নিহি কাঁপছে। ঠোঁট কাঁপছে অনবরত। শীতের ঠান্ডা হাওয়ায় নয় বরং আমানের স্পর্শে। শীতল হাতে যখন নিহির হাত ছুঁয়ে দেয় তখন শরীরের কাঁপুনি যেন আরো বেড়ে যায়। নিহির ঠোঁট কাঁপা দেখে আমান হেসে ফেলে। নিজের বাহুবন্ধন থেকে নিহিকে ছেড়ে দেয়। গায়ের জ্যাকেট খুলে নিহির গায়ে পরিয়ে দিতে গেলে নিহি বাঁধা দিয়ে বলে,
"লাগবে না। আমি এখন ঘরে চলে যাব।"
"কীহ্! ঘরে চলে যাবেন?"
"হু।"
"ওকে। চলুন।"
"আপনি কোথায় যাবেন?"
"আপনার সঙ্গে। আপনার ঘরে।"
"পাগল? আমার সঙ্গে তরু থাকে।"
"তো? আমি এতদূর থেকে শুধুমাত্র আপনার সঙ্গে দেখা করার জন্য এসেছি, আর আপনি যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন!" কথাটা অভিমানি সুরেই বলল আমান। নিহি এক পলক তার দিকে তাকিয়ে জ্যাকেটটা হাত থেকে ছোঁ মেরে নিয়ে নিজে পরে নেয়। আমান মৃদু হাসে। নিহি ছাদের রেলিং এর দিকে এগিয়ে যায়। রেলিং এর সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
"যাচ্ছি না আমি। আছি।"
আমানের ঠোঁটে তখনো মৃদু মুচকি হাসি। নিহি এখন প্রায় দু/তিন হাত দূরে আছে আমানের থেকে। নিহি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা তো একদম নেই বললেই চলে। অর্ধ চাঁদ রয়েছে তাও কুয়াশার জন্য পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না। ঘোলা মনে হচ্ছে। নিহি যখন আকাশের তারা, চাঁদ নিয়ে ভাবতে ব্যস্ত আমান তখন মনের প্রেয়সীকে দেখে নিচ্ছে মন ভরে। তবুও যেন মনের তৃষ্ণা, চোখের পিপাসা মেটে না। অনন্ত কাল সামনে বসিয়ে রাখলেও বোধ হয় দেখার সাধ পূরণ হবে না। এসব ভাবতে ভাবতে আমান নিজেই হেসে ফেলে। শীতে শরীরের লোম সব প্রায় দাঁড়িয়ে গেছে। এই মুহূর্তে আমানের গায়ে হাফ স্লিভ কালো টি-শার্ট আর প্যান্ট রয়েছে। জ্যাকেট তো নিহির গায়ে। শীত লাগাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে নিহির দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। আকাশ থেকে চোখ সরাতেই নিহির চোখ আটকে যায় আমানের দিকে। আমান যে শীতে কাঁপছে সেটা বোঝা যাচ্ছে। নিহি একটু নড়েচড়ে দু'হাত বগলদাবা করে দাঁড়িয়ে নাক ফুলিয়ে বলে,
"এখন কেমন লাগছে?"
আমান ভ্রু দুটি উঁচু করে বলে,
"কেমন?"
"ঠান্ডায় কেমন লাগছে?"
"ভালোই।"
ভ্রুকুটি কুঞ্চিত হয়ে যায় নিহির। নাকের ডগায় তীব্র রাগ। শুধু কিছু বলতেই পারছে না। অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে নেয় নিহি।
আমান এক পা, দু পা করে নিহির সামনে এগিয়ে যায়। নিহি সেটা খেয়াল করে বলে,
"খবরদার কাছে আসবেন না। সরুন।"
আমান নিহির বাঁধা মানে না। সামনে এগিয়ে যায়। নিহির দু'পাশে হাত রেখে মুখটা সামনে এগিয়ে নেয়। নিহি নিচের দিকে একটু বেঁকিয়ে পড়ে। আমান একটু ঝুঁকে প্রশ্ন করে,
"এত রাগ কেন?"
নিহি একবার নিচের দিকে তাকিয়ে বড় ঢোক গিলে। তারপর দু'হাতে আমানকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলে,
"রাগ করার মতো কাজ করতে পারবেন। আর আমি রাগ করলেই দোষ?"
"তা এখন কী করলে রাগ ভাঙবে?"
"কিচ্ছু করতে হবে না। সরুন।"
নিহি আমানের থেকে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। আমান এবার রেলিং এর সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়। রাতের মৃদুমন্দ আলোতে নিহির মুখের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কণ্ঠে গান শুরু করে।
"Dil ko dil se kuchh hai kehna
Dil se ab na door rehna
Dil ki bas yehi ghuzarish hai."
নিহি একবার আমানের দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়।
"Dhadkanon ko ki sun'ne baatein
Jo labon se keh na paate
Dil ki bas yehi ghuzarish hai."
আমান গান গাইতে গাইতে নিহির দিকে এগিয়ে যায়। নিহির এক হাত ধরে একটু উঁচু করে আঙুল ধরে নিহিকে ঘুরায় আর গান গায়,
"Jab se mera dil tera hua
Poochho na mujhko mujhe kya hua
Ab teri baahon mein jeena mujhe
Warna hai mar jaana."
নিহির মাথা ঘুরাচ্ছে। নিহি হকচকিয়ে গিয়েছিল প্রথমে। এখন নিজেকে সামলে নিয়েছে। আমানের বুকে আড়ষ্ট হয়ে মাথা রেখেছে। আমান মুচকি মুচকি হাসছে। ফিসফিস করে বলে,
"এখন আর ঠান্ডা লাগছে না।"
নিহি কোনো উত্তর করছে না। নিশ্চুপ হয়ে আমানের বুকের ধুকপুকানি শুনছে। নিজেকে অনেক বেশিই সুখী মনে হচ্ছে নিহির এখন। বেশ কিছুক্ষণ এভাবেই কেটে যায়। এরপর আমান নিজেই বলে,
"এখন ঘুমাতে যান।"
নিহি আমানের বুক থেকে মাথা না তুলেই বলে,
"আপনি ঘুমাবেন না?"
"হ্যাঁ। আপনি আগে যান। তারপর আমি আসছি।"
আমানকে ছেড়ে দিয়ে লজ্জায় আর এক মুহূর্তও দাঁড়াতে পারে না সেখানে। দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। সিঁড়ি দিয়ে প্রথমে ধূপধাপ করে নামলেও পরে আস্তেধীরে নামে। নয়তো যদি পরে আবার বাড়ির কেউ টের পায়! নিহি যতবার এভাবে লজ্জা পেয়ে পালিয়ে যায়, ততবার আমানের বুকে খুশির ঢেউ নাচানাচি করে।
'এলোকেশী,
ঘুমজড়ানো মিষ্টি রোদে দৃষ্টি দিয়ে সূর্যকে কাবু করো না। ঐ মিষ্টি হাসি প্রকৃতিকে দেখিও না। তাহলে যে প্রকৃতিও তোমার প্রেমে পড়ে যাব। তোমার ঐ মিষ্টি রূপ, মিষ্টি হাসি আমার দৃষ্টিতে আবদ্ধ থাকবে। আর কাউকে দেবো না সেই সৌন্দর্যের ভাগ।'
চিঠিটা পড়ে নিহি কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থাকে। সকালে তমা ফোন দিয়ে হোয়াটসএপে যেতে বলল। গিয়ে দেখে এই চিঠিটার ছবি পাঠিয়েছে। সঙ্গে একটা ম্যাসেজ। 'এটা আজকের চিঠি। বাকি চিঠিগুলো লুকিয়ে রেখেছি। কী এক মুসিবত বলো তো? তোমার কথামতো আমি বারণ করেছি চিঠি দিতে। তবুও তারা শোনে না। হয় পিয়ন, নয়তো ঐ ছোট ছেলেটা এসে চিঠি দিয়ে যায়। কিছু বলার সুযোগও দেয় না।'
নিহি ম্যাসেজটা পড়ে রিপ্লাই করে,
'আচ্ছা ইয়ারচেঞ্জ পরীক্ষার পর আমি বাড়িতে ফিরে বিষয়টা দেখছি।' রিপ্লাই করে অফলাইন হয়ে যায়। এক মনে ভাবে আমানকে বিষয়টা জানাবে। আবার আরেক মনে ভাবে না, থাক! দেখিই না কী হয়! বিছানা ছেড়ে নিহি ফ্রেশ হতে চলে যায়। কলেজ ড্রেস পরে রেডি হয়ে ডাইনিং রুমে যায়। নিরব, আমান, লিমন, তরু, লিয়াকত শিকদার আর মামী আগে থেকেই ছিল। নিহিকে দেখেই এক গাল হাসি দিলো নিরব। সবার দিকে তাকিয়ে আগে লক্ষ করল নিহি, কেউ দেখেছে কী-না! তাকিয়ে দেখল আমান বাদে আর কেউই দেখেনি। একটা চেয়ার টেনে তরুর পাশে বসে নিহি। নাস্তা করতে করতে আড়চোখে আমানের দিকে তাকায়। নিহি তখন হতবাক! আমানও চোরের মতো আড়চোখে একটু পরপর নিহিকে দেখছে। নিহি এবার অবাক করার মতো একটা কাজ করে বসল। সকলের দৃষ্টির আড়ালে ঠোঁটদুলো কিঞ্চিৎ চোখা করে ফ্লাইং কিস দেয়। সঙ্গে সঙ্গে দুজন ব্যক্তির হেঁচকি উঠে যায়। একজন আমান আর অন্যজন নিরব। চুমুটা দেওয়ার সময়ই নিরব নিহির দিকে তাকায়। দুজনের একসঙ্গে হেঁচকি উঠা দেখে তরু আর নিহি শব্দ করে হেসে ফেলে। মামা তখন মামীকে বলেন, "ওদেরকে পানি দাও।"
মামী ওদেরকে পানি এগিয়ে দেয়। নিহি আমানের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। পানি পান করা শেষ হলে নিরব আমানের সঙ্গে ঘেঁষে বসে ফিসফিস করে বলে, "স্যার, কবে জানি আমি স্ট্রোক করে ফেলি!"
উত্তরে আমান হাসে।
নাস্তা করা শেষ হলে আমান আর নিরব বাড়ির সবার থেকে বিদায় নিয়ে আগেই চলে যায়। ওদের যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই নিহি আর তরু কলেজে যাওয়ার জন্য বের হয়। আমান তখন নিহির ফোনে টেক্সট করে,
"আজও কি ঐ জায়গায় আসবেন?"
নিহি তখন তরুর দিকে তাকায়। ওর বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে কথা বলছে। এবং এটাও জানতে পারে আজও ওরা দেখা করবে। নিহি ছোট করে রিপ্লাই করে, "হুম।"
আমান আর কোনো রিপ্লাই না করে সেখানে গিয়ে অপেক্ষা করে।
প্রতিদিনকার মতো আজও তরু ওর বয়ফ্রেন্ড শিশিরের সঙ্গে আলাদা কথা বলে। নিহি হাঁটতে হাঁটতে ভেতরের দিকে যায়। আমান পিছন থেকে পা টিপে টিপে নিহির কাছে আসে। ফিসফিস করে বলে,
"এইতো এখানে আমি।"
আচমকা নিহি ভয় পেয়ে যায়। নিজেকে সামলে নিয়ে আমানের বাহুতে কিল দিয়ে বলে, "ভয় পাইয়ে দিয়েছেন!"
আমান অসীম সাহসিকতার সাথে নিহির হাত চেপে ধরল। নিহি একবার ধরে রাখা হাতের দিকে তাকিয়ে তারপর আমানের দিকে তাকালো। আমানের চোখের গভীর ভালোবাসার রেশ নিহিকে আবদ্ধ করে ফেলছে ক্রমাগত। নিহি দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়। দৃষ্টি দূরে সরালেও হাত ছাড়ানোর বিন্দুমাত্র চেষ্টা করে না। হাত ধরেই দুজনে নিশ্চুপ হাঁটতে থাকে। নিহির হাত কাঁপছে। কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে প্রথম কথা বলা আমানই শুরু করে।জিজ্ঞেস করে,
"কাল তো শুক্রবার। প্রাইভেট, কোচিং কিছু আছে?"
"নাহ্!" ঠোঁট বাঁকিয়ে উত্তর দেয় নিহি। আমান তখন খুশি হয়ে বলে,
"তাহলে চলুন কোথাও থেকে ঘুরে আসি।" নিহি ভারী অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,
"কোথায়?"
"জাফলং।"
"বাড়িতে কী বলব আমি? একা তো ছাড়বে না।"
"কিছু একটা বলে ম্যানেজ করুন। প্লিজ। বেশি সময় তো থাকব না।"
নিহি কিছুক্ষণ ভেবে বলে,
"আচ্ছা আমি দেখছি।"
হাঁটতে হাঁটতে থমকে যায় দুজনে। ওদের থেকে কিছুটা দূরে তরু আর শিশির দাঁড়িয়ে আছে। দুজনই নিহি আর আমানকে হাত ধরা অবস্থায় দেখে ফেলে। ভয়ে জমে যায় নিহি। ভয় পেলেও আমান বা নিহি কেউই কারো হাত ছাড়ে না। বড় বড় ঢোক গিলে নিহি তরুর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
_____________________
থাই গ্লাসের কাঁচ গলে সূর্যের রোদের আলো অনলের বিছানায় এসে ঘাপটি মেরে বসেছে। লেপের ভেতর থেকে মাথা বের করে চোখ বন্ধ করেই আড়মোড়া ভাঙে অনল। আস্তে আস্তে চোখ খুলে জানালার দিকে তাকিয়ে একটা হাই তুলে। কাল রাতে এসেই শুয়ে পড়েছিল। জানালার পর্দাও টেনে দিতে মনে ছিল না। যার দরুণ ঘরে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পেরেছে। অবশ্য এমন মিষ্টি রোদ অনলের খারাপ লাগছে না; বরং আলস্যকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। নরম গরম বিছানা সঙ্গে এমন মিষ্টি রোদ বিছানায়! কারই বা ইচ্ছে করবে আরামের ঘুম ছেড়ে উঠতে? তবে অলসতাকে প্রাধান্য দিলে এখন চলবে না। ভার্সিটিতে যেতে হবে। মিলন রাতে ফোন করে জানিয়েছে জরুরী কথা আছে। তাই অলসতা ত্যাগ করে অনল বিছানা ছেড়ে ওঠে। ফ্রেশ হয়ে একদম রেডি হয়েই কলেজের উদ্দেশ্যে বের হয়। হাত-ঘড়িতে দেখে নেয় অলরেডি দশ মিনিট লেট।
যেতে এখনো আরো বিশ মিনিটের মতো লাগবে। এর মাঝেই ট্রাফিক জ্যামে আটকে রয়েছে। বাইকে বসেই আশপাশটা দেখছিল অনল। হুট করেই চোখ আটকে যায় একটি রিক্সায়। দুজন কাপল বসে আছে। ছেলেটির হাতে মেয়েটির হাত আবদ্ধ। মেয়েটি হাসলেও ছেলেটির মুখে অভিমানের ছাঁপ। বোঝা যায় কিছু একটা নিয়ে মেয়েটার সঙ্গেই অভিমান করেছে। মেয়েটা অভিমান ভাঙার বদলে উল্টো হাসছে। অনলের নিহির কথা মনে পড়ে যায়। বুকটা ধক করে ওঠে তখন। এরকমই একদিন নিহির সঙ্গে রিক্সায় যাওয়ার সময় অনল অভিমান করেছিল। তার কারণ ছিল নিহি ভাই ডেকেছিল। নিহিও অভিমান ভাঙানোর বদলে হেসেছিল খুব। পার্থক্য এইটুকুই ওরা যেমন হাত ধরে আছে অনল আর নিহি হাত ধরা অবস্থায় ছিল না। একরাশ একাকীত্ব অনলকে জাপটে ধরেছে। সবকিছুই শূন্য শূন্য লাগছে। রাস্তার এত কোলাহল, ড্রাইভারদের তর্ক কোনো কিছুই অনলের মস্তিষ্কে অবস্থান করতে পারছে না। ট্রাফিক জ্যাম যে এর মাঝেই ছেড়ে দিয়েছে সেদিকেও কোনো খেয়াল নেই। ওর পেছনের লোকজনও ওকে অতিক্রম করে গাড়ি নিয়ে ছুটে চলেছে। অনল তখনো নিহির ভাবনায় নিমজ্জিত। মনে হচ্ছে বুকের ভেতর থেকে কেউ খুব দামী জিনিস কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে। ধ্যান ভাঙে ফোনের রিংটোনে। অনল খেয়াল করে দেখে গাড়ি চলছে তাদের নিজের গতিতে। অনল ফোন রিসিভ করে না। কল কেটে দিয়ে বাইক স্টার্ট দেয়। দশ মিনিটের মাথায় অনল কলেজে পৌঁছে যায়।
অনলকে দেখে মিলন আর সাকিব এগিয়ে আসে। মিলন জিজ্ঞেস করে,
"কীরে ফোন দিলাম ধরলি না কেন?"
"বাইকে ছিলাম।"
অনলের চোখমুখ শুকনো। যেই প্রফুল্লতা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল সেটা আর নেই। চুপচাপ হাঁটছে। ওর সঙ্গে সাকিব আর মিলনও আসে।
"ইরার সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে নাকি আবার?" জিজ্ঞেস করে সাকিব।
অনল বিরক্তিকরভাবে 'চ' উচ্চারিত শব্দের মতো ব্যাঙ্গ করে বলে,
"এক সপ্তাহ্-র বেশি হবে কথা হয় না।"
"কেন?"
"আমিই বলি না। ভালো লাগে না।"
"আচ্ছা বাদ দে। চল ক্যান্টিনে যাই। সুমু আর লিসা ক্যান্টিনেই আছে।"
"চল।"
ক্যান্টিনের দিকে যাওয়ার পথে একবার নিহিদের ক্লাসরুমের দিকে তাকায় অনল। ঐ বারান্দায় কতবার নিহিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে। মজার বিষয় হলো, একটা সময় নিহি লুকিয়েও অনলকে দেখত। সেই সময় আর এই সময়ের মাঝে এখন বিস্তর তফাৎ। সেই চাঞ্চল্য, তেজী রূপ, স্নিগ্ধ মুখ এখন হঠাৎ শুধু চোখের সামনেই ভাসে। বাস্তবে আর দৃশ্যমান হয় না। বুকচিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে অনলের। নিহি চলে যাওয়ার পর এত খারাপ কখনোই অনলের লাগেনি। যতটা আজ, এখন লাগছে। সকালে মনে হয়েছিল আজ দিনটা ভালোই কাটবে। তবে এখন মনে হচ্ছে সারা দিনরাত আজ শুধু বিষণ্ণতায় কাটবে। এত হতাশারা ঘিরে ধরেছে যা অনল কল্পনাও করতে পারছে না। কী অদ্ভুত বিষাদ! প্রচণ্ড বিষাদ।
ক্যান্টিনে কফি অর্ডার দিয়ে বসে। সুমাইয়া জিজ্ঞেস করে,
"মন খারাপ নাকি তোর?"
"না, ঠিক আছি। তোরা বল। কী এত জরুরী কথা?"
মিলন এবার উৎসুক হয়ে বলে,
"দোস্ত অনেকদিন হয়েছে ট্যুর দেওয়া হয় না। চল কোথাও থেকে ঘুরে আসি।"
অনল চেয়ারের সঙ্গে হেলান দিয়ে বেঁকিয়ে বসেছিল। মিলনের প্রস্তাব শুনে একবার মিলনের দিকে তাকালো। মনে মনে ভাবল, একটা ট্যুর দিলে মন্দ হয় না। নিহির ভূত শুধু মাথাতেই নয় মনের মাঝেও এসে পড়েছে। ভূত তাড়াতে হবে। লাই দেওয়া যাবে না একদম। মাথার ভূত সর্বোচ্চ দু'দিন থাকে। কিন্তু মনের অসুখ সারানো সহজ নয়। ট্যুর দিলে মাইন্ড রিফ্রেশ হবে। অনল এবার সোজা হয়ে বসে। টেবিলের ওপর বাইকের চাবি ঘুরাতে ঘুরাতে বলে,
"বল কবে যাবি?"
অনল রাজি এটা ভেবেই সবাই খুশি হয়। সাকিব বলে,
"আমরা তো সব রেডি করেই রেখেছি। শুধু তোর 'হ্যাঁ' বলার অপেক্ষাতে ছিলাম।"
অনল মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করে,
"আমি যদি না যেতাম?"
উত্তরে তখন মিলন বলে,
"এহ্! হাতে-পায়ে ধরে হলেও রাজি করাতাম।"
অনল এবার শব্দ করে হেসে বলে,
"আচ্ছা বল এখন। কোথায় যাবি আর কবে যাবি?"
"আজ রাতেই রওনা দেবো। সিলেট যাব। চা বাগান আর জাফলং-এ ঘুরব।"
"ওকে ডান।"
কফি এসে পড়েছে। সবাই কফি খেতে খেতে ট্যুর নিয়ে ডিসকাস করছে। অনল কফির মগ হাতে নিয়ে এক দৃষ্টিতে কফির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,
"আমি তোমায় কিছুতেই আমার মনে এলাউ করব না নিহি। কিছুতেই না!"
.
.
.
চলবে.................................