১৭!!
-বিশ্বাস করুন জিহান। আমি কিচ্ছু করি নি। আমি খাবারে এক্সট্রা লবণ, মরিচ মিক্স করি নি। আমার কথা বিশ্বাস করুন প্লিজ? আমি জানি না কি করে খাবারে কি করে এতো লবণ মরিচ এসেছে, আমি সত্যিই জানি না বিশ্বাস করুন।
পরেরদিন সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই টুকটাক কাজে নীলাকে কাজে হেল্প করেছে জিহান। সবার জন্য সকালের নাস্তায় পরোটা আর ভাজি বানানোয়ও নীলাকে হেল্প করলো জিহান। সবজি কাটা, ময়দার ডো রেডি করা সবই নীলাকে পাশে থেকে নিজে সাহায্য করেছে বা কিভাবে করতে হবে ডিরেকশন দিয়েছে। দিলারা জামান, জামান চৌধূরী আর মুগ্ধা খাবার টেবিলে চুপচাপ নাস্তা করে নিজের নিজের কাজে চলে গেল। ব্রেকফাস্ট করার পর রান্নার কাজেই নীলাকে হেল্প করছে জিহান। ঠিক হেল্পও না, কিভাবে রান্না করতে হবে সেটারই ইন্সটাকশন দিচ্ছে জিহান। আর টুকটাক কাটাকুটি করে দিচ্ছে, কাজের ফাঁকে নীলাকে এটা ওটা প্রশ্ন করছে। রান্না শেষ করতে করতে দুপুর হয়ে গেছে দুজনের। কাজের চেয়ে বকবক বেশি হলে যা হয় আরকি। রান্না শেষ করে শাওয়ার নিয়ে সবাইকে লাঞ্চ করার জন্য ডেকে খাবার সার্ভ করতে এসেছে নীলা। অন্যদিনের মতো একা কাজগুলো করতে হলো না আজ নীলাকে। নীলা খাবারগুলো বাটিতে বেড়ে নিচ্ছে আর জিহান সেগুলো টেবিলে এনে রাখছে। সবাইকে প্লেটে খাবার সার্ভ করে দিয়ে নিজের আর নীলার জন্য প্লেটে খাবার সার্ভ করতে শুরু করেছে জিহান। ততক্ষণে মুগ্ধা, দিলারা জামান আর জামান চৌধূরী এক লোকমা খাবার মুখে তুলে কেউ থু থু করে ফেলে দিলো, আর কেউ পাগলের মতো পানির গ্লাসের উপরে হুমড়ি খেয়ে পড়লো। কি ঘটছে কিছুই বুঝতে পারলো না জিহান আর নীলা কেউই।
-ওয়াক! সারাদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের রান্না খাবার এটা? ওয়াক! এতো লবণ পোড়া তরকারিতে। মাংস রান্না করেছে তাতে মরিচের গোডাউন ঢেলে দিয়েছে! এগুলো মানুষের খাবার! ওয়াক! এতো লবণ মরিচ খাইয়ে কি মারতে চাইছো আমাদেরকে? মা বাবা? তোমরা ঠিক আছো? আমার কথা না ভাবো এই বয়স্ক দুটো মানুষের যে ব্লাড প্রেশারের প্রবলেম আছে এটা কি জানো না? এক কাজ করো না? মেরে ফেলতে চাইছ যখন খাবারে কোনদিন বিষ মিশিয়ে দাও কে জানে?
-মুগ্ধা? কি বলছ তুমি? আমি খাবারে লবণ মরিচ বেশি কেন দিবো? বিশ্বাস করো আমি টেস্ট করেছিলাম।
-তার মানে তুমি কি বলতে চাইছ নীলা? জিহান? তোমার সো কলড ওয়াইফ কি বলতে চাচ্ছে? আমরা খাবারে মরিচ, লবণ এসব মিশিয়েছি বলতে চাইছে ও? কোনদিন খাবারে বিষ মিশিয়ে আমাদেরকেই খুনী বানিয়ে দিবে। ওয়াও!
-মুগ্ধা! এসব কি বলছ? আমি এটা বলতে চাই নি বিশ্বাস করো? জিহান? মামা, মামি? আপনারা বিশ্বাস করুন প্লিজ? আমি খাবারে এতে মশলা মিক্স করি নি বিলিভ মি।
জিহান মুগ্ধা বা নীলা কারো কথারই জবাব না দিয়ে প্লেটে খাবার নিয়ে টেস্ট করে কাশতে শুরু করলো। নীলা ব্যস্ত হাতে গ্লাসে পানি ঢেলে জিহানের দিকে এগিয়ে দেয়ার আগেই মুগ্ধা নিজের সমানে রাখা গ্লাসটা জিহানের হাতে ধরিয়ে দিল। এক চুমুকে গ্লাসের পানিটুকু খেয়ে ফেলে কোনোমতো কাশিটা থামাতে চেষ্টা করলো জিহান। এতোক্ষণে দিলারা জামান আর জামান চৌধূরী নিজেদেরকে সামলে নিয়েছে। দিলারা জামান নিজের সামনে থেকে প্লেটটা তুলে ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেললো।
-এই হলো বাড়ির বউয়ের কাজের নমুনা তাই তো জিহান? আজ নিজেই তো সব শিখিয়ে পড়িয়ে দিয়েছিস তোর বউকে। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে রান্নার প্রসেস শিখিয়ে দিয়েছিস, হাতে হাতে কাজ এগিয়ে দিয়েছিস। এবার? কি শিখালি? এই মরিচ, লবণ পোড়া তরকারি কি আমাদের উপরে এক্সপেরিমেন্ট করবে? তারপর? কোনোদিন পোড়া ভাত, কোনোদিন জ্বলে যাওয়া সবজি, তরকারি! সকালের ব্রেকফাস্টটা ভালো হয়েছিল বলে অভার কন্ফিডেন্ট হয়ে গিয়েছিলি না জিহান? এবার বল? কতদিন এভাবে চলবে জিহান?
-মামী বিশ্বাস করুন আমার মনে আছে আমি টেস্ট চেক করেছিলাম রান্না শেষ হওয়ার পর।
-জাস্ট শাট আপ মেয়ে। একটা কথাও বলবে না। এখানে তোমাকে তো কিছু বলা হচ্ছে না। অবশ্য জিহান? এমনও হতে পারে এই মেয়েকে তুই ঠিকই শিখিয়েছিস কিন্তু এই মেয়ে আমাদেরকে দোষী বানাতে চাইছে। এখন যে বারবার বলছে আমি টেস্ট করেছিলাম, লবণ মরিচ এগুলো আমি মিক্স করিনি, একটু পরেই হয়তো বলবে মুগ্ধা বা আমি বা তোর মামা ওর কষ্টের রান্নাটা নষ্ট করে দিয়েছি। এটাই বলবে দেখিস।
-জিহান? বিশ্বাস করুন? একবার আমার কথাটা শুনুন না প্লিজ?
দিলারা জামানের খাবারের প্লেটটা ছুঁড়ে ফেলার সাথেসাথেই সবাই ধড়ফড় করে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। জামান চৌধূরী, মুগ্ধা দিলারা জামানকে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ভদ্রমহিলা থামতেই চাইছে না। জিহান এতোক্ষণে ধীর পায়ে এগিয়ে এসে নীলার পাশে এসে দাঁড়িয়ে নীলার একটা হাত চেপে ধরে টানতে টানতে মেইন ডোরের দিকেই চলেছে। পিছন থেকে হা হুতাশ করতে করতে বাকি তিনজনও কি বলছে সেটা যেন কানেই পৌঁছাচ্ছে না জিহানের। আর না নীলার আকুতিগুলো শুনেও একবারের জন্য পা থেমেছে জিহানের।
-প্লিজ জিহান? আমার কথাটা বিশ্বাস করুন প্লিজ? আমি সত্যিই খাবারে কিচ্ছু মেশাই নি প্লিজ? এতো।লবণ, মরিচ কি করে খাবারে এসেছে আমি সত্যিই কিছু জানি না বিশ্বাস করুন? আপনি তো পুরো সময়টাই আমার সাথে রান্নাঘরেই ছিলেন। তারপর কাজ শেষ হওয়ার পর একসাথেই তো রুমে গেছি জিহান? একবার আমার কথাটা শুনুন প্লিজ জিহান?
-এনাফ নীলা। তোমাকে কাজের জবাবদিহি করতে বলে নি কেউ। কোনটা সঠিক, কোনটা ভুল সেটা বোঝার মতো বোধ বুদ্ধি আমার আছে বুঝলে? না বুঝেই কারো কথায় রিএক্ট করার ছেলে জিহান নয় এটা আশা করি তুমিও জানো, আর মামা মামি তোমরাও জানো। রাইট?
নীলার হাত ধরে টানতে টানতে একদম বাড়ির দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে জিহান। তখনও ওর হাতের মুঠোর মধ্যে নীলার ডান হাতটা শক্ত করে ধরা। জিহান এবারে নীলার দিক থেকে চোখ সরিয়ে পিছন পিছন ছুটে আসা মামা মামী আর মুগ্ধার দিকে তাকালো।
-এতো বড় অন্যায় করার পর এই মেয়েটার তো এই বাড়ির বউয়ের অধিকারে এই বাড়িতে থাকার কথা না তাই না মামি? আর মুগ্ধা? কি বলছিলি যেন তুই? নীলা যে কোনো সময় খাবারে বিষ টিষ মিশিয়ে দিতে পারে। তাহলে তো ওকে কোনোভাবেই এই বাড়িতে রাখা উচিত না, কি বলিস?
-ঠিক বলেছো জিহান। ওকে ওর বাপের বাড়িতেই দিয়ে এসো। বাবা আর ভাইয়ের চেয়ে কোনো অংশে কম নাকি এই মেয়েটা? কি নাটক করছে এখন দেখছো? কেঁদে কেটে এমন সাগর বানাচ্ছে যেন ও জানেই না কি হয়েছে। হাহ! এতো নাটক কি করে করতে পারে একটা মানুষ! ও মাই গড! এবার বুঝলে তো জিহান কেন বারবার তোমাকে সর্তক করতে চেয়েছিলাম আমি?
-সেটা তো নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছি মুগ্ধা। তোর হেল্প ছাড়া তো কাজটা কোনোদিন পসিবলই হতো না। ট্রাস্ট মি। এর জন্য আমি আজীবন তোর কাছে।কৃতজ্ঞ থাকবো।
-এই মেয়েটাকে এখনও দাঁড় করিয়ে রেখেছো কেন জিহান? ছুঁড়ে বাড়ির বাইরে ফেলে দরজাটা আটকে দাও তো? অসহ্য একটা ক্যারেক্টার! উফ! দেখলেই আমার কায়রা আপুর কথা মনে পড়ে যায়। কি কষ্ট দিয়েছে আপুকে ওরা। আর ফুফা ফুফুর মৃত্যুর জন্য যে এই মেয়েটার ফ্যামেলিই দায়ী এটা কি করে ভুলে যেতে পারলে তুমি জিহান? এবার অন্তত নিজের বাবা, মা আর বোনের কথা ভেবে হলেও এই আপদটাকে বাড়ি থেকে বের করে দাও প্লিজ?
এতোক্ষণ দাঁতে দাঁত চেপে নিজের রাগটা হজম করতে পারলেও এবারে ধৈর্য্যের সমস্ত বাঁধই ভেঙ্গে গেল জিহানের। ডান হাতে নীলার হাতটা ধরা অবস্থাতেই বাম হাতে মুগ্ধার গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় মারলো। জিহানের কঠিন হাতের থাপ্পড়ে মুগ্ধা ছিটকে নিজের বাবা মায়ের গায়ের উপরে এসে পড়েছে। দিলারা জামান মেয়েকে ধরে ফেলে রাগী টকটকে লাল চোখে জিহানের দিকে তাকালো।
-জিহান? তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? ওই মেয়েটার কথা বিশ্বাস করে তুই মুগ্ধার গায়ে হাত তুললি? এতোটা নিচে নেমে গেছিস তুই? দুদিন আগে আসা একটা মেয়ের জন্য তুই আমার মেয়ের গায়ে হাত তুলছিস?
-দুদিন আগে আসা মেয়ে নয় মামি। এই যে মেয়েটা এখনও আমার পাশে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে? ওকে আমি চার বছর ধরে জানি, আমার বিবাহিতা স্ত্রী ও। রাস্তার কোনো একটা মেয়ে নয় যে ওর বিরুদ্ধে যে আমাকে যা বোঝাবে আমিও সেটা পুরোনো বাংলা সিনেমার মতো মেনে ওকে বাড়ি থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো। আর কি বলো তো মামি? মুগ্ধার গায়ে হাত তুলে আমি অন্যায় করেছি বলে মনে হচ্ছে তোমার? তাহলে ওকেই জিজ্ঞেস করো ও নীলার রান্নাটা নষ্ট করার জন্য এসব করে অন্যায় করে নি? আমি নিজে নিজের রান্না চিনবো না? রান্নাটা নীলা করেছে ঠিকই, কিন্তু রেসেপিটা তো আমার, নীলাকে রান্নার প্রসেসটা আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে শিখিয়ে দিয়েছি। আর যদি বলো আমি চলে যাওয়ার পরে কাজটা করেছে, সেটা কি পসিবল বলো তো? নীলা শাওয়ার নিতে যাওয়ার পরও আমি রান্নাঘরে আরো কিছুক্ষণ ছিলাম আর খাওয়ার জন্য নেমেছে ও আমার সাথে। এবার জিজ্ঞেস করো তো মুগ্ধাকে, আমি রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ও রান্নাঘরে কেন এসেছিল।
-তুই নীলার কথায় নিজের লোকেদেরকে এভাবে অপবাদ দিবি! ছি জিহান! কাল রাতে এতো অপমান করলি তোর বউকে দিয়ে কাজ করাই বলে। ওকে নাকি অপমান করছি, অসম্মান করছি। আর আজ যে তুই আজ এই মেয়ের জন্য আমাদেরকে অপমান করছিস সেটা কিছু না জিহান?
-তোমরা আমাকে এতোগুলো দিন নিজেদের একজনের মতো করে আগলে রেখেছ তার জন্য আমি তোমাদের কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো মামি। বাবা মা মারা যাওয়ার পরও আমাকে কখনো একা লাগে নি। আজ লাগছে। কেন জানো? সম্মানের যে আসনে তোমাকে বসিয়েছি সেই সম্মানটা হয়তো আর দিতে পারবো না।
-এটাই শোনার বাকি ছিল জিহান। এটাই শোনার বাকি ছিল। এই মেয়েটার জন্য তুই আমাদের সাথে এমন ব্যবহার করতে পারলি? এই মেয়েটাকে তো আমি------।
দিলারা জামান মুগ্ধাকে সরিয়ে তেড়ে এসে নীলাকে চড় মারার জন্য হাত উঁচু করতেই জামান চৌধূরী পাশ থেকে স্ত্রীর হাত ধরে ফেললেন। দিলারা জামান রাগে কটকট করে নীলার দিকে তাকিয়ে আছে। জামান চৌধূরীও এবার স্ত্রীর কাঁধ ধরে ঝাঁকিয়ে নিজের দিকে ফিরালো।
-তোমাদের দুজনের হয়েছেটা কি দিলারা? মুগ্ধা? এই মেয়েটা আমাদের ছেলের বউ। ওর আগের পরিচয় কি সেটার চেয়েও বড় কথা হলো ও এখন এই পরিবারের অংশ। আর তোমরা ওকেই এভাবে হেনস্থা করছ! ছি ছি ছি! জিহান? মামার কথাটা ভেবে ওদেরকে মাফ করে দে বাবা।
-আরে মামা! কি বলছ?
-এদের একটা শিক্ষা হওয়া উচিত। আমি ওদেরকে আজই গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিবো। না ওরা এখানে থাকবে, আর না রোজ রোজ ওদের এসব নাটক করার সুযোগ পাবে। তুই ভাব তো আজ মেয়ে খাবারটা নষ্ট করছে, কাল যদি আরো বড় কিছু করে বসে? না বাবা, কোনো অঘটন ঘটানোর আগে আমরা এখান থেকে গ্রামেই চলে যাই সেটাই ভালো হবে। চল মুগ্ধা, চলো দিলারা। তুমিও নিজের মেয়ের দোষটা দেখতেই পাচ্ছ না, এতোটা অন্ধ হয়ে গেছো মেয়ের ভালোবাসায় যে কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল সেই বোধটাও তোমার হারিয়ে গেছে। তোমরা দুজনে ওদের জীবনে নতুন আর কোনো সমস্যা করো সেটা আমি চাই না কোনোভাবেই। তাই এই মূহুর্তে তোমরা এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবে, বৌমা নয়। চলো?
- না মামা। এটা তোমাদের বাড়ি, মামির সংসার। মামি, মুগ্ধা বা তুমি সবাই এই সংসারের একেকটা অংশ মামা। আর মামি? নীলা হয়তো তোমার মনমতো হয়ে উঠতে পারে নি বলে ওর উপরে তোমার এতো রাগ। তাই না? ওকে, ফাইন। এবার নীলাকে তোমার মনের মতো করে তোমার সামনে এনে দাঁড় করাবো। ততদিন নাহয় নীলা তোমার সামনে আসবে না। একেবারে তোমার মনের মতো বউ হতে পারলেই নীলা এই বাড়িতে পা ফেলবে, এর আগে না।
-জিহান এসব কি বলছিস? বউমা বাড়িতে থাকবে না মানে কি?
-টেনশন করো না মামা। আমি আছি তো নীলার সাথে। ওকে মামীর মনমতো করে তারপরই বাড়িতে ফিরবো। আশা করি তারপর আর নীলাকে নিয়ে কারো কোনো প্রবলেম হবে না। চলো নীল?
জিহানের মামা মামি আর মুগ্ধার আচরণ, কথাবার্তা আর জিহান রিএক্ট সব মিলিয়ে মাথা ঘুরছিল নীলার। কে কেন কি করছে সবই মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে মেয়েটার। নীলার কথাগুলো ভাবার মাঝে জিহান নীলার ধরা হাতটা ধরে বাড়ির বাইরেই পা রেখেছে এবারে। নীলাও এবারে অবাক চোখে জিহানের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই মন্ত্রমুগ্ধের মতো জিহানের সাথেই পা বাড়ালো কোনো এক অজানার উদ্দেশ্যে।
১৮!!
গাড়িতে জিহানের পাশে বসে থেকেও একটা টু শব্দও করে নি নীলা। ওরা কোথায় যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে, জিহানই বা কেন এই ভরদুপুরে খাবারের টেবিল ছেড়ে উঠে ওকে নিয়ে নিজের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে এমন জবাব না জানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে নীলার মাথায়। জিহান ড্রাইভিং করার ফাঁকে নীলার দিকে একবার তাকিয়ে নীলার ভাবুক মুখটা দেখে আলতো করে হাত বাড়িয়ে নীলার গালে হাত ছুঁইয়ে দিলো। ভাবনার দুনিয়ার মাঝে ডুবে ছিল বলে জিহানের হঠাৎ গাড়ি থামানো টেরই পায়নি নীলা। তাই এবারে জিহানের দিকে তাকিয়ে একটু চমকেই উঠেছে মেয়েটা।
-এই যে ম্যাডাম? কোন ভাবনায় হারালেন? সারাদিন যে না খেয়ে আছেন সে খেয়াল আছে? খিদেয় চোখ মুখ কেমন শুকিয়ে গেছে, তবু খিদে লেগেছে কথাটা বলছে না পাগলিটা। তুমি একটু বসো নীল। আমি দু মিনিটের মধ্যেই আসছি কেমন?
-কোথায় যাচ্ছেন? আর আমরাইবা কোথায় যাচ্ছি?
জিহান পাশ ফিরে নামার জন্য পা বাড়ানোর আগেই নীলা চমকে জিহানের হাতটা চেপে ধরলো। জিহান মিষ্টি করে একটা হাসি দিয়ে নীলার কপালে আলতো করে একটা চুমো এঁকে দিলো।
-লাঞ্চ টাইম পার হচ্ছে ম্যাডাম। আজ কি না খেয়ে থাকার প্ল্যান আছে নাকি ম্যাডামের? হুম? আর আমরা কোথায় যাচ্ছি? উমমমম। আমরা আমাদের বাড়িতে যাচ্ছি নীলপাখি।
-আমাদের বাড়ি মানে?
-আমাদের মানে আমাদের। এখন দু মিনিট চুপ করে বসে থাকো। খাবারটা প্যাক করে নিয়েই চলে আসবো। বাড়িতে আপাতত রান্নার ব্যবস্থা নেই। তাই পার্সেলই ভরসা বুঝলে? একটু ওয়েট করো কেমন?
নীলা মাথা নেড়ে সায় দিতেই জিহান গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার অপজিট পাশের রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাবার প্যাক করে নিয়ে এলো। গাড়িতে বসে খাবারের প্যাকেটটা নীলার হাতে ধরিয়ে দিয়ে আবার ড্রাইভিং এ মন দিলো জিহান। আধ ঘন্টার মধ্যেই শহরের খানিকটা দূরে ফার্মহাউজটার সামনে গাড়ি এসে থামতেই অবাক হয়ে বিশাল বড় বাড়িটার দিকে তাকিয়ে রইলো নীলা। চোখের সামনে সেদিনের স্মৃতিগুলো ভেসে উঠতেই চোখ জোড়ায় পানি জমতে শুরু করেছে নীলার। ততক্ষণে জিহান গাড়ি থেকে নেমে নীলার জন্য গাড়ির দরজাটা খুলে দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। নীলা ফার্মহাউজটার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে জিহানের হাতের দিকে একনজর তাকিয়ে চুপচাপ গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে। জিহানের বাড়িয়ে দেয়া হাতটা ধরার কোনো আগ্রহও দেখালো না মেয়েটা। জিহান অবশ্য হাল ছাড়লো না। এক হাতে নীলার হাত থেকে খাবারের প্যাকেটটা নিয়ে অন্য হাতে নীলার একটা হাত চেপে ধরে ফার্মহাউজের মেইন ডোরের দিকেই পা বাড়ালো। নীলা একরকম ঘোরের মধ্যেই জিহানের সাথেই চলছে এক পা দু পা করে।
-সংসার করতে দু পাশের মানুষগুলোকেই সমান ধৈর্য্য নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হয় বুঝলে নীল? পরিবারটা যখন সবার, তখন সংসারটাকে আগলে রাখার, সংসারের ছোটোবড় কাজকর্মগুলোও সবার। এমন না যে বাড়ির বউ বলে সব কাজ তোমাকেই করতে হবে। তুমি নিজের সংসারে একা নয়, বাকিরাও এই সংসারের একটা বড় অংশ এটাও সবাইকে বুঝতে হবে। আর যেদিন মামি আর মুগ্ধাও কথাটা বুঝতে পারবে সেদিন দেখবে আর এমন বাজে বিহেভও করবে না তোমার সাথে।
-আমরা এখানে কেন এসেছি জিহান? আর আবার এই বাড়িটাতেই বা কেন?
ফার্মহাউজের মেইন ডোরের সামনে দাঁড়াতেই নীলার প্রশ্নটা শুনে হেসে বাড়ির দরজাটা খুলে দিল জিহান। জিহানের চোখের ইশারা খেয়াল করে খোলা দরজাটার দিকে তাকালো নীলা।
-এই বাড়িটা আমাদের হলিডে হোম ছিল জানো নীল? ছোটোবেলায় আমি, কায়রাআপু, বাবা, মা সবাই মিলে কত মজা করতাম এখানে। স্কুলের প্রতিবছর ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হওয়ার জন্য ওয়েট করতাম আমরা। বাবাও সেই কয়টা দিন সব অফিসের কাজ থেকে ছুটি নিতো। কি দারুণ কাটতো দিনগুলো! আমাদের সুখের আরেক বাড়ি। তোমার নতুন বাড়িতেই নাহয় নতুন করে শুরু হোক আমাদের নতুন সংসার। এসো?
বাড়ির ভিতরের দৃশ্য দেখে নীলা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দেখে জিহান নীলার হাত ধরে নিজেই বাড়ির ভিতরে পা রাখলো। নীলা অবাক চোখে বাড়িটার অবস্থা দেখছে আর অবাক হচ্ছে। সেদিনের সেই ভাঙা কাঁচের ফ্লাওয়ার ভাসটাও এখনও করিডরে পড়ে আছে। জিহান নিজেও কাঁচের টুকরোগুলো দেখে নীলাকে টেনে দাঁড় করিয়ে দিল।
-আরে আরে আরে নীল! সাবধানে। তাড়াহুড়োয় এসব কিছুই ক্লিন করা হয়নি। শিট! তুমি চুপ করে এখানে দাঁড়িয়ে থাকো। খবরদার এক পা ও নড়বে না বলে দিলাম। কোনদিক থেকে কোনদিকে যাওয়ার সময় আবার হাত পা কেটে বসে থাকবে। সো, চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবে এখানে। ওকে?
নীলা আবার মাথা নেড়ে সায় দিতেই জিহান ব্যস্ত হাতে করিডোরে পড়ে থাকা ভাঙা কাঁচের টুকরোগুলো পরিষ্কার করে ফেললো। তারপর সেগুলো ডাস্টবিনে ফেলে এসে নীলাকে নিয়ে ডাইনিং রুমে চলে এলো। নীলাকে ডাইনিং রুমে একটা চেয়ার টেনে বসিয়ে নিজেই খাবার সার্ভ করতে লেগে পড়লো জিহান। নীলা আরেকবার অবাক চোখে জিহানের দিকে তাকিয়ে রইলো। সেদিনের সেই দৃশ্যটা এখনও চোখের সামনে যেন জীবন্ত হয়ে উঠছে। অথচ এখন, এই মূহুর্তে দাঁড়িয়ে নিজের চোখের দেখা ঘটনাকেও কেমন মিথ্যে, বানেয়াট গল্প বলে মনে হচ্ছে নীলার। সেদিন কি ঘটেছিল জানার কৌতূহলটা ধীরে ধীরে আরো প্রবল হয়ে মনের দরজায় উঁকি দিতে শুরু করেছে নীলার।
-বুঝলে নীল? সেদিন তুমি যাওয়ার পর আর এই বাড়িটায় আসা হয়নি একবারও। এসেই বা কি করতাম বলো?! আমার সবকটা প্ল্যানই সেদিনটার জন্য নষ্ট হয়ে গেছিল জানো? দুদিন ধরে নিজের টেন্ডারের কাজগুলো রাত জেগে গোছানোর ফাঁকে আমি নিজের হাতে বাড়িটাকে তোমার জন্য সাজিয়েছিলাম। এক সপ্তাহ পর তুমি নতুন বউ হয়ে আমার জীবনে আসলে ওইদিনই তোমাকে আমাদের ছোট্ট হলিডে হোমটায় নিয়ে আসবো, এমনই প্ল্যান ছিল আমার।
-তাহলে ওই মেয়েটা এখানে কি করছিল সেদিন? অফিস থেকে সোজা বাড়িতে এলো কি করে? আর কি করছিল এখানে?
নীলার কৌতূহলী প্রশ্নটা শুনে মিষ্টি করে হেসে জিহান নীলাকে খাইয়ে দিতে শুরু করেছে। নীলাও এতোক্ষণে টের পেলো অনেক খিদে পেয়েছে আসলে ওর। নীলার মুখে আরেক লোকমা ভাত তুলে দিয়ে নিজেও খেতে শুরু করলো জিহান। খাওয়ার ফাঁকেই চললো ওদের মান অভিমানের আলোচনা।
-তোমাকে ওইদিনই জিজ্ঞেস করেছিলাম ফার্মহাউজের এড্রেসটা তুমি কার কাছ থেকে জানলে। তুমি তো বললেও না। বললে এটাও জানতে পারতে তোমাকে এড্রেস যে দিয়েছে সেই ওই মেয়েটাকেও সেই ফার্মহাউজে পাঠিয়েছে। টেন্ডারের ফাইলগুলো ফার্মহাউজ থেকে চুরি করার জন্য। বা ইচ্ছে করেই মেয়েটা ধরা পড়েছে যাতে তুমি আমাকে ক্যারেক্টারলেস মনে করো। এন্ড মজার ব্যাপার হলো ওদের প্ল্যানটা সফলও হয়েছে। কি বলো?
-রূপ। রূপ নাম ছিল মেয়েটার। আর ফার্মহাউজের এড্রেসটা বাবা দিয়েছে। শিহাব আপনার লোকেশন আর ওই মেয়েকে নিয়ে এখানে এসেছেন সেটার খবর দিয়েছিল।
-ওয়েট এ মিনিট ম্যাডাম। রূপ নামটা এমনিই বলেছিলাম। ওর আসল নাম সুনয়না। তখনও ওর নাম জানা ছিল না আমার। আর ঘটনার পিছনের আসল কালপ্রিটটাকে ধরার জন্য একটু কষ্টও দিতে হয়েছে তোমাকে নীল। তার জন্য আমি রিয়েলি সরি। বাট এখন তো আরো এলোমেলো হয়ে গেলো ব্যাপারটা। তোমার ভাইয়ার পি.এ আমার ফার্মহাউজে এসেছে এই খবর শিহাবের কাছে পৌঁছালো কি করে?
-ভাইয়ার পি.এ. মানে? ওই রূপ হোক বা সুনয়না ও আপনার অফিসে জব করে। ভাইয়ার পি. এ কেন হবে?
-মানে? কি বলছ এসব? আমার অফিসে জব করলে আমি চিনতাম না ওকে? কে যে তোমার মাথায় এসব উল্টোপাল্টা গল্প ঢোকায় কে জানে।
-গল্প হতে যাবে কেন? আমি নিজে ওই মেয়েকে আপনার অফিসে দেখেছি। একাউন্টস ডিপার্টমেন্টে। আমি যতবার আপনার সাথে আপনার অফিসে দেখা করতে গেছি ততবারই হয় অফিসে, নয়তো স্টাফ রুমে নয়তো ক্যান্টিনে, কোথাও না কোথাও ওই মেয়েটাকে দেখেছি।
-ওয়েট এ মিনিট। আর ইউ সিরিয়াস? আর ইউ শিওর তুমি সুনয়নাকে দেখেছিলে?
-শিওর মানে? আমি বলছি আমার কথা আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না? আপনি এক কাজ করুন আপনি মামাকে কল করে জিজ্ঞেস করুন।
-দাঁড়াও দাঁড়াও। এখানে কিছু তো একটা গন্ডগোল আছে। অনেক বড় গন্ডগোল। একসাথে দুইটা রিভেল পার্টির অফিসে কি করে জব করে এই মেয়েটা? আবার যে টেন্ডারটা নিয়ে এতো ঝামেলা সেটা তোমাদের বা আমাদের কোনো কোম্পানিই পেল না, টেন্ডার পেল একটা থার্ড পার্টি। কিছু তো একটা কাহিনী আছেই এর পিছনে।
-কিন্তু আপনি কি করে জানলেন যে ওই মেয়েটা ভাইয়ার পি. এ.?
-আমার কথা সত্যি কিনা সেটা তোমার ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবে। নিহার ভাবিও জানে মেয়েটাকে পাঠানোর পিছনে আবরার ভাইয়া কোনো না কোনো ভাবে জড়িত। বাট আমি ভাবছি অন্য কথা। সুনয়না তোমাদের বাড়িতে যায় নি? ফার্মহাউজে কি হয়েছে সেটা বলার জন্য? ওকে আমি ছেড়েছিলাম যাতে ও তোমাদের বাড়িতে গিয়ে বলে সবটা প্ল্যান মতোই হচ্ছে।
-আপনি কি বলছেন আমি কিছু বুঝতে পারছি না। ওই মেয়েটাকে আমি কখনো আমাদের বাড়িতে যেতে দেখি নি। অফিসে তো তেমন একটা যাওয়া হয় না, তাই জানি না ও আসলেই ভাইয়ার পি.এ কিনা।
-কিছু একটা প্রবলেম আছে এখানে। আমাদের দুটো রাইভাল কোম্পানির মধ্যকার তৃতীয় ব্যক্তিটা কে সেটাই বুঝতে পারছি না। ওয়েট, আমি সাদিককে বলছি ব্যাপারটা দেখতে। ওরাই খুঁজে বের করুক আসল রহস্যটা কি। একবার এই মেয়েটাকে পাই, আসল কাহিনী ওর কাছ থেকেই জানা যাবে।
দেখতে দেখতেই একটা সপ্তাহ কেটে গেছে। দিনগুলো অসম্ভব রকমের ভালো কেটেছে নীলা আর জিহানের। জিহান প্রতিদিন নিয়ম করে সকালে অফিসে গিয়ে দুপুরেই বাসায় ফিরে আসছে। আর বাসায় ফিরে সারাদিনই নীলাকে টুকটাক কিছু না কিছু শিখাচ্ছে। আর নীলাও গভীর আগ্রহ আর কৌতূহলে জিহানের কাছ থেকে সব কাজই শিখে নিচ্ছে। আজও অফিসে একটা মিটিং শেষ করেই বাসায় চলে এসেছে জিহান। বাসায় ফিরে রান্নাঘরে খুনশুটির সাথে চলছে রান্না শেখার কোর্স। জিহান কাজের ফাঁকে একেকবার নীলার গালে হলুদের গুঁড়োর রঙ ছড়াচ্ছে, কখনো আলতো হাতে গভীর মনোযোগে কাজ করার চেষ্টা করা নীলাকে ছুঁয়ে দিচ্ছে। নীলা মুখ তুলে তাকালেই জিহানের ঠোঁটের ইশারায় আবার চোখ নামিয়ে নিয়ে লাজুক হেসে কাজে মন দিচ্ছে। এভাবে দুষ্টুমির ফাঁকে কাজটা ভালোই চলছিল। তবে বাগড়া দিলো কলিংবেলের শব্দটা। জিহান ভ্রু কুঁচকে এক সেকেন্ড ভাবার চেষ্টা করলো এই সময় এখানে কে আসতে পারে। এর মধ্যেই আরেকবার কলিংবেলের আওয়াজ হলো দেখে জিহান নিজেই মেইন ডোরের দিকে পা বাড়ালো। মিনিট খানেক অপেক্ষা করে নীলাও হাত ধুয়ে শাড়ির আঁচলে গালের হলুদের দাগটা মুছতে মুছতে সেদিকেই পা বাড়ালো। মেইন ডোরের কাছাকাছি আসতেই জিহানের কথাটা কানে যেতেই আরো কিছুটা এগিয়ে কে এসেছে দেখার চেষ্টা করলো নীলা।
-তুই এখানে কি করে এলি মুগ্ধা?
মুগ্ধাকে দেখে যতটা না অবাক হলো তারচেয়ে কয়েকগুণ বেশি অবাক হলো মুগ্ধার কথাটা শুনে।
-জিশান আজই হল থেকে বাসায় এসে তোমার কাছে আসবে বলে কি যে বায়না শুরু করেছে জানো? আর তোমার এই ছেলের বায়না তো তুমি জানোই। উফ! পাগল বানিয়ে ফেলছিল একদম আমাকে। শেষে আমিও আর কি করবো? বাধ্য হয়েই নিয়ে এলাম।
-আমি এখানে আছি সেটা জানলি কি করে? আর তুই জিশানকে নিয়ে এই বাড়িতে কি করে এলি?
জিহান আরো কত কি জিজ্ঞেস করছে মুগ্ধাকে সেসব নীলার কান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না। মুগ্ধার দৃষ্টি একটা ঘটনাটাতেই আটকে গেছে। একটা বছর ছয়েকের ছেলে মুগ্ধার পাশ কাটিয়ে ছুটে এসে জিহানকে জড়িয়ে ধরে যেন খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছে। আর ছেলেটা ছোট্ট একটাই শব্দ বলেছে। যে শব্দটা শুনতেই নীলার সমস্ত দুনিয়াটাই যেন ওলোটপালট হয়ে গেছে একনিমিষেই। ছোট্ট ছেলেটা জিহানকে জড়িয়ে ধরে একটা কথাই বলেছে।
'পাপা।'