প্রেমার দিকে তাকাতেই রিদুর রাগ যেনো চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলো। হাতটা ঝটকা দিয়ে ছাড়িয়ে বলল,
" নষ্টমি বহু করছিস। আমার চার পাশে যেনো তোকে না দেখি। বেহায়া মেয়ে।"
রিদু কথাগুলো বলে চলে যেতে নিলে প্রেমা পথ আটকে বলল,
" কথা আছে দুলাভাই। রুমে চলেন?"
" কেনরে তোর বিষ এখনও কমেনি? তবে যার কাছে খুশি তার কাছে গিয়ে নিজের বিষ কমা। আমার কাছে খবরদার আসবি না। তোর চেহারা দেখলেও ঘৃণা লাগে। বিয়ের পর থেকেই তো তোকে সমান তালে এভোয়েট করে যাচ্ছি তারপরও বেহায়া র্নিলজ্জের মত আমার পিছনে ঘুরতে লজ্জা করে না তোর? নূন্যতম লজ্জাবোধ নেই।"
রিদু আর দাঁড়ালো না নিজের মত চলে গেলো। প্রেমা মৃদু হেসে বলল,
" যা খুশি বল তুই। তোর সংসার তো বেশিদিন টিকবে না।"
পুরো বিষয়টা প্রেমার মা রেহেনা বেগম দূরে দাঁড়িয়ে দেখলেন। বিষয়টা তার বোধগাম্য হলো না। প্রেমার সাথে রিদু খারাপ ব্যবহার করবে সেটার কারণ হিসাবে তিনি ভাবলেন পারিবারিক যে দ্বন্দ সেটা। কিন্তু রিদু প্রেমাকে যে সব কথা বলল, তার সাথে পারিবারিক কোনো যোগসূত্র আছে বলে তার মনে হচ্ছে না। বিষয়টা কেমন গোলমেলে লাগছে তার কাছে। প্রেমার সাথে রিদুর আচরন তো অন্য কিছু বলছে। তাছাড়া প্রিয়তির বিয়ের পর তিনি নিজেও খেয়াল করেছেন প্রেমার সাথে রিদু সহজে কথা বলে না। প্রেমাও না। শালী দুলাভাইয়ের মধ্যে যে, আন্তরিকতা বা দুষ্টুমির যে সম্পর্ক তা প্রেমা আর রিদুর মাঝে তিনি কখনো দেখেননি। তখন বিষয়টা চোখে লাগলেও অতটা আমলে নেননি। কিন্তু আজকে রিদুর কথা শুনে কথাগুলো তাকে খুব ভাবাচ্ছে। কী চলছে ওদের মাঝে? রেহেনা প্রেমার কাছে গিয়ে বলল,
" রিদু তোকে এসব কথা কেন বলল?"
" তুমি জানো না নাকি?"
" হ্যাঁ প্রথমে মনে হয়েছিলো স্বাভাবিক ভাবেই রিদু তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে, কারণ তেমন কাজ তুই করেছিস। কিন্তু ওর কথার ধরন তো আলাদা। মনে হচ্ছে না কদিন আগের ঘটনার কারণে এমন কথা বলেছে। কী চলছে তোদের মাঝে?"
প্রেমা মেজাজ খারাপ করে বলল,
" যা খুশি চলছে তাতে তোমাদের নাক গলানোর মত কিছু হয়নি। ঐ হারামির বাচ্চার কথা বলা লাগবে না।"
কথাগুলো বলে প্রেমা হনহন করে চলে গেলো।
বিয়েতে হৃদিতা আসতে পারেনি। রকিবের মা যেতে বলায় বলল,
" খালা আকদে গিয়ে কী করব? তারচেয়ে বিয়েতে সেজেগুজে যাব।"
তারাও আর তেমন জোর করেনি। হয়তো ভেবেছে সত্যি আকদে শুধু শুধু কতগুলো মানুষ গিয়ে কী কাজ? হৃদিতা বার বার ওর হবু বর ফয়সালকে ফোন করছে। কিন্তু সে ফোন রিসিভ করছে না। আজ এখানে আসতে বলেছিলো কিন্তু ফয়সাল এসেনি দেখে রাগে হৃদিতার চোখ জ্বলছে। কাছে পেলে যে ভষ্ম করে ফেলবে তা খুব করে বোঝা যাচ্ছে। হৃদিতা ফয়সালকে মেসেজ করল,
" তুই একবার ফোন কর। তারপর বাকিটা ইতিহাস হবে।"
বিয়ের কাজ শেষে রিদু প্রিয়তিকে আনতে খালা বাড়ি যেতে চাচ্ছিলো কিন্তু তার আগেই হৃদিতা ফোন দিয়ে বলল,
" ভাই আমরা বাড়ি যাচ্ছি। তুই খালা বাড়ি না গিয়ে সোজা বাড়ি চলে আয়।"
রিদু রকিবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।
রকিব গাড়িতে বসে ভাবছে আসার আগে তিথির সাথে হওয়া কথাগুলোর কথা। কী মিষ্টি করে কথা বলে মেয়েটা। কোনো ভনিতা নেই। যা বলে সরাসরি, লুকোচুরি নেই কিছুতে যেনো। আসার আগে রকিব আর তিথিকে কথা বলার জন্য কিছুটা সময় একান্তে দেয়া হয়েছিলো। রকিব চুপ করে ছিলো কী বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না। তিথি রকিবের দিকে একটা ছোট্ট বক্স বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
" এটা আপনার জন্য।"
" কী এটায়?"
" একটা ঘড়ি। আপনি ঘড়ি কেন পরেন না? পুলিশের হাতে ঘড়ি না থাকলে কেমন লাগে?"
" কেমন লাগে?"
" খুব বাজে। সময় দেখার জন্য বার বার ফোন ফোন বের করেন?"
" হুঁ।"
" ধরুন আপনি জরুরি একটা কাজে গেলেন। ফোন দেখার টাইম পেলেন না। অথচ আপনাকে আমি বা আপনার মা একটা জরুরি একটা কাজে যেতে বললেন এবং র্নিদিষ্ট একটা টাইম দিলেন। অথচ হাতে ঘড়ি না থাকায়, ফোন দেখতে না পারায়, সময়ের হিসাব থাকল না আর আপনি জরুরি কিছু মিস করলেন।"
রকিব কিছুটা মৃদু হেসে বলল,
" আচ্ছা এখন থেকে সবসময় ঘড়ি পরব।"
রকিব মুখ গোমরা করে বলল,
" তোমার জন্য কোনো উপহার আনতে পারিনি। সরি।"
" এতে সরির কী আছে?"
" তুমি আমাকে উপহার দিলে আমারও তো কিছুদেয়া উচিত।"
" এটা কী আপনার আইনের বইতে লেখা আছে?"
শব্দ করে হাসলো রকিব তারপর বলল,
" না মহারানী ভিক্টোরিয়া।"
" ছি কী উপমা।"
" কেন ভিক্টোরিয়া পছন্দ না?"
" না।"
" তবে কে পছন্দ? রানী পদ্মাবতী? সিংহল রাজ্যের রাজকুমারী আর চিত্তৌর এর মহারানী। যার রুপে আলাউদ্দিন খিলজি পাগল হয়ে কত কত হত্যা কান্ড চালিয়েছিলেন।"
" এমন সৌন্দর্য কোন কাজের যা যুদ্ধ বাঁধায়, প্রাণ নেয়! জানেন তো পদ্মবতী কিন্তু আগুনে আত্মআহুতি দিয়েছিলো। সৌন্দর্য তো সেটা যা প্রাণে দোলা দেয়, স্নিগ্ধতার পরশ দেয়, মনে একরাশ শান্তি তৈরী করে। "
" বাহ।"
" রকিব আপনাকে আমার ভালোবাসতে বোধ হয় অনেক সময় লাগবে।
" কেন?"
" আসলে বাবা মায়ের খুশির কথা ভেবে বিয়ের পিঁড়িতে বসলেও আমি বিয়ের জন্য মন থেকে আপাতত প্রস্তুত না। আমার সময় লাগবে।"
" তবে যে সেদিন বললে, আমাকে ভালো লেগেছে।"
" ভালো লাগা আর ভালোবাসা বুঝি এক? আমার আকাশ ভালো লাগে কিন্তু থাকি জমিনে, তাই জমিনকে ভালোবাসি। তেমনি আপনি বর্তমানে আমার কাছে আকাশের মত যাকে খুব ভালোলাগে কিন্তু কাছে গিয়ে ছুঁয়ে দিয়ে, ভালোবাসতে সময় লাগবে।"
" কতটা সময়?"
" জানি না।"
" কে জানে?"
" আমার মন।"
" তাহলে মনকে জিজ্ঞেস করে জানিও আমায় আমি অপেক্ষায় থাকব।"
হাসলো তিথি। রকিব ঘড়ির দিকে তাকিয়ে শুধু তিথির কথাই ভাবছে। তিথি ওর স্ত্রী।
বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে রিদুর বারোটার বেশি বেজে গেলো। রুমে ঢুকে দেখলো, প্রিয়তি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। রিদু খুব সাবধানে ঘরে হাঁটা চলা করে কাপড় বদলালো, ফ্রেশ হয়ে প্রিয়তির পাশে শুয়ে ওর দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে কয়েকটা চুমো খেলো প্রিয়তির চোখে, মুখে ঠোঁটে। ঘুমের ঘোরে প্রিয়তি কেঁপে কেঁপে উঠলো যেনো। রিদু প্রিয়তিকে টেনে বুকের মাঝে নিলো। প্রিয়তিও ওকে জড়িয়ে ধরল। রিদু ফিসফিস করে বলল,
" কাছে আসবে প্রিয়, অনেকটা কাছে, ঠিক নিশ্বাসের স্পর্শে!"
ঘুম ঘোরে প্রিয়তি বলল,
" হুঁ।"
রিদু মনে মনে বলল,
" এখন ঘুম ঘোরে হুঁ হুঁ করছে কাছে টানার পর যেই ঘুম ভাঙবে তখন দেখা যাবে আমাকে মাডার করবে। এটা তো মেয়ে না শান্ত বাঘিনী। সবসময় এমন একটা ভাব করে যেনো পুরা নীরিহ খরগোশ কিন্তু সুযোগ পেলে কামড়ে দেয়। তারচেয়ে বরং জড়িয়ে ধরেছি এ পর্যন্তই থেমে যাই।"
২৪!!
সকাল ছয়টা,
হৃদিতা ফয়সালকে ফোন করল। ফোন রিসিভ করতেই ফয়সাল বলল,
" জানো হৃদি তোমাকেই কল করছিলাম। এর মধ্যে তুমি কল করলে, খুব মজার একটা ঘটনা ঘটছে।"
হৃদিতা রাগ করে বলল,
" ঐ শালার ঘরের শালা, ডাবল শালা, গতকাল আসিসনি কেন?"
" আবার তুমি মুখ খারাপ করছো?"
" একশো বার করবো, হাজার বার করবো তাতে তোর দাদার কী? আমি তোর দাদার খাই না পরি? শালা বিটকেল কাল কতবার বললাম রকিব ভাইয়ের বিয়েরত আসো, কথা কানে গেলো না। না তার নাকি নজ্জা করে। কেনরে আমার সাথে যে তোর বিয়ে হবে তা কী লোকে জানে না?"
" কী আজব। বললাম তো জরুরি কাজে আটকে গেছিলাম।"
" তোর কাজের গুষ্টি কিলাই।"
ফয়সাল জানে হৃদিতা রাগ করলে ওর মাথা ঠিক থাকে না। যখন রাগ পড়ে যায় তখন নিজেই নিজের রাগের জন্য অনুতপ্ত হয়। তাই ও যখন রাগ করে তখন ফয়সাল কিছু বলে না। মৃদু হেসে ফয়সাল বলল,
" আচ্ছা কিলাইও। তার আগে আমাদের বাসায় আসো। তুমি না বলেছিলে জীবনে চোর দেখোনি? আজ চোর দেখতে পারবে।"
" কী?"
" হ্যাঁ বাসায় একটা চোর ধরছি। দেখতে চাইলে জলদি আসো।"
চোর দেখার কথা শুনে হৃদিতা জলদি করে বোরকাটা গায়ে চেপে ওড়না গায়ে দিতে দিতেই চলতে লাগল। ওর মাকে ডেকে বলল,
" মা জরুরি কাজে ফয়সালের সাথে যাচ্ছি। ভাবিকে নাস্তা খাওয়ানোর পর ওষুধ খাইয়ে দিও মনে করে।"
আধা ঘন্টার মধ্যে ফয়সালদের বাসায় পৌঁছালো হৃদিতা। গেটের সামনে গিয়ে চমকে উঠলো। গেটের কাছে মোটামুটি একটা জটলা পেকে আছে। সেখানে দেখলো গেটের নিচে এক লোক আটকে আছে। মনে হয় গেটের নিচ দিয়ে যাবার চেষ্টা করছিলো কিন্তু আটকে গেছে। লোকটা লুঙ্গি পরা, চপচপে করে তেল মাখা সারা গায়ে, চোখ দুটোতে একদম মায়া নেই, তবুও করুন চোখে তাকিয়ে মায়া বাড়ানোর লোকের সহানুভূতি নেয়ার চেষ্টা করছে। দেখলেই বোঝা যায় পেশাদার চোর। হৃদিতা ফয়সালকে দেখে বলল,
" এ নমুনাটা কে? এমন গেটের নিচে ঢুকছে কেন?"
ফয়সাল হাসতে হাসতে বলল,
" এই শালায়ই তো চোর।"
" বুঝলে কিভাবে? আর এ চোর হলে না পালিয়ে এখানে কেন আটকে আছে?"
" বলদা চোর হলে যা হয় আরকি।পুরো ঘটনা শুনলে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাবে। সকালে জহিরের মা( ফয়সালদের কাজের লোক) গেটের সামনে এসে চিৎকার দিয়ে ঘর মাথায় তুলছে। কার নাকি লাশের অর্ধেক আমাদের গেটের কাছে রাখা, বাকি অর্ধেক নাকি নেআ। আমরা ঘটনা বুঝতে এখানে এসে দেখলাম, এই চোর ব্যাটার অর্ধেক আমাদের বাড়ির ভিতরে, বাকি অর্ধেক মানে মাথার অংশ বাইর সাইডে। পরে ধরে জিজ্ঞেস করলাম এখানে কী করছে? সে কান্না করতে করতে বলল, চুরি করতে আসছিলো। ঢোকার সময় আটকায়নি কিন্তু চুরি করে বের হয়ে যাবার সময় আটকে গেছে।"
হৃতিদা খানিক অবাক হয়ে বলল,
" ঢোকার সময় কেন আটকায়নি?"
" আরে ডুকেছে মেবি ডান পাশের গেটটা দিয়ে। নিচে তাকিয়ে দেখো ডান পাশের গেটের নিচে জায়গা বেশি। শালা আটকে গেছে দেখে ও পার্টনার চোরের উপর বাটপারি করে, চুরির মালপত্র নিয়ে পালিয়েছে। শালার পাছার কারণে আটকে গেছে। পাছাটা বড় তাই। হা হা হা। ফয়সাল শব্দ করে হাসতে হাসতে বলল, সারা রাত মশায় কামরে কী অবস্থা করছে দেখো। হা হা হা। চাইলে এতক্ষণ ওকে ছাড়াতে পারতাম কিন্তু ভাবলাম রাত তিনটা থেকে যখন আছে তখন তুমি আসা পর্যন্ত থাকুক। পাবলিক ফ্রীতে বিনোদন নিক।"
" তা কি কি চুরি গেছে?"
" আমাদের কারো রুমে ঢুকতে পারেনি। কারণ রাতে আমরা রুম লক করে ঘুমাই। দাদুর রুমে ঢুকেছিলো। তিনি তো রুম লক করেন না। অসুস্থ দেখে মা নিষেধ করেন দরজা লক করতে। তার রুমে তেমন বিশেষ জরুরি কিছু নেই। দাদুর অল্প কিছু টাকা আর টুকটাক কয়েকটা জিনিস আর রান্না ঘর থেকে ছ্যাচরা চোরের মত হলুদ মরিচ, মশলা, বিস্কুট, আরও খাবার, ফ্রিজের মাছ মাংস সব ব্যাগ ভরে নিয়ে গেছে। সেই চুরি করে কী লাভ। এত মাছ মাংস চুরি করেইবা কী হলো? সেই তো খেতে হবে জেলের মূলার তরকারি আর শুকনা রুটি।"
হৃদিতা হেসে বলল,
" তা ওকে নাস্তা পানি কিছু দিয়েছো? রাত থেকে বেচারা এখানে, খিদে পায়নি ওর?"
হাসল ফয়সাল। চোরটা কেঁদে কেঁদে বলল,
" স্যার পুলিশে দিয়েন না। আর জীবনে চুরি করমু না খোদার কসম।"
২৫!!
প্রেমা হৃদিতার নাম্বারে কল করে বলল,
" প্রিয়তিকে ফোনটা দেয়া যাবে?
হৃদিতা বেশ কড়া গলায় বলল,
" কেন?"
"জরুরি কাজে আছে।"
" কী কাজ?"
" সেটা আমার আর আমার বোনের বিষয়। প্লিজ ফোনটা দাও।"
হৃদিতা কী ভেবে ফোনটা প্রিয়াতকে দিলো। প্রিয়তি হ্যালো বলতেই প্রেমা বলল,
" কাল কলেজে দেখা কর।"
" কেন?"
" জরুরি কথা আছে।"
" পারব না। তাছাড়া জানিসই তো আমার শরীর ঠিক নেই।"
" হৃদয়ের বিষয়ে।"
" যা বলার ফোনে বল।"
" ফোনে বলা গেলে তোর মুখ দর্শন করতাম না। বেশি কথা না বলে কাল সকাল দশটায় কলেজে থাকবি।"
কিছু একটা ভেবে প্রিয়তি বলল,
" আচ্ছা।"
—————
প্রিয়তি হৃদিতাকে নিয়েই প্রেমার সাথে কলেজে দেখা করতে গেলো। হৃদিতাকে দেখে প্রেমা বেশ বিরক্ত হলো। প্রিয়তি প্রেমার কাছে গিয়ে বলল,
" বল কী বলবি?"
" আমি তোর সাথে একা কথা বলতে চাই।"
" হৃদি থাকলে প্রবলেম নেই।"
" তোর নেই কিন্তু আমার আছে।"
হৃদিতা বলল,
" সমস্যা নেই ভাবি তোমরা কথা বলো আমি একটু এদিক ওদিক ঘুরি।"
হৃদিতা যেতেই প্রেমা বলল,
" একা না এসে ওকে কেন সাথে আনলি?"
" তোকে আমি তিল পরিমানও বিশ্বাস করি না। সেদিন বাড়ি ভর্তি লোক ছিলো তখন আমাকে ধাক্কা দিয়ে মাথা ফাটালি আমার সন্তানকে হত্যা করলি, আজ আমাকে একা পেয়ে আমাকে যে খুন করবি না তা কী করে বুঝি বল? তাছাড়া তুই ভালো করেই জানিস আমার শরীর ঠিক নেই।"
প্রেমা তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
" তোকে খুন করার হলে যে কোনো সময় করতে পারি। তার জন্য তোকে কলেজ ক্যাম্পাসে ডেকে সাক্ষী রেখে মারার কী দরকার?"
" যা বলার জন্য ডেকেছিস তা বলে বিদেয় হ।"
" হৃদয়ের সাথে যে আমার বিশেষ একটা সম্পর্ক ছিলো তা কী জানিস?"
" হ্যাঁ।"
" কিভাবে?"
" রিদু বলেছে।"
" কতটা বিশেষ তা কী জানিস?"
" জানি এতটাই বিশেষ যে তুই তার সাথে শুয়েছিলি তার সন্তান পর্যন্ত এবরশন করিয়েছিলি। আর কিছু?"
" সব জেনেও ওর সাথে ঘর করবি?"
" হ্যাঁ করব।"
" তোর মধ্যে আত্মসম্মানবোধ নেই?"
প্রিয়তি তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
" মজার তো! যে মেয়ে বিয়ের আগে প্রেমিকের সাথে বিছানা শেয়ার করে, তার অবৈধ বাচ্চা নষ্ট করে, সে আবার আত্মসম্মান বোধের মত মহান শব্দ মুখে আনছে। তাছাড়া দোষ তোর ছিলো রিদু নয়। হ্যাঁ রিদু মস্ত ভুল করেছে কিন্তু তুই চাইলে এখন তোরা স্বামী স্ত্রী থাকতি তোদের মাঝে আমি আসতাম না। কিন্তু কথা হলো তোর আবার কোনো কিছু একটাতে হয় না।"
প্রেমা খানিক রেগে বলল,
" কথা ঠিক করে বল। বাচ্চা এবরশন করাতে হৃদয় আমাকে বাধ্য করেছিলো। ও আমাকে বিয়ে করতে চায়নি। যখন কনসিভ করলাম তখন আমাকে বলল বাচ্চাটা ওর না। অথচ বাচ্চাটা ওরই ছিলো। আমাকে ছেড়ে চলে গেছিলো, তাই বাধ্য হয়ে আমাকে বাচ্চা নষ্ট করতে হয়েছিলো?"
প্রিয়তি অবাক হবার ভান করে বলল,
" সত্যি বলছিস?"
" হ্যাঁ।"
শব্দ করে হাসলো প্রিয়তি। তারপর বলল,
" রিদু বাধ্য করল আর তুই বাধ্য মেয়ের মত বাচ্চা নষ্ট করে ফেললি? বাব্বাহ্ নিজের পরিবারকে জানালি না পর্যন্ত! একলিস্ট রিদুর পরিবারকে জানাতি? দুই পরিবার মিলে নাহয় যা সিদ্ধান্ত নেয়ার নিতো?"
" আমি হৃদয়ের ঠিকানা জানতাম না। তাছাড়া ও আমাকে না জানিয়ে চলে যায়।"
প্রিয়তি বাঁকা হেসে বলল,
" সেকিরে? যে ছেলের সাথে প্রেম করলি, দৈহিক মিলন করলি, তার বাচ্চা পেটে নিলি অথচ তার ঠিকানা জানতি না? আজব তো! রিদু তো তখন খুলনাতেই কাজ করত। ওর অফিস বা কোম্পানির নাম জানতি না? তাছাড়া খালাদের বাসার পাশের বিল্ডিংএ থাকতো তাও বেশ কয়েকজন মিলে। একলিস্ট ওর রুমমেটরা ওর বাড়ি বা কাজের স্থানের ঠিকানা জানতো। তাদের কাছে থেকেও তো জানতে পারতি। খুঁজলে নাকি ঈশ্বরকে পাওয়া যায় তুই একজন সামান্য মানুষকে পেলি না! যে কিনা তোরই শহরে থাকে। তোর তো কত বুদ্ধি, সব বুদ্ধি কি ড্রেনে ফেলে দিয়েছিলি তখন! আচ্ছা মানলাম রিদুর ঠিকানা জানতি না বা ওর পরিবারকে জানাতে পারিসনি। কিন্তু আমাদের পরিবারকে তো জানাতে পারতি! নাকি তাদের ঠিকানাও জানতিস না? নিজে নিজে বাচ্চা নষ্ট করে বাড়ি ফিরে কত বাহানার ঢঙ করলি। আচ্ছা এসব কথাও না হয় বাদ দিলাম। আমার আর রিদুর বিয়ের কথা যখন চলছিলো তখন তো রিদুর ছবি তুই আমারও আগে দেখেছিলি। তখন কী রিদুকে চিনতে পারিসনি? নাকি মেমরি লস হয়ে গেছিলো তোর? তখন সবাইকে বলতি এই ছেলেটা তোর সাথে চিট করছিলো। দেখতি তখন আমরা কী করতাম।"
" তোর কথা ভেবে বলিনি।"
প্রিয়তি বেশ কড়া ধমক দিয়ে বলল,
" জুতা চিনোস? আমার পায়ের জুতাটার দিকে তাকা, আসার সময় গোবরে পা দিয়েছিলাম, এখনও গোবর লেগে আছে, আর একটা এমন ছ্যাচড়ার মত মিথ্যা কথা বললে এই গোবরমাখা জুতাখানা খুলে সর্বসম্মুখে তোকে জুতাবো। তারপর পাবলিক যখন জিজ্ঞেস করবে কী হয়েছে তখন বলব তুই একটা প্রস্টিটিউট। আমার স্বামীকে ফোন করে বিরক্ত করিস। তাই আমার স্বামী আমাকে পাঠাইছে তোকে শায়েস্তা করতে।
প্রেমা যেনো অনেকটা ঘাবরে গেলো। প্রিয়তি আবার বলতে লাগলো তুই আমার কথা এত ভাবিস যে নিজের প্রেমিককে আমায় দিয়ে দিলি? কেনরে তোর প্রেমিককে কী আমি বিয়ের আগে চিনতাম নাকি তার সাথে সেক্স করেছিলাম, নাকি তার বাচ্চা দিয়ে আমার পেট ভরেছিলাম যে তুই সেক্রিফাইজ করলি? রিদুর সাথে আমার বিয়েটা তো সম্পূর্ণ বড়দের মতে। আমরা তো একে অপরকে চিনতামও না। এমনকি তুই আমাদের বিয়ের আগে রিদুর সাথে দেখা করা তো দূরের কথা কথাও বলিসনি। ঘাপটি মেরে লুকিয়েছিলি। তখন কেন দেখা করিসনি? নাকি এটাও আমি বলবো?
আচ্ছা আমিই বলি শোন, রিদু তোকে রেস্টুরেন্টে বসে সবার সামনে যা নয় তাই বলে অপমান করেছিলো, তখন তুই কিছু বলতে পারিসনি। সবচেয়ে বেশি যে কথাটা তোর গায়ে লেগেছিলো তা হলো, রিদু রাগের মাথায় সবার সামনে তোর বাচ্চাটাকে অস্বীকার করে। যদিও বাচ্চাটা রিদুরই ছিলো কিন্তু রাগের মাথায় রিদু যা নয় তাই বলে তোকে তাও পাবলিক প্লেসে। তুই তো মানুষকে ছেড়ে দেয়ার পাবলিক না। রিদুর অপমানের জবাব দেয়ার সুযোগ খুঁজছিলি কিন্তু মাঝপথে হয়তো তোর লাইফের কিছু মুভমেন্ট এর কারণে পারিসনি। কিন্তু আমাদের বিয়ের সময় রিদুকে দেখে তোর পুরানো ঘা আবার তাজা হলো। আমাকে তো তুই বরাবরই অপছন্দ করতিস ভাবলি এক ঢিলে দুই পাখি মারবি। আমাকে আর রিদুকে একসাথে শায়েস্তা করবি। সে কারণে বিয়ের আগে সব জেনে শুনেও মুখে কুলুপ এটে রইলি এবং রিদুর নজরের বাইরে রইলি। আর আমাদের বিয়ের পর নিজের নোংরা খেলা শুরু করলি। আর কিছু বলবি তুই?"
প্রেমা হতভম্ব হয়ে প্রিয়তির দিকে তাকিয়ে রইলো। প্রিয়তি রিদুর বিরুদ্ধে উষ্কাতে যেসব কথা বলবে বলে ভেবে গুছিয়ে এসেছিলো সবটা যেনো নিমিষেই ভুলে গেলো। এলোমেলো লাগছে সব। প্রিয়তির এমন রূপ দেখবে তা চিন্তা করতেও পারেনি। প্রিয়তি আবার বলল,
" শোন প্রেমা, রিদু আর আমার মধ্যে সম্পর্কটা যেমনই হোক তা আমাদের মাঝে আছে এবং থাকবে। তুই উষ্কে দিলেই যে আমি উষ্কাবো এমন ভাবা বোকামি। হ্যাঁ রিদু ভুল করেছে কিন্তু তা বলে যে ওকে একবারও ক্ষমা না করে, আমি ওকে ছেড়ে চলে যাবো তেমনটা ভাবিস না। রিদু যদি তওবা করে ভালো পথে ফিরে আসতে পারে তবে আমি কেন মেনে নিব না! রিদুকে ভালোবাসতাম এবং ভালোবাসবো। তোর কোনো নোংরা চাল আমাদের সম্পর্ক ভাঙতে পারবে না। তোর আর কিছু বলার থাকলে বল, নয়তো আমি চললাম।"
প্রেমা স্থির হয়ে বসেই রইলো। প্রিয়তি প্রেমাকে চুপ থাকতে দেখে ওখান থেকে চলে আসল।