বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তরু তাকিয়ে আছে নিহির দিকে। একবার নিহি আর আমানের মুখের দিকে তাকায় আরেকবার তাকায় ধরে রাখা হাতের দিকে। অন্যদিকে অপ্রস্তুত আমান আর নিহিও বুঝতে পারছে না কী করবে! তরুর যেন মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছে না। তরু এটাই ভেবে পাচ্ছে না মাত্র একদিনের পরিচয়ে একটা ছেলের সাথে হাত ধরে কীভাবে হাঁটে? তাছাড়া উনার সাথে তো নিহির কথাও হয়নি! তবে কি ওরা আগে থেকেই পরিচিত? কিন্তু এটা কী করে সম্ভব? যোগসূত্র বা সমীকরণ কোনোটাই তরু মেলাতে পারছে না। দূরত্ব ঘোচায় আমান। নিহিকে নিয়ে তরুর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে তরু আর শিশির। আমানই প্রথম কথা বলা শুরু করে বলে,
"আমি বুঝতে পারছি আপনি একটা ঘোরের মাঝে আছেন। যখন দুজনকে একসঙ্গে দেখেই ফেলেছেন তখন সব পরিষ্কার করেই বলি। নিহির সঙ্গে আমার সম্পর্ক আরো আগে থেকেই আছে।"
"তার মানে আপনারা পূর্বপরিচিত?" বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করে তরু।
আমান বলে,
"হ্যাঁ। ওর জন্যই আমি ঢাকা থেকে সিলেটে এসেছি।"
"হায় আল্লাহ্! আমি বুঝতেও পারিনি।"
এরপরই হেসে নিহিকে বলে,
"কীরে নিহি? আমি তো তোকে সব বলি। তাহলে তুই আমায় বলিসনি কেন?"
মনের ভেতর যেই ভয়গুলো পাহাড়সম হয়ে ছিল নিহির তা এখন ভেঙেচুরে গেছে তরুর হাসিতে। তার মানে তরু মেনেই নিয়েছে! তাছাড়া না মানারও তো তেমন কোনো কারণ নেই। আমান নিজেও ভাবেনি তরু এত সহজেই সবটা মেনে নেবে। নিজেকে নিয়ে আমানের কোনো ভয় ছিল না। ভয় ছিল নিহিকে নিয়ে। যদি ওর বাড়ির কেউ জানতো তাহলে অনেক বেশিই সমস্যা হয়ে যেত। নিহি হাসার চেষ্টা করে বলে,
"বলতাম কিছুদিন পর।"
"হয়েছে। আর বলতে হবে না। এখন তো আমি জেনেই গেছি।"
নিহি আমতা আমতা করে বলে,
"বাড়ির কাউকে বোলো না প্লিজ!"
"ধুর! পাগল নাকি? নিশ্চিন্তে থাক। কাউকে বলব না।"
তখন শিশির প্রস্তাব করে,
"পাশেই একটা চায়ের দোকান আছে। ওখানে গিয়ে বসে কথা বলা যায় না?"
"হ্যাঁ,শিওর।" বলে আমান।
তারপর চারজন মিলে হাঁটতে থাকে কথা বলতে বলতে। নিরব গাড়িতে বসে ছিল। আমান ফোন করে গাড়ি লক করে বাইরে আসতে বলে। তারপর পাঁচজন মিলে চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেয়। আমান তখন জাফলং-এ যাওয়ার প্রস্তাব করে। নিহির মতো তরুরও ভয় যদি বাড়িতে রাজি না হয়? তবুও ওদের কথা দেয় যে, বাড়িতে রাজি করানোর জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করবে। কলেজের সময় হয়ে এসেছে বলে ওরা তরু আর নিহিকে কলেজে পৌঁছে দেয়। ক্লাস শুরু হতে এখনো দশ মিনিট আছে হাতে। আমান, নিরব আর শিশির গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। দুই তলার ক্লাসের বারান্দা থেকে রাস্তা দেখা যায়। নিহি আর তরু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের দেখছে আর মিটিমিটি হাসছে। ক্লাসের তরুর অনেক বান্ধবীই শিশিরের কথা জানে। ওরাও বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। ওদের মধ্যে নৌরিন এসে তরুর গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
"কী? দুলাভাইকে দেখা হচ্ছে?"
তরু লজ্জা পেয়ে হাসে। বাকিরা শব্দ করে হাসে। সঙ্গে নিহিও হাসে। নৌরিন হাসতে হাসতে রাস্তার দিকে তাকায়। হঠাৎ-ই ওর হাসি থেমে যায়। চোখ আটকে যায় কালো শার্টের ওপর ডেনিম জ্যাকেট পরা ছেলেটির দিকে। মোহময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে তরুকে জিজ্ঞেস করে,
"তরু, দুলাভাইর পাশে কালো শার্ট পরা ছেলেটা কে রে?"
নিহির মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়। আমান-ই কালো শার্ট পরে আছে। ওর কথা কেন জিজ্ঞেস করছে নৌরিন? এদিকে আমান আর নিহির সম্পর্কের কথাও কাউকে জানানো যাবে না। তরু নিহির দিকে তাকায়। নিহি উত্তরে বলে,
"শিশির ভাইয়ের বন্ধু।"
নৌরিন পুলকিত হয়ে বলে,
"ইশ! কী হ্যান্ডসাম! এত্ত সুন্দর কেন?"
এরপরই তরুকে অনুরোধের স্বরে বলে,
"তরু, তরু প্লিজ শিশির ভাইকে বল তার নাম্বারটা আমায় এনে দিতে প্লিজ!"
নিহি ক্রোধানল দৃষ্টিতে তাকায় নৌরিনের দিকে। ইচ্ছে করছে চুলের মুঠি ধরে আছড়াতে। হতচ্ছারি বেয়াদব মেয়ে! তোর উনার দিকে কেন নজর দিতে হবে রে?
এর মাঝেই ক্লাস শুরু হওয়ার ঘণ্টা পড়ে যায়। নিহি হনহন করে ক্লাসে চলে যায়। তরুও আর সময় বিলম্ব করে না। দৌঁড়ে ক্লাসে চলে যায়। নৌরিন তখনো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমানকে দেখছে। নিহি ক্লাসে গিয়ে ফোন নিয়ে এক কোণায় বসে। আমানকে ফোন করে। দু'বার রিং হওয়ার পর আমান ফোন রিসিভ করে বলে,
"এখন না ক্লাস শুরু হবে?"
নিহির মেজাজ গেল আরো খারাপ হয়ে। ক্লাস শুরু হয়েছে তাতে তার কী? তার কি ক্লাস শুরু হয়েছে নাকি আমার? মায়ের চেয়ে যেন মাসির দরদ বেশি! রাগে বিড়বিড় করতে করতে লাগল নিহি। রাগকে আর কন্ট্রোল করতে না পেরে বলল,
"আমার ক্লাস শুরু হইছে তাতে তোর কী? আমি ফোন দিছি বলে তোর সমস্যা হয়ে গেছে? সমস্যা হলে আমার কী? আমি ফোন দিবোই! তাতে তোর কী?"
আমান হতভম্ব হয়ে ফোন কানে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একটুর জন্য হাত ফস্কে ফোনটা পড়ে যায়নি। বিশ্বাসই করতে পারছে না নিহি যে এমন তুই-তোকারী করে কথা বলছে! এতদিন রাগ করলেও কখনোই তুই বলেনি। আজ তুই! তাও কোনো কারণ ছাড়াই?
আমানকে চুপ থাকতে দেখে নিহির মেজাজ আরো বিগড়ে যায়। রাগ দেখিয়ে বলে,
"চুপ করে আছিস কেন এখন?"
"কী হয়েছে নিহু? এত রেগে গেছেন কেন?"
"একশো বার রাগব। তোর কী? তোকে বলে রাগ করব আমি? তুই এক্ষণী কলেজের সামনে থেকে চলে যা।"
"কেন?"
"যেতে বলছি যা। এত প্রশ্ন করিস কেন? তুই এখনই যাবি মানে এখনই যাবি।"
"আচ্ছা রিল্যাক্স! আমি যাচ্ছি।"
নিহি ফোন কেটে যায়। রাগে থরথর করে শরীর কাঁপছে। স্যার ক্লাসে আসার সঙ্গে সঙ্গে নৌরিনও ক্লাসে আসে। ওকে দেখে আরো রাগ বেড়ে যায়। এবং আলগা পিরিত দেখাতে এখন ওর সিট রেখে এই সিটে এসে বসেছে। বসেছে তরুর পাশেই। বারবার ফিসফিস করে বলছে আমানের নাম্বার দিতে। তরুর কী বলা উচিত তরু জানে না। নিহি ওর কথা সবই শুনতে পাচ্ছে। দাঁতে দাঁত চেপে শুনছিল সব। আর সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করে বলে,
"এটা ক্লাস নৌরিন! তোমার কথা বলায় আমার পড়তে সমস্যা হচ্ছে।"
স্যার রোল কল করছিল। নিহির কথায় স্যারসহ ক্লাসের সবাই ওদের দিকে তাকায়। নৌরিন কিছুক্ষণ অবাক হয়ে নিহির দিকে তাকিয়ে থাকে। এতদিন একসঙ্গে পড়েছে কখনো এমন করেনি। আজ হঠাৎ কী হলো? স্যার নিহিকে জিজ্ঞেস করেন,
"কী হয়েছে নিহি?"
নিহি দাঁড়িয়ে বলে,
"এত কথা বলায় পড়তে সমস্যা হয়।"
"ওকে। সিট ডাউন।"
স্যার এবার নৌরিনকে ধমক দিয়ে বলেন,
"কথা বলার হলে বাইরে গিয়ে কথা বলো।"
নৌরিন স্যরি বলে। স্যার আর কিছু না বলে রোল কল করেন আবার।
নৌরিন সাদা কাগজে স্যরি লিখে নিহিকে দেয়। এটা দেখে নিহি তেলে-বেগুনে আরো জ্বলে ওঠে। এত আদিখ্যেতা কেন দেখাতে হবে এই মেয়ের? নিহি কিছুই বলে না। চার ক্লাস পর টিফিন দেয়। নিহি তরুকে নিয়ে ক্যান্টিনে যায় খেতে। পেছন পেছন নৌরিনও আসে। কিছুতেই এখন তরুর পিছু ছাড়ছে না। আমানের সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন করতেছে। তরুর উত্তর ছিল শুধু,
"আমি এতকিছু জানি না।"
নিহি চুপচাপ খাচ্ছিল। নৌরিন এবার নিহিকে বলে,
"এখনো রেগে আছো আমার ওপর? স্যরি ইয়ার!"
নিহি না তাকিয়েই উত্তর দেয়,
"ইট'স ওকে।"
নৌরিন আবারও আমানকে নিয়ে কথা বলা শুরু করে। ক্লাস থেকে বের হওয়ার সময় দেখেছে আমানকে বাইরে। নিহি খেতে খেতে নৌরিনকে বলে,
"উনাকে তোমার এত পছন্দ হয়েছে?"
"ভীষণ! তরু তো কোনো হেল্পই করতে চাচ্ছে না। তুমি কি আমায় হেল্প করতে পারবে? প্লিজ নিহি! তুমি তো শিশির ভাইয়ের কাছে তার নাম্বার চাইতেই পারো। করবে সাহায্য? প্লিজ!"
নিহি রহস্যজনকভাবে হেসে বলে,
"অবশ্যই।"
তরু ভ্রু কুঁচকে নিহির দিকে তাকায়। নিহি নৌরিনকে বলে,
"চলো।"
"কোথায়?"
"চলো তো!"
নৌরিনের হাত ধরে কলেজের বাইরে নিয়ে যায় নিহি। সোজা গিয়ে দাঁড়ায় আমানের সামনে। আমান একটু অপ্রস্তুত হয়ে দাঁড়ায়। পর মুহূর্তেই নিজেকে সামলে নেয়। নিহির চোখে ক্রোধ। নৌরিন ভয়ে নাকি লজ্জায় জড়োসড়ো হয়ে আছে তা নিহি বুঝতে পারছে না। নিহি চোখমুখ বুজে এক দমে বলে,
"ও নৌরিন। আমার আর তরুর ক্লাসমেট। আপনাকে দেখেই ওর ভালো লেগেছে। আপনার নাম্বার চাইছিল এতক্ষণ। বুঝতেই পারছেন কেন চেয়েছে?"
নৌরিন নিহির হাত চেপে ধরে। আমান শুনল মনোযোগ দিয়ে নিহির কথা। আর বুঝতেও পারল নিহির রাগের কারণ। নিরব অবাক হয়ে নিহির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। এমন রণচণ্ডী রূপ অনেকদিন বাদে আজ দেখল। আগের তুলনায় এই রূপের তেজ অনেক অনেক গুন বেশি! আমান এবার সশব্দে হাসলো। নিহি আর নৌরিন দুজনই ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকায়। আমান মিষ্টি হেসে নিহির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
"আপনার ফ্রেন্ডকে বলে দিন আমি বিবাহিত। আমার মিষ্টি একটা বউ আছে। যাকে ছাড়া আমি নিজেকে ভাবতেও পারি না। আমার মন, দুনিয়া জুড়ে শুধুই আমার মিষ্টি বউপাখি।"
নৌরিনের মনটা যেন এখন নিমিষেই ভেঙে গুড়িয়ে গেল। মুখের বর্ণ পাল্টে গেছে। পাংশু আকার ধারণ করেছে। পছন্দের মানুষটির বউ আছে! নিহির রাগ এবার পানি হয়ে গেছে। আমান এমন কোনো উত্তর দেবে নিহি ভাবতে পারেনি। আমান মুচকি মুচকি হাসছে। নৌরিন দৌঁড়ে ভেতরে চলে যায়। নিহি নিস্তব্ধ হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে গুটিগুটি পায়ে কলেজের ভেতর চলে যায়। নিহির এখন বেশ খুশি খুশি লাগছে। মুখ টিপে হাসছে। এতক্ষণ নৌরিনকে দেখলে যে এত রাগ হতো! অথচ এখন ওকে দেখলেই হাসি পাচ্ছে। উচিত শিক্ষা হয়েছে। তরু হেসে নিহিকে বলে,
"তুই পারিসও বটে!"
বাড়িতে গিয়ে নিহি আর তরু পড়েছে সবাইকে রাজি করানোর প্ল্যান নিয়ে। মামা-মামি রাজি হলেও লিমনকে নিয়েই ভয়টা বেশি। ঐ নাছোড়বান্দাই বেঁকে বসবে। রাতে খাওয়ার টেবিলে বসে নিহি বলল,
"মামা সিলেটে এতবার আসলাম। অথচ এখনো জাফলং-এ যেতে পারলাম না। কাল তো কলেজ বন্ধ। আমি আর তরু গিয়ে ঘুরে আসি।"
লিমন বড় বড় চোখ করে নিহির দিকে তাকায়। তরু বলে,
"হ্যাঁ, আব্বু যাই প্লিজ?"
লিয়াকত শিকদার খেতে খেতে বলেন,
"না, না। একা একা যেতে দেওয়া যাবে না।"
তরু তখন ফট করে বলে,
"একা না তো! ক্লাসের আরো অনেক বান্ধবীরাই যাবে। আর বেশি দূরেও না তো! যাই আব্বু?"
তরুর অকপটে বলা মিথ্যা শুনে হাসি আসলেও নিহি নিজেকে সামলে নেয়। লিয়াকত শিকদার উত্তর দেওয়ার আগেই মামি ঘোর আপত্তি জানায়। এবার লিমনও বলে,
"আমিও মায়ের সঙ্গে একমত। যতই কাছে হোক কাল তোদের কোথাও যাওয়া হবে না।"
নিহি ক্ষেপে গিয়ে বলে,
"তুমি সবসময়ই শুধু এমন করো! প্লিজ ভাইয়া যাই?"
"হ্যাঁ ভাইয়া, বারণ কইরো না। যাই?" বলে তরু।
লিমন তখন ধমক দিয়ে বলে,
"বললাম তো না! যাওয়া হবে না মানে যাওয়া হবে না।"
ধমক খেয়ে নিহি আর তরু দুজনই খাওয়া শেষ না করেই ঘরে চলে যায়। লিমন আরো রাগ দেখিয়ে বলে,
"খাওয়ার ওপর রাগ দেখিয়ে লাভ নেই। তোদের যাওয়া হবে না।"
শব্দ করে দরজা লাগানোর আওয়াজ হয়। লিয়াকত শিকদার বলেন,
"রাগারাগি করিস কেন বাচ্চাদের সাথে? সুন্দর করে বুঝিয়ে বললেই তো হয়।"
"ওরা বোঝার মতো মেয়ে না। দুইটাই ঘাড়ত্যাড়া। দেশের অবস্থা ভালো না। যতগুলো মেয়েই যাক, কোন আক্কেলে ওদের একা ছাড়ার কথা ভাবো?"
"হয়েছে বাবা! থাম। আমি কি আর পারমিশন দিয়েছি?"
"আমি বারণ না করলে ঠিকই তো পারমিশন দিতে।"
"ঘাট হয়েছে আমার বাপ। খা এখন।"
নিহি আর তরুর রাগ হচ্ছে খুব। লিমন যখন একবার বারণ করে দিয়েছে তখন আর যাওয়া হবে না শিওর। নিহির এখন কান্না পাচ্ছে খুব। আমান এত ইচ্ছে করে বলল! নিহি আমানকে কল করে। আমান কেটে দিয়ে ব্যাক করে। নিহি কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে,
"হ্যালো।"
"কী হয়েছে নিহু?" অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে আমান।
"বাড়িতে রাজি হয়নি।"
আমান হেসে বলে,
"পাগলী! তাই বলে কি কাঁদতে হবে?"
"আপনি কত শখ করে বললেন!"
"তাতে কী? আপনার কত স্মৃতি রয়েছে আমার কাছে। এবার হয়নি সমস্যা নেই। কিছুদিন পর না আপনার ইয়ারচেঞ্জ পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষ করে তো ঢাকায় আসবেন। তখন আমরা ঘুরব কেমন?"
"আপনার মন খারাপ হয়নি তো?"
"একদম না নিহুপাখি।"
নিহি ফুঁপিয়ে বলে,
"গান শুনব। গান শুনান।"
"আচ্ছা ছাদে গিয়ে শুনাচ্ছি।"
আমান কথা বলতে বলতেই ছাদে যায়। দুজন কথা বলতে বলতে সময় কাটে বহুগুণ। আমান গান শুনিয়ে নিহির মন ভালো করে দেয়।
রাত ১২টা নাগাদ কথা বলা শেষ করে নিহি ঘুমাতে যায়। আমান কিছুক্ষণ ছাদে দাঁড়িয়ে পায়চারি করছে। নিহির কথা ভেবে ভেবে আনমনেই হাসে আমান। ফোনের ওয়ালপেপারে নিহির ছবির দিকে তাকিয়ে বলে,
"ভালোবাসি নিহুপাখি।"
তারপর ওয়ালপেপারে একটা চুমু খেয়ে ঘরে চলে যায়। নিরব লেপ, কম্বল জড়িয়ে গুটিসুটি হয়ে ঘুমিয়ে আছে। আমান নিজেও লেপ গায়ে জড়িয়ে শুয়ে পড়ে। নানান কথা ভাবতে ভাবতেই ঘুম চলে আসে চোখে।
ফোনের রিংটোন বাজছে। ঘুম ঘুম চোখে আমান ফোনটা হাতে তুলে নেয়। ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে 'জান' লেখা। টাইম দেখে নেয়। পৌনে দুইটা বাজে। এত রাতে মা কেন ফোন করেছে? দুশ্চিন্তায় চোখের ঘুমও চলে যায়। তড়িঘড়ি করে ফোন রিসিভ করে বলে,
"কী হয়েছে মা? এত রাতে?"
ওপাশ থেকে অনামিকা রহমান অস্থির হয়ে বলেন,
"তোমার বাবার অবস্থাটা হুট করেই খারাপ করেছে।"
"আব্বু বাড়িতে এসেছে?"
"হ্যাঁ। আজ সন্ধ্যায় ফিরেছে। তখন থেকেই গায়ে জ্বর ছিল। এখন জ্বর বেড়েছে। কাশছে খুব। কাল নাকি একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং-ও আছে। অসুস্থ শরীর নিয়ে তো কাল মিটিং-এ যেতে পারবে না। তাই তোমাকে আসতে বলল। তুমি কি আসতে পারবে?"
"আচ্ছা আমি এখনই রওনা দিচ্ছি।"
"না,না। এত রাতে বের হওয়ার দরকার নেই। ভোরে রওনা দিও।"
"আচ্ছা আমি দেখছি। তুমি আব্বুর খেয়াল রেখো।"
দেখছি বললেও ফোন কেটে দিয়ে আমান দ্রুত শার্টের ওপর জ্যাকেট পরে নেয়। নিরবকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে। আর জানায় এখনই ঢাকায় ব্যাক করতে হবে। নিরব উঠে খালা আর খালুকে ডেকে তোলে। তাদের থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দেয় ঢাকার উদ্দেশ্য। নিহিকে ফোন না দিয়ে টেক্সট করে ঢাকায় ব্যাক করার কথা জানিয়ে দেয় আমান।
______________________
ফাঁকা রাস্তায় গুটিকয়েক গাড়ি চলাচল করছে। এই গুটি কয়েক গাড়ির মাঝে রয়েছে অনলদের মাইক্রো কার। ওদের পাঁচজনের গ্রুপই শুধু যাচ্ছে না। সঙ্গে যাচ্ছে ক্লাসের আরো কয়েকজন ছেলে-মেয়ে। সন্ধ্যার দিকে রওনা দেওয়ার কথা থাকলেও ওরা রওনা দেয় রাত এগারোটার দিকে। সকলে মিলে হৈ-হুল্লোড় করতে করতে যাচ্ছে। গান চলছে গাড়িতে। অনল বসেছে জানালার সাইডে। জানালার কাঁচ খুলে রেখেছে। খোলা জানালা দিয়ে শাঁ শাঁ শব্দে বাতাস ভেতরে আসছে। যা বাহ্যিক দিকটাকে শীতল করতে পারলেও মনকে শীতল করতে পারছে না অনলের। মনের ভেতর অজানা এক ভয় দানা বাঁধতে শুরু করেছে। ভয়টা এখন থেকেই নয় বরং সিলেটে আসার সময় থেকেই শুরু হয়েছে। এমন ভয়ের কি কোনো কারণ আছে? নাকি কোনো মানে! উত্তর খুঁজেও কোনো উত্তর পাচ্ছে না অনল। যতবার নিহিকে ভু্লতে চাচ্ছে ততবার নিহির কথা তীব্রভাবে মনের ভেতর কড়া নাড়ছে। কেন জানি হুট করেই নিহিকে একটা পলক দেখার জন্য মন অস্থির হয়ে আছে। একটা নজর দেখতে পারলেই যেন সকল অশান্তি দূর হয়ে যাবে। কিন্তু কেন যাবে? কী আছে নিহির মাঝে? কেন নিহির জন্য মন অস্থির হবে? আচ্ছা নিহি তো এখন ঢাকায় নেই। কোনোভাবে কি এমন হতে পারে না নিহি সিলেটেই আছে?
.
.
.
চলবে...............................