অবেলার অভিলাষ - পর্ব ০৬ - শারমিন আক্তার সাথী - ধারাবাহিক গল্প


     মে‌সেসটা ছি‌লো,
‌প্রিয় অভিলাষী,
                প্রথ‌মে জন্ম‌দি‌নের অনেক অনেক অভিনন্দন। তু‌মি কি জা‌নো? আজ থে‌কে ঠিক ২২ বছর আগে তু‌মি পৃ‌থিবী‌তে এসে পৃ‌থিবীটা‌কে ধন্য ক‌রে‌ছি‌লে? কারন তু‌মি পৃ‌থিবী‌তে না আস‌লে পৃ‌থিবী তোমার মত অভিলাষী‌কে কি ক‌রে পে‌তো? আর আমি-------- থাক সেটা নাহয় অন্য কোন তিন বল‌বো।

‌তোমার মত একটা উদ্ভট গেম আমার মাথায় আস‌ল। প্র‌তিটা মানু‌ষের বয়স উল্টা‌লে তার বয়স কত হয়? সে হিসা‌বে তোমার বয়স যতই উল্টা পাল্টা করিনা‌ কেন ২২ ই থা‌কে। আর আমার বয়স উল্টা‌লে দাদার বয়স হ‌য়ে যায় ৭২ হা হাহা। বাই দ্যা ওয়ে তু‌মি‌ তো এখন ম্যা‌চিওর কিন্তু চাল চলন পুরাই ষোড়শীর মত। ‌কিন্তু এই ২২ বছ‌রের ষোড়শী আচরনের মে‌য়েটা যে কা‌রো ম‌নে অনায়া‌সে জায়গা ক‌রে নি‌তে পারে।

‌তোমার সা‌থে থে‌কে থে‌কে বেশ কিছু‌দিন ধ‌রে তোমার কিছু উদ্ভট অভ্যাস আমার ভিতর এসে‌ছে। যেমন সে‌দিন একটা ইঁদুর ধ‌রে তার লেজে সুতো বেঁ‌ধে ইঁদুরটা‌কে গা‌ছের সা‌থে বেঁ‌ধে রে‌খেছিলাম। আমা‌দের বাসার পোষা বিড়াল মিশু‌ন এর কান ছিদ্র ক‌রে কা‌নে দুল দি‌য়ে দি‌ছি। ওর নাক ছিদ্র করার চেষ্টা ক‌রে ব্যার্থ হয়ে‌ছি। মিশুনের হাত পা‌য়ে ছোট বোন‌কে দি‌য়ে নেইল পো‌লিশ দি‌য়ে দি‌য়েছিলাম। ‌প‌রে মা আমা‌কে বকা দি‌য়ে বলল, মিশুন না‌কি ছে‌লে বিড়াল ওকে কেন মে‌য়েদের মত সাজালাম। বেচারা মিশুন ছে‌লে হ‌য়ে কান ছিদ্র ক‌রে কা‌নে দুল নি‌য়ে হা‌ঁটে। মিশু‌নের গলায় বড় একটা ঘন্টা লা‌গি‌য়ে দি‌য়েছি। সারা দিন ঢং ঢং ক‌রে ঘ‌রে ঘু‌রে বেড়া‌তো। কিন্তু বাবা রাগ ক‌রে ঘন্টাটা খু‌লে ফে‌লে দিয়ে‌ছে। তার ঘু‌মে সমস্যা হয় ব‌লে।

তোমার জন্য একটা সুখবর আছে। তোমার পোষা বেড়াল ইতুর জন্য তু‌মি যে‌হেতু ছে‌লে মা‌নে বিড়াল বর খুঁজ‌ছো তাই ভাবলাম আমা‌দের মিশুন যখন ছে‌লে তখন মিশুনের সা‌থে ইতুর বি‌য়ে হ‌লে কেমন হ‌বে? ও হ্যাঁ মিশুন তোমার ইতুর বাচ্চা ইতুন আর তুত‌নের দা‌য়িত্ব নি‌তে রা‌জি। আস‌লে মিশুন খুব বড় মনের অধিকা‌রি ঠিক তার মা‌লিক মা‌নে আমার মত। তো দে‌বে বি‌য়ে তোমার ইতুর সা‌থে আমার মিশুনের বি‌য়ে? সে হিসা‌বে আমরাও একে অপ‌রের বেয়াই বেয়ান হব! মা‌নে আত্মীয়তা বাড়‌বে আর‌কি।

তনয়া ‌মেসেসটা এ পর্যন্ত প‌ড়ে পেট চে‌পে হাস‌ছে। হাস‌তে হাস‌তে ওর পেট ব্যাথা কর‌ছে। নি‌জে‌কে কোন মতে সাম‌লে আবার পড়া শুরু কর‌ল,

‌দে‌খো ইদা‌নিং আমি এমন অনেক উদ্ভট কাজ ক‌রি। কেন ক‌রি জা‌নিনা? ত‌বে কথায় আছে সৎ স‌ঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ স‌ঙ্গে সর্বনাশ। আর আমি পড়‌ছি উদ্ভট স‌ঙ্গে। তোমার সব কিছু ভাইরা‌সের মত আমার ভিতর ঢুক‌ যা‌চ্ছে। কিভা‌বে বের কর‌বো তার উপায় জানা নেই। হয়ত সারা জীব‌নেও বের হ‌বেনা। ‌অবশ্য আমি বের কর‌তেও চাইনা। আমি চাই আমার এ অভ্যাসগু‌লো সারা জীবন থাকুক।

‌দে‌খো মজা অনেক হ‌য়ে‌ছে। এবার সি‌রিয়াস হ‌য়ে তোমায় বল‌ছি, তোমার জীব‌নের সব বাঁধা বিপ‌ত্তি কা‌টি‌য়ে সাম‌নে এগি‌য়ে চল। সবসময় তোমার সা‌থে থাকার চেষ্টা কর‌বো। তোমার সব ইচ্ছা পূরন হোক আর তু‌মি হ‌য়ে ওঠো অভিলাষী। তোমার জন্য অনেক শুভ কামনা রইল। কিছু গি‌ফ্টের পিক পাঠালাম। আশকরি তোমার পছন্দ হ‌বে। আর হ্যাঁ কাল মা‌নে আজ সন্ধ্যায় তোমার জন্ম‌দি‌নে দেখা হ‌চ্ছে। আল্লাহ্ সবসময় তোমার পা‌শে থাকুক। শুভ জন্ম‌দিন। 

                                                        আয়াত

তনয়া মেসেসটা প‌ড়ে মি‌ষ্টি একটা হা‌সি দি‌য়ে, গিফ্টগু‌লো দেখ‌তে নি‌লো। প্রথম গিফ্টদু‌টো হ‌লো দু‌টো শা‌ড়ি, একটা কলা পাতা র‌ঙের আরেকটা কমলা র‌ঙের। শা‌ড়ির হালকা কাজ গু‌লো দারুণ লাগ‌ছে। কিন্তু শে‌ষের পিকটা দে‌খে তনয়ার মুখটা গম্ভীর হ‌য়ে গে‌লো। আয়া‌তের উপর রাগ উঠ‌তে লাগ‌লো। তাই ফোনটা রে‌খে রা‌গে গজগজ কর‌তে কর‌তে ঘু‌মি‌য়ে গে‌লো। 

১৫!!

     সকাল বেলা আয়াত ভাবল, যাবার আগে তনয়া‌কে তনয়ার গিফ্টগু‌লো দি‌য়ে যাবে। কাল রা‌তে মেঘার ম‌নে ক‌রি‌য়ে দেবার পর মেঘা আর আয়াত দুজন মি‌লে তখন শ‌পিং এ যায়, গি‌য়ে দুজন মি‌লে ঐ গিফ্টগু‌লো‌কে পছন্দ ক‌রে কি‌নে। দরজায় বেল বাজা‌তেই র‌শ্মি দরজা খুলল। আয়াত‌কে দে‌খে ভিত‌রে বসতে বলল। র‌শ্মি জরু‌রি একটা কা‌জে পা‌শের বাসায় গে‌লো, আয়াত‌কে বলল, স্যার প্লিজ বসুন আমি দশ মিনি‌টের ম‌ধ্যে আস‌ছি। আয়াত চুপচাপ না ব‌সে তনয়া‌কে খুঁজ‌তে চার দিক তাকা‌তে লাগ‌লো। কিন্তু তনয়া‌কে দেখ‌ছেনা।

আয়াত চারপাশ তা‌কি‌য়ে বা‌কি রুম দু‌টো‌তে উকি দি‌য়ে দে‌খে একটা রু‌মে তনয়া ব‌সে আয়া‌তের দি‌কে তিক্ষ্ণ নজ‌ড়ে তা‌কি‌য়ে আছে। গাল ফুলা‌নো, দাত দি‌য়ে আঙুল কাম‌রে কি যে‌নো ভাব‌ছে? ‌তনয়ার কো‌লের ম‌ধ্যে একটা বিড়াল তার বাচ্চাসহ ব‌সে আছে। আয়াত তনয়া‌কে দেখে বলল,

__কী ব্যাপার ওভা‌বে তা‌কি‌য়ে আছো কেন?

তনয়া বিড়াল তিনটা‌কে কোল থে‌কে নি‌চে রাখ‌লো। তারপর দা‌ড়ি‌য়ে আয়া‌তের কা‌ছে এসে আয়া‌তের শা‌র্টের কলার ধরে নি‌জের অনেক কা‌ছে এনে বলল,
__আমা‌কে ঐ ধর‌নের গিফ্ট পাঠা‌নোর সাহস কী ক‌রে হল আপনার?

__আয়াত কিছুটা থতমত খে‌য়ে বলল, আরে কোন ধর‌নের গিফ্ট? দু‌টো শা‌ড়ি আর একটা থ্রী পিছ, এগু‌লো কি খারাপ গিফ্ট না‌কি?

__তনয়া আয়া‌তের কলারটা আরেকটু শক্ত ক‌রে ধ‌রে বলল, কি‌সের থ্রী পিচ? আপ‌নি আমায় দু‌টো শা‌ড়ি আর একটা নাইট টি পা‌ঠি‌য়ে‌ছেন, ওমন পাতলা জা‌লের মত ফিন‌ফি‌নে নাই‌টি আমি পর‌বো? আ‌মি কি আপনার বি‌য়ে করা বৌ না‌কি যে, অমন গিফ্ট দি‌ছেন!

__‌কিসের নাইট টি! আমি কোন নাইট টি পাঠাই‌নি।

__ওহ রি‌য়ে‌লি! তনয়া আয়া‌তের কলার ছে‌ড়ে দি‌য়ে নি‌জের মোবাইল থে‌কে আয়াত‌কে গতকাল রা‌তের পিকগু‌লো দেখা‌লো। আয়াত শা‌ড়ি দু‌টোর নি‌চে নাইট টি এর পিকটা দে‌খে ভূত দেখার মত চম‌কে উঠ‌ল। নি‌জেই বুজতে পার‌ছেনা এটা কিভা‌বে আসলো! তনয়া বলল, থ্রী পিচটা কেমন স্যার?

__‌বিশ্বাস ক‌রো তনয়া। এই কিভা‌বে‌ এল বুঝ‌তে পার‌ছিনা। ওয়েট আমার ফোন চেক কর‌তে দাও। আয়াত ফোন চেক ক‌রে বলল, ইট'স এ বিগ মিস‌টেক তনয়া। প্লিজ ডোন্ট মিসআন্ডাসট্যান্ড মি।
আস‌লে গতকাল রা‌তে আমার বন্ধু তার স্ত্রীর জন্য কেনা নাই‌টি পিক ওর স্ত্রী‌কে পাঠা‌তে গি‌য়ে আমায় পা‌ঠি‌য়ে দি‌য়ে‌ছে। আমি তখন তোমায় পিক পাঠা‌চ্ছিলাম কিন্তু ভুল বসত আমি শা‌ড়ি দু‌টোর সা‌থে তোমায় ঐ নাইট‌টি এর পিক পা‌ঠি‌য়ে দিয়ে‌ছি। দে‌খো আমার বন্ধুর মে‌সেস ও প‌রে স্য‌রি বল‌ছে যে, পিকটা ও ভু‌লে পাঠাই‌ছে। আর তোমার জন্য কেনা গিফ্টও আমি নি‌য়ে আস‌ছি। কারন আমি চাই সন্ধ্যা বেলা তু‌মি সেখান থে‌কে একটা ড্রেস প‌রো। বিশ্বাস না হ‌লে গিফ্ট বক্স খু‌লে দে‌খো। স্য‌রি তনয়া। প্লিজ মাইন্ড ক‌রো না।

আয়া‌তের সব কথা শু‌নে, মেসেস দে‌খে তনয়া মান‌লো যে ঐ মে‌সেসটা ভু‌লে আস‌ছে। তনয়া ভাব‌ছে মা‌ঝে মা‌ঝে আমিও তো ক‌য়েকবার ভু‌লে এক জ‌নের মেসেস  অন্যজন‌কে দি‌ছিলাম। তো স্যা‌রেরও ভুল হ‌তে পা‌রে।

তনয়া বলল,
__ইট'স ওকে স্যার। আমি বুঝ‌তে পার‌ছি। আপ‌নি ভু‌লে কর‌ছেন। আর হ্যাঁ আপনার সা‌থে বেয়াদপি করার জন্য স্য‌রি।

__ইট'স ওকে। (হা‌সি দি‌য়ে)

__স্যার মিট মাই বে‌বি'স ইতু, আর ইতুর দুই বাচ্চা ইতুন আর তুতন। আয়া‌তের কো‌লে বিড়াল গু‌লো দি‌য়ে তনয়া ইতু‌কে মা‌নে বিড়াল‌কে উদ্দেশ্য ক‌রে বলল, ইতু ইনি তোমার শ্বশুর আব্বা। শ্বশুর আব্বা‌কে কদমবু‌চি কর?

__এ্যা! (আয়াত চোখ বড় বড় ক‌রে তনয়ার দি‌কে তা‌কি‌য়ে আ‌ছে।) তারপর বলল, শ্বশুর আব্বা মা‌নে?

__আ‌রে আপ‌নিই তো আপনার বাসার বিড়‌াল মিশুনের সাথে ইতুর বি‌য়ের প্রস্তাব পাঠা‌লেন। তো আমি প্রস্তা‌বে রা‌জি। এখন ইতু আর মিশুনের বি‌য়ে হ‌লে আপ‌নি তো ইতুর শ্বশুরই হবেন তাইনা? শো‌নেন বি‌য়ে‌তে আমার কিছু শর্ত আছে।

__আয়াত বিস্ম‌য়ের চরম সীমায় গি‌য়ে বলল,কী?

__‌সেটা প‌রে লিস্ট ক‌রে ব‌লে দি‌বো। এখন চ‌লেন আপনা‌কে নাস্তা দি। 

__চ‌লো! 

তনয়া যাবার আগে, বিছানা থে‌কে ফোন নি‌তে গে‌লো, আয়াত হাঁটা দি‌বে কিন্তু ইতুনের সা‌থে হোচট খে‌য়ে তনয়া‌কে সহ বিছানায় পড়লো। বিছানায় পড়া পর্যন্ত ঠিক ছি‌লো কিন্তু তারপর যা হল। তা ঠিক নেই।

—————

       আয়াত তনয়া‌কে নি‌য়ে ‌বিছানায় পরার সময় ওদের অজা‌ন্তেই আয়া‌তের ঠোঁট আর তনয়ার ঠোঁ‌ট মি‌লে গে‌লো। তনয়া চোখ দু‌টো বড় বড় ক‌রে ফেলল। আয়া‌তের এমন ঘোর লাগ‌লো যে, ও কোথায় আছে কি কর‌ছে তার কোন হুশই নেই। ‌স্থির হ‌য়ে ওভা‌বেই তনয়ার গভীর কা‌লো চো‌খের দি‌কে তা‌কি‌য়ে আছে।

আর ওদি‌কে ইতু আয়া‌তের পি‌ঠে উঠে ম্যাও ম্যাও কর‌ছে। তনয়া কিছু বল‌বে তাও পার‌ছে না, কারন ওর ঠোঁট এখ‌নো আয়া‌তের দখ‌লে। তনয়া নি‌জের সর্বশ‌ক্তি দি‌য়ে আয়াত‌কে ধাক্কা দি‌য়ে উঠা‌তে নি‌লো। তনয়ার ধাক্ক‌ায় আয়াত স‌ন্নিধ্য পে‌য়ে আয়াত ত‌রিঘ‌রি ক‌রে উঠে দাড়া‌লো। তনয়া উঠে নি‌জের ঠোঁট মুছ‌তে লাগ‌লো। মন চা‌চ্ছে আয়াত‌কে কাঁচা চি‌বি‌য়ে খে‌য়ে ফেল‌তে। আয়া‌তে যেমন লজ্জা কর‌ছি‌লো তেমন ভয়। এমন একটা ঘটনা ঘট‌বে তা কল্পনাও কর‌তে পা‌রে‌নি তাই লজ্জা কর‌ছে। আর ভয় কর‌ছে এটা ভে‌বে তনয়া এই ঘটনার জন্য না আবার আয়াত‌কে ভুল বু‌ঝে চাক‌রি ছে‌ড়ে দেয়। বা আয়া‌তের থে‌কে দূ‌রে চ‌লে যায়। তাই মুখ কাচুমাচু ক‌রে তনয়া‌কে বলল,

__‌দে‌খো যেটা হ‌য়ে‌ছে সেটা একটা এক‌সি‌ডেন্ট। আমি স‌ত্যি এমন কিছু কর‌তে চাইনি। আস‌লে কিভা‌বে কি হল, বুঝ‌তে পার‌ছিনা।

তনয়া কী বলবে ভে‌বে পা‌চ্ছেনা। কারন আয়াত যে ইচ্ছা ক‌রে এমন কর‌বে না তা তনয়া খুব ভা‌লো ক‌রে জা‌নে। তাই আয়াত ইচ্ছা করে এমনটা ক‌রে‌নি। তাই কিছু না ব‌লে বলল, চলুন নাস্তা কর‌বেন। 
আয়াত কোন কথা না ব‌লে, শুধু তনয়া‌কে অনুসরন করে টে‌বি‌লে বসল। তনয়া ওর মা‌য়ের বানা‌নো পিঠা আয়াত‌কে খে‌তে দি‌লো। এর ম‌ধ্যে র‌শ্মিও আস‌লো। 

__র‌শ্মি বলল, স্যার তনয়ার মা বা‌নি‌য়ে‌ছে। আন্টির হা‌তের পিঠা ইজ দ্যা বেস্ট। আয়াত‌ পিঠা মু‌খে দি‌য়ে তনয়া‌কে কিছুটা ক্ষেপা‌নোর জন্য বলল,

__‌কিন্তু র‌শ্মি পিঠাটায় মি‌ষ্টি কম।

__‌কী বল‌ছেন স্যার? তনয়া মি‌ষ্টি পছন্দ ক‌রে তাই আন্টি পিঠায় অনেক মি‌ষ্টি দেয়। মি‌ষ্টির কার‌ণে আমি তো তেমন খে‌তেই পা‌রি‌নি। 

__আয়াত বলল, র‌শ্মি শোন! যখন তু‌মি সব থে‌কে খা‌টি মধু খা‌বে তারপর তোমার কা‌ছে পৃ‌থিবীর সব মি‌ষ্টি পান‌সে লাগ‌বে তাই নয়‌কি? কথাটা ব‌লে তনয়া  দি‌কে তাকা‌লো। তনয়া রা‌গে ফুল‌ছে।

__র‌শ্মি বলল, স্যার ত‌বে কি আপ‌নি মধু খে‌য়ে‌ছেন।

__আয়াত ঠোঁ‌টের কো‌নে দুষ্ট হা‌সি টে‌নে বলল হ্যাঁ। তনয়া তখনও রা‌গে ফুলছে। আয়াত ভাবল আরেকটু রাগা‌নো যাক। তাই র‌শ্মি‌কে জি‌জ্ঞেস করল, র‌শ্মি এই পিঠার নাম কি?

তনয়া বুঝ‌তে পার‌ছে পিঠার নাম শুন‌লে আয়াত আরো দুষ্ট‌মি হা‌সি দি‌বে। তাই তনয়া দা‌ঁতে দাঁত চে‌পে বলল,
__নকশী পিঠা।

__আয়াত দুষ্ট হা‌সি দি‌য়ে বলল, আরে নকশী পিঠা তো প্রায় সব সাজা‌নো বা সুন্দর ডিজাইন করা পিঠা‌কেই বলা হয়। আমি বল‌তে চা‌চ্ছি এই পিঠাটাকে আমা‌দের ব‌রিশাল অঞ্চ‌লে কি না‌মে ডাক?

__র‌শ্মি কিছু না বু‌ঝেই বলল, আরে স্যার আপ‌নি জা‌নেন না এটা‌কে জামাই পিঠা ব‌লে।
তনয়া ম‌নে ম‌নে র‌শ্মি‌কে একগাদা গা‌লি দি‌য়ে বলল, কু‌ত্তি মুখটা বন্ধ রাখ‌তে পার‌লিনা। 

__আয়াত হা হা ক‌রে হে‌সে বলল, তা জামাই পিঠা কেন বলা হয়?

__আ‌রে স্যার এটাও জা‌নেন না! আমা‌দের ব‌রিশাল অঞ্চ‌লে জামাই‌কে যত ধর‌নের পিঠা দি‌য়েই আপ্যায়ন করা হোক না কেন, সেসব পিঠার আইটে‌মে জামাই পিঠা থাক‌বেই থাক‌বে। অন্য অন্য অঞ্চ‌লে একে অন্য না‌মে ডাকে।

__আয়াত আরেকটু দুষ্ট‌মি ক‌রে বলল, তা আমা‌কে কেন এ পিঠা খে‌তে দিচ্ছো? আমি কি কা‌রো জামাই না‌কি? তনয়ার দি‌কে তাকা‌তেই দে‌খে তনয়ার রা‌গে চোখ মুখ লাল হ‌য়ে উঠ‌লো।
আয়াত ভাবল আজ‌কে অনেক রাগাই‌ছি আজ থাক। আরও বেশি হ‌লে, তখন তো শা‌র্টের কলার ধরছি‌লো এবার গলা চে‌পে ধর‌বে। এ মে‌য়ে‌কে বিশ্বাস নেই। 

আয়াত তারাতা‌রি খে‌য়ে তনয়ার কাছ থে‌কে বিদায় নি‌য়ে, র‌শ্মি‌কে নি‌য়ে অফি‌সের উদ্দে‌শ্যে রওনা দিলো। আয়াত গা‌ড়ি ঠিকই চালা‌চ্ছে কিন্তু বারবার তনয়া‌র সা‌থে করা এক‌সি‌ডেন্ট এর কথা ভাব‌ছে আর নি‌জে নি‌জে মিট মিট হাস‌ছে। র‌শ্মি সেটা দে‌খে বলল,

__স্যার আপনি যে পু‌রোপু‌রি প্রে‌মে পড়ছেন তা‌তে কোন সন্দেহ নেই।

__‌কিভা‌বে বুঝ‌লে?

__এই যে কার‌ণে অকার‌ণে পাগ‌লের মত হাস‌ছেন। 

__হা হা হা হা।

১৬!!

      সন্ধ্যা ৭:৩০,
র‌শ্মির ফ্ল্যা‌টে তনয়ার প্রায় সব বন্ধুরা, দু ভ‌াই ভা‌বি, বন্ধুরা সবাই এসে গে‌ছে। শুধু আয়াত আসে‌নি। তানভী টুকটাক কাজ দেখ‌ছে। লোকজন বল‌তে তনয়ার দুজন বান্ধবী ‌রিমা আর র‌শ্মি আর দু‌টো ছেলে বন্ধু আর তানভীর পাঁচজন বন্ধু। বা‌কি তা‌মিম, তান‌ভির আর লা‌বিবা। 

তান‌ভির আর লা‌বিবার মে‌য়ে তৃ‌প্তি তার ফু‌পি‌কে পে‌য়ে আর কা‌রো কা‌ছে যা‌চ্ছেনা। তনয়া বারবার দরজার দি‌কে তাকা‌চ্ছে। তানভী সেটা দে‌খে বলল, 

__‌কিরে কা‌কে খুঁজ‌ছিস?

__কই কাউ‌কে না‌তো?

__‌তানভী মুচ‌কি হে‌সে বলল, ওহ তো‌কে একটা কথা বল‌তে ভু‌লে গে‌ছিলাম আয়াত ভাইয়া ফোন কর‌ছি‌লো, সে না‌কি আস‌তে পার‌বেনা। 

তানভী এর মুখ থে‌কে এমন কথা শুনে তনয়ার মুখটা ছোট হ‌য়ে গে‌লো। তানভী সেটা দে‌খে মুচ‌কি হে‌সে অন্য দি‌কে চ‌লে গে‌লো। কারণ, তানভী তনয়া‌কে ক্ষেপাতে মিথ্যা বল‌ছে।
কিছুক্ষন পর আয়াত, মেঘা আর আয়া‌তের ভাই আয়াজ আসল। আয়াত‌কে দেখে তনয়ার মু‌খে চওড়া একটা হা‌সি ফু‌টে উঠ‌লো। ‌কিন্তু আয়াত তনয়া‌কে দে‌খে হা হ‌য়ে রইল।

তনয়া আয়া‌তের দেয়া কলাপাতা র‌ঙের শা‌ড়িটা পড়‌ছে সা‌থে হাত ভ‌র্তি রং বের‌ঙের কা‌চের চু‌ড়ি, ঠোঁ‌টে হালকা গোলা‌পি লিপ‌স্টিক, চুলগু‌লো ইয়া বড় একটা খোপা করা, খোপায় কিছু হাসনাহেনা ফুল জরা‌নো। তনয়া‌কে দে‌খে আয়া‌তের মন চা‌চ্ছে তনয়ার খোপায় নাক ডু‌বি‌য়ে চু‌লের গন্ধ নি‌তে, আর বল‌তে হাসনা‌হেনা ফু‌লের চে‌য়ে তোমার চু‌লের ঘ্রান মাতাল বে‌শি ক‌রে। কিন্তু মু‌খের কথা মু‌খেই র‌য়ে গেলো। মেঘার গু‌তোয় ধ্যান ভাঙলো। মেঘা বলল,

__হাদারামের মত তা‌কি‌য়ে না থে‌কে গি‌য়ে কথা বল। 

কিছু একটা দে‌খে তানভী এর চোখ আট‌কে গে‌লো। হ্যাঁ মেঘার চোখ দে‌খে, কোন মে‌য়ের চোখ এত সুন্দর হয় ব‌লে তানভী র জানা ছি‌লো না। ঘন ক‌ালো কৃষ্ণ চোখ। চো‌খের পাপ‌ড়ি গু‌লো এত ঘন আর লম্বা যে ম‌নে হ‌চ্ছে পাপ‌ড়ির ভা‌ড়েই চোখ বন্ধ হ‌য়ে যা‌বে। মেঘ‌া সবসময় সাধারন ভা‌বে চল‌তে পছন্দ ক‌রে। তাই হালকা গোলা‌পি সাদার মিশ্র‌নে তৈরী একটা ড্রেস প‌রে আস‌ছে। তা‌তে শ্যামাবতী‌কে অসাধারন লাগ‌ছে‌।

তানভীর আগে কখ‌নো কাউ‌কে দে‌খে এমন ঘোর লা‌গে‌নি। যতটা কৃষ্ণ চো‌খের ‌মে‌য়ে‌টি‌কে দে‌খে লাগ‌ছে। 

‌মেঘা‌কে দে‌খে তানভীর থে‌কে বেশি অবাক হয় তনয়া। কারন সেই ঘটনার পর আর মেঘার সাথে কথা বা দেখা হয়নি। মেঘা তনয়ার কা‌ছে এসে বলল,

__‌কী তনয়া আপু চিন‌তে পার‌ছো?

__মেঘা! তু‌মি এখা‌নে? তনয়া মেঘা‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধরে ব‌লে কেমন আছো? এখা‌নে কিভা‌বে?

__আ‌মি ভা‌লো তু‌মি কেমন আছো? 

__হ্যাঁ ভা‌লো। জা‌নো তোমা‌কে দে‌খে খুব অবাক লাগ‌ছে।

__আস‌লে তোমার বস আয়াত আমার বড় ভাইয়া। 

__‌রি‌য়ে‌লি! কই স্যার আগে তো কখ‌নো ব‌লেনি।

__হয়‌তো তু‌মি জান‌তে চাও‌নি। 

তারপর দুজন মি‌লে কথা বল‌ছে। তানভী তনয়ার কা‌ছে এসে বারবার কা‌শি দি‌চ্ছে। তনয়া সেটা দে‌খে বলল, 
__‌কি‌রে যক্ষা রোগীর মত কাশ‌ছিস কেন? যা পা‌নি খা।

তানভী কোন উপায় না পে‌য়ে নি‌জেই মেঘার দি‌কে হাত বা‌ড়ি‌য়ে বলল,
__হাই আমি তানভী। তনয়ার ছোট ভাই।

__হাই আই এ্যাম মেঘা। আয়াত ভাইয়ার ছোট বোন।

__আপনি আয়াত ভাইয়ার বোন! ওহ মাই গড। আয়াত ভাইয়ার মত ভা‌লো ছে‌লে পৃ‌থিবী‌তে আর নেই। চলুন আপনা‌কে ডে‌কো‌রেশন দেখাই। হাঁট‌তে হাঁট‌তে কথা বলতে বেশ মজা লা‌গে। মেঘা একটু ইতস্ত কর‌লেও তানভীর সা‌থে কথা ব‌লে মজা পে‌য়ে ওর সা‌থে হাঁট‌তে হাঁট‌তে কথা বল‌তে লাগ‌লো। তানভীর কান্ড দে‌খে র‌শ্মি আর তনয়া হা হ‌য়ে রইল। র‌শ্মি তনয়া‌কে বল‌ছে,

__‌দেখ কতবড় হারা‌মি। একটু আগে পর্যন্ত বল‌তো আয়াত স্যার‌কে এত সহ‌জে বিশ্বাস করা ঠিক না অথচ মেঘার সাম‌নে ফুটব‌লের মত পা‌ল্টি খে‌লো।

সবাই যে যার মত আনন্দ কর‌লেও আয়াত আনন্দ কর‌তে পার‌ছেনা। কারন ওখা‌নে তা‌মিম আছে। 

তা‌মিম আয়া‌তের সাম‌নে এসে দা‌ড়ি‌য়ে বলল,
__ছা‌দে চল তোর সা‌থে কথা আছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন