আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

প্রেমাতাল - পর্ব ১৬ - মৌরি মরিয়ম - ধারাবাহিক গল্প


৩১!!

কতক্ষণ পর তিতির ক্লান্ত হয়ে মাটিতে পা রাখলো। মাটিতে ভর দিতেই তিতির টের পেল ও সব শক্তি যেন হারিয়ে ফেলেছে, দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। মুগ্ধর কোমরটা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঢলে পড়লো মুগ্ধর বুকের উপর। নিঃশ্বাস পড়ছিল ঘন ঘন। মুগ্ধ তিতিরের মুখটা ধরে উপরে তুলল তারপর নিজের ঠোঁট দিয়ে চোখের পানিটুকু মুছে দিল। ইশ একি সুখ মুগ্ধ দিচ্ছে ওকে! এত সৌভাগ্য নিয়ে জন্মেছিল ও! আচ্ছা মুগ্ধকে কেমন দেখাচ্ছে এখন? দেখার জন্য তিতির চোখ খুলে তাকালো। মুগ্ধর চোখে চোখ পড়তেই তিতিরের লজ্জা লাগলো, চোখ নামিয়ে নিল। মুগ্ধ জিজ্ঞেস করলো,
-"কাঁদছিলে কেন?"
তিতির কিছু না বলে মুগ্ধর বুকে মুখ লুকালো। খুব ভাল লাগছে ওর, এত ভাললাগা কি করে বোঝাবে মুগ্ধকে? যেভাবেই হোক ও যে বোঝাতে চায়।
মুগ্ধ তিতিরকে নিজের বুকের মধ্যে চেপে ধরে রইলো। এত ভাল অনুভূতি এর আগে কখনো হয়নি ওর। এর আগেও অসংখ্যবার চুমু খেয়েছে প্রাক্তন প্রেমিকাদের। কিন্তু আজ মনে হলো জীবনের প্রথম চুমু ছিল এটা। প্রথম অভিজ্ঞতা। তিতিরের আনাড়িপনা ও লজ্জা ব্যাপারটাতে অন্যরকম মাধুর্য এনে দিয়েছে। তিতির ভালই করেছে ওকে এতদিন অপেক্ষা করিয়ে। অপেক্ষার ফল সুমিষ্ট হয়!
মুগ্ধ তিতিরকে কোলে তুলে নিল। তিতিরও গলা জড়িয়ে ধরল, কিন্তু তাকাতে পারলো না ওর দিকে। মুগ্ধ ওকে কোলে নিয়েই বারান্দায় রাখা সোফাটায় বসলো। তারপর বলল,
-"চুপ করে আছো যে? কথা বলবে না?"
তিতির নিচু স্বরে
-"কি বলবো?"
-"কেমন লাগলো সেটা বলো?"
-"তুমি তো সবই বোঝো। আমি আর কি বলবো?"
-"বুঝি তো কিন্তু আমার তিতিরপাখিটার মুখে কি শুনতে ইচ্ছে করে না?"
তিতির মুগ্ধর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
-"সুখের সমুদ্রে ডুবে ছিলাম। মরে যেতে ইচ্ছে করছিল। যদি এত সুখের মুহূর্ত আর না আসে?"
তিতিরের উষ্ণ নিঃশ্বাস কানে লাগতেই মুগ্ধ কোথায় যেন হারিয়ে গেল। তিতিরকে বুকের উপর নিয়েই সোফাতে শুয়ে পড়লো। তিতির উপুর হওয়াতে ওর ভেজা চুলগুলো মুগ্ধর মুখের উপর পড়লো। মুগ্ধ চুলগুলোকে সরিয়ে বলল,
-"সুখের সমুদ্রে তো তোমাকে নিয়ে মাত্র পা ভেজালাম। এখনি মরতে চাও? যখন সাঁতার কাটবো তখন কি বলবে?"
একথা শুনে লজ্জায় তিতির আচমকাই উঠে পড়ল। মুগ্ধ আঁচল টেনে ধরতেই তিতির দাঁড়িয়ে পড়লো। মুগ্ধ কাত হয়ে সরে তিতিরকে বসিয়ে বলল,
-"আরে এখনি না তো! বিয়ের পরে। তুমি তো মাত্র ১৭। ১৮+ কাজ কি আমি তোমার সাথে করতে পারি বলো?"
তিতির কিছু বলল না, শুধু হাসলো। মুগ্ধ ওকে বুকে নিয়ে বলল,
-"ইশ একটু তাড়াতাড়ি বড় হও না, বিয়ে করি।"
-"বড় হওয়ার মন্ত্র থাকলে আজই পড়ে বড় হয়ে যেতাম।"
-"তাই? সাঁতার কাটার এত ইচ্ছে?"
তিতির মুগ্ধর বুকে কিল মারতে মারতে বলল,
-"তুমি এত খারাপ কেন?"
-"তুমি এত লক্ষী বলে।"
এমন সময় মুগ্ধর ফোন বাজল। বংশী ফোন করেছে। মুগ্ধ ফোন ধরলো। বংশী কি বলল তা তো তিতির শুনতে পেল না কিন্তু তারপর মুগ্ধ বলল,
-"হ্যা, হ্যা.. তুমি নিয়ে এসো।"
ফোন রাখতেই তিতির বলল,
-"কি নিয়ে আসতে বললে?"
মুগ্ধ হাসলো। তিতির বলল,
-"কি? হাসছো যে?"
-"না মানে একটা কথা মুখে চলে এসেছিল, বললে তুমি লজ্জায় আমার সামনেই আর আসতে না তাই গিলে ফেলেছি। ওটা ভেবেই হাসলাম।"
তিতিরের মনে মনে রাগ হলো। এহ সারাদিন রাজ্যের আজেবাজে কথা বলতে থাকে, এখন একদম তুলসী পাতা হয়ে গেছে! কথাটা জানার জন্য মনটা আকুপাকু করলেও আর জিজ্ঞেস করতে পারলো না তিতির। বংশী এসে দরজায় নক করতেই মুগ্ধ গিয়ে খুলে দিল। পিছন পিছন তিতিরও ঘরে ঢুকলো। তিতিরকে শাড়ি পড়া দেখেই বংশী বলল,
-"দেখলিজিয়ে সাহাব, বিবিজিকো আব ছোটা নেহি লাগতা।"
তিতির হাসলো।মুগ্ধও হেসে বলল,
-"হ্যা।"
-"সাহাব, ডিনারপে কেয়া খায়েগা আপ দোনো?"
মুগ্ধ তিতিরের দিকে তাকিয়ে বলল,
-"এই তুমি কি খাবে?"
তিতির বলল,
-"খেয়ে না এলাম? আমি আর কিছু খাব না।"
-"খেয়েছি তো সেই ৬/৭ টার সময়। এখন তো ১০ টা বাজতে চলল।"
-"হোক।"
বংশী বলে উঠলো,
-"নেহি বিবিজি.. ইয়ে সাহি বাত নেহি! রাত কা খানা বহত জারুরি হোতা হেয়।"
মুগ্ধ বংশীকে বলল,
-"তোমার বিবিজির কথা বাদ দাও.. ও খাবে কি খাবে না আমি দেখে নেবো। তুমি দুজনের জন্য নরমাল কিছু নিয়ে এসো ১১ টার দিকে। যেমন ধরো ভাত, মাছ, ভর্তা।"
-"সাহাব, চিকেন গুতাইয়া হেয়। ও ভি দিব?"
-"ওহ ওয়াও। অবশ্যই দিবে।"
বংশী চলে গেল। যাওয়ার সময় মুগ্ধর হাতে একটা বোতল দিয়ে গেল। তিতির জিজ্ঞেস করলো,
-"এটা কি?"
-"এটা দিতেই তো বংশী এসেছিল।"
-"হ্যা কিন্তু জিনিসটা কি?"
-"মহুয়া।"
-"সেটা কি? মদ?"
-"ছি, এভাবে বলো না। যদিও ওই টাইপেরই। কিন্তু মহুয়া ইজ মহুয়া। চরম একটা জিনিস। খাসিয়ারা বানায় ফল দিয়ে।"
-"মানে কি? মদ তো মদই। তুমি যদি ওটা খাও আমার ধারেকাছেও আসবে না। ছিঃ আর তুমি মদ খাও আমি ভাবতেও পারিনি। আমি জানতাম তোমার কোনো নেশা নেই।"
মুগ্ধ বোতলটা সোফার সামনের টি-টেবিলের উপর রেখে তিতিরের কাছে এসে বলল,
-"আরে বাবা, আমাকে একটু বলার সুযোগ দাও।"
তিতির সরে গিয়ে বলল,
-"কি সুযোগ দেব? ছিঃ তুমি মদ খাও ভাবতেই আমার গা গোলাচ্ছে।"
মুগ্ধ তিতিরকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-"শোনো তিতিরপাখি, আমার সত্যিই কোনো নেশা নেই উইদাউট ইউ। ইভেন অকেশনালিও এসব করিনা শুধু বান্দরবান আর কুয়াকাটা গেলে মহুয়াটা খাই। তাও প্রত্যেকবার না। এটা অন্যরকম স্বাদ। আমি প্রথমবার যখন খেয়েছিলাম তখনই ঠিক করে রেখেছিলাম যে বউয়ের সাথে একবার খাব। সেজন্যই বংশীকে দিয়ে আনিয়েছি।"
তিতির চোখ বড় বড় করে বলল,
-"আমি খাব?"
-"হ্যা, মানে অল্প।"
তিতির সরে গেল। বিছানায় বসে বলল,
-"অসম্ভব।"
মুগ্ধ তিতিরের পাশে বসলো। বলল,
-"এক চুমুক খেয়ে ট্রাই করো। ভাল না লাগলে খেয়ো না।"
তিতির হ্যা না আর কিছু বলল না। প্রসঙ্গ পাল্টালো,
-"বাদ দাও, আচ্ছা উনি না বলেছিল কোনো কটেজ খালি নেই, তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থা করবে। তাহলে পরে আমরা কটেজ কিভাবে পেলাম?"
-"ওহ এই কটেজটা অলরেডি বুকিং দেয়া। যারা বুক করেছে তারা কাল আসবে। তাই আজ আমাদের দিতে পারলো।"
-"ও।"
মুগ্ধ তিতিরের একটা হাত ধরে বলল,
-"তুমি রাগ করেছো?"
-"কেন?"
-"মহুয়া আনালাম বলে?"
-"না তা না কিন্তু আমি এগুলো পছন্দ করি না।"
-"এই তোমাকে ছুঁয়ে বলছি নেশা জাতীয় কোন কিছুই আমি রেগুলার করি না।"
তিতির আহ্লাদ করে হাসলো। তারপর বলল,
-"আচ্ছা ঠিকাছে।"
মুগ্ধ হঠাৎই বলল,
-"সিরিয়াসলি তোমাকে শাড়ি পড়ায় বড় লাগছে। একদম বউ বউ।"
তিতির হাসলো। মুগ্ধ তিতিরের কোমর ধরে কাছে নিয়ে আসলো। তারপর বলল,
-"বিয়ের পর সবসময় আমার সাথে যখন থাকবে ফর সিওর তুমি খুব বিরক্ত হবে।"
-"কেন?"
-"এইযে, তোমাকে এক মুহূর্তের জন্য ছাড়বো না যে। বুকেই রাখবো।"
-"তখন আর এত আকর্ষণ থাকবে না।"
-"কে বলল তোমাকে?"
-"পুরোনো হয়ে যাব না?"
-"কিছু জিনিস কখনো পুরোনো হয়না তেমনি কিছু মানুষও কখনো পুরোনো হয়না। প্রতিদিন নতুন করে ভাললাগা জন্মায় তাদের প্রতি।"
-"সত্যি তো?"
-"সত্যি।"
ওদের গল্প চলতেই থাকলো। এক সময় বংশী খাবার দিয়ে গেল। তিতির বলল,
-"আমার না তোমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিতে ইচ্ছে করছে, দিই?"
-"কি সৌভাগ্য! কি সৌভাগ্য! প্লিজ দাও।"
তিতির এলোমেলো চুলগুলোকে হাতখোঁপায় বেঁধে কোমরে আঁচল গুঁজে নিল। মুগ্ধ তাকিয়ে রইলো ভ্যাবলার মত। একদম গিন্নী গিন্নী লাগছে। এই সৌন্দর্য কোথায় ছিল এতদিন?
তিতির হাত ধুয়ে ভাত নিল প্লেটে। ভাত মেখে মুগ্ধর মুখে সামনে তুলে ধরলো। মুগ্ধ তখনও তাকিয়ে। তিতির বলল,
-"কি হলো? নাও খাও।"
মুগ্ধ হা করলো তিতির খাইয়ে দিল। মুগ্ধ বলল,
-"তুমিও খাও।"
-"তুমি খাও, আমার ইচ্ছে করছে না।"
-"ওকে আমিও খাব না, রাখো।"
-"আচ্ছা আচ্ছা খাচ্ছি, বাপরে বাপ! ব্ল্যাকমেইলর একটা।"
তিতিরও খেল। মুগ্ধ হেসে দিল। খাওয়াদাওয়া শেষ করে তিতির যখন হাত মুখ ধুয়ে প্লেটগুলো গোছাচ্ছিল। পিছন থেকে মুগ্ধ ওকে ধরে নিজের দিকে ফেরালো। কপালে একটা চুমু দিল। তারপর চোখে চোখ রেখে বলল,
-"তোমাকে যতটা বাচ্চা ভাবি ততটা বাচ্চা তুমি নও।"
-"একথা কেন বললে?"
-"এইযে এত সুন্দর করে খাইয়ে দিলে। তারপর এই খোঁপা! আঁচল কোমড়ে গোঁজা। সব মিলিয়ে পারফেক্ট বউ।"
-"আমার সবই তো তোমার পারফেক্ট লাগে। আমার খারাপটা বলোতো। ভাল শুনতে শুনতে আমি টায়ার্ড।"
-"তোমার খারাপটা হচ্ছে তুমি খুব কিপটা।"
-"কি কিপটামি করেছি?"
-"আদর করতে কিপটামি করো সবসময়। নিজে থেকে তো শুধু জড়িয়ে ধরো আর কিছুই না। আমাকেও করতে দাওনা।"
তিতির লাজুক মুখে বলল,
-"আজ তো দিয়েছি।"
মুগ্ধ তিতিরের শাড়ির ভেতর দিয়ে কোমরের কার্ভে হাত রেখে বলল,
-"তাই?"
তিতির একটু নড়ে উঠে বলল,
-"ছাড়ো সুড়সুড়ি লাগে।"
মুগ্ধ আস্তে আস্তে হাতটা উপরের দিকে ওঠাতে লাগলো। তিতির ছটফট করতে লাগলো। সরে যেতে চেয়েও পারলো না। মুগ্ধর একহাত ওকে ধরে রেখেছে। অবশেষে বলল,
-"দোহাই লাগে ছাড়ো। নাহলে মরে যাব।"
মুগ্ধ হাত সরিয়ে নিল, ছেড়ে দিল। তারপর বলল,
-"দেখেছো! আমি কিছু করতাম না জাস্ট দেখালাম তুমি কত কিপটা।"
তিতির নিচু স্বরে বলল,
-"আমার খুব সুড়সুড়ি লাগছিল।"
মুগ্ধ মুচকি হেসে বলল,
-"হুম জানি, আমি দুষ্টুমি করছিলাম।"
তিতির মুগ্ধর কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-"এটাতে কখনো কিপটামি করিনা আমি।"
মুগ্ধও ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-"হুম, আর এটাই আমাকে সবথেকে বেশি শান্তি দেয়। যতক্ষণ তুমি দূরে থাকো, উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ের মত উথাল পাথাল করতে থাকে বুকের মধ্যে। তারপর যখন এসে জড়িয়ে ধরো সব ঠান্ডা হয়ে যায়। তখন আমার চেয়ে সুখী মানুষ পৃথিবীতে আর একটিও পাবে না।"
তিতির বলল,
-"আমারও একই অবস্থা হয়।"
কিছুক্ষণ পর মুগ্ধ বলল,
-"এই চলো মহুয়া খাই, তুমি কখন ঘুমিয়ে পড়বে তার ঠিক নেই।"
-"আমি কিন্তু অল্প একটু খাব।"
-"হুম। অল্পই পাবে, বেশিটা পাবে কোথায় আমারই লাগবে ওটুকু।"
-"খেলে কি নেশা হয়?"
-"অল্প খাবেতো, নেশা হবে কোত্থেকে?"
-"তুমি তো বেশি খাবে।"
-"আমার তো অভ্যাস আছে রে বাবা। আরো বেশি খেয়েও নেশা হবে না। আর নেশা হলেও তোমার ভয় পাওয়ার কিছু নেই। নেশা হলে আমি খুব ঠান্ডা হয়ে যাই। চুপচাপ বসে থাকি।"
-"ও।"
মুগ্ধ বংশীকে ফোন করে বরফ আনালো। বরফ, গ্লাস আর মহুয়ার বোতল নিয়ে ওরা বারান্দায় চলে গেল। মুগ্ধ গ্লাসে ঢেলে এগিয়ে দিতেই তিতির বলল,
-"পানি মেশাবে না?"
-"আরে এটা ওইটাইপ না বাবা। এটা মহুয়া। পানি মেশানো লাগে না। পানি মেশালে টেস্টই চলে যাবে।"
-"ও।"
মুগ্ধ এক গ্লাস খেয়ে ফেলেছে, তিতির তখনো একটু খানি হাতে নিয়ে বসে রয়েছে ওর পাশে, মুখে দেয়নি। মুগ্ধ তা দেখে বলল,
-"খেতে যদি একান্তই ইচ্ছা না করে জোর করে খেওনা।"
-"না, তেমন কিছু না।"
তিতির মুখে দিল। ঘ্রাণটা সুন্দর, খেতেও টেস্টি কিন্তু গলা দিয়ে নামার পর কেমন যেন লাগলো। কয়েক সেকেন্ড যাওয়ার পর তিতির বলল,
-"ওয়াও, গ্রেট!"
-"কি?"
-"টেস্ট টা! খাওয়ার কতক্ষণ পরে বেশি ভাল লাগে।"
মুগ্ধ হেসে বলল,
-"বলেছিলাম।"
গ্লাসের টুকু শেষ করে তিতির বলল,
-"আমি আরো খাব।"
-"পাগল? নেশা হয়ে যাবে তোমার।"
-"না না হবে না। প্লিজ আরেকটু দাও না।"
-"না বাবা, এমন করোনা। টেস্টটা অনেক ভাল বলে তোমাকে আমি টেস্ট করিয়েছি। তার মানে এই না যে আমি তোমাকে আরো দিতে পারি। এটা অনেক কড়া।"
মুগ্ধ কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিতির বোতলে মুখ লাগিয়ে ঢকঢক করে খেতে লাগলো। তারপর মুগ্ধ টেনে নিয়ে নিল। বলল,
-"ইশ কেন যে আনতে গেলাম।"
-"কেন? খুব ভাল করেছো আনতে দিয়ে। খুব মজা তো।"
ততক্ষণে তিতিরের কথা জড়িয়ে যাচ্ছিল। মুগ্ধ আর খেলনা। তিতির সোফায় হেলান দিয়ে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণের মধ্যেই মুগ্ধ বুঝলো তিতির ঘুমিয়ে পড়েছে, যাক বাবা, বাঁচা গেল। নেশা হওয়ার আগে ঘুমিয়ে পড়লো। মুগ্ধ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো তিতিরের ঘুমন্ত মুখটার দিকে। ইশ, পৃথিবীর সব সুখ যেন এই মুখটার মাঝে। মুগ্ধ এগিয়ে তিতিরের কপালে একটা চুমু দিল। চুমু দিয়ে আর উঠতে পারলো না তিতির ওর শার্টের কলার ধরে ফেলেছে কখন যেন। ছাড়াতে যেতেই তিতির চোখ খুলে বলল,
-"আগে বলো খুলবে?"
মুগ্ধ অবাক,
-"কি খুলবো?"
-"এই পচা শার্ট টা।"
-"পচা? এটা তো তোমারই পছন্দের শার্ট। তুমিই দিয়েছিলে।"
-"নাহ এটা খুব পচা। এটা তোমার বুকের লোমগুলোকে ঢেকে রেখেছে, আমি কিসসি করতে পারছি না।"
মুগ্ধর বুঝে গেল, নেশা ভাল ভাবে হয়েছে। হবেই তো, বোতলে মুখ লাগিয়ে গিলেছে! পাগলী একটা। ওকে তারাতারি ঘুম পাড়িয়ে দিতে হবে। মুগ্ধ ওকে কোলে নিতে যাচ্ছিল। তিতির বলল,
-"খবরদার, এভাবে কোলে নিবে না। শার্ট খোলো আগে।"
মুগ্ধ অগত্যা শার্ট খুললো। তিতির সেটাকে ছুড়ে ফেলে দিল, শার্ট টা ঘরের দরজায় লেগে মাটিতে পড়লো। মুগ্ধ বলল,
-"খুশি?"
তিতির সেকথার উত্তর না দিয়ে মুগ্ধকে ধাক্কা দিয়ে শুইয়ে দিল সোফার উপর। ওর বুকে মধ্যে মুখ ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিল কতক্ষণ, তারপর অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দিল মুগ্ধর বুকটা। মুগ্ধর তখন পাগলপ্রায় অবস্থা। চুমু দিতে দিতে একসময় তিতির ওর গলাতেও চুমু দিল, তারপর গালেও দিল। মুগ্ধ ওর মুখটা ধরে বলল,
-"শোনো তিতির, তোমার নেশা হয়ে গেছে, চলো ঘরে গিয়ে ঘুমাবে।"
-"উফফফো! এমন পূর্ণিমারাতে এত সুন্দর পরিবেশে কেউ ঘুমায়?"
-"হুম, ঘুমায়।"
-"জানো, কেন আজকে থাকতে চেয়েছিলাম?"
-"কেন?"
-"তুমি আমাকে যতবার কিসসি করতে চেয়েছো আমি দিইনি। পরে খারাপ লেগেছে। আমি জানতাম থাকলে একসাথেই থাকবো আর তুমি আমাকে কিসসি করতে চাইবে, তখন আমি আর বাধা দিবনা। সেজন্য থাকতে চেয়েছি।"
-"হুম, আমি যদি সুযোগ নিয়ে আরো অনেক কিছু করে ফেলতাম তখন?"
উত্তর দিল না তিতির। বলল,
-"জানো তুমি যখন কিসসি করেছিলে তখন আমি কেন কেঁদেছিলাম?"
-"জানতে তো চেয়েছিলাম, তুমি বলোনি।"
-"তুমি এত সুন্দর আদর করে ধরেছিলে আমাকে আর এত সুন্দর করে কিসসি করেছিলে যে আমার বুকের ভেতর কেমন যেন অস্থির অস্থির করছিল। আমি সেই অস্থিরতাটা সহ্য করতে পারছিলাম না। কেমন যেন! সেজন্যই কান্না এসে গিয়েছিল আর আমি কেঁদে ফেলেছিলাম।"
মুগ্ধ তিতিরের মুখটা নিজের বুকে রেখে বলল,
-"ওহ, আহারে!"
তিতির মুখটা আবার তুলল। মুগ্ধর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
-"এই শোনোনা, তখন আমি আবেশে কোনো এক অন্য দুনিয়ায় চলে গিয়েছিলাম। কিছুতেই বুঝতে পারিনি তুমি কিভাবে আমাকে কিসসি করেছিলে! আর আমার কেমন অনুভূতি হয়েছিল, শুধু অস্থির অস্থির লাগাটা বুঝতে পেরেছিলাম। আমাকে আরেকবার ওভাবে কিসসি করবে?"
মুগ্ধ হাসলো আর ভাবলো, ইশ কি ইনোসেন্ট! নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান পুরুষ বলে মনে হচ্ছিল। তিতির ওকে চুপ করে থাকতে দেখে বলল,
-"ভাবছো তো নিজে না করে তোমার কাছে চাইছি কেন? আমি তো জানিনা কিভাবে করতে হয়। তখন তো বুঝতে পারিনি। আমাকে একটু শিখিয়ে দাও না। আমিও তোমার মত করে তোমাকে আদর দিতে চাই।"
মুগ্ধ তিতিরকে সরিয়ে উঠে বসলো। তারপর দাঁড়াল। তিতির বলল,
-"দাও না, প্লিজ। আর কখনো তোমাকে ফিরিয়ে দেব না।"
মুগ্ধ হেসে তিতিরকে কোলে তুলে নিল। তারপর ঘরে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল। তিতির বলল,
-"কিসসি না করে ঘুমাবো না।"
তিতির তখনো মুগ্ধর গলা ধরে আছে। মুগ্ধ বলল,
-"জানি।"
মুগ্ধ তিতিরের কানের নিচ দিয়ে চুলের ভেতর হাত গলিয়ে ওর মুখটা কাছে নিয়ে এল। তারপর তিতিরের ঠোঁটে চুমু খেল। তিতিরও একসময় মুগ্ধর গলা জড়িয়ে ধরলো। মুগ্ধ যখন ছাড়তে চাইলো তিতির ছাড়লো না। পারলে ও মুগ্ধর গলায় ঝুলেই উঠে আসে। মাঝে মাঝে আবার কামড়ও দিচ্ছিল।
কিছুক্ষণ পর তিতির মুগ্ধকে ছেড়ে হাঁপাতে লাগলো। মুগ্ধ উঠে যাচ্ছিল। তিতির ধরে রাখলো। মুগ্ধ হেসে জিজ্ঞেস করলো,
-"কি? আরো?"
তিতির এক্সাইটমেন্টে, নেশা আর ঘুমের মধ্যে কি যে বলল বুঝতে পারলো না মুগ্ধ। মুগ্ধ জিজ্ঞেস করলো,
-"বুঝিনি কি বললে! আবার বলবে?"
-"তোমার এক্স গার্লফ্রেন্ডদের কি এভাবেই কিসসি করতে?"
-"আরে নাহ!"
-"তাহলে কিভাবে করতে?"
-"কেন এসব জিজ্ঞেস করছো?
তিতির কান্না করে দিল,
-"বলোনা.."
-"এভাবে করতাম না। তুমি আবার কাঁদছ কেন?"
-"এভাবে চুলের ভেতর হাত দিয়ে ধরতে?"
-"নাহ।"
-"ওইভাবে কোমরে ধরতে?"
-"না।"
-"উপরের ঠোঁটটায় কি....."
মুগ্ধ তিতিরের মুখ চেপে ধরে চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
-"শোন পাগলী! আমি কখনো কাউকে এভাবে আদর করিনি। যতটা ভালবাসলে এভাবে আদর করা যায় ততটা ভাল শুধু তোকেই বেসেছি। আর তোর পরেও আমি অন্য কোনো মেয়েকে স্পর্শ করবো না। মাথায় কিছু ঢুকেছে?"
তিতির মুগ্ধকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-"উফফফ, বাঁচালে!"
তিতিরের পাগলামি দেখে মুগ্ধর নিজেরই মাথা ঘুরছিল। ওকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে শুয়ে রইল মুগ্ধ। একসময় ঘুমিয়েও পড়লো তিতির। হয়তো কাল ঘুম থেকে উঠে তিতিরের কিছুই মনে থাকবে না। কিন্তু মুগ্ধর জীবনে তিতিরের সাথে বিয়ে, সংসার আরো আরো যতকিছুই হোক না কেন আজকের এই স্পেশাল রাতটা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে!

৩২!!

সেই পাগলী তিতির আর আজকের তিতিরের মধ্যে অনেক পার্থক্য। ৪ বছর পর্যন্ত সত্যি কোনো পার্থক্য ছিল না। গত সাত মাসে যেন হঠাৎই বড় হয়ে গেল।
তিতির ডানদিকে কাত হয়ে নিজের হাতের উপর মাথা শুয়ে আছে। এই বিছানায় ওর বউ হয়ে শোবার কথা ছিল, আর আজ অসুস্থ হয়ে শুয়ে আছে। ভাগ্যে বিশ্বাসী ছিলনা মুগ্ধ। তাই বোধহয় ভাগ্যবিধাতা বুঝিয়ে দিল তিনি চাইলে কি থেকে কি হয়ে যেতে পারে।
৭ মাস আগে তিতির না, মুগ্ধ শুয়ে ছিল এখানে। কপালে তিতিরের হাতের স্পর্শ পেতেই চোখ খুলে ওকে দেখতে পেয়েছিল মুগ্ধ। আজকালও খানিকটা এরকম ব্যাপার ঘটে, ও কপালে স্পর্শ পায় কিন্তু চোখ খুললেই বুঝতে পারে সবটা স্বপ্ন ছিল। সেদিন চোখ খুলে দেখছিল সবুজ পাড়ের হালকা কলাপাতা রঙের শাড়ি পড়ে মাথার কাছে বসে আছে তিতির। চুলগুলো খোলা। আহ কি অপূর্ব লাগছে। কোনো অকেশন ছাড়া শাড়ি পড়লে বুঝতে হবে কোন সুখবর আছে। তাই বুঝেই মুগ্ধ তিতিরের হাতটা কপালের উপর থেকে সরিয়ে বুকের মধ্যে নিয়ে বলল,
-"আমার বউটা আজ কি সুখবর দেবে?"
তিতির হাতটা ছাড়িয়ে নিচ্ছিল। মুগ্ধ ছাড়ছিল না। উলটো দুলাইন গান শুনিয়ে দিল,
"ছেড়োনা ছেড়োনা হাত
দেবোনা দেবোনা গো যেতে
থাকো আমার পাশে..."
তিতির বলল,
-"উফ কেন ছাড়ছি সেটাও তো বুঝতে হবে।"
মুগ্ধ ছাড়লো। তিতির দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বাইরে উঁকি মারলো না কেউ নেই। দরজাটা আস্তে করে লাগিয়ে দিল। তারপর মুগ্ধর পাশে এসে শুয়ে পড়লো। মুগ্ধ তিতিরকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মাথা রাখলো। তিতির মুগ্ধর গালে হাত বুলিয়ে বলল,
-"অনেক বড় কোনো সুখবর দেব আজ। যা আগে কখনো দেয়নি। এর চেয়ে বড় সুখবর আর হতেই পারে না।"
-"হোয়াট? কিভাবে সম্ভব?"
-"তুমি বুঝতে পেরেছো আমি কিসের কথা বলছি?"
-"হ্যা, তুমি প্রেগন্যান্ট! এর চেয়ে বড় সুখবর আর কিছু হতে পারেনা কিন্তু কিভাবে সম্ভব। আমি তো কিছুই করিনি।"
তিতির ওকে সরিয়ে দিল,
-"ধ্যাত, মুডটাই নষ্ট করে দিলে।"
-"এই না না বলো বলো। দুষ্টুমি করছিলাম তো।"
তিতির তবু মুখ ঘুরিয়ে রইল। মুগ্ধ তিতিরের কান ধরে বলল,
-"এই কান ধরছি, সরি। এবার বলোনা কি হয়েছে?"
তিতির মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসলো। তারপর বলল,
-"তোমার এই বিছানায় আমার জন্য পার্মানেন্টলি জায়গা করো। শিগগিরই আসছি।"
-"মানে কি? বিয়ের কথা বলছো?"
-"হ্যা... কাল বাসায় একটা প্রোপোজাল এসেছিল। বাবা ওটার কথা আমাকে বলতেই আমি তোমার কথা বাবাকে বলে দিয়েছি।"
মুগ্ধ লাফিয়ে উঠে বসলো। বলল,
-"আল্লাহ মুখ তুলে তাকিয়েছেন! তারপর কি হলো?"
তিতিরও উঠে বসেছে ততক্ষণে। বলল,
-"তারপর সব জিজ্ঞেস করলো তোমার ব্যাপারে আমি বললাম। তারপর মা আর ভাইয়া, ভাবীকে ডেকে সবটা বলল বাবা। সব শুনে বোধহয় সবারই পছন্দ হয়েছে। তাই বলেছে প্রোপোজাল পাঠাতে। উফ বিশ্বাস করো এত সহজে সবাই মেনে নেবে ভাবিনি।"
-"ওয়াও, গ্রেট!"
-"জানো, ভাইয়া তো হাসছিল আর বলছিল তুই এতদিন প্রেম করেছিস টেরই পাইনি। ছোটবেলায় তুই এত শান্ত থাকতি যে বাসায় কোনো বাচ্চা আছে বোঝা যেত না। সেরকমই হলো ব্যাপারটা।"
-"বাহ।"
-"হুম।"
মুগ্ধ তিতিরের কপালে চুমু দিয়ে বুকে টেনে নিল। তারপর বলল,
-"তিতির কি যে ভাল লাগছে তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না। অবশেষে আমার এতদিনের অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে।"
তিতির হেসে বলল,
-"আর আমারও। এবার বাইরে চলো.. পিউ, স্নিগ্ধ সবাই বাসায়। আর তোমারও তো অফিসে যেতে হবে।"
-"ও হ্যা, তুমি যাও। আমি একবারে রেডি হয়ে বের হচ্ছি।"
পরের শুক্রবারই মুগ্ধ ফুল ফ্যামিলিসহ প্রোপোজাল নিয়ে গেল তিতিরের বাসায়। শুধু বাবা ছাড়া কারন, মুগ্ধর বাবা দুবছর আগে একটা অপারেশনে গিয়ে মারা যায়। কথাবার্তা বলে দুই ফ্যামিলিই দুই ফ্যামিলিকে পছন্দ করলো। মুগ্ধর মা চাইলো আগামী মাসের মধ্যেই বিয়ের কাজ সেড়ে ফেলতে তিতিরের বাবা-মাও রাজী হয়ে গেল। ডিনারও সেড়ে ফেলল। তারপর হঠাৎ তিতিরের বাবা বলল,
-"কীরে তান্না কখন আসবে? আজ ও বাইরে গেল কেন?"
ভাবী বলল,
-"বাবা, ওর বন্ধুর বাবা হঠাৎই মারা গেছে, তাই গিয়েছিল। চলে আসবে কিছুক্ষণের মধ্যে। ও ঝিগাতলা পর্যন্ত চলে এসেছে, কথা হয়েছে।"
মুগ্ধর বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো তান্না নামটা শুনে। তান্না! কোন তান্না? ৩/৪ বছর আগে যাকে মেরে এই এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল সেই তান্নাই কি তিতিরের ভাই? সর্বনাশ! তাহলে তো সব শেষ। মুগ্ধ তরতর করে ঘামছিল। সেই তান্না যেন না হয়। সেই তান্নাই যদি হয় তাহলে সারাজীবনের জন্য ও হারাবে তিতিরকে। আল্লাহ কি এতটা নিষ্ঠুর হবে? হঠাৎ লাল শাড়ি পড়া তিতির এসে দাঁড়াল ওর পাশে। বলল,
-"তোমার কি হল? মুখটা এমন লাগছে কেন?"
-"নাহ, কিছুনা।"
তিতিরকে যে মুগ্ধ কি বলবে তা ও বুঝতে পারছিল না।
কিছুক্ষণের মধ্যেই তান্না চলে এল। ড্রইং রুমে ঢুকে কি অমায়িক ভঙ্গিতে মুগ্ধর মাকে সালাম দিয়ে বলল,
-"সরি আন্টি, আমি অনেক দেরী করে ফেললাম।"
তারপর মুগ্ধর দিকে চোখ পড়তেই তান্না দাঁড়িয়ে পড়লো, অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো মুগ্ধর দিকে। মুগ্ধ প্রাণপণে আল্লাহ কে ডাকছিল যেন এই মুহূর্তে ওর মৃত্যু হয়। কারন এরপরই যেভাবে তিতিরকে ওর জীবন থেকে কেড়ে নেয়া হবে তা ও সহ্য করতে পারবে না। শেষবারের মত তিতিরের হাসিমুখটা দেখে নিল। এরপর থেকে তো তিরিরের জীবন থেকে সবহাসি শেষ হয়ে যাবে।
চোখের সামনে ভেসে উঠলো সেই দিনটি। সেদিনও ছিল শুক্রবার। মুগ্ধ নিজের রুমে বসে তিতিরের সাথে ফোনে কথা বলছিল। হঠাৎই কলিং বেল বেজে উঠলো। মুগ্ধ পাত্তা দিল না, আবার বাজতেই তিতির বলল,
-"কি হলো? দরজা খুলছ না যে?"
-"আরে বাসায় তমাল, সম্রাট ওরা আছে। কেউ নিশ্চই খুলবে, অযথা আমি আমার বউকে রেখে দরজা খুলতে যাব?"
তিতির বলল,
-"যেন আমি কাছে আছি?"
এরপর পরপর কয়েকবার বেল বাজতেই মুগ্ধ বলল,
-"আচ্ছা, আমি পরে কল দিচ্ছি।"
-"হুম, ঠিকাছে।"
দরজা খুলতেই দেখলো ওদের বাসার বাড়িওয়ালার ছেলে মিথুন আর মিথুনের ফ্রেন্ড তান্না দাঁড়িয়ে। দুজনই মুগ্ধর চেয়ে দুএকবছরের ছোট। মুগ্ধ বলল,
-"আরে, তোমরা যে! এসো এসো।"
ভেতরে ঢুকেই মিথুন বলল,
-"মেহবুব ভাই, আপনারা বাসা নেয়ার সময় যে কন্ডিশনগুলো দেয়া হয়েছিল তা কি আপনারা ভুলে গেছেন?"
মুগ্ধ অবাক হয়ে বলল,
-"না তো ভুলব কেন? কি হয়েছে?"
-"একটু আগে আপনাদের ফ্ল্যাটে একটা মেয়ে ঢুকেছে।"
-"এটা হতেই পারে না। প্রথমত, কেউ মেয়ে নিয়ে আসবে না, দ্বিতীয়ত, আমি আজ সারাদিন বাসায় কেউ এলে আমি জানতাম।"
তান্না বলল,
-"ভাইয়া আমি যখন উঠছিলাম আমি নিজে দেখেছি।"
-"বলো কি!"
-"জ্বী।"
মুগ্ধ বলল,
-"আচ্ছা আমার কথা বিশ্বাস না হলে তোমরা বাসা সার্চ করতে পারো।"
মিথুন বলল,
-"তাই করতে হবে।"
মুগ্ধ বলল,
-"এসো।"
মিথুন বলল,
-"তান্না তুই যা, আমি দরজার সামনেই থাকি, যাতে এদিক দিয়ে পাচার করতে না পারে।"
মুগ্ধ তান্নাকে নিয়ে গেল। প্রথমে সম্রাটের রুমে ঢুকে দেখলো কেউ নেই। মুগ্ধ ভাবল, 'সম্রাট কি বাইরে গেল? কখন গেল? না বলেই গেল?'
এরপর মুগ্ধর রুম খুঁজে ওরা তমালের রুমে যেতে নিয়ে দেখলো দরজা ভেতর থেকে লাগানো। তান্না বলল,
-"কি বুঝলেন?"
মুগ্ধ দরজায় নক করলো,
-"তমাল? এই তমাল? দরজা খোল।"
কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না। তান্না কয়েকবার দরজায় ধাক্কা দিল। ততক্ষণে মিথুন চলে এসেছে তমালের দরজার সামনে। তারপর আরো কয়েকবার নক করার পর ভেতর থেকে দরজা খুলে বেড়িয়ে এল তমাল। পেছনে ওড়না দিয়ে ঘোমটা টানা একটা মেয়ে। মেয়েটাকে চিনতে কষ্ট হলোনা মুগ্ধর। তমালের গার্লফ্রেন্ড সুপ্তি। কিন্তু তমাল ওকে বাসায় নিয়ে আসার মত বোকামিটা কেন করলো? আর যদি আনেও মুগ্ধকে একবার জানানোর প্রয়োজন মনে করল না? এতবড় মুখ করে বলা কথা এখন কোথায় যাবে মুগ্ধর! মিথুন বলল,
-"এই মেয়ে ব্যাচেলর বাসায় আসতে পারছো আর মুখ দেখাইতে শরম? ঘোমটা দিয়া তো ঘোমটার অসম্মান করলা! দেখি মুখ দেখাও।"
তমাল বলল,
-"ভাই আমার ভুল হয়ে গেছে, ওকে ছেড়ে দেন। আমাকে যা বলার বলেন।"
তান্না বলল,
-"শালার চোরের মার বড় গলা।"
তারপর মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে বলল,
-"এইযে, মেহবুব ভাই।এইবার কি বলবেন? খুব তো বলসিলেন মেয়ে আনেন না বাসায়। এটা কি বের হলো রুম থেকে?"
মুগ্ধ কিছু বলার আগেই মিথুন বলল,
-"আরে এগুলা মেয়ে নাকি সস্তা ** কতগুলা।"
মুগ্ধ বলল,
-"এবার বেশিবেশি হয়ে যাচ্ছে। মেয়েটাকে যেতে দাও। বাকীটা আমরা বুঝে নিচ্ছি।"
মুগ্ধ জানে সুপ্তি এলাকারই মেয়ে। ওর মুখটা কেউ দেখে ফেললে কেলেঙ্কারি হবে। মিথুন বলল,
-"আপনাদের সাথে তো বুঝবো আসল বোঝা। আগে এই **টার সাথে বুঝে নেই।"
সুপ্তির গায়ে ধাক্কা মেরে বলল,
-"চুলকানি বেশি না? তাই ব্যাচেলর বাসায় আসো?"
একথা শুনেই তমাল মিথুনের মুখে একটা ঘুষি বসিয়ে দিল। সেই ফাঁকে মুগ্ধ সুপ্তিকে ফ্ল্যাট থেকে বের করে দিল। সুপ্তি দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেল। তান্না দৌড়ে ধরতে চাইল, মুগ্ধ ওকে ধরে আটকে রাখলো। তান্না বলল,
-"মিথুন তরে আমি কইসিলাম সবগুলার গুরু এইটা। দেখ মেয়েটারে কেম্নে বাইর কইরা দিল।"
মিথুন তখন ব্যস্ত ছিল তমালের ঘুষির জবাব দিতে। মুগ্ধ বলল,
-"তোমরা যা ইচ্ছা ভাবতে পারো কিন্তু ও একটা মেয়ে, ভুল করে ফেলেছে হয়তো একটা। তাই বলে ওকে এভাবে অপমান করাটাও ঠিক না। ও তো তোমার আমার মতই কারোর বোন তাই না?"
মিথুন উঠে এসে মুগ্ধর কলার ধরলো। তান্না বলে উঠলো,
-"শালা বানী দেয়া বন্ধ কর। তোর এত লাগে ক্যান? সব একেই চক্র না? তোর গার্লফ্রেন্ড ও নিশ্চই আসে! আসে দেখেই বন্ধুর টারে সাপোর্ট দিচ্ছিস যাতে তুই ধরা খাইলে বন্ধু সাপোর্ট দেয়। সবগুলা **বাজ।"
মুগ্ধ বলল,
-"তান্না মুখ সামলে কথা বলো। আমার গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে আরেকটা কথা বলার সাহস দেখিওনা। তাহলে কপালে দুর্ভোগ আছে।"
তান্না বলল,
-"ক্যান তোর গার্লফ্রেন্ডের রেট কি দুইটাকা বেশি নাকি?"
এরপর মুগ্ধ আর ধরে রাখতে পারেনি নিজেকে। উন্মাদের মত মেরেছিল সেদিন তান্নাকে। কোনো হুঁশজ্ঞান ছিল না। মিথুন শত চেষ্টা করেও থামাতে পারেনি। মার খেয়ে তান্না দৌড়ে সিঁড়িতে চলে গেল নামার জন্য। মুগ্ধও দৌড় দিয়ে ধরে ফেলেছিল। মারতে মারতে নামিয়েছিল সিঁড়ি দিয়ে। পুরো সিঁড়ি রক্তে মেখে গিয়েছিল। তারপর রাস্তায় ফেলে কি মারটাই না মেরেছিল মুগ্ধ ওকে। সাথে মুগ্ধ শুরু করেছিল বাপ মা তুলে কি অকথ্য ভাষায় গালাগালি! রাস্তায় মানুষের ভীর হয়ে গিয়েছিল। একজন থামাতে যেতেই মুগ্ধ তাকে এমনভাবে ধাক্কা দিয়েছিল যে তা দেখে কেউ আর আগানোর সাহস করেনি। তারপর একসময় মার খেতে খেতে যখন তান্না অজ্ঞান হয়ে যায় তখন ওকে ছাড়ে মুগ্ধ।
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।