বসন্তের ফুল - পর্ব ১৮ - তারিন জান্নাত - ধারাবাহিক গল্প


৩৫!!

গাঢ় কাজলমাখা চোখজোড়ায় অজস্র বৃষ্টির ধারা। ইতিমধ্যে চোখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। সমান তালে নাক টেনে যাচ্ছে প্রেমা। দৃষ্টি অভ্রের দিকে নিবদ্ধ। অভ্র যেদিকে যাচ্ছে প্রেমাও সেদিকে তাকাচ্ছে।তীক্ষ্ণ চোখে মেয়েটিকে একবার পরখ করে নেই।
"মিথ্যুক' কোনো মেয়ের সাথে নাকি কথা বলেনি।(প্রেমা মনে মনে বলে)
হঠাৎ পাশে কারো উপস্থিতি পেয়ে ধ্যান ভাঙে প্রেমার।
" কাঁদছো কেন প্রেমাপু।" (আদ্র)
আদ্রের কথায় প্রেমা অভ্রের থেকে চোখ সরিয়ে আদ্রের দিকে তাকায়। দেখে আদ্র জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। প্রেমা হালকা হেসে জবাবে বলে,
"কাঁদছি না তো,আচ্ছা বলো কেমন আছো?(প্রেমা)
" আমি ভনিতা পছন্দ করিনা,তাই সোজা উত্তর দিচ্ছি আমি ভালো নেই। (আদ্র)
প্রেমা আদ্রের কথায় হাসে।এবং জিজ্ঞেস করে,
"কেন ভালো নেই। (প্রেমা)
" কারণ তুমি এই বিয়েতে খুশী নও,আর আমিও চাই না আরিয়ান ভাইয়ের সাথে তোমার বিয়ে হোক।তাই আমি ভালো নেই। (মৃদু কন্ঠে বলে আদ্র)
আদ্রের কথায় প্রেমা চোখ বড় করে তাকায়। সাথে অবাক হয়।আদ্র কেমন বড় মানুষদের মতো কথাবার্তা বলছে।যা প্রেমার হজম হতে সময় নিচ্ছে।
"তেমন কিছু না আদ্র।আমি..(প্রেমা)
" সময় এখনো আছে...(কথাটা বলে আদ্র ধুম করে প্রেমার পাশ থেকে উঠে চলে যায়)
প্রেমা হতবাক হয়ে আদ্রের যাওয়ার দিকে থাকে।আদ্র যেতে যেতে একবার ডানপাশে তাকায়।তারপর বড় একটা হাসি দিয়ে উপরে চলে যায়। 
 
অনেক্ষণ ধরে সাইকান মুখ ভাড় একবার অভ্রের দিকে একবার অভ্রের সোজা দাড়ানো মেয়েটির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। কার উপর রাগ করবে ভেবে পাচ্ছেনা। নিজের বন্ধু সমতূল্য ভাইয়ের উপর নাকি নিজের প্রাণপ্রিয় গার্লফ্রেন্ডের উপর। তবে মুখে কিছু উচ্চারণ করার সাহস নেই। হয় একজন পা থেকে জুতা খুলে ছুড়ে মারবে,আর অপরজন ব্রেক-আপ দিয়ে দিবে।
তাই নিরুপায় হয়ে চেয়ে আছে। কারণ অভ্রের কথায় জেরিন সাইকানের সাথে রিলেশন করতে রাজি হয়েছিলো।তল-বেতাল হলেই ভালাবাসার মানুষ হারাতে হবে।
" এতো হাইপার হচ্ছিস কেন?(অভ্র)
"কোথায়?  (মুখ ভেংচি দিয়ে বলে সাইকান)
সাইকানের মুখ ভেংচি দেখে অভ্র আর জেরিন দুজনে হেসে উঠে।
ঘড়িতে নয়টা হওয়ার সাথে সাথেই অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যায়। সবাই রেডি হয়ে চলে আসে। হলুদ মাখিয়ে গোসল আগে করানো হয়েছে।তাই এখন মেহেদী দেওয়া বাকি।এবং কেক কাটবে।
আরিয়ানের সাথে স্টেজে বসাতে চাইলে প্রেমা না করে দেয়। শরীর খারাপের বাহানা দিয়ে। তাই আরিয়ানের মা মন খারাপ করে ফেলে।পরে প্রেমার শরীরের কথা ভেবে আর কিছু বলেনি।
সবাই বসে আছে আরিয়ানের সাথে স্টেজে উঠার জন্য।আর অন্যদিকে আরিয়ানের ফ্রেন্ডরা মিউজিক অন করে রীতিমতো নাচতে শুরু করে দেয়। সবকিছুতেই এখন প্রেমা বিরক্ত হচ্ছে। বিরক্তির একদম শেষ সীমান্তে পৌঁছে গেছে তবুও চুপচাপ বসে আছে সোফায়। অভ্রকেও দেখছেনা প্রেমা।নাহলে অভ্রের দিকে হলেও তাকিয়ে থাকতো। এ কাজটাই প্রেমা বিষণ তৃপ্তি পায় এখন।
দশটার কাছাকাছি। এখনো সবার স্টেজে উঠা শেষ হচ্ছেনা। প্রেমাক অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।মানুষ কয়বার কেক খাওয়ার জন্য স্টেজে উঠতে পারে এসব ভেবে। প্রেমার একপাশে নাতাশা।অন্যপাশে প্রিয়া বসে আছে। প্রেমার মা-বাবা আরিয়ানের মা-বাবার সাথে ব্যস্ত। 
হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে থেকে অভ্রকে বের হতে দেখে প্রেমা। 
ফোনের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ।আশেপাশে কোনো কিছুর খেয়াল নেই তার।প্রেমার দিকে তো এক সেকেন্ডের জন্যও তাকায়নি অভ্র।যা দেখে প্রেমার চোখে পানি চলে আসে আবারও। অভ্র ফোনের দিকে দৃষ্টি রেখে সিঁড়ি বেঁয়ে উপড়ের দিকে উঠতে শুরু করে।
প্রেমা অভ্রের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। এরপর নাতাশার দিকে তাকায়।দেখে মনোযোগ দিয়ে নাচ দেখছে।
" ভাবি? (প্রেমা)
"হু বলো। (নাতাশা)
" মেহেদী পড়াবে কখন? (প্রেমা)
"এখন না,সাড়ে এগারোটার দিকে,অনুষ্টান শেষ
হোক (নাতাশা)
" আমার শরীর খারাপ লাগছে,একটু রেস্ট নিলে 
ভালো লাগতো। যাবো?(প্রেমা)
প্রেমার কথায় নাতাশা প্রেমার দিকে চোখ দেয়,তারপর কিছু একটা ভেবে বলে" ঠিক আছে যা।আমি ডেকে নিবো। "(নাতাশা)
প্রেমা অপেক্ষা না করে সবার দৃষ্টি অগোচরে অভ্রকে অনুসরণ করে উপরের দিকে চলে যায়। অভ্র রুমে প্রবেশ করার পরপরেই প্রেমা প্রবেশ করে ধরাম করে দরজাটা লাগিয়ে দেয়।
এতো শব্দের মাঝে দরজা বাঁধার শব্দ অন্য কারো কানে না পৌঁছালেও অভ্রের কানে এসে ঠিকি পৌঁছেছে। প্রেমার দিকে না তাকিয়ে মৃদু হেসে অভ্র মনেমনে অভ্র বলে উঠে,
" পাখি এবার নিজ থেকে এসে ধরা দিয়েছে।"(অভ্র)
প্রেমা দরজা লাগিয়ে অভ্রের দিকে ফিরে তাকায়। দেখে অভ্র অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। আজ যাই হোক অভ্রকে ওর মনের কথা বলবেই বলবে।যদি ফিরিয়ে দেয় তাহলে তাহলে বুঝিয়ে দেবে প্রেমা আসলে কী? কিন্তু এতো সাহস অভ্রের চোখের দিকে তাকালে নিমিষে উধাও হয়ে যায়৷ কীভাবে বলবে? শুরুটা কেমন হলে ভালো হবে ভেবে পাচ্ছেনা।
প্রেমা ক্ষ্রীপ্তগতিতে অভ্রের কাছে এসে দাঁড়ায়। এবং অভ্রের হাত ধরে। প্রেমার হাতের স্পর্শ পেয়ে অভ্র প্রেমার দিকে ফিরে তাকায়। প্রেমাকে দেখতেই অভ্রের বুক কেঁপে উঠে। বাইরে থেকে যতোই স্বাভাবিক দেখাক না কেন? প্রেমার সামনে অভ্র নিজেই বেসামাল হয়ে যায়।তার উপর আজকের সাজটাও অভ্রের মনমতন।  অভ্র একবার প্রেমার চোখের দিকে তাঁকায়।লাল টকটকে হয়ে আছে এরপর চোখ সরিয়ে থুতনির দিকে তাকায়। রাগ লাগছে এবার অভ্রের।অতিরিক্ত সাজের কারণে তিলটা দেখতে পাচ্ছেনা। জোরপূর্বক নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নেয় অভ্র।
" এখানে কী? (অভ্র)
অভ্রের কথায় প্রেমার রাগ আরো দ্বিগুন রুপ নেয়।
রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে মাথার উরনাটা টেনে মাটিতে ছুড়ে মারে। 
এবার অভ্রের চোখ ছানাবড়া। হঠাৎ এক্সট্রা উরনাটা ফেলে দেওয়াই অভ্র ইতস্তত বোধ করে। 
"লেহেঙ্গাটা তুমি পাঠিয়েছিলে তাই না? (প্রেমা)
প্রেমার কথায় অভ্র ডোন্ট-খেয়ার একটা ভাব নিয়ে হাতের ঘড়ি খুলতে শুরু করে। 
" আমি তোমার সাথে কথা বলছি,কথা
 কান দিয়ে যায় না? (প্রেমা)
" বের হও আমার রুম থেকে,আমি ঘুমাবো।(অভ্র)
অভ্রের কথায় প্রেমার এবার কান্না চলে আসে। এ কেমন ছেলের জন্য কাঁদছে ও ভেবে পাচ্ছেনা। 
" তখন তুমি ভাবিকে ইশারা করেছিলে
 আমি দেখেছি অভ্র।(প্রেমা)
প্রেমার কথায় অভ্র মৃদু হেসে প্রেমার দিকে 
তাঁকায়,এবং বলে,
"তুমি দেখার জন্যেইতো ইশারা করেছিলাম, নাহলে কথাটা তো আমি ফোনে মেসেজ দিয়েও জানাতাম পারতাম।ইশারার কী দরকার ছিলো? 
'হাউ স্টুপিড ইউ আর।"(অভ্র)
অভ্রের কথায় এবার প্রেমা শান্ত হয়ে যায়।
নিজের কথায় নিজে লজ্জায় পড়ে যায়। অসহায় দৃষ্টি নিয়ে অভ্রের দিকে তাকায়। দেখে অভ্র ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। এরপর হঠাৎ প্রেমার আদ্রের বলা একটা কথা মনে পড়ে যায়।অভ্র অপরিপক্ক বিছানা পছন্দ করেনা। তাই দ্রুত পা চালিয়ে প্রেমা বিছানার পাশে গিয়ে বিছানা এলোমেলো করে দেয়।এবং অভ্রের দিকে তাকায়।দেখে অভ্র ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। প্রেমা দেখছে অভ্র তাতেও রেগে যাচ্ছেনা। 
তাই ফুলের গহনাগুলে খুলার জন্য হাত দিচ্ছে। ঠিক তখনি অভ্র এসে প্রেমার হাত ধরে ফেলে,
"পাগলামি করার ইচ্ছে থাকলে,আমার রুমের বাহিরে গিয়ে করো! যাও,(অভ্র)
"যাবো না,তোমার ভাইকে বিয়ে করবো 
না আমি। (প্রেমা)
"তো কাকে করবে?  বি...য়ে..? (ভেঙে বলে অভ্র)
প্রেমা ঝাটকা মেরে অভ্রের হাত সরিয়ে দেয়,
তরপর বলে,
"তোমাকে, তোমাকে, তোমাকে করবো বিয়ে,তোমাকে চাই আমি। আমার ঘুম হারাম করে দিয়ে নিজে ঘুমাতে যাচ্ছে।মিথ্যুক,জীবণেও নাকি কোন মেয়ের সাথে কথা বলেনি।অথচ আজ দাঁত সব বের করে হাসছিলে।মিথ্যুক!!
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে প্রেমা ধপ করে বিছানায় বসে যায়।এবং কাঁদতে শুরু করে। চোখের জল থামার নাম নিবে না হয়তো আর। এতো কষ্ট এর আগে হয়নি প্রেমার।যতটা অভ্রের ইগনোর করাতে হয়েছে। 

প্রেমার কথা শুনে অভ্র একটা শান্তির শ্বাস ছাড়ে।ঠোঁটের কোণায় হাসির রেখা স্পষ্ট। নিজের অনুভুতির মাঝে আজ প্রেমার অনুভুতিও যোগ হয়েছে।জিতে গেছে সে। না প্রেমাকে হারিয়ে নয়।নিজের অনুভুতির সাথে ধরেছিলো বাজি।সেই বাজি তে জিতেছে সে।প্রেমাও তেমন ভাবে ওকে চাই যেমন ভাবে অভ্র প্রেমাকে চেয়ে এসেছে।
প্রেমার সোজা একটা চেয়ার নিয়ে বসে অভ্র।প্রেমা তখনো কান্নাতে ব্যস্ত। অভ্রকে বসতে দেখে প্রেমা অভ্রের দিকে তাঁকায়।
" শেষ??(অভ্র)
প্রেমা এবার জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় অভ্রের দিকে।
"কান্না শেষ নাকি বললাম?(অভ্র)
অভ্রের কথায় প্রেমা আরো জোরে কেঁদে উঠে,
প্রেমার কান্না দেখে অভ্র এবার জোরে হেসে দেয়।এবং একটা রুমাল বের করে প্রেমার চোখ আলতো করে মুছে দেয়।এরপর জিজ্ঞেস করে,
" সিউর! তুমি আমাকে..ই চাও?(অভ্র)
অভ্রের কথায় প্রেমা চট করে উপর-নিচে মাথায় নাড়ায়। যার অর্থ হ্যাঁ।
"তাহলে কান্না থামাও,(অভ্র)
" আমার উত্তর? (প্রেমা)
প্রেমার কথায় অভ্র একবার প্রেমার দিকে তাকায়।
এরপর দাড়িয়ে যায়।ডান হাতের বাহু ধরে টেনে দাড় করিয়ে স্বজোরে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে প্রেমাকে।হঠাৎ অভ্রের এমন আচরণের জন্য প্রেমা প্রস্তুত ছিলো না। পরে বুঝতে পারে অভ্র তার উত্তর দিয়ে দিয়েছে। সব কথার উত্তর মুখ দিয়ে উচ্চারণ করে দিতে হবে তেমন কোনো কথা নেই। কিছু অভ্যক্ত কথা প্রকাশের মাধ্যম অন্যরকমও হয়।যেমনটা অভ্র তার উত্তর দিয়েছে প্রেমাকে। জড়িয়ে থাকা অবস্থায় অভ্র বলে উঠে,"তোমার প্রতি আমার এই কঠিন অনুভুতির জোরেই আজ তুমি আমার কাছে,আমার বুকে,
ইউ আর মাই ওমেন,জাস্ট মাইন"(অভ্র)

৩৬!!

দু'জনের ঠোঁটেই লেগে আছে প্রশান্তির হাসি। কিন্তু প্রেমার কান্না থামার নাম নেই৷ ভয় পাচ্ছে।অভ্র আর ওর মধ্যে সব এখন মিটমাট। কিন্তু আরিয়ানের সাথে বিয়েটা কীভাবে ভাঙবে।ভেবে পাচ্ছেনা। কিন্তু অভ্র যে চুপ থাকার মতো মানুষ না সেটা ভেবে কিছুটা নিজেকে সামলায়।হঠাৎ প্রেমা অভ্রকে হালকা ধাক্কা দিয়ে সরে যায়।ধাক্কা খেলেও অভ্র প্রেমার হাত ছাড়েনি। যার ফলে প্রেমা আবারও অভ্রের বুকে গিয়ে পড়ে।
"কী হয়েছে?(অভ্র)
" ইউ মিথ্যাুক! (প্রেমা)
"আমি কী করেছি। (অভ্র)
" তুমি বলেছিলে তোমার কোনো মেয়ে ফ্রেন্ড নেই 
তাহলে ওই মেয়েটা কে?(নাক টেনে)
প্রেমার কথা শুনে অভ্র হেসে রসিকতার স্বরে বলে,
"আমার এক্স ছিলো। 
প্রেমা সঙ্গে সঙ্গে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে। 
" যাও তোমার এক্সের কাছে।
প্রেমা চলে যেতে চাইলে অভ্র হাত ধরে
 আঁটকায়। এবং বলে,
"মজা করছি,আমার লাইফের ফাস্ট লেডি তুমি,
এবং লাস্ট লেডি তুমিই থাকবে।চিন্তা করো না।"
অভ্রের কথায় একটু স্বস্তি পাই প্রেমা। তাই অভ্রের দিকে তাকিয়ে থাকে।প্রেমাকে রেখে অভ্র রুমের লাইট বন্ধ করে দেয়।প্রেমা কিঞ্চিৎ ভয় পেয়ে যায়।লাইট বন্ধ করার কোনো কারণ ও দেখছে না। অভ্র ফোন বের করে নাতাশাকে একটা মেসেজ দেয়। এরপর ফোন পকেটে রাখে।প্রেমা  আবছা আলোতে অভ্রের কান্ড দেখছে। অভ্র এসে প্রেমার হাত ধরে ব্যালকনির দিকে এগোয়। যাওয়ার পথে ব্যালকনির 
লাইটটাও নিভিয়ে দেয়।
"লাইট বন্ধ করছো কেন?(প্রেমা)
" লাইট বন্ধ করে মানুষ কী করে?(মজা করে)
কথাটা বলে অভ্র ব্যালকনির দরজাটাও বন্ধ করে দেয়।
প্রেমা ভয়ে একটা ঢোক গিলে। প্রেমার ভয়ার্ত দৃষ্টি দেখে অভ্র আলতো হাসে। এবং বলে,
"রিলেক্স! নিরাপদ জায়গায় আসছি।যাতে
 কেউ বিরক্ত না করে। " (অভ্র)
"দেখো আমাকে সবাই খোঁজবে।আমি চলে
 গেলে ভালো হবে।(প্রেমা)
" এসেছিলে কেন? আমি আসতে বলেছি?(অভ্র)
অভ্রের কথায় প্রেমা চুপ থেকে আমতা আমতা করতে
শুরু করে। ওদের দু'জনকে একসাথে দেখলে কেউ ভালো চোখে দেখবেনা। 
"অভ্র প্লিজ আমি যাই,(প্রেমা)
অভ্র প্রেমার কথা কানে না নিয়ে বলে,
" বাইরে ভাবি..নাতাশা ভাবি দাঁড়িয়ে আছে।কেউ আসলে ভাবি রুমে চলে আসবে।তখন বলবো আমরা 
আড্ডা দিচ্ছিলাম।দরজার লক খুলে দিয়েছি।(অভ্র)
অভ্র কথায় চমকে যায় প্রেমা।নাতাশা বাইরে
 দাঁড়িয়ে। তারমানে সে সব জানে।
"ভাবি সব জানে,(প্রেমা)
" জানে, (অভ্র)
ব্যালকনির দক্ষিণ দিকে ফুলের বাগান।প্রেমার হাত ধরে টেনে নিচে বসে অভ্র। প্রেমার থেকে একটু দূরে অভ্র বসে। আঁধার গগনের দিকে চোখ দেয় অভ্র। 
"তোমাকে প্রথম যেদিন দেখেছিলাম,আমি তখন সবেমাত্র ক্লাস টেন এ পড়তাম। আরিয়ান ভাইয়ার সাথে সেদিন না গেলে হয়তো,(থেমে প্রেমার দিকে তাকায়)
অন্ধকারে প্রেমার ছায়া স্পষ্ট। অভ্র কথাটা অসম্পূর্ণ রেখে মৃদু হেসে প্রেমার হাতটা ধরে। চেপে ধরে বলে,
" আমি ঘুমাতে পারিনা,ঘুম হয় না আমার। বড়জোর দু'ঘন্টা ঘুমায়।কখনো কখনো সারারাত সজাগ থাকি। আজ ঘুম পাচ্ছে, ঘুমাতে চাই আমি। (অভ্র)
"কেন ঘুমাতে পারো না? আর সারা রাত কীভাবে জেগে থাকো? আমার তো মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায়।(প্রেমা)
প্রেমার কথায় অভ্র ছোট করে শ্বাস ছাড়ে। মনের মধ্যে কষ্ট থাকলে কীভাবে ঘুম আসে।জানা নেই অভ্রের।
অভ্রের মৌনতায় প্রেমার আবার বলে উঠে,
" তুমি ঘুমাও তাহলে,আমি যায়।(প্রেমা)
"না, প্লিজ থাকো। আরেকটু, (অভ্র)
অভ্রের অনুরোধ ফেলতে পারেনা প্রেমা। 
মাথা নাড়ায়। প্রেমার থেকে চোখ সরিয়ে অভ্র বলে,
" তোমার চুল দেখেই আমি সেদিন ঘায়েল হয়েছিলাম।
অভ্রের কথায় প্রেমা একটু নড়েচড়ে বসে,
এরপর চুলে হাত দেয়। এরপর ছোট করে বলে,
"ওহ, (প্রেমা)
" তারপর লাস্ট তোমার থুতনিতে থাকা তিল দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। (অভ্র)
ইতিমধ্যে প্রেমা লজ্জায় নুইয়ে যাচ্ছে।এসব ডাইরেক্ট প্রশংসা ওর সহ্য হচ্ছে না।

তারপর কিছু সময় কেটে যায়।দু'জনে চুপ মেরে যায়।
নিরবতা ভেঙে প্রেমা বলে,
"কাল বিয়ে কীভাবে আটকাবে?(প্রেমা)
প্রেমার কথায় অভ্র প্রেমার দিকে তাঁকায় এবং বলে,
" কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করো,দেখতে পাবে।(অভ্র)
"মারিও না প্লিজ,এমনে অন্য উপায়ে আঁটকাও,(প্রেমা)
অভ্র হেসে বলে,
" না মারবো না। (অভ্র)
এরপর অভ্র দাঁড়িয়ে যায়,এবং প্রেমার হাত ধরে টেনে দাড় করায়। একটু ঝুঁকে প্রেমার কানের পাশে এসে মৃদু স্বরে বলে,
"মেহেদী পড়বা,ভালো কথা তবে দু'হাতে না,শুধু এক হাতের তালুতে,জাস্ট একটা ফুল আর ফুলের মাঝে যেনো আমার নামটা থাকে,(অভ্র)
" আরে একটু দিবো কেন? আর নাম দিলে তো সমস্যায় পরবো।কেউ যদি হাত দেখতে চাই তাহলে? (প্রেমা)
" সেটা তুমি জানো,বাট আমি আমার নাম দেখতে চাই।আমি আমার স্পর্শ ছাড়া অন্য কিছুর স্পর্শ ও সহ্য করবো না।(ব্যালকনির দরজা খুলতে খুলতে বলে অভ্র)
" চলো, (অভ্র)
প্রেমার উরনাটা মাটি থেকে তুলে প্রেমার
 মাথায় পড়িয়ে দেয় অভ্র। 
"যাও,ভাবির সাথে নিচে যাও,
" তু..তুমি? (প্রেমা)
অভ্র রুমের লাইট জ্বালিয়ে বলে,
"আমি এখানেই থাকবো,(অভ্র)
" আমার ভালো লাগবেনা তুমিও প্লিজ চলো,
প্রেমার কথায় কিছু একটা ভেবে মাথা নাড়ায় অভ্র,
যার অর্থ সে যাবে। অভ্র আগে যাওয়ার জন্য ইশারা করে। তাই প্রেমা চলে যায়।অভ্র একটা কালো রঙের টি-শার্ট বের করে গায়ে দেয়। রুম থেকে বের হতেই প্রেমা নাতাশার মুখোমুখি হয়। লজ্জায় প্রেমা মাথা নিচু করে ফেলে। তাই নাতাশা হেসে বলে,
"বেশ ভালোয় জাদু করেছে অভ্র,নাহলে
 এভাবে কেউ পাগল হয়?(নাতাশা)
" ধুর, চলো তো। (প্রেমা)
প্রেমা আর নাতাশা নিচে নেমে দেখে পরিবেশ আগের মতোই।সবাই সবার মতো ব্যস্ত। নাতাশা আর প্রেমা সোফায় বসে যায়।পাশে তাকাতেই দু'জনে চমকে যায়। প্রিয়া আদ্রের কোলে ঘুমোচ্ছে।আর আদ্র প্রিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। নাতাশা আদ্রর কাছে গিয়ে বলে,
"আদ্র দাঁড়াও আমি ওকে নিয়ে রুমে শুইয়ে দিচ্ছি।
নাতাশার কথায় আদ্র দাঁত কটমট করে তাঁকায় তবে মুখে কিছু বলতে পারেনি। 

অভ্র রুম থেকে বেড়িয়ে নিচে নেমে আসে। তারপর অভ্রর চোখ যায় ডানদিকে। সেখানে পিয়াস দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। অভ্র বাঁকা হেসে পেন্টের পকেটে দু'হাত গুঁজে দিয়ে পিয়াসের দিকে এগোয়। পিয়াসের পাশে দিয়ে যাওয়ার সময় স্বজোরে বাহু দিয়ে ধাক্কা দেয়। সঙ্গে সঙ্গে পিয়াস রেগে পাশে তাঁকায়। অভ্রকে দেখে আরো দ্বিগুন রেগে যায়। তখন অভ্র মিটিমিটি হেসে ঘাঁড় বাঁকা করে পিয়াসের দিকে তাঁকায়,

" উপ'স  স...রি! আমি দেখিনি, ভাইয়া। (অভ্র)
পিয়াস রেগে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে গিয়েও চুপ মেরে যায়। নতুন আত্মীয়। এভাবে হুট করে কিছু বলা ভালো হবেনা।তাই নিশ্চুপ থেকে চোখ গরম করে অভ্রের দিকে তাঁকায়।অভ্র পিয়াসে রাগীমুখ দেখে  দেখে লম্বা একটা হাসি দেয়।

সাড়ে এগারোটা হতেই নাতাশা প্রেমা মেহেদী পড়িয়ে দেয়।শুধু হাতের তালুতে। একটা ফুল,তার মাঝে অভ্রের নাম সুন্দর করে ছোট করে লিখে দেয়। মেহেদী দেওয়ার ফাঁকে প্রেমা বারবার অভ্রকেই দেখেছে।অন্যদিকে তাকানোর সময় ছিলোনা। 
প্রেমার পর আরিয়ানকে মেহেদী পড়ায়।আরিয়ানের এক মেয়ে বান্ধবী। আরিয়ান প্রেমার পাশেই বসেছিলো। সেসময় একটুর জন্য অভ্র তাদের দিকে তাঁকিয়ে ছিলো। অনেক শান্ত চাহনিতে।প্রেমা না বুঝলেও সাইকান বুঝতে পারে অভ্রের শান্ত দৃষ্টির মধ্যে কতোটা হিংস্রতা লুকিয়ে থাকে।যদিওবা প্রেমা এখনো অবধি অভ্রের সেই রুপের সাথে পরিচিত হয়নি। 

বারোটায় অনুষ্ঠান শেষ যায়। আরিয়ানের ফ্রেন্ডরা চলে যায়। বাকিরা সবাই ঘুমানোর জন্য চলে যায়। প্রেমা চেঞ্জ করে বিছানার দিকে যাচ্ছিলো। তখনি দরজায় করাঘাত কনে ভেসে আসে। তাই প্রেমা বিরক্ত হয়ে দরজা খুলতে চলে যায়। দরজা খুলতেই প্রেমা ভ্রু কুঁচকে ফেলে,সামনে থাকা মানুষটিকে সে হয়তো আশা করেনি। 
"আসবো? (জেরিন)
" হ্য হ্যাঁ আসেন।  (প্রেমা)
"আমি কিন্তু তোমার ছোট আপু,তুমি বলতে পারো।
প্রেমা বিরক্তি চোখে হেসে মাথা নাড়ায়,
" আমাকে অভ্র পাঠিয়েছে তোমার সাথে থাকার জন্য।
অভ্রের কথা শুনে প্রেমা সচকিত চোখে জেরিনের দিকে তাকায়। তারপর স্পষ্ট স্বরে বলে " অভ্র " 
জেরিন দরজা চেপে দিয়ে প্রেমাকে সহ টেনে বিছানায় বসে।এরপর বলে "সাইকানকে চিনো আপু?
" হ্যাঁ..(প্রেমা)
"আমি সাইকানের গার্লফ্রেন্ড।আমি, অভ্র, সাইকান সেম কলেজে,সেইম ক্লাসে।  (মিষ্টি হেসে বলে)
এবার প্রেমা জেরিনের দিকে ভালো করে তাঁকায়।মোটামুটি সুন্দরই আছে। 
" আচ্ছা আমি শুয়ে পড়ছি আপু,তুমিও শুয়ে পড়ো।
"আচ্ছা অভ্র কোথায়? ঘুমিয়েছে? (প্রেমা)
জেরিন প্রেমার দিকে তাঁকিয়ে বলে,
" জানিনা,তুমি গিয়ে দেখে আসতে পারো।(জেরিন)

জেরিনের কথায় কিছু একটা ভাবে প্রেমা।তারপর জেরিনের পাশে শুয়ে পড়ে।কালকের কী হবে কে জানে। চোখ বন্ধ করে ঘুমাতে গিয়ে অভ্রের কথা মনে পড়ছিলো প্রেমার। ঘুমাতে পারছেনা।তাই শুয়া থেকে উঠে যায়। এবং রুম থেকে বের হয়ে যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন