপ খুব কমই আছে। আর আমার পু‌রো কথা শোনার পর না হয় বা‌কিটা তু‌মি ভে‌বে দেখো। তাছাড়া দেখ‌তে গে‌লে দোষ তোমার বো‌নের বে‌শি। হ্যাঁ ভাই‌য়ের মস্ত পাপ এটাই বি‌য়ের আগে লুলা‌মি মারাই‌ছে। ত‌বে সে কিন্তু তোমার বোন‌কে বি‌য়ে কর‌তে এক পা‌য়ে রা‌জি ছি‌লো। তোমার বোনই ভাইয়া‌কে চিট ক‌রে‌ছে।
 তু‌মি হয়তো জা‌নো না প্রেমার চিট করার পর ভাইয়া এতটা ভে‌ঙে প‌ড়ে‌ছি‌লো যে, মা‌ঝে মাঝে মরার কথা বল‌তো। এক‌দিন তো ঘু‌মের ট্যাব‌লেট কি‌নে এনে‌ছি‌লো রা‌তে খা‌বে ব‌লে। আল্লাহ মে‌হেরবান যে আমি ‌সেটা দে‌খে ফে‌লে‌ছিলাম। প‌রে অনেক ক‌ষ্টে বু‌ঝি‌য়ে ভাইয়া‌কে ঠিক ক‌রে‌ছি। তা‌কে স্বাভা‌বিক কর‌তে কম কষ্ট হয়‌নি আমা‌দের।
তোমার বোন আমার ভাইটার জীবন তো নষ্ট করার চেষ্টা ক‌রে‌ছে, তখন ব্যর্থ হ‌য়ে, এখন আবার তোমার জীব‌নে অশা‌ন্তি কর‌ছে। অামার কী মন চায় জা‌নো তোমার বো‌নের জায়গামত বোম্বাই ম‌রিচ দি‌য়ে সব বিষ ক‌মি‌য়ে দি। কিন্তু সেটা কর‌তে না পে‌রে আফসুস হ‌চ্ছে। তু‌মি কি আরেকটু ভাত নি‌বে?"

‌প্রিয়‌তি খেয়াল করল, ও অনেক ভাত খে‌য়ে ফেল‌ছে। হৃ‌দিতার দি‌তে তা‌কি‌য়ে বলল,
" এত ভাত কখন খেলাম?"
" বয়‌সে তোমা‌দের চে‌য়ে ছো‌টো কিন্তু বু‌দ্ধি‌তে নই। কা‌কে কিভা‌বে সামলা‌তে হয় জা‌নি। তু‌মি আজ থে‌কে আমার কথামত চল‌বে নয়ত নি‌জের ম‌স্তি‌ষ্কের কথা শুন‌বে। খবরদার ম‌নের কথা শুন‌বে না। দেখ‌বে তোমার বোন আর আমার ভাই দু‌টো‌কে কিভা‌বে শা‌য়েস্তা ক‌রি। ‌তোমা‌দের বি‌য়ের আগে ভাইয়া‌কে বার বার ক‌রে ব‌লে‌ছি, তার পূর্ব সম্প‌র্কের কথা যে‌নো না লুকায়। প‌রে জান‌তে পার‌লে সমস্যা বাড়‌বে কিন্তু ছাগলটা আমার কথা শো‌নে‌নি। এখন ওর ছাগলা‌মির জন্য য‌দি ওকে আমি ঘাস, লতা, পাতা আর কাঁঠাল পাতা না খাই‌য়ে‌ছি ত‌বে আমার নাম হৃ‌দিতা নয়। এখন আমি যা ব‌লি তু‌মি মন দি‌য়ে শো‌নো।"

—————

" শো‌নো ভা‌বি একটা কথা ব‌লি, অনু‌শোচনার ‌চে‌য়ে বড় কো‌নো শা‌স্তি নেই। য‌দি কা‌ছের মানুষটা‌কে জ্বালা‌তে পোড়া‌তে চাও, য‌দি চাও সে তার ভু‌লে অনুতপ্ত হোক, প্রচুর অনুতপ্ত হোক; ত‌বে তা‌কে না মার‌বে, না বকা দি‌বে, না চিল্লা‌বে, না রাগ, অভিমান দেখা‌বে, স্বাভা‌বিক ভা‌বে সব কাজ কর‌বে, শুধু তার সা‌থে কথা বলা বন্ধ ক‌রে দি‌বে। আর কৌশ‌লে তার ভুলগু‌লো চো‌খে আঙুল দি‌য়ে দে‌খি‌য়ে দি‌বে। দেখ‌বে এম‌নি জ্ব‌লে পু‌ড়ে কষ্ট পা‌বে। তখন মাফ চে‌য়ে কুল পা‌বে না।"
" তোর ভাই তো অল‌রে‌ডি অনুতপ্ত।"

" বা‌লের অনুতপ্ত। মু‌খে খারাপ কথা আনি‌য়ো না তো। শো‌নো সব ছে‌লেরা কোথাও না কোথাও একই রকম। ও এখন অনুতপ্ত হবার ঢঙ কেন করছে? বি‌য়ের আগে কি ঘোড়ার ঘাস কাট‌ছে না‌কি বাল ফালাই‌ছে? তোমা‌কে দে‌খে আর তোমার সা‌থে কথা ব‌লেই ও তোমা‌কে ভা‌লো‌বে‌সে ফে‌লে‌ছি‌লো। ও তোমা‌কে বি‌য়ের আগে স‌ত্যিটা কেন ব‌লে‌নি সেটা শো‌নো, ও ভাব‌ছে বি‌য়ের আগে জান‌লে, তো তু‌মি ওরে লা‌ত্থি ‌মে‌রে ওকে বি‌য়ে কর‌তে না বল‌তে। বি‌য়ে করার বদ‌লে ওরে পিছা মার‌তে। সে জন্য ভাব‌ছে বি‌য়ের পর বল‌বে। বি‌য়ের পর বল‌লে, বাঙালী মে‌য়েরা আর যাই পারুক স্বামী‌কে ছাড়‌তে পা‌রে না। তখন তো বাধ্য হ‌য়ে স্বামী সা‌থে থাক‌তে হ‌বে। ঐ ছাগলটা তাই ভাব‌ছে।"

" ‌তো এখন আমি কী করবো?"
" কান্নাকা‌টি বন্ধ ক‌রে একদম স্বাভা‌বিক থাক‌বে। কিন্তু ওর সা‌থে কো‌নো কথা বলবে না। তোমার কা‌ছে আসার চেষ্টা করলে বা স্বামী‌গি‌রি দেখাই‌তে আস‌লে, পাছায় লা‌ত্থি মে‌রে বলবা, যা না তোর প্রেমার কা‌ছে। আমার কা‌ছে মারা‌তে কেন আস‌ছিস!"
" এমন বা‌জে ভাষায় বল‌বো?"
" এটা বা‌জে ভাষা না। জাস্ট একটু কড়া ভাষা। একটু কড়া ভাষা বললে কিছু হয় না।"
" কিন্তু।"
" রা‌খো তোমা‌র কিন্তু। বলদা‌মি তো কম ক‌রো‌নি। তোমার বরটা মন থে‌কে ভা‌লো কিন্তু চ‌রি‌ত্রের দিক থে‌কে পুরা ইমরান হাস‌মি।"
" অতটা খারাপও না।"

" না দু‌ধে ধোয়া তুলসী পাতা সে। গা জ্বালা‌নো কথা বলবা না। প্রথ‌মে রিয়া, তারপর প্রেমা, প্রেমার সা‌থে কিছু না কর‌লে,‌ প্রেমা‌কে কো ভূ‌তে প্রেগ‌নেন্ট ক‌রে দি‌য়ে‌ছি‌লো। প্রেমার বাচ্চা তো ওর পে‌টে আকাশ থে‌কে পড়‌ছে। কোথা থে‌কে পড়‌ছে তা কী তু‌মি বো‌ঝো না? তারপর আবার প্রিয়‌তি। হারা‌মি আমার ভাই না হ‌লে র্নিঘাত জে‌লে পাঠাতাম।"
" কিন্তু ও মানুষ ভা‌লো। রিয়ার বিষয়টা তো কম বয়‌সের আবেগ ছি‌লো।"
" তো প্রেমার বিষয়টা কি বড় বয়‌সের উত্তেজনা, লুচ্চা‌মি ছি‌লো!"
‌প্রিয়তি মুখ গম্ভীর ক‌রে বলল,
" তুই-ই তো বল‌লি দোষ প্রেমার।"
" হ্যাঁ বে‌শির ভাগ দোষ স‌ত্যি প্রেমার। তা ব‌লে তোমার বরও ঋষি মহাঋ‌ষি নয়। একটা মে‌য়ে ছলাকলা করল ওম‌নি গ‌লে গে‌লো। তার সা‌থে বিছ‌ানায় চ‌লে গে‌লো। শো‌নো ও না পাপ ক‌রে‌ছে। যিনা ক‌রেছে, যার শা‌স্তি তু‌মি আর আমা‌কে যে বাচ্চাটা ফুপি ডাকতো সে পে‌য়ে‌ছে। ছোচা বিলাই। জায়গা বেজায়গায় ছোচলা‌মি ক‌রে, মুখ দেয়।"

‌প্রিয়‌তি নি‌জে রিদু‌কে কি গা‌লি দি‌বে, হৃ‌দিতার গা‌লি শু‌নে রি‌তিমত রিদুর উপর ওর মায়া হ‌চ্ছে এখন। হৃ‌দিতার দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল,
" থাক বাদ দে এখন।"
" ও জামাই‌রে কিছু বল‌লে এখনও পো‌ড়ে তোমার? জ্ব‌লে খুব?"
‌প্রিয়‌তি দীর্ঘশ্ব‌াস ছে‌ড়ে বলল,
" স‌ত্যিই খুব পো‌ড়ে রে। ভা‌লোবা‌সি যে খুব। পৃ‌থিবীতে ওকেই বোধ হয় আমি এখন সব থে‌কে বে‌শি ভা‌লোবা‌সি।"

হৃ‌দিতা নি‌জের গা‌ম্ভির্য্য বজায় রে‌খে বলল,
" এটাই তো বলদা বাঙালী মে‌য়ে‌দের বলদা‌মি। স্বামী বলতে তা‌দের কা‌ছে সব‌চে‌য়ে দা‌মি। আর স্বামীরা এটা বুঝ‌তে পা‌রে, এবং স্ত্রী‌দের দুর্বল প‌য়েন্ট পে‌য়ে যায় ব‌লেই তো স্ত্রী‌দের সম্মান করে না। নি‌জের মনম‌র্জি ক‌রে। তারা বু‌ঝে যায় তারা আকাম কুকাম যাই করুক তাদের স্ত্রীরা তা‌দের ছে‌ড়ে যা‌বে না বরং মাথায় তু‌লে নাচ‌বে। যার কার‌ণে নি‌জেদের রাজা মহারাজা ভা‌বে আর স্ত্রী‌দের চাকরানী।" 
" তোর ভাই তো এমন নয়।"
" হয়‌তো। কিন্তু ভা‌বি একটা কথা ব‌লি কখনো কা‌রো কা‌ছে নি‌জের দুর্বল প‌য়েন্ট প্রকাশ কর‌বে না। যা‌কে সব‌চে‌য়ে বে‌শি ভা‌লোবা‌সো তার কা‌ছে তা কখ‌নো প্রকাশ কর‌বে না। নি‌জের দুর্বল প‌য়েন্ট এবং সব‌চে‌য়ে ভা‌লোবাসার জায়গাটা সর্বদা গোপন রাখ‌বে। মানুষ যখন তোমার দুর্বল প‌য়েন্ট বা ভা‌লোবাসার জায়গাটা খুঁ‌জে পা‌বে তখনই তারা সেখা‌নে আঘাত কর‌তে শুরু কর‌বে।"
" বুঝলাম।"

" এখন তু‌মি রেস্ট নাও। বেটার হয় আমার সা‌থে আমার রু‌মে চ‌লো। সারা রাত তোম‌া‌কে বোঝা‌তে হ‌বে। এতে ক‌রে ভাইয়াও ছটফট কর‌বে।"
" এটা কী অতি‌রিক্ত হ‌য়ে যা‌বে না?"
" না বরং কম হ‌বে। তু‌মি একা যে‌তে পার‌বে না‌কি ধ‌রে নিব?"
" ধ‌রে নে। শরীর কাঁপ‌ছে খুব।"
" আচ্ছা চ‌লো তোমা‌কে রু‌মে রে‌খে তারপর প্লেট বা‌টিগুলা রান্নাঘ‌রে রাখব।"
" হুঁ"

‌প্রিয়‌তি চ‌লে যাবার কিছুক্ষণ পর রিদু রু‌মে ঢুকে দেখ‌লো প্রিয়‌তি নেই। প্রিয়তি‌কে খুঁজ‌তে খুঁজ‌তে হৃ‌দিতার রু‌মে গি‌য়ে দেখ‌লো প্রিয়‌তি হৃ‌দিতার বিছানায় ঘু‌মি‌য়ে প‌ড়ে‌ছে। একটু অবাক হ‌লো রিদু। তারপর হৃদিতা‌কে বলল,
" প্রিয়‌তি তোর এখা‌নে ঘুমা‌লো যে?"
" ভা‌বি এখন থেকে আমার রু‌মে থাক‌বে। সকা‌লে গি‌য়ে তার সব কাপড় এ রু‌মে নি‌য়ে আসব।"
" মা‌নে? ও নি‌জের রুম ছে‌ড়ে তোর রু‌মে কেন থাক‌বে?"
" তোর সা‌থে কেন থাক‌বে?"
‌রিদু বেশ রাগ করে বলল,
" তুই কিন্তু বেশ বাড়াবা‌ড়ি কর‌ছিস। স্বামী স্ত্রীর ম‌ধ্যে ঢোকা ঠিক না।"
ভাব‌লেশহীন ভা‌বে হৃ‌দিতা বলল,
" হুঁ
" এটা আমা‌দের ব্য‌ক্তিগত ব্যাপার।"
" হুঁ ব‌ুঝলাম। এখন নি‌জের ব্যক্তিগত রু‌মে গি‌য়ে ঘুমা। আর আমা‌কে ঘুমা‌তে দে। রাত দুপু‌রে ক্যাচাল ক‌রিস না তো।"

‌রিদু হৃ‌দিতার দি‌কে বড় চো‌খে তা‌কি‌য়ে বিছানার কা‌ছে এসে প্রিয়‌তি‌কে কো‌লে তু‌লে নি‌লো। শরীর বড্ড খারাপ ছি‌লো প্রিয়‌তির। বিছানায় শু‌তেই গভীর ঘু‌মে ত‌লি‌য়ে গি‌য়ে‌ছি‌লো। তাই হঠাৎ কো‌লে নেয়ায় প্রিয়‌তি অনেকটা হচ‌কি‌য়ে উঠল। রিদু হৃ‌দিতার দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল,
" এরপর আমার বউ‌কে ফুস‌লি‌য়ে নি‌জের রু‌মে আন‌লে তোর হবু ব‌রের সা‌থে বি‌য়ের আগে ডি‌ভোর্স করা‌ব ম‌নে রা‌খিস। তা‌রপর প্রিয়‌তির দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল, ননদ বলল আর ওম‌নি নাচ‌তে নাচ‌তে ননদের রু‌মে এসে ঘু‌মি‌য়ে পড়‌লে? একবারও ভাব‌লে না তোমা‌কে ছাড়া আমার চ‌লে না, ঘুম হ‌বে না।"

‌প্রিয়তি কো‌নো কথাই বলল না। রিদু রু‌মে নি‌য়ে গি‌য়ে বিছানায় শু‌ইয়ে দি‌তেই প্রিয়তি অপর পা‌শে মুখ ঘু‌রি‌য়ে চোখ বন্ধ করল। রিদু পা‌শে শু‌য়ে জ‌ড়ি‌য়ে ধর‌তেই প্রিয়‌তি বলল,
" আমার অসহ্য লাগ‌ছে। প্লিজ মাঝখা‌নে ফাঁকা রে‌খে ঘুমাও।"
‌রিদু আর প্রিয়‌তি‌কে কিছু বলল না। খা‌নিক দূরত্ব রে‌খে শু‌য়ে পড়ল। যখন বুঝ‌তে পারল প্রিয়‌তি গভীর ভাবে ঘু‌মি‌য়ে গে‌ছে তখন আবার আষ্টে পি‌ষ্টে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে ম‌নে ম‌নে বলল,
" আ‌মি তোমার জন্য বেহায়া হ‌তে পা‌রি সারা জীবন। তু‌মি যত না ক‌রো, তারপর বেহায়ার মত বারবার তোমার কা‌ছেই যাব। তোমা‌কে ছাড়া আমার নিশ্বাস চলবে না।"

২৩!!

   সকাল বেলা প্রিয়ম এসে‌ছে প্রিয়‌তির সা‌থে দেখা কর‌তে। গতকাল হস‌পিটা‌লে গি‌য়ে একবার দে‌খে এসে‌ছি‌লো। প্রিয়‌তির বাবা মা জা‌নতো না, প্রিয়‌তি অসুস্থ। আজ সকা‌লে প্রিয়‌মের কা‌ছে শু‌নে খ‌ুব রাগ ক‌রে‌ছে কেন তা‌দের জানা‌নো হয়‌নি! তা‌রপর প্রিয়তিকে কল ক‌রে না পে‌য়ে, রিদু‌কে কল করল ওর খবর নি‌তে। রিদু স্বাভা‌বিক ভা‌বেই কথা বলল। তারা দেখ‌তে আস‌তে চে‌য়ে‌ছি‌লো কিন্তু রিদু বলল,
" আপনারা এখন আস‌লে আবার বাবার সা‌থে ঝা‌মেলা হ‌বে, কথা কাটাকা‌টি হ‌বে, প্রিয়‌তি ডিস্ট্রাব হ‌য়ে যা‌বে। শরীর আরও খারাপ কর‌বে। তারচে‌য়ে বরং বিকা‌লে আমি কথা ব‌লি‌য়ে দিব।"

তারাও ভে‌বে দেখ‌লো রিদুর কথা ঠিক। তাই নি‌জেরা না গে‌লেও প্রিয়ম‌কে দেখ‌তে পাঠা‌লো। প্রিয়ম প্রিয়‌তির রু‌মে ব‌সে আছে। রিদু সকা‌লেই অফিস গে‌ছে। হৃদিতা ওদের নাস্তা দি‌য়ে বলল,
" আপনারা গল্প করুন।"
‌বেশ কিছুক্ষণ টুকটাক কথা বলার পর প্রিয়ম বলল,
" আজ বিকা‌লে ক‌দি‌নের জন্য খুলনা যাব। বড় খালার বা‌ড়ি‌তে।"
খুলনার নাম শুন‌তেই প্রিয়‌তির কাটা ঘা‌য়ে যে‌নো লব‌নের ছিটা পড়ল। তবুও নি‌জে‌কে শান্ত রে‌খে বলল,
" হঠাৎ?"
" এম‌নি। ক‌দিন ঘু‌রে আসি। তাছাড়া কাল তি‌থির বি‌য়ে। আমার এখা‌নে না থাকাটাই বেটার।"

দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে প্রিয়‌তি বলল,
" তা ঠিক। তা ফির‌বি ক‌বে?"
" জা‌নি না।"
" সপ্তাহ খা‌নি‌কের ম‌ধ্যে ফির‌বি?"
" কেন?"
" আমার কিছু কাজ ছি‌লো তোর সা‌থে।"
" কী কাজ?"
" ম‌নে অাছে ইন্টা‌রে পড়াকালীন আমি প্রতিমা‌সে পাঁচশ টাকা ক‌রে একটা ডি‌ পি এস ক‌রে‌ছিলাম, দশ বছর মেয়া‌দে। তখন টিউশ‌নি পড়াতাম তাই প্র‌তিমা‌সে কষ্ট হ‌লেও পাঁচশ টাকা ক‌রে জমা রাখতাম। দশ বছর হ‌য়ে‌ছে কিনা জা‌নি না ত‌বে ডি‌ পি এসটা ভে‌ঙে ফেলব।"
" কেন?
" আমার খুব টাকার প্র‌য়োজন।"
" কে‌নো?"
" প‌রে বল‌বো।"
" ঠিকআ‌ছে কতটাকা বল, আমি না হয় দি‌চ্ছি।"

দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে প্রিয়‌তি বলল,
" না ভাই, তো‌দের প‌রিবা‌রের থে‌কে আর কিছু নিব না।"
" আমার প‌রিবার নয়, আমি দি‌চ্ছি।"
" না‌রে পারব না। তুই বরং খুলনা থে‌কে ফি‌রে আমা‌কে নি‌য়ে একটু ব্যাং‌কে যা‌বি। তারপর ‌ডি পি এস হিসাব ক‌রে বইটা কে‌টেকু‌টে টাকা নি‌য়ে আসব।"
‌প্রিয়ম জা‌নে প্রিয়‌তি শত বার বল‌লেও ও টাকা নি‌বে না। তাই বলল,
" ঠিক আ‌ছে।"
‌প্রিয়ম আরও ঘন্টাখা‌নিক সময় প্রিয়তির সা‌থে কথা ব‌লে বিদায় নিয়ে চলে গে‌লো। 

রা‌তে রিদু ফি‌রে দেখল প্রিয়‌তি ব্যালক‌নি‌তে ব‌সে বাই‌রে তা‌কি‌য়ে আছে। অথচ রোজ রিদু বাসায় ফির‌তে না ফির‌তেই দৌঁ‌ড়ে ওর কা‌ছে আছে। রিদু প্রিয়‌তির কা‌ছে গি‌য়ে ওর মাথায় চু‌মো খে‌য়ে বলল,
" দি‌নে কতবার মা আর হৃ‌দিতা‌কে কল ক‌রে তোমা‌কে চাইলাম তু‌মি কথা বল‌লে না যে?"
" প্রিয়‌তি নিশ্চুপ।"

‌রিদু আর কথা বাড়া‌লো না। প্রিয়তির ম‌নের অবস্থা বুঝ‌তে পার‌ছে ও। ফ্রেশ হ‌য়ে রিদু বিছানায় বস‌তেই দেখল চেকবুক আর নি‌চে চাপা দেয়া একটা কাগজ। রিদু কাগজটা খু‌লে তা‌তে প্রিয়‌তির হা‌তের লেখা দেখ‌লো। কাগজটা পড়া শুরু করল,
" রিদু বি‌য়ের রা‌তে তু‌মি আমার দেন মোহ‌রের দুই লাখ টাকা পুরোটাই দি‌য়েছি‌লে। এবং প‌রে ব্যাং‌কে একাউন্ট ক‌রে তা রে‌খে দি‌য়ে‌ছি‌লে। ব‌লে‌ছি‌লে আমার যেমন ইচ্ছা তেমন খরচ করব। কিন্তু আমি সেখান থে‌কে এক টাকাও খরচ ক‌রি‌নি। ‌দেন‌মোহ‌রের টাকার উপর শুধুমাত্র মে‌য়ের অধিকার। ত‌বে সে টাকা মেয়ে তার ইচ্ছামত কাউ‌কে দি‌তে পা‌রে। আমি তাই আমার টাকাগু‌লো তোমা‌কে দিলাম। চেক লিখে রে‌খে‌ছি। র‌বিবার ব্যাং‌কে গি‌য়ে টাকাগু‌লো তু‌লে তোমার দেনার যতটা পা‌রো শোধ কই‌রো।"

‌রিদুর প্রিয়‌তির লেখাটা প‌ড়ে মনটা খুব খারাপ হ‌লো। বুঝ‌তে পারল ওর বাবার বলা কথাগু‌লো প্রিয়‌তি শু‌নে‌ছে। খা‌নিক রাগও হ‌লো প্রিয়‌তির এমন কা‌জে। প্রিয়‌তির কা‌ছে গি‌য়ে বলল,
" এগু‌লো লাগ‌বে না। আমি ম্যা‌নেজ ক‌রে নি‌বো। এ টাকার হক শুধু তোমার।"
‌বিরস ক‌ন্ঠে প্রিয়‌তি বলল,
" যেখা‌নে মানুষটারই হক নেই আমার; সেখা‌নে টাকা নামক তুচ্ছ কাগজ দি‌য়ে কী হ‌বে? তাছাড়া দেন‌মো‌হেরর টাকা মে‌য়ে তার ইচ্ছামত খরচ কর‌তে পা‌রে বা কাউ‌কে দি‌তে পা‌রে।"

‌রিদু অনেকক্ষণ প্রিয়‌তির দি‌কে তা‌কি‌য়ে থে‌কে বলল,
" মানুষটার উপর হক কেবল তোমারই ছি‌লো আর তোমারই থাক‌বে। হয়‌তো মানুষটা কখ‌নো ভুল প‌থে চ‌লে গি‌য়েছি‌লো। কিন্তু ভুল তো মানুষই ক‌রে। আর ভুল ক‌রে য‌দি ভুল স্বীকার না ক‌রে ত‌বে তা পাপ। ভুল ক‌রে তা স্বীকার ক‌রে ক্ষমা চাই‌লে সৃ‌ষ্টিকর্তাও ক্ষমা ক‌রেন। ত‌বে মানুষ কেন ক্ষমা কর‌তে পা‌রে না?"
‌প্রিয়‌তি একম‌নে রিদুর দি‌তে তা‌কি‌য়ে রইল।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন