বসন্তের ফুল - পর্ব ০৩ - তারিন জান্নাত - ধারাবাহিক গল্প


০৫!!

স্টাডিরুমে সব ধরনের বই ছিলো তাই প্রেমা একটা বই নিয়ে পড়তে লাগলো। প্রেমাকে রেখে অভ্র দরজাটা হালকা চেপে রেখে চলে যায়। 

—————

--" হুম আমি যেভাবে বলেছি।সেভাবে বললেই হবে বাকিটা উনি নিজ দায়িত্বে বুঝে যাবে।"(অভ্র)"

--" ঠিক আছে!!"(???)

—————

আদ্রের পড়া শেষ হতেই প্রেমাকে খুঁজতে লাগলো। স্টাডিরুমে প্রেমাকে খুঁজে পেয়ে আদ্র শান্ত হয়। প্রেমার বই নিয়ে নিলো হাত থেকে।

--"বই নিলে কেন??" (প্রেমা)"

--"আমি আপনার সাথে, না না তোমার সাথে গল্প করবো এখন! প্লিজ.... (কিউট ফেস করে)

--" হ্যাঁ ঠিক আছে কিন্তু কী গল্প করবো??"(প্রেমা)"

--"যা ইচ্ছে?? জানো আপু আমার খুব ইচ্ছে ছিলো আমার একটা বোন থাকবে। আমাকে আদর করবে,ঘুম পারাবে সব করবে...!!
কিন্তু মিলল একটা খাট্টুশ ভাই!"(আদ্র)"

--"খাট্টুশ কেন ডাকো??" (প্রেমা)"

--"জল্লাদ না বলে খাট্টুশ বলি এটাই কম নয় কী!"সারাদিন আমি এটা করি ওটা করি আম্মুর কাছে নালিশ দিবে নিজের কাহিনী বলবে না!"(আদ্র)

প্রেমা আদ্রের কথা শুনে হাসছে।খুব সুন্দর ঘুছিয়ে কথা বলে আদ্র যার ফলে প্রেমার আদ্রের কথা শুনতে ভালো লাগছে প্রেমার।

এমন আরো অনেক কথা বলে দুজনে। একসময় ডিনার করার জন্য ডাক পরে তাদের। নিচে নেমে যায় তারা। চেয়ারে আদ্র প্রেমা পাশাপাশি বসে প্রেমার বামসাইডে চেয়ারটা খালি ছিলো এবং,সোজা চেয়ারটাও। আরিয়ান এসে টুস করে প্রেমার পাশে বসে পরে।

এতে প্রেমা চোখেমুখে রাগ আর বিরক্তি দুটোই ফুঁটে উঠে। না চাইতেও চুপচাপ থাকতে হবে এখন! সবার সামনে কিছু বলতেও পারবে না। তার একটু বাদেই প্রেমার সামনের চেয়ারে অভ্র এসে বসে পরে। প্রেমা অভ্রের দিকে তাকালেই দেখে মুখ লাল হয়ে আছে। ফর্সা মুখ লাল হয়েছে হয়তো?? 

কিন্তু আরিয়ানের ন্যাকামি সহ্য করার মতো না। প্রেমা এটা নাও,ওইটা খাও,খাচ্ছো না কেন?? ওকে আরো মাংস দাও। এমন সব কথাবার্তা আরিয়ান প্রেমার কানের পাশে ঘ্যানঘ্যান করে বলছিলো।

--"(শালার-বিলাই! আমি কী খাবো না খাবো তোর থেকে এখন পরামর্শ নিতে হবে আমার!!)" (প্রেমা রেগে কথাগুলো মনে মনে বলছিলো!)

আরিয়ানের মাও বেশ প্রেমাকে আদর-যত্নে খাওয়াচ্ছে।  মতলবটা কী?আবারো আরিয়ানের ন্যাকামি শুরু তখনি  হঠাৎ ঝন করে শব্দ হয়। 

সবাই একসাথে অভ্রের দিকে তাকাল, ভাত অর্ধেক থেকে গেছে প্লেটে ভালো করে খায়নি। হাত ধুয়ে প্লেট টা জোরে ঠ্যালা দিয়ে উঠে ধপাধপ পা চালিয়ে চলে যায়। 

সবাই বোকার মতো তাঁকিয়ে অভ্রের যাওয়া দেখছে। খেতে এসে না খেয়ে চলে গেলো। অভ্রের মা দ্রুত পায়ে ছেলের পেছনে ছুটে।  

--"কী হয়েছে অভ্র শরীর খারাপ নাকি খাস নাই কেন??"(অভ্রের মা)

--" এমনি ক্ষিদে নেই! আমি ঘুমাবো তুমি যাও এখন!"(অভ্রের সাফ বলে দেওয়া কথা শুনে উনি আর না দাঁড়িয়ে চলে যায়)

চিন্তায় পড়ে গেলেন খেতে গিয়ে না খেয়ে চলে এসে বলছে ক্ষিদে নেই। পেছন ফিরে ছেলেকে আরেকবার দেখে আবার ও সামনের দিকে পা চালায়। 

--"কী রে বউ মা ছোট নাতির কী হয়েছে!"(অভ্রের দাদি)

--"ক্ষিদে নেই বলল!" আর কিছু বলেনি!!"(অভ্রের মা)

 
প্রেমা অভ্র যাওয়ার কিছুক্ষন পরেই দ্রুত খাওয়া শেষ করে গেস্টরুমে চলে যায়।যেহেতু একা থাকবে তাই আগে থেকেই রুমে ঢোকে লক করে দেয়। কারন প্রেমার দাদি তার বান্ধবীর সাথে থাকবেন!

প্রেমা বিছানায় শায়িত হতেই ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়। ১১ টার দিকে দরজার টকটক শব্দে প্রেমার ঘুম ভেঙে যায়। এলোমেলো এবং ঘুমে ডুলুডুলু অবস্থায় গিয়ে দরজা খুলে দেখে অভ্র আর আদ্র দাড়িয়ে। যদিও ঘুমের জন্য চোখ মেলে ভালো মতন তাঁকাতে পারছে না। 

--" কিছু বলবেন??" (ঘুম জরানো কন্ঠে জিজ্ঞেস করে প্রেমা)

--" সরি আপনার ঘুমে ডিস্টার্ব করার জন্য! আদ্র আপনার সাথে থাকবে বলে বায়না করছিলো। তাই নিয়ে আসতে হলো।"(অভ্র)

প্রেমা আর কিছু না বলে হাত বাড়িয়ে আদ্রকে খুঁজে হাত ধরে টেনে নিয়ে বিছানায়  শুইয়ে দিয়ে নিজেও শুয়ে পরে। 

--"আরে দরজাটা বন্ধ করুন!"(অভ্র)

প্রেমার কোনো সাড়া নেই। সে আবারো গভীর ঘুমে ডুব দিলো। অভ্র দরজা টেনে চেপে দিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। তখনি দেখে আরিয়ানের রুমের লাইট জ্বলছে এখনো। 

কিছু একটা ভেবে সামনে এগোতে গিয়েও থেমে যায় অভ্র। আর সামনের দিকে পা বাড়ায়নি। প্রেমার রুমে গিয়ে ভেতর থেকে লকড করে দেয় অভ্র। 

সকালে...

ঘুম থেকে উঠে প্রেমা দেখে আদ্র ওর পাশে শুয়ে আছে। সাথে সাথে চমকে যায়।দরজা তো ভেতর থেকে বন্ধ আসলো কিভাবে?আদ্রকে জিজ্ঞেস করলে বলে প্রেমার নিজেই দরজা খুলে আবার বন্ধ করে শুয়েছে।কিছু সময় তব্দা খেয়ে থাকে,পরে  বিশ্বাস করে নিলো কারন ঘুমের মধ্যে এমন অনেক কিছু প্রেমা করেও ভুলে যায়।মনে রাখতে পারে না।

ব্রেকফাস্ট করে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হয় প্রেমা। আরিয়ান রেডি হয়ে বসে আছে প্রেমাকে সহ সাথে নিয়ে যাবে। কিন্তু প্রেমা তাতে এক বিন্দুও রাজি নয়। সাফ বলে দেই সে রিক্সায় করে চলে যাবে। 

কিন্তু আরিয়ানের মা প্রেমাকে অনুরোধ করে বললে আর ফেলতে পারে নি। বাধ্য হয়ে যেতে হয় আরিয়ানের সাথে।

আরিয়ানের গাড়ি গেইট দিয়ে বের হওয়ার আগেই প্রচন্ড স্পিডে একটা বাইক পাশ দিয়ে আরিয়ানের গাড়ি ক্রস করে চলে যায়। পেছনের সাইড দেখে বুঝতে পার এটা অভ্র।

আরিয়ান তো অনেকবার সরি বলছে কালকে হাত ধরার জন্য প্রেমা চুপচাপ শুনতে থাকে কোনো উত্তর দেয়নি।মনেমনে সিদ্ধান্ত নেয় আজকেই চলে যাবে ওদের বাড়ি থেকে। লোকটা কী পেয়েছে ওকে।

ভার্সিটিতে পৌঁছেই প্রেমা ধাম করে দরজা খুলে বের হয়ে দ্রুত পা চালিয়ে চলে যায়। ক্লাসে মিম আর আসিফের সাথে গিয়ে বসে পরে।ওরা প্রেমার বেস্ট ফ্রেন্ড। 

হঠাৎ ক্লাস শুরু হওয়ার আগে পিয়ন এসে প্রেমাকে ডেকে বলে যে প্রিন্সিপ্যাল স্যার ডাকছেন। প্রেমা প্রথমে একটু অবাক হয় হুট করে ডাকার কারনে। কোনো ভুল কিছু করেনি তো। এসব ভাবতে ভাবতে প্রিন্সিপ্যাল স্যারের রুমের দিকে যায়।

--"মে আই কাম ইন স্যার??'"(প্রেমা)

--"এসো, বসো।(প্রিন্সিপ্যাল) 

প্রিন্সিপ্যালের কথায় প্রেমা ভেতরে এসে বসল। তখনি প্রিন্সিপ্যাল প্রেমাকে একটা খাম এগিয়ে দেয়। প্রেমা জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে খামটি নেয়।

--"এটা কী স্যারর?'

--"খুলে দেখো।'

প্রেমা খামটি খুলে যেনো আকাশ থেকে পরলো। কাল এডমিশন নিয়েছে আর আজ।

"--ট্রান্সপার সার্টিফিকেট?(প্রেমা)"

--হ্যাঁ,,তুমি অন্য কোনো ভার্সিটিতে এডমিশন নিতে পারো কিন্তু আমার ভার্সিটিতে তুমি থাকতে পারবে না। 

--"স্যার আমার দোষটা কী বলবেন??"(প্রেমা)

তখনি প্রিন্সিপ্যাল স্যার প্রেমার দিকে কিছু ছবি এগিয়ে দেয়। বিস্ফোরিত দৃষ্টি ছুঁড়লো ছবিগুলোর দিকে।ছবিতে স্পস্ট দেখা যাচ্ছে প্রেমার আরিয়ানের গায়ে পানি ছুড়ে মেরেছে। 

--"ছাত্রী হয়ে শিক্ষকের গায়ে পানি ছুড়ে মারাটা চরম বেয়াদবী। তাই তোমাকে টি.সি দিলাম।  এখন তুমি আসতে পারো।

--" স্যার উনি আমার....!!(প্রেমা)

--"আমি কিছু শুনতে চায় না..তুমি আসতে পারো।"

বলে ফোনটা বের করে কাকে যেনো কল দেয়।প্রেমা স্তব্ধ হয়ে বসেছিলো কিছুক্ষন। পরে আবার উঠে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে। ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে যায় ভার্সিটি থেকে।মিম আসিফ অনেক ডেকেছে তাও শুনেনি প্রেমা।

অন্যদিকে...

--"দেখো আরিয়ান পার্সনাল সম্পর্কে তুমি আমার কী সেটা জানি। এখন কথা হচ্ছে অন্য কিছু নিয়ে।(প্রিন্সি)

--" স্যার এসব বলার মানে কী আমি সেটাই বুঝতে পারছি না। কি এমন হলো হঠাৎ?(আরিয়ান)

তখনি প্রিন্সিপ্যাল স্যার আরিয়ানের দিকে কিছু ছবি এগিয়ে দিল।সেখানে আরিয়ান প্রেমার হাত ধরেছিলো। নিজের দিকে টানতে চেয়েছিলো প্রেমার হাত ধরে। 

--"হুয়াট দ্য?

--"তাই আমি ওয়ার্ন করছি নেক্সট এমন কোনো ছবি যাতে আমাকে দেখতে নাহয়।এখন যেতে পারো। আর হ্যাঁ প্রেমাকে আমি টি.সি দিয়ে দিয়েছি ও এখন থেকে অন্য ভার্সিটি থেকে স্টাডি করবে। তুমি যাতে ওকে আর বিরক্ত না করো। "(প্রিন্সিপ্যাল)

আরিয়ান হাত মুঠ করে রেগে বেড়িয়ে যায়।এই ছবিগুলো যে তুলেছে তাকে হাতের কাছে ফেলে পুঁতে ফেলতো। 
  
--" নাতি তোর প্ল্যান সাকসেসফুল!! (প্রিন্সি)

--" ওকে তোমার বউয়ের সাথে হানিমুনে যাওয়ার ব্যাবস্থা করে দিবো।"(নাতি)

নাতির কথা শুনে প্রিন্সিপ্যাল স্যার হেসে ফেলে। 

সন্ধ্যা হতে চলল প্রেমার এখনো বাড়ি ফিরেনি।সবাই চিন্তায় পরে যায়। আরিয়ানও অনেক জায়গায় গিয়ে খুঁজেছে তবুও পায়নি। 

পার্কের একটা বেঞ্চিতে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে প্রেমা। ভার্সিটি থেকে টি.সি দিয়েছে তাতে ওর কোনো সমস্যা নেই।কিন্তু ওর ভাইয়া জানলে...আবারও বিয়ে দেওয়ার.....

এসব ভাবছিলো হঠাৎ পুরুষালী কন্ঠ শুনে চমকে মাথা তুলে তাকায় প্রেমা....
 
০৬!!

"আচমকা পুরুষালী কন্ঠ শুনে চমকে মাথা তুলে তাঁকাল প্রেমা ।দেখে অভ্র দাঁড়িয়ে আছে।ঘামের কারনে শার্ট ভিজে শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। কপাল বেয়ে মুখেও টপটপ ঘাম পরছে। ঠোঁটজোড়া প্রচন্ড লাল হয়ে আছে মনে হচ্ছে যেনো লিপিস্টিক পরেছে,চোখের মণিটা কালো বেশ আকর্ষনীয় লাগছে এ মুহুর্তে অভ্রকে। কিন্তু মুখটা সেদিনের মতো লাল হয়ে আছে।চোখের সাদা অংশটাও লালচে হয়ে আছে।এ ছেলে কী ক্ষনে ক্ষনে রুপ পাল্টায় নাকি?? নিজের মনেই প্রশ্নটা করে প্রেমা!!"

এক ধ্যানে অভ্রের দিকে প্রেমা তাকিয়েছিলো। আবারো অভ্রের ডাকে স্তম্ভিত ফিরে পায় প্রেমা।নিজের কান্ডে লজ্জিত হয়ে পড়ে বেশ। তাড়াতাড়ি আশেপাশে তাঁকাতে লাগলো। অন্ধকার হয়ে গেছে এখন।সে দুপুরে কিছু না খেয়ে এখানে এসে বসেছিলো এক চুল পর্যন্ত নড়েনি। 

-"আপনি এখানে বসে আছেন? বাসায় সবাই প্রচুর টেনশান করছিলো আপনার জন্য!!"(অভ্র)

প্রেমা কিছু বলেনি মন খারাপ হলে প্রেমা চুপচাপ থাকে। এবারো তাই অভ্রের কথার প্রতিউত্তরে কিছু বলেনি সে। অভ্রের দিকে তাঁকিয়ে ছিলো।কেন যেনো অভ্রের দিকে পলকহীন ভাবে তাঁকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছিলো প্রেমা। 

--"আমাকে দেখার সময় অনেক পাবেন!  এখন বাসায় চলেন..!!"(অভ্র চট করে কথাটি বলে প্রেমার পাশে বেঞ্চিতে বসে পরে অনেকটা দূরত্ব রেখেই)

--"আমি মোটেও আপনাকে দেখছি না!"(খানিকটা রেগে এবং মুখ ফুলিয়ে)

"প্রেমার মুখ ফুলানো দেখে অভ্র মৃদু হাসে"। এরপর প্রেমার দিকে তাঁকাল দেখে প্রেমা অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। তখনি প্রেমার হাতে থাকা খামটির দিকে চোখ যায়। টুপ করে খামটি নিয়ে নেই। খাম নেওয়ার সাথে সাথে প্রেমা অভ্রের দিকে ফিরে তাকাল,দেখে ততক্ষনে খামটি খুলে পড়তে লাগলো দাঁড়িয়ে। "

প্রেমাও দাঁড়িয়ে অভ্রের দিকে  খামটি নেওয়ার জন্যে এগোতে গেলে অভ্র হাত বাড়িয়ে প্রেমাকে থামতে বলে।। তাতে প্রেমা ঠাঁয় দাড়িয়ে যায়।পড়া শেষ করে প্রেমার দিকে তাঁকাল।

--"সো এটার জন্য মন খারাপ করে এখানে এসে বসেছিলেন এতক্ষন যাবৎ??"(অভ্রের প্রশ্ন)

"নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রেমা!!"

-- " আমি আপনাকে হেল্প করতে পারি!!!"(অভ্র)

--"কীভাবে?? (এবার মৃদু কন্ঠে বলে উঠে)"

--" আমাদের কলেজ &ভার্সিটিতে এডমিট হতে পারেন চাইলে??  আমি আমার ফুফার সাথে কথা বলতে পারি যদি আপনি চান তাহলে??" (অভ্র)

এবার প্রেমা ভাবনায় পরে যায়। তার ভাইয়া যদি জানতে পারে অন্য ভার্সিটিতে এডমিন নিয়েছে তাহলে হয়তো রাগ দেখাতে পারে। কারনও তো জানতে চাইবে যে কেন হুট করে ভার্সিটি চ্যাঞ্জ করেছে।আসল কারন জানলে তো তাঁর সাথে সাথেই বিয়ে দেওয়ার জন্য যুদ্ধ শুরু করবে।যা প্রেমা একদমও চায় না।তাহলে কী করবে এখন??

-" কী ভাবছেন?? "(অভ্রের প্রশ্ন)

 ভাবনার রাজ্য থেকে বের হয় প্রেমা অভ্রের প্রশ্নে।কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না! সবকিছু সাইডে রেখে একটা তো সিদ্ধান্তঃ নিতেই হবে..??

--"আপনাদের ভার্সিটি কোথায়?? কতদূর হবে??" (প্রেমা)

--" বেশিদূর নয়! গেলেই দেখতে পাবেন! এখন আপনি কী চান এডমিশন নিতে??"(অভ্র)

"হ্যাঁ।(অভ্রের দিকে তাকিয়ে)

তখনি অভ্র প্রেমার আরেকটু কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। এতে প্রেমা ভয় পেয়ে পিছিয়ে যেতে গিয়েও থেমে যায়। কারন অভ্র খামটি প্রেমাকে এগিয়ে দিচ্ছিলো। এরপর বলল,

--" আমি আপনাকে হেল্প করবো কিন্তু তার বিনিময়ে আমারও কিছু চায়??(প্রেমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে কথাটি)

এবার প্রেমার টনক নড়ে উঠে।কী বলে ছেলেটা?? বিনিময়ে কিছু চায় মানে?? কী চায় ছেলেটা?? কাল পর্যন্তও দুজনে অপরিচিত ছিলো হঠাৎ আর কী বা এমন চাওয়ার উৎপত্তি ঘটলো?? প্রেমা এসব ভাবছিলো! তখনি অভ্র বলে উঠে...

--"কিছু বলছেন না যে??"(অভ্রের প্রশ্ন)

--"মানে কী চাওয়ার কথা বলছিলেন??(ভাঙা গলায় বলে উঠে)

এবার অভ্র শব্দ করে হাসতে লাগলো প্রেমার দিকে চোখ রেখে। এতে প্রেমা সাথে সাথে অভ্রের দিকে তাঁকাল খুব অমায়িক লাগছে প্রমার কাছে অভ্রের হাসিটা।অতিরিক্ত সুন্দর লাগছে অভ্রকে এ মুহুর্তে । পরে আবার কারন ছাড়া হাসতে দেখে কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে চেয়ে রইলো অভ্রের দিকে। তারপর মৃদু কন্ঠে বলল,

--" কি চায় আপনার??"

--" ফ্রেন্ডশীফ?? আই মিন... আমার সাথে ফ্রেন্ডশীফ করবেন?? আমার কোনো ফ্রেন্ড নেই..কখনো কারো সাথে ফ্রেন্ডশীফ করিনি! একা থাকতে পছন্দ করতাম কারো সাথে মিশতাম না! আজই ফার্স্ট টাইম আপনাকে আমার ফ্রেন্ড হওয়ার জন্য প্রপোজ করলাম?? আপনি কি রাজি?? "(অভ্র)

অভ্রের কথায় প্রেমা এবার বেশ লজ্জায় পরে যায়। কী ভেবেছিলো ছেলেটার সম্পর্কে আর কী হলো। কিন্তু এভাবে কেউ ফ্রেন্ডশীফ করার জন্য প্রপোজ করে প্রেমার  সত্যিই জানা ছিলো না।মনে হচ্ছিলো ফ্রেন্ড না গার্লফ্রেন্ড হওয়ার জন্য প্রপোজ করেছে?? চুপচাপ অভ্রের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে এসব ভাবছে। অভ্র প্রেমার দিকে তাঁকিয়ে রইলো উত্তরের আশায়।

--" আপনি কী রাজি?? "(অভ্র)

প্রেমা এবার সাথে সাথে উত্তর দিয়ে দেয় " হ্যাঁ"

কথাটা শুনার সাথে সাথে ঠোঁটের কোনায় অদ্ভুত রহস্যময় হাসির রেখা ফুঁটে তুলে অভ্র।ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় খোপ মেরেছে সে। সময়টা ওষুধের মতোই কাজে দিলো।

পকেট থেকে একটা বেসলেট বের করে। প্রেমার আরো কাছে গিয়ে আলতো করে বাঁ হাতটা ধরে বেসলেটটা পরিয়ে দেয়।খুব সুন্দর বেসলেটটা ছোট ছোট গোলাপি রঙের ফুল চেইনের উপরে বসানো প্রেমার ফর্সা হাতে বেশ মানিয়েছে এটা।

এবার প্রেমা অবাক হয়ে যায় এবং ভাবছে এতো মনে হয় আগেই থেকেই সব প্ল্যানিং করে রেখেছিলো। নাহলে এ সময়ে হঠাৎ বেসলেট পেলো কোথায়??

প্রেমার কিছু বলবে তার আগেই অভ্র বলে উঠল,

-" আসার সময় দেখেছিলাম একটা দোকানে ভালো লেগেছিলো তাই নিয়ে নিলাম! আপনার জন্য ভেবেই নিয়েছি। কিন্তু সেটা দেখার বিষয় নয়..আমার ফ্রেন্ডশীফ বাকি নরমাল ফ্রেন্ডশীফের মতো না। কিছু রুলস আছে।যা আপনাকে বাধ্যতামূলক মানতে হবে...??(অভ্র বেশ সুন্দর করে কথাটা বলে)

এবার প্রেমার মাথা ঝিমঝিমিয়ে উঠে,নিজেকে পাগল পাগল লাগছে।বেঞ্চিতে বসে পড়লো।অবাকের উপর অবাক হচ্ছে সে আজ। এমন এমন কান্ড নিজের চোখের সামনে ঘটছে যার ব্যখ্যা সে নিজেও করতে পারবে না। ফ্রেন্ডশীফ করতে সমস্যা নেই কিন্তু রুলস সেটা আবার কী?? ফ্রেন্ডশীফ করতে রুলস ফলো করতে হয়? তাও আবার বাধ্যতামূলক....'ধ্যাত'..এমন একটা শব্দ মনে মনে উচ্চারন করে।

--" আপনি এখন আর না করতে পারবেন না??কারন আপনি একটু আগে একসেপ্ট করেছিলেন আমার প্রপোজ। যদি রিজেক্ট করেন তো আপনাকে জরিমানা দিতে হবে...(কথাটা বলেই প্রেমার দিকে তাকায়) 

প্রেমা এবার হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না। ভাবছে ছেলেটা খুব অদ্ভুত! অদ্ভুত চিন্তাভাবনা তার।ফ্রেন্ডশীফ করার জন্য প্রপোজ!! "অশ্চর্যের বিষয়' প্রেমার আর কথা না বাড়িয়ে বলে উঠে...

--" রুলসগুলো কী বলেন??"

--"আস্তে আস্তে জানিয়ে দিবো।" এখন বাসায় চলেন সবাই চিন্তা করছেন (অভ্র)"

কথাটা শুনা মাত্রই প্রেমা দাঁড়িয়ে যায় সাথে অভ্রও। সামনের দিকে হাঁটতে লাগলো। দুজনে নিশ্চুপ!  কিছু সময় অতিক্রম হওয়ার পর প্রেমা বলে উঠে...

--"আপনি কোন ডিপার্টমেন্ট?? "

অভ্র ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বলে....

--" ডিপার্টমেন্ট নেই। আমি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে!(অভ্র)

অভ্রের কথা শুনামাত্রই গাড়ির মতো ব্রেক কষাল প্রেমা।  দাঁড়িয়ে অভ্রকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করে নেয়।

--"তুমি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে?? তারমানে তুমি তো আমার ছোট??  আর আমি ভাবলাম তুমিই আমার সিনিয়র?? বাই চান্স তুমি কী কোনো ক্লাসে ফেল করেছিলে?? ( প্রেমার দ্রুতগতীতে করা প্রশ্নের জবাবে)

মলিন একটা হাসি দেয় অভ্র আর বলে.."জানি না"

--জানো না মানে আমি তো ড্যাম সিউর তুমি ফেইল করছিলে,,নাহলে এতো বড় হয়ে ইন্টারে বইসা থাকো কেমনে??(সন্দেহের দষ্টি নিয়ে তাকিয়ে) 

--"তেমন কিছু না " (বলেই হাঁটা ধরে)"

প্রেমা অভ্রের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে..

--'কিছুনা মানে??(কিছুক্ষণ থেমে জিজ্ঞেস করে)
" কী হয়েছে হঠাৎ??  

--"কিছু না বাসায় চলেন! দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।(গম্ভীর ভাবে কথাটা বলে) 

তারপর দুজনে হেঁটে পার্ক থেকে বের হয়ে রাস্তায় যায়।রাস্তায় গিয়ে দেখে অভ্রের বাইকটা।সেখানে গিয়ে অভ্র বাইকে বসে প্রেমাকে বসতে বললে প্রেমা আমতা আমতা করে লাগলো। এর আগে বাইকে ছড়েনি। তাই
ভীষণ ভয় করছিলো।

--" ভয় পাচ্ছেন নাকি?? (অভ্র)

--চুপ করে আছে।

--"ভয় পেতে হবে না। আমি আস্তে চালাবো,,,আসুন?? 

অভ্রের কথায় প্রেমা কিছুটা আশ্বাস পেলেও ভয়টা রয়ে গিয়েছে মনের মধ্যে। হালকা দূরত্ব রেখেই বাইকে বসে পরে। বাইক আস্তে আস্তে চালাতে লাগলো। তারপর বাসায় এসে পৌঁছালো যায় দুজনে।

বাসায় পৌঁছাতেই সবার প্রশ্নের আক্রমণ।

--কিরে তোরা দুজনে আজ সারাদিন বাড়ি ফিরিস নি কেন?? কোথায় ছিলি??(অভ্রের দাদি)

প্রেমা এবার হকচকিয়ে অভ্রের দিকে তাকাল।সেও বাড়িতে ছিলো না?? তাহলে কোথায় ছিলো?? যখন পার্কে গিয়েছিলো তখন তো সন্ধ্যা ছিলো। তাহলে কোথায় ছিলো??

অভ্র প্রেমার দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার তার দাদুর দিকে তাঁকাল।তারপর বলে।

--উনার ফেন্ড মিমের শরীর খারাপ হয়ে গিয়েছিলো হঠাৎ তাই উনাকে হসপিটালে নিয়ে যায়। আমরা সেখানে ছিলাম দুপুর থেকে ।আর উনাকে একটু আগে বাসায় পৌঁছে দিয়ে তারপর এখানে আসলাম! (অভ্র)

অভ্র কথাটা এমনভাবে বলল যে আর কারো কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ ছিলো না তাদের। তারপর সে চুপচাপ উপরে চলে যায়।

প্রেমাতো আরেক ঝাটকা খেয়েছে এখন আবার। একে তো এতো বড় একটা মিথ্যে বলল তার উপর মিম ওর ফ্রেন্ড এ কথাটা অভ্র কিভাবে জানলো??সেটাও মনে মনে ভাবছে প্রেমা।

--" যাও মা ফ্রেশ হয়ে আসো! সারাদিন তো কিছুই খাও নি দুজনে, যাও। ডিনারটা তাড়াতাড়ি করে নিও তোমর।(অভ্রের মা)

প্রেমা একটা মুচকি হাসি দিয়ে রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল।আর মনে মনে ভাবছে অভ্রের কাছ থেকে সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর নিবে সময় পেলেই।

সকালে.....

অভ্র আপনমনে বাইক চালাচ্ছে আর প্রেমা তার পেছনে বসা। কাল তাদের ফ্রেন্ডশীফ হওয়ার পর অনেকটা ফ্রি হয়ে যায় দুজনে।এখন ভার্সিটিতে যাচ্ছে দু'জনে।

কিন্তু প্রেমা ভাবছে অন্য কিছু।বারবার পেঁছনে তাঁকাচ্ছিলে। কারন সেই ব্ল্যাক কারটা ওদের পেঁছনে পেঁছন আসছে। প্রেমা গাড়িটা ভালোভাবেই চিনে কারন গত ছয়মাস ধরেই এই গাড়িটিকে সে তার সাথে কলেজে যাওয়ার সময় দেখতো।তাই চিনতে একটুও ভুল হচ্ছে না প্রেমার। কিন্তু গাড়ির মালিকটা কী চায়??  বারবার ওর পেঁছন পেঁছন কেন আসে?? এমন প্রশ্নই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে প্রেমার!!???

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন