প্রিয়তি একমনে রিদুর দিকে তাকিয়ে রইল অনেকক্ষণ। রিদু চেকবুকটা মাঝখান থেকে ছিড়ে বলল,
" যেদিন আমাকে ক্ষমা করতে পারবে সেদিন তোমার থেকে হেল্প নেয়ার কথা ভাববো। "
প্রিয়তি মনে মনে ভেংচি কেটে বলল,
" ঢঙ।
রাতে খাবার পর রিদু গিটারটা নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো। মাঝে মাঝে গিটারে টুং টাং সুর তুলে গান করতে পছন্দ করে রিদু। আজ মনটা ভালো না। তাছাড়া প্রিয়তি খুশি হবে ভেবে গিটার বাজিয়ে গান তুলল,
ঠিকানা আমার নোটবুকে আছে নোটবুক নেই কাছে,
তিন নম্বর ভূতের গলি এটুকুই মনে আছে ।
ঠিকানা আমার নোটবুকে আছে নোটবুক নেই কাছে,
তিন নম্বর ভূতের গলি এটুকুই মনে আছে ।
আর মনে আছে তুমি বলেছিলে রোজ সন্ধ্যার পরে,
এলো চুলে তুমি হাঁটাহাঁটি করো তোমার বাড়ির ছাদে ।
ঠিকানা আমার নোটবুকে আছে নোটবুক নেই কাছে,
তিন নম্বর ভুতের গলি এটুকুই মনে আছে ।
দেখেছো? আমার স্মরণ শক্তি? সব কথা মনে আছে।
অলিতে গলিতে, দেখা পরিচয়,
ঠিকানার লেনদেন ।
হৃদয়ের কোন, ঠিকানা থাকেনা
কথাটা কি বুঝলেন?
এ কথা জেনেও, হাঁটাহাঁটি করি
ভূতের গলিটা খুঁজি।
তোমার দেখা, পেয়ে যাবো আমি
হঠাৎ করেই বুঝি!
ঠিকানা আমার নোটবুকে আছে নোটবুক নেই কাছে,
তিন নম্বর ভূতের গলি এটুকুই মনে আছে।
গান শেষে রিদু রুমের দিকে তাকালো। ভাবছে প্রিয়তি গানটা শুনে কেমন রিয়াক্ট করবে তা দেখবে। কিন্তু রিদু হতাশ হলো। কারণ প্রিয়তি শুয়ে আছে। রিদু ধীরে করে ওর কাছে এসে বোঝার চেষ্টা করল জেগে আছে নাকি ঘুমিয়ে গেছে। কিন্তু হতাশ রিদুর মনটা এবার কিঞ্চিৎ খারাপও হলো। ভেবেছিলো প্রিয়তি শুনবে গানটা। হয়তো এতে ওর মনটা ভালো হবে। কিন্তু প্রিয়তি তো গান শোনেইনি। রিদু আরও হতাশ হয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। আর এদিকে ঘুমের ভান ধরে মনে মনে দুষ্টু হাসি হাসছে প্রিয়তি। দাঁতে দাঁত চেপে, ঠোঁটে ঠোঁট টিপে নিজের হাসি থামাবার যথেষ্ট চেষ্টা করছে ও।
প্রিয়তি মনে মনে ভাবলো,
" এই গান শুনিয়েই প্রেমাকে প্রেমের জালে ফেলেছিলে না রিদুর বাচ্চা রিদু? বিয়ের পর আমাকেও কম পাগল করোনি। পলেটিক্স করো পলেটিক্স? খুব ভালো করে জানো মেয়েদের পছন্দের জায়গা কোনটা। বদ লোক প্রেমার সাথে প্রেম পর্যন্ত মেনে নিতাম, কিন্তু বাচ্চা ও মাই গড! প্রেমা যে এখন শুধু আমার বোন নয় বরং তোমার কারণে আমার বড় সতীনও হয়েছে। রিদু তোমাকে তো ছাড়তে পারব না। সে সাহস আমার নেই। এদিক থেকে আমিও আর পাঁচটা বাঙালী মেয়ের মত পতিভক্ত, আবার অসহায়ও বলতে পারো। সত্যি বলতে অসহায়ই বেশি। নিজের পরিবার বলতে বর্তমানে কেউ নেই। তোমার পরিবারকেই আপন মানি। যাবার মত কোনো স্থান নেই আমার। কিন্তু তা বলে এত সহজে মাফ করবো না তোমায়। হ্যাঁ সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা চাইলে তিনি ক্ষমা করেন। তিনি পারলে মানুষ কেন পারবে না! কিন্তু সবাই এটা কেন ভুলে যায় তিনি সৃষ্টিকর্তা, পরম করুনাময়, দয়ালু। তার তো দয়া মায়া, মমতার শেষ নেই। এ জন্য বান্দার চোখের জল তিনি সহ্য করতে পারেন না, ক্ষমা করে দেন খুব দ্রুত। কিন্তু আমরা তুচ্ছ মানুষ বুদ্ধি কম, মায়া, ধৈর্য্য কম তাই ক্ষমা করলেও তার জন্য উপযুক্ত শাস্তি দিয়ে তবে ক্ষমা করব।"
কয়েক মিনিট কাটার পর প্রিয়তি ভাবলো, চোখ মেলে দেখবে রিদু কী করছে? তাই ধীরে ধীরে চোখ মেলে ভূত দেখার মত চমকে উঠল। কারণ রিদু ওর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে মিট মিট হাসছে। রাগে প্রিয়তির গা জ্বলে যাচ্ছে। রিদু বেশ শব্দ করে হেসেই প্রিয়তির কপালে খুব ঠেসে চুমো খেয়ে বলল,
" জান কেউ গভীর ঘুমে থাকলে তার চোখ এমন পিটপিট করে না। ঠোঁটে চাপা হাসি থাকে না। আমাকে বোকা বানাতে চেয়েছিলে? যে প্রিয়তি সামান্য শব্দে ঘুমাতে পারে না, সে গিটারের শব্দ শুনে, জোরে গান শুনেও সে দিব্যি ঘুমাচ্ছে বিষয়টা অবাক করা নয় কী?"
প্রিয়তি রাগে অপর পাশে মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। মনে মনে বলল,
" পাজিটা আমার সব কিছু জানে। বদ কোথার!"
রিদু প্রিয়তির অপর পাশে গিয়ে মুখোমুখি শুয়ে বলল,
" ভালোবাসি।"
প্রিয়তি বেশ ঝাঁঝালো গলায় বলল,
" তো এখন আমি কী করব? রাত দুপুরে নাচব?"
দুষ্টুমি করে রিদু বলল,
" নাচতে পারো। আই ডোন্ট মাইন্ড। তাছাড়া কাল তোমার অতি প্রিয় বোন তিথির বিয়ে। তাও আবার তোমার দেবরের সাথে। সেলিব্রেশন তো বানতাহে বস!"
তিথির বিয়ের কথা মনে হতেই মনটা খারাপ হয়ে প্রিয়তির। তিথির জন্য নয়, প্রিয়মের জন্য। যতই প্রিয়মকে বোঝাক তিথিকে ভুলে যেতে কিন্তু ভাই তো, তার কষ্টটা বোঝে ও। ভালোবাসে যে নিজের ভাইকে খুব। ছোটবেলা থেকে প্রিয়তির সবচেয়ে বেশি ভালো প্রিয়মই বেসেছে। আজ রিদুর সাথে সব ঠিক থাকলে রিদুর সাথে কথাগুলো শেয়ার করত। কিন্তু পারছে না। প্রিয়তি মনে মনে বলল,
" বাবা মা যদি শুধু প্রেমার দিকটা না ভেবে আমার আর ভাইয়ার দিকটাও মাঝে মাঝে ভাবতো, তবে আমাদের দুজনার জীবনটা হয়তো সুন্দর হতো। নিজেদের চাওয়া পাওয়াগুলো পূরন হতো।"
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল প্রিয়তি। না চাইতেও চোখের কোন বেয়ে গড়িয়ে পড়ল কিছু তরল। রিদু তা দেখে ভ্রু কুচকে বলল,
" কী হয়েছে?"
প্রিয়তি ভেবেছিলো কিছু বলবে না কিন্তু মনটা বড্ড ভার হয়ে আছে। না বললে বুকটা আরও ভার হবে। তাই ধীর গলায় বলল,
" প্রিয়ম ভাইর জন্য খারাপ লাগছে। আজ বাবা মায়ের কারণে আমরা দু ভাই বোন কম পেরেশানীতে ভুগিনি।"
রিদু কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
" আমার কী মনে হয় জানো প্রিয়তি? তোমাকে তোমার বাবা মা কুুড়িয়ে পেয়েছে।"
" মানে?"
" না মানে প্রেমার আচরন তো এমনি তোমার বাবা মায়ের সাথে খাপে খাপ মিলে। প্রিয়ম ভাইরটাও হালকা মিলে। তবে তুমি বিপরীত তাই সন্দেহ হয়, তাদের মেয়ে তো তুমি!"
প্রিয়তি বেশ রাগি চোখে তাকিয়ে বলল,
" আমার তোমার সাথে কথা বলাই ভুল হয়েছে।"
তারপর অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে রইল।
২৪!!
সকাল থেকে তিথি আর রকিবের আকদের টুকটাক আয়োজন চলছে। রিদুর পরিবার সব রকিবদের বাড়িতে। রিদু অফিস গেছে, ও সন্ধ্যায় আসবে। প্রিয়তি কাজ করতে গেলে রকিবের মা ধমক দিয়ে বসিয়ে দিলেন এক জায়গায়। কোন কাজ না পেয়ে প্রিয়তি বসে বসে নকশী পিঠা কাটতে লাগল। রকিব আজ ছুটি নিলেও কিছু কাজে সকালে থানায় যেতে হয়েছে।
তিথির বাসায় তেমন আয়োজন নেই। ওর কয়েকজন বান্ধবী আর কয়েকজন আত্মীয়। তিথির দুই মামা মামি। আর তিথির এক খালা। যদিও আপন না কবে সম্পর্ক খুব ভালো। তিথি বান্ধুবীদের সাথে বসে গল্প করছে। তখন ওর কল আসল। অচেনা নাম্বার। তিথি ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো বলার পর প্রিয়ম বলল,
" তিথি আমি প্রিয়ম।"
তিথি খানিক নার্ভাস হলেও বলল,
" জি।"
" একটু ছাদে আসবি? জাস্ট পাঁচ মিনিটের জন্য।"
" বাড়িতে কত লোক। এখন কিভাবে যাবো?"
" প্লিজ না করিস না। প্লিজ। আমি তো চলে যাবো এখন। প্লিজ আয়।"
কিছু একটা ভেবে তিথি বলল,
" আচ্ছা।"
—————
কিছুক্ষণ পর তিথি ছাদে আসল কিন্তু একা নয়, সাথে ওর বান্ধবী ঝুমাকেও নিয়ে আসল। প্রিয়ম দাঁড়িয়ে ছিলো ছাদের একদম দক্ষিণ কর্ণারে। মূলত ওদের ছাদের দক্ষিণ কর্ণারে দাঁড়ালে নিচ থেকে বা আশে পাশের কেউ দেখতে পারে না উপরে কারা আছে। পাশেই সিমেন্ট দিয়ে বড় পানির ট্যাংকি বানানো। তাছাড়া বেশ বড় বড় কয়েকটা বাদাম গাছে দক্ষিন কোনাকে আচ্ছাদিত করে রেখেছে।
আজ যেহেতু শুধু আকদ হবে তাই আত্মীয় স্বজন খুবই কম। তিথির মা তেমন আত্মীয়দের বলেনি। আশে পাশের লোকজন বিকালে আসবে। দুই একজন মহিলারা যাও আসছে তাও নিচ থেকে তিথির মায়ের সাথে কথা বলে চলে যাচ্ছে। নিচে সবাই কাজে ব্যস্ত। ছাদে এখন কেউ নেই।
তিথির সাথে কাউকে দেখে প্রিয়ম নিজের প্রতি তাচ্ছিল্য হাসলো। মনে মনে বলল,
" কারো বিশ্বাস অর্জন করতে সারা জীবন লেগে যায় কিন্তু বিশ্বাস হারানো এক মুহূর্তের ব্যাপার। আমিও তিথির বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছি।"
তিথি প্রিয়মের কাছে এসে বলল,
" হ্যাঁ বলো?"
" আমাকে বিশ্বাস করতে পারছিস না?"
তিথি মাথা নিচু করে বলল,
" এ কথা কেনো?"
" না মানে তোর সাথে একা কথা বলতে চেয়েছিলাম।"
ঝুমা বলল,
" তোরা কথা বল অামি নিচে যাই।"
তিথি ঝুমার হাত ধরে বলল,
" নিচে যেতে হবে না, ছাদের ঐ পাশটায় দাঁড়া। কেউ আসলে বলিস।"
" আচ্ছা।"
ঝুমা অপরপাশে যেতেই প্রিয়ম বলল,
" আমি কী এখন তোর বিশ্বাসের যোগ্য একদমই নেই?"
" তুমিই বলো একটা মেয়ের সম্মানের উপর যে ছেলে হাত দেয়, তাকে আর যাই হোক মেয়েটা বিশ্বাস করতে পারে কী?"
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে প্রিয়ম বলল,
" হুঁ।"
" তুমি কিছু বলতে ডেকেছিলে বোধ হয়।"
" আমি কদিনের জন্য খুলনা যাচ্ছি। গতকাল রাতেই যাবার কথা ছিলো কিন্তু কিছু কাজের জন্য যেতে পারিনি।"
তিথি র্নিবিকার ভঙ্গিতে জবাব দিলো,
" ওহ।"
" তোর খারাপ লাগছে না?"
" খারাপ কেন লাগবে? আমাদের মধ্যে তো খারাপ লাগার মত সম্পর্ক নেই!"
মাথা নিচু করে প্রিয়ম বলল,
" কোনো সম্পর্ক নেই?"
" হ্যাঁ চাচাতো ভাই বোনের সম্পর্ক। আর কিছু নেই?"
" নাহ।"
" আচ্ছা রকিবকে তুই ভালোবাসিস?"
" না।"
" যাকে ভালোবাসিস না তাকে বিয়ে করবি?"
" পারিবারিক বিয়েতে ভালোবাসাটা পরেই হয় সবসময়। তাছাড়া রকিবকে ভালো লাগে তবে এখনও ভালোবাসি না। হয়তো বিয়ের পর বাসব। কখনো শুনেছো স্ত্রী তার স্বামীকে ভালোবাসে না!"
" বহু স্বামী স্ত্রী আছে যারা বছরের পর বছর সংসার করেও একে অপরকে ভালো বাসতে পারে না।"
তিথি খানিক সময় চুপ থেকে বলল,
" হয়তো কিছু থাকতে পারে। তবে বিয়ের মত পবিত্র সম্পর্কে জড়ানোর পর এমনি মায়া ভালোবাসা হয়ে যায়। আমাদের সমাজে তো বেশিরভাগই পারিবারিক বিয়ে তো তারা কী একে অপরকে ভালোবাসে না? স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটা অদ্ভুত মায়ার। না চাইতেও ভালোবাসা মায়া সৃষ্টিকর্তা তৈরী করে দেন।"
" ওহ। তোর চাচাতো ভাই হিসাবে তোর বিয়েতে কিছু গিফ্ট তো করতে পারি?"
" হ্যাঁ পারো।"
প্রিয়ম পকেটে হাত দিয়ে ছোট্ট একটা বক্স বের করে সেটা তিথির হাতে দিয়ে বলল,
" তোর জন্য।"
তিথি বক্সটা খুলে দেখলো সুন্দর একটা স্বর্ণের ব্রেসলেট। সেটা দেখে বলল,
" এত দামি উপহার আমি নিতে পারব না।"
" প্লিজ তিথি।"
" তুমি দরকার হলে আমার মায়ের হাতে দাও। আমি নিতে পারব না। এত দামি কিছু নিলে মা বকা দিবেন। তাছাড়া আমি মাকে মিথ্যা বলতে পারব না।"
" তোকে মিথ্যা বলতে হবে না। যা সত্যি তাই বলিস।"
তারপর প্রিয়ম এক সেকেন্ডও দাঁড়াল না। হনহন করে ছাদ থেকে নেমে গেলো।
তিথিও ঝুমাকে নিয়ে নিচে চলে আসল। তারপর ওর মায়ের কাছে গিয়ে চুপিচুপি বলল,
" মা তোমার রুমে আসবে একটু?"
" দেখছিস না কাজ করছি? হাত আটকা।"
" প্লিজ মা জরুরি কথা। প্রিয়ম ভাইর ব্যাপারে।"
এবার জাহানা ভ্রু কুচকে মেয়ের দিকে তাকালেন। তারপর বলল,
" তুই যা আমি পাঁচ মিনিট পর আসছি।"
হঠাৎ করেই তার খুব চিন্তা হচ্ছে। প্রিয়ম আবার কিছু করেনি তো? নাকি মেয়েটা আবার প্রিয়মকে পছন্দ করে ফেলল? এসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে রুমে গেলেন। রুমে তিথির বাবা আর তিথি কথা বলছে। তাকে দেখে তিথি বলল,
" মা দরজাটা বন্ধ করে এসো।"
কেন জানি জাহানার খুব টেনশন হচ্ছে। দরজাটা বন্ধ করে তিথির পাশে বসে বলল,
" তিথি প্রিয়ম আবার কিছু করেছে নাকি? ঝামেলা টামেলা কিছু?"
" না মা তেমন কিছু না। তারপর ব্রেসলেটটা দেখিয়ে বলল, এটা উপহার দিয়েছে আমাকে।"
জাহানা বেশ রেগে বললেন,
" তুই নিলি কেন?"
" আমি নেইনি। তিনি আমার হাতে দিয়েই চলে গেছে। তোমাকেও বলতে বলছে।"
" তুই দেখা করতেই বা গেলি কেন?"
" মা তুমি আমার দোষ কেন দেখছো? আমার মনে কোনো দোষ থাকলে আমি তোমাকে বলতাম কেন? এটা লুকিয়ে নিজের কাছে রাখতে পারতাম নাকি?"
জাহানা খানিক দমে গেলেন। মেয়ে সত্যি বলছে। যদি লুকানোর উদ্দেশ্য তিথির হতো তবে সবটা বলতো না। তিথি ব্রেসলেটটা তার হাতে দিয়ে বলল,
" এটা দিয়ে তুমি যা খুশি করো। আমি এটা হাতে পরতে পারব না।"
তিথির বাবা বলল,
" তিথি কোথাও তুই প্রিয়মকে পছন্দ করিস না তো?"
" তাকে পছন্দ হলে রকিবকে বিয়ে করতে রাজি কেন হতাম?"
" তুই খুশি তো মা?"
" হ্যাঁ। কিন্তু মনে মনে বলল, তোমাদের খুশিতেই আমার খুশি।"
তিথি রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। জাহানা তার স্বামীকে বলল,
" এ গিফ্ট আমি রাখব না। আমার মেয়ের অমঙ্গল হবে। যদি ওর বাবা মা দিতো তাও মানা যেতো কিন্তু একা ছাদে ডেকে গিফ্ট দেয়ার বিষয়টা আমার পছন্দ হলো না। প্রিয়তির মা জানলে দেখা যাবে খুব ঝামেলা করবেন। মহিলাকে তো চেনো। আমি বরং ফেরৎ দিয়ে আসি।"
তিথির বাবা বললেন,
" তুমি বরং এক কাজ করো আজ দিও না। বিয়ের ঝামেলাটা মিটে যাক। লোকজন যাবার পর নিরিবিলি সময়ে ডেকে দিয়ে দিও। এখন লোকজনের মাঝে যদি সিনক্রিয়েট হয়? তবে দেখা যাবে তিথির বদনাম হবে।"
" তা অবশ্য ঠিক। তবে তোমার কথামতই কাজ করব।"
২৫!!
অবশেষে মাগরিবের নামাজের পর তিথি আর রকিবের শুভ পরিনয় সম্পান্ন হলো। সবাই মিষ্টি মুখ করল। রাতে খাওয়ার পর রকিব এবং বাকি সবাই চলে যাবে। রকিবের বাবা নেই তাই ওর বড় চাচা এসেছেন। রিদুর বাবা আসেনি, রিদুও আসতে চায়নি কিন্তু রকিবের জেদে হার মেনেছে। প্রিয়তিকে তিথি আসতে বলেছিলো কিন্তু ওর শরীর খারাপ শুনে আর জোর করেনি। রিদু খাওয়া শেষে তিথির বাবা মায়ের সাথে দেখা করতে যাবার জন্য যাচ্ছিলো তখন ওর হাতে টান পরে। পিছন ঘুরে দেখল প্রেমা ওর হাত ধরে মিটমিট হাসছে।