০১!!
"আমি কেবল তোমার ইচ্ছে অনিচ্ছের মহতাজ নই অয়ন- আমারও কিছু ইচ্ছে অনিচ্ছে-ভালো লাগা মন্দ লাগা আছে। আমারও মন খারাপ হয়। আমারও রাগ হয়। বিরক্ত লাগে। আমারও কষ্ট হয়-কান্না আসে। আমি তোমার ওয়াইফ হয়েছি বলে কি আমার সেসব দেখানোর কোন অধিকার নেই? স্ত্রী হয়েছি বলে তোমার প্রতিটা কথা আমার শুনতেই হবে? আর আমার কথাটা তুমি কানেও তুলবে না-এ কেমন যুক্তি? তুমি স্বামী বলে কি সবসময় তোমার প্রভুত্ব স্বীকার করে নিবো? নিজের কোন আত্মসম্মান থাকতে নেই আমার নাকি?"
অয়নকে ঠিক কি কি বলবে তা মনে মনে আজও একবার গুছিয়ে নিয়েছে সারিকা। প্রতিদিনই গুছিয়ে নেয় কথাগুলো মনে মনে। কিন্তু বলা হয়ে উঠে না। এ সময়টা চিৎকার করে অয়নকে বলতে ইচ্ছে হয়- "তুমি খুনী। তুমি প্রতিটা দিন খুন করেছ আমার প্রতিটা ছোট্ট স্বপ্নের টুকরোকে।প্রতিটা দিন তোমার মধ্যে আমি আমার সন্তানের খুনীকে দেখতে পাই। দেখতে পাই নিজের সন্তানের খুন করেও কিভাবে একজন মানুষ দিব্যি হেসে ঘুরে বেড়ায়। কিভাবে সম্ভব? তোমাকেই কি পাগলের মতো ভালোবেসে ঘর ছেড়েছিলাম আমি? কেন করলে এমনটা? কি হতো আমার ছোট্ট পরীটা থাকলে? তুমি চাও নি ও আসুক দুনিয়ায়? কেন? দায়িত্ব এড়াতে? আমি নাহয় ওকে নিয়ে অনেক অনেক দূরে চলে যেতাম? কেন পরীটাকে আমার থেকে দূর করে দিলে? কি দোষ ছিল আমার পরীর?
সারিকা এসব ভাবতে ভাবতেই কখন যে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেছে সে নিজেই জানে না। অয়ন অফিস থেকে ফিরে দেখলো সারিকা ফ্লোরে বসে বিছানায় মাথা রেখেই ঘুমিয়ে গেছে। এই মেয়েটাকে নিয়ে যে কি করবে ভেবে পায় না অয়ন। আলতো করে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে খাটে শুইয়ে দিল। ফ্রেশ হয়ে এসে সারিকার মাথার কাছে বসে মুখের দিকে তাকালো অয়ন। চোখ মুখ ফুলে গেছে। আবার নিশ্চয়ই কান্নাকাটি করেছে মেয়েটা! গালের উপর চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পড়ে লেপ্টে আছে। ছোট্ট কয়েকগাছি চুল সারিকার ভিজে মুখে আটকে আছে। অয়ন আলতো হাতে মুখের উপরে আসা চুলগুলো সরিয়ে দিল। মেয়েটার চোখ মুখ বসে গেছে। এতো কাঁদে কেন পাগলীটা?
আলতো হাতে সারিকার পেটের উপর থেকে শাড়ির আঁচলটা সরিয়ে হাত রাখলো অয়ন।
-বল তো বাবুই? তোর মাম্মা আজকেও খুব কান্না করেছে না রে?
নিজের পাগলামিতে নিজেই হেসে ফেলল অয়ন। ধীরে হাত বুলিয়ে দিল সারিকার পেটে। ছোট্ট একটা প্রাণ বাড়ছে এখানে। ওদের ভালোবাসার চিহ্ন হয়ে। পাগলিটাকে এইসময়টায় একটু বেশি খেয়াল রাখতে হচ্ছে। ডাক্তার বলে দিয়েছে আগের বারের মতো এবার কিছু হলে এবারে আর মেয়েটাকে বাঁচানো যাবে না। অজান্তেই একজনকে হারিয়েছে অয়ন। এইবার আর একজনকেও হারিয়ে যেতে দিবে না সে। কিছুতেই না।
অয়ন আরেকবার সারিকার পেটে হাত বুলিয়ে একটু ঝুঁকে এসে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। রান্নাঘরে মা বসে আছে ওদের জন্য খাবার সাজিয়ে। অয়ন প্লাষ্টিক মার্কা হাসি দিয়ে মায়ের দিকে এগিয়ে গেল।
-কি রে? বউমা কোথায়?
-সারু ঘুমাচ্ছে মা--। সকাল থেকে খেয়েছে আর কিছু?
-তোর বউ খায় নিজে থেকে? কতবার ডাকলাম--। নিচে এলোই না খেতে--।
-জানোই তো মা--। ও নিজে থেকে খেতে চায় না। জোর করে খাওয়াতে হয়--। তুমি খাবারটা দাও--। আমি খাইয়ে আসি--।
-তো তুই কি প্রতিদিন দুপুরে এসে খাওয়াবি নাকি ওকে?
-কি করবো বলো? আগেরবার মিসক্যারেজ হওয়ার পর তো দেখেছো--? দুটো বছর পর একটু সুস্থ হয়েছে--। এবার বেবির কিছু হলে ওকে আমি আর বাঁচাতে পারবো না মা--। আর নিজেও বাঁচতে পারবো না-----।
-যা তো--। খাইয়ে দিয়ে আয়--। আমার হয়েছে যত জ্বালা---।
মা নিজ হাতে খাবার বেড়ে দিল সারিকা আর অয়নের জন্য। অয়ন দুহাতে দু প্লেট নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে। অর্ধেক পর্যন্ত উঠতেই কি করে যেন অয়নের পা একটা সিঁড়ি স্লিপ করে গেল৷ হাত থেকে প্লেট দুটোই পড়ে গেল ধুম করে। প্লেট ভেঙে খাবার পুরো সিঁড়িতে সিঁড়িতে হলো। অয়নের মা ছুটে এলেন।
কিছু ভাঙার শব্দে সারিকারও ঘুম ছুটে গেল। কোনমতে টাল সামলে ছুটে সিঁড়ির দিকে এলো।
-কি হয়েছে?
মাথা ঘুরিয়ে অয়ন দেখলো সারিকা সিঁড়ির ধাপের একদম কাছে এসে গেছে। অয়ন চোখ গরম করে তাকালো সারিকার দিকে।
-সারু? জাস্ট ওখানেই স্টপ--। আর এক পা ও সামনে না বলে দিলাম---।
-কি হয়েছে?
-কিছু হয় নি তো পাগলি---। পা স্লিপ করেছিল হঠাৎ---। খাবার নিয়ে আসছিলাম--। প্লেট পড়ে গেছে--। খাবার ছিটিয়ে কি বাজে অবস্থা হয়েছে দেখছ তো!--- এবার রুমে যাও? ফ্রেশ হও---। আমি খাবার নিয়ে আসছি--। যাও না পাগলিটা?
সারিকা গাল ফুলিয়ে রুমের দিকে চলে যেতেই অয়ন ভ্রু কুঁচকে সিঁড়িতে পড়া প্লেট-খাবার এসব দেখছে। হঠাৎ করে পা পিছলে কেন গেল বুঝতে পারছে না। মায়ের দিকে চোখ পড়তে একটু লাজুক হাসলো অয়ন।
-সরি মা---। আরেক প্লেট খাবার দাও--। দুহাতে মে বি ব্যালেন্স করতে পারি নি----।
-যত্তসব-------।
অয়ন নতুন করে আরেক প্লেট খাবার নিয়ে রুমে এসে দেখলো সারিকা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটা ইদানিং কথায় কথায় অভিমান করে কেঁদে কেটে একটা অবস্থা করে ফেলে। আবার বোধ হয় কাঁদছে। এভাবে ধমকে কথা বলাটা ঠিক হয় নি। খাবার যেভাবে ছড়িয়েছে পাগলিটা সিঁড়িতে পা রাখলেই যদি কিছু হয়ে যেত? মেয়েটা কবে বুঝবে ওর চিন্তাটা? শুধু বকাগুলোই দেখে? বকার পিছনে থাকা চিন্তা আর ভালোবাসাগুলো কেন বুঝে না মেয়েটা?
প্লেটটা রুমে রেখে অয়ন সারিকাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল পিছন থেকে৷ ধরতেই একটু ফোঁপানোর শব্দ পেল অয়ন।
-বউ? রাগ করেছ?
-তুমি?
-সরি তো? ও বউ? সিঁড়িতে এতো খাবার পড়েছিল--। যদি ব্যথা পেতে? তাই টেনশনে বকে ফেলেছি---। সরি?
-তুমি বাসায় কি করছো এই দুপুরবেলা?
-আমি কি বলি? আর তুমি কি বলো?
-------------------------------
-সরি তো? ওই?
-তোমার অফিস নেই আজকে?
-আছে তো---। পাগলিটা তো খাবে না নিজে থেকে--। তাই খাইয়ে দিতে এলাম--। খাইয়ে দিয়েই চলে যাবো----।
-মানে? তুমি আমাকে খাইয়ে দেয়ার জন্য এতোটা পথ এসেছ! পাগল হলে? আমি কি নিজে খেতে পারি না?
সারিকা অয়নের দিকে ঘুরে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। অয়নও সুযোগ পেয়ে আলতো করে শাড়ির আঁচল ভেদ করে সারিকার পেটে হাত রাখলো।
-বাবুটার খুব খিদে পেয়েছে তো সোনা? সাথে বাবুর বাবার ও------।
-তুমি কি করে জানলে! আমি তো বলি নি তোমাকে কিছু-----।
-বাহ! বলতে হবে কেন! বাবুটা বুঝি শুধু তোমার একার! কবে কনসিভ করেছ সেটাও তো আমি জানি---। আমারই তো------।
কথাটা শুনেই সারিকা কেঁপে উঠলো। অয়ন কি বলছে এসব! এ কোন অয়নকে দেখছে ও? কিছুই বুঝতে পারছে না। কি হবে সেই ভয়টাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে সারিকার এখন। অয়ন ভ্রু কুঁচকে সারিকার চিন্তিত মুখটা দেখলো। কিছু একটা ভেবে হেসে সারিকার সামনে বসে পড়লো। আলতো করে শাড়িটা সরিয়ে পেটে চুমো খেল। সারিকা কেঁপে উঠে অয়নের কাঁধ শক্ত করে ধরে ফেলেছে। সব যেন স্বপ্নের মতো লাগছে সারিকার। মনে হচ্ছে ঘুমটা ভাঙলেই সবটা মিলিয়ে যাবে হাওয়ায়।
০২!!
অয়ন সারিকাকে রুমে এনে খাটে বসিয়ে হাত ধুতে গেছে। সারিকা একমনে চিন্তা করছে। মানুষটা হঠাৎ এতো বদলে গেল কেন? কি চলছে ওর মনে? বাচ্চাটার কথাও তো জেনে গেছে! এবার কি হবে? পরীটার মতো ওকেও কি ---? কথাটা ভাবতেই কখন মুখ দিয়ে অস্ফুট শব্দ বেরিয়ে গেছে সারিকা জানেও না৷ ভয়ে মুখ চুপসে গেছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। দমটা বন্ধ হয়ে আসছে যেন।
অয়ন হাত ধুয়ে এসে প্লেট নিয়ে সারিকার পাশে বসে ভাত মাখাচ্ছে। এর মধ্যেই সারিকা অস্ফুট স্বরে কয়েকবার "না না না" করে উঠলো। অয়ন প্লেটটা বেড সাইড টেবিলের উপর রেখে সারিকাকে বাম হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বুকে টেনে নিলো। সারিকার আঁতকে ওঠা চোখ এড়ালো না।
-সারু? কি হয়েছে?
-কো-কো-কোথায়?
-কোথায় মানে! না না করছিলে কেন? আর এভাবে চমকে উঠলে কেন?
-কই! না তো? কি-কিচ্ছু হয় নি-।
-সারু? এভরিথিং অলরাইট?
-হুম? হুম-----।
-আচ্ছা লক্ষীটা---। খেয়ে নাও আগে---। হা করো?
চুপচাপ অয়নের কথা মেনে খেয়ে নিল সারিকা। অয়ন ভ্রু কুঁচকে সারিকাকে দেখছে। মেয়েটা কি কোন কিছু নিয়ে খুব ডিস্টার্বড! কি হতে পারে? নইলে এর মধ্যে একবারও সারিকা খেয়াল করে নি অয়ন নিজে না খেয়ে ওকে খাইয়ে দিচ্ছে। অন্যসময় হলে এতোক্ষণে নিজ হাতে অয়নকে খাইয়ে দিত। মেয়েটার পাগলামি ভরা কেয়ার, হাসি, দুষ্টুমিগুলো খুব মিস করছে অয়ন। কিন্তু কিছু বললো না। সারিকাকে খাওয়ানো শেষ হলে হাত ধুয়ে এসে দেখলো সারিকা শুয়ে আছে।। অয়ন সারিকার মাথার কাছে ফ্লোরে বসে সারিকার চুলে হাত বুলিয়ে দিলো। তারপর আলতো করে কপালে চুমো খেল।
-ও বউ? তুমি কি এতো চিন্তা করছো?
-কই?
-আচ্ছা বাবা--। বলো না--। কিন্তু পাগলি--। বাবুটার কথা চিন্তা করে হলেও একটু সময় মতো খেও--। কেমন?
-হুম-----।
-আমি খেয়ে অফিসে যাব--। তাড়াতাড়ি চলে আসার চেষ্টা করবো। টেনশন করো না--।
-আচ্ছা--------।
-সারু? তুমি কি কোন কারণে আমার উপরে রেগে আছো?
-কেন?
-এই যে আমি বললাম যে খেয়ে যাব--। মানে এখনো খাই নি--। কথাটা বোধহয় তুমি শুনতেই পাও নি---।
-------------------------------
-রেগে আছো কেন গো বউ?
-নাহ তো-----।
-মিথ্যে কেন বলছো?
-নাহ--------------।
-সারু? তাকাও আমার চোখের দিকে-। তাকিয়ে বলো তো? কি হয়েছে?
-আমার ভালো লাগছে না অয়ন--। আমি ঘুমাবো-----। তুমি খেয়ে অফিসে যেও----।
-------------------------------
-আর একটা জিনিস এনে দিবে?
-কি লাগবে বলো?
-আমার না খুব কাঁচা পেয়ারা খেতে ইচ্ছে করছে। হাইব্রিডগুলো না---। দেশি ছোট্ট ছোট্ট পেয়ারাগুলো--।
অয়ন হেসে ফেললো সারিকার কথায়। আলতো করে চুমো খেল কপালে। হালকা হাতে পেটের উপর থেকে শাড়িটা সরিয়ে দিয়ে চুমো খেল৷ সারিকা অয়নের হাতটা ধরে ফেলেছে। অয়ন হেসে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিল।
-কি রে? তোরও বুঝি কাঁচা আম না খেয়ে কাঁচা পেয়ারা খেতে ইচ্ছে করছে? আচ্ছা---। বাবাই আসার সময় নিয়ে আসবো---। তবে মাম্মা যেন না কাঁদে--। মনে থাকবে? ওরে আমার লক্ষী বাচ্চাটা---।
অয়ন আরেকবার সারিকার পেটে চুমো খেয়ে আঁচলটা টেনে ঠিক করে দিল। সারিকা লাজুক হেসে পেটে হাত রাখলো। অয়ন উঠে সারিকার কপালে চুমো খেয়ে ড্রেস চেইঞ্জ করে বেরিয়ে গেল। সারিকা আবার চিন্তায় পড়লো। অয়ন কি চায়! ও কি সত্যি এই বাচ্চাটা মেনে নিয়েছে?
চোখ বুজতেই ছয় বছর আগের ঘটনায় ফিরে গেল সারিকা। সবে এইচ এস সি পাশ করেছে। এডমিশন টেস্টের জন্য একটা কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়েছে। প্রথমদিন ক্লাসে এসে একেবারে হা হয়ে গেছে সারিকা। সবাই মোটামুটি কয়েকজনের গ্রুপ করে ভর্তি হয়েছে। শুধু ওরই যেন কোন সাথী নেই এখানে। ভিষণ একা একা লাগছে। যে যার মতো বকবক করছে নিজেদের ফ্রেন্ডের সাথে। সারিকা বিরক্ত হয়েই ক্লাসের বাইরে এসে একটা সিঁড়িতে বসে আছে মুখ গোমড়া করে। শয়তান বান্ধবীটাকে গুলি করতে ইচ্ছে করছে। একসাথে ভর্তি হলে কি হতো!
-এই যে? আপনি এখানে বসে আছেন কেন?
কারো কণ্ঠ শুনে সারিকা সামনে তাকাতেই থতমত খেয়ে গেল। ছেলেটা একটু ঝুঁকে নিচে তাকিয়ে ছিল। সারিকা মুখ তুলে তাকাতেই হা করে তাকিয়ে রইলো। সারিকা নিজেও তো খানিকক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল। সম্ভবত অনার্স থার্ড কি ফোর্থ ইয়ারে পড়ে হয়তো ছেলেটা। চেহারায় যথেষ্ট ম্যাচুরিটি ফুটে উঠেছে। হলদে- তামাটে রঙা মুখটায় চাপ দাড়ি। চুলগুলো একটুও কোঁকড়ানো বা কোঁচকানো না। একদম স্ট্রেইট আর সিল্কি। ইচ্ছে করে একবার ছুঁয়ে দেখতে। পড়নের ধবধবে সাদা শার্টটার হাতা গুটানো কনুই পর্যন্ত। আর কালো গাবাডিং প্যান্টের সাথে কালো সু একদম যেন খাপে খাপে মিলে গেছে। একেবারে যেন হিন্দি ফিল্মের হিরো।
-এই যে? এখানে বসে আছেন কেন? কোন ব্যাচ আপনি?
-জি?
-জি কতো?
-না মানে--। বি-৩২---।
-নতুন ব্যাচ---। তা এখানে বসে কেন?
-সবাই তো নিজেদের গ্রুপে আড্ডা দিচ্ছে--৷ আমি তো একা---।
-এখানে তো আড্ডা দেয়ার জন্য আসেননি---। তিনটা-চারটা মাস ভালো করে পড়ালেখা করে ভালো কোথাও চান্স পেয়ে নিন। তারপর না হয় সারাজীবন ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিবেন---।
-জি----।
-চলুন------৷ ক্লাস শুরু হবে এক্ষুণি-----।
-আপনি?
ছেলেটা কিছু না বলেই মুখ টিপে হেসে উঠে চলে গেল। ক্লাসে এসে জানতে পারলো ছেলেটার নাম অয়ন আহমেদ। অনার্স শেষ। মাস্টার্স করছে আর পার্ট টাইম হিসেবে এই কোচিংয়ে ইংলিশ পড়ায়। অয়নের ক্লাসে সবাই হা হয়ে গেল পড়ানোর স্টাইলে। একে একে সবার নাম জেনে নিয়ে নিজের নাম আর মেবাইল নাম্বার বোর্ডে লিখে দিয়েছে অয়ন। বলেছে কোন প্রয়োজন হলে কল করতে পারে। যাওয়ার সময় সারিকার দিকে তাকিয়ে একটা রহস্যভরা হাসি দিয়ে চলে গেল। বেচারি হাসির কারণ কিছুই বুঝলো না।
মাস খানেক কেটে গেল ক্লাসের। আগের সপ্তাহে তিনদিন অয়নের ক্লাস নেয়ার কথা ছিল। তার জায়গায় অন্য একজন এসে ক্লাস নিয়ে গেছে। এই সপ্তাহের প্রথম ক্লাসটাও যখন অন্য একজন নিল আর ভালো লাগলো না সারিকার। রাতে পড়তে বসে কিছুই পড়া হলো না। মানুষটা ধুম করে কোথায় হারিয়ে গেল বুঝতে পারছে না। ওরই বা কেন এতো মনে পড়ছে সেটাও বুঝতে পারছে না৷ শেষে অনেক ভেবে চিন্তে রাতেই কল করলো সারিকা। নাম্বারটা সেদিনই ফোনে সেইভ করে নিয়েছিল। দুবার কল হতেই রিসিভ করলো কেউ। সারিকা ঢিপঢিপ বুকে অপেক্ষায় রইলো কণ্ঠটা শোনার।