০৫!!
তন্ময় বেশ অনেকক্ষণ ধরে নীলিমাকে ডাকছে। মেয়েটার কোন হুঁশও নেই। কি খাচ্ছে না খাচ্ছে সেদিকেও যেন হুঁশ নেই। যেন শুধু খাবারটা চিবাচ্ছে আর গিলছে।
-নীলি? আরেকটু নেই? এই?
-------------------------------
-নীলু? আর খাবে?
-------------------------------
তন্ময় ভ্রু কুঁচকে প্লেট বেসিনে রেখে হাত ধুয়ে নিয়ে নীলিমার একেবারে কাছে চলে এলো। হুট করে টেনে নিয়ে নীলিমার ঠোঁটে একটা কামড় বসালো তন্ময়। এতোক্ষণে নীলিমার হুঁশ হলো।
-এই? কি করছো?
-তুমি কি করছো? কতোক্ষণ ধরে ডাকছি তোমাকে? না কথা শুনছ না জবাব দিচ্ছ। কাহিনী কি?
-কই কিসের কাহিনী? চলো তো। ঘুম পাচ্ছে---।
-আপনার পেট ভরেছে ম্যাডাম?
-হুম? হ্যাঁ---।
-তো এতোক্ষণ ধরে যে জিজ্ঞেস করছি তোমাকে, শুনতে পাও নি কেন? কোন দুনিয়ায় হারিয়ে গেলে তখন?
-কোথায়?
-আবার বলো কোথায় না?
-উফফফ। বেশি কথা বলো একদম--। সরো--। আমি টেবিল গোছাই---।
নীলিমা টেবিলের দিকে তাকিয়েই জিভ কাটলো। প্লেট তন্ময় আগেই রেখে এসেছে। সেটাও টের পায় নি নীলিমা। এখন তন্ময়কে কি বলবে? কি ভাবছিল এতোক্ষণ? তন্ময় হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে নীলিমাকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে বেডরুমে ফিরে এলো। আস্তে করে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে নিজে নীলিমার সামনে ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসে নীলিমার মুখটা তুলে ধরলো তন্ময়।
-নীলি? কি ভাবছ এতো? কি হয়েছে এবার বলো প্লিজ?
-কিছু হয়নি---। ঘুমাও---।
-নীলি?
-ঘুম পাচ্ছে আমার খুব। ঘুমাতে দিবা প্লিজ?
-ওওওও--। আচ্ছা ঘুমপরী। ঘুমাও---।
তন্ময় উঠে নীলিমাকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজে পাশে এসে শুয়ে পড়লো। নীলিমা পাশ ফিরতে চাইলেই তন্ময় নীলিমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে। নীলিমা ছোটার জন্য ছটফট করছে দেখে তন্ময় নীলিমার ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরলো। নীলিমা ছুটতে না পেরে চুপ করে গেল। তন্ময় সরে এসে নীলিমার মুখটা তুলে ধরলো।
-নীলি? প্লিজ বলো কি হয়েছে?
-কিছু হয়নি। কিছু হয়নি। কিছু হয়নি।
-নীলু? জান তাকাও আমার দিকে?
-হুম---।
-কি হয়েছে বলবে না তাই তো? আচ্ছা বাবা। বলো না। জাস্ট এখন একটু শান্ত হয়ে ঘুমাও লক্ষীটা।
-হুম---।
-খুব রেগে আছো না?
-------------------------------
-এতো রাগ যে একদম ফুলহাতা ব্লাউজ? একটু ঠিক করে জড়িয়ে ধরে আদর করতেও দিবা না। তাই তো ম্যাডাম?
-------------------------------
-আচ্ছা বাবা। অনেক রাত হলো। কি হয়েছে সেটা পরে বলো। এখন লক্ষী বউ হয়ে বুকে ঘুমাও। কেমন বউটা?
-হুম---।
-লক্ষী বউটা।
তন্ময় নীলিমার কপালে আলতো করে চুমো খেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলো। নীলিমা চুপ করে তন্ময়ের বুকে মাথা রেখে শুয়ে রইলো। সারাদিনের কাজের ক্লান্তিতে তন্ময়ের চোখে ঘুম নেমে এলো। পনেরো বিশ মিনিটের মতো পর তন্ময়ের ঘুমটা ছুটে গেল। কি হচ্ছে বুঝতে কিছুটা সময় লাগলো ওর। মনে হল বুকের উপর থেকে নীলিমা সরে গেছে। তন্ময় চোখ না খুলেই নীলিমা কি করছে বোঝার চেষ্টা করলো। একটু পরে টের পেল কাঁপা হাতে তন্ময়ের গলার কাছ থেকে শার্টটা একটু সরিয়েছে নীলিমা। তারপর আলতো একটা উষ্ণতা অনুভব করলো গলায়। সম্ভবত টর্চের আলো ফেলেছে গলায়৷ একটু পরে নীলিমা তন্ময়ের গলায় আলতো করে হাত ছুঁইয়ে দিয়ে আলোটা বন্ধ করে দিলো। তারপর তন্ময়ের বুকে মুখ ডুবিয়ে ফোঁপাতে লাগলো। তন্ময় এবার আর চুপ থাকতে পারলো না। শক্ত করে নীলিমার কোমড় চেপে জড়িয়ে ধরলো।
-নীলি? জান কি হয়েছে? এই নীলিমা? নীলু?
নীলিমা কিছু না বলে চুপ করেই শুয়ে রইলো। একসময় ঘুমিয়েও গেল। সকালে নীলিমার ঘুম ভাঙলো ঠোঁটে তন্ময়ের স্পর্শে। তন্ময় নীলিমার ঠোঁট জোড়ায় আলতো করে কামড় বসাতেই নীলিমা থতমত খেয়ে সরার চেষ্টা করলো। তন্ময় নীলিমাকে টেনে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে হাত চেপে ধরলো। তন্ময় হেসে আলতো করে নীলিমার গলায় মুখ ডুবালো।
-গুড মর্নিং ঘুমপরী। কেমন ঘুম হলো গো রাতে?
-কি করছ? ছাড়ো?
-উহুম। কাল অনেক দেরি করে ফেলেছিলাম না? বউটাকেও সময় দেয়া হচ্ছে না। তাই আজকের দিনটা হবে আমাদের হলিডে। ওকে ম্যাম?
-তোমার অফিসে কাজ নেই?
-এক আধ দিন বউকে আদর করার জন্য অফিস কামাই করাই যায় ম্যাডাম।
-হুম---। সরো---। ছাড়ো---।
-নীলি? একটা কথা বলো তো? কাল কি দেখছিলে?
-কি? কো-কোথায় কি দেখছিলাম?
-রাতে। বলো না? না বললে আমি বুঝবো কি করে?
-কিছু না।
-নীলি? প্লিজ? বলো?
-কাল--। কাল একটা কল এসেছিল--।
-হুম--। কে কল করেছিল?
-একটা মেয়ে---।
-হুম--। তারপর? কি বললো? পরিচিত তোমার?
-বলেছে---। বলেছে---। তুমি--।
-আমি কি?
-বলেছে তুমি নাকি কাল---। কাল সারাদিন উনার সাথে--সাথে ছিলে--।
-মানে? কেউ বলবে আর তুমি বিশ্বাস করবে?
-আর-। আর উনি আরেকটাও কথা বলেছে--। উনি নাকি---।
-হুম--? আর? কি হলো বলো? কি বলেছে?
-যা বলেছে সেটা আমি বলতে পারব না--।
-আশ্চর্য! কি বলছে সেটাও বলছ না কেন? আর যা বলেছে সেটার সাথে গলা চেক করার মানে কি?
-মানে----।
-মানে তুমি কাল রাতে চেক করতে চাইছিলে আমি তোমার ওই সো কলড মহিলার সাথে ফিজিক্যালি ইনভলভড হয়েছে কিনা? বা ইন্টিমেট করেছি কিনা? এই তো?
-না আসলে তন্ময়----।
-আর তুমি ওই অপরিচিত মহিলার কথাটা বিশ্বাসও করেছ--? ওয়াও!
-উনি বলেছিল---। তোমার গলায় উনার বাইট মার্ক------।
-ওহ শিট! বাইট মার্কস রয়ে গেছে না? শিটটট--শিটট ম্যান--।
-তন্ময়?
-কি তন্ময়? গলায় মার্কস দেখো নি রাতে? অন্ধকারে মে বি দেখতে পাও নি। ওয়েট। এখন দেখো---।
-তন্ময় প্লিজ?
-রাতে চেক করতেই তো চেয়েছিলে না? এখন চেক করো। ওয়েট। আমি হেল্প করছি। ওয়েট--।
-শোনো না? প্লিজ?
তন্ময় নীলিমাকে ছেড়ে দিয়ে বিছানা থেকে সরে এসে শার্টটা খোলা শুরু করলো। নীলিমা উঠে এসে তন্ময়ের সামনে দাঁড়িয়ে হাতটা ধরে ফেললো। তবু তন্ময় শার্ট খুলছে দেখে নীলিমা তন্ময়ের বুকে মুখ ডুবিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
-আম সরি--। প্লিজ মাফ করে দাও না? প্লিজ?
-নীলি? তুমি সরি কেন বলছ পাগলী? বাইট মার্ক আছে কিনা দেখে নাও আগে? বাই এনি চান্স দাগটা পেয়ে গেলে তখন হয়তো তোমার পরবর্তী ভাবনা ভাবতে সুবিধা হবে---।
-তন্ময়? সরি তো---। সরি সরি সরি--।
-আমার চেয়েও তো তোমার অন্য একটা মেয়ের কথায় বেশি বিশ্বাস। তাই না নীলি? অন্তত এতোটুকু বিশ্বাস তো করতে পারতে?
-আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তন্ময়। আমি ভিষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম --। আম সরি---।
-ভয় পেয়েছিলে কেন? আমি কি কখনো এমন কিছু করেছি যাতে আমার ঘুমপরীটা আমাকে নিয়ে কোন দ্বিধায় থাকতে হয়? বলো?
-একজন আমাকে একটা কথা বলেছে--। বলেছে যেখানে বেশি ভালোবাসা, সেখানেই হারিয়ে যাওয়ার একটা------।
তন্ময় নীলিমার মুখটা তুলে ধরে চোখে চোখ স্থির করলো।
-নীলু? আমি হারিয়েই বা আর কোথায় যাবো? হারালেও তো তোমার মাঝেই হারাবো। তাই না বলো? তোমার থেকে আমাকে দূর করবে এটা আমি বেঁচে থাকতে সম্ভব না ম্যাডাম। কথাটা মাথায় রাখবেন--।
-আম সরি---।
-সরি টরি শুনবো না। কাল আদর দিতে দাও নি। এখন তুমি আদর দাও--।
-হুম?
-প্রতিদিন সকালে গলায় তোমার টুকটুকে লাল ঠোঁটের ছাপ বসাও। মনে নেই? আমার আজকের আদরের লাল দাগটা কই হুম হুম?
-আমি পারবো না--।
-না না না। আমি মানবো না। নইলে মাফ টাফ করবো না বলে দিলাম। ও বউ দাও না প্লিজ?
-আমি জানি তুমি কেন এমন করছ--।
-তুমি কি জানো না জানো সেসব আমি জানিও না। জানতে চাইও না। আমার আদর চাই মানে চাই--। নইলে আমি শুরু করলে কিন্তু একদম ছাড়ব না বলে দিলাম--। তাই আগে ভাগে নিজে থেকে দাও--।
-হুম---। সরি---।
নীলিমা একটু সরে এসে তন্ময়ের শার্টের উপরের দুটো বাটন খুলে দিলো। আগের দিনের লিপস্টিকের লাল রঙটা শার্টের ঘষায় লেপ্টে গেছে দেখে হাসলো নীলিমা৷ আঁচল দিয়ে সেটা মুছে দিয়ে তন্ময়ের গলায় গভীরভাবে চুমো খেল। তন্ময় নীলিমার কোমড় চেপে ধরে একেবারে বুকে জাপটে ধরে জড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর নীলিমাকে আলতো করে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে বিছানার দিকে এগোলো তন্ময়৷ ভুল বোঝাবুঝির পালা শেষে এখন দুজনে ভিজবে ভালোবাসার বৃষ্টিতে।
০৬!!
বেশ বেলা করেই নীলিমার ঘুম ভাঙলো দরজায় নকের শব্দে। ঘড়িতে সাড়ে দশটা বেজেছে দেখে নীলিমা নিজে নিজেই লজ্জা পেল। তুলিও যে বাসায় আছে কথাটা মাথায়ই ছিল না। কোনমতে শাড়িটা ঠিক করে পড়ে নিয়ে তন্ময়ের গায়ে চাদর টেনে দিয়ে দরজাটা একটু খুললো নীলিমা। তুলি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। নীলিমাকে দেখে একটু লাজুক ভঙ্গিতে হাসলো তুলি।
-আপা? নাস্তা বানাইসি---।
-ইশ! সরি তুলি। তুমি খেয়ে নাও। ও ঘুমাচ্ছে তো। নাস্তা করতে একটু সময় লাগবে---।
-স্যারের আজকে অফিস নেই ম্যাডাম?
-নাহ। আজ যাবে না।
-ওহ আচ্ছা।--ম্যাডাম আমি একটু মায়ের কাছে কিছু টাকা পাঠাতাম। যদি কিছু টাকা দিতেন।
-কত পাঠাবে বলো? তন্ময় পাঠিয়ে দিবে---।
-না ম্যাডাম। আমি নিজেই পাঠাতে পারবো। ৫০০ হলেই হবে।
-৫০০? কিন্তু পাঠাবে কিভাবে?
-ওই যে সামনের দোকানটা থেইকে বিকাশ দিমু। কাকার পোলার নাম্বারে-।
-আচ্ছা। দাঁড়াও। আমি দিচ্ছি-। তুমি নাস্তা করে তারপর যেও--।
-জি আচ্ছা। ম্যাডাম।
নীলিমা দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে খাটে এসে তন্ময়ের পাশে বসলো। তন্ময় বেঘোরে ঘুমাচ্ছে দেখে হাসলো নীলিমা। তন্ময়ের চুলে হাত বুলিয়ে নাড়লো একবার।
-এই? শুনছ? উঠো না?
-হুম?
-শোনো না? উঠো? অনেক বেলা হলো তো?
তন্ময় উঠে বসে নীলিমাকে বুকে টেনে নিলো।
-গুড মর্নিং বউটা।
-জি জনাব। ভেরি ভেরি গুড মর্নিং। এখন টাকা দাও তো ৫০০। তুলি ওর মাকে টাকা পাঠাবে।
-হায় রে! এজন্য ডাকলা? আমি আরো ভাবলাম বউটা এতো মিষ্টি করে ডাকছে। আদর পাবো সকাল সকাল---।
-অসভ্য লোকটা। টাকা দাও তো। তুলি ওয়েট করছে---।
-জি ম্যাডাম----।
তন্ময় নীলিমার হাতে পার্সটা ধরিয়ে দিয়ে আবার শুয়ে পড়লো বিছানায়।
-পুরো পার্সটাই তোমার যাও। যা মন চায় করো।
-আরে?
তন্ময় আর কিছু না বলেই চোখ বুজলো। নীলিমাও হেসে তন্ময়ের পার্স থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে পার্সটা আবার বেডসাইড ড্রয়ারে রেখে দিল। তারপর দরজা খুলে তুলিকে ডেকে টাকাটা দিয়ে দিল। তুলিও অনেক গদগদ হয়ে অনেকবার করে নীলিমাকে ধন্যবাদ দিয়ে টাকা নিয়ে বেরিয়ে গেল। নীলিমা রুমের দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে এসে বিছানায় বসে তন্ময়ের মুখের দিকে তাকালো। পাগলটা আবারও ঘুমিয়ে গেছে দেখে নীলিমা নিজেই হেসে ফেললো। একটু ঝুঁকে তন্ময়ের কপালে চুমো দিয়ে শাওয়ার নিতে গেল নীলিমা ওয়াশরুমে ঢুকলো।
নীলিমা শাওয়ার নিয়ে একটা শাড়ি পড়ে ভিজে চুলে টাওয়াল পেঁচিয়ে বের হলো। তন্ময়ের ঘুমন্ত মুখটা দেখে দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো নীলিমার মাথায়। বিছানার কাছে এসে তন্ময়ের মুখের উপরে ভিজে চুল ঝাড়লো নীলিমা। নীলিমার ভেজা চুলের পানি তন্ময়ের চোখে মুখে গিয়ে পড়ছে। তবু লোকটার হুঁশ নেই। পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। নীলিমা আর দুষ্টুমি না করে চুল মোছায় মন দিলো। তন্ময় অনেক টায়ার্ড। এখন বিরক্ত করে কাজ নেই। নীলিমা ড্রেসিং টেবিলের দিকে ঘুরে এক পা বাড়ানোর সাথে সাথেই হাতে টান খেয়ে সোজা তন্ময়ের বুকের উপরে গিয়ে পড়লো। নীলিমা মুখ তুলে তাকাতেই তন্ময়ের দুষ্টু হাসি মাখা মুখটা চোখে পড়লো। তন্ময়ও ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে নীলিমার কোমড় পেঁচিয়ে ধরলো।
-এই তুমি না ঘুমাচ্ছিলা?
-হুম ঘুমাচ্ছিলামই তো। তা ঘুম ভাঙিয়ে দিয়ে সরে যাচ্ছিলে কেন? হুম হুম?
-আরে? আমি তো ভাবলাম তুমি টায়ার্ড। তাই আর ঘুমের ডিস্টার্ব করতে চাই নি---।
-ডিস্টার্ব তো করেছেন ম্যাডাম--। এখন কি করা যায় বলুন তো?
-উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও। যাও---।
-এটা কোনো কথা?
-জি জি। কথা---। যাও না? এগারোটা বেজে গেছে। আজ আর নাস্তা করা লাগবে না?
-ইশ! এতো খাই খাই করো কেন? দিনদিন তো আটার বস্তা হচ্ছো--।
-এই কি বললা তুমি? আমি আটার বস্তা? অসভ্য লোকটা---।
-ইশ রে! আমার ঘুমপরীটা খেপে গেছে? সরি বউটা। দুষ্টুমি করেছি তো। তুমি তো আমার পাটকাঠি বউ--। ফুঁ দিলেও উড়ে যাবা---।
-আবার?
-হা হা হা। পাগলিটা। রাগো কেন এতো? তুমি আটার বস্তা হলেও আমার, আর পাটকাঠি হলেও আমার। বুঝসো বউ?
-ঢং করবা না বলে দিচ্ছি একদম।
-আহা রে! ঘুমপরী রাগ করে না প্লিজ?
-যাও তো। শাওয়ার নাও---।
-আজকে ঘুমপরীটা আমাকে না ডেকে একা একাই শাওয়ার নিয়েছে! এটা কিন্তু একদম ঠিক না ম্যাডাম। আমি কিন্তু মানবো না।
-না মানলে মেনো না। যাও এখন--।
-বাব্বাহ! তাড়াতে পারলেই বাঁচছো না?
-তুমি কি যাবে?
-আচ্ছা। ওয়েট। আমি এই যাবো আর আসবো। তুমি নাস্তা নাও। কেমন??
-আচ্ছা-----।
তন্ময় ওয়াশরুমে ঢোকার কয়েক মিনিট পরেই রুমের টেলিফোনটার শব্দ শুনতে পেল। তন্ময় সেদিকে মাথা না ঘামিয়ে লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বের হলো। টিশার্ট আর ট্রাউজার পড়ে ভেজা চুল মুছে ডাইনিং রুমে এলো তন্ময়। টেবিলে নাস্তাও নেই, নীলিমাও নেই দেখে তন্ময় রান্নাঘরে গিয়েও দেখলো। নীলিমা সেখানেও নেই। তন্ময়ের বুকের ভিতরে ধ্বক করে উঠলো। এইটুকু সময়ের মধ্যে মেয়েটা গেল কোথায়? তন্ময়ের কি মনে হতেই ছুটে আবার রুমে এলো। বারান্দার দিকে চোখ পড়তেই ফাঁক করা দরজাটা ঠেলে তন্ময় বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। নীলিমাকে বারান্দার ফ্লোরে গুটিসুটি মেরে বসে থাকতে দেখে তন্ময়ও নীলিমার সামনেই বসে নীলিমার মুখটা তুলে ধরলো দুহাতে।
-নীলি? তুমি কি আমাকে পাগল না বানিয়ে ছাড়বে না বলো তো? এখানে এসে বসে আছো আর আমি পাগলের মতো সারা বাড়ি খুঁজছি তোমাকে---। কি সমস্যা কি বলো তো?
নীলিমা এক মূহুর্ত তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে থেকে ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। তন্ময় পুরোই ভ্যাবাচ্যাঁকা খেয়ে গেল নীলিমার এমন কান্না দেখে। কি হয়েছে বুঝতেই পারলো না বেচারা। নীলিমাকে একেবারে বুকের ভেতরে টেনে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
-নীলি? কি হয়েছে? কাঁদছ কেন? লক্ষী বউটা এমন কাঁদে না। প্লিজ? এই নীলি? নীলু? কাঁদে না তো বাবা। বলো কি হয়েছে?
নীলিমা কান্নার জন্য কথাই বলতে পারছে না দেখে তন্ময় নীলিমার মুখটা তুলে ধরলো।
-নীলি? দাঁড়াও। পানি আনছি। একটু পানি খেয়ে নাও----।
-না না না--। তুমি-তুমি কোথাও যাবা না--। একদম যাবা না---।
-নীলি? শোনো আমার কথাটা??
-না --। তুমি-তুমি-তুমি যাবা না কোথাও--।
-আচ্ছা বাবা---। যাবো না---। চলো আগে রুমে যাই--। এখানে এভাবে ফ্লোরে বসে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে তো বাবা? উঠো?
-হুম---।
তন্ময় উঠে নীলিমাকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে বিছানার উপরে বসিয়ে দিলো। তন্ময় নীলিমার থেকে একটু সরার চেষ্টা করতেই নীলিমা তন্ময়ের টিশার্টটা খামচে ধরলো। নীলিমার মুখের দিকে তাকিয়ে তন্ময় আর সরে গেল না। হাত বাড়িয়ে পানির গ্লাসটা নিয়ে পানিটুকু খাইয়ে দিয়ে গ্লাসটা আবার রেখে নীলিমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে রাখলো তন্ময়। নীলিমা তন্ময়ের বুকের ভেতরে মুখ ডুবিয়ে বার বার ফুঁপিয়ে উঠছে দেখে তন্ময়ের বুকের ভিতরে যেন কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। একটু আগেই তো মেয়েটা দুষ্টুমি করছিল ওর সাথে। এখন হঠাৎ করে কি এমন হলো যে এভাবে ভেঙ্গে পড়ছে? নীলিমাকে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে এসব প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে তন্ময়।