মোবাইল পাগলী (পর্ব ০১)


০১!!

আইসিটি ক্লাশে বসে বসে ফোন টিপছিলাম। এর মধ্যেই সুনিতা ম্যাম এসে বলে,
-প্রিয়া, ক্লাশে কি করছো? (ম্যাম)
- কই কিছুনা তো।
- দুষ্টুমি করছো, আবার বলো কিছুনা। যাও বাহিরে যাও
- ওকে ম্যাম।
- বইটা নিয়ে যাও, বাহিরে বসে পড়বে। (কিছুটা রাগ করে)
- ঠিক আছে ম্যাম।
ম্যামের কথামত বই নিয়ে বাহিরে চলে আসলাম। কি ভাবছেন, আমি এরকম চুপচাপ কেন ম্যামের কথায় বাহিরে আসলাম? আরে বুঝেন নাই? ঠিক আছে আমিই বলি, কিন্তু তার আগে ফোনটা বই থেকে বের করি।
- ঐ তোর সমস্যা টা কি রে? (আকাশ)
- তুই বাহিরে আসছিস কেন?
- কেন আবার জানিস না তুই?
- ওহ, মেঘলাকে দেখার জন্য?
- থাপ্পড় খাবি কিন্তু
- দে।
- দয়া করে কি ফোন থেকে মুখটা তুলে একটু আমার দিকে তাকাবেন ম্যাডাম?
- আরে বলনা তুই, আমি শুনছি তো।
- আচ্ছা এভাবে আর কতদিন ইচ্ছে করে ক্লাশে দুষ্টুমি করে বাহিরে বের হবি?
- আচ্ছা আকাশ, বলতো আমি বাহিরে কেন বের হই?
- কেন আবার! ফোন টিপার জন্য।
- হ্যাঁ, তুইতো জানিসই আমি ফোন ছাড়া থাকতে পারিনা তাহলে কেন অযথা এক প্রশ্ন প্রতিদিন করিস?
- এভাবে যে পড়াশোনার বারোটা বাজাচ্ছিস সেদিকে কি খেয়াল আছে?
- এটা নিয়ে ভাবিনা।
- কেন?
- তুই আছিস তো। তুই থাকতে আমার আবার টেনশন কিসের?
- হ্যাঁ সেটাই তো। কিন্তু তুই বাহিরে বের হলে যে আমার কষ্ট হয় তা তুই বুঝিস না?
- এখানে কষ্ট হওয়ার কি আছে আবার।
- তাইতো!! কিছুনা। (রাগ করে)
- (চুপ)
-ঐ আমি রাগ করেছি রাগ ভাঙ্গাস না কেন?
- (চুপ)
- থাক তুই তোর ফোন নিয়া আমি চললাম।
- (চুপ)
- তাও চুপ করে থাকবি তুই? আমি যাচ্ছি আমাকে আটকাস না কেন?
- তোর পিছনে কে দেখ।
- কে?
- দেখ তুই
- হায় আল্লাহ্! মেঘলা।
- হুম
- তুই তো ফোন নিয়া ব্যস্ত তাহলে আবার কে কোথায় দেখিস কিভাবে?
- ঐটা তুই বুঝবিনা। এখন যা, ওর রাগ ভাঙ্গা। বাই
- তুই কোথায় যাচ্ছিস?
- কলেজ ছুটি দিয়েছে তাই বাড়ি যাবো।
- তুই দাঁড়া, আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসছি।
- আচ্ছা যা।
ভাবছেন মেঘলা কে? আবার আকাশ ই বা কে? আকাশ হলো আমার একমাত্র জানেমন বেষ্টফ্রেন্ড। সবসময় সবকিছুতে আমায় হেল্প করে। খুব ভালোও বাসে আমায় পাগলটা। আর মেঘলা হলো আকাশের হবু জিএফ। মানে আকাশ মেঘলাকে ভালোবাসে, মেঘলাও আকাশকে ভালোবাসে কিন্তু স্বীকার করেনা। কথায় আছেনা, মেয়েদের বুক ফুটে তো মুখ ফুটেনা! আর মেঘলার একটা সমস্যা হলো, আকাশের সাথে কোনো মেয়েকেই সহ্য করতে পারেনা এমনকি আমাকেও না। তাইতো আমার সাথে আকাশকে দেখে গাল ফুলিয়ে চলে গেছে। আকাশেরও আবার এক কথা! প্রয়োজনে জিএফ ছাড়বে তবুও আমায় ছাড়বেনা।

- ঐ প্রিয়া চল। (আকাশ)
- কিরে রাগ ভাঙ্গছে?
- নারে ভাই। আজাইরা রাগ আর ভালো লাগেনা।
- তাহলে এক কাজ কর
- কি?
- তুই আমার সাথে আর কথা বলিস না।
- একটা থাপ্পড় দেবো। বলেছি না মেঘলাকে দরকার নাই তবুও তোকে ছাড়তে রাজি না।
- হুম বুঝেছি, এখন চল।

রাস্তা দিয়ে আমি আর আকাশ হাঁটছি। আকাশ নানারকম কথা বলেই যাচ্ছে কিন্তু সেদিকে আমার কোনো খেয়াল নাই কারণ আমার মন তো মোবাইলে।
- ঐ, রাস্তার মধ্যে মোবাইল টিপবি না, ফোন রাখ।
- ধুর বাবা, কিছু হবেনা আমার
- রাখতে বলছি রাখ
- চলতো কথা না বলে।
- তুই মোবাইল ব্যাগে রাখবি কি না?
- আচ্ছা বাবা রাখছি।
- ঐ আমি তোর বাবা হলাম কবে থেকে?
-ঐটা তো কথার কথা বলছি।
- না দরকার নাই বলার।
- আচ্ছা। খুব গরম লাগছে, একটা জুস কিনে আনতো।
- তুই কি বাচ্চা?
- কেন? আমি আবার কি করলাম?
- তাহলে জুস খাবি কেন?
- তাহলে কি খাবো?
- পানি খাবি, আর সি খাবি।
- ধুর এসব ভালো লাগেনা। তুই জুস নিয়ে আয়।
- তুই বাচ্চাই রয়ে গেলি। রাস্তার মাঝখানে যাবিনা, এখানে দাঁড়া আমি নিয়ে আসছি।
- আচ্ছা যা।
আকাশ জুস আনতে গেছে। যাক বাবা, এই সুযোগে একটু ফোন টিপি। জুস আনার কথা তো একটা বাহানা, হিহিহি।

পিছন থেকে কে যেন ডাকছে মনে হয়! ধুর সেদিকে কান না দিয়ে আমি আমার মত মোবাইল টিপছি। কিছুক্ষণ পরেই পিছন থেকে খুব জোরে একটা আওয়াজ হলো।
পিছনে তাকিয়ে দেখি, একটা ছেলে বাইক নিয়ে পড়ে গেছে।
তাড়াতাড়ি দৌড়ে তার কাছে গেলাম।
- হায় আল্লাহ্!! কি করে পড়ে গেলেন, ওঠুন ওঠুন।
- উফফ! আপনার জন্যই তো পড়ে গেছি।
- আমি আবার কি করেছি?
- কখন থেকে সরতে বলছি, সরেন নাই কেন?
- আপনার হেলমেটের কারণে হয়তো আপনার কথা শুনতে পাইনি।
- এখন দোষটা আমার তাইনা? বলেন যে, আপনি মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন তাই।
এখনো পর্যন্ত চোখটা ফোনের দিকেই রাখছেন।
- তাহলে আর কি করবো, আপনি পড়ে গিয়েছিলেন আমি আপনাকে তুলেছি। কই একটা ধন্যবাদ দিবেন, তা না আমাকে রাগ দেখাচ্ছেন।
- আপ........
পুরো কথা বলার আগেই তার ফোনে রিংটন বাজছে। কেউ হয়তো ফোন করেছে। হেলমেট খুলে, ফোনে কথা বলছে।
আমি মোবাইল রেখে তার দিকে তাকাতেই শকড্!!
এর মধ্যেই আকাশ চলে আসছে।
- কিরে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? 
- (চুপ)
- আজিব কিছু বলছি তোকে, শুনছিস?
- কোথায় যেন দেখেছি
- কি কোথায় দেখছিস?
- ঐ ছেলেটাকে।
- চিনিস তুই?
- কি জানি

ফোনে কথা শেষ করে ছেলেটি আমার দিকে তাকালো,
- কি মিস, আমাকে চিনতে পারছেন না?
- ঠিক মনে করতে পারছিনা
- মনে নেই, সেদিনকার আপনার আর আমার কথা?
- এই প্রিয়া, উনি এসব কি বলে তোর আর তার সেদিনের কথা মানে? (আকাশ)
- ভাবছি............

০২!!

- আরে মনে নেই আপনার আর আমার সেদিনের কথা?
- এই প্রিয়া, উনি এসব কি বলে, তোর আর তার সেদিনের কথা মানে?
- ভাবছি!!
- তোর ভাবার গুষ্টি কিলাই, বল উনি কি বললো?
- আরে একটু চুপ করতো!! মনে তো করতে দিবি নাকি!!
- তাড়াতাড়ি মনে কর
- এখনো মনে পড়েনি আপনার? (ছেলেটা)
আরে সেদিন যে আমি আপনাকে বাঁচালাম!"
- ওহ হ্যাঁ, মনে পড়ে মনে পড়েছে!!
- মনে পড়েছে আমার কথা? (হাসি মুখে ছেলেটা)
- হুম। আপনি তো সেই অশুভ যে আমাকে বাঁচিয়েছিলেন।

(কথাটা বলার সাথে সাথেই তার হাসিমুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেলো।)
- বলছিলাম কি। আপনার একটু ভূল হচ্ছে। নামটা শুভ হবে, অশুভ না (মুখটা মলিন করে)
- আরে হলেই হলো একটা!!
- তোদের বকবক করা হইছে? (আকাশ)
- বকবক কই করলাম? 
- ঐ উনি তোকে বাঁচাইছে মানে কি, তুই কি মরতে গেছিলি?
- নারে বাবা!! সেদিন ফোন টিপতে টিপতে কখন যে রাস্তার মাঝখানে চলে গেছিলাম খেয়াল করিনি। আর তখনি অশুভ থুক্কু শুভ আমাকে বাঁচিয়েছে।
- ওহ আচ্ছা।  শুভ ভাইয়া আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এই পাগলীটাকে বাঁচানোর জন্য। (আকাশ)
- শুধু পাগলী না মোবাইল পাগলী। (শুভ)
- একদম ঠিক বলেছেন।
- হুম, নিজের জিএফকে সামলিয়ে রাখবেন ভাই।
- জিএফ মানে?
- প্রিয়া আপনার জিএফ না?
-আরে না, ও আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড।
আচ্ছা ভাইয়া আজ যাই, অন্যদিন কথা হবে।
- ওকে ভালো থাকবেন। প্রিয়া আপনিও?
- আমিও কি?
- ফোন থেকে চোখটা তুলে একটু আমাদের দিকে তাকান
-বলেন, আমি শুনছি।
- বললাম যে আপনিও ভালো থাকবেন।
-আচ্ছা।
- চল এবার।(হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিলো আকাশ)
- আকাশ ফোনটা নিলি কেন? ফোন দে।
- বাসায় যাবি তারপর ফোন দেবো।
- উহু ফোন দে। (কান্না কান্না ভাব ধরে)
আকাশ আর কিছু না বলে, আমার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে আর আমি ফোনের জন্য বাচ্চাদের মত কান্না করছি। পেছনে একবার তাকিয়ে দেখি শুভ আমাদের কান্ড দেখে হাসছে।
কিছুদূর যাওয়ার পরই দেখি সামনে মেঘলা দাঁড়িয়ে। মনে মনে যে কি খুশি হয়েছি তা বলার বাহিরে। আমার ফোন নেওয়া তাইনা এবার চান্দু বুঝবে মজা তার মধ্যে আবার আমার হাত ধরে আছে।
আকাশ আমার হাত না ছেড়েই মেঘলাকে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে!!
-কিরে আকাশ, হাতটা ছাড়। মেঘলা সামনে তো। আমার ফোনটা দিয়ে মেঘলার সাথে কথা বল।
- ঐ তুই চুপ করতো! সারাক্ষণ শুধু ফোন আর ফোন।
- কুত্তাডা, বকবিনা আমায় একদম।
- না তোকে আদর করবো।
পেছন থেকে মেঘলার ডাক,
- আকাশ, একটু দাঁড়াও
মেঘলার ডাক শুনে আমি আর আকাশ ঘুড়ে দাঁড়ালাম।
- আকাশ, আই এম স্যরি।
- স্যরি কেন?
- তখন তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করার জন্য।
- ইট'স ওকে।
- কাল একটু আমার সাথে দেখা করতে পারবা?
- কখন?
- সকালে।
- সকালে তো কলেজ আছে।
- আরে আকাইশ্শা একদিন কলেজ না করলে কিছু হবেনা। (আমি)
- তুই বলছিস?
-জ্বী, আমি বলছি।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
- এবার আমার ফোনটা দে না প্লিজ
- জ্বী না মহারাণী ফোন আমি বাড়িতে গিয়েই দেবো।
- ধুর হুদাই এতক্ষণ পাম দিলাম। (আস্তে আস্তে)
- ঐ বিড়বিড় করে কি বলিস?
- কই কিছুনা তো। তাড়াতাড়ি বাড়িতে চল।

মেঘলার সাথে কথা বলে আমি আর আকাশ বাড়িতে আসলাম। আকাশ আর আমরা এক বাড়িতেই থাকি, আমরা উপরের ফ্লাটে থাকি আর ওরা নিচের ফ্লাটে। বাড়ির গেটের সামনে এসে ফোনটা আমার হাতে দিলো। যাক বাবা এতক্ষণে জানটা মনে হয় আমার হাতে পেলাম।

রুমে গিয়ে ফ্রেশ না হয়েই শুয়ে ফোন টিপা শুরু করছি। ফেসবুকে গিয়ে নিউজফিড ঘাটাঘাটি করছি। হঠাৎ একটা আইডি চোখের সামনে পড়লো। কিন্তু পিকটা যেন কেমন ঘোলা ঘোলা, নামটা তো শুভ। তবে কি এটাই সে অশুভ।
ভাবতে না ভাবতেই দেখি আচমকা ঐ আইডি থেকে রিকুয়েস্ট আসছে। রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করতেই ঐ আইডি থেকে ম্যাসেজ,
- এই যে মোবাইল পাগলী, বাড়িতে গিয়েই ফোন নিয়ে বসে পড়ছেন?
- বসে পড়িনি শুয়ে পড়ছি কিন্তু আপনি কে?
- কে আবার!! নামটা তো আইডিতে দেওয়াই আছে।
- আপনিই কি সেই অশুভ?
- ঐ আমি অশুভ না, শুভ (রাগের ইমোজি দিয়ে)
- আরে বাবা রাগ করেন কেন? আমি তো আপনার নাম ই বললাম শুধু সামনে একটা অ বসিয়েছি এই আর কি!!
- না অশুভ না শুভ বলবেন।
- আচ্ছা অশুভ
- আবার!!!!!
- ওহ সরি, শুভ!
- হুম। কি করো মোবাইল পাগলী?
- কিছুনা শুভ ভাইয়া, আপনি?
- আবার ভাইয়া বলো কেন? (মন খারাপের ইমোজি দিয়ে)
- ভাইয়া বলাতে কি এলার্জি আছে?
- অন্য কারো মুখে শুনলে এলার্জি হয়না কিন্তু তুমি বললে মনে হয় সত্যিই এলার্জি আছে।
- তাই নাকি শুভ ভাইয়া
-আবার ভাইয়া। (রাগি ইমোজি)
-আচ্ছা ঠিক আছে আপনাকে দুইটা অপশন দেই, আপনি বলেন কি বলে ডাকবো।
- আচ্ছা
-১. অশুভ আর ২. শুভ ভাইয়া
- তুমি আমাকে অশুভ বলেই ডাকো, তবুও শুভ ভাই বলোনা প্লিজ। (মুখ মলিন স্টিকার)
-হিহিহি আচ্ছা।

হঠাৎ করে কে যেন পেছন থেকে কর্কশ কন্ঠে বলে ওঠলো,
- সারাক্ষণ মোবাইলে এত কি?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন