বসন্তের ফুল - পর্ব ১১ - তারিন জান্নাত - ধারাবাহিক গল্প


২১!!

দশমিনিট যাবৎ রাগে ফোঁসফোঁস শব্দ করছে অভ্র। তীব্র ইচ্ছে পাশে বসা মেয়েটিকে কয়েকটা কষে চড় দিতে।শরীর জ্বালা করছে রাগের কারনে। নিজেকে সংযত রাখা দ্বায়।

একটু আগে....

প্রেমারা আসার পর যেই গাড়িতে উঠতে যাবে,তার আগেই সাইকা আর সাইরা বসে পরে।অভ্র আগেই বসে গিয়েছিলে।যার ফলে প্রেমা বসার আগেই সাইকা সাইরাকে নিয়ে বসে পরেছে।

আর প্রেমারা গিয়ে অন্য গাড়িতে বসে। প্রেমার আশে পাশে কিছুর খেয়াল নেই সে নিজ মনেই চলে। কিন্তু আদ্র তো নাছোড়বান্দা। সে প্রেমার সাথেই বসবে। তাইতো অভ্রকে সাইকার সাথে বসতে হচ্ছে।

রাগ-বিরক্তি নিয়ে কাঁচের জানালা দিয়ে বাইরে তাকায় অভ্র। চোখ আটকায় আরিয়ানের দিকে।চোখেমুখে একরাশ হাসি নিয়ে অভ্রের গাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। অভ্র নিজের ভ্রু জোড়া হালকা উঁচু করে। পাশ ফিরে সাইকার দিকে তাকাই।দেখে ড্যাবড্যাব করে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। 

এবার সব জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যায় অভ্রের কাছে। আরিয়ান আর সাইকা তাহলে এখন একজোট হয়েছে।সাইকা অভ্রকে পছন্দ করে সেটা আরিয়ান জানতো।তাই তো এই সুযোগটার ব্যাবহার করেছে।

সাইকার দিকে তাকিয়ে অভ্র বলে উঠে,
"তোর মতো মেয়ের গায়ে হাত তুলতে আমার রুচিতে বাঁধে,তাই আজ আর চড় দিলাম না।(অভ্র)

" কেন আমি দেখতে খারাপ?(সাইকা)

অভ্র এবার একরাশ ঘৃনা নিয়ে সাইকার দিকে চোখ দেয়।আবার পেছনের দিকে তাকায়।দেখে একটা অর্ধেক পানির বোতল রয়েছে। দেড়ি না করে বোতলটা হাতে নিয়ে মুখ খুলে সব পানি সাইকার মাথার উপর ঢেলে দেয়। বোতলটা মুখে ছুড়ে মারে। এরপর সাইরার দিকে একবার তাকায়। উল্টোদিক ফিরে গাড়ির দরজাটা খুলে দাঁড়ায়। 

 আবারও সাইকার দিকে ফিরে হালকা ঝুঁকে। 

"সময় আছে,নিজেকে শুধরা। কারো চামচাগিরি করার ইচ্ছে থাকলে সেটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দে।
আর খুব বেশিই যদি "কামের বেডি" হওয়ার ইচ্ছে থাকে তাহলে আমাকে বলিস, সারাদিন তোকে দিয়ে; আমার প্রেমার হাত-পা টেপাবো।
 (অভ্র কথাগুলো বলে সামনের সিল্কি চুল হাত দিয়ে উপরে তুলে দেয়।এবং অন্য গাড়িতে গিয়ে বসে পড়ে)

কাঁটা গায়ে নুনের ছিটা পড়ার মতো অভ্রের কথাগুলো সাইকার গায়ে গিয়ে বিঁধে। দাঁতে দাঁত চেপে শুধু সহ্য করে নেই।

||

বিকট একটা শব্দে আকস্মিক ভাবে প্রেমার ঘোর কাঁটে।শব্দটা ফোন থেকেই আসে।ফোনের স্ক্রিনের দিকে চোখ দিতেই একটা নাম ভেসে উঠে 'অর্পণ', মুচকি হাসি দিয়ে ফোনটা রিসিভ করে প্রেমা।

"কিরে মুটকি?  এখনো আসিস নি??(অর্পণ)

" না রে,চলে এসেছিস?? (প্রেমা)

"হ্যাঁ,আধ ঘন্টা যাবৎ! তোর অপেক্ষায় আছি,আয় তাড়াতাড়ি। (অর্পণ)

" আসছি, (প্রেমা)

ফোনটা কেটে দিয়ে আবারও ভাবনায় ডুব দেয় প্রেমা। এ ভাবনার অন্তিম ঘটছে না।কূল-কিনারা পাচ্ছে না।অজানা কিছু কথা মনের বারবার উঁকিঝুঁকি মারছে।

কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছেয় প্রেমা আগে ব্যাস্ত পায়ে হেঁটে হলরুমে প্রবেশ করে। সাথে প্রিয়া আর আদ্র ও রয়েছে। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নেয়।অর্পণকে দেখতে পায়নি। একটু এগিয়ে যেতেই হাসির শব্দ আসে কানে।পেঁছন ফিরতেই দেখে অর্পণ প্রিয়ার সাথে কথা বলছে হেসেহেসে। 

প্রেমা গিয়ে অর্পণকে একটা ঘুষি মারে,

" আরে মুটকি মারছিস কেন? (অর্পণ)
"তখনও মুটকি বললি আর এখনো?? (প্রেমা)
" তাই বলে ঘুষি দিবি,তোর পেট পুড়ে না?? (অর্পণ)
" না, আমার কলিজা জ্বলে, মুটকি বলবি না আর আমাকে,আমি এখন যতেষ্ট স্লিম আছি,(ভাব নিয়ে)
"এ্যাঁহ, শুটকির মতো হয়ে বলছিস স্লিম আছি,ছোটবেলাই ঠিক ছিলি কতো কিউট আর গুলুমুলু,(অর্পণ)
"আমাকে মুটকি বলেছিস,সময় আমারও আসবে।(প্রেমা)
" তখন দেখে নিস। (অর্পন হেসে কথা বলে)
"মামা মামি কেমন আছে?? (প্রেমা)
" ভালো আছে,তোর কথা বলে সবসময়, এখন আর যাস না স্বার্থপর হয়ে গিয়েছিস।(অর্পন)
"সময় নেই রে, আচ্ছা তুই কোন পক্ষে এসেছিস??(প্রেমা)
" কনে পক্ষ। কনের ভাই আমার বন্ধু হয়। (অর্পন)

ওরা আরো টুকিটাকি কথা বলে সেখান থেকে দ্বিতীয় ফ্লোরে উঠে, খুলামেলা জায়গা। অনেক বাতাস সেখানে। বসে তারা আয়েশ করে গল্প করছে। অপরদিকে অভ্র  প্রেমাকে না পেয়ে নিচে সবখানে খুঁজে নেয়। শেষ ফোন দেয় প্রেমাকে।

দ্রুত পায়ে উঠে দ্বিতীয় ফ্লোরে যায় অভ্র। দেখে প্রিয়া আর আদ্র একপাশে হাঁটছে।প্রেমা আর একটি ছেলে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে গল্প করছে।

দৃঢ় পায়ে প্রেমার কাছাকাছির গিয়ে কল দেয়। প্রেমা রিসিভ করে পেঁছন ফিরতেই দেখো অভ্র দাঁড়ানো।ঠোঁটের কোণায় হালকা মৃদু হাসি। প্রেমা কল কেটে অভ্রকে ডাকতেই অভ্র প্রেমার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। 

নিজের চোখ দিয়ে একবার প্রেমার বামপাশে দাঁড়ানো অর্পণকে দেখে নেয়। 

"অভ্র ও হচ্ছে অর্পণ,আমার মামাতো ভাই।(প্রেমা)

" হাই ভাইয়া। (একটু হেসে!অভ্র)
"হ্যালো ভাইয়া,(বলেই অভ্রের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়)
দুজনে হ্যান্ডসেক করে। তারপর টুকটাক কথা বলে।

" শুন, তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে। (অর্পণ)
"হ্যাঁ বল, শুনছি।(প্রেমা)
" আসলে কথাগুলো অনেক পার্সনাল। (অর্পণ)

প্রেমা একবার অভ্রের দিকে তাকায়।দেখে সে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। তাই অর্পণকে সহ সাথে নিয়ে অন্যপাশটাই চলে যায়।

প্রেমা অর্পণের সাথে যেতেই অভ্র ফিরে তাকায়। চেহারার রঙটা এক মিনিট ও সময় নিচ্ছে না পরিবর্তন হতে। অভ্র চাপা স্বভাবের তাই রাগটা এখনো চেপে রেখেছে। কিন্তু নিজের রক্তিম বর্ণটা চেপে রাখতে পারছেনা। অসহ্যকর একটা পরিস্থিতিতে সে এখন।

"বিয়ে-শাদিতে যদি তোমার কাজিন ভাইরা উপস্থিত থাকে,তাহলে তোমার জন্য সব অনুষ্ঠান বন্ধ৷ কিন্তু আপাততে কোনো অধিকার জারি করছি না। শুধু সময়টা আসুক,(অভ্র)

অভ্র মনেমনে কথাগুলো প্রেমার দিকে তাকিয়ে বলে।ভালোভাবে পরখ করছে তাদের। এখন অবধি অস্বাভাবিক আচরণ দেখেনি তাদের মধ্যে তাই চুপ করে আছে। নাহলে  অর্পণকে মেরে প্রেমাকে নিয়ো আসতে সময় লাগবে না অভ্রের।

" আগে বলিসনি কেন? নাহলে আমি ভেবে দেখতাম।(প্রেমা)
"আরে তোরে ঢর লাগে আমার তাই,(অর্পণ)
" আচ্ছা ভালো।এখনও কিন্তু আমি না বললে উত্তরটা না ই আসবে।(প্রেমা)
"এমনটা করিসনা বইন,আমি না তোর ভাই!একটু দয়া কর।
অর্পণের কথায় প্রেমার হাসি পাই। অর্পণের কান ধরে টেনে দেয়। এবং বলে" ঠিক আছে চল" 

প্রেমা অভ্রের কাছে গিয়ে দেখে অভ্র এখনো অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। প্রেমার উপস্থিতি পেয়ে অভ্র প্রেমার দিকে ফিরে। মৃদু হাসি দিয়ে বলে উঠে,

"খাওয়ার জন্য ডাক পরেছে,আর কোনো কথা আছে??

" না ভাই,চলো আমি এখন শান্তিতে খেতে পারবো,টেনশন কমে গিয়েছে।(অর্পণ)

অর্পণের কথায় অভ্র ভ্রু কুঁচকায়।প্রেমার জন্যই অর্পণকে সহ্য করছে অভ্র। নাহলে প্রেমা আশেপাশে কাউকে ঘেঁষতে ও দিতো না।

বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়।সবাই সবার মতো বাড়ি ফেরার জন্য গাড়ির পাশে চলে আসে। আদ্র আর প্রিয়াকে উঠানোর পর প্রেমা উঠতে নিলেই অভ্র এসে প্রেমার হাত ধরে টান দেয়।

হঠাৎ এভাবে টান দেওয়াই প্রেমা খানিকটা ভয় পাই।তবে সেটা অভ্রকে বুঝতে দেয়নি৷ কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তার আগেই অভ্র নিজের ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করতে ইশারা করে। মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় প্রেমা। অভ্র একবার আশেপাশে তাঁকায়। সবাই সবার মতো ব্যাস্ত হয়ে গাড়িতে উঠছে, তারপর একজনের দিকে তাঁকায়। সেই ব্যাক্তিটি ইশারা করে সেখান থেকে সরে যেতে।তাই অভ্র প্রেমার হাত ধরে টেনে সবার আড়ালে একপাশে নিয়ে যায়। 

একটা কোণায় গিয়ে প্রেমাকে দাঁড় করাই।এবং প্রেমার মুখোমুখি হয়ে অভ্র দাঁড়ায়। অভ্রের জন্য প্রেমাকে দেখা যাচ্ছে না। প্রেমা নিজেও বোকা হয়ে যায় অভ্রের কান্ডে। হাত তুলছিলো অভ্রকে ধাক্কা দিয়ে সরানোর জন্য,তার আগেই অভ্র প্রেমার হাত ধরে ফেলে।

"একটু চুপ থাকো, (অভ্র)
" কি হয়েছে এভাবে নিয়ে এসেছো কেন?(প্রেমা)
"চুপ থাকতে বললাম। (ধমক দিয়ে)
অভ্রের ধমকে চুপ হয়ে যায় প্রেমা। কিন্তু ইচ্ছে করছিলো অভ্রকে কয়েকটা তাপ্পর দিয়ে সামনে থেকো সরিয়ে চলে যেতে। বিড়বিড় করে উঠে,
" বাড়ির যাওয়ার সময়ে নাটক,(প্রেমা)
"কিছু বলেছো?? (প্রেমার দিকে তাকিয়ে)
" না (লম্বা একটা হাসি দিয়ে)

এরপর অভ্রে পেঁছনে তাঁকায়।গাড়ি আসছে দেখেই প্রেমার দুপাশো হাত দিয়ে হালকা ঝুঁকে অন্যদিকে তাঁকায়। এতে যেনো প্রেমার শ্বাস আটকে যাচ্ছে। কিছু বলতেও পারছে না,নড়া তো দূরের কথা।

সব গাড়িগুলো যেতেই। অভ্র প্রেমার দিকে তাকায়।দেখে নিচের দিকে তাঁকিয়ে আছে।তাই প্রেমার সামনে থেকে সরে দাঁড়ায়।এতেই যেনো প্রেমা শান্তি নিঃশ্বাস ছাড়ে।

একটা রিক্সা আসতেই প্রেমার হাত ধরে অভ্র রিক্সার দিকে নিয়ে যায়।এবং রিক্সায় বসিয়ে অভ্র নিজেও পাশে বসে যায় প্রেমার।রিক্সা চলছে তার আপন গতিতে।অভ্রের হুটহাট হাত ধরাটা প্রেমার অস্বস্তি আরো বাড়তে লাগে।তবুও চুপচাপ থাকে। প্রেমার অস্বস্তি হওয়া বুঝতে পেরে যায় অভ্র।

" আজ আর থামবো না,যতবার ইচ্ছে ততবার হাত ধরবো। (মনেমনে কথাটা বলে অভ্র)

খানিক্ষন বাদে কিছু একটা ভেবে অভ্র প্রেমার দিকে তাঁকায়, 

"আমার উপর বিশ্বাস আছে তো??(অভ্র)
অভ্রের প্রশ্নে প্রেমার দ্রুতগতিতে মাথা নাড়িয়ে জানায়;
" না বিশ্বাস নেই"
অভ্র হাসে প্রেমার আচরণে।বিশ্বাস না করাই ভালো এ মুহুর্তে। যদিও বা সে আহামরি ভালো মানুষ না যে বিশ্বাস করতে হবে। তবুও অভ্র প্রেমাকে বলে,
"একটা জায়গায় ঘুরতে যাবো,তাই এভাবে নিয়ে এসেছি।নাহলে আদ্র আসার জন্য কান্না করতো।(অভ্র)
" আসলে আসতো,ক্ষতি কি হতো। বরং আরো মজা হতো। (প্রেমা গাল ফুলিয়ে কথাটা বলে)

মিটিমিটি আলোয় প্রেমার গাল ফুলানো দৃশ্যটা যেনো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম দৃশ্য অভ্রের কাছে।  আলতো স্পর্শ করলে যেনো গলে যাবে এ রাগ। অভ্র এবার অন্যদিকে তাঁকিয়ে হাসে। 

সন্ধ্যার ঠান্ডা মিষ্টি বাতাস প্রেমার শরীরে সংস্পর্শে আসতেই সব রাগ উবে যায়।  এলোমেলো চুলে নিজেকে দিশাহীন পাখি মনে হচ্ছে প্রেমার। খুশীর চোটে অভ্রের দিকে তাঁকিয়ে প্রেমার একটা বড়সড় হাসি দেয়। যার অর্থ "শুকরিয়া"
প্রতিউত্তরে অভ্রও একটা হাসি দেয়। যে হাসিতে লুকিয়ে আছে নানা রকম অনুভূতির মিশ্রণ।হাসি,কষ্ট,চাওয়া,পাওয়ার আকাঙ্খা, অপ্রকাশিত কিছু কথার চাপা আর্তনাদ।সব মিলে অভ্র হাজারগুণ খুশী এ মুহুর্তে। 

২২!!

দিঘির ঝিরিঝিরি বাতাসে উম্মাদ হয়ে যাচ্ছে প্রেমা। খুশীতে চোখমুখ চিকচিক করছে।এতোবড় দিঘি সে আগে কখনো দেখেনি। সবচেয়ে নজরকাঁড়া দৃশ্য গোল আঁকার ধারন করা চাঁদটি। দিঘির পানিতে নিজের প্রদীপ্ত আলোসহ রুপ ধারন করে রেখেছে। সাথে বেলিফুলের মিষ্টি গন্ধ্যে মাতাল প্রায়। আশেপাশে কোনো বেলি ফুলের গাছ সে দেখেনি। তাই নিস্তব্ধতার সহে বেলির ফুলের মিষ্টি সুগন্ধ লুপে নিচ্ছে নিজের মধ্যে।

পাশাপাশি অভ্রের দৃষ্টিও তার প্রেমার দিকে।কোনো নেশা,উত্তেজন নেই এই দৃষ্টিতে। শুধু নিজের চোখ দিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাদা কোনো পরীকে দেখছে সে। খোলা চুলের একপাশে শুধু সাদা রঙের ফুলের অভাব।তাহলেই হয়তো তার চোখ তৃপ্তি পাবে। 

বেলি ফুলের ঘ্রান আসতেই ব্যাস্ত হয়ে চারপাশে নজর দেয় অভ্র।মনটা অশান্ত হয়ে উঠে মুহূর্তে। যেকরেই হোক বেলি ফুল ও চাই-ই-চাই।

প্রেমার অগোচরে পেঁছন দিকে হাঁটা দেয় অভ্র। তারা এখন দিঘির পেঁছনের দিকে আছে।তাদের সামনেই রয়েছে কয়েকটা দোকান।

পাঁচমিনিট পর ফিরে আসে হাতে ফুল নিয়ে।হুঁসহীন প্রেমা এখনো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রয়েছে।আশেপাশের খবর সে রাখেনা। অভ্র প্রেমার পাশে এসে দাঁড়াতেই প্রেমা অভ্রের দিকে তাঁকায়,ভ্রু কিঞ্চিৎ কুঁচকায়,

"তুমি কোথায় থেকে আসছো,এতক্ষণ ছিলে না?(প্রেমা)
নিচু শব্দে অভ্র উত্তর দেয়,
" না'
এবার প্রেমা দেখে অভ্রের হাতে বেলিফুল,
এগুলা কই ফেলে?? গাছ তো দেখিনি!(প্রেমা)
পেয়েছি আর কি,নাও! (প্রেমার দিকে এগিয়ে দিয়ে)
চুপচাপ নিয়ে নেয়। অভ্র বলতে চেয়েও বলতে পারেনি,যে প্রেমা এ ফুল তুমি তোমার কানের পাশে গুজে দাও। ছোট শ্বাস ছাড়ে অভ্র,সব কথা বলা ঠিক নয়। কিছু কথা সময়ের জন্য সঞ্চয় রাখা শ্রেয়।

অভ্রের মনের কথা প্রেমা কর্ণে প্রবেশ না করলেও,অভ্রের ইচ্ছে সে অপূর্ণ রাখেনি। অল্প ফুল হাত রেখে বাকি অল্প ফুল কানের পাশে গুজে দেয়,এবং ফোন বের করে কয়েকটা ছবি তুলে নেয় প্রেমা। হঠাৎ অভ্র প্রেমার দিকে তাঁকাতেই অটোমেটিক হাসি চলে আসে।সে তো ভুলেই  গিয়েছিলো,প্রেমা ছবি তুলার জন্য হলেও ফুল কানের পাশে গুজাবে।

নিরবতা ভেঙে অভ্র বলে উঠে,
"চলো, আরেকটা জায়গাতেও যেতে হবে।(অভ্র)
" আরেকটা?? রাত হয়ে যাবে তো।(প্রেমা)
"হোক রাত, (বলেই অভ্র হাঁটা দেয়)
অভ্রকে হাঁটতে দেখে প্রেমা নিজেও অভ্রের পেঁছন পেঁছন হাঁটা দেয়।একসময় অভ্রের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়।  অল্পদূর হেঁটে দোকানের সামনে আসতেই অভ্র চোখ গিয়ে পরে ফুচকার দোকানের দিকে,

" ফুচকা খাও প্রেমা?"(অভ্র)
"না, খায় না তো।(প্রেমা)
" কি বলো? মেয়েরা তো ফুচকার জন্য পাগল।(অভ্র)
"আগে খেতাম, এখন ইচ্ছে করে না।(প্রেমা)
" খাবে??
"কী??"
"ফুচকা?
" (প্রেমা কি উত্তর দিবে ভেবে পাচ্ছিলো না)
"আচ্ছা একটা গেম হয়ে যাক?? 
" কিসের??(প্রেমার)
"এক প্লেট কড়া ঝাল দিয়ে ফুচকা,যে আগে শেষ করতে পারবে সে উইনার!(হালকা হেসে অভ্র বলে)

" তুমি ঝাল খেতে পারো? (প্রেমা)
"মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় অভ্র,
" ওকে ডান,আমি জিতলে কি পাবো??(প্রেমা)
"নেক্সট ফ্রাইডে একটা বড় সাপ্রাইজ পাবে,ঠিক এই টাইমেই।(অভ্র).
চোখের পলক বারবার নাড়িয়ে প্রেমার অভ্রের দিকে তাঁকায়,তারপর বলে,"এখন দিলে কি হবে?" (প্রেমা)

হঠাৎ অভ্র শক্ত গলায় বলে উঠে,
খেতে হবে না,বাড়ি চলো।(অভ্র কথা বলে আবারও হাঁটতে লাগে)
তখনি পেঁছন থেকে অভ্রের শার্টে টান পড়ে,পেঁছন ফিরতেই দেখে প্রেমা তার শার্ট ধরে আছে,

"রাগ দেখাও,দিঘির পানিতে ছুড়ে ফেলে দিবো!(প্রেমা)
প্রেমার কথায় অভ্র হালকা ঠোঁট চেপে হাসি আটকিয়ে বলে," সেই শক্তি আছে তোমার? (প্রেমা)
প্রেমা অভ্রের শার্ট ছেড়ে দিয়ে অভ্রকে একটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে সামনের দিকে হাঁটা ধরে,পেঁছন থেকে অভ্র এবার হাসতে লাগলো,প্রেমা ক্ষেপেছে,তাইতো ধাক্কা দিলো।

ফুচকার দোকানের সামনের গিয়ে,
"মামা বেশি বেশি অতিরিক্ত কড়া ঝাল দিয়ে দুই প্লেট ফুচকা দেন? (অভ্রের দিকে তাঁকিয়ে নাক ফুঁলিয়ে বলে)

টেবিলে দু'জন দু'মাথায় বসছে, ফুচকা আসতেই প্রেমা সাথে সাথে একটা ফুচকা মুখে পুড়ে নেয়।ক্ষিপ্রগতিতে খাচ্ছে প্রেমা।জেতার লক্ষ্যে । প্রেমার যখন পাঁচটা তখন অভ্র মাত্র দু'টো খেয়েছে। সে ইচ্ছে করেই ধীরে গতিতে খাচ্ছে যাতে প্রেমা জিতে যায়। ফুচকা খাওয়ানোর মূল উদ্দেশ্য ছিলো, প্রেমা ফুচকা খাবে আর সে দৃশ্যটা অভ্র দেখবে এবং উপভোগ করবে। ঝালের কারনে প্রেমা বারবার ঠোঁট উঁচিয়ে ঝাল কমানোর চেষ্টা করছে।এবং এ দৃশ্যটাই দেখতে চেয়েছিলো অভ্র। মনেমনে বলে উঠে,

" মারাত্বক সুন্দর! (অভ্র)
 নিজের ফোনটা বের করে একটা ছবি তুলে নেয়, তাও প্রেমার অজান্তে।কারন প্রেমা তখন ফুচকা খেতে ব্যাস্ত।

অবশেষে প্রেমা জিতে যায় আর অভ্রে হারে। কিন্তু তাতে অভ্রের কিছুই যায় আসে না। সে যেটা দেখতে চেয়েছিলো সেটা দেখেছে তাতেই স্বার্থক। কি অদ্ভুত দু'জন দু'উপায়ে আনন্দিত। 

প্রেমার জন্য দু'টো আইসক্রিম এনে প্রেমার হাতে দেয় অভ্র। দু'হাতে দুটো আইসক্রিম একসাথে খাচ্ছে।আর অভ্র মৃদু হাসি হাসে প্রেমার কাণ্ডে।ঝালটা আংশিক কমেছে তবে পুরোপুরি না।

রাস্তা দিয়ে হাঁটছে দুজনে। জনমানবহীন রাস্তা।মাঝেমাঝে কয়েকটা গাড়ি যায়।এরপর আবার নিস্তব্ধ।এ মুহূর্তে  প্রেমার ভালোলগার অনুভূতি অপরিসীম। সে ভাবছে অভ্রের সাথে না আসলে সে কখনো এতো সব দেখতে পেতো না। এতো সুন্দর পরিবেশের সম্মুখীন হতো না।

হাঁটতে হাঁটতে তারা আরো একটু দূর চলে যায়।এখান থেকে বের হয়েই তারা বড় রাস্তায় উঠবে। আর তার আগেই ঘটে একটা অঘটন।

একটা বাইক থেকে দু'টো ছেলে এসে অভ্রের পেঁছনে দাঁড়ায়। একজন মোটা লাঠি দিয়ে অভ্রের মাথায় ভাড়ি দিতে যাবে তার আগেই প্রেমা দেখে ফেলে।চিৎকার দিতেই অভ্র পেঁছন ফিরে তাঁকায়।এবং সাথে সাথে লাঠিটা ধরে, অন্যহাতে প্রেমাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। আরেকজন ছুটে এসে ধরতে যাবে তার আগেই প্রেমা পাশ থেকে ভাঙা ইট নিয়ে ছুড়ে মারে। সে ছেলেটা আঘাত ফেলে কিছুটা পিছিয়ে যায়।তখনি লাঠি ধরা ছেলেটি লাঠি ছেড়ে ছুরি বের করে অভ্রের হাতে আঘাত করে।সঙ্গে সঙ্গে প্রেমা চিৎকার দিয়ে উঠে,লাঠি নিয়ে মারতে যাবে তার আগেই ছেলে দু'টো পালিয়ে যায়।হঠাৎ এমন ঘটনার প্রত্যাশা কেউ করেনি।খুব দ্রুতগতিতে হয়েছে সবটা।মাথা ঝিমঝিম করে উঠে,পরিস্থিতি অন্যরকম রূপ ধারন করে।

প্রেমা প্রচণ্ড ভয়ে অভ্রের হাতের দিকে তাঁকায়।কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা। অভ্র নিজের অন্যহাত দিয়ে কেটে যাওয়া হাতটা চেপে ধরে।সে একটু ও অবাক হয়নি। এভাবে অরো আগে দু'বার আক্রমণ হয়েছিলো ওর উপরে।তবে সেটা অনেক দেড়ি হচ্ছে। কিন্তু কাজটা কার তা অভ্র কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারে।

"অভ অভ্র তাড়াতাড়ি চলো,হাতে ব্যান্ডেজ করতে হবে,ক্লিনিকে চলো,(প্রেমা)
" ক্লিনিকে না,বাসায় যাবো,(অভ্র)
"কিন্তু,বা..বাসায়,(প্রেমা)
" চলো,আগে।
রক্তমাখা হাতে প্রেমার হাতটা চেপে ধরে সামনের দিকে হাঁটা ধরে অভ্র।দাঁড়িয়ে থাকলে প্রেমা প্রশ্ন করতে করতে পাগল করে দিবে। 

"দেখো অভ্র, তোমার হাতে ব্যাথা পেয়েছো,সেটা ধরো,কতো রক্ত পরছে দেখো? তুমি আস্তে হাঁটো,আর আমার হাতটা ছাড়ো,(প্রেমা)
হাঁটা থামিয়ে অভ্র প্রেমার চোখে চোখ রাখে এরপর বলে,
" এ অল্প ব্যাথায় আমি মরে যাবো না,সো, চুপ করো(কড়া কন্ঠে বলে উঠে) 
অভ্রের কথায় প্রেমা চুপ হয়ে যায়।মরে যাওয়ার কথাটা শুনে কেমন যেনো অদ্ভুতভাবে ভয় পায় প্রেমা।সব বুঝার মতো পরিস্থিতিতে নেই তাই চুপ মেরে থাকে। অনেক্ষণ হাঁটার পর অভ্র একটা দু'তলা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। এবং বেলটা চেপে বাজায়। 
দরজা খুলতেই দেখে....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন