১১!!
"ঘুম হালকা হলেই চোখ মিটিমিটি করে মেলে তাকায়। মাথাটা বেশ ভাড় লাগছিলো প্রেমার। ঘুম আরেকটু হালকা হতেই কারো কথা বলার শব্দ কানে আসে। "
তাই উঠে বসে প্রেমা। তাকিয়ে দেখে বাড়ির সবাই এখানে দাড়িয়ে কথা বলছে।প্রেমাকে উঠতে দেখে আদ্র দৌড়ে এসে প্রেমার পাশে বসে।
" আপু এখন কেমন আছো??(আদ্র)
আদ্রের কথা শুনে সবাই প্রেমার দিকে তাকায়। আরিয়ানের মা দৌড়ে এসে প্রেমার পাশে এসে বসে।সাথে অভ্রের মাও।
"এখন শরীর কেমন আছে মা??(আরিয়ানের মা)
" জ্বি? মানে??...(প্রেমা হালকা স্বরে জিজ্ঞেস করে)
উনারা কিছু বলার আগে প্রেমার দাদু এসে প্রেমার পাশে বসে।শক্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে..
"কাল কী রাতে গোসল করেছিলি নাকি ভয় পেয়েছিলি কোনটা??" (প্রেমার দাদুর কথা শেষ হতেই অভ্র প্রেমার রুমে প্রবেশ করে ওষুধ নিয়ে আর কথাগুলো শুনে)
প্রেমার তখনও মাথায় কিছু আসছে না।খালি ভোঁ ভোঁ করছিলো মাথাটা। তখনি অভ্রের দিকে তাকায়।মুখটা কেমন শুকনা শুকনা লাগছিলো অভ্রের।চোখ হালকা লাল হয়ে আছে।অভ্রের দিকে তাকানোর পর প্রেমা তার দাদুর কথা উত্তর দেয় নি। নজরটা অভ্রতে স্থির ছিলো।
" জ্বরের মধ্যে যে বেহুস হয়ে গিয়েছিলি সে খবর তোর আছে?? সত্যি বল প্রেমু তুই কী গোসল করেছিলি নাকি ভয় পেয়েছিলি কোনটা??(প্রেমার দাদু)
প্রেমা কী বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না। কারন কালতো সে ভয়ও পেয়েছে সাথে গোসল ও করেছে।ছোটবেলা থেকে প্রেমা ভয় পেলে এবং রাতে গোসল করলে জ্বর আসতো।এবং তা অতিরিক্ত কোনো সময় সেন্সলেস হয়ে পরতো।
প্রেমা আমতা আমতা করে উত্তর দেয়-
"মনে নেই!!
প্রেমার দাদু একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।এ মেয়েটা সুধরানোর না। রাতে গোসলটা করবেই যাতে জ্বর বাঁধায়। কেন যে বুঝে না??
" উঠ!! হাত মুখ ধোয়ে নে। নাস্তা করে তোকে ওষুধ খেতে হবে।
আরিয়ানের মা আর অভ্রের মা প্রেমাকে ধরে উঠাতে চায়লে প্রেমা না করে দেয় নিজেই যেতে পারবে বলে উনাদের আশ্বাস দেয় এবং ওদের চলে যেতে বলে। উনারাও প্রেমার কথায় হাফ ছাড়ে এবং নাস্তা আনতে চলে যায়।
উনারা যেতেই প্রেমা অভ্রের দিকে তাকায়।অভ্র তখনো প্রেমার দিকে তাকিয়ে ছিলো এক ধ্যানে। তাই প্রেমা আস্তে করে উঠে অভ্রের সামনে গিয়ে দাড়ায়।
"কী হয়েছে??(প্রেমার প্রশ্ন)
" সরি..! (আস্তে করে)
" মানে সরি কেন?? (প্রেমা)
" আরে সরি এ মেডিসিনগুলো আপনাকে দিতে ভুলে গিয়েছিলাম তাই সরি। (থমথম গলায় উত্তর দেয়)
প্রেমার কাছে অভ্রের কথাগুলো অস্বাভাবিক লাগে।সন্দেহের দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে অভ্রের দিকে।
"আপনি কী কাল ভয় পেয়েছিলেন নাকি গোসল করেছিলেন?? " (অভ্র)
প্রেমার এবার কালকের কথা মনে পড়ে। আশেপাশে তাকায় প্রেমা। মনেমনে ভাবছে ওর সমস্যাটা কী অভ্রকে বলবে। নাকি সে ঠাট্টা করবে ওর যুক্তিহীন কথা শুনে। কিন্তু কাউকে যে বলতেই হবে।তাই সে প্রেমা অভ্রকে বলবে তার মনে কথাগুলো। মনেমনে সেই সিদ্ধান্ত নেয়।
"কী হলো বলছেন না যে..??(অভ্র)
"আচ্ছা! তুমি ফ্রি আছো??(প্রেমা)
" হ্যাঁ,আজ তো শুক্রবার! ফ্রি তো আছিই!(অভ্র)
" তাহলে এখন যাও ছাদে গিয়ে ওয়েট করো আমি নাস্তা করে আসছি! (বলেই প্রেমার ওয়াসরুমে ডুকে পরে)
অভ্র প্রেমার যাওয়ার দিকে থাকে।তারপর মেডিসিন গুলো টেবিলে রেখে দেয়।তারপর ছাদের উপর চলে যায়।
" আমি সত্যি সরি প্রেমা! আপনার ভয় ফেলে জ্বর আসে জানলে কখনোই কাল এমনটা করতাম না। কিন্তু কাল সেটা করার কারন ছিলো। তাই করেছিলাম। আমি জানি আপনি আমাকে কী বলবেন?? " আমি ও তাই চেয়েছি! আপনার মনের মধ্যে কী চলছে সেটা জানার জন্যই তো...!(মনেমনে)
প্রেমার ডাকে অভ্র পেঁছন ফিরে তাকায়। কালো থ্রী-পিচের সাথে চুলে হালকা পেঁছানো খোঁপা! অভ্রের কাছে বেশ আকর্ষনীয় লাগছিলো। প্রেমার এই খোঁপাওয়ালা চুলের রুপেই তো অভ্র পাগল। হাতের মুঠো শক্ত করে তাকিয়ে আছে প্রেমার দিকে ।চোখ সরানোর ইচ্ছে বিন্দুমাত্র নেই তবুও চোখ সরাতে হয় অভ্রকে।
প্রেমা মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে অভ্রের দিকে একটা চিপস্ এগিয়ে দেয়। চিপস্ দেখতেই অভ্রের হাসি চলে আসে। চিপস কখন খেয়েছিলো তার মনেই নেই।
"হাসছো কেন??(ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে প্রেমা)
" আমি বাচ্চা নাকি? যে চিপস্ খাবো??(হেসে)
"না খেলে খাবে না বলে !! এতো কথা কেন?? তুমি না খেলে আমি তো আছি আমি খাবো! (হালকা রেগে কথাগুলো বলে প্রেমা)
" প্রেমার রাগ দেখে অভ্র খপ করে প্রেমার হাত থেকে চিপস্ টা নিয়ে নেই। খেতে খেতে প্রেমাকে জিজ্ঞেস করে কী বলবে--?
" আপনার না কিছু কথা বলার ছিলো??(অভ্র)
এবার প্রেমা চুপ করে অভ্রের দিকে তাকায়। অভ্রের দিকে তাকালে প্রেমা চোখ সরাতে ইচ্ছে করে না। মনেমনে আবারো সেই ভাবনাটা চলে আসে...কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠে–
"আসলে আমি বুঝতে পারছি না কীভাবে বলবো?? তুমি কীভাবে নিবে??(প্রেমা)
" বলেন আগে..
ছোট করে একটা শ্বাস ফেলে তারপর-
"কলেজের বসন্তবরণ উৎসব থেকে শুরু করে কাল ফেসবুকের ঘটনা পর্যন্ত সব অভ্রকে বলে। অভ্রতো গভীরভাবে মন দিয়ে প্রেমা হাত,চোখ, ভ্রু, এবং ঠোঁট নাড়িয়ে কথা বলার ধরন দেখতে মত্ত ছিলো।কথাগুলো তার কানে পৌছেছে কিনা সন্দেহ আছে..."
" বসন্তের_ফুল!'
কথাটা শুনার সাথে সাথে প্রেমা অভ্রের দিকে তাকায়। হঠাৎ প্রেমার তাকানো দেখে অভ্র ঘাবড়ে যায়।
"আমি তোমাকে বসন্ত_ফুলের কথা তো বলিনি! তাহলে তুমি জানলে কীভাবে??(সন্দেহের দৃষ্টি নিয়ে)
অভ্রও শুকনা একটা ঢোক গিলে নিজেকে সামলে ইনিয়ে বিনিয়ে বলে–
" আপনি বসন্ত বরণ উৎসবে গিয়েছিলেন।কেউ আপনাকে ফুল দিয়েছিলো।ফলো করছিলো।এসব বলেছিলো তাইতো?? ফুলেট টব দিয়েছিলো?? তাই আমি বসন্ত কালের বসন্ত, ফুলের টব থেকে ফুল একসাথে ম্যাচিং করে বসন্তের_ফুল বললাম সিম্পল! (বলেই একটা হাসি দেওয়ার চেষ্টা করে)
"আশ্চর্য আমি এগুলা কখন বললাম! আমি তো এসব বলিনি?? আর তুমি??
এবার অভ্র বড়সড় একটা ধাক্কা খায়।প্রেমাকে দেখতে এতোটাই ব্যাস্ত ছিলো যে কথাগুলো কানে পৌঁছায় নি। এখন যদি প্রেমা জানতে পারে তাহলে সব শেষ....
" মানে..এসব বলেন নি তাহলে??
তখনি প্রেমা খুটখুট করে হেসে উঠে। প্রেমার হাসিটাও যেনো এখন অভ্রের কাছে ভয়ংকর মনে হচ্ছিলো। কিছু না বলে তাকিয়ে আছে অভ্র।
" পাগল! আমি তো সবই বললাম তোমাকে??তুমি অন্যমনষ্ক ছিলে মনে হয়েছিলো তাই এভাবে জিজ্ঞেস করেছিলাম! "
"আচ্ছা তুমি বুঝতে পেরেছো আমি কি বলেছি?? আমাকে হেল্প করো প্লিজ ওই অচেনা মানুষটাকে ধরতে।প্লিজ.."
অভ্র মনেমনে একটা হাসি দেয়। নিজেকে খুঁজার জন্য এখন আরেকজনকে হেল্প করবে। হাস্যকর!
"হ্যাঁ,অবশ্যই করবো তার আগে আমাদের বিয়েতে যাওয়ার জন্য প্রিপারেশন নিতে হবে।আর আমরা আজ সন্ধ্যায় রওনা দিবো..
" আজকেই! বিয়ে কবে?? (প্রেমা)
"দুইদিন পর..(কথাটা বলে অভ্র নিজের হাতের ঘড়িটির দিকে তাকায়)
তখনি প্রেমার চোখ যায় অভ্রের দিকে হাতের কাটা দাগের দিকে। সাথে সাথে অভ্রের হাতটা ধরে প্রেমা বলে উঠে–
" এখানে কী হয়েছিলো??
"ব্যাথা পেয়েছিলাম!
" কীভাবে?? মানে কখন??
" সাইকেল থেকে পরে গিয়েছিলাম! একবছর আগে।
"ওহ,,দেখো দাগ হয়ে গেছে।
" হুম..আচ্ছা আপনি বসেন।আমার একটা কাজ আছে আমি আসছি।
বলেই আর না দাড়িয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।
আর মনে মনে বলতে লাগলো–
" দাগ তো হবেই।আপনার দেওয়া প্রথম স্পর্শ ছিলো যে। (মনেমনে)
"মনে পরে যায় একবছর আগের কথা।
প্রতিদিনের মতো সেদিনও বাইক নিয়ে প্রেমার পিছু পিছু আসছিলো অভ্র। পুরো ব্ল্যাক জ্যাকেট,পেন্ট,শু,আর হেলমেট পরা অবস্থায় ছিলো।
কেন যেনো সেদিন প্রেমা প্রচুড় রেগে ছিলো।অভ্রের চলন্ত বাইকের সামনে প্রেমা দাড়িয়ে যায়। আকস্মিকতায় অভ্র বাইক অনেকটা জোরে এসে প্রেমার সামনে থামায়। কারন প্রেমাকে রেখে যাওয়ার সাহসও ছিলোনা সেদিন। আর প্রেমা রেগে অভ্রের মাথা থেকে হেলমেট নিয়ে টানাটানি শুরু করে দেয় মুখটা দেখার জন্য। অভ্রের শক্তির সাথে প্রেমা পেরে উঠেনি ব্যার্থ হয় হেলমেট সরাতে।তাই প্রচন্ড রাগ ক্ষোভ নিয়ে অভ্রের হাত ধরে জোরে একটা ধাক্কা দেয়।তাতেই তাল সামলাতে না পেরে পাশের বড় একটা পুকুরে পরে যায় অভ্র। আর প্রেমার স্পর্শ করা হাতটির সেই জায়াগায় কিছুর সাথে লেগে প্রচুর ব্যাথা পায় অভ্র।
হাতের ব্যাথার কষ্টটা অভ্রের কাছে কিছুই ছিলো না।ও যে প্রেমার প্রথম স্পর্শ পেয়েছিলো তাতেই খুশী হয়ে যায়।
সেদিনের পর থেকে আর বাইক নিয়ে পিছু নেই নি প্রেমার! কিছুদিন আড়াল থেকে ফলো করতো প্রেমাকে।ছয় মাস পরেই অভ্র তার নানাকে অর্থাৎ অভ্রের মায়ের চাচাকে সাথে নিয়ে প্রেমাকে ফলো করতে শুরু করে। যিনি প্রেমার কলেজের প্রিন্সিপ্যাল ছিলেন। অভ্রের নানা-নানি নাকি অভ্রের মা ছোট থাকতেই মারা যায়।সেই থেকে চাচা-চাচির কাছে বড় হয়।তারা কখনো বুঝতে দেয় নি অভ্রের নানা-নানির অভাব!
এর কিছুদিন পরেই অভ্র কোনো রকম একটু একটু গাড়ি চালানো শিখে ফেলে। এবং প্রেমাদের গ্রামে গিয়ে ফলো করতো।
১২!!
"বিকাল থেকেই সবাই বিয়েতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত নিচ্ছে। অভ্রের ফুফু সাইকা এবং সাইরাকে নিয়ে হাজির হয়। বেশ সেজেগুজে এসেছে তারা।বিয়ের অনুষ্ঠান নাকি আজ থেকেই শুরু। সবার প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। "
কিন্তু বিপত্তি ঘটায় প্রেমাকে নিয়ে। সে কোনো রকমেই বিয়েতে যেতে না করে দিয়েছে।তাই সবাই মিলে প্রেমাকে রাজি করানোর প্রচেষ্টায় রয়েছে। কারন বিয়ে বাড়ির নামে প্রেমার প্রচুর এলার্জি।
আরিয়ানের মা খুব সুন্দর একটা শাড়ি এনে দেয় প্রমাকে পরানোর জন্য। যেতেতু আজ মেহেদি অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য আয়োজন রয়েছো তাই আগে থেকে তৈরি হয়ে গেলে ভালো হয়। কিন্তু প্রেমা ঠায় বসে থাকে।
হঠাৎ একটা মিষ্টি কন্ঠ ভেসে আসে প্রেমার কানে।এটা তার পরিচিত কন্ঠ।দরজার দিকে তাকায় প্রেমা--
"প্রেমাপ্পি!!! (অনেকটা চেঁচিয়ে ডাকে প্রেমাকে)
" আরে প্রিয়া তুই?? " এখানে?? (বলেই দাড়িয়ে যায়)
প্রিয়া কিছু না বলে প্রেমাকে জড়িয়ে ধরে। অনেকদিন পর দেখা দুজনেই দুজনকে জড়িয়ে ধরে আছে। প্রেমা প্রিয়াকে জিজ্ঞেস করে--
"প্রিয়ুমা এখানে কীভাবে এসেছিস??(প্রেমা)
" ওই আংকেলটার সাথে..(আঙুল দিয়ে দরজার দিকে দেখায়। প্রেমা তাকিয়ে দেখে অভ্র দাড়িয়ে আছে)
"তুমি?? কীভাবে গিয়েছো?? আমাদের বাড়ি চিনো তুমি?? (ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে প্রেমা)
" না ওইদিন যে ড্রাইভারটা আনতে গিয়েছিলো।উনাকে নিয়ে গিয়েছি আপনাদের বাড়িতে। (অভ্র)
" হ্যাঁরে প্রেমু শুধু কথা বলবি নাকি। নে শাড়িটা পরে নে।আমি আর কোনো কথা শুনতে চায় না।প্রিয়াও এসেছে বিয়েতে যাওয়ার জন্য। (প্রেমার দাদি কথাটা বলে চলে যায়)
আরিয়ানের মা এবার প্রেমাকে নিজের রুমে নিয়ে যায় শাড়ি পরানোর জন্য।কিন্তু প্রেমা শাড়ি পরতে নারাজ। উপায় না পেয়ে যেতে হয়।
অভ্র দাড়িয়ে তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। অভ্র নিজেও চায় না প্রেমা শাড়ি পরুক।তাই আদ্রকে ডেকে নিজের রুমে নিয়ে যায়।
আধ ঘন্টা পর প্রেমার রেডি হয়ে বের হয়।একটা মিষ্টি কালারের শাড়ি সাথে সাজ।গাঢ় কাজল আর লিপিস্টিক যা প্রেমাকে জোর করে দেওয়া হয়েছে। সবাই রেডি হয়ে বসে আছে ড্রয়িংরুমে। প্রেমাকে সাজ এবং শাড়িতে দেখে অভ্রের একটু ভালো লাগছিলো না।পার্সনালি সে এসব অপছন্দ করে তা না। কিন্তু অভ্র চায় না প্রেমা এভাবে সেজো কোথায় যাক।
আচমকা আদ্র দৌড়ে কোথায় যাচ্ছিলো হাতে কিছু নিয়ে। এবং অসাবধানতার কারনে আদ্রের সাথে ধাক্কা লেগে যায় প্রেমার। এবং হাতের পলিথিন থেকে তরল জাতীয় কিছু প্রেমার শাড়িতে পরে যায়।
" সর্বনাশ! (অনেকটা চেঁচিয়ে বলে আরিয়ানের মা)
"আরে কী হয়েছে?? কী এগুলা?? (অভ্রের মা)
প্রেমা কি বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না। মনেমনে যে সেই লেভেলোর খুশী হয়েছে সে। এখন এ শাড়িটা আর পরতে হবে না।ভাবতেই চোখেমুখে হাসির ঝলক দেখা দেয়।
" আরে এগুলা তো কাপড়ের নীল রঙ। আদ্র এগুলা নিয়ে কই যাচ্ছিলিস তুই?? (প্রচন্ড রেগে আরিয়ানের মা বলে উঠে)
"আন্টি প্লিজ আদ্রকে কিছু বলিয়েন না।ও ছোট মানুষ আমি বরং চেঞ্জ করে আসি।(প্রেমা)
" হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি বরং তাই করো। আরেকটু পর বেরুতে হবে আমাদের। (অভ্রের মা কথা গুলো বলে)
প্রেমাকে আরিয়ানের মা সাথে করে নিয়ে যায় আবারো।আদ্র তার মায়ের সাথে যেতে যেতে অভ্রকে বুড়ো আঙুল দেখায় এবং বুঝিয়ে দেয় যে কাজ হয়ে গেছে। অভ্রও একটা লম্বা হাসি দেয় আদ্রের দিকে তাকিয়ে।
প্রেমা একটা গাঢ় গোলাপি রঙের গাউন পরে। আরিয়ানের মা আর কিছু বলতে পারেনি।খুব শখ করে প্রেমার জন্য শাড়িটা কিনে এনেছিলো যাতে সবাইকে নিজের ছেলের হবু বউ বলে বিশেষ ভাবে পরিচয় করিয়ে দিতে পারে। তাই মন খারাপ করে বসে আছে।
প্রেমা নিজের পূর্বের মেক-আপ টা ধোয়ে ফেলে। কারন ওই সাজটা শাড়ির সাথে মানানসই ছিলো।আর এখন যেহেতু গাউন পরেছে তাই সিম্পল সাজ দেওয়াটাই ব্যাটার।
ব্যাগ খুলে মেক-আপের জিনিসগুলো খুঁজতে গিয়ে দেখে খালি।কিছু নেই একটা কাজল বাদে। চারপাশটা ভালোভাবে খুঁজতে লাগল প্রেমা!
"কী খুঁজছো আমাকে বলো??(আরিয়ানের মা)
" আন্টি আমার মেক-আপের জিনিস গুলো পাচ্ছি না। একটু আগেই তো সব ব্যাগে রেখেছিলাম।এখন পাচ্ছি না...(প্রেম)
"আচ্ছা এখানেই থাকবে।পরে এসে খুঁজিও রুমের দরজা লক করা থাকবে। তুমি আমার সাথে চলো আমার কাছে আছে সব।(আরিয়ানের মা)
প্রেমাও আরিয়ানের মায়ের সাথে যায়। আরিয়ানের মা ড্রয়ার খুলতেই দেখে উনার সব জিনিস ঘায়েব।
" আরে এখানেই তো ছিলো??(চারপাশে খুঁজতে খুঁজতে বলে)
" অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে প্রেমা।কী হচ্ছে কিছুই মাথায় আসছে না।আউলা-ঝাউলা লাগছে সব।
"দাড়াও মা খুঁজতে গেলে সময় বেশি লাগবে। আমি বরং অভ্রের মার কাছ থেকে নিয়ে আসছি। তুমি একটু বসো..(আরিয়ানের মা)
" আরে না আন্টি প্লিজ লাগবে না আর।আমার এমনিতেও সাজতে মন চায়ছে না। আমি এভাবেই ঠিক আছি। (প্রেমা)
উনি আর কিছু না বলে প্রেমাকে নিয়ে বেরিয়ে যায় ড্রয়িংরুমের উদ্দেশ্যে। প্রেমাকে দেখতেই অভ্র একটা শান্তির শ্বাস ছাড়ে। ভাবছে শাড়ি পরে যদি বিয়েতে যেতো তাহলে কতোজন প্রেমার দিকে তাকাতো।যা অভ্র কোনোদিনই সহ্য করতে পারবে না।
কিন্তু গাউনে আরো বেশি সুন্দর লাগছে প্রেমাকে।চেহারাই মিষ্টি হাসিই যতেষ্ট সাজের কোনো প্রয়োজন নেই। এসব ভাবছিলো অভ্র তখনি অাদ্রের ডাকে ধ্যান ভাঙে অভ্রের। অভ্র কিছু একটা আদ্রকে এগিয়ে দিতেই সেটা নিয়ে চলে যায় হেসে হেসে।
সবাই গাড়িতে উঠার জন্য বেড়িয়ে যায়। আরিয়ানের মা-বাবা অভ্রের মা-বাবা একটা গাড়িতে। প্রেমার দাদু আর অভ্রের দাদু,আর সাইকার মা এবং সাইকা এক গাড়িতে। যদিও সাইকা চেয়েছিকো অভ্রের গাড়িতে করে যেতে কিন্তু অভ্রের মা তাদের সাথে নিয়ে নেয়।
" দেখেন আংকেল আমার হাত ছাড়েন ব্যাথা করছে।(প্রিয়া)
"আমি তোমার আংকেল হলাম কখন?? আর আমাকে নাম ধরে ডাকবে বুঝছো? আমার নাম আদ্র!!(আদ্র)
" কি করছিস আদ্র ছাড় ওর হাত..চল আমাদের দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।(সাইরা)
" প্রিয়া এই নাও এ চকলেট গুলো তোমার জন্য। আর আজ থেকে তুমি আমার বউ বুঝেছো?(আদ্র)
আদ্রের কথায় প্রিয়া আরো কাঁদতে লাগলো। সাইরা তো চোখ বড় বড় করে আদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকে।
"ও তোর বউ হলে আমি কী ??(সাইরা)
" তুই গার্লফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ডের মতো থাক।আমার বউ হওয়ার চেষ্টা করিস না। (আদ্র)
"প্রিয়া চকলেট গুলো নাও...(আদ্র)
সাইরা প্রচন্ড রেগে আদ্রর সেট করা ছোট ছোটা চুলগুলো ধরে টানতে লাগে। তখনি আদ্র চকলেট ফেলে একহাতে প্রিয়ার হাত ধরে থাকে আরেক হাতে সাইরা চুল ধরে টানতে লাগে। আকস্মিকভাবে তারা তিনজনেই চিৎকার করতে লাগে। চিৎকার শুনে অভ্র দ্রুত পেঁছনে তাকায়। তাকিয়ে দেখে এই অবস্থা দৌড়ে গিয়ে তাদের ছাড়াতে শুরু করে।
তাতেও আদ্র আর সাইরা থামছিলো না তাই অভ্র দুজনকে ধরে ঠাঁঠিয়ে চড় লাগিয়ে দেয়। এবার তারা কিছুটা শান্ত হয়। সাইরাকে অভ্র তার মা-বাবার গাড়িতে তুলে দেয় এবং প্রিয়া এবং আদ্রকে নিয়ে প্রেমা যে গাড়িতে বসেছে সে গাড়িতে বসে পরে।
গাড়িতে বসতেই আদ্র প্রেমার সাথে লেগে বসে। প্রিয়া আদ্র দুপাশে আর প্রেমা মাঝখানে।আদ্রের পাশেই অভ্র বসে। প্রেমা অভ্রের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দেয়।এরপর আবার ফোন টেপায় মন দেয়।
" আমি সব বলে দিবো দেখিও(আদ্র ফিসফিসিয়ে অভ্রকে বলে)
" যাহ বল! আমিও তোর কথা সব বলে দিবো মাকে। প্রিয়াকে আনার পথে গাড়িতে কী কী বলেছিলি সব রেকর্ড করা আছে আমার কাছে।(ফিসফিসিয়ে)"
অভ্রের কথা শুনে এবার অাদ্র চুপ হয়ে যায়।এবং প্রেমার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পরে।