আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

মায়াজাল - পর্ব ০২ - সুলতানা পারভীন - ধারাবাহিক গল্প


০৩!!

-বেলা? কি সমস্যা বলো তো? কাল এতোবার কল করলাম ফোন অফ--। আর সকালেই বললা দেখা করো--। বাসায় কি কিছু হয়েছে?

-বাসায় কিছু হতে হবে কেন?আজীব?

-বেলা---? কি হয়েছে বলো?

-বলছি না কিছু হয়নি---।

-এতো রেগে আছো কেন?

-দেখো-। তোমার সাথে রিলেশন আর কন্টিনিউ করা সম্ভব না------।

-ও আচ্ছা। তাই? কেন?

-সম্ভব না মানে সম্ভব না---।

-আচ্ছা বাবা রিল্যাক্স---। কি হয়েছে বলো না?

-বলছি না---?

-বেলা? তাকাও আমার দিকে?

বেলা মুখটা আরো নামিয়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে। আবীরের জীবন থেকে সরে যেতে হবে-মাথায় শুধু এই কথাটাই খেলা করছে বেলার৷ আবীর মৃদু হেসে বেলার মুখটা দু হাতে তুলে ধরলো।

-এই পাগলি? কি হয়েছে বলো না? তোমার চোখ মুখ কতো শুকিয়ে গেছে--।

-ছাড়ো---।

-ছাড়লে খুশি হবে?

-হ্যাঁ হবো---। এভাবে আর সম্ভব নয়।

-আচ্ছা-। কীভাবে শুনি? কি হয়েছে বলো? কি সমস্যা--? কোন ব্যাপারটা তুমি মেনে নিতে পারছো না বলো একবার।

-তোমার ফ্যামেলি----।

-মানে?

-তোমার ফ্যামেলি কখনো আমাকে মেনে নিতে পারবে না আবীর---।

-এ কথা কি কেউ বলেছে তোমাকে--?

-আমি কি গাধা? বুঝি না কিছু? তোমার বাবা কখনোই মানবেন না ব্যাপারটা। এর চাইতে আমাদের আলাদা হয়ে যাওয়াই ভালো--। তাছাড়া--।

-হুম হুম? তাছাড়া--?

-তাছাড়া-----। তাছাড়া আমি অন্য একজনকে বিয়ে করছি---।

-আচ্ছা? তাই? কাকে শুনি---।

-তুমি চিনবে না। সে অনেক বড় বিজনেসম্যান-।

-আচ্ছা? এতে বড় বিজনেসম্যান আর আমি চিনবো না? নাম তো বলো?

-নাম শুনে কি করবে?

-নাম থাকলে তো বলবে তুমি বেলা---।

-তোমার সাথে অহেতুক তর্ক করার মুড নেই আমার৷ এই সম্পর্কটা আর এগুনো সম্ভব না আমার পক্ষে। সেটাই জানিয়ে দিতে এলাম---। 

-------------------------------

আবীর কিছু বলছে না দেখে বেলা মুখটা তুলে তাকাল। আবীরের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। গুরুতর রেগে আছে সে।

-বেলা, ৭ দিন সময় দিচ্ছি তোমাকে--৷ এর মধ্যে ক্লিয়ার করে বলো কি হয়েছে--। নইলে আমি ব্যাপারটা নিয়ে কিছু জানতে পারলে কি হবে তুমি চিন্তাও করতে পারবে না বলে দিলাম৷

দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো বলল আবীর। তারপর বেলার হাত চেপে ধরে গাড়িতে বসিয়ে দিল।

-সিটবেল্ট পড়ো----।

-আমি হেঁটেই চলে যেতে পারব। ৫ মিনিটেরই তো রাস্তা----।

-জানি আপনি ইদানিং অনেক কিছুই পারেন--। তবুও আমিই পৌঁছে দিয়ে আসব----। চুপচাপ বসে থাকেন--।

বেলাকে বাসার গলির সামনে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি ঘুরালো আবীর।

-৭ দিন সময় বেলা---। পরে বলো না আমি তোমাকে সময় দেই নি-----।

কথাটা বলেই আবীর ফুল স্পিডেই গাড়ি নিয়ে চলে গেল। আর বেলা তার যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে রইল।

বেলার বুকের ভিতর ঢিবঢিব করছে। কিছুক্ষণ হার্টবিট এতোটা বাড়ছে যে মনে হচ্ছে যে কেউই ওর হার্টবিটগুলো এমনিতেই গুনতে পারবে। প্রচন্ড ভয় ভয়ও করছে এই মূহুর্তে বেলার। আজ সপ্তম দিন। আবীরকে আজ জবাবদিহি করার শেষ দিন। এই কয়টা দিনে আবীর একটা বারও কল করেনি। অথচ ঠিকই গাড়ি নিয়ে বেলার বাড়ির সামনের গলিটাতেই বসে ছিল। আবীর জানে বেলার টিউশনে যাওয়ার সময়টা। বেলা গাড়িটা ক্রস করা চলে যাওয়ার সময়ও আবীর একটা কথাও বলে নি। বেলা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই শা করে স্পিড তুলে চলে গেছে।

আবীরের এই বিহেভের সাথে বেলা পরিচিত না। আজকে আবার কি হবে সেটাই ভাবছে বেলা। ভয়েই আর পড়াতে বের হলো না বেলা। আর এদিকে আবীরের কলের উপরে কল আসছে। বেলা কলটা রিসিভ করতেও ভয় পাচ্ছে। একবার আবীরের আওয়াজ শুনলেই বেলা আর হয়তো আসাদ সাহেবকে দেয়া কথা রাখতে পারবে না। এই ভেবে কলটা রিসিভ করতেও পারছে না ও।

টুং করে মোবাইলে একটা মেসেজ এলো।

"ভালো চাইলে ফোনটা রিসিভ করো বেলা। নইলে এর পর আমি সোজা বাসা থেকে ধরে আনবো বলে দিলাম।"

বেলা ঢোক গিললো। এই ছেলের বিশ্বাস নেই। বাসায় চলে আসতেও পারে। আর বাসায় এলে কি তুলকালাম কান্ড করে বসবে কে জানে! আবার ফোনটা বাজতে শুরু করেছে। সাথে সাথেই কলটা রিসিভ করল বেলা।

-হ্যালো----।

------------------------------

-হ্যালো?

-ভালো করে বললে বুঝা যাচ্ছিল না কথা? এখন বাসার সামনে আসো---।

-আমার---। আমার তো আজকে টিউশন--টিউশন নেই। আজকে বের হবো না। আর---।

-আর?

-আর--। বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নামছে--। এখন বের হওয়া যাবে না-।

-বের হওয়া যাবে না?

-উহু-----।

-আচ্ছা ঠিক আছে--। আচ্ছা বেলা একটা কথা বলো তো?

-কি-কি কথা?

-না আসলে আমার নিজের কৌতূহল থেকে জিজ্ঞেস করছি আর কি। এই ধরো স্পিড ১৫০ আপ রেখে তোমাদের গলিটা থেকে সোজা বিনা ব্রেকে মেইন রোডের দিকে গাড়িটা চালিয়ে নিয়ে গেলে কি হবে?

-আ-আবীর? কি বলছো এসব--?

-জানতে চাইছি কি হবে? বলো না প্লিজ?

-এমন করো না প্লিজ তুমি-----।

-তুমি আসছো? নাকি আমি গাড়ি স্টার্ট করবো বেলা? জানো তো আমি অযথা কথা বলি না। যা বলি করেও দেখাই--।

-আমি এক্ষুনি আসছি। প্লিজ এমন করো না।

আবীর লাইন কেটে দিল। বেলাকে খুব ভালো ভাবেই চিনে আবীর। আবীর গলির সামনে থেকে গাড়িটা একদম বেলার বাসার সামনে পার্ক করলো। এতোটা রাস্তা টেনশন করে আসতে কি না কি ঘটিয়ে ফেলবে মেয়েটা বলা যায় না। ড্রাইভিং সিটটা একটু হেলিয়ে হেলান দিয়ে চোখের উপর হাত রেখে ভাবতে লাগলো আবীর। বাবার কাছ থেকে এমন কিছু মোটেও আশা করে নি আবীর। নিজের রোল মডেল হিসেবেই বাবাকে দেখেছে আজীবন। গরীব মানুষগুলোর উপর বিরক্তিটা বাবার চোখে ছোটবেলা থেকেই দেখেছে আবীর। কিন্তু তা বলে এভাবে হতদরিদ্র বা মধ্যবিত্ত মানুষগুলোর আত্মসম্মানে আঘাত করবে ভাবে নি কখনো। কিভাবে পারল বাবা এটা ভাবতে যে বেলা জাস্ট অর্থ প্রতিপত্তি এসবের জন্য আবীরের সাথে নাটক করছে এটা বলতে! দরিদ্র হোক বা মধ্যবিত্ত! তাদের ভালোবাসার কি কোন মূল্যই নেই? অর্থ সম্পদ এসবই কি সব?

আর বেলা! সেই মেয়েটারও যথেষ্ট বাড় বেড়েছে। বাবার সাথে দেখা করতে গেছে ভালো কথা। যা বলেছে বেলা শুনেছে। সেটাও বেশ। কিন্তু বেলার কি উচিত ছিল না ব্যাপারটা নিয়ে আবীরের সাথে কথা বলা? সেটা না করে কি করলো মেয়েটা! অন্য একজন বিখ্যাত বিজনেসম্যানকে বিয়ে করবে বলা হচ্ছে! ভাবলো কি করে মেয়েটা এই কথাটাও আবীর বিশ্বাস করবে! আবীর চোয়াল শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে হেলান দিয়ে ভাবছে এসব। 

"তোমার বিয়ে করা বের করছি আজকে আমি বেলা----। আবীরের ভালোবাসাটা দেখেছো রাগটা আজ দেখবে তুমি---। রেডি থাকো--।"

নিজের মনেই কথাগুলো আওড়ালো আবীর। বেলা আসতে ১০ -১৫ মিনিট লাগবে। জানে আবীর। তাড়াহুড়ো করে কাজ করতে সবসময় কিছু না কিছু গুবলেট করে ফেলে মেয়েটা। ব্যাপারটা চিন্তা করতে আবীরের মুখ ভঙ্গির কঠিন ভাবটা কাটলো। রেকর্ডার থেকে গান চালিয়ে দিয়ে চোখ বুজলো আবীর।

"তোমাকে ভালোবাসি বলে হৃদয়ে জেগেছে অদ্ভুত দীর্ঘশ্বাস।।
তোমায় কাছাকাছি পেতে হাতে হাত রেখে চলার তাদিগে-
হৃদয় জুড়ে অজানা আভাস।।

তুমি জানো কি!!??
জানো কি তুমি??!!

তোমার হাতে চোখে মুখে চুলে ঠোঁটে
আমার ছোঁয়ার পরশে রাঙা ফুলের সুবাস।।

তুমি জানো কি!?
জানো কি তুমি!?

তোমার ঠোঁটের কোণের বাঁকা হাসিটা লেগে যেন বুকে আমার৷ 
সেই সাথে তোমার ভালোবাসি বলা আধো মুখটাও ভেসে আছে চোখে আমাআরর।।

তুমি জানো কি??
জানো কি তুমি!!??

আমার বুকে আঁকা ছবি তোমার মুখের-
হৃদয় জুড়ে আজও আবাস তোমার।।
তোমায় ভালোবাসি ভালোবাসি হাহাকার তুলে বারেবার---।।

তোমাকে ভালোবাসি বলে হৃদয়ে জেগেছে অদ্ভুত দীর্ঘশ্বাস।।
তোমায় কাছাকাছি পেতে হাতে হাত রেখে চলার তাদিগে-
হৃদয় জুড়ে অজানা আভাস।।

তুমি জানো কি!!??
জানো কি তুমি??!!

তুমি জানোওওও কি!!????

জানোওওওও কি তুমি???!"

০৪!!

বেলার বের হতে হতে চারদিকে ভালোই অন্ধকার নেমে এসেছে। আবীর যখন বের হতে বলেছে বাসা থেকে তখন থেকে বেলার বুকের ধুকপুকানিরা আরো বেড়ে মোটামুটি ড্রাম বাজানোর মতো অবস্থা হচ্ছে। তার উপরে আবীরের সামনে গেলে যে কি হবে সেটা ভেবেই কূল কিনারা পাচ্ছিল না বেচারি। ছেলেটা এতো রেগে আছে-তার রাগ কমানোর জন্য কি করা যায় সেটা ভাবতে ভাবতেই এতো দেরি। বেশ কিছুক্ষণ চিন্তায় চুল ছিঁড়তে লাগলো বসে বসে বেলা। হঠাৎ করেই মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। আর সেই মতে পনেরো মিনিটে পড়নের ড্রেসটা চেইঞ্জ করে হালকা করে চোখে কাজল টেনে বাসা থেকে বের হলো। মাকে বলে এলো আবীরের সাথে দেখা করেই চলে আসবে।

বাসার বাইরে আসতেই বাসার একদম সামনে আবীরের গাড়িটা দেখে ধাক্কা মতো খেলো বেলা। এই ছেলেটা এতোটা পাগল কেন? একেবারে বাসার সামনে গাড়ি পার্ক করা? এমনটা কেউ করে? আশেপাশের লোকজন কে কি ভাবছে?

 আস্তে করে গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে এসে বসলো বেলা৷ চোখ বুজে নিজের গাওয়া গানের রেকর্ড শুনছে আবীর। শুনছে বলাটা ঠিক হবে না। চোখ বুজে আছে আবীর। শুনছে না ঘুমাচ্ছে বুঝতে পারলো না বেলা। তবে চোখ বুজে সিটে হেলান দিয়ে বসে থাকা আবীরকে দেখতে ভালো লাগছে বেলার৷ গ্রে কালারের এক রঙা ফুল হাতা শার্টটার হাতা কনুই থেকে ফোল্ড করে রাখা। কালো গাবার্ডিং প্যান্টের সাথে সেই লাগছে। চুলগুলো একটু উস্কো খুশকো। তবু কি মায়া মায়া মুখ! একটা সপ্তাহ পর আবীরকে এতো কাছ থেকে দেখছে। এ কয়টা দিন আশেপাশে থাকলেও একবারও এসে কথা বলে নি। এতো রাগ কেন ছেলেটার?

একটু পরেই চোখ খুলতেই বেলাকে দেখে আবীরের চোখ আটকে গেলো। বেলাকে ঠিক কতোটা সুন্দর লাগছে সেটা প্রকাশ করার ভাষা আবীরের নেই। নীল পরী সেজে বসে আছে বেলা৷ গত জন্মদিনে আবীরের গিফ্ট করা নেভি ব্লু শাড়িটা পড়েছে বেলা। কাজলে রাঙা কালো মায়াবী চোখ, কপালে ছোট্ট একটা নীল টিপ, আর টকটকে লাল লিপস্টিক রাঙা ঠোঁট। ইচ্ছে করে যে বেলা এমন করে সেজেছে সেটা ভালোই বুঝতে পারছে আবীর। বেলার মায়াজালে ধরা না দিয়ে আবীর গাড়ি স্টার্ট করলো। মেয়েটাকে সময় দেয়া হয়েছে জবাবদিহি করার। জবাব না দেয়া পর্যন্ত আগ বাড়িয়ে একটাও এক্সট্রা কথা আবীর বলবে না। 

এদিকে ভয় ভয় লাগলেও আবীরকে সমান তালে বিরক্ত করে যাচ্ছে বেলা।

-এই বলো না কেমন লাগছে আমাকে আজকে?

আবীর এসব পাত্তা না দিয়ে চুপ করে গাড়ি চালাচ্ছে। মেয়েটার যথেষ্ট বাড় বেড়েছে। সোজা না করলে মাথায় চেপে বসবে।

গাড়িটা একটা বিশাল বাংলো মতন বাড়ির সামনে হর্ন দিতেই দারোয়ান এসে গেইট খুলে দিলো। আবীর গাড়ির দরজা খুলে দিতেই নেমে অবাক চোখে একবার বাড়িটা আর একবার আবীরকে দেখলো বেলা। ছেলেটাকে কিছু জিজ্ঞেস করলেও এখন জবাব দিবে না৷ জানে বেলা। তবু জিজ্ঞেস করলো।

-এই? এটা কোথায় আনলে? কার বাড়ি?

-তোমাকে কি অন্য মানুষের বাড়িতে নিয়ে তুলবো?

-এটা তো তোমাদের বাড়ি না--।

-এটা আমাদের বাড়ি বেলা---।

-এই বাড়িটার কথা বলেছিলে?

আবীরের নিজের আলাদা একটা বিজনেস ফার্ম আছে। পড়ালেখা করা অবস্থায় নিজের চেষ্টায় করা ওর নিজের ব্যবসা। আর এতো বছরের ব্যবসার প্রফিট থেকে এই বাড়িটা কিনেছে। কথা ছিল বিয়ের পর এখানে ছুটির দিনগুলো কাটাবে ওরা। ভাবতেই বেলার মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। এখানে কেন নিয়ে এলো আবীর?

আবীর একটা কথাও না বলে বাড়ির ভিতরে ঢুকছে দেখে বেলাও পিছুপিছু ছুটলো। একটা রুমে এসে সোফায় গা এলিয়ে শুয়ে গেলো আবীর। বেলাকে বিন্দুমাত্র পাত্তাই দিচ্ছে না সে। 

-এই? আবীর? শোনো না? কিছু বলছি তো তোমাকে আমি--?

-------------------------------

-ধুর--। শুনবে না যখন আমিও চলে যাচ্ছি। ধ্যাত---।

-এক পা ও রুমের বাইরে রাখবা পা ভেঙে বসিয়ে রাখবো এখানে তোমাকে। আর বাড়ি যাওয়ার কথা ভুলে যাও। বেশি বাড় বেড়েছে না? পা লম্বা হয়েছে বেশি তোমার, তাই না? এক সপ্তাহ এখান থেকে কোথাও যাওয়ার চেষ্টাও করো না--। তোমার পাখনা যদি আমি না ছাটাই করেছি তো আমার নামও আবীর নয়?

এক সপ্তাহ এখানে থাকতে হবে শুনে বেলা দু মিনিট থমকে তাকিয়ে রইলো আবীরের মুখের দিকে। সোফায় চোখ বুজে শুয়ে আছে আবীর। একটু চিন্তা করে আবীরের দিকে এগিয়ে এলো বেলা৷ তারপর আবীরের গায়ের উপরেই সোফায় শুয়ে আবীরের গলা জড়িয়ে ধরে মুখের দিকে তাকালো। আবীর চোখ খুলে ভ্রু কুঁচকে বেলার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।

-একদম ভয় দেখানোর চেষ্টা করবে না বলে দিলাম----।

-ভয় দেখাবো কেন আপনাকে? যা সত্যি তাই বলছি--। এখান থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করে দেখুন--।

বেলা অনেকক্ষণ আবীরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। আবীর একবারও ওর চোখে চোখ রাখছে না। এতো রাগ করে আছে? আর কিছু না ভেবেই বেলা চোখ বন্ধ করে আবীরের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। আচমকা বেলার স্পর্শে  অবাক হলো আবীর। না চাইতেও আবীরের হাত দুটো বেলার কোমড় চেপে জড়িয়ে ধরলো। এই প্রথম বেলা নিজে থেকে ধরা দিয়েছে আবীরের বুকে। আবীরও বেলাকে নিয়ে মেতে উঠলো। বেশ অনেকটা সময় পর বেলা আবীরের বুকে মুখ ডুবালো।

-আবীর?

------------------------------

-সরি তো? মাফ করে দাও না প্লিজ? বাবা ওভাবে বলেছে তাই---। আর তোমার জীবন থেকে একেবারে সরে যেতে বলেছিল--। সরি?

-হুম হুম-। বাবার কথাই কথা। আমি তো বানের জলে ভেসে এসেছি। আমার কি হবে সেটা ভাবতে হবে কেন?

-আবীর?

-আর তুমি ভাবলে কি করে তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করবে আর সেটা আমি বিশ্বাস করবো? আর ভালো কিছু মাথায় আসে নি? ইচ্ছে করছে একটা লাগাই ধরে---।

-সরি তো? একটা কেন একশোটা লাগাও--। তবু মাফ করে দাও না? প্লিজ? এই?

-সেটা পরে দেখছি--। এখন চুপচাপ শুয়ে থাকো। টায়ার্ড লাগছে আমার। ঘুমাতে দাও--।

আবীরের বুকে চুপ করে মুখ লুকিয়ে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে গেছে টেরই পায়নি।

-এই বেলা? বেলা? উঠ--।

-বেলা উঠ----।

-মা আরেট্টু ঘুমাই----।

-বেলা উঠ বলছি---।

মায়ের কণ্ঠটা শুনে এবার ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে উঠে বসলো বেলা। আবীর কি তাহলে আসে নি! ও কি তাহলে স্বপ্ন দেখেছে এতোক্ষণ সব! কোন মতে চোখ ডলে ঘুম কাটানোর চেষ্টা করছে বেলা। রুমটা অপরিচিত। রুমের ধবধবে সাদা আলোয় সাদা পর্দা ঘেরা বিশাল জানালায় চোখ পড়তে বেলা চমকে উঠলো। একবার মাকে দেখে পরের বার নিজেকেই একটা চিমটি কাটলো বেলা। ব্যথা পেতেই 'উফ' করে উঠলো। বেলার মা সায়েরা মেয়ের কান্ড দেখে হাসছেন মিটিমিটি।

মায়ের হাসি দেখেও ভ্যাবাচ্যাঁকা খেয়ে গেল বেলা। মাথায় এত্তো এত্তো প্রশ্ন ঘুরছে। ১. মা এখানে কিভাবে? ২. ও তো সোফায় ছিল। খাটে এলো কখন? ৩. আবীরটা কোথায়! আর মোস্ট ইম্পরট্যান্ট প্রশ্ন। ৪. কি হচ্ছে এসব? কিছুই তো মাথায় আসছে না। সায়েরাও কিছু না বলে মেয়ের চুলে হাত বুলিয়ে দিলেন। কিছু বুঝতেই পারছে না বেলা।

-যা তো বেলা, উঠ।  হাত মুখ ধুয়ে নে।

-মা?---।

-যা--। কথা বলিস না৷ 

বেলা সারাদিনই মায়ের পিছনে পিছনে ঘুরছে। সায়েরা এটা ওটা বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন কথাটা। বেলা পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখেছে। কাজের লোকেরা খাবার দিয়ে গেছে সকালে আর দুপুরে। কিন্তু সারাদিনে একবারের জন্যও আবীরকে দেখতে পায় নি বেলা। লোকটা কোথায় চলে গেল কে জানে!

সন্ধ্যার দিকে সায়েরা বেলাকে একটা রুমে এনে টুকটুকে লাল বেনারসি শাড়ি পড়িয়ে দিলেন। তারপর চুল আঁচড়ে খোপা করে সাজাতে বসলেন৷ মুখে চন্দন টিপের ফোঁটা দিয়ে মুখটা সুন্দর করে সাজালেন। চোখে মোটা করে কাজল টানলেন, ঠোঁট লাল রঙা লিপস্টিক, কপালে চন্দন ফোঁটার মাঝখানে লাল টিপ। আর সবশেষে পায়ে আলতা। কি হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছে না বেলা। মা হঠাৎ এভাবে সাজাচ্ছে কেন!

 সায়েরাও মেয়েকে সাজাতে সাজাতে নিজের বিয়ের দিনটায় যেন ফিরে গেলেন। সেদিন সায়েরা বিয়ের জন্য সাজছিল সামনে একটা মানুষ বসা ছিল। হা করে সায়েরার দিকে তাকিয়ে ছিল। একটা বারের জন্যও মানুষটার চোখের পলক পড়ে নি। সাজ শেষ হতেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিল মানুষটা। আর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলেছিলঃ- 

"বউটাকে ভিষণ সুন্দর লাগছে দেখতে। এতো মিষ্টি কেন তোমার মুখটা?"

দিনটার কথা মনে পড়তেই চোখের কোণে কয়েক ফোঁটা পানি এসে জমা হলো৷ সায়েরা চোখের কোণাটা মুছে বেলাকে গয়না পড়াতে লাগলেন। বেলা মায়ের হাত ধরে ফেললো।

-মা? কি করছ এসব! এভাবে সাজাচ্ছো কেন!

-তোর আজ বিয়ে তাই---।

-বিয়ে মানে! কার সাথে! আবীর! আমাকে কিছু বললো না কেন?

-আবীরই আমাকে নিয়ে এসেছে সকালে---। অন্য কারো বাড়িতে হলে এতোক্ষণে দুটো থাপ্পড় দিতাম। ছেলেটা ভালো বলেই------।

-মা তুমি যা ভাবছো?

-আমি কিছুই ভাবছি না---। আবীর আমাকে সবটা বলেছে---। আবীরের বাবা রাজি না বলে কি তুই ছেলেটার সাথে এমন করবি!

-আমি তো ওর জীবন থেকে সরেই যেতে চেয়েছিলাম মা------।

-একটা থাপ্পড় দিব---। ভালোবেসে তারপর কাউকে ছেড়ে চলে যেতে হয়! যে ভুলটা আমি করেছি-সে একই ভুল তুইও কেন করবি?

-মানে?

-মানে কিছু না---। একজনের মৃত্যুর কারণ হতে চাই নি বলে নিজে হাজার বার মরেছি-। তবু--। 

-মা!

-শোন--। ভালোবাসলে আগলে রাখতে শিখতে হয় রে মা। আমি সেটা পারি নি। তুই নিজের সবটা দিয়ে তোর সংসারটা আগলে রাখিস--।

-মা? কিন্তু আবীরের বাবা কখনো যদি না মানে বিয়েটা?

-মানবে। আমার এই লক্ষী মেয়েটাকে পর করতেই পারবে না। আর যাই হোক আবীরের কাছে কিছু লুকাস না। কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অন্তত ওকে একটা বার জানাস-----।

-মা! বাবা কি তাহলে?

-চল বেলা---। তোকে সাজিয়ে দেই ঠিক করে৷ বিয়ের সাজে আমার বেলাটাকে কি সুন্দর দেখতে লাগছে! কখন যে ছোট্ট বেলাটা বড় হয়ে গেল!

নিজের গয়না আর আবীরের দেয়া গয়নাগুলো দিয়ে মেয়েকে সাজিয়ে দিলেন সায়েরা। সাজানো শেষে মেয়েকে দেখে একটু কাজল কানের পিছে লাগিয়ে দিলেন সায়েরা।

তারপর বেলাকে নিয়ে গিয়ে ড্রইংরুমে সোফায় বসালেন সায়েরা। ঘরোয়া বিয়ের অনুষ্ঠান। আবীর আর বেলার ক্লোজ কয়েকজন বন্ধু বান্ধব এসেছে। আর আবীরের কোন এক ভাই। বেলা মাথা নিচু করে ছিল। আবীরের গলা শুনে মুখ তুলে তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে গেল দুজনের। একটু তাকিয়ে থেকেই চোখ ফিরিয়ে নিল দুজনেই। আবীর এসে বেলার পাশে বসলো। 

-বউয়ের সাজে কাউকে অসম্ভব রকমের সুন্দর লাগছে।

আবীরের কথাটা শুনে মুখ তুলে আবীরের দিকে তাকালো বেলা। লাল খয়েরী রঙা পাঞ্জাবি পড়েছে আবীর। মুখটা স্নিগ্ধ তবে গম্ভীর। ঠোঁটের কোণে সবসময়ের দুষ্টু মিষ্টি হাসিটা নেই। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি মুখে যেমন ম্যাচিউরিটি বাড়িয়েছে তেমনি ক্লান্তিটাও ফুটিয়ে তুলছে৷ বেলা আবীরের চোখে চোখ রেখে বোঝার চেষ্টা করছে। ছেলেটা এখনো রেগে আছে কিনা ওর উপর।। আবীরও অবাক চোখে পাশে বসা লাল পরীটাকে দেখছে অপলকে।
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।