০৩!!
দুপুরে বাইরে থেকে নীলিমার পছন্দের চাইনিজ নিয়ে এসেছে তন্ময়। দরজায় দুবার কলিং বেল বাজাতেও দরজা খুলছে না দেখে ওর বুকের ভিতরে ধ্বক করে উঠলো। তাড়াহুড়ো করে পকেট থেকে বাসার মেইন ডোরের চাবি বের করতে যাবে এমন সময়ই দরজাটা খুলে গেল। নীলিমার হাসিমাখা মুখটা দেখে মনটা শান্ত হলো তন্ময়। সব ভুলে দরজার সামনে দাঁড়িয়েই নীলিমাকে জড়িয়ে ধরে ফেললো।
-কোথায় ছিলে এতোক্ষণ? আমাকে টেনশন দিতে ভালো লাগে তোমার খুব? তাই না?
-আরে? কি করছ তন্ময়? দরজার সামনে এভাবে! পাগল হলে তুমি?
-হুম?
চোখ না খুলেও তন্ময় বুঝতে পারলো বাসায় নীলিমা ছাড়া আরো কেউ আছে৷ তন্ময় নীলিমাকে ছেড়ে দিয়ে তাকালো।
-সরি আসলে--। খেয়াল করি নি-।
-আচ্ছা। ঠিক আছে। আসো তোমাকে তুলির সাথে পরিচয় করিয়ে দিই---। চলো?
-তুলি কে?
-উফফফ। আসো তো আগে?
-হুম---।
তন্ময় ড্রইংরুমে গিয়ে দেখলো একটা ২০-২২ বছরের গ্রাম্য মেয়ে সোফায় না বসে কাছেই ফ্লোরে বসে আছে। দেখতে বেশ ভালোই। তবে খানিকটা অসুস্থ লাগছে মেয়েটাকে। সম্ভবত দুর্বলতার কারণে বসতেও পারছে না ভালো করে। কেমন আটপৌড়ে করে শাড়ি পড়া। তন্ময় একবার ভালো করে মেয়েটাকে দেখে নিলো। তেমন সন্দেহজনক লাগছে না যদিও।
-আরে? আপনি নিচে কেন বসেছেন? সোফায় উঠে বসুন?
-না না। সাহেব৷ আমি নিচেই ঠিক আছি--।
-আরে? নীলি? উনি কে?
-ও তুলি। ওর একটা কাজ লাগবে। থাকার জায়গাও নেই কোনো। গ্রাম থেকে আজই এসেছে মেয়েটা--।
-তো?
-আমারও তো বাসায় একা একা বোর লাগে--। তাই ভাবলাম---। ও থাক আমাদের বাসায়??
-রুমে এসো--।
-হুম?
তন্ময় আর কিছু না বলেই খাবারের প্যাকেটগুলো ডাইনিং টেবিলের উপরে রেখে এসে বেডরুমে চলে গেল। নীলিমা তুলির কাছে কিছু একটা বলে রুমে আসতেই তন্ময় নীলিমার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে টেনে নিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবালো। নীলিমা তন্ময়ের আচমকা এমন কাজে থতমত খেলেও একটু পর নিজেকে সামলে নিয়ে আলতো করে তন্ময়কে জড়িয়ে ধরে নিজেও সাড়া দিলো। বেশ অনেকক্ষণ পর তন্ময় সরে আসতেই নীলিমা খেয়াল করলো তন্ময়ের চোখে জোড়া ছলছল করছে। নীলিমা দুহাতে তন্ময়ের মুখটা তুলে ধরলো।
-কি হয়েছে গো তোমার? এমন দেখাচ্ছে কেন তোমাকে?
-আই কান্ট লিভ উইদাউট ইউ জান। প্লিজ আমাকে ফেলে যাবা না কোথাও। বলো?
-আরে? কি মুশকিল! আমি কোথায় যাবো আবার?
-নাহ--। আমি এতো কিছু বুঝি না। যাবা না বলো প্লিজ?
-ওক্কে জনাব। যাবো না। কি হয়েছে বলো না আমাকে প্লিজ?
-তুমি এতোক্ষণ দরজা খুলছিলে না কেন? আমি কত ভয় পেয়ে গেছি জানো তুমি? মনে হচ্ছিলো তোমাকে আমি চিরদিনের জন্য---। এমনটা কেউ করে বলোতো?
-আরে? আমি তো তুলির সাথে কথা বলছিলাম।
-তোমার এই তুলি কোথা থেকে এলো হ্যাঁ? কখন এলো? তুমি বাসায় একা আছো। তবুও ওকে ঢুকতে দিলে কেন? কিছু যদি করে বসতো তোমাকে? তখন কি করতাম আমি? আমি তো জানতেও পারতাম না---।
-উফফফ। মিস্টার তন্ময়? কুল ডাউন। ওকে?
-পারবো না আমি কুল হতে--।
-ওকে-----। আমিই কুল করছি জনাব--।
নীলিমা এগিয়ে এসে তন্ময়ের ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ালে তন্ময়ও নীলিমার কোমড় টেনে ধরে নীলিমাকে একটু উঁচু করে ধরে নীলিমার ঠোঁটে ডুব দিলো। নীলিমা একটু পর মুখ তুলে তন্ময়ের ঘাড়ে হাত ঝুলিয়ে মিষ্টি করে হাসলো।
-দিন দুপুরে কিসব পাগলামি শুরু করলে বলো তো?
-তবে কি আবার রাতে পাগলামি করার পারমিশন দিচ্ছ? তাহলে এখন নাহয়----।
-অসভ্য লোকটা। সারাদিন খালি এসবই চলে মাথায় না?
-উহু--। আরো নতুন নতুন অনেক কিছুই চলে।
-যেমন?
-এই যে চুমো খাওয়ার পর তোমার ঠোঁট জোড়া ভিজে গেছে। সেই ভিজে ঠোঁটে কামড় বসাতে প্রচন্ড ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে করছে তোমার নিচের ঠোঁটের কালো তিলটায়----।
-ধ্যাত--। অসভ্য লোকটা--। ছাড়ো--।
-উহুঁ---। তোমার মিষ্টি ঠোঁটটা এখন----।
-চুউউপপ---। শোনো না গো?
-হুম। শুনছি তো--। বলো?
-তুলিকে রাখি না বাসায়? প্লিইইজ?
-ঘুমপরীটা? ওর সম্পর্কে কিছু না জেনেই---।
-আরে? মেয়েটার সম্পর্কে তো পরেও খোঁজ নিতে পারবে--। জানো ও যখন এসেছে ঠিক করে দাঁড়িয়ে থাকতে পর্যন্ত পারছিলো না। রাখি না প্লিজ?
-ওকে ম্যাডাম--। এজ ইউর উইশ। এখন?
-কি?
-আমার হিসেবটা আমায় বুঝে নিতে দাও?
-এই? সারাদিন কাজ করে খিদে লাগে নি? অসভ্য লোকটা।
-ইশ! ভুলেই গেছি। তোমার পছন্দের চাইনিজ ফুড নিয়ে এলাম। এতোক্ষণে তো ঠান্ডাও হয়ে গেল। যাহ।
-আরো করো রোমান্স---?
-হুম? তাই? আসো?
-মাইর লাগাবো বলে দিলাম--।
তন্ময় আর কিছু না বলে নীলিমার কানে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে ছেড়ে দিল। তারপর নীলিমার শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ মুছে দিয়ে নিজের চোখ মুখও মুছে নিলো তন্ময়। ড্রইংরুমে গিয়ে দেখলো তুলি এখনো বসে আছে চুপ করে। তন্ময়, নীলিমা, তুলি তিনজন মিলে খেয়ে নিয়ে তুলিকে গেস্ট রুমটায় রেস্ট করতে বললো। তন্ময় নীলিমাকে নিয়ে রুমে চলে গেল। তন্ময় দরজা বন্ধ করে মুখ ঘুরিয়ে দেখলো নীলিমা বিছানায় বসে মিটিমিটি হাসছে। তন্ময় ভ্রু কুঁচকে গায়ের শার্টটা খুলে ফেলে নীলিমার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়লো। নীলিমা এবার জোরে হেসে ফেললো। তন্ময় নীলিমাকে বিছানার সাথে চেপে ধরে কানে ঠোঁট ছুঁইয়ে ছোট্ট করে কামড় দিতে শুরু করলো।
-এই মেয়ে? হাসছো কেন এমন? আমাকে কি কমেডিয়ান লাগছে দেখতে?
-উঁহু--। দুটো কারণে হাসছি-।।প্রথমটা হলো তুলি বাসায় থাকায় এখন আর তুমি হুটহাট আক্রমণ করতে পারবে না এসে যেখানে সেখানে।
-মজা না খুব? হুম?
-হি হি। আরেকটা হলো---।
-হুম---? বলো?
-তোমার গলায় আমার লিপস্টিকের দাগটা এখনো যায় নি---।
-ওরে দুষ্টুটা। ইচ্ছে করে গলায় লিপস্টিকের মার্ক বসিয়ে দিয়েছ? আমি তো খেয়ালই করি নি--।
-কিন্তু এই কিস মার্ক টা তো তোমার শার্টের ভিতর দিয়েও দেখা যাচ্ছিলো--। হি হি--।
-এই রে! তাই সবাই এভাবে দেখছিলো! ইজ্জতের ফালুদা করে দিলা আমার---।
-বেশ হয়েছে--।
-এবার আমিও বেশ একটা কাজ করবো--। কেমন সোনা বউটা?
-মাইর লাগাবো কিন্তু--। আজকে অফিস নেই আর?
-যাবো না আজকে--।
-কেন? তোমার অফিসে এতো ছুটি কি করে দেয় আমি সেটাই বুঝি না।
-এতো বুঝাবুঝির কাজ নেই। ওই মেয়েকে তোমার সাথে বাড়িতে একা রেখে আমি আজ এক পা ও নড়ছি না গো বউটা---।
-ইশ! আমি বুঝি না যেন। সবই তোমার দুষ্টুমি করার মতলব। আমি যে সবসময় বাড়িতে একা একা থাকি। তার বেলায় কিছু হয় নি তো?
-তাই তো যতটা পারি বাসায় থাকার চেষ্টা করি---।
-হয়েছে হয়েছে জনাব। এখন ঘুমাও একটু। সারাক্ষণ এতো দুষ্টুমি করতে হয় না।
-আমি বুঝি না বাবা তোমার এতো ঘুম কোত্থেকে আসে! আদর করতে চাইলেই-----।
-বুঝতে হবেও না। তুমিও ঘুমাও একটু। ফ্রেশ লাগবে--।
-হুম--। তোমার বুকে ঘুমাবো বউটা---। একটু চুলে হাত বুলিয়ে দিবে প্লিজ?
-হুম--। আসো?
তন্ময় নীলিমার বুকে ভালো করে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজলো। সারাদিনের প্রেশার, ক্লান্তি আর টেনশনে একসময় ঘুমিয়েও গেল। নীলিমা হেসে তন্ময়ের কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে চুলে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে নিজেও একসময় ঘুমিয়ে গেল।
০৪!!
ঘুমের মাঝেই কিসব চোখের সামনে ভাসছে নীলিমার। কিছুই বুঝতে পারছে না। কেমন ঘোলা ঘোলা কিছু চেহারা। কারো সাথে ছুটোছুটি করছে ও। কারো সাথে না ঠিক। দুজন মানুষ সেখানে। মানুষগুলো আর কেউ নয়। ওর বাবা মা। অনেক চেষ্টা করেও কারো চেহারা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে না নীলিমা। ছুটতে ছুটতে কিছু একটার সাথে হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে ব্যথা পেল ও। আর পিছন থেকে বাবা মা একটা নাম ধরে চেঁচিয়ে উঠলো।
-নাতাশা?
ডাকটা শুনেই ঘুমটা ভেঙে গেল নীলিমার। একেবারে ঘেমে গেছে ও। তার উপরে বিছানার পাশেই থাকা টেলিফোন সেটটায় রিং আসছে। বোধ হয় ফোনের কলের শব্দেই ঘুম ভেঙে গেছে ওর। তন্ময় ওর বুকের উপরে শুয়ে থাকায় না উঠেই হাত বাড়িয়ে রিসিভার নিয়ে কানে ধরলো নীলিমা।
-হ্যালো?
-আমমম--। আবীর স্যার আছে?
-সরি--। রং নাম্বার--।
নীলিমা রিসিভারটা নামিয়ে রাখতেই তন্ময় পাশ ফিরে শুয়ে নীলিমাকে বুকে জাপটে ধরলো। নীলিমা হেসে তন্ময়ের বুকে মুখ ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিলো।
-নীলি? কি হলো? ঘেমে গেছ কেন? গরম লাগছে? এসির টেম্পারেচার কি কমিয়ে দিব?
-আরে না না। এমনি---।
-ঘেমে গেছো একদম--। শাড়িটা--।
-চুপ---। অসভ্যের মতো কথা বলবা না--।
-আরে? কি মুশকিল! আমি আবার কি বললাম? বলছি যে শাড়িটা চেইঞ্জ করে একটা টপস পড়ো। নয়তো আমার শার্ট পড়ে ঘুমাও--।
-জি না। ধন্যবাদ--।
-হুম। সেই তো-। আচ্ছা এখন ঘুমাতে দাও তো?
-না--। দিবো না ঘুমাতে---।
-নীলি? ঘুম পাচ্ছে। ঘুমটা ভাঙালে কি হবে জানো নিশ্চয়ই?
-ধ্যাত--। ঘুমাও---।
নীলিমা চোখ বুজতেই আবার ফোনে রিং এলো। নীলিমা আবার হাত বাড়িয়ে রিসিভারটা নিয়ে কানে লাগালো।
-হ্যালো?
-ম্যাম? তন্ময় স্যার আছে?
-হুম--। ধরুন দিচ্ছি--। এই কথা বলো?
-কে? হ্যালো? ------- আরে না না জিহান। তুমি আজকে সামলে নাও। আমি আজ আসবো না অফিসে।---- ইয়াপ! ওকে। কাল দেখা হবে। --। ওকে বায়।
তন্ময় রিসিভারটা রেখে নীলিমার চিন্তিত মুখটা দেখে গালে চুমো খেল।
-কি হয়েছে গো ঘুমপরী? কি চিন্তা করো?
-উনি তো একটু আগেও কল করে অন্য একজনকে চাইছিল! কি যেন নাম বললো? আমমম--। আবীর--।
----আম--। হয়তো আবীরকে কল দিতে গিয়ে ভুলে আমাকে কল করে ফেলেছিল--।
-আবীরটা কে গো? সবাই শুধু উনাকে কল করতে গিয়ে তোমাকে কল করে---?
-স-সবা-সবাই মানে? আর কে কল করেছিল?
-দুদিন পর পরই তো একবার বলে আবীরকে কলটা দাও। একবার বলে তন্ময়কে--। উফফফ। আমি তো কনফিউজড হয়ে যাই মাঝেমধ্যে।
-কনফিউজড হতে হবে না ম্যাডাম। এখন চুপ করে ঘুমাও---।
-জি নাহ। আপনিও উঠুন--।
-কেন? আদর দিবা?
-অসভ্য লোকটা-। সন্ধ্যা হবে এক্ষুণি--। উঠো বলছি?
-উহু--। আর একটু ঘুমাই না প্লিজ?
-না না না-----।
-আচ্ছা বাবা ঠিক আছে উঠছি--।
সপ্তাহ খানেক এভাবেই কেটে গেল। তন্ময় অফিসে গেলে নীলিমার সারাটা দিন কাটে তুলির সাথে গল্প গুজব করতে করতে ঘরের কাজকর্ম করে। তন্ময়ও তুলির কাজকর্মে সন্দেহ করার মতো কিছুই পায়নি। তাই আপাতত নিজের কেইসেই বেশি মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু এর মধ্যেই কিছু একটা সমস্যা টের পায় তন্ময়। হুট করে কয়দিন ধরেই নীলিমা গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। কেমন একটা চিন্তিত ভাব ফুটে আছে মুখে। তন্ময় কয়েকবার জিজ্ঞেস করেও সঠিক কোন জবাব পায় নি। কিন্তু আজ ব্যাপারটা বেশিই বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেছে। তন্ময়ের বাসায় ফিরতে একটু বেশি রাত হয়ে গেছে আজকে। রুমে এসে দেখলো নীলিমা রুমে নেই। তন্ময় হেসে টাওয়াল নিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে সোজা বারান্দায় চলে গেল। নীলিমা বারান্দার গ্রিল ধরে বাইরে অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে আছে। তন্ময় নীলিমার মুখটা না দেখেও বুঝতে পারলো পাগলিটা খেপে আছে দেরি করে ফেরায়। তাই শক্ত করে নীলিমাকে জড়িয়ে ধরলো পিছন থেকেই৷ তারপর কানে আস্তে করে কামড় দিয়ে ছোট্ট ছোট্ট করে চুমো দিতে লাগলো নীলিমার ঘাড়ে, পিঠে, গলায়, কাঁধে। নীলিমা কেঁপে কেঁপে উঠলেও কিছু বলছে না।
-নীলি? দেরি করার জন্য সরি তো বউটা? রাগ করো না প্লিজ? ও বউ? শোনো না?
-হুম-। শুনছি--।
-রাগ করে না পাগলিটা। প্লিজ? ভালোবাসি তো।
-হুম----।
-কি হুম? তুমিও বলো?
-------------------------------
-রাগ করে থেকো না প্লিজ?
-কোথায় ছিলে তুমি?
-একটা মিটিং ছিল অফিসে---। আর ইম্পর্ট্যান্ট একটা কাজ---।
-এতো রাতে মিটিং?
-না মানে আসলে--। মিটিং শেষ হওয়ার পর সবাই মিলে কাজটা গুছিয়ে নিতে---।
-আচ্ছা বলো তো? আমাকে কি আর ভালো লাগছে না তোমার?
-মানে কি? কি বলছো এসব নীলি?
-জাস্ট আমার প্রশ্নের উত্তর দাও তন্ময়---।
-এসব আজাইরা কথা কি করে মাথায় আসে তোমার?
-জাস্ট আনসার মাই কোশ্চেন--।
-নীলি? তাকাও তো? কই? তাকাও আমার দিকে।
তন্ময় নীলিমাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে মুখটা তুলে ধরলো দুই হাতে। নীলিমার গালে কান্নার দাগটা দেখে তন্ময়ের বুকের ভিতরে ধ্বক করে উঠলো। নীলিমাকে একেবারে বুকের কাছে টেনে নিলো তন্ময়।
-নীলু? কি হয়েছে গো? এতো কেঁদেছ কেন তুমি?
-তুমি সত্যি করে বলবা। তোমার সাথে অফিসের কারো রিলেশন চলছে তাই না?
-নীলি? কি বলছো এসব? পাগল হলে?
-হ্যাঁ আমি পাগলই হয়ে গেছি--। তুমি সত্যি করে বলো---।
নীলিমার রাগের চোটে তন্ময়ের থেকে সরে আসার চেষ্টা করতেই তন্ময় নীলিমার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে কাছে টেনে নিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে একটু জোরেই কামড় বসালো।
-এই পাগলি? এমন করছো কেন? কি হয়েছে বলো না? নীলি?
-ছাড়ো আমাকে---।
-নীলু? আগে বলো কি হয়েছে??
-কি হয়েছে জানো না? এখন তো আর আমাকে ভালো লাগে না তোমার। অন্য কাউকে পেয়েছ নিশ্চয়ই---।
-নীলি? কে কি বলেছে বলো তো তোমাকে? আর এই যে ম্যাডাম--। একটু পরে দেখাচ্ছি তোমাকে আমি। ভালো লাগে কি না। এখন খুব খিদা লাগসে তো বউটা? খেতে দাও না প্লিজ?
-তুমি খেয়ে আসো নি?
-গত এক বছরে এমন একটা দিনের কথা বলতে পারবে যে বউকে না খাইয়ে দিয়ে খেয়েছি আমি?
-চলো খেতে দিচ্ছি---।
-হুম--। চলুন ম্যাডাম। বাকি সব পরে হিসেব নিচ্ছি। আগে খেয়ে নিই---।
-চলো? ছাড়ো না?
-হুম? ইয়েস ম্যাম---।
নীলিমাকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে সোজা রান্নাঘরে নিয়ে গিয়ে নামালো তন্ময়। নীলিমা তাড়াতাড়ি একটা প্লেটে খাবার বেড়ে দিয়ে ডাইনিং টেবিলে রাখলো। তন্ময় ততক্ষণ টেবিল সাজিয়ে নিলো। তন্ময় খাবার মাখিয়ে নীলিমার মুখের দিকে ধরলো। নীলিমা তন্ময়ের দিকে তাকালো।
-ম্যাডাম? এখন কি এটাও বলে দিতে হবে যে আপনাকে না খাইয়ে আমি খাই না?
-আমার খিদে নেই---। তুমি খাও--।
-আগে বললেই পারতে--। কষ্ট করে আর খাবার নিতে হতো না। ঠিক আছে---। আমি প্লেট গুছিয়ে--।
-তুমি না খেয়ে উঠছ কেন?
-আমার খিদে মিটে গেছে নীলি--। চলো অনেক রাত হলো।
-এখানে চুপ করে বসো---।
তন্ময় চুপ করে প্লেট থেকে হাত উঠিয়ে বসে আছে দেখে নীলিমা একটু চেয়ার টেনে তন্ময়ের দিকে এগিয়ে এলো।
-এখন কি খাইয়েও দিবা না আমাকে?
-হুম?
-জানো না খিদে লেগেছে যে? কখন থেকে না খেয়ে বসে আছি কেউ খাইয়ে দিবে বলে---।
-হা করো পাগলিটা?
নীলিমা আর কথা না বাড়িয়ে চুপ করে খেয়ে নিলো। তন্ময়ও আর কথা না বাড়িয়ে খাচ্ছে৷ নীলিমা চুপ করে খাচ্ছে আর ভাবছে। ও কি ভুল ভেবেছে তন্ময়কে? তাহলে যে ---! কিন্তু তাহলে তন্ময় আজকাল এমন বদলে গেল কেন হঠাৎ করে? কিছুই মাথায় ঢুকছে না নীলিমার। কোনটা রেখে কোনটা বিশ্বাস করবে ও?