০১!!
চোখে এক চিলতে আলো এসে পড়ায় ঘুমটা কিছুটা হালকা হয়ে আসে নীলিমার। একটা উষ্ণ নিঃশ্বাস এসে পড়ছে ওর বুকে৷ নীলিমা মুচকি হেসে চোখ খুলতেই তন্ময়ের এলোমেলো চুলগুলোর উপর চোখ পড়লো। পাগলটা নীলিমার বুকে মাথা রেখে জাপটে ধরে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। একেবারে নীলিমার উপরে উপুড় হয়ে। আজকে ওদের প্রথম বিবাহবার্ষিকীর রাতটা ভয়ংকর সুন্দর করে পালন করেছে ওরা। কতো খুঁটিনাটি আবদারে ভরা একটা ডায়েরি গিফট বক্স উপহার দিয়েছে তন্ময় নীলিমাকে। ডায়েরিটার প্রতিটা পরতে পরতে উপহার সাজানো। আর ছোট ছোট লাভ শেইপ করে চিরকুটে কয়েকটা লাইন বা ছন্দ মিলিয়ে 'ভালোবাসি' কথাটা সাজানো। কি করে পারে পাগলটা এসব করতে? ডায়েরিটা ভালো করে দেখারও সময় দেয় নি পাগলটা। হুট করেই কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে এসেছে। আর ভালোবাসার সমুদ্রে ঝাপ দিয়েছে নীলিমাকে নিয়ে। ঝাপ দেওয়াই তো। আর কি বলবে একে? সুখের সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া যাকে বলে।
নীলিমা আলতো করে তন্ময়ের চুলগুলো নিজের হাত দিয়ে ঠিক করার চেষ্টা করলো। তন্ময় একটু গড়িয়ে গিয়ে পাশ ফিরলো। এতোক্ষণে নিজেকে দেখে একেবারে লজ্জায় লাল হয়ে গেল নীলিমা। কাঁথাটা গা থেকে সরে তন্ময়ের পিঠের নিচে পড়ে আছে। বিছানার চাদরটা পায়ের কাছে। নীলিমা আলতো করে নিজের গায়ে চাদর জড়িয়ে নিয়ে তন্ময়ের বুক পর্যন্ত কাঁথা দিয়ে ঢেকে দিলো। বিছানা থেকে নেমে এক পা ফেলতেই হাতে টান খেয়ে হুড়মুড় করে তন্ময়ের গায়ে এসে পড়লো নীলিমা। তন্ময়ও এক হাতে নীলিমার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে অন্য হাতে নীলিমার চোখের উপরে আসা চুলগুলো সরিয়ে কানের পিছনে গুঁজে দিলো।
-এসব করা হয় না? আমাকে ঘুমে রেখেই একা একা উঠে যাওয়া? আজ একদিন আমার আগে ঘুম ভেঙেছে বলে এতো অন্যায়? না না না--। আমি মানবো না।
-তো কি করতাম?
-আমি যেমন তোমার ঠোঁটে কামড় দিয়ে ঘুম ভাঙাই সবসময়? তেমন করে---।
-অসভ্য লোক একটা---। সরো। ছাড়ো----।
-আহা! লজ্জাবতী! এতো এতো আদরেও তার লজ্জা ভাঙে না--। আদর খাওয়ার সময় তো ঠিকই---।
-চুপ চুপ চুপ---।
-আরে? এভাবে বুকে কিল বসাও কেন? অন্য ভাবেও তো মারা যায় নাকি?
-কি?
-করে দেখাই?
-যাও। ভিষণ খারাপ হয়ে যাচ্ছো দিনদিন---।
-আরো কত খারাপ আমি তুমি ভাবতেও পারবে না---। আরো কত কত স্টাইলে তোমার এই নরম শরীরটাকে আদরের সাগরে ভাসিয়ে দিতে পারি----।
-চুউউউউউউপ---।
-----সেটা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না গো সুন্দরী। সবে তো জীবনটা শুরু রে পাগলী---।
-বলছি না চুপ?
-তুমি চুপ করতে বললে তোমার ঠোঁট জোড়া যখন গোল হয় তখন ইচ্ছে করে তোমার ঠোঁটের মাঝে হারিয়ে যেতে--।
-উফফফ--৷ তুমি?
-হ্যাঁ গো বউ। আমি কি? তোমারই তো দুষ্ট বরটা। তাই না বলো?
-এই সকালে অফিস নেই? খালি দুষ্টু দুষ্টু কথা বলা না?
-হুম---। তুমি তো বলোও না, আদরও দাও না। তাই দুজনের রোমান্স আমাকে একাই করতে হয়। বুঝলে ম্যাডাম? তুমিও একটু যোগ দিলে হয়তো আমি দুষ্টুমিটা একটু কম করতাম আর কি---।
-ছাড়ো---। শাওয়ার নিয়ে এসে ঘুমাবো। ঘুম পাচ্ছে---।
-সেকি! আমি আরো ভাবলাম আবার একবার ডুব দিবো তোমাকে নিয়ে। এখন দেখছি অফিসেই একটা ব্যবস্থা করতে হবে---৷
কথাটা শোনা মাত্রই নীলিমা রেগে গিয়ে তন্ময়কে একটা ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে নিজে সরে গেল। রাগে কথা না বলেই সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। তন্ময় থমকে গিয়েছিল মেয়েটার রাগ দেখে। পাগলিটা খেপে গেছে আজ। কপালে নির্ঘাত শনি আছে ওর। তন্ময় তাড়াতাড়ি একটা টাওয়াল পেঁচিয়ে নিয়ে ওয়াশরুমের দরজায় নক করা শুরু করলো।
-জান? দরজাটা খোলো?
-------------------------------
-ও বউ? খোলো না? আমি কিন্তু এসব মানবো না---। একসাথে শাওয়ার নিবো তো? ও বউ? আজকে বউটা আমার ভালোবাসার বৃষ্টিতে ভিজবে না? ওই?
-------------------------------
-ও বউ? শাওয়ার নিবো তো?
-গেস্ট রুমে গিয়ে শাওয়ার নাও--। যাও। তাও ভালো না লাগলে অফিসে গিয়েই শাওয়ার নিয়ো যাও---।
-নীলি? দরজা খোলো? প্লিজ?
-না না না। যাও তুমি এখান থেকে। তোমার অফিসের বউয়ের কাছেই যাও। আমি বুঝছি তো।
-ওই? কি বুঝছো? নিলু নিলু নিলু? ও জান? খোলো না দরজাটা? নীলি? আমি কিন্তু এবার দরজা ভেঙে ফেলবো বলে দিলাম---।
-------------------------------
-সরি তো বাবা? দুষ্টুমি করে বলেছি। আমি কি সত্যি যাচ্ছি নাকি? আমার তুমি আছো না? আমার পাগলি বউটা?
-------------------------------
-খুলবা না তো? আমিই যাচ্ছি--। সত্যি সত্যিই যাচ্ছি---। আর বাসায়ও আসবো না। তনয়ার কাছেই থাকবো--। হুহ--।
তন্ময় দুষ্টু হাসি দিয়ে অন্যদিকে মুখ করে ঘুরে দাঁড়াতে দাঁড়াতেই টের পেল ওয়াশরুমের দরজাটা খুলে কেউ তন্ময়কে টেনে একেবারে ওয়াশরুমের ভিতরে টেনে নিয়েছে। তন্ময়ও স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেই ঢুকে পড়লো সাথে সাথেই। নীলিমা তন্ময়কে ধাক্কা দিয়ে ওয়াশরুমের দেয়ালে চেপে ধরলো। মেয়েটা এখনো ফোঁপাচ্ছে দেখে তন্ময় আলতো করে হাত বাড়িয়ে নীলিমার গালটা ছুঁয়ে দিতে চাইলে নীলিমা আচমকা একটু সরে গেল।
-ধরবা না একদম------।
তন্ময় মনটা খারাপ করে হাতটা সরিয়ে নিলো। এক মিনিট চুপ থেকে নীলিমা আবার তন্ময়ের দিকে তেড়ে এলো।
-এখন আর ভালো লাগে না না? আদর করে ছুঁয়ে দিতেও ইচ্ছে করে না?
-তুমিই তো মানা করলে ধরতে---?
-ও হ্যাঁ। সেই তো! আমি বললেই সব করতে হবে? মানা করলে করা যাবে না। তো বললেই আরেকটা বউ নিয়ে আসবে?
-তুমি বললে আনতেই পারি----।
নীলিমা আর কিছু না বলে কাঁদতে কাঁদতেই ওয়াশরুমের ফ্লোরে বসে পড়লো। তন্ময় জিভ কেটে তাড়াতাড়ি শাওয়ারের নিচে বসে নীলিমার কোমড় ধরে টেনে কোলে বসিয়ে নিলো। মেয়েটার কান্না বন্ধই হচ্ছে না।
-নীলি? ওগো বউ? শোনো না? দুষ্টুমি করে বলেছি তো? মাফ করে দাও? আর কেঁদ না প্লিজ? এই দেখো কান ধরছি?
-শাওয়ার নেয়া হয়ে গেছে না তোমার? বের হও এখন----।
-নীলি?
-যাও বলছি না?
তন্ময় আর কিছু না বলে উঠে শাওয়ার বন্ধ করে দিলো। নীলিমা বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আবার শাওয়ার চালিয়ে দিলো।
-তোমাকে বলেছি শাওয়ার অফ করতে? নিজের কাজ করো গে যাও--।
তন্ময় কি করবে ভেবেও পাচ্ছে না। এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে ঠান্ডা ধরে যাবে মেয়েটার। একটুতেই তো পাগলিটার ঠান্ডা ধরে যায়। কিন্তু যা রেগেছে, এখন তো শুনবেই না কিছু। নীলিমা মুখ ঘুরিয়ে দেয়ালের দিকে মুখ করে নিরবে কাঁদছে এখনো। তন্ময় বেরিয়ে যেতে গিয়েও আবার ফিরে এলো। পাগলিটার গলা ভারি হচ্ছে। আর এভাবে কাঁদতে দেয়া চলবে না৷ অন্য কিছু একটা করতে হবে। কথাটা ভেবেই তন্ময় একেবারে নীলিমার পিঠে বুক ঠেকিয়ে শাওয়ারটা বন্ধ করে দিলো। নীলিমা হাত বাড়াতে গেলে তন্ময় নীলিমার আঙুলের ফাঁকে নিজের আঙুল গলিয়ে দিয়ে চেপে ধরলো হাতটা। অন্য হাত দিয়ে নীলিমার গায়ে জড়ানো ভেজা চাদরটা খুলে ফেললো। নীলিমা একবার কেঁপে উঠতেই তন্ময় আলতো আলতো করে নীলিমার পিঠে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। নীলিমা ঝট করে ঘুরে তন্ময়ের বুকে মুখ লুকিয়ে নিলো লজ্জায়।
তন্ময় হেসে র্যাকে রাখা একটা শুকনো টাওয়াল টেনে নিয়ে নিজে পড়লো। অন্য একটা টাওয়ালে নীলিমাকে পেঁচিয়ে দিয়ে পাঁজাকোলা করে তুলে নিলো। নীলিমা চোখ বুজে তন্ময়ের কাজ গুলো অনুভব করছে। অভিমান করে একটা কথাও বলছে না। তন্ময় হেসে নীলিমাকে রুমে নিয়ে গিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে একটা নরম টাওয়াল দিয়ে চুল মুড়িয়ে বেঁধে দিলো। তারপর নিজে নীলিমার কোলের কাছে ফ্লোরে বসে কোলে মাথা রাখলো।
-নীলি? রাগ করেই থাকবে?
-রাগ করলেই বা কার কি? আমি বাঁচি মরি---।
-নীলি? আরেকবার এই বাজে কথাটা মুখ দিয়ে বের করবা তো--। আমি যেদিকে দু চোখ যায় চলে যাবো--। বলে দিলাম--।
-কোথাও চলে যাবে বলছ কেন? বলো তোমার তনয়ার কাছে চলে যাবে--।
-তনয়া কে?
-নাটক করবা না একদম। নিজেই বলেছ----।
-এভাবে কাঁদছ কেন গো সোনা? তুমি দরজাটা খুলছিলে না তাই বলেছি--। এমন কেউ নেই জানো না?
-আছে কি নেই সেটা তো------।
-চুপ-----। আছে কি নেই বিশ্বাস নেই?
তন্ময় উঠে নীলিমার পাশে বসে মুখটা দুহাতে তুলে ধরলো। নীলিমা কেঁদেই যাচ্ছে। তন্ময় আর কিছু না ভেবে নীলিমার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবালো। নীলিমা সরে আসতে চাইলেই ঠোঁট কামড়ে ধরে রইলো। ফিসফিস করে কয়েকটা কথা বললো ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে।
-ভালোবাসি রে ভিষণ পাগলিটা---। এভাবে অভিমান করতে হয় বুঝি? তুমি জানো না আমার শরীরের সমস্ত ভাঁজে ভাঁজে শুধু তোমার অধিকার? শুধু তোমার স্পর্শ খেলা করে এই শরীরটায়, জানো না?
-তাহলে তখন বললে কেন ওভাবে? জানো না আমার কষ্ট হয়? সব তো ভুলেই আছি--। না কারো কথা মনে আছে, না কিচ্ছু--। তোমাকে নিয়েই তো শুধু বেঁচে থাকা আমার বলো? তুমিও যদি----।
-শশশশশ---। আমি তো বলেছি যাতে বউটা একটু করে আদর দেয়--। বউটা যে রেগে যাবে সেটা তো ভাবি নি--।
-সব আদর দিবো--। তবু কাউকে দিতে পারবো না তোমাকে---।
-আচ্ছা তাই? তো এখন প্রুভ দাও?
-ইশ! ঢং কতো?
-আহা সুন্দরী! এসব বলে আর ছাড়া পাচ্ছেন না এখন----।
-স-সরো? সরো? তুমি না অফিসে যাবা?
নীলিমার কণ্ঠস্বর ভারি হয়ে আসছে তন্ময়ের নেশা ধরানো স্পর্শে। তন্ময়ও আবার নতুন করে তার পাগলিটাকে তার ভালোবাসায় উন্মাদ করে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
০২!!
মোবাইলের এ্যালার্মে ঘুম ভাঙতেই তন্ময় হেসে চোখ খুললো৷ নীলিমা বুকের উপরে শুয়ে থাকায় বুকটা ভারি হয়ে আছে৷ তন্ময় নীলিমার মুখটা একটু তুলে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। তারপর আলতো করে কামড়ে ধরলো নীলিমার ঠোঁট জোড়া। নীলিমা ঘুমের ঘোরেও তন্ময়ের স্পর্শে সাড়া দিলো। তন্ময় হেসে নীলিমার চুলে বিলি কেটে দিলো।
-এই নীলি? আজকে উঠবে না?
-উহুঁ------।
-খাওয়া দাওয়া করা লাগবে না ম্যাডাম?
-না--। আমি ঘুমাবো। সারাদিন রাত জ্বালাচ্ছো। ঘুমোতে দিচ্ছ না পচা লোক---।
-পাগলি? একটু ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নাও? তারপর নাহয় আবার ঘুমিয়ো? দুপুরে খাবার নিয়ে আসবো--। রান্না করতে হবে না--।
-উহু----। খাবো না ----।
-নীলি?
-আবার কেন ঘুমের বাগড়া দিচ্ছ? পচা লোকটা। ঘুম্মাই আমি--। তুমি নাস্তা করে যাও----।
-ওরে ঘুম পাগলীটা রে। আচ্ছা। ঘুমাও----।
তন্ময় শাওয়ার নিয়ে নাস্তা করে এসে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিল। খাটের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো। মেয়েটা এখনো ঘুমে কাহিল। তন্ময় এগিয়ে এসে নীলিমার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে নীলিমাকে ঠিক করে শুইয়ে দিয়ে গায়ের উপরে ভাল করে চাদর টেনে দিলো। আলতো করে একবার চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বেরিয়ে এলো রুম থেকে। বাসার দরজা লক করে দিয়ে গাড়িতে উঠে স্টার্ট করলো গাড়ি। অফিসে পৌঁছতেই সবাই তন্ময়কে শুভেচ্ছা জানালো। তন্ময়ও হেসে সবার সাথে কুশলাদি বিনিময় করে ওদের সেকেন্ড বস নিয়াজ মোর্শেদীর কেবিনে এলো।
-হেই ইয়াং ম্যান। মেনি মেনি কনগ্রাচুলেশনস ফর ইউর ফার্স্ট মেরেজ এনিভার্সারি।
-থ্যাংক ইউ স্যার।
-আবীর? এজেন্ট নাশুর কোন খোঁজ নেই। দিশারের কোন খোঁজ নেই। তুমি একা কেইসটা সামলাচ্ছ কি করে? কাউকে টিমে নিয়ে নাও?
-নো স্যার--। আপনি তো জানেনই এই কেইসে যারাই আজ পর্যন্ত জড়িয়েছে সবাই কোন না কোনভাবে হয় মারা গেছে নয়তো গুম হয়ে গেছে। গত দু বছরে এর কূল কিনারা করতে পারি নি। আর কাউকে এটায় ইনভলব করতে চাচ্ছি না আমি স্যার--।
-বাট আমার তোমার জন্য টেনশন হয় আবীর। অন্তত ট্রেইন্ড কাউকে তো----।
-তনয়াও ট্রেইন্ড ছিল স্যার। দিশার তো বাংলাদেশের নাম্বার ওয়ান শার্প শুটার ছিল। আর নাশু? তার জাস্ট কেইস হিস্ট্রি শুনেই আমি ওকে না দেখেও কেইসটাতে কাজ করার পারমিশন দিয়েছিলাম। কিন্তু কি হলো শেষ পর্যন্ত?
-আই কেন আন্ডারস্ট্যান্ড আবীর। তনয়া তো কেইসটার সাথে যুক্তও ছিল না। তবুও-। তনয়ার জায়গায় সেদিন তোমার থাকার কথা ছিল। সেদিন ওর জেদের কাছে হার মেনে ওকে হারালেও তোমাকে আমাদের মাঝে ধরে রাখতে পেরেছি আবীর। সো বি কেয়ারফুল মাই সান।
-ইয়েস স্যার।
-আবীর? চিফও এই মূহুর্তে দেশের বাইরে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে। উনার রিকভারির কোন নিউজও আসছে না। ইভেন বাঁচবেন কিনা---। কেইসটা এখানে ক্লোজ করে দিলে---।
-নো স্যার--। এই একটা কেইস আমাদের ডিপার্টমেন্টের এতোগুলো জীবন, তাদের পরিবার সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে। এটা তো যে করেই হোক সলভ করতেই হবে। তাছাড়া ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইস্যু জড়িত এখানে। যেভাবেই হোক সলভ তো করতেই হবে---।
-অল দা বেস্ট মাই সান। আই নো ইউ ক্যান ডু ইট।
-থ্যাংক ইউ স্যার। স্যার আমি আসছি এখন। খান এন্ড সনস এ আজকে ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং হবে। আমাকে সেটায় এ্যাটেন্ড করতে হবে। তাহমিদ খান বারবার করে সেটা মনে করিয়ে দিয়েছে---।
-ওকে ইয়ং ম্যান। গো এহেড। মেইক ইউর টিম প্রাউড।
-ইয়েস স্যার---।
তন্ময় অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে বসতেই ফোনে কল এলো। তাহমিদের নাম কল লিস্টে ভেসে উঠছে।
-হ্যাঁ দোস্ত বল?
-আবীর?
-হু ইজ আবীর?
-ওহ শিট! তন্ময়। ওকে মিস্টার তন্ময়?
-ইয়েস মিস্টার খান।
-উফ। তুই হেয়ালি না করে জলদী আয়। মিটিং ১১ঃ৩০ টায়। তোর জন্য আধ ঘন্টা পেছাতে হলো।
-সরি দোস্ত। বুঝতেই পারছিস--। এখন তো ফ্যামেলি ম্যান--। বউ সামলাবো নাকি হেড অফিস? তার উপরে তোর এই খান এন্ড সনসের কেইসটা। ফুল্লি লোডেড ম্যান--।
-রাম কাহিনী পরে শুনাইস অফিসে এসে। তাড়াতাড়ি কর। আমার হাত পা কাঁপছে রীতিমতো।
-ওকে। জাস্ট রিল্যাক্স ম্যান। আম কামিং।
তন্ময় ফুল স্পিডে গাড়ি ছুটিয়ে অফিসের পার্কিংয়ে এসে ঘড়িতে দেখলো ১১ টা ২০ বাজে। কিছু একটা মনে পড়তেই কাউকে একটা কল দিলো। কয়েক সেকেন্ড পর কলটা রিসিভ হলো।
-মিস্টার তন্ময়? হাউ আর ইউ?
-ফাইন ডক।
-ইউর ওয়াইফ?
-নীলিমা ইজ অল রাইট। ওকে কি চেকাপে নিয়ে আসবো কয়েকদিনের মধ্যে?
-কেন? এনিথিং সিরিয়াস? ডিড সি রিকল সামথিং?
-নো ডক---। ডক? ওর সব মনে পড়লে তখন কি ও আমাকে ভুলে যাবে?
-ইউ নো দ্যাট, ডোন্ট ইউ?
-আই নো ডক। এই একটা কথা আমাকে সারাদিন ভাবায়--। আমি চাই ও নিজের সব স্মৃতি ফিরে পাক। বাট পরের মুহূর্তেই ভয় হয় ওকে যদি আমি চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলি-।
-আবার মনে করাবে তোমার ভালোবাসা দিয়ে।
-ইয়া---। আই নো।
-হাউ ওয়াজ ইউর ওয়েডিং এনিভার্সারি?
-ইয়া গুড----।
-ওকে। টেইক হার সাম ডে ফর রেগুলার চেকআপ। ওকে?
-ইয়া ডক। ওকে বায়।
তন্ময় আর তাহমিদ দুজনে মিলে কোন মতে খান ইন্ডাস্ট্রির এবারের কনসাইনমেন্টটা ক্যান্সেল করিয়ে দিলো। বোর্ড মেম্বারের কয়েকজন বিরক্ত হয়ে চলে গেল। তন্ময়ও এসে তাহমিদের কেবিনে গা এলিয়ে দিল চেয়ারে।
-আবীর? আর ইউ ওকে?
-ইয়াপ দোস্ত।
-নীলিমা ভাবির কি অবস্থা?
-সি ইজ অলরাইট।
-তুই কি নিয়ে এতো টেনশন করছিস বল তো?
-এই কেইসটা নেয়ার পর থেকে কতোগুলো মানুষ হারিয়ে গেছে আমার জীবন থেকে জানিসই তো। আমার আজকাল ভিষণ ভয় হয় নীলিমাকে নিয়ে জানিস? ওরা আমাকে ট্রেস করতে পারলে যদি নীলিমার কোন ক্ষতি করে দেয়? মেয়েটা সারাদিন বাড়িতে একা একা থাকে---।
-পার্ট টাইম কাউকে রেখে দে বাসায়--। অন্তত তোর টেনশনটা একটু কম হবে--।
-যাকে রাখবো সেও যে এসবের সাথে মিলিত হবে না-- সেটার গ্যারান্টি কে নিবে বল তো?
-আরে ভাই। টেনশন করিস না৷ এতো প্রেশার না নিয়ে নীলিমাকে তোর জবের ব্যাপারে বলে দিলেই পারিস--।
-ভাবছি সেটাই করবো। অন্তত মেয়ে কলিগ কেউ কল করলে মেয়েটা এতোটা হাইপার হয়ে যাবে না--।
-বাহ! বিবাহ বার্ষিকীর রাতেও ভাবিকে কেউ রাগিয়ে দিয়েছে নাকি?
-না রে--। মুখ ফসকে তনয়ার নামটা বেরিয়ে গেছিলো আজকে। তাতেই নীলি অনেক রেগে গেছে--।
-তনয়া? মেয়েটাকে জীবনেও ভুলতে পারব না আমি--।
-ওকে তোর ফিলিংসের কথা অন্তত জানাতে পারতি---।
-জানিয়ে কি হতো? ও তো সেই কলেজ লাইফ থেকে তোকে ভালোবাসে---।
-সি ওয়াজ মাই বেস্ট ফ্রেন্ড ইয়ার-।
-সেটা তুই ভাবিস। ও তো তোকে ভালোবাসে--। সরি--। ভালোবাসতো--। পাগলের মতো ভালোবাসতো---।
-রিল্যাক্স তাহমিদ?
-আই মিস হার এ লট---। ব্লাস্টের সময় ও না গিয়ে আমি কেন গেলাম না দোস্ত বলতে পারিস? তোর কিছু একটা হবে ভেবে ওর মনটা ছটফট করেছে, তবে ওর কিছু হবে জেনে আমার কেন হয়নি তেমনটা?
আবীর তাহমিদকে এক গ্লাস পানি দিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে এলো। প্রিয় বন্ধুগুলোর হারিয়ে যাওয়া কতোটা যন্ত্রণার সেটা আবীর খুব ভালো করেই জানে। একজন ওর প্রায় চোখের সামনেই মারা গেছে, অন্যজন হারিয়ে গেছে সেটাও ওর দোষেই। এই দুটো মানুষকেই আবীর পাগলের মতো আঁকড়ে ধরে ছিলো আজীবন। আজ ওরা নেই। এখন ওর জীবনের একটাই শেষ আশ্রয়। আর সেটা হলো নীলিমা। ওকে যে করেই হোক আগলে রাখতে চায় আবীর। নিজের সর্বস্ব দিয়ে হলেও নীলিমাকে নিরাপদ রাখতে চায় আবীর। তবু মনের মধ্যে সবসময় একটা ভয় কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে ওকে। আবার না কোন বিপদ আসে!