০৫!!
অফিসের কেবিনে বসে ভাবছে অনেক কিছুই । পাশের সিটে ছোট্ট ইফসি বসে আছে চুপ করে । ইফসি বড্ড বেশি শান্ত । একদম যেন দ্বিতীয় জুঁই । ইফসি ক্ষুধা লাগলেও কাঁদবে না । আর সে জোরে ব্যাথা না পাওয়া ছাড়া কাঁদে না , আর এমনি পেলেও কাঁদবে না । আসলে আল্লাহ পাক হয়তো ইফসিকে শক্ত মাটি দিয়েই বানিয়েছে । ফাইল খুলে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে জুঁই । যেইভাবে বসিয়ে রেখেছে ঠিক সেইভাবেই আছে ইফসি । ছোট ছোট দুইটা পুতুল দিয়ে খেলছে সে । মাকে একদম জ্বালাচ্ছে না বুড়িটা । হঠাৎ করে জুঁইয়ের মন চাইলো মেয়ের সাথে কথা বলতে ,
- আম্মুন তুমি করতেছো ?
মায়ের কথায় ঝুটি দুটো নাড়িয়ে মায়ের দিকে চোখ তুলে তাকায় সে । একটু হাসি দেয় আর পুতুল দেখিয়ে বলে
- আমি তেলি (খেলি)
মেয়ের কথায় মুচকি হেসে দেয় জুঁই আর কাজে আবারও মন বসায় সে । ফাইল গুলো অনেক নিখুঁত ভাবেই পর্যবেক্ষণ করে জুঁই । অন্যদিকে ইফসি চেয়ার থেকে নেমে পুরো কেবিন হাটছে । ঠিক এইভাবেই জুঁইয়ের সকাল থেকে দুপুর আর দুপুর থেকে সন্ধ্যা হয়ে যায় । তারপর আবার ঘরের কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হয় ।
রাতে মেয়েকে খাইয়ে শুইয়ে দেয় জুঁই । জানালার পাশে এসে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে সে । আল্লাহ পাকের এই সুন্দর পৃথিবীতে যদি দিন মুছে দেয়ার নিয়ম থাকতো তাহলে সে আজকের দিনটা অনায়াসে মুছে দিতে পারতো । কারণ আজকে এমন কাউকে দেখতে হলো তাকে আর এমন কারো কন্ঠস্বর শুনতে হলো তাকে যাকে সে তিন বছর আগেই মুছে দিতে বাধ্য হয়েছিল । অবহেলা পেতে পেতে শুকিয়ে যাওয়া গলাও তার চুপচাপ হয়ে যায় এক অন্ধকারের বদ্ধ ঘরে ।
চোখ থেকে অঝোর ধারায় পানি পড়ছে জুঁইয়ের । যেই পুরুষটিকে মনে প্রাণে এত বেশিই ভালোবেসেছিল সে আজ সেই পুরুষটিই আবার তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে । তাও কিনা যখন তার সন্তান তার কোলে ছিল ।
হঠাৎ করেই মনে পড়ে যায় সেইদিনের কথা যেদিন পার্কে প্রায় দেড় ঘন্টা দাঁড়িয়ে ছিল জুঁই । আর সে এসেছিল পিছনে , চুপি চুপি এসে জুঁইয়ের চোখ চেপে ধরেছিল । আর জুঁইও তখন খপ করে সেই এক জোড়া হাত ধরে নেয় আর বলে ওঠে ,
- নাফিস , এই আসার সময় হলো তোমার ?
- আমি তো জানি অপেক্ষায় রত আছে আমার কাদম্বরী ,
- কথা নাই তোমার সাথে আর ?
- রেগে থাকলে বেশ লাগে আমার কাদম্বরীকে ,
- সব সময় মজা ভালো লাগে না কিন্তু ,
- রাগলে তোমায় লাগে যে ভালো
কাদম্বরী আমার আমি তোমাতেই
মিশে আছি পাও কি খুজে আমার
অস্তিত্ব
- আমাকে কাব্য আর কিছু কবিতা দিয়েই দমাতে পারো তুমি ।
- আমার তোমায় দমাতে হয় না তুমি আমাতে এমনি দমে আছো ।
- তাই তো এমন করো ,
- ভালোবাসি তোমায় আমি
এমন তো করি নি
চেয়েছি রাঙাতে এই মন
সাথে চেয়েছি তোমারই আরাধন
- ভালো ভালো খুব ভালো ।
ধ্যান ভেঙে যায় জুঁইয়ের । জানালার পাশে বসে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দেয় জুঁই । তারপর উঠে দাঁড়িয়ে জানালার থাই গ্লাসটা টেনে দিয়ে ব্যাগ থেকে ডায়েরিটা নিয়ে বেতের সোফায় বসে যায় জুঁই । মাঝের পাতায় কিছু লিখে নিচে দুটো লাইন লিখে দেয় সে ,
হারিয়ে গিয়েও আবার এলে কাছে
কাছেই যদি এলে তবে হারিয়ে কেন গেলে
ডায়রিটা বন্ধ করে ব্যাগে রেখে লাইট অফ করে বিছানায় এসে শরীর এলিয়ে দেয় জুঁই । তারপর আস্তে করে চোখ বন্ধ করে নেয় সে । কারণ আগামীকাল আবারও তার যুদ্ধ করতে হবে ।
অন্ধকার ঘরে জ্বলন্ত সিগারেট হাতে খাটের সাথে হেলান দিয়ে আধো শোয়া অবস্থায় আছে একজন পুরুষ । তার চোখে বার বার ভেসে আসছে আজকে রাস্তায় দেখা এক নারীকে । যার চাহনিতে আগে থাকতো খুশির ঝলক আর এখন এক বিষন্নতার মেঘ জমা । পায় পাতলা শুকনো গঠনের নারীটি আজ অনেকটাই বদলে গেছে । নারীর কোলে ছোট বাচ্চা থেকে কেন যেন পুরুষের বুকের বাম পাশের জায়গাটায় চিন চিন করে ব্যাথা শুরু হয়েছিল ।
হয়তো আজকের এই পরিস্থিতি শুধুমাত্র তার জন্যেই । নারীর তো কোন অন্যায় ছিল না । নারী তো মন উজার করে শুধু ভালোবেসেছিল । আর সেই ভালোবাসায় ছিল না কোন ছলনা ছিল না কোন বাধ্যবাধকতা । খোট ছিল তার ভালোবাসার মাঝে । খোট ছিল তার ভরসার মাঝে । যার জন্যে নারীটি হারিয়ে গিয়েছিল তিনটি বছর আগে ।
একটার পর একটা সিগারেট ধরাচ্ছে পুরুষ । চোখের নোনাজল গুলো গড়িয়ে পড়ছে চোখ দিয়ে । হঠাৎ মুখ দিয়ে কিছু বেরিয়ে যায় তার ,
- শত বছরের সাথে থাকার ওয়াদা দিয়ে
হারিয়ে গিয়েছিলাম অতল গহ্বরে
আজ আবার তোমার সাথে দেখা
আমার কাদম্বরী
বুকের পাশে জমে থাকা চিন চিন
ব্যাথাটা আজ আবারও জ্বলে উঠেছে
আপনা আপনি
এই মুহুর্তে তার পাগল পাগল লাগছে । বার বার তাকেই মনে পড়ছে । কেন যেন মনে হচ্ছে আজ আর তার ঘুম হবে না ।
- গত তিনটি বছর এই যন্ত্রণাটা সহ্য করে বেশ ভালোই তো ছিলাম আমি কাদম্বরী
আজ আবার সামনে দাঁড়িয়ে লাভা জ্বালিয়ে দিয়েছ আমার মনের আঙিনাতে
ছোট বাচ্চা মেয়েটার মুখটাও বার বার চোখে ভাসছে তার । কেন যেন খুব মায়া হচ্ছিলো তার ।
- বাচ্চাটা হুবুহু জুঁইয়ের মত দেখতে হয়েছে । হয়তো তারই মেয়ে । কিন্তু আমার কাদম্বরীর পরনে সাদা শাড়ি কেন ছিল ?
প্রশ্নটা বার বার আহত করছে তাকে । ভেতরটা ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে তার । পাগল করে দিচ্ছে । সিগারেট জ্বলেই যাচ্ছে একটার পর একটা । আজ হয়তো সিগারেটও নিস্তার পাচ্ছে না তার থেকে । এমন সময় একটা কথা তারও মনে পড়ে যায় । দিনটি ছিল ভালোবাসা দিবসের দিন । যাকে বলা হয় valentine day. সেদিন জুঁই লাল শাড়ি পরেছিল । খোঁপায় বেলীফুলের মালা লাগিয়েছিল । হাত ভর্তি চুড়ি দিয়েছিল । একদম লাল পরীর মত লাগছিল সেদিন তাকে , হাতে এক গুচ্ছ গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়েছিল ক্যাম্পাসে । তাকে দেখে এক গাল হেসে জুঁই সামনে দাঁড়িয়ে যায় । তারপর গোলাপ গুলো তার সামনে বাড়িয়ে দেয় আর বলে ,
- ভালোবাসি , এই পুরুষ শুনছো
ভালোবাসি আমি তোমায়
ভালোবাসি অন্তরের অন্ত স্থল থেকে
এই পুরুষ আমি তোমায় ভালোবাসি ,,
জুঁইয়ের কথায় এক গাল হেসে সেদিন সেও উত্তর দেয় ,
- ওগো মোর কাদম্বরী
লালে তোমায় লাগছে গো ভালো
আমি সেই লালের মাঝে হারিয়েছি
তুমি কি জানো ,
কাদম্বরী আমি তোমাকেই ভালোবাসি
সেদিন ক্যাম্পাসে সবার সামনে জড়িয়ে ধরেছিল জুঁই তাকে । আর সে পরম যত্নে আঁকড়ে ধরে নেয় জুঁইকে ।
হঠাৎ সিগারেটের জ্বলন্ত আগুন তার হাতের আঙুলকে ছুঁয়ে দেয়ায় ধ্যান ভাঙে তার । আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করে নেয় সে ,
- আমি নাফিস শুধু ভালোবাসার নামে ছলনাই করে গেলাম । তুমি জুঁই আমায় এতটা ভালোবেসে আপন করে নিয়েছিলে আর আমি দায়িত্বের অযুহাতে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম তোমায় । আমার কাদম্বরী আমায় ছেড়ে গিয়েও আমার সাথেই মিশে আছে অবিরত । নাহ নাহ আমিই তো তাড়িয়ে দিয়েছিলাম তাকে আমার দুনিয়া থেকে ।
হয়তো আজ আর এই চোখের পানির মূল্য নেই । দুজনের পথ আজ দু দিকে বেকে গেছে । সময়টাও আজ অনেক দূরে অবস্থিত । শুধু রয়ে গেছে এক বুক হাহাকার আর এক চোখ নোনাজল ।
০৬!!
নাস্তার টেবিলে বসে থাকা নাফিসের মন খাবারের দিকে নেই । টেবিলে ভরপুর খাবারে । তিন বছর আগে যেই খাবার যোগার করার অজুহাতে একটা মেয়ের বিশ্বাস ভরসা ভালোবাসা সব কিছুকে পায়ে ঠেলে মেয়েটাকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিল সে । আজ সেই খাবারের অভাব নেই তার ঘরে । শুধু অভাব তার সেই কাদম্বরীর । যাকে সেও চেয়েছিল এক সময়ে একান্ত আপন ভাবে । কিন্তু পরিস্থিতির কারণে সব কিছুকে মাটি চাপা দিতে হয়েছিল তাকে । সামনে খাবার রাখা আছে কিন্তু আজ কেন জানি সেই খাবার গুলোও । কিছু কথা আপন মনে অন্তর বলে উঠে ,
- একদিন দায়িত্বের অজুহাত দেখিয়ে জুঁইকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলাম । আর আজ সেই সব দায়িত্ব অনেকটাই সফল হয়ে গেছে শুধু সাথে নেই আমার ভালোবাসার সেই মানুষটা ।
এমন সময় একজন ভদ্রমহিলার ডাকে ধ্যান ভেঙে যায় ,
- নাফিস ,,,,,,?
-,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
- এই নাফিস ,,,,,,,,,,?
- হুউউউ ,
- কি ব্যাপার , খাচ্ছিস না যে ?
- খাচ্ছি না কোথায় ? খাচ্ছি তো
- কোথায় খাচ্ছিস তুই ?
ভদ্রমহিলা হলেন রেহানা পারভিন সম্পর্কে তিনি নাফিসের মা । তার কথায় নাফিস বিরক্তবোধ করে তবুও দাত মুখ খিটে রয় । এমন সময় একজন ভদ্রলোকও তার পাশে এসে বসে যায় ।
- কিরে বাবা , কি হয়েছে ?
- কোথায় কি হয়েছে ?
- মন খারাপ নাকি ?
- বাবা , আমার মন ভালো নাকি খারাপ সেটার খবর তো আগে কেউ নাও নি আজ কেন ?
ভদ্রলোক আনিস বেপারি সম্পর্কে নাফিসের বাবা তিনি । ছেলের কথায় অভিমানের ছাপ এটা তিনক বেশ বুঝে গেছেন । কিন্তু তিনিও আবদ্ধ তার স্ত্রী রেহানার কাছে । বলতে গেলে ভদ্রমহিলা সবার জীবনটাকে নষ্ট করে রেখে দিয়েছেন । এমন সময় রেহানা পারভিন বলে উঠেন ,
- কি হয়েছে তোর ? এমন করস কেন ?
- কিছুই হয় নি ।
- কিছু না হলেই ভালো । যাই হোক আজকে সন্ধ্যায় তাড়াতাড়ি আসিস । এক জায়গায় যাবো আমরা ।
মায়ের কথায় নাফিস বুঝে যায় যে কোথায় যাওয়ার কথা বলছে তার মা । তাই নাফিসও কড়া স্বরে জবাব দেয় ।
- নেক্সট টাইম এইসব কথা আমার সামনে বলবে না তুমি । এখন আর এইসবের টাইম নেই আমার কাছে ।
- নাফিস ,,,,,,,,?
- চিৎকার করো না , আজকে তোমার জন্যে আমার এই অবস্থা মা । নিজেরা ভালো থাকার জন্যে আমার ভালো থাকাটা কেড়ে নিয়েছো । এখন তো ভালো আছো তাহলে আমাকে আমার অবস্থাতে থাকতে দাও ।
এই বলে নাস্তা না খেয়েই বেরিয়ে যায় নাফিস । ভদ্রমহিলা রেহানা পারভিন আনিস বেপারিকে উদ্দেশ্য করে উচ্চস্বরে বলে ওঠে ,
- ও কি সেইখানেই এখনও আটকে আছে ? যা হবার তা তো হয়েই গেছে । এখন ও-কে বিয়ে করতে হবে ।
- সবটাই তো শেষ করে দিছো , এখন আর বিয়ে বিয়ে করছো কেন ? তখন তো বিয়ের নামেও তোমার আর তোমার মেয়েদের জ্বালা ধরে যেতো ।
- তুমি কথা কম বলো ,
- আমি তো কথা কম-ই বলি । তোমাদের সব অন্যায় দেখেও চুপ করেই আছি ।
আনিস বেপারির কথায় চুপ হয়ে যায় রেহানা পারভিন । মুখ বাকিয়ে উঠে চলে যান তিনি ।
অফিসে বসে এক মনে কাজ করে যাচ্ছে জুঁই । পাশে ইফসি বসা , সে খেলছে । এমন সময় তার টেবিলের ল্যান্ড লাইনে ফোন আসে । ফোন রিসিভ করতেই ভদ্রলোক মাহবুব হোসেন বলে উঠলেন ,
- নাদিরা একটু রুমে আসুন তো ,,,
- জ্বি স্যার আসছি ,,
মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে ছোট্ট ইফসি মাকে ডেকে দেয় ,
- আম্মুন ,,,,,,,,
জুঁইয়ের দিকে হাত বাড়িয়ে ইফসি ইশারায় তার মাকে বুঝাচ্ছে তাকে কোলে তুলে নিতে । ছোট্ট ইফসির এই একটাই আবদার তার মায়ের কাছে । সে শুধু একটু কোলে উঠতে চায় । আর কিছুই আবদার করার নেই তার । জুঁই মেয়ের দিকে হাটু গেড়ে বসে মেয়ের গালে হাত রাখে ,
- আম্মুন , আমি একটু আসছি । যাবো আর আসবো । তুমি একটু থাকো আম্মুন
মায়ের কথায় চুপসে যায় ছোট্ট ইফসি । সে বুঝে যায় তার মায়ের কথা । তাই সে চুপ করে পুতুল গুলো দিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকে । ইফসিকে বসিয়ে রেখে জুঁই তার বসের রুমে যায় ।
- স্যার আসবো ?
- হ্যাঁ আসুন ,
- জ্বি স্যার বলুন ।
- বসুন ,
মাহবুব হোসেন এর কথায় সামনে থাকা চেয়ারে বসে যায় জুঁই । ভাবছে হঠাৎ এইভাবে ডেকে পাঠালো তাকে ,
- নাদিরা , কিছু কথা বলার আছে ?
- জ্বি স্যার বলুন ,
- নাদিরা গতকাল আমরা একজন নতুন employee নিয়েছি । তিনি এতদিন শাখা অফিসে ছিলেন , গতকালই মেইন অফিসে জয়েন হলেন । গতকাল আপনাকে আর বলা হয় নি তাই আজ বলে দিলাম । এখন থেকে মেইন ফাইল গুলো আগে আপনার কাছে যাবে তারপর তার কাছে সে ফাইল সাইন করে দিলেই তা আমার কাছে আসার এপ্রুভাল পাবে । আমি আশা রাখবো আপনি বুঝতে পেরেছেন ?
- জ্বি স্যার বুঝতে পেরেছি ।
- সো তিনিও আপনার সিনিয়র হিসেবে জয়েন দিয়েছেন এই অফিসে । আপনার কেবিনের ঠিক আগের কেবিনটাই তার । চাইলে দেখা করে আসতে পারেন আপনি ।
- জ্বি স্যার ।
- এইবার আপনি আসতে পারেন ।
- জ্বি স্যার ।
জুঁই কেবিন থেকে বের হয়ে নিজের কেবিনের দিকে পা বাড়ায় । মনে মনে ভয় ঢুকে গেছে । সিনিয়র হিসেবে জয়েন করা ভদ্রলোক কেমন হবে কে জানে । তার উপর ফাইলে ত্রুটি ধরতে পারলেই বড় সড় ঝামেলা হয়ে যাবে । সব মিলিয়ে মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ গুলো এলোপাথাড়ি ছুটাছুটি করছে তার ।
নিজ কেবিনে এসে আরও অবাক হয়ে যায় জুঁই । যেই চেয়ারে সে তার ছোট্ট ইফসিকে বসিয়ে রেখে গিয়েছিল সেই চেয়ারটা ফাঁকা । ফাঁকা চেয়ার দেখে জুঁইয়ের কলিজায় পাহাড় নেমে আসে । জুঁইয়ের চোখ থেকে অনায়াসেই পানি গুলো গড়িয়ে পড়ে যায় । সব দিকে শক্ত থাকলেও জুঁই তার ছোট্ট ইফসির জন্যে বড় বেশিই অসহায় । মেয়ের কিছু হলে সে পাগল হয়ে যায় । এইটুকুন একটা মেয়ে ভরা অফিস থেকে কোথায় উধাও হবে ? মুখে হাত দিয়ে চাপা স্বরে কেঁদে দেয় জুঁই । ওয়াসরুম সহ সবটা চেক করে সে এইখানে ইফসি কোথাও নেই । পাগল পাগল লাগছিল জুঁইয়ের নিজেকে । কি করবে না করবে বুঝে উঠতে পারছে না জুঁই । কেবিনের বাহিরে গিয়ে মেইন কোরিডোরে মেয়ের নাম ধরে ডাকতে থাকে সে । অফিসের বাকি স্টাফরাও জুঁইয়ের এমন ডাকাডাকিতে ইফসিকে খুজতে থাকে । কিন্তু ইফসি কোথাও নেই । দারোয়ানের কথা অনুযায়ী ইফসি অফিসের বাহিরেও যায় নি । তাহলে ইফসি কোথায় যাবে । জুঁই আর নিজেকে নিজের আয়ত্ত্বে রাখতে পারে নি । সবার সামনেই মেঝেতে বসে যায় ।
- আম্মুন কোথায় তুমি ? আম্মুন খুজছি তোমায় , চলে আসো আম্মুনের কাছে । ইফসি , আম্মুনের কাছে আসো ।
সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে যায় জুঁই । কয়েকজন ফিমেইল স্টাফ জুঁইকে রিলেক্স করায় । কিন্তু জুঁইকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছে না । তার মেয়েকে তার এক্ষুনি চাই । পাগল হয়ে মেয়েকে ডাকতে থাকে সে ।
- ইফসি , ইফসি , ইফসি আম্মুন কোথায় তুমি , ইফসি ।