__আসলে স্যার?
__হ্যাঁ বলো রশ্মি! দেখো ভয় পেয়ো না। আমি আমাদের পারসোনাল প্রবলেম তোমার জবে টানবো না। তাছাড়া তুমি খুব ভালো করে জানো আমি তোমায় আমার ছোট বোনের মত স্নেহ করি। সেই ভরসায় সেদিন তোমার কাছে তনয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি যখন বললে, তনয়া বিবাহিত! তখন আমার মনের অবস্থা যে, কি হয়েছিলো তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না।
ভালোবাসা নামক ব্যাধিটা আমাকে জীবনে কখনো আক্রমন করেনি। কিন্তু এক মাস আট দিন আগের ঘটনায় তনয়ার ভালোবাসা নামক ব্যাধিতে আমি আষ্টে পিষ্টে জড়িয়ে গেছিলাম। কিন্তু ওর বিয়ের কথা শুনে অনেক কষ্ট হয়েছিলো। কেন মিথ্যা বললা রশ্মি?
__তার আগে আপনি বলুন আপনি তনয়াকে কিভাবে আর কেন ভালোবাসলেন? কারন লাভ এ্যাট ফাস্ট সাইড হওয়ার মত মানুষ আপনি নন! কোন মানুষকে তার রূপ থেকে তার প্রেমে পড়ার মানুষও নন। কোথাও না কোথাও তনয়ার গুন আর উন্নত মানুসিকতা দেখেই আপনি ওকে ভালোবাসছেন। সেটা কিভাবে এবং কবে?
__হ্যাঁ ঠিক বলছো। আমি ওর রূপে নয় গুনের প্রতি আর্কষিত হয়েছি। কিন্তু সে ঘটনা পরে কোন একদিন বলব। জানো তনয়াকে কত খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। কিছুদিন আগে তোমার ল্যাপটপের থেকে কিছু ফাইল চেক করতে গিয়ে তোমার আর তনয়ার ছবি দেখলাম। তারপর তখনই সরাসরি তোমায় বলে দিলাম বিয়ে করলে তনয়াকে করবো। কিন্তু তুমি বললে, তনয়া বিবাহিত। তারপর তো তনয়ার আশা ছেড়ে লাইফে মুভ অন করতে চাচ্ছিলাম। তখন গতকাল তনয়ার সাথে আবার পরিচয় হল। আর সত্যিটা জানলাম।
রশ্মি কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল,
__স্যার সেদিন যখন তনয়ার বিষয়ে জানতে চাইলেন তখন অলরেডি তনয়ার এনগেজমেন্ট হয়ে গেছিলো। তনয়াও বিয়েতে রাজি ছিলো। আপনি যেমন আমায় ছোট বোনের মত স্নেহ করেন আমিও আপনাকে বড় ভাইয়ের মতই সম্মান করি। তাই চাইনি আপনি কষ্ট পান। যদি বলতাম তনয়ার এনগেজমেন্ট হয়েছে, তখন কোথাওনা কোথাও আপনার মনে তনয়াকে পাবার ক্ষীন আশা থাকতো। যেটা আপনার মনকে পোড়াতো। তাই বলছি তনয়া বিবাহিত। যাতে ও বিবাহিত জেনে আপনি নতুন করে নিজের জীবনে এগিয়ে যান। বিশ্বাস করুন তনয়ার জন্য আপনার থেকে পারফেক্ট লাইফ পার্টনার আর কেউ হতো না। কিন্তু তনয়ার বাবা খুব একরোখা টাইপ সে যেটা বলে সেটাই করে। ছেলে মেয়ের মতামতকে সে কেয়ার করে না। তাই আপনি তখন প্রস্তাব পাঠালে উল্টো অপমানিত হতেন। স্যরি স্যার। আমি আপনাকে নিজের অজান্তেই খুব কষ্ট দিয়ে ফেলছি। প্লিজ ক্ষমা করে দিন।
__ইট'স ওকে রশ্মি। তুমি যা করেছ আমার কথা ভেবেই করেছ। এতে আমার রাগ করার মত কিছু হয়নি। তনয়া কি এখন তোমার কাছেই আছে?
__হ্যাঁ।
__ওহ।
__স্যার একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
__হ্যাঁ।
__আপনি কী এখনো তনয়াকে? মানে গতকাল রাতে ওর প্রতিবন্ধীতার কথা জেনেও, মানে কী বলতে চাইছি বুঝতে পারছেন?
__আয়াত মৃদু হেসে বলল কেন?
__আয়াতের হাসিটা দেখে রশ্মি বলল, স্যার তনয়া একটা জব খুঁজছে। আপনি কি কোন হেল্প করতে পারেন?
__আমাদের বসের মানে বাবার পি এ এর সিট খালি আছে। তাতে তনয়া এডজাস্ট করতে পারবে তো?
রশ্মি আর আয়াত একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসছে। হাসি থামিয়ে রশ্মি বলল,
__তনয়াকে নিজের কাছে টানার আইডিয়াটা বেস্ট স্যার। এই সুযোগে আপনার বাবার ও প্রিয় পাত্রী হয়ে উঠবে। কিন্তু এসব কথা তনয়া জানলে আমাকে আর আপনাকে একসাথে মঙ্গল গ্রহে পাঠাবে।
__হা হা হা। তোমার বুদ্ধির তারিফ করতে হয়। পরশু তনয়াকে অফিসে এসে এ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার নিয়ে যেতে বলো।
__হুমম। তনয়ার কপালটা বেশ ভালো। ঘুষ ছাড়াই চাকরি পেয়ে গেলো। কিন্তু এত সব কিছু করার জন্য আমার তো ঘুষ চাই।
__কী?
__এই যে, মাঝে মাঝে আপনাকে স্যারের বদলে দুলাভাই ডাকবো।
__ওকে মিস রশ্মি বাট সেটা আপনার বান্ধবীকে বিয়ে করার পর বা অফিসের বাইরে। অফিসে আমি আপনার বস। মনে থাকবে তো?
__জি স্যার।
০৫!!
রাতে রশ্মি বাসায় ঢুকতেই সুন্দর খাবারের ঘ্রানে সোজা রান্না ঘরে চলে গেলো। রশ্মি বুঝতে পারলো, তনয়া রান্না করছে। তনয়া রান্না করতে খুব পছন্দ করে। মেয়েটার এত গুন যে, ও কি কি করতে পারেনা তা দেখে কনফিউজ হয়ে যাওয়া লাগে। রশ্মি নিজের ঘর দেখে পুরো অবাক। পুরো ঘর সুন্দর করে সাজানো, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, ওর জামাকাপড় গুলো সব ধুয়ে ইস্ত্রি করে টেবিলের উপর রাখা। রুমে গিয়ে দেখে তনয়া ফোনে ডোরেমন কার্টুন দেখছে আর হা হা করে হাসছে। রশ্মি রাগ করে বলল,
__তুই কি এ বাসার কাজের লোক নাকি যে, বাসার সব কাজ করতে গেলি। এ গুলো আর কখন করবি না।
__আরে দোস্ত রাগ করিস কেন? বাসায় একা একা বোর হচ্ছিলাম ভাবলাম তোর ঘরটা ঘুছিয়ে ফেলি। ঘর গুছিয়ে কাপড় গুলো ওয়াশিং মেশিনে কেচে দিলাম, দেখলাম এখনো হাতে অনেক সময়। তারপর জামাগুলো ইস্ত্রি করে রান্না করলাম। তারপরও হাতে অনেক সময় ছিলো। দেখ তোর ফ্রিজে কোন সবজি ছিলো না, তাই মাছ ভাজি, গরুর মাংসের ঝাল ভূনা, আর ডাল রান্না করলাম। এতে চলবে?
__চলবে না পুরো দৌড়াবে! কিন্তু এমন আর কখন করবি না। ঠিক আছে?
__হুমম ঠিক আছে।
রশ্মি তনয়া ফ্রেস হয়ে খেতে বসবে। এর মধ্যে রশ্মি তনয়ার জবের কথাটা তনয়াকে বলতে তনয়া খুশিতে পুরো লাফালাফি শুরু করলো। ওরা খাবার প্লেটে নিতে যাবে তখন দড়জার কলিং বেল বেজে উঠলো। রশ্মি দড়জা খুলে দেখে আয়াত। আয়াতকে দেখে রশ্মি বলল,
__স্যার আপনি এখানে?
__তোমার জন্য?
__কেন আমি কী করছি?
__তোমার ফোনটা তোমার ডেক্সেই ফেলে আসছিলে। তোমার বাবা কয়েকবার ফোন দিছিলো, তার নাকি তোমার সাথে খুব জরুরি কথা আছে। তাই ফোনটা দিতে এলাম।
__ওহ স্যরি স্যার। হয়তো ভুলে ফেলে আসছি। ভিতরে আসুন!
__আরে না না। বাসায় যেতে হবে।
__হ্যাঁ যাবেন তবে খেয়ে যাবেন। আমরাও কেবল খেতে বসছিলাম। আসেন বলছি। আর আজ তনয়া রান্না করছে। তনয়া কিন্তু দারুন রান্না করে। একবার খেলে বারবার খেতে চাইবেন।
রশ্মির জোড়ের কাছে হার মানলো আয়াত, ভিতরে গিয়ে দেখে তনয়া টেবিলে বসে সালাদ খাচ্ছে। আয়াতকে দেখে বলল,
__আরে আপনি? কি খবর? কেমন আছেন?
__হ্যাঁ ভালো আপনি?
__আমি সবসময় খুব ভালো থাকি।
তারপর তিনজন মিলে খাওয়া দাওয়া করে। আয়াত বলল,
__রশ্মি তুমি সত্যি বলছো। রান্নাটা অসাধারন ছিলো। দোয়া করলাম যে, রান্না করছে আল্লাহ্ তার কপালে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বরটাকে দেয়।
আয়াতের কথায় তনয়া কিছুটা লজ্জা পেলো।
তারপর, আয়াত রশ্মির সাথে অফিসের বিষয়ে কথা বলছিলো। তনয়া আয়াতের দিকে তীক্ষ্ণ নজড়ে তাকিয়ে ছিলো, তা দেখে আয়াত বলল,
__এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?
__আপনি দেখতে আর আপনার ভদ্রতা ঠিক আমার ইতুর মত।
তনয়ার কথা শুনে রশ্মি নড়েচড়ে বসে তনয়াকে ইশারায় চুপ থাকতে বলছে। কিন্তু তনয়া কি চুপ থাকার পাত্রী। সে বলছে,
__আমার ইতুটাও আপনার মত ফর্সা, ভদ্র, শান্ত শিষ্ট লেজ বিশিষ্ট্য।
__আয়াত মজা করে বলল, কিন্তু আমার তো লেজ নেই।
__আরে কথার কথা বললাম।
__ওহ! বাই দ্যা ওয়ে ইতু কে?
__আমার বিড়াল!
__হোয়াট? বিড়ালের নাম ইতু! আর আমি বিড়ালের মত দেখতে?
__আরে বড় ভাই, হাইপার কেন হচ্ছেন? বিড়ালের মত দেখতে বলেনি। বলছি, ইতুর মত ফর্সা আর ভদ্র। জানেন আমার ইতুটার কত কষ্ট!
__যেমন?
এদিকে রশ্মি তনয়াকে ইশারায় চুপ করতে বলছে। কারন রশ্মি জানে তনয়া এখন পৃথিবীর সবচেয়ে উদ্ভটতম গল্প বলবে। তাই চুপ করতে বলছে কিন্তু তনয়া সেদিকে কোন খেয়াল না দিয়ে বলল,
__জানেন, ইতুর না দুটো বাচ্চা আছে ইতুন, আর তুতন। কিন্তু ওদের বাবা নেই।
__ওদের বাবা কোথায় গেছে?
__আরে ইতুর বয়ফ্রেন্ড ছিলো পাশের বাসার বিড়াল নাম মন্টি। আবেগের বসে ইতু প্রেগনেন্ট হয় আর মন্টি ওকে ধোকা দিয়ে পালিয়ে যায়। বেচারি দুটো বাচ্চা নিয়ে অসহায় অবস্থায় আছে। এদিকে অন্য কোন বিড়াল ইতু আর ওর বাচ্চাদের দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না। কারন ইতু তো ভার্জিন না। আর ইতুর বাচ্চা দুটো অবৈধ তাই। কেউ কি ননভার্জিন স্ত্রী আর সাথে দুটো বাচ্চাতে গ্রহন করে বলুন।
তনয়ার কথা শুনে আয়াত চোখ এত বড় করে ফেললো যে, মনে হয় ওর চোখ দুটো চোখ থেকে খুলে নিচে পড়ে যাবে। লাইফে কোন দিন শুনেনি কেউ বিড়ালের ভার্জিনিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। বিড়ালের বাচ্চা বৈধ না অবৈধ তা বলছে। আয়াতের মুখের ভাষা যেনো ফুস হয়ে গেলো।
তনয়া আবার বলতে শুরু করলো,
__এখন ইতুর জন্য ছেলে খুঁজছি, মানে ছেলে বিড়াল। যে, ইতুর সব জেনেও ইতুর বাচ্চাদুটো সহ ইতুকে বিয়ে করবে। আপনি পেলে জানাবেন।
__আয়াত বলল, তনয়া আপনি জানেন, আপনি যে কোন মানুষকে পাগল করে দেয়ার অসাধারন ক্ষমতা রাখেন।
__রিয়েলি! ধন্যবাদ।
__আয়াত রশ্মিকে উদ্দেশ্য করে বলল, রশ্মি বোনরে আমার মাথার দুটো স্ক্রু ঢিলা হয়ে গেছে। বাকিদুটো পড়ে যাওয়ার আগে বাসায় যাই, সুস্থ থাকলে কাল দেখা হবে। শুভ রাত্রি। আল্লাহ্ হাফেজ।
__রশ্মি বলল, সাবধানে যাবেন। আল্লাহ্ হাফেজ।
আয়াত যেতেই রশ্মি বলল,
স্যারের মাথাটা এভাবে খারাপ না করলেই হতো না।
__যা বাবা আমি কি করলাম? সত্যি ঘটনা বললাম।
__হয়েছে হয়েছে, চল টিভি দেখি।
আয়াত গাড়ি চালাচ্ছে আর নিজে নিজে হা হা করে হাসছে। তনয়ার ইতুর কাহীনি মনে করে।
০৬!!
তনয়া টিভি দেখতে দেখতে বলল,
__জানিস রশ্মি, সকালে বাড়ি ফোন করছিলাম। ফোনটা দাদাভাই ধরছিলো। আওয়াজ বদলে কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দাদাভাই ধরে ফেলছে।
__তারপর! ভয় পেলো বলল রশ্মি।
__তারপর দাদাভাই বলল____
—————
__দাদাভাই বলল, বোন শোন আমার সাথে আওয়াজ বদলে কথা বলতে হবেনা। তুই কোথায় আছিস?
__স্যরি দাদাভাই মাফ করে দাও প্লিজ। আসলে দাদাভাই আমার কাছে আর কোন পথ ছিলো না। কি করতাম বলো?
জানিস তখন খুব ভয় পেয়ে কথাগুলো বলছিলাম। ভাবছিলাম দাদাভাই কি না কি বলে কিন্তু দাদাভাই বলল,
__আরে পাগলি ভয় কেন পাচ্ছিস? তুই একদম ঠিক কাজ করছিস। রিসাদকে আমারও পছন্দ ছিল না। কিন্তু বাবার মুখের উপর কিছু বলতে পারিনি। আমি মনে প্রাণে সবসময় চাইতাম তোর বিয়েটা যে কোন ভাবে বন্ধ হয়ে যাক। ভালোবাসা বিহীন সম্পর্ক কেমন তা আমি খুব ভালো করে জানি। তোর আর রিসাদের মধ্যে হয়তো কখনোই ভালোবাসা হতো না। রিসাদ তোকে ক্ষনিকের জন্য ভালোবাসলেও কদিন পর ঠিকই দূরে ঠেলে দিতো। তখন তোদের বিয়ে না ভাঙলেও তোদের সম্পর্কটা আমার আর লাবিবা মত হতো। একই রুমে বাস করা দুই প্রান্তের বাসিন্দা। আমি চাইনি আমার বোনটা বেঁচে থেকে জিন্দা লাশ হয়ে থাকুক।
বিশ্বাস কর বাচ্চা আমি তোর বিয়েটা আটকানোর অনেক চেষ্টা করেছি। আমি চাইনি আমাদের ঘরে আরেকটা তারভির আর লাবিবা তৈরী হোক। (তানভির তনয়ার দাদাভাইয়ের নাম আর লাবিবা তানভিরের স্ত্রী। ওদের দু বছরের একটা মেয়ে আছে, নাম লামিয়া সুলতানা তৃপ্তি)।
শোন তুই একদম ঠিক করছিস। হ্যাঁ হয়তো কিছুদিন সবাই তোর উপর রেগে থাকবে। কিন্তু ধীরে ধীরে মেনে যাবে। কিন্তু বাবার কথা মেনে যদি তুই বিয়ে করতি তবে সারা জীবন কষ্ট পেতি। তার থেকে এখন কদিন কষ্ট কর, পরে আল্লাহ্ সব ঠিক করে দিবে। আর তুই এখন কোথায়?
__রশ্মির সাথে ওর ফ্ল্যাটে। দাদাভাই বাবা বুঝি খুব কষ্ট পেয়েছে!
__হ্যাঁ একটু তো পাবেই, কারন তার অহমিকায় লাগছে বিষয়টা। ও নিয়ে তুই চিন্তা করিস না। তার বোঝা উচিত যুগ পাল্টাচ্ছে। পালাচ্ছে মানুষের রুচিবোধও। তারও উচিত সময়ের সাথে সাথে নিজেকে পরিবর্তন করা। সে এখনো ভাবে মানুষের শরীরে সামান্য ত্রুটি মানে সে মানুষ হিসাবে অযোগ্য। সে তোর দুটো আঙুল নেই দেখলো কিন্তু তোর অসাধারন প্রতিভা দেখলো না! তুই দেখতে এতো সুন্দর অথচ তোর রূপ গুন সব বাদ দিয়ে সে তোর সামান্য ত্রুটি নিয়ে তোকে অযোগ্য কিভাবে ভাবলো!
সময় বদলাচ্ছে, আমাদের চিন্তাধারাকেও বদলানো উচিত। সমাজের চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো উচিত শরীরের সামান্য ত্রুটি কোন মানুষকে ডানা ঝাপটে মহা আকাশে উড়তে বাঁধা দিতে পারেনা। তুই উড়বি, তোর নিজের মত করে উড়বি। তোর জীবনের সব ইচ্ছা পূরন করবি। তোর সকল অপূর্ণ ইচ্ছা ওপস স্যরি তোর অভিলাষ পূরন করবি। তার জন্য তোর দাদাভাই সবসময় তোর সাথে আছে।
__ধন্যবাদ দাদাভাই। আই লাভ ইউ। দাদাভাই একটা চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। আমি তো তেমন কাউকে চিনিনা। তুমি হেল্প করবা?
__শোন আমার বাচ্চাটার কথা। তোর জব কেন করা লাগবে? তোর খরচা টাকা সব এক্ষুনি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
__মাত্র বললা নিজের পায়ে দাড়াতে। তাহলে তার জন্য নিজে আয় তো করতে হবে? প্লিজ দাদাভাই না করো না।
__আচ্ছা ঠিক আছে। আমাকে কদিন সময় দে। আর শোন হাতে টাকা পয়সা কিছু আছে? নাকি একেবারে শূন্য হাতে গেছিস? বল পাঠিয়ে দি।
__দাদাভাই বাবার লকার থেকে আসার সময় কিছু টাকা ঝেড়ে দিয়েছি। স্যরি। লাইফে ফাস্ট টাইম এমন করছি। জানো ভিষন ভয় লাগছিলো। কিন্তু ভাবলাম যতদিন না চাকরি পাচ্ছি ততদিন চলতে তো হবে! তাই-----। মাফ করে দাও।
__আরে পাগলী রাগ করিনি। আচ্ছা ঠিক আছে সাবধানে থাকিস কোন সমস্যা হলে আমাকে জানাস। আমি কাল পরশু তোর সাথে দেখা করবো।
__আচ্ছা দাদাভাই।
তো বুঝলি দাদাভাই কি বলছে?
__রশ্মি বলল, হ্যাঁ বুঝলাম। আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম। যাক আল্লাহর দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া যে, তোর দাদাভাই তোকে বুঝতে পারছে। তোর দাদাভাই খুব ভালো। খালি তো মেঝো ভাই তামিম পঁচা। সবসময় আমাকে ধমক দেয়।
__ধমক দিলেও তোর মনের মানুষ বলে কথা। হি হি।
__ চুপ করতো। বাজে ছেলে কোথাকার! আচ্ছা শোন তোর দাদাভাই আর ভাবির মাঝে কি সমস্যা রে?
__বলবো পরে কোন একদিন। এখন চল ঘুম পাচ্ছে। তার আগে দাদাভাইকে জব পাবার কথাটা বলি।
০৭!!
আজ তনয়া প্রথম নিজের কর্ম জীবনে পদার্পণ করবে। তনয়া অফিস গিয়ে হা হয়ে তাকিয়ে রইলো। প্রথমবার কোথাও কাজ করবে ভাবতেই মনে আলাদা একটা অনুভূতি হচ্ছে। অফিসের কোনা কোনা তাকিয়ে দেখছে। রশ্মির সাথে আয়াতের কেবিনে গেলো।
আয়াত তনয়াকে দেখে অনেকটা পুলকিত হলো। প্রথমবার আয়াতের মনে হচ্ছে, মানুষের রূপ দেখেও প্রেমে পড়া যেতে পারে। এতদিন তনয়ার গুণে আকর্ষিত ছিলো, আজ রূপেও হলো। আজ একেবারে সিম্পল সাজে তনয়া এসেছে। ধবধবে সাদা থ্রী-পিচ পড়া, চুল কাকড়া দিয়ে বাঁধা, গালের আর কানের দু সাইডে কিছু চুল পড়ে আছে, ঠোঁট এমনি গোলাপী, লিপস্টিক দেয়ার দরকার নেই, তারপর মনে হয় হালকা কিছু একটা ঠোঁটে দিছে যার কারনে ঠোঁট ভেজা ভেজা লাগছে, চোখ দুটো ঘন কালো, কোন কাজল নেই চোখে। কিছু কিছু মেয়েকে কাজল ছাড়াও দারুন দেখতে লাগে, যেমন তনয়া। সাদা ড্রেসে তনয়াকে অসম্ভব রকম পবিত্র আর স্নিগ্ধ লাগছে। আয়াত ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আছে তনয়ার দিকে। আর তনয়া আয়াতের কেবিনের চারদিকটা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। রশ্মি আয়াতের অবস্থা দেখে মৃদু হেসে কাশি দিয়ে আয়াতের ধ্যান ভাঙালো।
মাসের শুরুর দিকে জয়েন করেছে বলে তনয়া চাইলে আজ থেকেই নিজের কাজ বুঝে নিতে পারে বলে আয়াত বলল। তনয়াও ভাবল শুধু শুধু একমাস শুয়ে বসে কাটানোর কোন মানেই হয়না। তাই রাজি হয়ে গেলো। আয়াতের বাবা সামনের মাস থেকে অফিসে আসবে তাই একমাস তনয়া আয়াতের সাথে কাজ করবে। ওর বাবা আসলে পরে তার পি এ হিসাবে থাকবে।
আজ প্রথম দিনেই তনয়ার কাজে আয়াত ইমপ্রেস। মেয়েটা ভিষন পরিশ্রমী । সবচেয়ে বড় কথা কিছু করার প্রবল ইচ্ছা আছে মেয়েটার মাঝে। আয়াতের অফিস কেবিনের পাশের ডেক্সে এ তনয়া বসে। আয়াত প্রায়ই কাজ ছেড়ে কাচের দেয়াল দিয়ে তনয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। কেন জানি তনয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগে। মেয়েটা যতটা না চঞ্চল তার চেয়ে দ্বিগুন স্নিগ্ধ, পরিশ্রমী, মায়াবী, আত্মর্নিভরশীল। ও সত্যি প্রমাণ করে দিবে মানুষের সামান্য ত্রুটি মানুষকে দমাতে পারেনা।
আজ পনেরো দিন, যাবত তনয়া আয়াতের সাথে কাজ করছে। ওদের দুজনার সম্পর্ক বস আর পি এ এর মতই। আয়াত নিজে থেকে তনয়ার দিকে এগোতে চায়না। কারন তনয়ার মনে ছেলেদের নিয়ে একটা নেগেটিভ ভাবনা আছে। ওর মতে ছেলেরা সময় মেয়েদের বেডরুমে নেবার জন্য পাগল থাকে। কিন্তু আয়াত চায় তনয়ার ধারনাটাকে ভুল প্রমাণ করতে। ও তনয়াকে পেতে চায়না, অর্জন করতে চায়। তনয়ার সে গুনে ও তনয়াকে না দেখেই ডিসিশন নিয়েছিলো তনয়ার মত কাউকে বিয়ে করবে, তনয়াকে দেখার পর সে সিদ্ধান্ত অটল হয়ে গেলো। বিয়ে যদি জীবনে কাউকে করে তবে তনয়াকেই করবে।
কিন্তু আয়াত কিছু বিষয়ে ভিষন চিন্তিত আছে, কারন আয়াত ওর বাবাকে রাজি করাতে পারলেও ওর মাকে রাজি করাতে পারবে বলে মনে হয়না। কোন মা ই নিজের ছেলের জন্য শারিরীক ত্রুটি সম্পন্ন মেয়েকে ঘরের বৌ করে নিবে না।
আয়াত একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
__আমিও আজব। এখনো তনয়ার মনের দরজার আসে পাশে যেতে পারলাম না, অথচ বিয়ের পরিকল্পনা করছি। হা হা হা। আসলেই আমরা মানুষরা আজব। স্বপ্ন দেখতে বড্ড ভালোবাসি।
এর মধ্যে তনয়ার কথায় ভাবনায় ছেদ পড়লো আয়াতের,
__স্যার আসতে পারি?
__হ্যাঁ হ্যাঁ এসো। কি বলবে বলো?
__স্যার আমার আগামী কাল ছুটি লাগবে!
__কেন?
__আসলে স্যার ডাক্তার কাছে যেতে হবে।
__কেন? তুমি ঠিক আছো তো? মানে তোমার শরীর ঠিক আছে তো? (অনেকটা চিন্তিত হয়ে)
__আসলে স্যার আমার থাইরয়েডের প্রবলেম আছে। যার কারনে তিন চার মাস পর পর আমাকে চেকাপ করাতে হয়। লাস্ট কদিন যাবত সমস্যা গুলো বাড়ছে। মনেহয় হয়তো হরমোনের আপ ডাউন হয়েছে, যার কারনে শরীর এমন লাগছে। তাই চোকাপ করে দেখবো। আমি যার কাছে ট্রিটমেন্ট নিতমি সে বর্তমানে চট্টগ্রাম, তার আসতে আরো একমাসের বেশি লাগবে। সে থাকলে রাতে গেলেও প্রবলেম হত না। কিন্তু এখন চেকাপ করাটা জরুরি, তাই নতুন ডাক্তারের কাছে এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে সব চেকাপ করতে কাল সারা দিন লাগবে। তো যদি,__।
__হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই যাও। তোমার আরো আগে যাওয়া উচিত ছিলো না। এসব বিষয়ে একদম বসে থাকা উচিত না। শোন আমার পরিচিতো একজন খুব ভালো ডাক্তার সাথে। সে এসব বিষয়ে খুব ভালো। তুমি চাইলে তাকে দেখাতে পারো, আমি নিজে তোমায় কাল নিয়ে যাবো। যাবে?
__অনেক ধন্যবাদ স্যার। কাল কখন যাচ্ছি। (অনেক খুশি হয়ে)
__আচ্ছা ফোন করে কনফ্রম হয়ে নি। ফোন করে বলল, কাল দুপুরের পর গেলে ভালো হবে। এখন চলো, তোমায় বাসায় ড্রপ করে দি। আজ আর তোমায় কাজ করতে হবেনা। তোমাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে তোমার শরীর খুব খারাপ। রশ্মি পরে চলে আসবে।
আয়াত তনয়া গাড়ির কাছে যেতেই একটা ছেলে তনয়াকে ডাক দিলো। ছেলেটা দেখতে অনেক সুন্দর আর হ্যান্ডসাম। তনয়া খুশিতে দৌড়ে গিয়ে ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরলো।
তনয়ার এমনটা করায় আয়াতের কেমন যেনো অসস্তি লাগছিলো। হিংসা লাগছিলো ওর। তনয়ার উপর খুব রাগ হচ্ছিলো।